Ajker Patrika

চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রীকে ধর্ষণ, পিয়ন কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২৪, ২১: ২৮
চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রীকে ধর্ষণ, পিয়ন কারাগারে

চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে (১৯) হোটেলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ওই কলেজের অফিস সহকারীর (পিয়ন) বিরুদ্ধে। গত ২৯ জুন ঘটনাটি ঘটলেও আজ মঙ্গলবার বিষয়টি জানাজানি হয়। 

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর করা মামলায় (৩০ জুন) অভিযুক্ত অফিস সহকারী মোশাররফ হোসেন মানিককে (৩০) নিজ গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে এক দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

মানিক ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত। 

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়ালী উদ্দিন আকবর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মামলা দায়েরের পর (৩০ জুন) আসামিকে নিজ গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে আসামিকে এক দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’ মামলাটির তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি। 

মামলার এজাহারে ভুক্তভোগী উল্লেখ করেন, ২৭ জুন তিনি মাকে নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহের জন্য চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে যান। প্রবেশপত্র পেতে দেরি হচ্ছে দেখে তিনি মাকে বাসায় পাঠিয়ে দেন। পরে তাঁর মা বাসায় চলে গেলে তিনি পদার্থবিজ্ঞান ভবনের ওয়াশ রুমে যান। সেখান থেকে বের হওয়ার সময় আরেক সহপাঠীর সঙ্গে দেখা হয়। 

ওয়াশ রুমের সামনে সহপাঠীর সঙ্গে কথা বলতে দেখে পিয়ন মানিক বিষয়টি ছাত্রীর পরিবার ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে বলে দেওয়ার ভয় দেখান। এতে তিনি এক প্রকার ভীত হন। 

পরে প্রবেশপত্র সংগ্রহ শেষে মানিক তাঁকে (ছাত্রী) বাসায় পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। মানিকের প্রস্তাবে রাজি হয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় ওঠেন তিনি। পথে মানিক অটোরিকশায় থেকে নামিয়ে তাঁকে কোতোয়ালি এলাকার স্টেশন রোডের একটি হোটেল কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করেন। পরে (২৯ জুন) তিনি অভিভাবক নিয়ে এসে চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করেন। 

এদিকে ধর্ষণ মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর অভিযুক্ত পিয়ন মোশাররফ হোসেন মানিককে বরখাস্ত করেছে চট্টগ্রাম কলেজ কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার পর ওই ছাত্রী মামলা করেছেন। এরপর তাঁর বেতন-ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে। তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাগ্রে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

জাপানে ‘খোলামেলা’ পোশাক পরায় রেস্তোরাঁ থেকে বের করে দেওয়া হলো ২ চীনাকে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিশেষজ্ঞ মত: নিরাপত্তায় এক সতর্কবার্তা

মো. সামছুল হক, অধ্যাপক, বুয়েট
মো. সামছুল হক। ছবি: সংগৃহীত
মো. সামছুল হক। ছবি: সংগৃহীত

আমাদের নগর পরিবহনব্যবস্থার আধুনিকায়নের স্বপ্নযাত্রায় এক অশনিসংকেত বেজে উঠেছে। মেট্রোরেল ভায়াডাক্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ ‘বিয়ারিং প্যাড’-সম্পর্কিত দ্বিতীয় দুর্ঘটনা ঘটেছে গত রোববার। এবার প্রাণঘাতী পরিণতি নিয়ে। এই মৌলিক কাঠামোগত উপকরণটির এমন অকাল ব্যর্থতা প্রকল্পের নির্মাণকাজের গুণমান, পরবর্তী তদারকি এবং দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

ডিসেম্বর, ২০২২ থেকে দুই ধাপে চালু হওয়া এমআরটি লাইনটি এখনো আড়াই বছর পূর্ণ করেনি। তাই ২০-৩০ বছরের নকশাগত আয়ুষ্কালের একটি বিয়ারিং প্যাডের এমন বিপর্যয় জিনিসটি পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে ঘটেনি; বরং এটি এক গভীরতর ও মৌলিক ত্রুটির ইঙ্গিত বহন করে।

বিয়ারিং প্যাড হলো ভূমি থেকে কিছু ওপর দিয়ে চলা যে কোনো রেল বা সড়ক অবকাঠামোর (ভায়াডাক্ট) অত্যাবশ্যক অংশ। ইলাস্টোমেরিক রাবার ও স্টিলের সংমিশ্রণে তৈরি এ প্যাডগুলো কংক্রিট ডেক (যার ওপর দিয়ে ট্রেন চলে) ও পিয়ারের (পিলার বা খুঁটি) মাঝখানে বসানো থাকে। এর মূল কাজ হলো ট্রেনের ওজন সমানভাবে বণ্টন করা, কম্পন শোষণ করা এবং তাপমাত্রা বা চলাচলের কারণে সৃষ্ট ক্ষুদ্র গতিবিধি সামলানো।

কঠিন হয়ে যাওয়া বা সরে যাওয়ার মতো বিভিন্ন কারণে এ প্যাড কাজ করতে ব্যর্থ হলে ট্রেনের লোড বণ্টনে ভারসাম্য নষ্ট হয়। ডেকে অসংগতির সৃষ্টি হয় এবং পিয়ারের কাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে।

প্যাড পড়ে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণগুলো

রোববারের ঘটনা ইঙ্গিত করে, খুলে পড়া বিয়ারিং প্যাডটি আর পিয়ার ও ডেকের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা অবস্থায় ছিল না। যেহেতু মেট্রো লাইনটি মাত্র দুই বছরের কিছু বেশি সময় আগে চালু করা হয়েছিল, তাই অকাল ক্ষয় বা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবজনিত মানের অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এ ঘটনার সম্ভাব্য কারণগুলো হলো:

নকশাগত ত্রুটি বা স্থাপনজনিত ভুল: সবচেয়ে সম্ভাব্য কারণ এটিই। পিয়ার পৃষ্ঠের ভুল লেভেলিং, অসম প্যাড পুরুত্ব, তা সঠিকভাবে স্থাপন না করা বা পর্যাপ্ত পার্শ্ব-নিয়ন্ত্রণের অভাবের ফলে বিয়ারিং শুরু থেকেই সঠিকভাবে কাজ করেনি।

নির্মাণপর্যায়ে তদারকির অভাব: এমআরটি লাইন-৬-এর নির্মাণকাজ চলার সময় অভিজ্ঞ প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জনবলের ঘাটতি ছিল স্পষ্ট। প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন ইউনিট (PIU) ছিল দুর্বল, যা সড়ক ও রেলওয়ে বিভাগের কয়েকজন প্রেষণে নিযুক্ত প্রকৌশলীর ওপর নির্ভরশীল ছিল। তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নতুন প্রযুক্তিগত জনবল নিয়োগে অনাগ্রহ দেখিয়ে পরামর্শকদের ওপর নির্ভর করেছিলেন, যাঁদের বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে কঠোর সাইট তদারকি ব্যাহত হয়ে থাকতে পারে। এমনটি দেশের বহু প্রকল্পেই দেখা যায়।

মধ্যপ্রাচ্য ও সিঙ্গাপুরে কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং কঠোর নিরাপত্তা মানদণ্ডে অভ্যস্ত নির্মাণকাজে যুক্ত শ্রমিকেরা অনেকে তদারকির অভাব ও নিরাপত্তা প্রটোকল লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। কেউ কেউ যথাযথ তদারকি ছাড়াই কাজ চলছিল বলে সরাসরি অভিযোগও জানিয়েছিলেন।

তাড়াহুড়ো করে নির্মাণ: তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরামর্শকদের ২০২২ সালের সুপারিশ উপেক্ষা করে ২০১৯ সালের মধ্যেই মেট্রোরেল উদ্বোধনের জোর দাবি জানান। নির্বাচনী তাড়নার কারণে তৈরি করা এই অবাস্তব সময়সূচির ফলে মাঠপর্যায়ে কাজ দ্রুত শেষ করতে গিয়ে সাইট তদারকি মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। এর সঙ্গে নিজস্ব প্রযুক্তিগত জনবলের অভাব ও পরামর্শক তদারকির দুর্বলতা যুক্ত হয়ে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। ফলে মেট্রোর ট্রানজিট-ওরিয়েন্টেড ডেভেলপমেন্ট (TOD) এবং নন-অপারেশনাল রাজস্ব বৃদ্ধির সম্ভাবনাও উপেক্ষিত হয়, প্রথম ও শেষ মাইল সংযোগব্যবস্থা অবহেলিত থাকে এবং জনসাধারণের ব্যবহারের আগে আবশ্যিক নিরাপত্তা মূল্যায়নও অনিষ্পন্ন থেকে যায়।

নিরাপত্তাব্যবস্থা ও সুপারিশ

এক বছর পেরোতে না পেরোতেই দ্বিতীয় এমন ঘটনা প্রমাণ করে, প্রথম দুর্ঘটনার মূল কারণ সঠিকভাবে শনাক্ত বা সমাধান করা হয়নি। এটি বর্তমান নিরাপত্তা নিরীক্ষা ও দায়বদ্ধতা ব্যবস্থার মারাত্মক দুর্বলতা প্রকাশ করে।

উল্লেখ করা দরকার, বর্তমানে রাজধানীর মেট্রোরেল এখনো পূর্ণ সক্ষমতায় পরিচালিত হচ্ছে না। ভায়াডাক্টের ওপর দিয়ে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ ব্যবধানে ও কম কামরা নিয়ে চলছে ট্রেন। তবে সেবার মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গতিশীল লোড ও কম্পনও বাড়বে, যা এ দুর্বল উপাদানগুলোর ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে।

দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে অবিলম্বে যা করা প্রয়োজন

স্বাধীন বিশেষজ্ঞের নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা নিরীক্ষা: ঘটনার প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করতে একটি স্বাধীন, দক্ষ ও প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষম সংস্থার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চালানো জরুরি। এটি কোনো অভ্যন্তরীণ তদন্ত হওয়া উচিত নয়।

তাৎক্ষণিক কাঠামোগত ব্যবস্থা: ভায়াডাক্টের সব গুরুত্বপূর্ণ অংশে বাড়তি পার্শ্ব-নিয়ন্ত্রণ, যেমন শিয়ার কি বা গাইডবার সংযোজন করে প্যাডের স্থানচ্যুতি রোধ করতে হবে।

প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষম রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিট গঠন: ডিএমটিসিএলের অভ্যন্তরে একটি শক্তিশালী, প্রকৌশলী-নেতৃত্বাধীন রক্ষণাবেক্ষণ ইউনিট গঠন করতে হবে। এটি প্রতি ৬ মাসে সরেজমিন পরিদর্শন ও প্রতি এক বছরে লোড টেস্ট পরিচালনা করবে এবং তাৎক্ষণিকভাবে যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করতে পারবে।

ডিএমটিসিএলের কাঠামোগত সংস্কার: বহু বিলিয়ন টাকার মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনাকারী সংস্থাটিকে জ্ঞানভিত্তিক ও সেবাকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে হবে। এটি প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ পেশাদার কর্মীদের হাতে পরিচালিত হতে হবে। বর্তমানের প্রেষণে পাঠানো বা অবসরপ্রাপ্ত সাধারণ আমলাদের প্রাধান্য প্রকল্পের নিরাপত্তা ও স্থায়িত্বের জন্য বড় ঝুঁকি।

সবশেষে বলব, দুর্ঘটনার মূল কারণ শনাক্ত করে দায়বদ্ধতা নিশ্চিত না করা হলে ভবিষ্যতে এ রকম আরও প্রাণঘাতী ঘটনা ঘটতে পারে। মেট্রোরেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে একাধিক দুর্ঘটনা শুধু এর ব্যবহারকারী নয়; বরং প্রতিদিন নিচের সড়কে চলাচলকারী হাজারো নাগরিকের মধ্যেও ভয়ের সঞ্চার করেছে।

ডিএমটিসিএলকে একটি প্রযুক্তিভিত্তিক, দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করার ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছে রাজধানীবাসীর নিরাপত্তা। দুটি অবোধ শিশুকে এতিম করা এবারের মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি হোক সে পরিবর্তনের সূচনা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাগ্রে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

জাপানে ‘খোলামেলা’ পোশাক পরায় রেস্তোরাঁ থেকে বের করে দেওয়া হলো ২ চীনাকে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বামনা মডেল মসজিদ: ৬ বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ

  • সাড়ে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালে শুরু হয় নির্মাণকাজ।
  • একবার ব্যয় বৃদ্ধি; পরিবর্তন করা হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও।
  • বর্তমানে ঠিকাদার জেলে, নতুন ঠিকাদার নিয়োগের দাবি।
বরগুনা প্রতিনিধি
বরগুনার বামনা উপজেলায় নির্মাণাধীন মডেল মসজিদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরগুনার বামনা উপজেলায় নির্মাণাধীন মডেল মসজিদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরগুনার বামনা উপজেলায় ৬ বছর আগে শুরু হওয়া মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। এ নিয়ে আশাহত স্থানীয় মুসল্লিরা। জানা গেছে, মসজিদটি নির্মাণে একের পর এক জটিলতা দেখা দিচ্ছে। সর্বশেষ, গত বছরের জানুয়ারি আবার মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ সময় পিলারসহ দোতলার ছাদ ঢালাই পর্যন্ত সম্পন্ন হয়। এরপর আবার থমকে যায় কাজ। এর মধ্যে ঠিকাদারও পরিবর্তন করা হয়েছে।

বরগুনা জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামি সংস্কৃতিকেন্দ্র নির্মাণ উদ্যোগের অংশ হিসেবে বামনা উপজেলায়ও মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ শুরু হয়। ইসলামিক বই বিক্রি, ইমাম প্রশিক্ষণ, ইসলামি গবেষণা, হেফজখানা, শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম, হজ যাত্রীদের নিবন্ধন প্রভৃতি কার্যক্রম মডেল মসজিদ থেকে পরিচালিত হবে। বামনা উপজেলায় ১২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালে ৯০০ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করার জন্য তিন তলা মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ শুরু হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুরুতে মঠবাড়িয়ার সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি উদ্দিন আহম্মেদ ফেরদৌসের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এএসআই জেবি বামনা মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য নির্বাচিত হয়। সে সময় বামনা কোর্ট বিল্ডিং ভেঙে সেখানে মসজিদ নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করে উপজেলা প্রশাসন। পরবর্তী সময়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘদিন পর কোর্ট বিল্ডিংয়ে পাশে উপজেলা পরিষদের দুটি পরিত্যক্ত ডরমিটরি ও কর্মকর্তাদের দুটি বাস ভেঙে সেখানে ৪০ শতক জমিতে মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়। পরে নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মসজিদের পাইলিং নির্মাণ শেষ না করেই কাজ বন্ধ করে চলে যায়। পরে গণপূর্ত অধিদপ্তর ১ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে মোট ১৩ কোটি ১৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা নির্ধারণ করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়। গত বছরের জানুয়ারি মাসে মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও টিকিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রিপন জমাদ্দার ওরফে রাঙ্গা রিপনের এমকেটি নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবার মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করে। সে সময় মসজিদটির পিলারসহ দোতলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে জেলে যান বামনার মডেল মসজিদ নির্মাণের ঠিকাদার রিপন জমাদ্দার ওরফে রাঙ্গা রিপন। এরপর থেকেই ঝিমিয়ে পড়ে নির্মাণকাজ।

এ অবস্থায় বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের দাবিতে স্থানীয় মুসল্লিরা কয়েকবার জেলা প্রশাসক ও গণপূর্ত দপ্তরে লিখিত আবেদন এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন বলেও জানা গেছে।

উপজেলার হাসপাতাল রোডের বাসিন্দা কবির হাওলাদার আক্ষেপ করে বলেন, ‘যে উপজেলায়

যাই দেখি, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদের মিনার। মনের আনন্দে অনেক জায়গায় গিয়ে নামাজ আদায় করেছি। কত হতভাগা আমরা, ছয় বছর ধরে এখনো কাজ চলে অথচ মসজিদের আকৃতিই তৈরি হলো না।’ শুধু কবির হাওলাদারই নন,

বামনার মডেল মসজিদ নির্মাণের ধীরগতিতে আশাহত এখানকার সব ধর্মপ্রাণ মুসল্লি।

এ ব্যাপারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বামনা উপজেলার সভাপতি আবদুস সোবাহান খান বলেন, ‘আমাদের পাশের মঠবাড়িয়া, বেতাগী, কাঠালিয়া, পাথরঘাটার মুসল্লিরা

মডেল মসজিদে নামাজ আদায় করেন, আর আমরা নির্মাণকাজ দেখেই যাচ্ছি। দ্রুত মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি জানাই।’

বামনা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ রানা বলেন, ‘দেশের ৫৬০টি মডেল মসজিদ বিদেশি দাতা সংস্থার অনুদানে নির্মাণ করা হয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের লোক দিয়ে এর কাজ করাচ্ছিল। দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার ফেরদৌস ও রিপন দুর্নীতি করে এখন জেলে। আমরা চাই নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে দ্রুত এর কাজ সম্পন্ন করা হোক।’

এ বিষয়ে বামনার মডেল মসজিদ নির্মাণের বর্তমান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সুজন মিয়া বলেন, ‘আমাদের এ প্রতিষ্ঠানের মালিক দুজন। তাঁদের মধ্যে একজন রাজনৈতিক মামলায় জেলে এবং অন্য জন কিছু দিন আগে মারা গেছেন। তাই অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মসজিদ নির্মাণকাজ কিছুটা মন্থর হয়ে পড়ে। মডেল মসজিদের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।’

এ বিষয়ে বরগুনা জেলার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোল্যা রবিউল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কয়েকবার বামনা উপজেলার মডেল মসজিদের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক পরিলক্ষিত না হলে তাদের বিরুদ্ধে দাপ্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাগ্রে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

জাপানে ‘খোলামেলা’ পোশাক পরায় রেস্তোরাঁ থেকে বের করে দেওয়া হলো ২ চীনাকে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আলু উৎপাদন: কেজিতে কৃষকের ক্ষতি ২০ টাকা

  • হিমাগার ভাড়াসহ ১ কেজি আলু উৎপাদনের খরচ মোট ৩৫, বাজারে দাম ১৫ থেকে ১৮ টাকা।
  • চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজার উঠছে না- বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
 রিমন রহমান, রাজশাহী
বস্তায় আলু ভর্তি করছেন শ্রমিকেরা। গত রোববার রাজশাহীর পবা উপজেলার একটি হিমাগারে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বস্তায় আলু ভর্তি করছেন শ্রমিকেরা। গত রোববার রাজশাহীর পবা উপজেলার একটি হিমাগারে। ছবি: আজকের পত্রিকা

এবার আলু নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন চাষিরা। ১ কেজি আলু উৎপাদনের পর হিমাগারে মজুতে কৃষকের মোট খরচ পড়েছে ৩৫ টাকা। আর পাইকারি বাজারে স্থানীয় লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ১৫-১৮ টাকা কেজিতে। হল্যান্ড বা কার্ডিনাল লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ১২-১৩ টাকায়। এ অবস্থায় গড়ে ১ কেজিই কৃষকের প্রায় ২০ টাকা লোকসান হচ্ছে।

আলু ব্যবসায়ী, চাষি, কৃষি বিভাগ ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় বাজার উঠছে না। গত বছরের অক্টোবরে যেখানে বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬০ টাকায়, সেখানে এবার দাম ঠেকেছে তলানিতে। মৌসুমের শুরু থেকেই দাম পড়ে আছে। ফলে সব আলুচাষিরই লোকসান হচ্ছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় আলুর বার্ষিক চাহিদা ১ লাখ ১৩ হাজার ১৪৫ টন। এ বছর ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৩০ হাজার ৫১৭ টন, যা জেলার বার্ষিক চাহিদার ৯ গুণ বেশি। গত বছর ৩৪ হাজার ৯৫৫ হেক্টরে উৎপাদন হয়েছিল ৯ লাখ ৩৮ হাজার ৮২৪ টন। তবে সেবার কৃষকের লাভ হয়েছিল। ফলে এবার আরও ৩ হাজার ৫৪৫ হেক্টরে বেশি আলু চাষ করা হয়। গত বছরের তুলনায় উৎপাদন বেড়েছে ৯১ হাজার ৬৯৩ টন।

রাজশাহীতে আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগার রয়েছে ৩৯টি। এর মধ্যে ৩৭টি সচল। এসব হিমাগারের ধারণক্ষমতা ৪ লাখ ৩৩ হাজার ২৫০ টন। তবে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪৯১ টন। এর মধ্যে খাবার আলু ৩ লাখ ৬০ হাজার ৭৩২ টন। আর বীজ আলু ৭৩ হাজার ৭৫৯ টন। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ লাখ ২৯ হাজার ৩০৫ টন আলু হিমাগার থেকে বের হয়েছে। বাকি আছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৮৬ টন। এই আলু এখন কৃষকের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর প্রতিদিনই বাজার মনিটরিং করে থাকে। সবশেষ গত রোববার তাদের তথ্যে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে হল্যান্ড বা কার্ডিনাল লাল আলু বিক্রি হয়েছে ১২-১৩ টাকা কেজিতে। আর স্থানীয় লাল আলু বিক্রি হয়েছে ১৫-১৮ টাকায়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর আলু বিক্রি হয়েছে ১৫-২০ টাকায়। আর চলতি ২৪ অক্টোবর বিক্রি হয় ৫৫-৬০ টাকা কেজি দরে। এ বছর আলুর দর অনেক কম।

আলুচাষিরা বলছেন, গত আগস্টে সরকার হিমাগার গেটে কমপক্ষে ২২ টাকা দামে ৫০ হাজার টন আলু কেনার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু কৃষক ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, কোথাও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এই দরে আলু কেনেননি। ২২ টাকায় আলু বিক্রি করতে পারলেও কৃষকদের লোকসান অর্ধেকে নামত বলে তাঁরা জানিয়েছেন। কিন্তু এখন কেজিতেই লোকসান ২০ টাকা। কৃষককে লাভের মুখ দেখতে হলে আলু দাম ৪০ টাকার ওপরে ওঠাতে হবে। কিন্তু খুচরা বাজারেই এখন স্থানীয় লাল আলু ২০-২৫ ও হল্যান্ড ১৪-১৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব আলু অনেকেই গোখাদ্য হিসেবে বস্তাসহ কিনছেন।

জেলা আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আহাদ আলী আলুর দরপতনের জন্য বেশি উৎপাদন ও হিমাগারে পচে যাওয়াকে দায়ী করছেন। তাঁর মতে, পাইকারি বাজারে দাম কম হওয়ায় হিমাগার থেকে আলু তুলে বাজারে নেওয়ার খরচও উঠছে না। অনেকে আলু হিমাগার থেকে তুলতে পারছেন না।

জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহানা আখতার জাহান বলেন, গত বছর আলুর দাম বেশি থাকায় কৃষকেরা এবার বেশি পরিমাণে চাষ করেছেন। চলতি মৌসুমে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম একেবারেই কমে গেছে।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনও একই কথা বলছেন। তিনি বলেন, রাজশাহী জেলার উদ্বৃত্ত আলু আগের বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়েছে। তাই বাজার ঠিক থেকেছে। এবার সব জেলাতেই আলুর উৎপাদন বেশি। ফলে সবখানেই মূল্য কম। চেষ্টা করেও বাড়ানো যাচ্ছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাগ্রে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

জাপানে ‘খোলামেলা’ পোশাক পরায় রেস্তোরাঁ থেকে বের করে দেওয়া হলো ২ চীনাকে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চট্টগ্রাম-৯ আসন: বিএনপিতে হেভিওয়েটের ধাক্কাধাক্কি

  • বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা এই আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হতে চান।
  • মূল লড়াই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর মধ্যে হতে পারে।
  • জামায়াত আগেভাগেই প্রার্থী চূড়ান্ত করে ফেলেছে, প্রার্থীও রয়েছেন তৎপর।
সবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, ডা. শাহাদাত হোসেন, শামসুল আলম, আবু সুফিয়ান, সাইদ আল নোমান ও এ কে এম ফজলুল হক। ছবি: সংগৃহীত
মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, ডা. শাহাদাত হোসেন, শামসুল আলম, আবু সুফিয়ান, সাইদ আল নোমান ও এ কে এম ফজলুল হক। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম জেলায় ১৬টি সংসদীয় আসন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া)। আগের ইতিহাস বলছে, এই আসন থেকে যে দল জয়ী হয়, সেই দলই সরকার গঠন করে। আবার চট্টগ্রাম-৯-এর সংসদ সদস্য স্থান পান সরকারের মন্ত্রিসভায়ও। ১৯৯১ থেকে অনুষ্ঠিত প্রায় সব কটি সংসদ নির্বাচনে এমনটিই ঘটে এসেছে। তাই এবার এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে সবচেয়ে বেশি দৌড়ঝাঁপ চলছে। বিশেষ করে বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা এই আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। এদিকে জামায়াতে ইসলামী আগেভাগেই প্রার্থী ঠিক করে ফেলায় তিনি একা মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

স্থানীয় ও দলীয় সূত্র বলেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এবার ভোটের রাজনীতির সমীকরণ ভিন্ন। চট্টগ্রাম-৯ আসনে এবার বিএনপি-আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপি-জামায়াত লড়াই হবে। এনসিপি, জাতীয় পাটি, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ফ্রন্ট ও ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থীরাও থাকতে পারেন মাঠে।

১৯৯১ সালে আবদুল্লাহ আল নোমান এই আসন থেকে বিএনপির টিকিটে বিজয়ী হয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পান। ১৯৯৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এখান থেকে আওয়ামী লীগের এম এ মান্নান বিজয়ী হয়ে মন্ত্রী হন। ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান বিজয়ী হয়ে হন খাদ্যমন্ত্রী। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নুরুল ইসলাম বিএসসি চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে বিজয়ী হয়ে হন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী। ২০১৪ সালের নির্বাচনে সাবেক মন্ত্রী জাতীয় পার্টির জিয়া উদ্দীন আহমেদ বাবলু বিজয়ী হন এখানে। ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

এবার চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পেতে তৎপর চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র ও সাবেক মন্ত্রী, রাষ্ট্রদূত মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন। তাঁর ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিনও রয়েছেন সক্রিয়। অবশ্য হাটহাজারী আসনেই তাঁর আগ্রহ বেশি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া মাঠে আছেন বর্তমান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শামসুল আলম, বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর এবং নগর বিএনপির দুই যুগ্ন আহ্বায়ক আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল এবং এস এম সাইফুল আলমও আলোচনায় রয়েছেন। প্রয়াত আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমানও আছেন মাঠে। অবশ্য চট্টগ্রাম-১০ আসনও তাঁর নজরে রয়েছে।

জানতে চাইলে মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সিটি মেয়র ও মন্ত্রী থাকাকালে পুরো চট্টগ্রামের উন্নয়নে কাজ করেছি। শত শত লোকের চাকরির ব্যবস্থা করেছি। দল চাইলে নির্বাচন করতে প্রস্তুত।’

আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী শামসুল আলম বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া এবং ধানের শীষে নির্বাচন করাটা যেন আমার অপরাধ ছিল। এ কারণে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বলতে গেলে ধ্বংসই করে দিয়েছে। এরপরও আমি দল ছেড়ে যাইনি। এবার দলের মূল্যায়নের অপেক্ষায় থাকলাম।’

নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরে সাতবার জেলে গেছি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের রোষানলে পড়ে। আশা করছি দল আমার এ ত্যাগের মূল্যায়ন করবে।’

জানতে চাইলে প্রয়াত আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দলের সভাপতি সাঈদ আল নোমান বলেন, ‘মনোনয়ন পাওয়া বা সংসদ সদস্য হওয়া কখনোই আমার একার সিদ্ধান্ত নয়। এটা জনগণের ভালোবাসা, আস্থা ও দলের সিদ্ধান্ত। দল চাইলে অবশ্যই নির্বাচনী মাঠে থাকব।’

জামায়াতের প্রার্থী চালাচ্ছেন জোর প্রচারণা

জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে এ কে এম ফজলুল হকের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক। পেশাগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে তিনি চট্টগ্রাম-৯ আসনের বিভিন্ন এলাকায় মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করছেন। জানতে চাইলে জামায়াতের এই প্রার্থী বলেন, ‘নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য লোককে ভোট দিয়ে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে জামায়াতে ইসলামীর পাশে থাকার আহ্বান রাখছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি পোষাতে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিজেরাই গুদাম বানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা

৩৬ বার অপারেশন, অবশেষে বাড়ি ফিরল মাইলস্টোনের শিক্ষার্থী নাভিদ

নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশের ভূমিকা সর্বাগ্রে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

জাপানে ‘খোলামেলা’ পোশাক পরায় রেস্তোরাঁ থেকে বের করে দেওয়া হলো ২ চীনাকে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত