Ajker Patrika

রাজনীতির বেশে ব্যবসায় ফিরতে চান গডফাদাররা

শাহরিয়ার হাসান, টেকনাফ থেকে
রাজনীতির বেশে ব্যবসায় ফিরতে চান গডফাদাররা

রাজনীতিই সবকিছুর রক্ষাকবচ। ক্ষমতার দাপটের পাশাপাশি রয়েছে সম্মানও। নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধি যাই করুক না কেন সেটাই বৈধ। হয়রানিরও ভয় থাকে না। রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে এমন ভাবনা কক্সবাজারের টেকনাফের ইয়াবা কারবারিদের। তাঁরা মনে করেন, রাজনীতিতে আসতে পারলেই তাঁদের সব সমস্যার সমাধান হবে। তাই কারাগার থেকে ফিরে এসেই রাজনৈতিক দলে ভিড়ে এবার নির্বাচন করতে চান তাঁরা।

দুই বছর আগে কক্সবাজারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে আত্মসমর্পণকারী ১০২ ইয়াবা কারবারির সবাই এখন জামিনে। সে সময় পুলিশ আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে ৩০ জনকে আলাদা করে ‘ইয়াবা গডফাদার’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জামিনে বের হয়ে এসে এই গডফাদাররা এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

স্বঘোষিত এই ইয়াবা কারবারিরা বলছেন, জনপ্রতিনিধি হয়ে এবার তাঁরা ‘জনসেবা’ করতে চান। সঙ্গে নিজের পেশা ও নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে চান। করোনা মহামারির কারণে বন্ধ থাকা টেকনাফের ৫ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন ও আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, তাই মাঠ কাঁপাচ্ছেন চিহ্নিত এই ইয়াবা কারবারিরা।

তবে সাধারণ ভোটাররা ইয়াবা কারবারিদের রাজনীতিতে নামা নিয়ে শঙ্কিত। ক্ষমতা দেখিয়ে তাঁরা আগের মতো ইয়াবার রাজত্ব কায়েম করবেন–এমন আশঙ্কা সবার। এঁরা যেন মনোনয়ন না পান, তা দেখার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি নিজেও মনে করি, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা জনপ্রতিনিধি হলে আবারও ব্যবসায় জড়ানোর আশঙ্কা আছে। পুলিশের কাছে তাদের বিষয়ে এমনই তথ্যও আছে। তবে সবাইকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’
টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশরের দাবি, আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা কারবারিদের জামিনের পেছনে তদবির কাজ করেছে। জামিনে বের হয়ে এসে তাঁরা এখন আরও ভয়ানক হয়ে উঠেছেন। কারাগারে বসেই তাঁরা ইয়াবা সিন্ডিকেট চালিয়েছেন। এখন বের হয়ে এসে গডফাদাররা একটা সাইনবোর্ড খুঁজছেন। যেটা সামনে রেখে ব্যবসাটা বৈধ করা যায়। তাই উপজেলার মেয়র, কাউন্সিলর থেকে শুরু করে ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার হওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। 

নির্বাচনে অংশ দিচ্ছেন যাঁরা
জানা যায়, আত্মসমর্পণের আগেই বেশ কয়েকজন মাদক কারবারি স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন।

১০২ জনের মধ্যে টেকনাফ পৌরসভা ও ছয়টি ইউনিয়নের অন্তত ২৭ জন নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন।

সূত্র বলছে, আত্মসমর্পণ করা মাদক কারবারিদের একজন আব্দুর শুক্কুর, যিনি পুলিশের তালিকায় এক নম্বর ইয়াবা গডফাদার। জামিনে বের হয়ে তিনি এখন টেকনাফ পৌরসভার মেয়র নির্বাচন করতে চান। তিনি মেয়র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি আগে ব্যবসা (ইয়াবা) করতাম। এখন আত্মসমর্পণ করে জামিনে রয়েছি। জনগণ চায় আমি মেয়র পদে নির্বাচন করি। তা ছাড়া রাজনীতিতে থাকা ভালো। অন্যায়ভাবে কেউ হয়রানি করতে পারে না। সম্মান আর ক্ষমতাও আছে।’ 

শুধু শুক্কুর নন টেকনাফ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে অন্তত ২০ জন চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি প্রচার চালাচ্ছেন। কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচন করতে চান আরেক ইয়াবা গডফাদার মোহাম্মদ জোবায়ের। তিনি বলেন, ‘আমি আর মাদকের সঙ্গে নেই। এখন একটু জনসেবা করতে চাই। তা ছাড়া টেকনাফের মতো জায়গায় টিকে থাকতে হলে আপনাকে কোনো না–কোনো দিক দিয়ে ক্ষমতাবান হতে হবে। এটার বিকল্প নাই।’

টেকনাফ সদর ইউপির চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে যাঁরা প্রচার শুরু করেছেন সেই পাঁচজনের মধ্যে তিনজনই চিহ্নিত ইয়াবা কারবারি। যাঁর মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়াও আছেন। যাঁর বিরুদ্ধে ইয়াবা ও অস্ত্র আইনে কয়েকটি মামলা রয়েছে। তাঁর দাবি, প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রের শিকার তিনি। তিনি ইয়াবা গডফাদার ছিলেন না। তাঁর সঙ্গে ইয়াবা কারবারিদের পরিচয় ছিল, তাতেই পুলিশ তাঁকে সন্দেহ করে।

শাহপরীর দ্বীপ ইউপির সদস্য রেজাউল করিম রেজা। যিনি আবার ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি। আত্মসমর্পণ করে ছয় মাস আগে জামিনে কারাগার থেকে বের হয়েছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি স্থানীয় দলীয় ষড়যন্ত্রের শিকার। ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায় আমাকে বলা হচ্ছে গডফাদার। কিন্তু আসলে আমার সঙ্গে এ ব্যবসার কোনো সম্পর্ক নেই। জীবন বাঁচাতে আত্মসমর্পণ করেছি। জনগণ জানে, আমি কেমন? তাই আমি আবার ভোট করব।’

তথ্য বলছে, এ ছাড়া সাবরাং ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ১৪ জন, বাহারছড়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ৫ জন, হ্নীলা ইউনিয়নে চেয়ারম্যানে প্রার্থীসহ ১১ জন, হোয়াইক্যং ইউনিয়নে ৭ জন এবং সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নে ৩ জন প্রার্থী রয়েছেন। যাঁরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি ও কথিত গডফাদার।

কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আইনজীবী আয়াছুর রহমান বলেন, আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা কারবারিরা স্বঘোষিত মাদক কারবারি। যাঁরা আদালতের মাধ্যমে জামিন পেয়ে এলাকায় ফিরেছেন। এঁরা যদি জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আসেন, মাদক আর কোনো দিন রোধ হবে না। 

ইয়াবা কারবারিরা জামিন পেলেন যেভাবে
 ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ইয়াবা কারবারিরা আত্মসমর্পণের সময় ৩ লাখ ইয়াবা বড়ি এবং ৩০টি আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ৷ তাঁদের প্রত্যেককে অস্ত্র ও মাদক আইনের দুইটি মামলায় আসামি করা হয় ৷ ১০২ জনের মধ্যে ১ জন কারাগারে মারা যান ৷ কারাগারে যাওয়ার সাত মাস পর প্রথম ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট থেকে ৫ জন জামিন পান ৷ এরপর ৫ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পান ৭ জন ৷ একই আদালত থেকে ৩ নভেম্বর জামিন পান ১৫ জন ৷ ধাপে ধাপে ১০১ জনই জামিনে বেরিয়ে এসেছেন।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ফরিদুর আলম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা কারবারিরা সবাই জামিন পেয়েছেন। তাঁরা যেহেতু একটা শর্তে আত্মসমর্পণ করেছিলেন, তাই তাঁদের মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্র সেভাবেই দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য এত দ্রুত অস্ত্র ও মাদক মামলায় জামিনে বেরিয়েছেন।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আত্মসমর্পণে কিছু শর্তের মাধ্যমে তাঁরা আইনের আওতায় এসেছেন। প্রক্রিয়া অনুসারেই তাঁদের জামিন হয়েছে। তবে মামলা এখনো বিচারাধীন। আমাদের নজরদারিতে আছেন তাঁরা।’ 

আবারও ফিরছেন মাদক ব্যবসায় 
গত ২২ মে রাতে টেকনাফ হ্নীলা ইউপির রঙ্গিখালী এলাকা থেকে ১০ হাজার ইয়াবা বড়িসহ চার মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা গডফাদার জামাল হোসেনের ছেলে শাহ আলম। তিনিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। জামিনে বেরিয়ে এসে আবার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন।

টেকনাফ থানার ওসি হাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আত্মসমর্পণ করা ইয়াবা কারবারিরা আবার ব্যবসায় ফিরেছেন। যে কারণে জামিনে থাকা কারবারিদের ওপর বিশেষ নজর রাখছে পুলিশ।’ 

বাকি গডফাদারদের গ্রেপ্তারে তৎপরতা নেই
মাদক ব্যবসায় জড়িত পুলিশের তালিকায় থাকায় আরও হাজারখানেক মানুষকে গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে পুলিশের বিশেষ কোনো তৎপরতা নেই। দুই দফায় ১২৩ কারবারি আত্মসমর্পণ করলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৪০ জন গডফাদার এখনো আত্মসমর্পণ করেননি। গত দুই বছরে তাঁরা গ্রেপ্তারও হননি। 
চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অনাগ্রহের কথা জানিয়ে কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, তালিকায় থাকা সত্ত্বেও তাঁরা লোকালয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কিন্তু পুলিশ তাঁদের ধরছে না। মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে প্রশাসনের আগ্রহ কমে গেছে। যে কারণে বর্তমানে ব্যবসা বেড়ে গেছে। তাঁর দাবি, কৌশলে ইয়াবা ব্যবসার হোতাদের টিকিয়ে রাখা হচ্ছে।

সূত্র বলছে, গডফাদারের তালিকায় থাকা ৪০ জন পালিয়ে থাকলেও এখন সবাই এলাকায় ফিরেছেন। নাজিরপাড়ার ভুট্টো, মৌলভীপাড়ার এশরাম, আব্দুর রহমান, রেঙ্গুর বিলের মীর কাসিমের মতো কারবারিরা পুলিশের সামনেই থাকেন। নিয়মিত যাতায়াত আছে থানাতেও।

পুলিশের তালিকায় থাকার পরও গ্রেপ্তার হচ্ছে না সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির ভাই টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর মৌলভি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভি রফিক উদ্দীন, তাঁর ভাই ইউপি চেয়ারম্যান মৌলভি আজিজ উদ্দীন, রহমান, কাউন্সিলর শাহ আলম, রেজাউল করিম মানিক, মোহাম্মদ হোসেন, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মেম্বার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, আজম উল্লাহ, মোহাম্মদ আলম, সাবরাং ইউনিয়নের মাহমুদুর রহমান, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের রাকিব আহমেদেরা। 

মাদক কারবারিদের কথা ভুলে গেছে সিআইডি ও দুদক 
দুই বছর আগে কক্সবাজারের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারিদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের অনুসন্ধানে নেমেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও সিআইডি। প্রাথমিক অনুসন্ধানে সংস্থা দুইটির তদন্তে, কারবারিদের অনেকের শতকোটি টাকার মালিক হওয়ার তথ্য পেয়েছিল তারা। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সিআইডি মাত্র ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। কিন্তু জব্দ করেনি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। এমনকি পরে আর এগোয়নি এসব মামলার তদন্তও। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চিত্রনায়ক সালমান শাহর হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
আজ বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে সালমান শাহর ভক্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে সালমান শাহর ভক্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চিত্রনায়ক সালমান শাহর হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তরুণ প্রজন্মের আইডল চিত্রনায়ক সালমান শাহর হত্যা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তাঁর হত্যার রহস্য এখনো উন্মোচন করা হয়নি।

বক্তারা জোর দাবি জানান, এখন সময় এসেছে প্রকৃত তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার করা এবং কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা।

চুয়াডাঙ্গা সালমান শাহ ভক্তকুলের উদ্যোগে আয়োজিত এই মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন নাফিসা সুরভি। অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিরণ উর রশিদ শান্ত প্রধান অতিথি হিসেবে এবং শাহাবুদ্দিন আহমেদ বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। এ সময় সালমান শাহর বিপুলসংখ্যক ভক্ত উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের জনপ্রিয় এই চিত্রনায়ককে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকার ইস্কাটনে তাঁর নিজ বাড়িতে কৌশলে হত্যা করা হয়। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর তাঁর মা নীলা চৌধুরী মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করেন। এই হত্যা মামলায় সালমান শাহর স্ত্রী সামিরাসহ মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিরাজগঞ্জে কষ্টিপাথরের তৈরি শিবলিঙ্গসহ আটক ৩

সিরাজগঞ্জ ও তাড়াশ প্রতিনিধি
কষ্টিপাথরের তৈরি শিবলিঙ্গ। ছবি: সংগৃহীত
কষ্টিপাথরের তৈরি শিবলিঙ্গ। ছবি: সংগৃহীত

সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার দবিরগঞ্জ গ্রামে অভিযান চালিয়ে একটি মূল্যবান কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ উদ্ধার করেছে র‍্যাব। শিবলিঙ্গটি বিদেশে পাচারের চেষ্টার অভিযোগে তিনজনকে হাতেনাতে আটক করা হয়।

আটক করা তিনজন। ছবি: সংগৃহীত
আটক করা তিনজন। ছবি: সংগৃহীত

আজ শনিবার (১ নভেম্বর) র‍্যাব-১২-এর পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। র‍্যাব-১২ সদর কোম্পানির একটি আভিযানিক দল গতকাল (৩১ অক্টোবর) বিকেলে সিরাজগঞ্জ জেলার সলঙ্গা থানার দবিরগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা পলাতক আসামি হামিদুর রহমান ওরফে লাবুর বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে। ওই বাড়ি থেকে মূল্যবান কষ্টিপাথরের তৈরি শিবলিঙ্গটি উদ্ধার করা হয়।

এ সময় পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তাঁরা হলেন সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার ভেংরী গ্রামের মৃত সাইদুল ইসলামের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলম বাবলু (৫২), দবিরগঞ্জ গ্রামের মৃত হারুন অর রশিদের ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম (৫২) এবং একই গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মো. কফিল উদ্দিন (৪৮)।

তাঁদের কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেল এবং তিনটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে সলঙ্গা থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।

সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আসামিদের পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাঁদেরকে জেলহাজতে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মারধরের শিকার কিশোরের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
নিহত মো. শিহাব। ছবি: সংগৃহীত
নিহত মো. শিহাব। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মারধরের শিকার এক কিশোর ১২ দিন পর মারা গেছে। নিহত কিশোরের নাম মো. শিহাব (১৭)। সে উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের মিজানুর রহমান রিপনের ছেলে। রিপনের এক ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে শিহাব ছিল সবার বড়। চলতি বছর এসএসসি পাস করে সে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে ছিল শিহাব। শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে সে মারা যায়। এর আগে গত ২০ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। প্রচণ্ড মারধরের পর থেকে সে অচেতন অবস্থায় ছিল।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিহাব ২০ অক্টোবর পার্শ্ববর্তী বান্দুড়িয়া এলাকায় তার প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে যায়। সে তেঁতুলতলা বাঁকের কাছে গেলে তার প্রেমিকার আত্মীয়স্বজন তাকে তাড়া দেয়। শিহাব নিজেকে রক্ষা করতে রাতের আঁধারে মাঠের মধ্যে দৌড় দেয়। একপর্যায়ে শিহাব দিক হারিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দেয়। এ সময় তাকে পুকুর থেকে তুলে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়।

একপর্যায়ে শিহাব জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে ঢলে পড়ে। পরে তাকে ফেলে রেখে চলে যায় তারা। তারপর স্থানীয় লোকজন ও পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। মাথায় গুরুতর আঘাত থাকায় তার জ্ঞান ফেরেনি। তাই তাকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। সেখানেই সে মারা যায়।

শিহাবকে নির্যাতনের ঘটনায় তার বাবা রিপন ২৪ অক্টোবর রাতে রতন আলী (৩২), মো. কানন (২২), সুজন আলী (৩২), ইয়ার উদ্দীন (৩২), মো. শরীফ (৩৫), মো. রাব্বি (২৫), মো. হালিম (৩০) এবং মো. কলিমের (৩২) নাম উল্লেখসহ এবং আরও ৮-৯ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে গোদাগাড়ী থানায় মামলা করেন। তবে শনিবার দুপুর পর্যন্ত তাঁদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি থানা-পুলিশ।

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে শিহাব হামলার শিকার হয়েছিল। তিনি তার মৃত্যুর খবর শুনেছেন। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর হামলার ঘটনায় আগেই করা মামলাটি এখন হত্যা মামলায় রূপান্তর হবে বলে জানান ওসি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৮ দফা দাবিতে সিলেট বিভাগে রেলপথ অবরোধ, আটকা পড়েছে পারাবত ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেস

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ৩৬
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে পারাবত এক্সপ্রেস আটকে দেন আন্দোলনকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে পারাবত এক্সপ্রেস আটকে দেন আন্দোলনকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

আখাউড়া-সিলেট রেল সেকশনে বন্ধ থাকা সব রেলস্টেশন পুনরায় চালু করাসহ ৮ দফা দাবিতে আজ শনিবার (১ নভেম্বর) সিলেট বিভাগের রেলপথ অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এই অবরোধের কারণে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পারাবত এক্সপ্রেস এবং সিলেট থেকে ছেড়ে আসা পাহাড়িকা এক্সপ্রেস আটকা পড়েছে।

কুলাউড়া স্টেশনমাস্টার মো. রোমান আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ‘৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন’ আন্দোলনের ব্যানারে সিলেট বিভাগে রেলপথ অবরোধ করা হয়েছে। অবরোধকারীদের বাধার মুখে সিলেটগামী পারাবত ও চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস আটকা পড়েছে।

কুলাউড়া রেলস্টেশন অবরোধ করছেন আন্দোলনকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুলাউড়া রেলস্টেশন অবরোধ করছেন আন্দোলনকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সকাল থেকে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন রেলস্টেশন অবরোধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারীরা। এর ফলে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পারাবত এক্সপ্রেস প্রথমে শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশন ও পরে কুলাউড়া স্টেশনে আটকে দেওয়া হয়।

একই সঙ্গে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা পাহাড়িকা এক্সপ্রেস মাইজগাঁও রেলস্টেশনে আটকে দেওয়া হয়েছে।

শ্রীমঙ্গল স্টেশনমাস্টার শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা কিছু সময় পারাবত এক্সপ্রেস আটকে রেখেছিল, পরে ছেড়ে দিয়েছে।’

দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে ‘৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন কমিটি’ সিলেট-আখাউড়া রেলপথের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ রেলপথ অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। তাদের প্রধান দাবিগুলো হলো: সিলেট-ঢাকা এবং সিলেট-কক্সবাজার রেলপথে দুটি নতুন আন্তনগর ট্রেন চালু করা। সিলেট-আখাউড়া সেকশনের রেলপথ সংস্কার করে ডুয়েলগেজে উন্নীত করা। সিলেট অঞ্চলে বন্ধ হয়ে যাওয়া রেলস্টেশনগুলো এবং সিলেট-আখাউড়া লোকাল ট্রেন পুনরায় চালু করা। কুলাউড়া স্টেশনে টিকিটের বরাদ্দ বাড়ানো ও কালোবাজারি বন্ধ করা।

সিলেট থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর কালনী ও পারাবত এক্সপ্রেসের আজমপুর স্টেশন-পরবর্তী যাত্রাবিরতি বন্ধ করা। সব ট্রেনে নতুন ইঞ্জিন ও যাত্রী অনুপাতে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা।অবরোধকারীরা বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছি। আমাদের দাবিগুলো যুক্তিসংগত, কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ তা মানছে না। তাই বাধ্য হয়ে আজ আমরা সিলেট বিভাগের রেলপথ অবরোধের ডাক দিয়েছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত