Ajker Patrika

চাঁদাবাজদের অত্যাচারে চট্টগ্রাম ছাড়ছেন ব্যবসায়ী দম্পতি

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮: ৩৮
চাঁদাবাজদের অত্যাচারে চট্টগ্রাম ছাড়ছেন ব্যবসায়ী দম্পতি

গতকাল বুধবার (৩১ জানুয়ারি) শীতের বিকেল। কুয়াশায় ঢাকা পড়ে সূর্যের আলো তখন প্রায় নিভে গেছে। চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানার আব্দুরপাড়া এলাকার নিজ বাড়িতে অসুস্থ স্বামীর পরিচর্যা করছিলেন লতিফুন্নেসা। তাঁর মাথায় ভর করেছে নানা দুশ্চিন্তা। কারণ, সব মায়া ত্যাগ করে কয়েক দিন পরই এই বাড়ি ছাড়বেন তিনি। বিক্রি করে দিয়েছেন জমানো টাকায় তৈরি করা বাড়িটি।

গেটের ভেতরে গিয়ে এই প্রতিবেদক বাড়ি ছাড়ার নেপথ্যের কারণ জানতে চাইলে আলাপচারিতায় উঠে আসে স্থানীয় চাঁদাবাজদের একটি চক্রের পাল্লায় পড়ে ভিটে ছেড়ে যাওয়ার গল্প। লতিফুন্নেসার বাড়িটি পাহাড়তলী থানার আব্দুরপাড়া এলাকায়। বাড়িটি ১০ কাঠার ওপর।

স্বামী সফিক উদ্দিন আহাম্মদ চৌধুরী অনেক দিন ধরে অসুস্থ। লাঠিতে ভর করে চলতে হয় তাঁকে। তাঁকে নিয়ে প্রায় এক যুগ ধরে লড়াইটা একাই চালিয়ে যাচ্ছেন লতিফুন্নেসা। লড়াইয়ের মধ্যেই যৌবন পেরিয়ে বার্ধক্যের ছাপ পড়েছে চেহারায়। কিন্তু দমে যাননি তিনি। চাঁদাবাজেরা তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও দিয়েছে একাধিক। এসব মামলা থেকে নিজেকে খালাস করিয়েছেন। নিজেও মামলা করেছেন চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে।

সেই মামলা তদন্ত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিট। সংস্থাটির পরিদর্শক (প্রশাসন) কাজী এনায়েত কবীরের তদন্তে উঠে আসে দুই আসামির নেতৃত্বে চাঁদাবাজির সত্যতা। তদন্তকালে চাঁদাবাজির প্রমাণ-সংক্রান্ত মোবাইলে ফোনের কথোপকথনও হাতে আসে পিবিআইয়ের। সম্প্রতি সংস্থাটি মামলার প্রতিবেদন দাখিল করে। তাতে আসামি করা হয় মো. মাঈন উদ্দিন রিপন ও মো. বাবলু নামের দুজনকে। আদালত থেকে জারি হওয়া পরোয়ানার ভিত্তিতে গত ২৪ জানুয়ারি মাঈন উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে পাহাড়তলী থানা-পুলিশ। পরে তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। বর্তমানে আদালতের নির্দেশে কারাগারে রয়েছেন মাঈন উদ্দিন।

পিবিআইয়ের তদন্ত ও প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, লতিফুন্নেসার স্বামী সফিক উদ্দিন আহাম্মদ চৌধুরীর বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায়। তিনি প্রথমে চাকরি করতেন। পরে সিমেন্টের ব্যবসা করেন। নব্বইয়ের দশকে ব্যবসার সুবাদে চট্টগ্রামের বাসিন্দা মাঈন উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। মাঈন উদ্দিন নিজেও সিমেন্টের ব্যবসা করতেন।

ব্যবসায় সফলতা পেলে মাঈন উদ্দিনের পরামর্শে ১৯৯৭ সালে পাহাড়তলী থানার আব্দুরপাড়া এলাকায় এক খণ্ড জমি কেনেন সফিক। ২০১২ সালে সেই জমিতে বাড়ির কাজ শুরু করেন। জীবনের সব সঞ্চয় দিয়ে ধীরে ধীরে নির্মিত হতে থাকে বাড়িটি। তবে নির্মাণকাজ শুরুর দুই বছর পর থেকে মাঈন উদ্দিন সেখান থেকে জায়গা দাবি করে নির্মাণকাজে বাধা দেন।

২০১৬ সাল থেকে সফিক আহাম্মদ ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে নানা মামলা শুরু করেন মাঈন উদ্দিন। শ্লীলতাহানি থেকে চাঁদাবাজি কোনো মামলাই বাদ যায়নি। যদিও এসব মামলায় পুলিশ ঘটনার সত্যতা না পেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। শুধু মামলা নয়, নানা সময়ে সফিক দম্পতিকে হুমকি-ধমকি দিত মাঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি চক্র।

ব্যবসায়ীর বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, পাহাড়তলী থানার আব্দুরপাড়ার শেষ দিকের তিনতলা বাড়িটি দাঁড়িয়ে আছে। ছয়তলা পর্যন্ত করার কথা থাকলেও এখন নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। সফিক ও তাঁর স্ত্রী লতিফুন্নেসা বলেন, চাঁদাবাজদের চক্রে পড়ে এখন বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছেন তাঁরা। প্রায় সাত কোটি টাকা দামের হলেও চাঁদাবাজদের বাধার কারণে মাত্র সাড়ে চার কোটি টাকা দিয়ে জমিসহ বাড়িটি বিক্রি করে দেওয়া হয়। বায়না বাবদ ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন। বাকি লেনদেন সম্পন্ন হলে শিগগিরই এই বাড়ি ছাড়বেন তাঁরা।

একই এলাকায় আরও অন্তত চারটি পরিবার এই চক্রের খপ্পরে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সবার ক্ষেত্রে কৌশল একই। বাইরের কোনো লোক এই জায়গায় জমি কিনলে তাতে সহযোগিতা করেন তাঁরা। জমিটি নেওয়ার পর বিপত্তি বাধে যখন কেউ বাড়ি করতে যান। বাড়ির কাজ শুরু করলেই জায়গা পাবেন বলে অভিযোগ তুলে মিথ্যা মামলা ঠুকে দেওয়া হয়। টাকা দিলে মামলা মীমাংসা; না দিলে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়, হয়রানি করা হয়।

লতিফুন্নেসার বাড়ির পাশের এক বাসিন্দা (নাম প্রকাশ করেনি) ১৯৯৭ সালে এখানে জমি কেনেন। ২০১৪ সালে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন। কয়েক মাসের মধ্যে এই চক্রের সদস্যরা জায়গা পাওয়ার অজুহাত তুলে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে ওই বছরই মামলা করা হয়। অসহায় পরিবারটি বাধ্য হয়ে ২০ লাখ টাকা দিয়ে তাঁদের সঙ্গে ঝামেলা মীমাংসা করে।

সফিকের স্ত্রী লতিফুন্নেসা বলেন, ‘বর্তমানে আমার স্বামী অসুস্থ। স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন না। বাড়িতে আমার এক কন্যা রয়েছে। বলতে গেলে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আমি একাই সংগ্রাম করছি। তাদের অত্যাচারে এই বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছি। বায়নার টাকা দিয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে হজ করেছি। শিগগিরই বাড়ি ছেড়ে স্থায়ীভাবে ঢাকা চলে যাব।’

বৃদ্ধ সফিক আহাম্মদ চৌধুরী বলেন, ‘অনেক শখ করে বাড়িটি করেছিলাম স্থায়ীভাবে বসবাস করতে। বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে, কখনো কল্পনা করিনি। কিন্তু এখন একবুক কষ্ট নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম ছাড়তে হচ্ছে।’

সম্প্রতি চাঁদাবাজির মামলায় আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবীর লেখেন, মামলার পর তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অন্তত ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। একই সঙ্গে কল রেকর্ড বিশ্লেষণ করেছেন। সার্বিকভাবে তাঁর তদন্তে উঠে আসে আসামি মাঈন উদ্দিন ও তাঁর সহযোগী সফিক দম্পতির কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোর পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবীর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তদন্ত করে যা পেয়েছি, মামলার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি।’

২৪ জানুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন অভিযুক্ত মাঈন উদ্দিন। এ কারণে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, জমি কিনলে বা নতুন বাড়ি তুললে চাঁদাবাজদের একটি চক্র ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করার ঘটনা চট্টগ্রামে বেড়েছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপর হওয়া দরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) আ স ম মাহতাব উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কেন ঘর ছেড়ে যাবে। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। কেউ অভিযোগ দিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাংবাদিক পরিচয়ে ঘরে ঢুকে ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামে খুলশীতে সাংবাদিক পরিচয়ে একটি ফ্ল্যাটে ঢুকে ডাকাতি করার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরের কোতোয়ালি, বায়েজিদ ও ইপিজেড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এ সময় একটি প্রাইভেট কার ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন আব্দুল মতিন রাসেল (৩৫), আশরাফুল ইসলাম সাহেদ (২৯), মো. মমিন (২৮), শারমিন আক্তার রিমা (৩০), নুর মোহাম্মদ সাব্বির রকি (২২), রুবেল হোসেন (৩১) ও মো. ফয়সাল।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর-দক্ষিণ) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ১০ অক্টোবর দুপুর সোয়া ১২টায় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ১০ থেকে ১২ জন খুলশী আবাসিকে একটি চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেন। এরপর ওই বাসায় থাকা তিনজন নারীকে ধারালো ছোরা দিয়ে জিম্মি করে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ডাকাতি করে। তাঁরা বাসার সোনার গয়না, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ও ভবনের নিচে পার্কিংয়ে রাখা একটি প্রাইভেট কারও নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরদিন খুলশী থানায় একটি মামলা হয়। গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাটির ছায়া তদন্তে নেমে অভিযান চালিয়ে প্রথমে সাহেদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর দেওয়া তথ্যে বৃহস্পতিবার বাকিদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় পতেঙ্গা এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে লুট করা প্রাইভেট কারটি উদ্ধার করা হয় বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মা ও শিশুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মা ও শিশুর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাগলা থানার দত্তের বাজার ইউনিয়নের বিরই গ্রাম থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় আজ শুক্রবার পাগলা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। মৃত নারীর স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।

মৃত ব্যক্তিরা হলেন মর্জিনা বেগম (২৪) ও তাঁর মেয়ে ময়না (৩)।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, মৃত মর্জিনা বিরই গ্রামের সৌদিপ্রবাসী শাহীনের স্ত্রী। ছয় মাস ধরে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন মর্জিনা। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য শাহীন আড়াই মাস আগে দেশে ফেরেন। এরপর স্থানীয় কবিরাজ দিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসা করাচ্ছিলেন তিনি। গতকাল বিকেলে শাহীন বাড়ি ফিরে দরজা বন্ধ পান। বেশ কিছু সময় ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে পাশের রুমের ওপর দিয়ে স্ত্রী ও সন্তানের ঝুলন্ত লাশ দেখে চিৎকার দিলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। খবর পেয়ে পাগলা থানা-পুলিশ সন্ধ্যার দিকে ঘটনাস্থলে এসে ঘরে দরজা ভেঙে মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যান।

প্রতিবেশী বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘এই দম্পতির পারিবারিক কোনো সমস্যার কথা শুনি নাই। তবে কয়েক মাস ধরে মর্জিনা মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন বলে তাঁর স্বামী প্রায়ই বলতেন।’

পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম বলেন, ‘মা ও শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চুরি ঠেকাতে রাতে চাতাল পাহারা, ব্যবসায়ীর রহস্যজনক মৃত্যু

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ভুট্টা ও ধানের বস্তা চুরি ঠেকাতে রাতে নিজের চাতালে পাহারা দিতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে এক প্রবীণ ব্যবসায়ীর। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের মথুরাপুর মাস্টারপাড়ার কাদের চাতালে আজ শুক্রবার ভোরে ওই ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত ব্যবসায়ীর নাম খায়রুল ইসলাম (৭২)। তিনি ওই এলাকার আইয়ুব আলীর ছেলে। তিনি চাতালটি ভাড়া নিয়ে ভুট্টা ও ধানের ব্যবসা করতেন।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি গোডাউন থেকে নিয়মিতভাবে ভুট্টা ও ধানের বস্তা চুরি হচ্ছিল। এতে অতিষ্ঠ হয়ে খাইরুল ইসলাম নিজেই চোর ধরার জন্য রাত্রিকালীন পাহারাদারের কাজ শুরু করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে তিনি চাতালে আসেন।

আজ ভোর ৩টা নাগাদ কাদের চাতালের দায়িত্বে থাকা নাইট গার্ড চাতালে একটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে অন্যান্য নাইট গার্ডকে খবর দেন। খবর পেয়ে খাইরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন এবং তাঁকে শনাক্ত করেন। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।

মৃত ব্যবসায়ীর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানান, খাইরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তাঁদের ধারণা, চাতালে অবস্থান করার সময় তিনি স্ট্রোক অথবা সুগার (ডায়াবেটিস) কমে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পড়ে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

রহিমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান হান্নু জানান, খাইরুল ইসলাম সাবেক সুগার মিলে কর্মরত ছিলেন। কয়েক বছর আগে তিনি অবসর নেন। অবসরের পর তিনি সিজনভিত্তিক ধান, গম ও ভুট্টার ব্যবসা করতেন। চেয়ারম্যান নিশ্চিত করেন, তিনি ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার উপপরিদর্শক এমদাদুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছি। সুরতহাল রিপোর্টে নিহতের শরীরে কোনো রকম আঘাত বা অস্বাভাবিক কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পরিবারের পক্ষ থেকেও কোনো অভিযোগ নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদ্যুতায়িত হয়ে বাবা-ছেলের মৃত্যু

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি 
ঘটনাস্থলে লোকজনের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে লোকজনের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে সেচযন্ত্র চালু করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে বাবা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের পশ্চিম বাছহাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত ব্যক্তিরা হলো মো. শহিদুল ইসলাম (৪০) ও তাঁর ছেলে মো. শিয়াব মিয়া (১৪)।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সর্বানন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জহুরুল ইসলাম। মৃত ব্যক্তিদের স্বজনদের বরাতে তিনি বলেন, ধানখেতে পানি দেওয়ার জন্য সকাল ১০টার দিকে বিদ্যুৎ-চালিত সেচযন্ত্র নিয়ে পুকুরপাড়ে যায় বাবা ও ছেলে। ঘণ্টাখানেক পরে শিয়াবের মা ওই পুকুরপাড়ে যান। তিনি সেখানে ছেলের লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার করেন। পরে স্থানীয় লোকজন এসে শিয়াবের লাশ বাড়িতে নেন। এর কিছুক্ষণ পরে শহিদুল ইসলামের খোঁজে পুকুরপাড়ে আবারও যান তাঁর স্বজনেরা। তখন তাঁর লাশও পুকুরে পাওয়া যায়।

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্পে বিদ্যুতায়িত বাবা ও ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত