Ajker Patrika

‘পরিত্যক্ত’ ভবনে এতিম শিশুদের বাস

প্রতিনিধি
‘পরিত্যক্ত’ ভবনে এতিম শিশুদের বাস

দেবীদ্বার (কুমিল্লা): চারতলাবিশিষ্ট ভবনটির ১৬টি কক্ষের চারপাশের প্রায় দেড় শ জানালার একটিরও গ্লাস নেই। মরিচা ঝুর ঝুরে হয়ে গেছে গ্রিলও। খসে পড়েছে ছাদের পলেস্তারা। দেয়ালে বড়-বড় ফাটল, অল্প ঘষাতেই প্লাস্টার খসে পড়ছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠানামার সময় পুরো ভবনই কাঁপে। এমন বেহাল দশার মধ্যে আতঙ্কে বাস করছে প্রায় ৬১ এতিম শিশু।

কুমিল্লা দেবীদ্বার উপজেলার সরকারি শিশু পরিবারের আবাসিক ভবনটির এই হলো বর্তমান অবস্থা। ভবনের এই দুরবস্থার মধ্যে রয়েছে বিশুদ্ধ পানীয়জলের সংকট, অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, শিশুদের পাঠদানে অবহেলা, পয়োনিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকাসহ নানা সমস্যা। সেই সঙ্গে প্রতিটি কক্ষের দরজা, শোয়ার খাট ও চেয়ার-টেবিল ভাঙা। শীতের সময় কনকনে ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশুরা। কোমলমতি এসব শিশুর জন্য বৃষ্টির দিনগুলো আরও ভয়াবহ। ভাঙা দরজা-জানালা দিয়ে বৃষ্টির ছাঁট এসে ভিজে যায় বিছানাপত্র। ভবনের পাশে বর্জ্য ও নোংরা পানি নিষ্কাশনের নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা। দীর্ঘদিনের ময়লা পানি ও বর্জ্য জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব ও রোগ-জীবাণু। এ ছাড়া শৌচাগারে যাওয়ার পথের মেঝেতে বারো মাস জমে থাকে নোংরা পানি।

১৯৯৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলার গুনাইঘর মৌজায় তিন একর জায়গায় ১০০ শয্যার এ শিশু পরিবারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ফজলুর রহমান। শুরুর দিকে ধারণক্ষমতার সমান শিশু থাকলেও নানা অসংগতির কারণে বর্তমানে প্রায় ৬১ এতিম থাকছে এখানে।

শিশুদের অভিযোগ, সব সময়ই আমাদের আতঙ্কে থাকতে হয়। ঝড় বৃষ্টিতে বা তীব্র বাতাসে ভবন কাঁপে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার রান্না ও বিতরণ করা হয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী খাবারের মেনু ঠিক রাখা হয় না। রান্নার চাল, ডাল ও তরকারি ধোয়া এবং রান্নাঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করানো হয় তাদের দিয়ে। লেখাপড়া করানোর জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষক থাকলেও তারা প্রায় সময়ই অনুপস্থিত থাকেন।

অন্যদিকে, শিশু পরিবারের উত্তর পাশে উপ-তত্ত্বাবধায়ক, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক ও স্বাস্থ্য সহকারীর দুইতলা ও একতলাবিশিষ্ট দুটি বাসভবন দীর্ঘদিন থেকে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় রাতে কেউ থাকে না বাসভবন দুটিতে। এ ছাড়া শিশু পরিবারের মূল ফটকের সামনের সড়কে নেই কোনো স্পিড ব্রেকার। দ্রুতগামী যানবাহনের কারণে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় কোনো দুর্ঘটনা।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মুজিবুর রহমান জানান, শিশু পরিবারটি অনেক সমস্যার মাঝেও জাতীয় স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে কুচকাওয়াজ এবং ডিসপ্লেতে অংশ নিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে আসছে। খাবার ও অন্যান্য বরাদ্দ সঠিকভাবে বণ্টন করা উচিত। জরাজীর্ণ এই ভবনটি ভেঙে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ করা দরকার।

দেবীদ্বার সরকারি শিশু পরিবারের ভারপ্রাপ্ত উপ-তত্ত্বাবধায়ক মো. কবীর আহমেদ বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে শিশু পরিবারের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির কথা লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। সংস্কারের বরাদ্দ এসেছে। খুব শিগগিরই সংস্কার কাজ শুরু হবে।

ভবনটি দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাকিব হাসান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত