Ajker Patrika

রাবার ইন্ডাস্ট্রি প্রকৃতি ধ্বংসকারী প্রজেক্ট: আনু মুহাম্মদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
রাবার ইন্ডাস্ট্রি প্রকৃতি ধ্বংসকারী প্রজেক্ট: আনু মুহাম্মদ

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদেশি পর্যটকেরা আসে এখানকার জীববৈচিত্র্য দেখার জন্য, পাঁচতারা হোটেলে থাকার জন্য নয়। মূলত ব্যবসা করার জন্য একটি মহল এখানে পাঁচতারা হোটেলে করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ। অবিলম্বে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের আগ্রাসন থেকে ওই এলাকার প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।

আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘লামা সরই ভূমি রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন আনু মুহাম্মদ। বৈঠকে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের ভূমি দখল বন্ধ করে এবং ম্রো ও ত্রিপুরাদের ভোগ দখলীয় ৪০০ একর জুম ভূমিসহ কোম্পানি কর্তৃক দখলকৃত জমি ফেরত দেওয়ার দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।

ত্রিপুরা, ম্রো, বম, চাক, থিয়াং, লুসাই, পাংখোয়া, খুমি, তঞ্চঙ্গ্যা, চাকমা, মারমাসহ সব মিলিয়ে ১১টি জাতিসত্তার জনগণ যুগ যুগ ধরে এই এলাকায় বসবাস করে আসছে। প্রথাগত ভূমি ব্যবস্থাপনা ও বনের ওপর নির্ভর করে এখানকার মানুষের জীবন-জীবিকা ও সামাজিক রীতি-নীতি গড়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন আনু মুহাম্মদ।

বৈঠকে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের এক-দশমাংশ এলাকা নিয়ে গঠিত একটি বিশেষ অঞ্চল। এ অঞ্চলের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে জুমচাষ পদ্ধতি, যা বনভূমির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে ঔপনিবেশিক শাসন, ব্যাপক সামরিকায়ন, সেটলারদের অনুপ্রবেশ, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বন থেকে গাছ আহরণ, রাবারসহ বিভিন্ন বাগান ও পর্যটনের নামে ভূমি বেদখল ইত্যাদির কারণে পাহাড়িদের জীবিকার অবলম্বন জুমচাষের ভূমি ক্রমে সংকুচিত হওয়ার ফলে বেঁচে থাকা এখন দায় হয়ে পড়েছে।’

পার্বত্য চট্টগ্রামের রাবার ইন্ডাস্ট্রির বিরুদ্ধে জমি দখল ও অত্যাচারের প্রতিবাদ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘একই ধরনের ঘটনা বিভিন্ন জায়গায় ঘটছে। যেহেতু পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষদের রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো স্বীকৃতি নেই সেহেতু ওদের আক্রমণ করা সবচেয়ে সহজ। তাই তারা এই দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে।’ যে আইনে রাবার বাগান করা হয়েছে তা জনস্বার্থ বিরোধী বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

আমাদের দেশে শুধু ব্যক্তি বিনিয়োগ হিসাব করা হয়। ৫০০ কোটি টাকা লাভ করতে গিয়ে প্রকৃতি ধ্বংস করা হচ্ছে বলে দাবি করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক। তাঁর বক্তব্যে আরও উঠে আসে ২৮টি শর্ত অনুযায়ী ১০ বছরের মধ্যে লাভ না হলে রাবার ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ করতে হবে। কিন্তু আইন ভঙ্গ করে এই রাবার বাগান এখনো চলছে। 

জুমচাষ বেআইনি নয় উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মেঘনা গুহ ঠাকুরতা বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জমি দখলের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। দখলকৃত জমিগুলো ফেরত দিতে হবে। জমি যেন আর দখল করতে না পারে সে জন্য সংশ্লিষ্টদের সজাগ থাকতে হবে।’ 

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কেবল অন্যায়ভাবে পাহাড়িদের জমি বেদখল ও উচ্ছেদের অপরাধে জড়িত নয়, এই কোম্পানিটি প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের জন্যও দায়ী। গত ২৬ এপ্রিল লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ তাদের যে জুমভূমি পুড়িয়ে দেয় সেখানে সে সময় পুরো প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হয়ে যায়। ঝরনার পানি বিষাক্ত হয়। এ কারণে বর্তমানে ওই এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি পাওয়া অত্যন্ত দুষ্কর হয়ে পড়েছে। যারা ক্ষতির শিকার হয়েছে তারা নিজ ভূমিতে পরবাসীর মতো দিন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হামলা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত