Ajker Patrika

শেষযাত্রার সঙ্গী তাঁরা ১০ জন, কবর খোঁড়াতেই আত্মিক শান্তি

সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২১, ১৫: ৪৬
শেষযাত্রার সঙ্গী তাঁরা ১০ জন, কবর খোঁড়াতেই আত্মিক শান্তি

জীবনের শেষ সময়ের যাত্রার সঙ্গী হন তাঁরা। আপন পর ভেদাভেদ ভুলে যে কোনো মৃত ব্যক্তির জন্য কবর খুঁড়ে দেন তাঁরা। পেশাজীবনের পাশাপাশি পর ঝড়, তুফান ও প্রাকৃতিক বৈরী প্রতিকূলতার মাঝেও আত্মতৃপ্তির জন্য এ কাজ করে আসছেন সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারি ইমামনগরের ১০ জন ব্যক্তি। মানবিক এ কাজের কারণে ইতিমধ্যে তাঁরা ‘শেষ যাত্রার সঙ্গী’ উপাধি পেয়েছেন। 

আলোচিত ওই ১০ জন ব্যক্তি হলেন, ভাটিয়ারি ইমামনগর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ এরশাদ, মো. শাহেদ, মো. সজিব, মো. হানিফ, গিয়াস উদ্দিন, রাশেদ, ইকবাল, সোহেল, ইরফান ও সাদ্দাম। পেশায় কেউ কৃষক, কেউবা রাজমিস্ত্রি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অথবা দিনমজুর। কিন্তু কর্ম জীবনের ভিড়েও শেষ যাত্রার সঙ্গী হতে একসঙ্গে দল বেঁধে ছুটে চলেন ওরা দশজন। 

শুধু কবর খোঁড়াই নয়, করোনাকালীন সময়ে করোনা উপসর্গে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের গোসল ও দাফনের সব ধরনের কাজে নির্ভয়ে সহযোগিতা করেছেন তাঁরা। পরকালের পূর্ণ সঞ্চয়ের আশায় দীর্ঘ এক যুগেরও অধিক সময় ধরে বিনা পারিশ্রমিকে কবর খোঁড়ার কাজ করছেন তাঁরা। 

তাঁদের মধ্যে মোহাম্মদ এরশাদ পেশায় একজন শ্রমিক ও মো. হানিফ পেশায় রাজমিস্ত্রি। তাঁরা দুজন বলেন, প্রতিটি মানুষকে একদিন না একদিন পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে। মৃত্যু নামক এ চির সত্যকে আমাদেরও একদিন আলিঙ্গন করতে হবে। তাই সামাজিক ও মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা মৃত ব্যক্তিকে শেষ বিদায় দিতে স্বপ্রণোদিত হয়ে বিনা পারিশ্রমিকে কবর খোঁড়ার কাজ করছি। আমরা যখনই কোথাও কেউ মারা যাওয়ার খবর পাই, তখনই সকল কাজকর্ম ফেলে কবর খননের সকল সরঞ্জামাদি নিয়ে হাজির হয়ে যাই মৃত ব্যক্তির বাড়িতে। সুনিপুণভাবে কবর খোঁড়ার পর নিজ হাতে কবরে শুইয়ে দিই আমরা। করোনাকালে মানুষ যখন একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল, তখনো আমরা মৃত্যুর সংবাদ পেলে নিজ উদ্যোগে ছুটে যেতাম মৃত ব্যক্তির বাড়িতে। তখন কবর খোঁড়ার পাশাপাশি মৃত ব্যক্তির গোসলও করিয়েছি আমরা। 

তাঁরা আরও জানান, আর্থিক সহায়তা দিয়ে মানুষকে সাহায্য করার ক্ষমতা তাদের না থাকলেও কবর খোঁড়ার মাধ্যমে যে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারছেন এতেই তাঁদের আত্মতৃপ্তি। শরীরের শক্তি সামর্থ্য যত দিন থাকবে তত দিন এ কাজ করে যাবেন বলে জানান তাঁরা।

ইমামনগর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা মো. মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, কর্ম জীবনে এই দশজন নানামুখী পেশায় জড়িত থাকলেও মৃত ব্যক্তিকে শেষ বিদায় দিতে তাঁরা মুহূর্তেই এক হয়ে যান। শেষ বিদায়ের সঙ্গী হতে তাঁরা রাত, দিন মৃত ব্যক্তির বাড়িতে ছুটে চলেন সমানতালে। করোনাকালে যখন মানুষ মৃত্যু ভয়ে একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল, তখনো তাঁরা নির্ভয়ে ছুটেছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। মানবিক গুণাবলির এ খেটে খাওয়া মানুষগুলো তাঁদের কর্ম গুনের কারণে সকল শ্রেণির মানুষের অন্তরে ঠাঁই করে নিয়েছেন। তাঁরা ইতি মধ্যে অনেকের কাছে পরিচিত লাভ করেছেন ‘শেষ বিদায়ের বন্ধু’ হিসেবে। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য আলমগীর মাসুম জানান, খেটে খাওয়া মানুষ হয়েও তাঁরা সামাজিক যে কর্মকাণ্ড করছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাঁদের এ কর্মগুণের কারণে ইতিমধ্যে অনেকের হৃদয়ের মণিকোঠায় ঠাঁই করে নিয়েছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

জি এম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা ও মামলা প্রত্যাহার

ভারতকে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

প্লট–ফ্ল্যাট বরাদ্দে সচিব, এমপি, মন্ত্রী, বিচারপতিসহ যাঁদের কোটা বাতিল

জুলাই সনদের বৈধতা নিয়ে আদালতেও প্রশ্ন তোলা যাবে না

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত