Ajker Patrika

৪৬ কোটি বরাদ্দেও রোগার্ত হ্যাচারি

  • মৎস্য বিভাগের ছয়টি হ্যাচারির মধ্যে মাত্র দুটি সচল।
  • পানি সঞ্চালন লাইনের নাটবল্টু চুরি হয়ে গেছে।
  • হ্যাচারিগুলোতে ডিম সংগ্রহকারীদের সেবা দেওয়ার মতো জনবল নেই।
রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 
সংস্কারের জন্য বরাদ্দ পেলেও এখনো আগের অবস্থায় প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদার মদুনাঘাট বড়ুয়াপাড়া হ্যাচারি। ছবি: আজকের পত্রিকা
সংস্কারের জন্য বরাদ্দ পেলেও এখনো আগের অবস্থায় প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদার মদুনাঘাট বড়ুয়াপাড়া হ্যাচারি। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় মৎস্য বিভাগের নেওয়া ৪৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলছে। এরপরও মৎস্য বিভাগের ছয়টি হ্যাচারির মধ্যে মাত্র দুটি সচল। বাকিগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সেগুলোয় ডিম ফোটানোর সাকুলার ও সিস্টেন ট্রাংকের অবস্থা করুণ। অভিযোগ উঠেছে, মৎস্য বিভাগ থেকে তদারকির অভাব এবং ঠিকাদারের অবহেলার কারণে মা মাছের ডিম ছাড়ার সময় ঘনিয়ে এলেও এই অবস্থা চলছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে নেওয়া ৪৬ কোটি টাকার ওই প্রকল্পের মধ্যে ছিল নদীর পরিবেশ রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। এসব কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মৌসুমি ডিম সংগ্রহকারীদের জন্য আগে নির্মিত পুরোনো হ্যাচারিগুলোকে সংস্কার করে আধুনিকায়ন করা।

হালদাপারের মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক মাসে নদীতে প্রশাসনের পরিচালিত অভিযানে এবার অনেকটা সুফল মিলেছে। হাটহাজারী ও রাউজানের উপজেলা প্রশাসন নৌ পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে রাত-দিন অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার মিটার জাল পুড়েছে। প্রশাসনের এই অভিযানের কারণে এখন নদীর মা মাছের বিচরণ বেড়েছে। সবার ধারণা, আগামী অমাবস্যার তিথিতে ঝড়বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে মাছ ডিম দেবে।

সম্প্রতি হালদা নদীর উভয় পাড়ে ঘুরে দেখা গেছে, মৌসুমি ডিম সংগ্রহকারীরা নৌকা, জাল, নোঙর নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে ডিম সংগ্রহকারী মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, সরকারি হ্যাচারিগুলোর সংস্কারকাজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা রয়েছে। হ্যাচারিগুলোর সংস্কারকাজ চলছে খুব ধীরগতিতে। তা ছাড়া দেরিতে কাজে হাত দেওয়ায় ডিম সংগ্রহকারীরা ভরা মৌসুমে এবার কোনো সুফল পাবেন না। ডিম সংগ্রহকারীদের সনাতন পদ্ধতিতে মাটির কুয়ায় ডিম রেখে আগের মতো পোনা উৎপাদন করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হ্যাচারিগুলোতে ডিম সংগ্রহকারীদের সেবা দেওয়ার মতো জনবল নেই। প্রত্যেক কেয়ারটেকারের সঙ্গে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজন কম্পিউটার অপারেটর। হালদার উভয় পাড়ে থাকা মৎস্য বিভাগের ছয়টি হ্যাচারি পরিদর্শন করে দেখা যায়, রাউজানের তিনটি হ্যাচারির মধ্যে দুটি (পশ্চিম গহিরা ও কাগতিয়া) হ্যাচারি বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত। এ দুটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। রাউজানের একমাত্র মোবারকখীল হ্যাচারিতে ডিম ফোটানোর উপযোগী করতে সংস্কারকাজ চলছে। পরিদর্শনের সময় দেখা গেছে, হাটহাজারী অংশে থাকা তিনটি হ্যাচারির মধ্যে গড়দুয়ারার মাছুয়াঘোনা হ্যাচারিটি পূর্ণ মাত্রায় সংস্কারকাজ চলছে। এখানে দৈনিক মজুরিতে কাজে নিয়োজিত সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন গত বছর এই হ্যাচারিতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সাইফুল ইসলাম। তাঁর আশা, এই হ্যাচারিতে থাকা ৪০টির মতো সিস্টেনের সব কটিতে ডিম ফোটানো যাবে।

মাদার্শা শাহমাদারী হ্যাচারিতে দেখা যায়, আগের তৈরি সিস্টেন ট্রাংকগুলোর অবস্থা বেহাল। অধিকাংশ ট্রাংক ফুটো হয়ে পড়ে আছে। দুজন মিস্ত্রি ট্রাংকের ফুটো বন্ধে কাজ করছেন। কাজে নিয়োজিত স্থানীয় রাজমিস্ত্রি সামশুল আলম বলেন, এই হ্যাচারির ডিম ফোটানো ট্রাংকগুলোতে লাগানো পানির সঞ্চালন লাইনের বেশির ভাগ নাটবল্টু চুরি হয়ে গেছে। গভীর নলকূপের পাম্পটি নষ্ট হয়ে থাকায় একটি শ্যালো পাম্প নদীর সঙ্গে সংযোগ দিয়ে রাখা হয়েছে।

এই হ্যাচারির দেখভাল করছেন ইয়াকুব আলী নামের একজন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই হ্যাচারিতে হ্যাচারি সহকারী হিসেবে আছেন আবদুর রহমান নামের একজন। এখানে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সাইফুল ইসলাম নামের একজন কম্পিউটার অপারেটর। হ্যাচারির নাজুক অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে ইয়াকুবের দাবি, হ্যাচারিতে সবকিছু ঠিকঠাক আছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হালদা প্রকল্পের বর্তমান পরিচালক (পিডি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘কিছু জটিলতার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। এরপরও হ্যাচারিগুলোর সংস্কারকাজ দ্রুততম সময়ে আমরা শেষ করার চেষ্টা করছি। আশা করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত