Ajker Patrika

নিজেরাই নৌকা চালিয়ে স্কুলে যায় এই দুর্গম পাড়ার শিক্ষার্থীরা 

ঝুলন দত্ত, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩: ৪৩
নিজেরাই নৌকা চালিয়ে স্কুলে যায় এই দুর্গম পাড়ার শিক্ষার্থীরা 

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গম কলাবুনিয়া মারমাপাড়ার মেয়ে পূর্ণিমা মারমা, মাসিনু মারমা, সুইক্রাপ্রু মারমা, হ্লাক্রইচিং মারমা ও উক্রাক্রো মারমা । তাঁরা কাপ্তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন এলাকায় অবস্থিত শহীদ শামসুদ্দিন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে পড়ে। তবে তাদের স্কুলের যাওয়া-আসার পথটা মোটেই সহজ নয়। কারণ বিদ্যালয়ে পৌঁছানোর জন্য নৌকা চালিয়ে কর্ণফুলী নদী পেরোতে হয় তাদের।

শুধু এই পাঁচ শিক্ষার্থী নয়, পাড়াটির অন্য শিক্ষার্থীদেরও এভাবেই নদী পেরোতে হয়। এই পাড়ায় কোনো প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় না থাকায় স্কুল পড়ুয়া  শিক্ষার্থীরা কাপ্তাইয়ের আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। তারা সবাই নিজেরা বইঠা দিয়ে নৌকা চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে কর্ণফুলী নদী পাড় হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়।

আজ রোববার সকাল ৯টায় কাপ্তাই বিদ্যুৎ এলাকার চৌধুরী ছড়া ফরেস্ট ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের ড্রেস পরিহিত শিক্ষার্থীরা নিজেরা বইঠা হাতে নৌকা চালিয়ে এই ঘাটে ভিড়ছে। 

এ সময় পূর্ণিমা মারমা ও মাসিনু মারমা নামের নবম শ্রেণিতে পড়া দুই শিক্ষার্থী জানায়, স্কুল খোলা থাকার সময়ে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টায় কলাবুনিয়া পাড়া থেকে বের হয়। এরপর নিজেরে বইঠা টেনে ছোট নৌকায় করে আধা ঘণ্টা নৌপথ পাড়ি দিয়ে এবং এবং কিলোমিটার সড়কপথে  স্কুলে আসে। বর্ষাকালে যেদিন বৃষ্টি বেশি হয়, সেদিন পাড়ার কেউ স্কুলে আসতে পারে না। কারণ ছাদ ছাড়া নৌকায় ভিজে যেতে হয়। আবার শুকনো মৌসুমে নদীর মাঝখানে পানি শুকিয়ে গিয়ে চর জেগে ওঠে। তখনো স্কুলে আসতে পারে না, ফলে পড়ালেখার ব্যাঘাত ঘটে।

এ সময় নবম শ্রেণিতে পড়া অপর দুই শিক্ষার্থী হ্লাক্রইচিং মারমা ও উক্রাক্রো মারমা এবং সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সুইক্রাপ্রু মারমা বলে, যখন নদীতে জোয়ার থাকে তখন নৌকা চালাতে সহজ হয়, আবার ভাটা পড়ে গেলে নদীর কিনারে এসে অপেক্ষা করি কখন জোয়ার আসবে।

কর্ণফুলী নদীর তীরে বইঠা হাতে কলাবুনিয়া পাড়ার শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার সকালের দৃশ্য। ছবি: আজকের পত্রিকাশিক্ষার্থীরা সবাই একটি ছাদওয়ালা বোটের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করে। সেই সঙ্গে কর্ণফুলী নদী যাতে ড্রেজিং করে নাব্য সংকট দূর হয় সেই দাবিও জানায়। 

চিৎমরম ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কলাবুনিয়াপাড়ার ইউপি সদস্য অংখেস মারমা বলেন, ‘আমাদের এই পাড়ায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। ছেলেমেয়েরা চিৎমরম ও কাপ্তাই ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে। ছোট নৌকায় করে তারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে যায়। কর্ণফুলী নদীতে নিজেরাই বইঠা বেয়ে ঝুঁকি নিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয় তাদের। বড় বোট থাকলে সবাই একসঙ্গে স্কুলে যেতে পারত।

কাপ্তাই শহীদ শামসুদ্দিন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হানিফ এবং কাপ্তাই উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুব হাসান বাবু জানান, কলাবুনিয়া পাড়া থেকে অনেক শিক্ষার্থী তাঁদের বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। যেদিন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়, সেদিন তারা স্কুল আসতে পারে না। কারণ কর্ণফুলী নদী পাড় হয়ে তাদের স্কুলে আসাটা কঠিন ব্যাপার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল দিল্লি

‘ক্রিকেটাররা আমাকে ন্যুড পাঠাত’, বিস্ফোরক ভারতের সাবেক কোচের সন্তান

‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ ব্যানারে বিমানবন্দর এলাকায় আ.লীগের মিছিল

নালিতাবাড়ীতে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যুবক আটক

পারদর্শী হয়ে উঠছে বাংলাদেশ, স্থিতিশীল হচ্ছে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক: ভারতীয় বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত