Ajker Patrika

আজ আন্তর্জাতিক যুব দিবস: ফেনীতে প্রশিক্ষণ পেলেও কর্মসংস্থানের সংকট, যুবসমাজের হতাশা

মো. সাহাব উদ্দিন, ফেনী
সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার অধীনে তরুণীদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার অধীনে তরুণীদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ। ছবি: আজকের পত্রিকা

দুই বছর আগে ফেনী পৌরসভার সুমাইয়া হোসেন আনিকা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উদ্যোগে ফ্রিল্যান্সিং ও গ্রাফিক ডিজাইনের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। এরপর বিভিন্ন অনলাইন প্রতিষ্ঠানে চাকরির চেষ্টা করেও সফল হননি। এখন স্বামীর অনলাইন ব্যবসা দেখাশোনা করছেন। আনিকা বলেন, ‘প্রশিক্ষণ পেয়েছি, কিন্তু কাজের সুযোগ খুবই কম।’

আনিকার মতো ফেনীর অনেক তরুণ-তরুণী প্রশিক্ষণ শেষে কর্মসংস্থানের অভাবে হতাশায় ভুগছেন। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ থাকলেও অধিকাংশের অভিযোগ—প্রশিক্ষণ যুগোপযোগী নয়, প্রশিক্ষণ শেষে কাজের সুযোগও মেলে না।

জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে প্রায় ১৮ হাজার যুবক-যুবতীকে কম্পিউটার বেসিক, পোশাক তৈরি, রেফ্রিজারেশন ও এয়ার কন্ডিশন, ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিকসসহ বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গবাদি পশু পালন, মাছ চাষ, প্রাথমিক চিকিৎসাসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক কোর্সও চালু আছে।

সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার অধীনে তরুণীদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার অধীনে তরুণীদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ। ছবি: আজকের পত্রিকা

মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর প্রতিবছর প্রায় ৪০০ নারীকে বিউটিফিকেশন, ব্লক-বাটিক, ফুড প্রসেসিং, হ্যান্ডিক্রাফট ও আধুনিক দর্জিবিদ্যায় তিন মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেয়। প্রশিক্ষণার্থীরা দৈনিক ১০০ টাকা করে ভাতা পান। তবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের হিসাবে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মধ্যে স্থায়ী কর্মসংস্থানের হার মাত্র ৪০ শতাংশ। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১ হাজার ২০০ নারীর বেশির ভাগই কাজে যুক্ত হননি।

মিফতাহুল জান্নাত, যিনি মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘শিখতে আগ্রহ ছিল, কিন্তু পরিবার বলেছে দরকার নেই, তাই শিখেও কাজে লাগাতে পারিনি।’ শাহনাজ ইসলাম শহরের একাডেমি এলাকার বাসিন্দা। তিনি জানান, তিন বছর আগে সেলাই শিখতে চাইলেও স্বামী বাধা দিয়েছিলেন। এখন সংসারে অভাব দেখা দেওয়ায় শিখতে বলছেন, কিন্তু সন্তান ও সংসার সামলে আর সম্ভব হচ্ছে না।

সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার অধীনে তরুণীদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ। ছবি: আজকের পত্রিকা
সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার অধীনে তরুণীদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফেনী জিয়া মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার বলেন, ‘বাবা-মা মনে করেন মেয়েকে পড়াশোনা করিয়ে বিয়ে দিলেই হলো। অথচ দক্ষতা থাকলে দুঃসময় কাজে লাগে, তারা সেটা বুঝতে চান না।’ প্রশিক্ষক তাসলিমা আক্তার মনে করেন, পারিবারিক বাধা ও ব্যক্তিগত অনীহার কারণে অনেক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষতা কাজে লাগাতে পারেন না। অন্য প্রশিক্ষক নুরুন নাহার বলেন, মেয়েরা সেলাই শিখে অন্তত পরিবারের জন্য ব্যবহার করতে পারেন, কিন্তু তাতেও অনেকে উদাসীন।

জানতে চাইলে জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, জনবল ও বাজেট সংকটের কারণে সঠিক প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয় না। এতে প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যেও আগ্রহ কমে যায়। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নুরুল আমিনের মতে, অনেকেই শুধু ভাতার জন্য প্রশিক্ষণে আসেন, ব্যবসা বা চাকরিতে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা থাকে না। তদারকির ব্যবস্থা না থাকায় কার্যকর সহায়তা দেওয়া সম্ভব হয় না।

জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২৩ হাজার ৮৮৮ জনকে পরিবারভিত্তিক ১৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা ঋণ এবং ৫ হাজার ৮৯ জনকে ২০ কোটি টাকা একক ঋণ দেওয়া হয়েছে। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ২৫২ নারীকে ৩৫ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে।

এ বিষয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অঃদাঃ) সাইফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ঋণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা তৈরির চেষ্টা করছি; কিন্তু বরাদ্দ কম, জনবল ও আধুনিক প্রশিক্ষণ উপকরণের সংকট রয়েছে।’ মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাছরীন আক্তার বলেন, ‘ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির সম্প্রসারণ প্রয়োজন। পাশাপাশি নারীর অগ্রগতির জন্য পারিবারিক ও সামাজিক মানসিকতা পরিবর্তন জরুরি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত