Ajker Patrika

অর্থনীতি পর্যটন যোগাযোগের সম্ভাবনার দ্বার খুলছে

আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
Thumbnail image

কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নদীর দুই পাড়ের মধ্যে সেতুবন্ধ গড়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। শুধু যোগাযোগব্যবস্থা নয়, এই টানেল বৃহত্তর চট্টগ্রামের অর্থনীতি ও পর্যটন খাতেও সম্ভাবনার হাজারো দ্বার খুলে দেবে বলে মনে করছেন এ অঞ্চলের শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা।

তাঁরা বলছেন, এই টানেলের কারণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিল্পায়ন ও পর্যটনে সুবাতাস আসবে। ব্যাপকভাবে বাড়বে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, যা প্রভাব রাখবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু টানেল দক্ষিণ চট্টগ্রাম ছাড়াও পর্যটননগর কক্সবাজার এবং পার্বত্য জেলা বান্দরবানের মধ্যে যোগাযোগ সহজ করবে, যা পর্যটনকে বিকশিত করবে। কর্ণফুলী নদীর ওপারে কোরিয়ান ইপিজেড, চীনা ইপিজেড, সিইপিজেড, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। বাড়বে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। টানেলকে ঘিরে বিনিয়োগের মহাপরিকল্পনা নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল জানান, বিদেশি ৭টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ইতিমধ্যে ৫০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরেই নতুন একটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে। টানেলকে কেন্দ্র করে ৫ থেকে ১০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে হবে এই বিনিয়োগ। 

জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে এবং নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। প্রস্তাবিত বে-টার্মিনালে এ দুটি ছাড়াও সিঙ্গাপুর বন্দর কর্তৃপক্ষ, ভারতের আদানি গ্রুপ ও নেদারল্যান্ডসের এপি টার্মিনালের বিনিয়োগের প্রস্তাব আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে। টানেলের কাছে লালদিয়ার চরে বিনিয়োগ করবে ডেনমার্কের মার্কস লাইন। 

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেল মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এবং ভারতের সেভেন সিস্টার্সের মধ্যে সংযোগ হিসেবে কাজ করবে। পদ্মা সেতু যেমন দেশের জিডিপিতে অবদান রাখছে, তেমনি এই টানেলও অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।

সূত্র বলেছে, চট্টগ্রামকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও লজিস্টিক হাবে পরিণত করার মহাপরিকল্পনার অংশ বঙ্গবন্ধু টানেল। টানেলকে কেন্দ্র করে কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারায় গড়ে উঠেছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)। আনোয়ারায় ৭৮৩ একর জমিতে চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হচ্ছে। সেখানে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে। এখানে রপ্তানিমুখী জাহাজশিল্প, ইলেকট্রনিকস পণ্য, ফার্নেস অয়েল, সিমেন্ট শিল্পসহ ৩১টি শিল্পকারখানা স্থাপন করা হবে।

বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণে চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ রড সরবরাহ করেছে ইস্পাত প্রস্তুতকারী দেশীয় প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম। প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, টানেল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আনোয়ারা অংশে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হবে। বিনিয়োগকারীরা নতুন শিল্পকারখানা স্থাপনে উৎসাহিত হবেন। কর্মসংস্থান বাড়বে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে কক্সবাজার, বান্দরবানসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার যোগাযোগ সহজ হবে।

শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল চট্টগ্রামের চেহারা বদলে দেবে। শিপিং খাতকে ভালো একটি পর্যায়ে নিয়ে যাবে। এই টানেল বে-টার্মিনালের কার্যক্রমে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে চট্টগ্রামের কর্মসংস্থান, আবাসন, পর্যটন, সর্বোপরি দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল চট্টগ্রাম শহরের যানজট কমাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত