Ajker Patrika

হৃদয়কে যাতে শনাক্ত না করা যায়, সেজন্য লাশ টুকরো করে মাংস আলাদা করে আসামিরা: র‍্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও রাউজান প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ২০: ২৬
হৃদয়কে যাতে শনাক্ত না করা যায়, সেজন্য লাশ টুকরো করে মাংস আলাদা করে আসামিরা: র‍্যাব

চট্টগ্রামের রাউজানে কলেজছাত্র শিবলী সাদিক হৃদয়কে হত্যার পর আসামিরা তাঁর লাশ টুকরো টুকরো করে শরীর থেকে মাংস আলাদা করে। লাশ যেন শনাক্ত করা না যায়, সেজন্যই তাঁরা এমন বিভৎস কাজ করেন বলে র‍্যাব জানিয়েছে। 

এই হত্যা মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ রোববার নগরীর চান্দগাঁওয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম।

আসামিদের বরাত দিয়ে র‍্যাব অধিনায়ক বলেন, ‘হৃদয়কে হত্যার পর লাশ প্রথমে কলাপাতা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। লাশটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন শনাক্ত করতে না পারে এ জন্য টুকরো করা হয় এবং শরীরের মাংস আলাদা করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে সব মিলে ৯-১০ জন অংশগ্রহণ করে। হত্যায় তিনটি পার্ট ছিল। এর মধ্যে অপহরণ গ্রুপ, কিলিং গ্রুপ ও লাশ গুম গ্রুপ।’

এর আগে গতকাল শনিবার পতেঙ্গা থানা এলাকা থেকে প্রথমে রাঙামাটি জেলার বাসিন্দা উচিংথোয়াই মারমাকে (২৩) গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রাতে বান্দরবানের বাসিন্দা ক্যাসাই অং চৌধুরীকে (৩৬) নগরীর নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা দুজন হৃদয়ের সঙ্গে একটি খামারে কাজ করত।

র‍্যাব কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, উমংচিং মারমা এবং অং থুই মারমা হৃদয়কে অপহরণের পরিকল্পনা করে এবং উচিংথোয়াই ও তার অন্যতম সহযোগী ক্যাসাই অং চৌধুরীকে বান্দরবান থেকে ডেকে আনে। তাদের দিয়ে হৃদয়কে হত্যা করা হয়। উচিংথোয়াই ছুরি দিয়ে হৃদয়ের গলা কাটে। ক্যাসাই অং চৌধুরীসহ আরও চারজন হৃদয়ের হাত-পা এবং মুখ চেপে ধরেন। এরপর মাথাসহ তাঁর শরীর বিচ্ছিন্ন করা হয়।

তিনি আরো জানান, হৃদয়কে হত্যার পর উচিংথোয়াই মারমার মোবাইল থেকে হৃদয়ের বাবা-মাকে ২৯ আগস্ট কল করে মুক্তিপণের টাকা বান্দরবানে নিয়ে আসতে বলে। ১ সেপ্টেম্বর বান্দরবানে গিয়ে হৃদয়ের পরিবার মুক্তিপণের টাকা দিয়ে আসে। এর মধ্যে উচিংথোয়াই মারমা নিজেই দেড় লাখ টাকা রেখে দেয়। বাকিদের ৫০ হাজার টাকা দেন।

লাশ গুমের বিষয়ে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জানায়, পাহাড়ে হৃদয়কে হত্যার পর লাশ প্রথমে কলাপাতা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। পরে লাশটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন শনাক্ত করতে না পারে এ জন্য টুকরো করা হয় এবং শরীরের মাংস আলাদা করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে সব মিলিয়ে ৯-১০ জন অংশগ্রহণ করে।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত র‍্যাব দুজন এবং রাউজান পুলিশ আরও ছয় জনসহ মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান আছে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অধিনায়ক বলেন, ‘হৃদয়কে হত্যার পর মাংস খেয়ে ফেলেছে এমন একটি খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হয়। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা বলেছে, এ ব্যাপারে তারা জানে না। তবে শরীরের মাংস আলাদা করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল এটি সত্য। তবে মাংস খাওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।’

উল্লেখ্য, গত ২৮ আগস্ট রাতে মুরগির খামার থেকে হৃদয়কে অপহরণ করা হয়। অপহরণের দুদিন পর অপহরণকারীরা হৃদয়ের পরিবারে ফোন করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। কয়েক দিন পর অপহৃত হৃদয়ের বাবা বান্দরবান এলাকায় ডুলাপাড়ায় গিয়ে দুজনের হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দেন। কিন্তু তারা হৃদয়কে মুক্তি দেয়নি।

গত ১১ সেপ্টেম্বর সকালে রাউজান-রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী রঙিন পাহাড় থেকে হৃদয়ের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদিকে লাশ নিয়ে ফেরার পথে পুলিশের কাছ থেকে ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত আসামি উমংচিং মারমাকে ছিনিয়ে নেয় গ্রামবাসী। পরে উত্তেজিত গ্রামবাসীর পিটুনিতে ঘটনাস্থলে তাঁর মৃত্যু হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত