Ajker Patrika

৮০০ টাকার বিদ্যুৎ বিল হয়ে গেল ৯২ হাজার

মো. আকতারুজ্জামান, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা)
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ১৪
‘ভুতুড়ে’ বিলের অভিযোগ তুলে সমাধানের আশায় ভুক্তভোগী গ্রাহকদের ভিড়। গতকাল পিডিবির কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম আঞ্চলিক অফিসে। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘ভুতুড়ে’ বিলের অভিযোগ তুলে সমাধানের আশায় ভুক্তভোগী গ্রাহকদের ভিড়। গতকাল পিডিবির কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম আঞ্চলিক অফিসে। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের যুগীরাহাট গ্রামের গ্রাহক শাহ আলম। প্রতি মাসে তাঁর বিদ্যুৎ বিল আসত ৬ শ থেকে ৮ শ টাকা। গত আগস্ট মাসে তাঁর ডিজিটাল মিটার পরিবর্তন করে প্রি-পেইড বসানো হয়েছে। এরপর চলতি মাসে পুরোনো বিল হিসাবে তাঁর বিল এসেছে ৯২ হাজার টাকা।

শুধু শাহ আলমই নন, একইভাবে ভুতুড়ে বিল দেওয়া হয়েছে নতুন করে প্রি-পেইড মিটার নেওয়া গ্রাহকদের। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রি-পেইড মিটারের গ্রাহকেরা। তাঁরা সমাধানের আশায় প্রতিদিন ভিড় করছেন পিডিবির কার্যালয়ে।

জানা গেছে, চৌদ্দগ্রামে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) সাড়ে ১৩ হাজার প্রি-পেইড গ্রাহকের ঘাড়ে ভুতুড়ে বিল চাপিয়ে দিয়েছে পিডিবির চৌদ্দগ্রাম আঞ্চলিক অফিস। তবে আবাসিক প্রকৌশলী ওহিদুর রহমান এর দায়ভার না নিয়ে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন মিটার রিডারদের ওপর।

চৌদ্দগ্রাম পিডিবি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এখানে প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। চলতি বছরের আগস্ট মাসে ডিজিটাল মিটার প্রজেক্ট প্রকল্পের অংশ হিসেবে গ্রাহকদের পোস্ট পেইড মিটার বাতিল করে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতে এ কার্যক্রমের জন্য গ্রাহকেরা বাধা প্রদান করলেও পিডিবির কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকির কারণে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করতে বাধ্য হন। এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ৫ শ গ্রাহক প্রি-পেইড মিটার নিতে বাধ্য হয়েছেন। আর এসব গ্রাহককেই ভুতুড়ে বিলের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এ নিয়ে গত রবি ও গতকাল সোমবার ভোগান্তির স্বীকার গ্রাহকদের অভিযোগের জন্য উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে পিডিবি কার্যালয়ে।

পিডিবি কার্যালয় জানিয়েছে, প্রি-পেইড মিটারে ১ হাজার কিলোওয়াট পর্যন্ত ধারণক্ষমতা রয়েছে। এর বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার হলে এই মিটারগুলো ব্লক হয়ে যাবে। পিডিবির দাবি, এতে করে গ্রাহকের বিদ্যুৎ খরচ কমে আসবে।

জানতে চাইলে উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের যুগীরাহাট গ্রামের গ্রাহক শাহ আলম বলেন, ‘প্রতি মাসে আমার বিদ্যুৎ বিল আসত ৬ শ থেকে ৮ শ টাকা। আগস্ট মাসে ডিজিটাল মিটার পরিবর্তন করে একটি প্রি-পেইড মিটার বসানো হয়েছে। এরপর চলতি মাসে পুরোনো বিল হিসাবে আমাকে ৯২ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহকারী পৌর এলাকার পেয়ারা বেগম বলেন, ‘প্রতি মাসে বিল আসত ৮ শ থেকে ৯ শ টাকা। আমার আগের মিটার খুলে নিয়ে নতুন মিটার লাগিয়েছে। বকেয়া হিসাবে আমার ৮ হাজার টাকা বিল এসেছে। ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করি, এখন এত টাকার বিল দেব কোথা থেকে?’

পৌর এলাকার গ্রাহক বাবুল মিয়া বলেন, ‘গত মাসে আমার বিল এসেছিল ১৮০২ টাকা। প্রি-পেইড মিটার সংযোগের পর পোস্ট পেইডের বকেয়া এসেছে ৮ হাজার টাকা। অথচ আমাদের প্রতি মাসের বিল পরিশোধ করা আছে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবাসিক প্রকৌশলী ওহিদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পিডিবির চৌদ্দগ্রাম অফিসে ৯ জন মিটার রিডার রয়েছেন। তাঁরা অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা। এই রিডাররা গ্রাহকের মিটারের কাছে না গিয়ে মনগড়া বিল করতেন। এতে করে গ্রাহকের মিটারে অতিরিক্ত ইউনিট জমা হয়ে থাকত। বর্তমানে পোস্ট পেইড মিটার খুলে এনে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। জমা করা পোস্ট পেইড মিটারের ইউনিটগুলোর বিল এখন গ্রাহকদের পরিশোধ করতে হবে। এ জন্য আমরা গ্রাহকদের কিস্তি করে টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম করে দিয়েছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে ওহিদুর রহমান বলেন, ‘অনিয়মের অভিযোগে আতিক ও ফারুক নামের দুজন মিটার রিডারকে ইতিমধ্যে ক্লোজ করা হয়েছে। বাকি সাতজনের বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ এ ছাড়া ডিজিটাল মিটার রিডিংয়ের কার্যক্রম ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত