Ajker Patrika

৮ মাস পর বুকের ধন ফিরে পাওয়ার আনন্দ বিষাদে রূপ নেয় জরিনার

দেবিদ্বার (কুমিল্লা) সংবাদদাতা
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ২০: ২৬
নিখোঁজের আট মাস পর মায়ের কোলে শিশু হোসাইন। ছবি: আজকের পত্রিকা
নিখোঁজের আট মাস পর মায়ের কোলে শিশু হোসাইন। ছবি: আজকের পত্রিকা

হঠাৎ বাড়িতে স্ত্রী-­সন্তানের খরচের টাকা ও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন আলমগীর হোসেন। নিরুপায় হয়ে তাঁকে খুঁজতে বেরিয়ে অপহরণকারীদের কবলে পড়ে কোলের সন্তান হোসাইনকে হারিয়ে ফেলেন জরিনা বেগম। আট মাস ধরে সন্তানকে খোঁজাখুঁজি করে পাগলপ্রায় দশা তাঁর। এদিকে স্বামীরও সন্ধান নেই। হঠাৎ শিশুটির সন্ধান পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন জরিনা। মা ও এক মামাকে সঙ্গে নিয়ে সন্তানকে ফিরিয়ে আনতে রওনা দেন কুমিল্লার উদ্দেশে। পথে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আহত হন তিনজন। এর মধ্যে নিজে সুস্থ হয়ে উঠলেও জরিনার মাকে নিতে হয়েছে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ)। বুকের ধন কোলে ফিরে পেলেও একের পর এক ঝড়ে তাঁর সেই আনন্দ বিষাদে রূপ নিয়েছে।

আট মাস পর গতকাল বুধবার মায়ের কোলে ফেরে চার বছরের শিশু হোসাইন। তবে তার নানি মনোয়ারা বেগম সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুশয্যায় লড়ছেন। স্বামী-সন্তানকে ফিরে পেতে একের পর ঝড় পারি দেওয়া জরিনার বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে।

জানা গেছে, হোসাইনের মা জরিনা বেগম মামার বাড়ি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উড়িরচর গ্রামে বসবাস করেন। তাঁর স্বামী আলমীর হোসেন থাকেন চট্টগ্রাম শহরে। কাজ করেন একটি দোকানে। কিন্তু হঠাৎ করেই মা ও ছেলের খোঁজখবর নেওয়া বন্ধ করে দেন আলমগীর। পরিবার জানতে পারে, তিনি আরও একটি বিয়ে করে সংসার পেতেছেন।

নিরুপায় হয়ে আট মাস আগে কোলের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীকে খুঁজতে চট্টগ্রামে যান জরিনা। সেখানে তাঁকে খুঁজে না পেয়ে ট্রেনে চড়ে বাড়িতে রওনা হন। সেদিন ভুল করে ঢাকার ট্রেনে উঠে পড়েন তিনি।

কুমিল্লার লাকসামে এসে তিন অপহরণকারী হোসাইনকে নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পড়ে। জরিনা ছেলেকে খুঁজতে খুঁজতে চলে যান ঢাকায়। পরে হোসাইনের মা জরিনা বেগম বাড়ি ফিরলেও স্বামী ও একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তিনি পাগলপ্রায়। পরিবারের আত্মীয়স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও হোসাইনের কোনো সন্ধান পাননি।

এদিকে কুমিল্লার লাকসাম স্টেশনে হোসাইন কান্নাকাটি শুরু করলে অপহরণকারীরা তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর দেবিদ্বার সরকারি শিশু পরিবারের আশ্রয়ে দিয়ে আসে। সেখানে ছোট সোনামণিদের সঙ্গে কাটে হোসাইনের আট মাস।

১ আগস্ট স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় হোসাইনের সন্ধান পান তার মা। ২ আগস্ট হোসাইনের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা হয় মায়ের। পরদিন ৩ আগস্ট জরিনা, নানি মনোয়ারা ও অলিউল্লাহ নামের সম্পর্কে এক মামা মিলে হোসাইনকে নিতে দেবিদ্বারের উদ্দেশে নোয়াখালী থেকে রওনা হন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতা তাঁদের পিছু ছাড়েনি। পথে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পারোয়ারা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিনজন। তাঁদের সঙ্গে একই সিএনজিচালিত অটোরিকশায় থাকা এক যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দেবিদ্বার থেকে স্থানীয় সাংবাদিকেরা গিয়ে জরিনাদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে ভর্তি করান। ওই রাতে মনোয়ারার অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু পথে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে মাতুয়াইলের একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিন দিন অচেতন থাকার পর গতকাল বুধবার সকালে তাঁর জ্ঞান ফেরে।

এদিকে কুমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জরিনা সুস্থ হয়ে গতকাল ছাড়া পান। সেখান থেকে তিনি দেবিদ্বার শিশু পরিবারে এসে হোসাইনকে নিতে আবেদন করেন। দুপুরে স্থানীয় সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খান শিশু হোসাইনকে তার মায়ের হাতে তুলে দেন। এর আগে সকালে দেবিদ্বার শিশু পরিবারে সন্তানের সঙ্গে প্রথম দেখার সময় আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন এই নারী।

হোসাইনের মা জরিনা বেগম সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘সাংবাদিকদের সহযোগিতায় আজ আমার বুকের ধন খুঁজে পেয়েছি। তাঁদের সহযোগিতায় আমরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে দ্রুত সুস্থ হতে পেরেছি এবং আমার মায়ের চিকিৎসার খরচ তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছেন।’

দেবিদ্বার সরকারি শিশু পরিবারের তত্ত্বাবধায়ক বরুণ চন্দ্র দে বলেন, ‘হোসাইন খুবই শান্ত প্রকৃতির একটি ছেলে। সে আমাদের শিশু পরিবারে প্রায় আট মাস ছিল। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর হোসাইনকে লাকসাম পুলিশ এখানে দিয়ে যায়। সাংবাদিক আক্তার ভাইসহ স্থানীয় সাংবাদিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সন্ধান মেলে হোসাইনের পরিবারের। শিশু হোসাইনের পরিবারের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে দেবিদ্বারের ইউএনও মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেবিদ্বার সরকারি শিশু পরিবারে আশ্রয়ে থাকা শিশু হোসাইনের মা ও তার নানা এসে আবেদন করলে আমরা তাঁদের কাছে ফিরিয়ে দিই।’

আবুল হাসনাত খান আরও বলেন, ‘এর আগে গত রোববার (৩ আগস্ট) হোসাইনের মা, নানিসহ তিনজন দেবিদ্বারে আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন। স্থানীয় সাংবাদিকেরা তাঁদের উদ্ধার করে যেভাবে পাশে থেকে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন, এটি আমাদের সমাজে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা হোসাইনের ব্যাপারে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখব। তারা যদি দেবিদ্বার বা নিকটস্থ শিশু পরিবারে বাচ্চাটিকে রাখতে চান, আমরা সহযোগিতা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ছাত্রীকে তুলে নিতে বখাটেদের বাধা দেওয়ায় মাদ্রাসা সুপারকে মারধর, থানায় অভিযোগ

আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বরগুনার আমতলীতে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে তুলে নিতে বাধা দেওয়ায় বখাটেরা মাদ্রাসা সুপার আবু তাহেরকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে মাদ্রাসা সুপার মাওলানা আবু তাহের আমতলী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ছাত্রীকে তুলে নেওয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার বিকেলে আমতলী উপজেলার মানিকঝুড়ি মোহাম্মদপুর মাহমুদিয়া দাখিল মাদ্রাসার কাছে।

জানা গেছে, উপজেলার মানিকঝুড়ি এলাকার মোহাম্মদপুর মাহমুদিয়া দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে স্থানীয় মোশাররফ হোসেন হাওলাদারের বখাটে ছেলে জোবায়ের হোসেন বাবু দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছে। বুধবার বিকেলে মাদ্রাসা ছুটির পর ওই ছাত্রী মধ্য আমতলী গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিল। পথে মাদ্রাসা থেকে একটু দূরে বখাটে জোবায়ের হোসেন বাবু ও তার সহযোগী ইমরান ওই ছাত্রীকে মোটরসাইকেলে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ওই ছাত্রী দৌড়ে মাদ্রাসার সামনে এলে সুপার আবু তাহের ও শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম তাদের বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বখাটে জোবায়ের হোসেন বাবু, ইমরান, নাজমুল, রিয়াজ, সাইমুন, কবিরসহ ১০-১২ জন বখাটে মাদ্রাসা সুপারকে মারধর করে। আরেক শিক্ষক ফরিদুল ইসলাম তাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তাকেও লাঞ্ছনা করেছে।

সুপার আবু তাহের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় বুধবার রাতে মাদ্রাসা সুপার আবু তাহের বাদী হয়ে বখাটে জোবায়ের হোসেন বাবুকে প্রধান আসামি করে সাতজনের নামে আমতলী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বখাটেদের এমন আচরণে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন তাঁরা।

ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলে, ‘মাদ্রাসায় আসা-যাওয়ার পথে জোবায়ের হোসেন বাবু আমাকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছে। বিষয়টি আমি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বুধবার বিকেলে মাদ্রাসা ছুটির পর আমি বাড়ি যাচ্ছিলাম। এমন সময় জোবায়ের হোসেন বাবু ও ইমরান আমাকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন আমি দৌড়ে সুপারের কাছে আসি। ওই সময় তারা সুপারকে মারধর করেছে। আমি এ ঘটনায় বখাটেদের শাস্তি দাবি করছি।’

মাদ্রাসা সুপার আবু তাহের বলেন, ‘ছাত্রীকে বখাটে জোবায়ের হোসেন বাবু ও তার সহযোগীরা মোটরসাইকেলে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। আমি এতে বাধা দেওয়ায় আমাকে মারধর করেছে। আমি এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছি।’

আমতলী থানার ওসি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, পুলিশ ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নিতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কেরানীগঞ্জে ট্রাফিক পুলিশকে মারলেন অটোচালক

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার কদমতলী লায়ন মার্কেটের সামনে উল্টো পথে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতে বাধা দেওয়ায় দায়িত্বরত ট্রাফিক কনস্টেবল সাইফুল ইসলামকে মেরে যখম করেছেন নাজমা (৪০) নামের এক নারী অটোরিকশাচালক।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে নাজমা অটোরিকশা নিয়ে প্রতিদিনের মতো উল্টো রাস্তায় প্রবেশ করেন। এ সময় কর্তব্যরত ট্রাফিক কনস্টেবল সাইফুল তাঁকে বাধা দেন। তখন ট্রাফিক পুলিশের কোমর থেকে স্ক্রু ড্রাইভার ছিনিয়ে নিয়ে তা দিয়ে পুলিশের ডান হাতে পাড় দিয়ে জখম করেন।

এ সময় ঘটনাস্থল উপস্থিত লোকজন নাজমাকে তাঁর রিকশাসহ আটক এবং আহত সাইফুলকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করে।

নাজমার স্বামীর নাম আনোয়ার হোসেন। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার নিউ হাফেজ রোড এলাকার রাজ্জাক মিয়ার গ্যারেজে রিকশা চালান।

আশপাশের গ্যারেজমালিকেরা বলেন, নাজমা ছিনতাইকারী দলের একজন সক্রিয় সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ফরিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘গুলি কর’ বলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনায় ২ ভাড়াটে গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) বদরুল আরেফিন ভূঁইয়ার গাড়িতে হামলার ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা (পশ্চিম) বিভাগ।

বান্দরবান সদর উপজেলার সিকদারপাড়া এলাকা থেকে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন কাজী মো. ইমন হোসেন (২৩) ও মো. সুজন (২৪)। তাঁরা নগরের আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় বসবাস করেন বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ পশ্চিম জোনের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার দুজন এবং পলাতক একজনসহ মোট তিনজন হামলার ঘটনায় জড়িত। কাস্টমস কর্মকর্তাদের ওপর হামলার জন্য তাঁদের ভাড়া করা হয়েছিল।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখানোর জন্য ‘এক ব্যক্তি’ টাকার বিনিময়ে ওই তিনজনকে ভাড়া করে এই ঘটনায় ঘটান। কী কারণে এবং কত টাকায় ওই ব্যক্তিদের ভাড়া করা হয়েছিল, সে বিষয়ে জানতে পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

পুলিশ ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, গত ৪ ডিসেম্বর সকালে প্রাইভেট কারে চড়ে অফিসে যাচ্ছিলেন আসাদুজ্জামান খান ও বদরুল আরেফিন ভূঁইয়া। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁরা নগরের ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় পৌঁছালে তিন ব্যক্তি মোটরসাইকেলে এসে হঠাৎ সামনে থেকে তাঁদের গতি রোধ করে। মুহূর্তের মধ্যে গাড়িতে হামলা ও কাচ ভাঙচুর শুরু করে তারা। তাদের একজনের হাতে চাপাতি ছিল। গাড়ির কাছে এসে প্রথমে চাপাতি দিয়ে গাড়িতে কোপ দেয় একজন। এ সময় তারা ‘গুলি কর, গুলি কর’ বলে চিৎকার করতে থাকে। হামলা ও গুলি করার হুমকির মুখে ওই দুই কর্মকর্তা কোনোমতে গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পাশের একটি গলিতে আশ্রয় নেন।

হামলার পর কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খান ডবলমুরিং থানায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলা হওয়ার পরই মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল ঘটনার সূত্র উদ্‌ঘাটন এবং হামলাকারীদের শনাক্তে কাজ শুরু করে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে বান্দরবানের সিকদারপাড়া এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা হামলার দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করেছে। পরিকল্পনা করে এই হামলা চালানো হয়েছে।

ডিসি মোহাম্মদ মাহবুব আলম খান বলেন, ‘গ্রেপ্তার দুজনের সঙ্গে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কোনো পূর্বশত্রুতা ছিল না। হামলাকারীদের কত টাকায় ভাড়া করা হয়েছিল, আমরা এখনো জানতে পারিনি। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে যিনি ভাড়া করেছিলেন, তাঁর বিষয়ে তথ্য পেয়েছি। হামলার সময় যে মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ওই (ভাড়া করা) ব্যক্তির। তদন্তের স্বার্থে তাঁর পরিচয় এই মুহূর্তে প্রকাশ করা যাচ্ছে না।’

এদিকে হামলার পর কাস্টমস কর্মকর্তারা বলেছিলেন, অবৈধভাবে পণ্য খালাসে বাধা দেওয়ার কারণেই চট্টগ্রামে কাস্টমসের দুই কর্মকর্তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটতে পারে বলে তাঁদের ধারণা। প্রায় ৪০ কোটি টাকা মূল্যের দুটি চালান জব্দ করার কারণে একটি সংঘবদ্ধ মহল তাঁদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় মা-মেয়ে খুন: আগের চুরির সূত্র ধরেই গ্রেপ্তার হন আয়েশা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আয়েশা আক্তার
আয়েশা আক্তার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডের আসামি গৃহকর্মী আয়েশা আক্তার গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচ মাস আগের এক জিডিতে উল্লেখ থাকা গলায় পোড়া দাগের তথ্যের সূত্র ধরে। আয়েশার পরিচয় লুকানোর চেষ্টার কারণে সূত্রহীন ছিল পুলিশ। শেষ পর্যন্ত গলায় পোড়া দাগের তথ্যের সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের দুদিন পর গত বুধবার দুপুরে ঝালকাঠির নলছিটি থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তাঁকে। গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁর স্বামী রাব্বীও।

মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ এই জোড়া খুনের মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার গৃহকর্মী আয়েশাকে ৬ দিন ও তাঁর স্বামীকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।

মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি ১৪ তলা ভবনের সপ্তম তলার নিজেদের ফ্ল্যাটে গত সোমবার সকালে খুন হন গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর একমাত্র সন্তান নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। এ ঘটনায় সেদিন রাতে গৃহকর্মী আয়েশাকে একমাত্র আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত লায়লার স্বামী স্কুলশিক্ষক আ জ ম আজিজুল ইসলাম। খুনের মাত্র চার দিন আগে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওই বাসায় কাজ নিয়েছিলেন আয়েশা।

পুলিশের সূত্র জানায়, ঘটনার পর ভবনের সিসি ক্যামেরা ফুটেজে সোমবার সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে আয়েশার ভবনে প্রবেশ এবং সকাল ৯টার পর স্কুলড্রেস ও মাস্ক পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে একজনের বের হওয়ার তথ্য মেলে। তবে তাঁর মুখ ছিল ঢাকা। আয়েশার মোবাইল নম্বর, ছবি, চেহারার বর্ণনা, ঠিকানা—কিছুই ছিল না পুলিশের কাছে। ফলে তদন্তের শুরুতেই অন্ধকারে হাতড়াতে হয়েছে।

তদন্তকারীরা জানান, আয়েশার চুরির অভ্যাস নতুন নয়। এর আগে জুলাইয়ে কাছাকাছি আরেকটি বাসায় ৮ হাজার টাকা চুরির ঘটনায় গৃহকর্মীর বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল মোহাম্মদপুর থানায়। সেখানে অভিযুক্তের গলায় পোড়া দাগ থাকার তথ্য ছিল।

ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, আগের একটি জিডির নথি ঘেঁটে পুলিশ জানতে পারে জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় এমন এক গৃহকর্মীর নাম আয়েশা, যাঁর গলায় পোড়া দাগ রয়েছে। সেখান থেকেই পাওয়া যায় একটি পুরোনো মোবাইল নম্বর, যার সূত্রে সামনে আসে রাব্বী নামের একজন যুবক। তাঁর দেওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখা যায়, রাব্বীর স্ত্রীই আয়েশা, যিনি গৃহকর্মীর কাজ করেন এবং জেনেভা ক্যাম্পের ভাড়া বাসায় থাকেন। এই সূত্র ধরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিশ্চিত হয় পুলিশ।

পুলিশ জানায়, আয়েশা ও রাব্বীর সম্ভাব্য অবস্থান ধরে সাভারের হেমায়েতপুর, পটুয়াখালীর দুমকী হয়ে শেষ পর্যন্ত ঝালকাঠির নলছিটিতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উদ্ধার হয় ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। বাসায় কাজ শুরুর দ্বিতীয় দিনে তিনি ২ হাজার টাকা চুরি করেন। এ নিয়ে গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে তাঁর তর্ক-বিতর্ক হয়; তাঁকে পুলিশের দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। চতুর্থ দিন কাজে যাওয়ার সময় তিনি সঙ্গে করে একটি সুইচ গিয়ার চাকু নেন। চুরির বিষয়টি নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি লায়লা আফরোজকে ছুরিকাঘাত করেন। নাফিসা এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে নিজের রক্তাক্ত পোশাক বদলে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যান আয়েশা। এরপর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে পোশাক পাল্টে সাভারের দিকে যান। পথে সিঙ্গাইর সেতু থেকে ফেলে দেন রক্তমাখা কাপড় ও চুরি করা মোবাইল।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, ঘটনার সময় নাফিসা ঘুমাচ্ছিল। ধস্তাধস্তির শব্দে জেগে উঠে নিরাপত্তাকর্মীকে জানাতে ইন্টারকম ধরতেই তাকে আক্রমণ করেন আয়েশা।

পুলিশের ধারণা, কেবল ২ হাজার টাকার বিষয় নয়, আগে থেকেই আয়েশার চুরির পরিকল্পনা ছিল। ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় জোড়া খুন করেছেন।

পুলিশ বলছে, আয়েশার স্বামী রাব্বীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁকে পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে। গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি এবং বিশ্বাসযোগ্য দু-একজনের যোগাযোগ নম্বর সংরক্ষণের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

এদিকে গতকাল আয়েশা ও রাব্বীকে এই হত্যা মামলায় আদালতে হাজির করে মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক মো. সহিদুল ওসমান মাসুম প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম শুনানি শেষে আয়েশার ৬ দিন ও তাঁর স্বামীর ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে তাঁদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

আদালতের সহকারী পিপি হারুন-অর-রশিদ রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গৃহকর্মী আয়েশা খুনের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। তবে খুনের মূল রহস্য কী, তা খুঁজে বের করতে এবং এ ঘটনার পেছনে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তা উদ্ঘাটনের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন। রাব্বীও এই ঘটনায় জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত