Ajker Patrika

গাছ পইড়া সব শেষ হইয়া গেছে, আমার মায় এহন থাকবে কই? 

গাছ পইড়া সব শেষ হইয়া গেছে, আমার মায় এহন থাকবে কই? 

‘অভাবের কারণে তাল পাতা আর নাড়া (খড়কুটা) দিয়া ঘর বানাইয়া ছিলাম। বৃষ্টি অইলে পানি পড়তো। স্বপ্ন ছিল মাকে টিনের দোতলা ঘরে রাখমু। আল্লায় হেই স্বপ্ন পূরণও করছে। চার বছর যাইতে না যাইতে বানে (ঘূর্ণিঝড়) হেই স্বপ্ন ভাইঙা চুরমার করইা দিছে। ঘরের উপুর (ওপর) দুইডা গাছ পইড়া সব শেষ হইয়া গেছে। আমার মায় (মা) এহন থাকবে কই (কোথায়) ?’ 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে আজ বুধবার সকালে কথাগুলো বলছিলেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ধানদী গ্রামের মো. হানিফ ব্যাপারী (৪৮)। হানিফ এক সময় রিকশা চালাতেন। এখন ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করেন। 

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গতকাল সোমবার সন্ধ্যার দিকে দুটি বিশাল আকৃতির চাম্বুল গাছ পড়ে হানিফের বসত ঘরটি দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনার সময় ওই ঘরে হানিফের বৃদ্ধ মা মোসা. মর্জিনা বেগম (৮০), স্ত্রী মোসা. জেসমিন বেগম (৪০), তাঁর শিশুপুত্র মো. রমজান (৯) ও মেয়ে মোসা. হাফছা (৬) ছিল। ভাগ্যক্রমে তাঁরা বেঁচে যায়। 

মা মর্জিনা বেগম বলেন, ‘শিশু বয়সে অর (হানিফ) বাহে (বাবা) মারা গেছে। পোলাডায় কত কষ্ট কইরা আমার থাহনের লাইগা ঘরডা উডাইছে। হেই ঘরডাও গাছ পইড়া মাটির লগে মিইশা গেছে। এহন আমার পোলায় ঘর উডাইবে কী দিয়া? আমরা কই থাকমু?’ 

স্থানীয় মো. আলম সওদাগর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘খুবই দরিদ্র পরিবার। হানিফ অনেক কষ্ট করে ঘরটি উঠিয়েছিলেন। তাঁর যে আর্থিক অবস্থা, তাতে তাঁর পক্ষে ফের ঘর ওঠানো কোনোভাবেই সম্ভব না!’ 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৬০ থেকে ৭০টি ঘর বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক ঘর। বাউফল পৌরসভার কাঁচামাল বিক্রেতা আল আমিন, ধানদী গ্রামের আলম ফরাজি, লুৎফর মুন্সির বসত ঘরের ওপর গাছ পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ধানদী ও নিমদী গ্রামের অন্তত ১০টি ঘর ভেঙে গেছে। ছোট ডালিমা গ্রামের সেকান্দার বয়াতির বসত ঘরের ওপর গাছ পড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। পানির তোড়ে বাউফল পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অটোচালক মো. হারুনের ঘরের ভিটে মাটি ও যাতায়াতের সড়কের মাটি চলে গেছে। 

ঘরের ওপর গাছ পড়ে নদী বেষ্টিত চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের রায় সাহেব গ্রামের শাহ আলম রাঢ়ী, আইয়ুব আলী সিকদার, ফজলে করিম খানের ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। একই ইউনিয়নের চরওয়াডেল গ্রামের মো. জসিম চৌকিদারের ঘরের ভিটে মাটি পানির তোড়ে ভেসে গেছে। ঘরটিও বিধ্বস্ত হয়েছে। 

একই গ্রামের মোসা. ফারজানা বেগমের বসত ঘরটি উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ভিটে ছাড়া কিছুই নাই। চর ব্যারেট গ্রামের মো. হেলাল হাওলাদারের বসত ঘরের ওপর গাছ পড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। দক্ষিণ চর ওয়াডেল গ্রামের মো. জুলহাস চৌকিদার, একই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জুলহাস চৌকিদার ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইব্রাহিম ফরাজির ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। 

চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এনামুল হক ওরফে আলকাচ মোল্লা বলেন, ‘ঝোড়ো বাতাসে গাছ পড়ে ও পানির তোড়ে আমার ইউনিয়নে ৩০-৪০টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অস্বাভাবিক পানিতে দুই শতাধিক পুকুর ও মাছের ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়াও চরওয়াডেল খানকা এলাকার পাকা সড়ক এবং চররায় সাহেব, চরব্যারেট ও চরনিমদী এলাকার মাটির সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-আমিন বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত