Ajker Patrika

চট্টগ্রামের পাহাড়

নাগিনে শেষ ছোবল বিএনপি নেতাদের

  • ১০ একর জায়গাজুড়ে থাকা পাহাড় বর্তমানে ২ একরে দাঁড়িয়েছে।
  • কৌশল হিসেবে কলাগাছ রোপণ করে জায়গাটি ঘেরাও করে রাখা হয়েছে।
  • এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: পরিবেশ অধিদপ্তর
সোহেল মারমা, চট্টগ্রাম 
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২: ৪৮
চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এলাকায় রাতের আঁধারে কেটে ফেলা হচ্ছে নাগিন পাহাড়। গত শনিবার অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এলাকায় রাতের আঁধারে কেটে ফেলা হচ্ছে নাগিন পাহাড়। গত শনিবার অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রায় ১০ একর জায়গাজুড়ে একের পর এক টিলা নিয়ে চট্টগ্রামের নাগিন পাহাড়। বছরের পর বছর এই পাহাড়ের ওপর এক্সকাভেটর ও কোদালের কোপ পড়ার পর এখন নিশ্চিহ্নপ্রায়। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন সরকারের সময়ই ঐতিহ্যবাহী এ পাহাড় কেটে প্রায় নিশ্চিহ্ন করেছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে আবাসিক এলাকাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বর্তমানে পাহাড়ের সামান্য যে অংশটি দাঁড়িয়ে আছে, তাতে চোখ পড়েছে স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতার। রাতের আঁধারে এক্সকাভেটর দিয়ে পাহাড়ের মাটি কেটে সমতল করে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলছে।

পরিবেশকর্মী মো. শফিকুল ইসলাম খান বলেন, একসময় ঐতিহ্যবাহী নাগিন পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য দেখে প্রাণ ভরে যেত। এখন এসব আর নেই। পাহাড়ের সঙ্গে পাহাড় লাগানো এই নাগিন পাহাড় একসময় ২০-২২ কানি জায়গাজুড়ে ছিল। ভূমিদস্যুরা বিভিন্ন সময় পাহাড়টি কেটে সাবাড় করেছে। এখানে বর্তমানে ৪টি পাহাড় মিলিয়ে এই নাগিন পাহাড়ের আয়তন হবে চার কানির মতো। নাগিন পাহাড় নিশ্চিহ্ন হলে এখানে এই নামে কিছু ছিল, তা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুখে মুখে জানতে পারবে। তিনি বলেন, ‘আসলে পাহাড়ে অবৈধ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বন্ধ না হলে এভাবে একের পর এক পাহাড় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এগুলোর সুবিধা পাওয়ায় লোকজন পাহাড় কেটে ঘর তুলছে। সেখানে বসতি করছে।’

গত শুক্রবার রাতে নাগিন পাহাড়ের ওপর সর্বশেষ এক্সকাভেটর ও কোদালের কোপ পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে এক্সকাভেটর দিয়ে পাহাড়টির একটি বড় অংশ কেটে ফেলেছে। গত বছর পাহাড় কাটা নিষেধাজ্ঞার সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জেলা প্রশাসন যে সাইনবোর্ড সাঁটিয়েছে, তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। পরে ভোর হওয়ার আগেই পাহাড় কাটার বিষয়টি যাতে বুঝতে না পারে, সে জন্য কৌশল হিসেবে কলাগাছ রোপণ করে জায়গাটি ঘেরাও করে রাখা হয়।

এদিকে পাহাড় কাটার খবর পেয়ে গত শনিবার সকালে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল অভিযান চালায়।

অভিযানে যাওয়া চট্টগ্রামের কাট্টলী সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার আরাফাত সিদ্দিকী বলেন, ‘অভিযানে গিয়ে সেখানে পাহাড় কাটার আলামত পাওয়া গেছে। কিন্তু পাহাড় কাটায় জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে সেখানে পাহাড় কাটার জন্য দুটি বেড়ার ঘর তোলা হয়েছিল, সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় একটি নিয়মিত মামলা দিতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে বলেছি। তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ আজম উদ্দিনের নেতৃত্বে এই পাহাড় কাটা হয়েছে। তাঁকে সহায়তা করছেন বায়েজিদ বোস্তামী থানা বিএনপির সহসভাপতি মকবুল হোসেন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বায়েজিদ থানার যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান সুমন। বিএনপির নেতা সৈয়দ আজম উদ্দিন জায়গার মালিক হলেও পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়া হয় সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নামে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ আজম উদ্দিন বলেন, ‘আমি কোনো পাহাড় কাটায় যুক্ত ছিলাম না। আমি জায়গার মালিকও না। এই ধরনের অভিযোগ মিথ্যা। এখানে মূল সমস্যা হচ্ছে, সেখানে আমাদের গ্রিনভ্যালি নামে একটি আবাসিক এলাকা রয়েছে। আমিও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় এখানে কোনো কিছু হলে আমার ওপর দোষারোপ করা হয়। আসলে এখানে ভিন্ন ভিন্ন প্লটের ভিন্ন ভিন্ন মালিক। তাঁদের হয়তো কেউ এটা করে থাকতে পারেন।’ অন্য অভিযুক্তদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁদের আমি চিনি। এরা আমার রাজনৈতিক কর্মী।’

এর আগে গত এপ্রিলে নাগিন পাহাড় কাটার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়েছিল। গত বছরের ২৯ জানুয়ারি পাহাড় কাটার অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই নেতাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। মামলার পরও সুযোগ বুঝে চক্রটি আবারও পাহাড় কেটেছিল। সেখানে এখন গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন ও গ্রিনভ্যালি নামে আবাসিক এলাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী নাগিন পাহাড় ৬৬ প্রভাবশালীর দখলে জানিয়ে ২০২১ সালে পরিবেশ অধিদপ্তর একটি তালিকা করেছিল। তখন তালিকা ধরে অনেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার পাশাপাশি করা হয়েছে জরিমানাও। কিন্তু এরপরও থামেনি পাহাড় কাটা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তথ্যে, এই পর্যন্ত অর্ধশতের বেশি ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাঁরা ব্যবস্থা নিয়েছেন। পাহাড়খেকোরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা বিভিন্ন সময় পার পেয়ে যাচ্ছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয় কয়েক বাসিন্দা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে জালালাবাদ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. বাহার উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শামসুদ্দিনসহ তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীরা পাহাড় কেটে আসছিলেন। এখন বিএনপি নেতা-কর্মীরা কাটছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রেমিকা আসার খবরে বাড়ি থেকে পালালেন প্রেমিক, বিয়ের দাবিতে অনশন

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা
প্রেমিকা আসার খবরে বাড়ি থেকে পালালেন প্রেমিক, বিয়ের দাবিতে অনশন

িয়ের দাবিতে চাচার শ্যালিকা দুই দিন ধরে ভাতিজার বাড়িতে অবস্থান নিয়ে অনশন করছেন। প্রেমিকা (১৮) বাড়িতে আসার খবর পেয়ে পালিয়ে গেছেন প্রেমিক সোহান হোসেন (২০)। গতকাল সোমবার সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় এই ঘটনা ঘটে।

ওই তরুণী প্রেমিক সোহান হোসেনের চাচার আপন শ্যালিকা। সোহান হোসেন বোয়ালিয়া গ্রামের জাব্বার সরকারের ছেলে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ভাতিজা ও খালার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক আগে থেকে। উভয়ের বাড়ি একই এলাকায় হওয়ার তাঁরা অনায়াসে যাতায়াত করতেন। এর আগেও জাব্বার সরকারের বাড়িতে বিয়ের দাবি তুলেছিলেন ওই তরুণী। পরে বুঝিয়ে তাঁকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। এবার বিয়ের দাবিতে অনশন শুরু করলে প্রেমিক পালিয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সোহানের বাড়ির সামনে উৎসুক নারী-পুরুষের ভিড় জমেছে। গণমাধ্যমকর্মীরা পৌঁছালে জাব্বার সরকারের পরিবারের লোকেরা কথা বলতে রাজি হননি। অনশনরত ওই তরুণী এখনো বাড়িতে অবস্থান করছেন, তবে কাউকে বাড়িতে প্রবেশ বা কথা বলা নিষিদ্ধ করেছেন সোহানের বাবা।

স্থানীয় লোকজন জানায়, জাব্বার সরকারের বাড়িতে গত রাত থেকে তাঁর ছেলের কথিত প্রেমিকা অনশন শুরু করেন। এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সোহান হোসেনের এমন অসামাজিক কর্মকাণ্ড দেখে পরিবারের যাতায়াতের পথও বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু উৎসুক জনতা সেসব উপেক্ষা করে সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন।

জানতে চাইলে ইউপি সদস্য সোলায়মান হোসেন জানান, ‘মহিলার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের সম্পর্ক প্রায় দেড় মাস ধরে। গত সোমবার রাত থেকে তিনি জাব্বারের বাড়িতে অবস্থান করছেন, কিন্তু ছেলেটি পালিয়ে গেছেন।’

এ বিষয়ে তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আমি এখনো বিষয়টি জানি না। কেউ অবহিত করেননি। তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে এনসিপি থেকে পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
পরিমল চন্দ্র ওঁরাও। ছবি: সংগৃহীত
পরিমল চন্দ্র ওঁরাও। ছবি: সংগৃহীত

নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী মহানগর সমন্বয় কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন এক সদস্য। তাঁর নাম পরিমল চন্দ্র ওঁরাও। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে এনসিপির রাজশাহী মহানগর সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারীর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি।

এতে পরিমল চন্দ্র লিখেছেন, ‘সম্প্রতি ব্যক্তিগত জীবনে কিছু নতুন দায়িত্ব ও উদ্যোগের কারণে আমার সময় ও মনোযোগ সম্পূর্ণভাবে সেদিকে দিতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দলের কাজের প্রতি আগের মতো সম্পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করা সম্ভব হচ্ছে না, যা দলের প্রতি অন্যায় হবে বলে মনে করি।’

পরিমল চন্দ্র ওঁরাও বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাবেক সদস্য। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় তাঁর বাড়ি। তবে তিনি রাজশাহীতে থাকতেন। তাই এনসিপির মহানগর সমন্বয় কমিটিতে সদস্যপদ পেয়েছিলেন। তিনি এখন নওগাঁয় রাজনীতি করতে চান।

জানতে চাইলে পরিমল চন্দ্র ওঁরাও বলেন, ‘আমি নওগাঁ-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে চাই। তাই এনসিপি থেকে পদত্যাগ করেছি। আমি এনসিপিতে থাকব না।’

যোগাযোগ করা হলে এনসিপির রাজশাহী মহানগর সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মোবাশ্বের আলী তাঁর পদত্যাগপত্রটি পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘এ বিষয়ে নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকদের দফায় দফায় মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশের লাঠিপেটা

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি  
গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ করলে সরিয়ে দিতে পুলিশের লাঠিপেটা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ করলে সরিয়ে দিতে পুলিশের লাঠিপেটা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে দফায় দফায় মহাসড়ক অবরোধ করেন এএ ইয়ার্ন মিলস লিমিটেডের শ্রমিকেরা। এ সময় তাঁরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে শ্রমিকদের সরিয়ে দিতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করেছে। এতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন।

গাজীপুরের শ্রীপুর, কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি, শ্রমিকদের দফায় দফায় মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, লাঠিপেটা
গাজীপুরের শ্রীপুর, কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি, শ্রমিকদের দফায় দফায় মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, লাঠিপেটা

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নগরহাওলা গ্রামে এএ ইয়ার্ন মিলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে দফায় দফায় অবরোধ করেন।

কারখানার শ্রমিক সুজন মিয়া বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বর মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে ২৩ তারিখ কারখানার প্রায় সব শ্রমিক আন্দোলন করে। সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এরপর পুলিশ-সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে বেতন পরিশোধের আশ্বাসে আন্দোলন বন্ধ করেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, সোমবার থেকে পুরোদমে কারখানা চালু হবে। কিন্তু গতকাল সোমবার কর্মস্থলে এসে দেখি মূল ফটকের সামনে কারখানা বন্ধের অনির্দিষ্টকালের নোটিশ।

গাজীপুরের শ্রীপুর, কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি, শ্রমিকদের দফায় দফায় মহাসড়ক অবরোধ
গাজীপুরের শ্রীপুর, কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি, শ্রমিকদের দফায় দফায় মহাসড়ক অবরোধ

এরপর পুলিশ আমাদের আশ্বাস দেয় যে আজ মঙ্গলবার ১০টার দিকে কারখানা খুলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে। কিন্তু কারখানা ফটকের সামনে এসে দেখি কারখানা বন্ধের নোটিশ। এরপরই শ্রমিকেরা রাস্তায় নামে। রাস্তায় নামার পরপরই পুলিশ এসে কোনো কথা না বলে লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।’

কারখানার শ্রমিক ঝুটন বলেন, ‘হঠাৎ করে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করল। আমাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করল না। দীর্ঘদিন ধরে এই কারখানায় শ্রমিকের কাজ করছি। কয়েক মাস ধরে বেতন পরিশোধ নিয়ে টালবাহানা করছে। হঠাৎ আন্দোলনের জেরে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করছে। আমার বকেয়া বেতনসহ অনন্য দাবি পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধ করা হয়েছে, যা শ্রমিকদের সঙ্গে অনেক অন্যায় করা হয়েছে।’

জানতে চাইলে কারখানার মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২৩ অক্টোবর শ্রমিকেরা বেতন দাবির সময় কারখানার ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করে। ফলে কারখানা চালু রাখা সম্ভব নয়। মালিকপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল লতিফ বলেন, ‘কয়েক দিন ধরেই কারখানায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শ্রমিকেরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করলেও আজকে তারা মহাসড়ক অবরোধ করে। তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নিতে আমরা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করি। কিন্তু শ্রমিকেরা দফায় দফায় রাস্তায় নামছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপি নেতার ব্যানার টানানো নিয়ে গোলাগুলি, যুবদল কর্মী নিহত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৩২
নিহত যুবদল কর্মী মো. সাজ্জাদ। ছবি: সংগৃহীত
নিহত যুবদল কর্মী মো. সাজ্জাদ। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়ায় বিএনপি নেতার ব্যানার টানানোকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় মো. সাজ্জাদ (২৫) নামের এক যুবদল কর্মী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় যুবদল ও ছাত্রদলের অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১টার দিকে বাকলিয়া থানার এক্সেস রোড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

নিহত সাজ্জাদ কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার হিরাকান্দা গ্রামের মো. আলমের ছেলে। তিনি নগরের তক্তারপুল এলাকার বিসমিল্লাহ টাওয়ারে ভাড়া থাকতেন। সাজ্জাদ নগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশাহর ঘনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে জানা গেছে, সোমবার রাতে সাজ্জাদসহ কিছু যুবদল কর্মী একটি ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় স্থানীয় সোহেল, বোরহান ও দেলোয়ারের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। মেয়রের ছবিযুক্ত ওই ব্যানার ছিল সোহেল-বোরহান গ্রুপের। এই সময় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, রাতে মুহুর্মুহু গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় দুটি গ্রুপের ১৫ থেকে ২০ জন হেলমেট পরে হামলায় অংশ নেয়। তারা আশপাশের ভবনে আগে থেকেই ওত পেতে ছিল। ঘটনার সময় পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। চমেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে রাতে বাসায় ফিরে গেছে।

চমেক হাসপাতালে নিহত সাজ্জাদের বাবা মো. আলম বলেন, ‘বন্ধুরা ফোন করে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল আমার ছেলেকে। কী নিয়ে ঝামেলা হয়েছে জানি না। আমি শুধু চাই, আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার হোক।’ চমেকে উপস্থিত যুবদল নেতা এমদাদুল হক বাদশা অভিযোগ করে বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা গুলি করার আগে বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ করে দেয়। যারা গুলি চালিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’

ছাত্রদল নেতা পরিচয়ে জি এম সালাউদ্দিন আসাদ নামের একজন বলেন, ‘যুবলীগের সন্ত্রাসীরা যুবদলের পরিচয় দিয়ে অপকর্ম করছে। মেয়রের ছবি লাগিয়ে তারা ব্যানার-পোস্টার টানায়। মেয়রের লোকেরা ব্যানার খোলার নির্দেশ দিলে আমাদের ছেলেরা খুলতে যায়। তখন তাদের মারধর করা হয়। পরে উদ্ধার করতে গেলে ভবনের ছাদ থেকে গুলি চালানো হয়, এতে সাজ্জাদ নিহত হয়।’

এদিকে আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির মরদেহ দেখতে চমেক হাসপাতালে যান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘হামলাকারীরা ওই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। আগে আওয়ামী ছত্রচ্ছায়ায় থাকলেও এখন আমার ছবি ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। আমি আগে থেকেই থানাকে জানিয়েছিলাম ও ব্যানার সরানোর নির্দেশ দিয়েছিলাম। তবু ব্যবস্থা না নেওয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক বলেন, নিহত সাজ্জাদের বুকে গুলি লেগেছে। এ বিষয়ে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইখতিয়ার উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্যানার টানানো নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে একজন নিহত হয়েছেন। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক আধিপত্য ও মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধ চলছে। সম্প্রতি ব্যানার টানানোকে কেন্দ্র করে সেই বিরোধ তীব্র হয়। সোমবার রাতের ঘটনায় তারই রেশ দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া সোহেল ও বোরহান দীর্ঘ ১৬ বছর পটিয়ার আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপে সক্রিয় ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁরা নগর বিএনপি নেতা গাজী মোহাম্মদ সিরাজউল্লাহর গ্রুপে যোগ দেন। দেলোয়ার ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা বাচ্চু গ্রুপের অংশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত