Ajker Patrika

বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে পরিবহনসেবা কমিয়ে ‘শিক্ষার্থীদের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ’

শাপলা খন্দকার, বগুড়া
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১০: ৫৯
বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে পরিবহনসেবা কমিয়ে ‘শিক্ষার্থীদের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ’

বগুড়ার সুপরিচিত ও বৃহৎ সরকারি কলেজ আজিজুল হক কলেজ। উত্তরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে আসেন শিক্ষার্থীরা। স্থানীয়দের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি থেকেই যাওয়া-আসা করেন। এক বছর আগে পরিবহনসেবা সীমিত করায় নিয়মিত ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা । ফলে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমেছে।

এক বছরের বেশি সময় ধরে কলেজের বাসগুলো শিক্ষার্থীদের শুধু নিয়ে আসছে, কিন্তু ক্লাস শেষে তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্রীরাও গণপরিবহনে যাতায়াত করায় অনিরাপদ বোধ করেন। এর ফলে একদিকে পরিবহনে তাঁদের দেওয়া ফি যেমন আত্মসাৎ করা হচ্ছে, তার ওপর বাড়তি গাড়িভাড়াও দিতে হচ্ছে তাঁদের। এমন পরিস্থিতিতে ভাড়ার টাকা জোগানোর সামর্থ্য না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী কলেজেই আসছেন না।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিবছর পরিবহন ফি বাবদ আদায় করা হয় মাথাপিছু ২৭৫ টাকা। ২৬ হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২৭৫ টাকা করে নিলে বছরে কলেজের কোষাগারে জমা হয় ৭১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এখন পরিবহন সীমিত করে কলেজ থেকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া বাদ দিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ এক বছরে প্রায় ৪৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছে বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। 

কলেজ প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি আজিজুল হক কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থী আছেন মোট ২৬ হাজার। এদের মধ্যে একমাত্র ছাত্রী হলে থাকেন ৬০০ জন। ব্যক্তিগত খরচে মেসে থাকেন আনুমানিক ১১ হাজার জন। বাকি প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী বাড়ি থেকে কলেজে যাওয়া-আসা করেন। 

কলেজের পরিবহন পুলের মোট সাতটি বাসে ৩১০টি আসন আছে। একটি বাস জেলা সদরের শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার জন্য বরাদ্দ। বাকি ছয়টি বাস যায় সোনাতলা উপজেলার সদর রেলঘুণ্টি, সারিয়াকান্দির উপজেলা বাজার, নন্দীগ্রামের সদর বাজার, শেরপুর-ধুনট মোড়, দুঁপচাচিয়ার জে কে কলেজের সামনে ও শিবগঞ্জের পীরবে। 

এসব বাসস্টপে সকাল ৮টায় গিয়ে বাস থামে; শিক্ষার্থী নিয়ে কলেজে পৌঁছায়। কিন্তু বিকেলে ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসা হয় না। সকালে কলেজ বাসে এলেও শিক্ষার্থীদের ফিরতে হয় নিজ খরচে, নিজ দায়িত্বে। এই অবস্থা চলছে গত বছরের (২০২১) ১২ সেপ্টেম্বর থেকে। 

এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা; দৈনিক ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি খরচ হচ্ছে তাঁদের। কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আর পরিবহনসেবা না থাকার কারণে কমেছে ক্লাসে তিন-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিতি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতিটি বিভাগের প্রথম বর্ষের ২০০ জনের মতো শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত থাকলেও এ বছর তা কমে ৩০-৫০ জনে ঠেকেছে। 

আজ সোমবার কলেজে গিয়ে দেখা যায়, বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ক্লাসে ৩০ জন উপস্থিত আছেন। এই বিভাগের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০০ জন। হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ক্লাসে উপস্থিত আছেন ৬৫ জন শিক্ষার্থী। এই বিভাগের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩২৫ জন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, ‘আমার ক্লাসে শুরুর দিকে ১৫০ জনের মতো শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল। কিন্তু এখন ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে।’

দুপচাঁচিয়া থেকে কলেজে আসেন হিসাববিজ্ঞান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী লক্ষ্মণ চন্দ্র বর্মণ। তিনি বলেন, ‘দুপচাঁচিয়ায় যেতে আমার ৬৫ টাকা ভাড়া লাগে। সপ্তাহে চার দিন কলেজে এলে খরচ দাঁড়ায় ২৮০ টাকা। মাসে খরচ হয় ১ হাজার ১২০ টাকা। আমার কৃষক পরিবার। আমি এত টাকা জোগাতে পারি না। তাই কলেজেই আসা কমিয়ে দিয়েছি।’

ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘দূর থেকে কলেজে আসা-যাওয়া করি। কলেজের বাসে নিশ্চিন্তে আসা যায়। কিন্তু অন্যান্য যানবাহনে এলে অনিরাপদ বোধ হয়। মা কলেজে আসতে নিরুৎসাহিত করেন।’

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কলেজ থেকে সোনাতলা বাসস্টপের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার, সারিয়াকান্দির ২২ কিলোমিটার, নন্দীগ্রাম ২০ কিলোমিটার, শেরপুর-ধুনট মোড় ২২ কিলোমিটার এবং শিবগঞ্জ ১৭ কিলোমিটার। দূরত্ব অনুযায়ী ছয়টি উপজেলায় প্রতিদিন সকাল-বিকেল দুবার যাওয়া-আসা করতে জ্বালানি প্রয়োজন হয় ২০৬ লিটার।

প্রতি লিটার ডিজেলের মূল্য ১০৯ টাকা করে হলে দৈনিক ব্যয় ২২ হাজার ৪৫৪ টাকা। সপ্তাহে ৫ দিন কলেজ খোলা থাকে। সে হিসাবে এক বছরে (২৪০ দিন) এই খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৫৩ লাখ ৮৮ হাজার ৯৬০ টাকা। এক বেলা আসা-যাওয়ায় জ্বালানি খরচ হয় এর অর্ধেক অর্থাৎ ২৬ লাখ ৯৪ হাজার ৪৮০ টাকা। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা বাৎসরিক পরিবহন ফি থেকে এই খরচ বাদ দিলে দেখা যায়, এক বছরে লুট হচ্ছে ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার ৫২০ টাকা।

আজিজুল হক কলেজের সাবেক ছাত্রনেতা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জেলা শাখার সভাপতি ধনঞ্জয় বর্মণ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আবাসিক-অনাবাসিক সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পরিবহন ফি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম পরিবহনসেবা দেওয়া হচ্ছে না। এভাবে শিক্ষার্থীদের টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। এই অনিয়ম শিক্ষার্থীরা মেনে নেবেন না।

‘এমনিতেই কলেজের ছাত্রসংখ্যার অনুপাতে বাসের সংখ্যা অপ্রতুল। তার পরও শিক্ষার্থীদের বাসায় পৌঁছে দেওয়া বন্ধ করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

এ বিষয়ে জানতে আজ সোমবার বিকেলে সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে মিটিং করার জন্য ঢাকায় এসেছি। আপনি পরে ফোন করেন।’

উনি সন্ধ্যায় কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যায় তাঁকে ফোন দেওয়া হলেও নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

পরে কলেজের পরিবহন পুলের দায়িত্বে থাকা আরবি শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুর রশিদের কাছে গত সেপ্টেম্বর থেকে বাস বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলে অর্থ সাশ্রয়ের জন্য এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন জ্বালানির দাম বেশি, আমাদের ওপর ব্যয় সংকোচন এবং অপচয় রোধ করার তাগিদ রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

থানচির বলিবাজারে পুড়ল ১৩ দোকান

থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি  
আগুনে পুড়ছে দোকান। ছবি: আজকের পত্রিকা
আগুনে পুড়ছে দোকান। ছবি: আজকের পত্রিকা

বান্দরবানের থানচি উপজেলার বলিপাড়া ইউনিয়নের বলিবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার দিবাগত গভীর রাতে হঠাৎ লাগা আগুনে বাজারের অন্তত ১৩টি দোকানঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দেড় বছরের ব্যবধানে এটি এলাকায় তৃতীয়বারের মতো বড় অগ্নিকাণ্ড।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে বাজারের একটি খাবারের হোটেল থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের দোকানগুলোতে।

বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি অংসিংম্যা মারমা বলেন, ‘তখন রাত গভীর হওয়ায় সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ বাজারে দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত থেকে হইচই শুনে দোকান থেকে বের হয়ে দেখি আগুন জ্বলছে। টিটু দাশের রেস্টুরেন্ট ও জাফর আহম্মদের সারের দোকানের মাঝখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।’

আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হ্লায়ইচিং মারমা নামের এক কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, ‘খুব দুর্ভাগ্য আমার। মালপত্র সরানোর কোনো সুযোগ পেলাম না।’

বলিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াঅং মারমা বলেন, ‘আগুনের ঘটনা জানার পরপরই বাজারে এসেছি। এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। আগুনে ১৩টি দোকান পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’

থানছি থানার ফায়ার স্টেশনের লিডার পিয়ার মোহাম্মদ বলেন, ‘শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে বলিপাড়া বাজারে আগুনের খবর পাই। দ্রুত দুটি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভায়। তৎক্ষণিকভাবে মনে হচ্ছে, শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। তবে তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আদুল্লাহ আল-ফয়সাল বলেন, ‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ট্রেনিংয়ের কাজে ঢাকায় আছি। বলিপাড়া বাজারে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শুকনা খাবার, কম্বল দেওয়া হবে। এ ছাড়াও বান্দরবান জেলা প্রশাসককে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেরপুরে গণসংযোগে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশের ঘোষণা জামায়াতের

শেরপুর প্রতিনিধি
শনিবার বিকেলে ও শুক্রবার রাতে জামায়াত ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
শনিবার বিকেলে ও শুক্রবার রাতে জামায়াত ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

শেরপুরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য প্রার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলামের গণসংযোগে হামলার অভিযোগ এবং তা নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে স্থানীয় রাজনীতি। অন্যদিকে এই অবস্থায় পাল্টাপাল্টি হামলার আশঙ্কায় স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। গতকাল শনিবার বিকেলে শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণসংযোগে হামলার প্রতিবাদে আজ রোববার বিকেল ৪টায় শহরের খোয়ারপাড় শাপলা চত্বর মোড় থেকে থানা মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

জামায়াত নেতাদের অভিযোগ, ২৪ অক্টোবর (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর শেরপুর-১ (সদর) আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলাম সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের ডাকপাড়া গ্রামে গণসংযোগে বের হলে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা বাধা দেন। ওই সময় দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে বিএনপির সমর্থকেরা জামায়াত নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করেন। সংঘর্ষে শেরপুর জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম স্বপন ও রাকিবুল হাসানসহ অন্তত ২০ জন আহত হন।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনকে শেরপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এদিকে ওই ঘটনার পর শুক্রবার রাতে বিএনপি ও জামায়াতের কর্মীরা এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান নেন। সন্ধ্যার পর থেকে শহরে পাল্টাপাল্টি প্রতিবাদ মিছিল হয়। হামলার অভিযোগে রাতে জামায়াত নেতা রাকিবুল হাসান বাদী হয়ে শেরপুর সদর থানায় চারজনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভোটের গণসংযোগে এমন ন্যক্কারজনক হামলায় শেরপুরবাসী উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠিত। এতে আগামী নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।’ তিনি ওই হামলার ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকলকে দ্রুত সময়ের মধ্যে শাস্তির আওতায় আনার জন্য ও নিবার্চনী কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

সেই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ ও সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। গণসচেতনতার অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে রোববার বিকেল ৪টায় শহরের খোয়ারপাড় মোড় থেকে থানা মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ঘোষণা করেন তিনি। ওই সময় গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন শেরপুর-১ (সদর) আসনে জামায়াতের সংসদ সদস্য প্রার্থী হাফেজ রাশেদুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও শেরপুর-২ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের এমপি প্রার্থী নুরুজ্জামান বাদল, জেলা প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি ও শেরপুর-২ (নকলা-নালিতাবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মু. গোলাম কিবরিয়া ভিপিসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে এর আগে হামলার অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে শুক্রবার রাতে শেরপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘জামায়াতের লোকজন পূর্বপরিকল্পিতভাবে ডাকপাড়া গ্রামে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহড়া দিতে গিয়েছিল। সেখানে কয়েকটি মসজিদে মিটিং-মিছিল করে গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে এলাকাবাসী এর তীব্র প্রতিবাদ করলে তারা এলাকা ছেড়ে চলে আসে। এরপর থানায় গিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। তারা মিথ্যা কথা বলছে এবং উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে।’ তিনি ‘মিথ্যা মামলা’র তীব্র নিন্দা জানিয়ে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সদস্য সাইফুল ইসলাম স্বপন, আক্রামুজ্জামান রাহাতসহ বিএনপির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শৈলকুপায় শ্বশুরের বঁটির কোপে গৃহবধূর মৃত্যু

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামে শ্বশুরের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে লিমা বেগম (২৮) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। নিহত লিমা ওই গ্রামের আব্দুর রবের স্ত্রী। রোববার (২৬ অক্টোবর) ভোর ৫টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, রোববার ভোরে গৃহবধূ লিমা বেগম নিজের ঘর থেকে বাড়ির উঠানে যান। তখন উঠানে দাঁড়িয়ে থাকা শ্বশুর মুকুল শেখ (৫০) হঠাৎ তাঁর হাতে থাকা বঁটি (ধারালো অস্ত্র) দিয়ে পুত্রবধূকে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। লিমার চিৎকারে পরিবারের অন্য সদস্যরা ছুটে এসে তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।

শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আরিফুর রহমান বলেন, ‘ওই গৃহবধূকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তাঁর বুকের ওপরের অংশে ধারালো অস্ত্রের গুরুতর ক্ষত ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’

স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবি, অভিযুক্ত শ্বশুর মুকুল শেখ মানসিক ভারসাম্যহীন।

শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুম খান এই ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন, ‘অভিযুক্ত মুকুল শেখকে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, মুকুল শেখ মানসিক ভারসাম্যহীন। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কার্তিকের কুয়াশায় কুড়িগ্রামে শীতের আগমনী বার্তা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
গতকাল সকালে কুড়িগ্রাম শহরের রেলস্টেশন এলাকায় কুয়াশাচ্ছন্ন অবস্থা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল সকালে কুড়িগ্রাম শহরের রেলস্টেশন এলাকায় কুয়াশাচ্ছন্ন অবস্থা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কার্তিকের শুরুতেই কুড়িগ্রামে শীতের আগমনী বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। পৌষ আসতে এখনো প্রায় দুই মাস বাকি থাকলেও প্রতি রাতে জেলাজুড়ে কুয়াশার স্পষ্ট উপস্থিতি শীতের আগমনকে ত্বরান্বিত করছে। দিনে সূর্যের দাপুটে উপস্থিতি থাকলেও রাতের আবহাওয়া কুয়াশার চাদরের দখলে যেতে শুরু করেছে। জানান দিচ্ছে শীত এল বলে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, জেলায় মধ্য অক্টোবর থেকে শীতের আগমনী বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। দিন-রাতের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে এসেছে। শনিবার (২৫ অক্টোবর) দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত এক সপ্তাহে জেলায় সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর একটু আগেই শীতের আগমন হচ্ছে। সন্ধ্যার পর কুয়াশা পড়ছে। গাছের পাতা, ফসল ও ঘাস কিংবা খোলা আকাশের নিচে থাকা মোটরসাইকেল বা অন্য কোনো বস্তুতে পড়ে থাকা কুয়াশার ফোঁটা জানান দিচ্ছে শীতের আগমন। রাতের বেলা গাছের পাতা গড়িয়ে কুয়াশা ঘরের টিনের চালে পড়ছে টিপটিপ শব্দে। ভোরবেলা কুয়াশাচ্ছন্ন থাকছে চারপাশ। তবে সে তুলনায় শীতানুভূতি নেই। এখনো বৈদ্যুতিক পাখা ছাড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের। যদিও ইতিমধ্যে বাজারে ও সড়কের পাশের দোকানগুলোতে শীতের কাপড়ের পসরা সাজানো শুরু হয়েছে। যেন শীতকে বরণের প্রস্তুতি।

বিকেল হতেই শহরের বিভিন্ন মোড়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে নানা রকম শীতের পিঠা তৈরি শুরু করেছেন। ভাপা পিঠার সঙ্গে চলছে চিতই পিঠা বিক্রি।

কুড়িগ্রাম শহরের বাসিন্দা মুকুল বলেন, এ বছর একটু আগাম কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। রাতে ঘরের বাইরে শীত অনুভূত হচ্ছে। সড়কে গাড়ি চালালে কুয়াশার কুণ্ডলীর কারণে পথ চলতে সমস্যা হচ্ছে। জেলায় ইতিমধ্যে শীত শুরু হয়েছে। তবে ঠান্ডা তুলনামূলক কম।

কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে সকালের কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে সকালের কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্তী রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর বলেন, ‘রাতে ভালোই কুয়াশা পড়া শুরু হইছে। এখনো সেই অর্থে ঠান্ডা লাগে না। তবে বোঝা যাচ্ছে যে ঠান্ডা শুরু হচ্ছে।’

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ আল-আমিন মাসুদ বলেন, ‘আজ (শনিবার) সকালে সড়কপথে চলার সময় কুড়িগ্রামের রাজারহাটে কুয়াশার মাত্রা দেখে মনে হয়েছে যেন পৌষ মাস শুরু হয়েছে। তবে দিনে গরম, কিন্তু রাতের তাপমাত্রা কমছে। এ সময় শিশুদের সুরক্ষায় বাড়তি যত্ন নেওয়া উচিত। রাতে বৈদ্যুতিক পাখার গতি কমিয়ে রাখাসহ শিশুদের বাইরে নিয়ে গেলে ধুলাবালু ও ঠান্ডা এড়িয়ে চলতে হবে।’

রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমছে। ইতিমধ্যে শীত শুরু হয়েছে। মধ্য নভেম্বর থেকে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত