Ajker Patrika

‘স্ত্রীকে খুনের পর লাশ টুকরো টুকরো করে কমোডে ফেলে দেন স্বামী’

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
ফাতেমা বেগম ও মো. সুমন। ছবি: সংগৃহীত
ফাতেমা বেগম ও মো. সুমন। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে বায়েজিদে নিজ বাসায় স্ত্রীকে খুনের পর লাশ কেটে টুকরো করে তা বাথরুমের কমোডে ফেলে দিয়েছিলেন মো. সুমন। তবে লাশের একটি অংশ ও রক্তাক্ত কাপড়-চোপড় সরানোর আগেই প্রতিবেশীরা ওই বাসায় চলে আসার পর সেগুলো দেখে ফেলে। এ সময় সুমনকে একটি কক্ষে বন্দী করে পুলিশে খবর দিলে তিনি জানালার গ্রিল ভেঙে পালিয়ে যান। স্ত্রীকে খুনের মামলায় সুমনকে (৩৫) গ্রেপ্তারের পর আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে চান্দগাঁও ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৭ এমন তথ্য জানিয়েছে।

গতকাল শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ফুলবাড়িয়া থেকে সুমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত বুধবার (৯ জুলাই) দিবাগত রাতে নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার পাহাড়িকা হাউজিং সোসাইটির আর কে টাওয়ার নামের একটি ভবনের ১০ তলার বাসায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ফাতেমা বেগম (৩২)। তিনি তাঁর স্বামী সুমনের সঙ্গে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন। সুমন পেশায় একজন গাড়িচালক।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘নৃশংস এই খুনের ঘটনায় র‍্যাব শুরু থেকে নজরদারি করে আসছিল। এর ধারাবাহিকতায় সুমনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আসামি সুমনকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে আমাদের জানিয়েছেন, তাঁদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য কলহ চলছে। সুমন দাবি করেছেন, তাঁর স্ত্রী নাকি পরকীয়া সম্পর্কে জড়িত। ঘটনার দিন ঝগড়ার একপর্যায়ে সুমন বাসায় থাকা ধারালো চাকু দিয়ে স্ত্রীকে খুন করেন। পরে লাশটি গুমের চেষ্টা করেন। শুরুতে সে বলেছিল, তাঁর স্ত্রী নাকি সুইসাইড করেছেন। পরে সে ভয়ে স্ত্রীর লাশটি গুম করতে কেটে ছোট ছোট টুকরো করেছিলেন। তবে এই বিষয়টি আমরা নিশ্চিত নই। এটা পরবর্তী সময়ে মামলার তদন্তে বেরিয়ে আসবে।’

স্ত্রীকে খুনের মামলায় র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন মো. সুমন। ছবি: সংগৃহীত
স্ত্রীকে খুনের মামলায় র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন মো. সুমন। ছবি: সংগৃহীত

মো. হাফিজুর রহমান বলেন, আসামি জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানিয়েছেন, সে তাঁর স্ত্রীর মাথা ও হাত কেটে ফ্রিজে রেখে দিয়েছিল। পরে কোথাও সরানোর জন্য। শরীরের বাকি অংশ বিশ কিংবা তাঁর বেশি টুকরো করে সেই টুকরোগুলো বাথরুমের কমোডে ফ্ল্যাশ করেছিল। পায়ের গোড়ালির একটি অংশ খাটের নিচে ছিল। সেটা সে সরাতে পারেননি। তাঁর আগে প্রতিবেশীরা ওই বাসায় চলে আসে এবং খাটের নিচে লাশের টুকরো ও বাথরুমে রক্তাক্ত কাপড়গুলো দেখে ফেলে।

র‍্যাব কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান আরও বলেন, এই দম্পতির আট বছরের একটি সন্তান রয়েছে। খুনের ঘটনার সময় তাঁদের সন্তানটি সেখানে ছিল না। খুন হওয়া নারী তাঁর সন্তানকে মায়ের কাছে রেখেছিলেন।

র‍্যাব জানায়, ১০ বছর আগে পারিবারিকভাবে ফাতেমা ও সুমনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সুমন সৌদি আরবে পাড়ি জমালেও ভিসা জটিলতায় গত বছর দেশে ফিরে চট্টগ্রামে একটি পিকআপ ভ্যান চালানো শুরু করেন। দেশে ফেরার পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ বেড়ে যায়। একাধিকবার পারিবারিকভাবে সমঝোতার চেষ্টা হলেও তা স্থায়ী হয়নি। খুনের ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে বায়েজিদ থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত