Ajker Patrika

৫ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েও বাড়ি দখলে রেখেছেন আওয়ামী লীগ নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
৫ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েও বাড়ি দখলে রেখেছেন আওয়ামী লীগ নেতা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক বাসিন্দা রাজশাহী শহরে একটি বাড়ি কিনে মহাবিপদে পড়েছেন। বাড়ি কেনার পরই স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে দিতে হয়েছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা। কিন্তু আরও টাকা দাবি করে আসছেন ওই নেতা। টাকা না দেওয়ায় বাড়িটিই দখলে নিয়েছেন। এ নিয়ে ভুক্তভোগী মামলা করলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে বাড়ি দখলের সত্যতা মিলেছে।

ভুক্তভোগী হারুন-অর-রশিদের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বালিয়াদিঘি গ্রামে। ২০১৬ সালে রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার মিয়াপাড়ায় ৩০ লাখ টাকা দিয়ে এই টিনশেড বাড়ি কেনেন তিনি। কিন্তু বাড়িটিতে তিনি একদিনও বসবাস করতে পারেননি। আহসান হাবিব ওরফে হাসান (৫০) নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা বাড়িটি দখলে রেখেছেন। হাসান ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।

হারুনের দাবি, হাসান কয়েক দফায় ৫ লক্ষাধিক টাকা চাঁদা নিয়েছেন বাড়ির দখল ছেড়ে দেবেন বলে। কিন্তু হাসানের দাবি আরও ৫ লাখ টাকা। বাড়িটির বর্তমান মূল্য প্রায় কোটি টাকা। অভিযুক্ত হাসান রানীবাজার মিয়াপাড়ার বাসিন্দা। হাসান ছাড়াও বাড়িটি দখলের নেপথ্যে রয়েছেন লাভলু নামের আরেক আওয়ামী লীগ নেতা। তাঁর বাড়িও মিয়াপাড়ায়। বাড়িটিতে বর্তমানে তালা দিয়ে রেখেছেন হাসান ও লাভলু।

জানা গেছে, হারুন অর রশিদ সোনামসজিদ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। বাড়ি উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। নগরীর বোয়ালিয়া থানা থেকে মাত্র কয়েক শ গজ দূরে সেই বাড়ি। মালিক বোয়ালিয়া থানায় কয়েক দফা অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ দখলদার হাসান ও লাভলুকে ডেকেও থানায় হাজির করতে পারেনি। শেষে ২০২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন বাড়ির মালিক। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইকে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পিবিআই।

গত ৬ মে বাড়ি দখল ও চাঁদাবাজির মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেন পিবিআইয়ের রাজশাহীর পুলিশ পরিদর্শক আবু সাঈদ। প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বাড়ি দখল ও চাঁদাবাজির সত্যতা পেয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেন। 

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, হারুন ২০১৬ সালের ১ জুন পৌনে দুই কাঠা জায়গার ওপর থাকা টিনশেড বাড়িটি ৩০ লাখ টাকায় কেনেন আসাদুজ্জামান সরকার নামের একজন ব্যাংক কর্মকর্তার কাছ থেকে। ওই বছরের ২৬ ডিসেম্বর বোয়ালিয়া ভূমি অফিস থেকে নামজারি করে ভূমি কর পরিশোধ করেন। বাড়ির মালিক হারুনের কাছ থেকে চাহিদামাফিক চাঁদা না পেয়ে বাড়িটিতে এখনো তালা দিয়ে রেখেছেন হাসান ও তাঁর সহযোগী লাভলু।

পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাড়িটির সকল বৈধ কাগজপত্র হারুনের নামে রয়েছে। এ কারণে তিনিই বাড়িটির বৈধ মালিক। কাগজপত্রের কোথাও কোনো সমস্যা নেই। তবে হাসান শুধু চাঁদাবাজির জন্যই হারুনকে বাড়ির দখল না দিয়ে হয়রানি করছেন। বাড়িটিতে কয়েকবার তালা দিয়ে মালিকের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করার পর আরও চাঁদার দাবিতে বাড়ি দখলে রাখার বিষয়ে হাসান ও লাভলুর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্তে সত্য প্রমাণিত হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।

ভুক্তভোগী হারুন বলেন, কেনার পর বাড়িটি সংস্কার করে সেখানে মেস হিসেবে ভাড়া দেন। বাড়িটি কেনার পর খবর পেয়ে হাসান বাড়ি মালিক হারুনকে ফোন করে তার সঙ্গে দ্রুত দেখা করতে বলেন। হারুন তার সঙ্গে দেখা করলে হাসান তার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে বাড়ির দখলে পাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়। এরই মধ্যে হাসান ও তার সহযোগীরা মেসের ছাত্রদের তাড়িয়ে দিয়ে নিজেরা বাড়িটিতে তালা মেরে দেন। এ সময় হারুন প্রথম দফায় হাসানকে ১ লাখ টাকা দেন। টাকা পেয়ে হাসান চক্র বাড়ির তালা খুলে দেন।

হারুন বলেন, ‘হাসান গং কয়েকবার বাড়িটিতে তালা মারেন আবার টাকা নিয়ে খুলেও দেন। হাসান ও চক্রের কয়েকজনকে সাতবারে ৫ লক্ষাধিক টাকা দিয়েছি। কিন্তু তারা আবারও মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেন। এবার টাকা দিতে অস্বীকার করলে বাড়ির দখল দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। হাসান আবার তালা মারেন।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা আহসান হাবীব ওরফে হাসান বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। তাঁর দাবি, বাড়ির কিছু অংশ তাঁর ভাগনে লাভলু কিনেছেন। তাই তিনি বাড়িটিতে তালা দিয়েছিলেন। এখন তাঁর ভাগনে লাভলুর দখলে বাড়িটি আছে। হাসান বলেন, তাঁদের পক্ষে হাইকোর্টের রায় আছে।

তবে হারুন অর রশিদ বলেন, হাসান পুরোপুরি মিথ্যা কথা বলেছেন। কোনো ধরনের কাগজ থাকলে তা দেখাতে বলা হলেও তাঁরা কখনোই কাগজ নিয়ে হাজির হননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কাফনের কাপড় পরে কাল পদযাত্রা করবেন ইবতেদায়ি শিক্ষকেরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবিতে লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকেরা। স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাশিক্ষক ঐক্যজোট আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নবম দিনের মতো অবস্থান ধর্মঘট পালন করে। এ সময় তাঁরা জানান, দাবি মানা না হলে আগামীকাল কাফনের কাপড় পরে পদযাত্রা করবেন তাঁরা।

ধর্মঘট পালনকালে সমাবেশে ঐক্যজোটের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা শামসুল হক আনছারী বলেন, ‘১০৮৯টি স্বতন্ত্র মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অনুদানবিহীন সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার এমপিও আবেদনের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় আমরা আগামীকাল বুধবার কাফনের কাপড় পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদযাত্রা করব।’

মানিকপুর মোহাম্মাদিয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মো. মুহিব বুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘দাবি পূরণ না হলে আগামীতে আমরা লংমার্চ টু যমুনা যেতে বাধ্য হব।’

সমাবেশে বক্তব্য দেন আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মো. সামসুল আলম, সদস্যসচিব মোহাম্মদ আল-আমিন, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাশিক্ষক ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান কাজী মোখলেছুর রহমান, উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন জিহাদি, মহাসচিব মো. সামছুল আলম প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পদ্মায় দেখা মিলল বিলুপ্তপ্রায় কুমিরের, নদীতে গোসল না করতে মাইকিং

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহীর পদ্মায় বিলুপ্তপ্রায় কুমিরের দেখা মিলল। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহীর পদ্মায় বিলুপ্তপ্রায় কুমিরের দেখা মিলল। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর পদ্মায় ছোট-বড় একাধিক কুমিরের দেখা মিলেছে। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক একটি কুমিরের ছবি তুলেছেন এক দম্পতি। আর ছোট এক বা একাধিক কুমির দেখেছেন নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা। তাঁরা অবশ্য ছবি তুলতে পারেননি। এই অবস্থায় নদীতে গোসল করা থেকে বিরত থাকতে এলাকায় মাইকিং করেছে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার চরে পাখির ছবি তুলতে যান ইমরুল কায়েস ও উম্মে খাদিজা ইভা দম্পতি। তাঁরা পাখির বদলে কুমিরের ছবি নিয়ে বাড়ি ফেরেন। ষাটবিঘা চরের রাজু আহাম্মেদ গরু চরাতে গিয়ে প্রথম কুমিরটি দেখতে পান। ওই দম্পতি যে কুমিরের ছবি তোলেন, সেটি প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএন বাংলাদেশে বিলুপ্ত শ্রেণির হিসেবে ঘোষণা করেছে। নতুন করে এ কুমিরের দেখা পাওয়া গেছে।

ইমরুল কায়েস-উম্মে খাদিজা দুজনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পেশায় তাঁরা আলোকচিত্রী। তাঁরা সেদিন পদ্মার চরে লাল মুনিয়া পাখির ছবি তুলতে যান। সেখানে যাওয়ার পর রাজশাহী বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির মোবাইল ফোনে কল করেন ইমরুল কায়েসকে। তিনি জানান, চরে গরু চরাতে গিয়ে একটি ছেলে কুমির দেখতে পেয়েছেন। তারপরই শুরু হয় নদীতে কুমির খোঁজার অভিযান। একপর্যায়ে দেখা মেলে।

খাদিজার ভাষায়, ‘যদি কুমিরটা পানিতে থাকে, তাহলে ড্রোন দিয়ে দেখা যেতে পারে। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর কায়েস ড্রোন ওড়ান। কায়েস প্রথমে ড্রোনটা আমাদের ডান দিকে পাঠালেন। কিন্তু কুমিরের দেখা নেই। একটু পর কায়েস হুট করে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন, ‘‘পাগলি কুমির!’’ আমি খুশিতে এক লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।

‘কায়েসকে জিজ্ঞেস করলাম, কোন দিকে কুমির? কায়েস বললেন, ডান দিকে সামনে। আমি আর কায়েস ড্রোন চালু রাখা অবস্থায় দুজন কুমিরের দিকে হাঁটা ধরলাম। কিছু দূর হাঁটতে হাঁটতে অবশেষে জীবনে প্রথম সামনাসামনি ওয়াইল্ডে কুমিরের দেখা পেলাম। কায়েস ড্রোন দিয়ে কিছু ভিডিও ও ছবি নিলেন, আমি ক্যামেরায় কিছু ভিডিও করলাম। আমরা খুশিতে আত্মহারা।’

আইইউসিএনের মুখ্য গবেষক এ বি এম সারোয়ার আলম (সীমান্ত দীপু) জানান, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে মিঠাপানির কুমিরকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর পাবনা জেলায় একটি কুমিরের সন্ধান মেলে, পরে দেশের আরও দুটি স্থানে দেখা যায় একই প্রজাতির কুমির। বর্তমানে এ দুটি কুমিরকে সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্রে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

সারোয়ার আলম মনে করেন, এগুলো বাংলাদেশের প্রকৃতিতে জন্ম নেওয়া কুমির নয়। এরা বয়স্ক এবং সম্ভবত ভারতের চাম্বুল নদ এলাকা থেকে এসেছে।

এদিকে পদ্মায় প্রাপ্তবয়স্ক কুমিরটিকে বিরক্ত না করতে আজ মঙ্গলবার রাজশাহী বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় জেলেদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এ সময় জেলেরা জানান, কয়েক দিনের মধ্যে তাঁরাও ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া চরমাজারদিয়া এলাকায় পদ্মা নদীতে কুমির দেখেছেন। তবে তাঁদের দেখা কুমির ছবিতে আসা কুমিরটির মতো বড় নয়, সেটি ছোট।

জানতে চাইলে রাজশাহী বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘জেলেরা ছোট কুমির দেখেছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। তবে ইমরুল কায়েস ও উম্মে খাদিজা দম্পতি প্রাপ্তবয়স্ক কুমিরের ছবি তুলেছেন। এখন স্থানীয়রা নাকি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করেছেন কুমিরটি ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমার কাছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ জন্য ফোন এসেছিল। এই অবস্থায় স্থানীয়দের সচেতন করতে আমরা আজ লিফলেট বিতরণ করেছি।’

জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্ক কুমিরটির সঙ্গী থাকতে পারে। আবার জেলেরা ছোট কুমির দেখার দাবি করছেন। তাহলে বোঝা যায় যে, কুমির আছে। এখন আমাদেরই সচেতন থাকতে হবে। জলজ প্রাণী জলেই থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তাদের বিরক্ত করা যাবে না।’

তবে কুমিরের ছবি তোলা আলোকচিত্রী ইমরুল কায়েস আশঙ্কা করছেন, কুমিরটি খুঁজে ধরে নিয়ে যেতে পারে আইইউসিএন। কিন্তু তিনি চান, কুমিরটি উন্মুক্তভাবেই নদীতে থাকুক। তাহলে এর প্রজনন হবে।

ইমরুল কায়েস বলেন, ‘এর আগে আমরা দেখেছি, কোথাও কুমির পেলে আইইউসিএন সেটাকে ধরে নিয়ে গেছে। প্রজননের জন্য সেটিকে সুন্দরবনে ব্রিডিং সেন্টারে রেখেছে। সেটা তো খাঁচার মতো। আমরা চাই, এই কুমিরকে যেন সেখানে না নেওয়া হয়। তা না হলে আমাদেরই অপরাধী মনে হবে যে, আমরা ছবিটা তুলেছি বলে কুমিরটাকে খাঁচায় বন্দী হতে হলো।’

পদ্মা নদীতে গোসল না করতে প্রচারপত্র বিতরণ। ছবি: আজকের পত্রিকা
পদ্মা নদীতে গোসল না করতে প্রচারপত্র বিতরণ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লিফলেট

এতে বলা হয়েছে, কুমির হলো জলচর সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী। এরা হিংস্র স্বভাবের। কুমিরের মাথা সরু ও দীর্ঘ আকারের হয়। কুমিরের মুখটি ইংরেজি ‘ভি’ আকৃতিবিশিষ্ট হয়। সব কুমিরই অর্ধ-জলচর প্রাণী। এরা মূলত নদী, হ্রদ ও জলাভূমির মিষ্টি জলেই বাস করে। কোনো কোনো প্রজাতির কুমির অর্ধ-লবণাক্ত বা লবণাক্ত জলে বাস করে। রোদ পোহানোর জন্য এরা ডাঙ্গায় চলে আসে। এরা মাংসাশী প্রাণী। প্রধানত মাছ, জলাশয়ে বসবাসকারী পাখি ও অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণী খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।

কুমিরের আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য কুমিরের দেখা পেলে অতি উৎসাহী হয়ে বিরক্ত না করা, বাচ্চাদের নদীর কিনারায় যেতে না দেওয়া, দিনে ও রাতের বেলায় মাছ আহরণের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা, নদীতে গোসল করা থেকে বিরত থাকা, ছোট ছোট নৌযান চলাচলে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা, কুমিরের রোদ পোহানোর সময় ঢিল না ছোড়া এবং তাড়ানোর চেষ্টা না করা, রাতের বেলায় নদী ও নদীপাড়ের সব কাজ থেকে সাময়িকভাবে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে।

জলজ পরিবেশে কুমিরের গুরুত্বও তুলে ধরা হয় এ লিফলেটে। বলা হয়, কুমির জলজ খাদ্যশৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কুমির মরা, পচা মাছ ও অন্যান্য জলজ মৃত প্রাণী ভক্ষণ করে জলজ পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখে। সর্বোপরি কুমির জলজ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

এ ছাড়া আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী, কুমিরকে বিরক্ত করা, রোদ পোহানোর সময় ঢিল ছোড়া, তাড়ানোর চেষ্টা করা, ধরা, মারা, ক্রয়-বিক্রয়, পাচার করা, পরিবহন করা, হত্যা ইত্যাদি শাস্তিযোগ্য অপরাধ; যার সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর কারাদণ্ড অথবা ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিলেটে দুই ট্রাক সাদাপাথর জব্দ, দেড় লাখ টাকা জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট  
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে ট্রাকে করে পাথর নেওয়ার সময় দুই চালককে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাঁরা হলেন বগুড়ার নরুইল গ্রামের রেজওয়ান (২৭) ও কালিবালা গ্রামের আরিফুল (৩৫)। মঙ্গলবার সকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই ট্রাকচালককে জরিমানা করা হয়।

এর আগে গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ মহাসড়কে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে ট্রাক দুটি আটক করা হয়।

পুলিশ জানায়, সোমবার দিবাগত রাতে ওই ট্রাক দুটি ভোলাগঞ্জ থেকে পাথর নিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় তাদের তল্লাশিচৌকিতে আটক করা হয়। পরে পাথরবিষয়ক কাগজপত্র দেখাতে পারেননি চালকেরা। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলে পাথর পরিবহন করা ট্রাক দুটিসহ দুজনকে আটক করা হয়।

আজকের পত্রিকাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন কোম্পানীগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আবুল হাছনাত। তিনি বলেন, আটক দুজনকে সতর্ক করা হয়েছে। জব্দ করা পাথর উপজেলা প্রশাসনের জিম্মায় রয়েছে। এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইয়াবাসহ শ্রমিক দলের সভাপতি গ্রেপ্তার

বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি 
গ্রেপ্তার ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি গোলাম রব্বানী। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি গোলাম রব্বানী। ছবি: সংগৃহীত

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ১০টি ইয়াবাসহ ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি গোলাম রব্বানীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি দুরুল হুদা। গ্রেপ্তার গোলাম রব্বানী বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি এবং লালপুর দীঘলবস্তি গ্রামের মৃত ইব্রাহিমের ছেলে।

পুলিশ জানায়, সোমবার সন্ধ্যায় মাদক বিক্রির খবর পেয়ে দুওসুও ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড এর লালপুর দীঘলবস্তি কবরস্থানের সামনে থেকে তাঁকে আটক করা হয়। পরে তল্লাশি চালিয়ে ১০টি ইয়াবা উদ্ধার পুলিশ।

এ বিষয়ে উপজেলা শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মাদক কারবারি তো দূরের কথা, মাদক সেবন করে এমন লোকদেরও দলে ঠাঁই নেই। তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁর অপকর্মের দায় দল নেবে না।

বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি দুরুল হুদা বলেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশে মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ল ১৫ শতাংশ, সঙ্গে শর্ত

ইউএস-বাংলার বহরে যুক্ত হলো তৃতীয় এয়ারবাস ৩৩০, এয়ারক্র্যাফট দাঁড়াল ২৫টিতে

আজকের রাশিফল: আপন গোপন তথ্য সামলে রাখুন, প্রচুর ভালোবাসুন

ত্রিভুজ প্রেম থেকে মুক্তি পেতেই জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে ছাত্রী: পুলিশ

যুগান্তকারী উদ্ভাবন: চোখে চিপ বসিয়ে দেখতে পাচ্ছেন দৃষ্টিহীনেরা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত