Ajker Patrika

পুলিশে অপরাধের শাস্তি বদলি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৩, ১৫: ১৬
Thumbnail image

পুলিশ হেফাজতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর মৃত্যুর পর চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলামকে বদলি করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় এক অফিস আদেশে চান্দগাঁও থানার ওসি খাইরুল ইসলামকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের বন্দর জোনে বদলি করেন।

খাইরুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল কবীর। ওই আদেশে আরও পাঁচ পুলিশ পরিদর্শককে বদলি করা হয়। তাঁরা হলেন সন্তোষ কুমার চাকমা, রুবেল হালদার, এ আই এম তৌহিদুল করিম, রফিক উল্লাহ ও মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। তাঁদের মধ্যে সন্তোষ কুমার চাকমাকে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পদ থেকে বদলি করে একই পদে পাঁচলাইশ থানায় পদায়ন করা হয়েছে। রুবেল হালদারকে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) থেকে বদলি করে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদে পদায়ন করা হয়েছে।

এর আগে থানা হেফাজতে কলেজছাত্রকে মারধর, চাঁদাবাজিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠার পর নগরের আরেক পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদারকে বদলি করা হয়। এরও আগে এরকম বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়। কিন্তু কয়েক মাস না যেতেই প্রভাব খাটিয়ে তাঁরা ফিরে আসেন গুরুত্বপূর্ণ পদে। জড়িয়ে পড়েন নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে।

গত ৩ অক্টোবর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার পুলিশ দুদকের অবসরপ্রাপ্ত উপপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে (৬৪) গ্রেপ্তার করে। তাঁর বাসা নগরীর চান্দগাঁও থানার এক কিলোমিটার এলাকায়। গ্রেপ্তারের পর চান্দগাঁও থানা হেফাজতে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে মারা যান তিনি। শহীদুল্লাহর পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশ নির্দয় আচরণ করে। এ ঘটনায় ১৬ অক্টোবর তাঁর স্ত্রী বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই। 

মামলায় ৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। সেখানে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলামও রয়েছেন। 

থানা হেফাজতে কলেজছাত্রকে মারধর, চাঁদাবাজিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠার পর গত ২০ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন মজুমদারকে বদলি করা হয়। তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ শাখায় (সিটিএসবি)।

গত বছরের মার্চে ওসি হিসেবে পাঁচলাইশ থানায় যোগদান করেন নাজিম উদ্দিন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসতে শুরু করে। গত জানুয়ারি মাসে মো. মোস্তাকিম নামে এক কলেজছাত্রকে থানায় ধরে এনে বেধড়ক পেটান তিনি। এ ঘটনায় ২২ ফেব্রুয়ারি আদালতে মামলা করেন মোস্তাকিম। সর্বশেষ ১৭ আগস্ট তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি ও বাড়ি দখলের অভিযোগ এনে আদালতে আরেকটি মামলা করেন শামীমা ওয়াহেদ নামে এক নারী। 

২০১৮ সালে লন্ডনপ্রবাসীর প্ররোচনায় অস্ত্র ও ইয়াবা দিয়ে সমর চৌধুরী নামে শিক্ষানবিশ এক আইনজীবীকে ফাঁসানোর অভিযোগে বিতর্কের মুখে পড়েন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিমাংশু দাশ রানা। পরে ওই বছরের ২৭ আগস্ট তাঁকে শাস্তি হিসেবে শুধু বদলি করা হয়। যদিও ওই সময় পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা প্রশাসনিক কারণে ওসি হিমাংশু দাস রানাকে বদলি করা হয়েছে বলে জানান।

ওই বছরের ২৭ মে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার পুলিশ সমরকে নগরের লালদীঘির পাড় এলাকা থেকে আটক করে। এরপর তাঁকে গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের দক্ষিণ সারোয়াতলী গ্রামে নিয়ে যায়। বাড়ি থেকে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করে বোয়ালখালীর পুলিশ।

গ্রেপ্তারের পর থেকে সমরের পরিবার দাবি করে আসছিল, তাঁদের গ্রামের লন্ডনপ্রবাসী যুবক সঞ্জয় দাশের সঙ্গে তাঁর প্রতিবেশী স্বপন দাশের জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ আছে। স্বপন দাশকে আইনি পরামর্শ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সঞ্জয় দাশ পুলিশকে ব্যবহার করে সমরকে দুটি মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। সঞ্জয় দাশের প্ররোচনায় পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি মনির-উজ-জামানের নির্দেশে ওসি হিমাংশু কুমার দাশ সমরকে ফাঁসিয়ে দেন বলে অভিযোগ করে সমরের পরিবার।

অপরাধভেদে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘কঠোর শাস্তি না হওয়ায় পুলিশ বেপরোয়া। এখন দেখবেন, আগের মতো কেউ পুলিশকে বিশ্বাস করে না। সুনাম ফিরিয়ে আনতে হলে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত