Ajker Patrika

নাইজেরিয়ানকে দিয়ে মামলায় ফাঁসিয়ে কিস্তিতে নিতেন ঘুষ, দুই পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা) 
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৪, ২১: ২৬
নাইজেরিয়ানকে দিয়ে মামলায় ফাঁসিয়ে কিস্তিতে নিতেন ঘুষ, দুই পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত

রাজধানীর তুরাগের বাসিন্দাদের কাছে আতঙ্কের নাম পুলিশ। সোর্সের মাধ্যমে যাকে-তাকে ধরে নিয়ে মাদক মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া আটক করে নগদ, বাকি ও কিস্তিতে তাঁরা ঘুষ-চাঁদা নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

রাজধানীর তুরাগ এলাকায় আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ ঘটনায় তুরাগের দিয়াবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (আইসি) উপপরিদর্শক (এসআই) টিএম আল আমিন ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. ওয়াসিমকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এরপরও আতঙ্ক কমেনি জনসাধারণের।

আজকের পত্রিকার হাতে আসা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, রিকশাচালক জাবেদ ও দিয়াবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই ওয়াসিম ঘুষের টাকা লেনদেন নিয়ে কথা বলছেন। সেখানে রিকশাচালক জাবেদ বলেন, ‘স্যার, আমি তো ১৭ হাজার টাকা মিলাইবার পারি নাই।’ এ সময় এএসআই ওয়াসিম বলেন, ‘তরে মাইরা লামু কিন্তু। একাবারে মাইরা লামু।’ নিরুপায় রিকশাচালক জাবেদ বলেন, ‘মারেন কাটেন যাই করেন স্যার, আল্লাহ বাঁচাইলে কালকা আপনারে টাকা দিয়া থুইয়া আইমু।’ এএসআই ওয়াসিম বলেন, ‘এত কিছু বুঝি না। তরে তাড়াতাড়ি আইতে কইতাছি।’

জাবেদ হোসেন কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার আব্দুল গফুরের ছেলে। বর্তমানে তিনি তুরাগের বাউনিয়া এলাকায় থাকেন। ওই কথোপকথনের বিষয়ে জানতে চাইলে জাবেদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গাঁজার পোঁটলা পাইয়াই ওয়াসিম স্যার বলতেছে, ‘টেহা দে। আমি তহন তিন হাজার টেহা দেই। তারপর আবার রিকশা বেইচ্চা আইনা ১৭ হাজার টেহা দেই।’

জাবেদ বলেন, ‘টাকাটা দিছি দুই কিস্তিতে। একবার তিন হাজার টাকা দিয়া বিদায় করছি। আরেকবার রিকশা বেইচ্চা ১৭ হাজার টাকা দিছি। আমি মুখ খোলার (জানাজানি হলে) পর থেকে আমাকে বিসরাইতেছে (খুঁজতেছে)। পাইলে আমাকে মেরে ফেলবে। আগেও হুমকি দিয়েছিল। জাতীয় নির্বাচনের পরদিন ধইরা চালানও দিছিল।’

কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজের কারণে তাঁর দুই লাখ টাকা নামছে। এর কারণে আমারে ধরে ট্যাপেন্টা ও গাঁজা দিয়ে মামলা করে ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। এক মাস ১৫ দিন থেকে বের হইছি। অথচ আমার কাছে কিছুই পায় নাই।’

ক্যান্টনমেন্টের বালুঘাট এলাকার বাসিন্দা ও গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী তানজিন হোসেন আদর বলেন, ‘আমি তুরাগের পুকুরপাড়ে চাচার বাসায় গিয়েছিলাম। তখন সাদা পোশাকে এএসআই ওয়াসিম আমাকে ধরে একবার ডিবি, আরেকবার পুলিশ পরিচয় দিয়ে তল্লাশি শুরু করে। এরপর পকেট থেকে মোবাইল ফোন ও ব্যবসার ১৭ হাজার টাকা নিয়ে বলে, ‘‘তর কাছে মাদক পাওয়া গেছে, আমি ভিডিও করব। তুই স্বীকার করবি। নাহলে তকে ধরে মামলা দিব।’’ স্বীকার করতে না চাইলে বিভিন্ন ভয়ভীতি হুমকি দেখায়। একা থাকায় কিছুই বলতে পারিনি।’

আদর বলেন, ‘পকেট থেকে ১৭ হাজার টাকা নিয়ে যাওয়ার পরও আরও ২০ হাজার টাকা দাবি করে সে। দুই দিনের মধ্যে সেই টাকা না দিলে মাদক মামলার আসামি বানিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয়।’

বটতলার এস টি সরকার ফার্মেসির মালিক এম এ হুসাইন সরকার অভিযোগ করে বলেন, ‘এক নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে ব্যথা ও ঘুমের ওষুধ বিক্রি না করায় দোকানে বিশৃঙ্খলা করে। পরে ওই ব্যক্তিই ফোন করে পুলিশ নিয়ে আসে। তখন এএসআই ওয়াসিম আমাকে ধরে গার্ডরুমে নিয়ে যায়। পরে যেন এমন না হয়, তাই সেখানে এসআই আল আমিন বিচার করে আমার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা নেয়। আবার একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষরও রেখে দেয়।’

বাদালদি মসজিদ সংলগ্ন সরকারি খাস জমিতে ঘর করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন মো. তাহাজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাদালদী মসজিদে ওয়াজের দিন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ওয়াসিম সিভিল পোশাকে আমার ছেলে ও তাঁর বন্ধুকে ধইরা নিয়া গার্ডরুমে নিয়া ২০ হাজার টাকা দাবি করছে। ওই দিন খবর পেয়ে রাত ১টার দিকে ৬ হাজার টাকা দিয়ে তাঁদের ছাড়ায়ে আনি। পরদিন বিকেল বেলা সোর্স মোস্তফা এসে বাকি ৬ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।’

এলাকার লোকজনের অভিযোগ, এএসআই ওয়াসিমের সঙ্গে একটি সাইড ব্যাগ থাকে। সেই ব্যাগে সব সময়ই মাদক থাকে। নিরীহ মানুষ ধরার পর টাকা না দিলে সেই মাদক দিয়েই ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। আবার সোর্স নাইজেরিয়ান জামান, মোস্তফা ও নুরুর মাধ্যমে চেকের সময় মাদক পকেটে মাদক ঢুকিয়ে দিয়ে টাকা-পয়সা আদায় করা হয়। সবকিছুর নেতৃত্ব দেন ফাঁড়ির আইসি এসআই আল আমিন।

তাঁদের অভিযোগ, প্রায়ই মানুষকে ধরে বাউনিয়া বটতলার সিভিল অ্যাভিয়েশনের গার্ড রুমে ধরে নিয়ে যায় ওয়াসিম ও আল আমিন। তখন গার্ড রুমকে বানানো হয় আদালত। আর ওই আদালতের বিচারক থাকেন এসআই আল আমিন।

কী কী মাদক থাকতে জানতে চাইলে বাসিন্দারা বলেন, ট্যাপেন্টা, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা সবই থাকে তার (ওয়াসিম) কাছে। যখন যেটা দরকার মনে করে, তখন সেটা দিয়েই মানুষকে ফাঁসিয়ে দেয়।

বাউনিয়ার জলিলের গ্যারেজে বসবাস করে নাইজেরিয়ার নাগরিক জামান। সেখানকার রিকশাচালক ও মিস্ত্রিরা বলেন, ‘এএসআই ওয়াসিম স্যার তাঁকে রাখতে বলছে। সে শুধু রাতে এসে ঘুমায়, আর সারা দিন ওয়াসিম স্যারের সঙ্গে থাকে। কোনো কামকাজ করে না। শুধু পুলিশের সোর্স হিসাবে কাজ করে। জামান আমাদের জানিয়েছে, সে আট মাস জেল খেটেছে। তাঁর বাংলাদেশে সাজা হয়েছিল।’

পথেই দেখা হয় ওই নাইজেরিয়ান সোর্সের সঙ্গে। সোর্স জামান বলেন, ‘পুলিশ ইজ মাই বস। আই অ্যাম নাইজেরিয়ান, হি ইজ বাংলাদেশি। আই এম অ্যা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, অ্যা র‍্যাপার, অ্যা সিঙ্গার। ব্যাট আই হ্যাভ নো ম্যানি, নো হাউজ। ওয়াসিম হেল্পস মি।’

খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, দিয়াবাড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে যোগদানের পূর্বে এসআই আল আমিন ডিএমপির বিমানবন্দর থানায় ছিলেন। তৎকালীন সিভিল অ্যাভিয়েশনের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ও বাউনিয়ার আবুল কাশেমকে এক প্যাকেট আমদানি নিষিদ্ধ এক প্যাকেট বিদেশি সিগারেটসহ আটক করে এসআই আল আমিন। সিগারেটের প্যাকেটটি আবুল কাশেমের আরেক সহকর্মী তাঁকে দিয়ে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হচ্ছিলেন। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ওই সহকর্মী সেটি তাঁর দাবি করলেও তদন্তের নামে যাচাই বাছা্ইয়ের কথা বলে থানার হাজতে ঢুকিয়ে রাখা হয়। পরে তাঁকে রিমান্ড ও মামলার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা আদায় করা হয়। কাশেম পর পর দুইবারের স্টোকের রোগী হওয়ায় তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পাননি।

এএসআই মো. ওয়াসিমের নাইজেরিয়ান সোর্স জামান।তুরাগের ধউর এলাকায় গত ১৩ মার্চ রাতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের রোষানলে পড়েন স্থায়ীয় সংবাদকর্মী সাইফুল ইসলাম। এ ঘটনায় তিনি উত্তরার উপকমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও দেন। ওই সময়ের ভিডিও ফুটেজটিও রয়েছে আজকের পত্রিকার হাতে। সাইফুল বলেন, ‘একটি সিএনজি থেকে পুলিশ ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০০ টাকা নিয়েছে। সেটির কারণ জানতে চাইলে আমাকে ধরে বক্সে নিয়ে যায় এএসআই ওয়াসিম ও তাঁর সোর্স সুমন। সেখানে নিয়ে আমাকে ছিনতাইকারী বানানোর চেষ্টা চালায় তাঁরা।’

২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বরের একটি জিডির ছবি আসে আজকের পত্রিকার হাতে। জিডির নম্বর ৩০৬, সময় ১২টা ২০ মিনিট, বাদী এসআই আল আমিন। জিডিতে উল্লেখ রয়েছে, এএসআই ওয়াসিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন লোকদের আটক করে হয়রানিসহ মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি ওসি সাহেবসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে ঊর্ধ্বতন স্যারদের নির্দেশে তার বিরুদ্ধে জিডি করে প্রতিবেদনের নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে জিডি করা হল। এএসআই ওয়াসিমকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হলো।

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, সিটি করপোরেশন একদিকে জসিমউদ্দিনের পাকার মাথায় অবৈধ ফুটপাত উচ্ছেদ করে, অন্যদিকে ফাঁড়ির প্রশ্রয়ে উচ্ছেদের পরই সেটি আবার দখল করে শুরু করা হয় চাঁদাবাজি। শতাধিক দোকান থেকে দৈনিক আদায় করা হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। অপরদিকে দিয়াবাড়ি বউবাজের হাজারো দোকান থেকে একইভাবে চাঁদাবাজি করেন শ্রমিক লীগ নেতা রোস্তম আলী ও তাঁর সহযোগীরা। সেটিও একদিকে রাজউক উচ্ছেদ করলেও অন্যদিকে বসে পড়ে। এসব ফুটপাত থেকে দৈনিক এবং তুরাগের প্রতিটি রিকশার গ্যারেজ থেকে পুলিশ ফাঁড়ির নামে সপ্তাহে ৫০০ টাকা করে তোলার অভিযোগও রয়েছে।

পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৪ মার্চ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে ডিএমপির আইএডি শাখার উপ-কমিশনারকে আহ্বায়ক ও ক্রাইম বিভাগের কমিউনিটি পুলিশের শুভ কুমার ঘোষ ও প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী কমিশনার মো. ফেরদাউছ হোসেনকে সদস্য করা হয়েছে।

এ ছাড়া ডিএমপির উত্তরা বিভাগের পক্ষ থেকে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি গঠনের পরই এএসআই ওয়াসিমকে ফাঁড়ি থেকে বদলি করে তুরাগ থানায় সংযুক্ত করা হয়। পরে গত ১৫ মার্চ আবার ফাঁড়ির আইসি এসআই আল আমিন ও এএসআই মো. ওয়াসিমকে সাময়িক বরখাস্ত করেন উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. শাহজাহান।

অভিযোগ প্রসঙ্গে দিয়াবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির আইসি এসআই টিএম আল আমিন নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এএসআই মো. ওয়াসিম মানসিক বিকারগ্রস্ত। সে এতই বেপরোয়া যে তাঁর বিষয়টি আমি জিডি ও নোট করে আমার ঊর্ধ্বতন স্যারদের জানিয়েছি। তাঁরা তাঁর বদলি করে দেবেন বলেছিলেন।’

অপরদিকে এএসআই মো. ওয়াসিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কাজ করি। তাই একটি চক্র আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে।’

সোর্স জামানের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াসিম বলেন, ‘নাইজেরিয়ার জামান একজন মুসলিম, তাঁর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। তাই আমি বিনা স্বার্থেই খাওয়াই।’

দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের বিষয়ে উত্তরা জোনের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. শাহজাহান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নানা অনিয়মের অভিযোগে তাঁদের সাময়িক বরখাস্ত করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা তদন্ত করছেন। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী বাকি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পবিপ্রবি: নবনির্মিত শেডে উদ্বোধনের আগেই ফাটল, কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন

পবিপ্রবি সংবাদদাতা
উদ্বোধনের আগেই ভেঙে গেছে বাসশেডের স্ল্যাব। ছবি: আজকের পত্রিকা
উদ্বোধনের আগেই ভেঙে গেছে বাসশেডের স্ল্যাব। ছবি: আজকের পত্রিকা

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) বরিশাল ক্যাম্পাসে সদ্য নির্মিত বাসশেডের সামনের একটি স্ল্যাব উদ্বোধনের আগেই ভেঙে পড়েছে। এতে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় নির্মাণের মান ও স্বচ্ছতা নিয়ে শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, টিনের ছাউনিযুক্ত এই বাসশেড নির্মাণে প্রায় ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। তবে উদ্বোধনের আগেই স্ল্যাব ভেঙে পড়ায় প্রকল্পের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে থাকা দুর্বল কংক্রিট, খোয়া ও মরিচা পড়া রডের টুকরাগুলো নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, নতুন স্থাপনার এমন পরিণতি উদ্বেগজনক। এটি ভবিষ্যতে অন্যান্য নির্মাণ প্রকল্পের মান নিয়েও সন্দেহ সৃষ্টি করছে।

এদিকে ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্ল্যাব পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। এ বিষয়ে ঠিকাদার আব্দুল হালিম বলেন, ‘সাধারণত নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর ২৭ দিন পর্যন্ত ব্যবহার না করার নির্দেশনা থাকে। কিন্তু ভারী মালবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে স্ল্যাবের এক পাশে ক্ষতি হয়েছে।’ নিম্নমানের ইট ব্যবহারের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে কিছু পুরোনো ইট ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে অভিযোগ পাওয়ার পর তা বন্ধ করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আহসানুর রেজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিম্নমানের ইট ব্যবহারের কথা জানার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছি, কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। খুব দ্রুত আমরা এটি ঠিক করার ব্যবস্থা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রেমিকা আসার খবরে বাড়ি থেকে পালালেন প্রেমিক, বিয়ের দাবিতে অনশন

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা
প্রেমিকা আসার খবরে বাড়ি থেকে পালালেন প্রেমিক, বিয়ের দাবিতে অনশন

িয়ের দাবিতে চাচার শ্যালিকা দুই দিন ধরে ভাতিজার বাড়িতে অবস্থান নিয়ে অনশন করছেন। প্রেমিকা (১৮) বাড়িতে আসার খবর পেয়ে পালিয়ে গেছেন প্রেমিক সোহান হোসেন (২০)। গতকাল সোমবার সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে।

ওই তরুণী প্রেমিক সোহান হোসেনের চাচার আপন শ্যালিকা। সোহান হোসেন বোয়ালিয়া গ্রামের জাব্বার সরকারের ছেলে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ভাতিজা ও খালার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক আগে থেকে। উভয়ের বাড়ি একই এলাকায় হওয়ার তাঁরা অনায়াসে যাতায়াত করতেন। এর আগেও জাব্বার সরকারের বাড়িতে বিয়ের দাবি তুলেছিলেন ওই তরুণী। পরে বুঝিয়ে তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। এবার বিয়ের দাবিতে অনশন শুরু করলে প্রেমিক পালিয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সোহানের বাড়ির সামনে উৎসুক নারী-পুরুষের ভিড় জমেছে। গণমাধ্যমকর্মীরা পৌঁছালে জাব্বার সরকারের পরিবারের লোকেরা কথা বলতে রাজি হননি। অনশনরত ওই তরুণী এখনো বাড়িতে অবস্থান করছেন, তবে কাউকে বাড়িতে প্রবেশ বা কথা বলা নিষিদ্ধ করেছেন সোহানের বাবা।

স্থানীয় লোকজন জানায়, জাব্বার সরকারের বাড়িতে গত রাত থেকে তাঁর ছেলের কথিত প্রেমিকা অনশন শুরু করেন। এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সোহান হোসেনের এমন অসামাজিক কর্মকাণ্ড দেখে পরিবারের যাতায়াতের পথও বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু উৎসুক জনতা সেসব উপেক্ষা করে সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন।

জানতে চাইলে ইউপি সদস্য সোলায়মান হোসেন জানান, ‘মহিলার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের সম্পর্ক প্রায় দেড় মাস ধরে। গত সোমবার রাত থেকে তিনি জাব্বারের বাড়িতে অবস্থান করছেন, কিন্তু ছেলেটি পালিয়ে গেছেন।’

এ বিষয়ে তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমি এখনো বিষয়টি জানি না। কেউ অবহিত করেননি। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে এনসিপি থেকে পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৪: ৩৩
পরিমল চন্দ্র ওঁরাও। ছবি: সংগৃহীত
পরিমল চন্দ্র ওঁরাও। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী মহানগর সমন্বয় কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন এক সদস্য। তাঁর নাম পরিমল চন্দ্র ওঁরাও। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে এনসিপির রাজশাহী মহানগর সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারীর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি।

এতে পরিমল চন্দ্র লিখেছেন, ‘সম্প্রতি ব্যক্তিগত জীবনে কিছু নতুন দায়িত্ব ও উদ্যোগের কারণে আমার সময় ও মনোযোগ সম্পূর্ণভাবে সেদিকে দিতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দলের কাজের প্রতি আগের মতো সম্পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করা সম্ভব হচ্ছে না, যা দলের প্রতি অন্যায় হবে বলে মনে করি।’

পরিমল চন্দ্র ওঁরাও বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাবেক সদস্য। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় তাঁর বাড়ি। তবে তিনি রাজশাহীতে থাকতেন। তাই এনসিপির মহানগর সমন্বয় কমিটিতে সদস্যপদ পেয়েছিলেন। তিনি এখন নওগাঁয় রাজনীতি করতে চান।

জানতে চাইলে পরিমল চন্দ্র ওঁরাও বলেন, ‘আমি নওগাঁ-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চাই। তাই এনসিপি থেকে পদত্যাগ করেছি। আমি এনসিপিতে থাকব না।’

যোগাযোগ করা হলে এনসিপির রাজশাহী মহানগর সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মোবাশ্বের আলী তাঁর পদত্যাগপত্রটি পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘এ বিষয়ে নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকদের দফায় দফায় মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশের লাঠিপেটা

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি  
গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ করলে সরিয়ে দিতে পুলিশের লাঠিপেটা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ করলে সরিয়ে দিতে পুলিশের লাঠিপেটা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে দফায় দফায় মহাসড়ক অবরোধ করেন এএ ইয়ার্ন মিলস লিমিটেডের শ্রমিকেরা। এ সময় তাঁরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে শ্রমিকদের সরিয়ে দিতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করেছে। এতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন।

গাজীপুরের শ্রীপুর, কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি, শ্রমিকদের দফায় দফায় মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, লাঠিপেটা
গাজীপুরের শ্রীপুর, কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি, শ্রমিকদের দফায় দফায় মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, লাঠিপেটা

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নগরহাওলা গ্রামে এএ ইয়ার্ন মিলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে দফায় দফায় অবরোধ করেন।

কারখানার শ্রমিক সুজন মিয়া বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বর মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে ২৩ তারিখ কারখানার প্রায় সব শ্রমিক আন্দোলন করে। সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এরপর পুলিশ-সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে বেতন পরিশোধের আশ্বাসে আন্দোলন বন্ধ করেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, সোমবার থেকে পুরোদমে কারখানা চালু হবে। কিন্তু গতকাল সোমবার কর্মস্থলে এসে দেখি মূল ফটকের সামনে কারখানা বন্ধের অনির্দিষ্টকালের নোটিশ।

গাজীপুরের শ্রীপুর, কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি, শ্রমিকদের দফায় দফায় মহাসড়ক অবরোধ
গাজীপুরের শ্রীপুর, কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি, শ্রমিকদের দফায় দফায় মহাসড়ক অবরোধ

এরপর পুলিশ আমাদের আশ্বাস দেয় যে আজ মঙ্গলবার ১০টার দিকে কারখানা খুলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে। কিন্তু কারখানা ফটকের সামনে এসে দেখি কারখানা বন্ধের নোটিশ। এরপরই শ্রমিকেরা রাস্তায় নামে। রাস্তায় নামার পরপরই পুলিশ এসে কোনো কথা না বলে লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।’

কারখানার শ্রমিক ঝুটন বলেন, ‘হঠাৎ করে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করল। আমাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করল না। দীর্ঘদিন ধরে এই কারখানায় শ্রমিকের কাজ করছি। কয়েক মাস ধরে বেতন পরিশোধ নিয়ে টালবাহানা করছে। হঠাৎ আন্দোলনের জেরে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করছে। আমার বকেয়া বেতনসহ অনন্য দাবি পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধ করা হয়েছে, যা শ্রমিকদের সঙ্গে অনেক অন্যায় করা হয়েছে।’

জানতে চাইলে কারখানার মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২৩ অক্টোবর শ্রমিকেরা বেতন দাবির সময় কারখানার ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করে। ফলে কারখানা চালু রাখা সম্ভব নয়। মালিকপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল লতিফ বলেন, ‘কয়েক দিন ধরেই কারখানায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শ্রমিকেরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করলেও আজকে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে। তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নিতে আমরা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করি। কিন্তু শ্রমিকেরা দফায় দফায় রাস্তায় নামছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত