Ajker Patrika

‘আমার পাখিকে আমি বাঁচাতে পারলাম না’, মেয়েকে হারিয়ে জুলাই আন্দোলনে শহীদের স্ত্রী

দুমকী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ২১: ২৪
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বাবা শহীদ হয়েছিলেন জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে। বাবার মৃত্যুর আট মাসের মাথায় নিজের জীবনে ঘটে যায় বর্বরতম ঘটনা। গত ১৮ মার্চ পটুয়াখালীর পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নে নিজবাড়ি থেকে নানাবাড়ি যাওয়ার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় কলেজছাত্রী মেয়েটি। এ ঘটনায় নিজে থানায় গিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলাও করে। কিন্তু ধর্ষণের যে বর্বরতা, সেটি তাঁকে ভীষণ মানসিক যন্ত্রণায় ভুগাচ্ছিল। সব যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুকেই বেছে নিল মেয়েটি। গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখেরটেকের ভাড়াবাসা থেকে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় তার নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।

আজ রোববার দুমকীতে পারিবারিক কবরস্থানে শহীদ বাবার কবরের পাশেই শায়িত করা হয় তাকে।

স্বামীর পর মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় মা। বলেন, ‘আমার পাখিকে আমি বাঁচাতে পারলাম না। তাকে নিজের কাছে রাখছি, যাতে কেউ কিছু বলতে না পারে। তারপরও আমার পাখি চলে গেল।’

জুলাই আন্দোলন চলাকালে বিধবা হওয়া এই নারী জানান, পটুয়াখালীতে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়ে একেবারে চুপচাপ হয়ে যায় তাঁর মেয়ে। মেয়েকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসেন তিনি। প্রথম দফায় চিকিৎসার পরও সুস্থ হচ্ছিল না সে, ছিল ট্রমায় আক্রান্ত। দিন যত যায়, তার অবসাদ বাড়তে থাকে। পরে দ্বিতীয় দফায় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। কিন্তু কিছুতেই স্বাভাবিক হচ্ছিল না মেয়ে। একা একা থাকত, প্রতিবেশীদের সঙ্গেও কথা বলত না। মেয়েকে মানসিক যন্ত্রণা থেকে বের করতে নানাবাড়িতে নিয়ে যাওয়ার দিনক্ষণ ঠিক করেন মা। কিনে দেন নতুন জামাকাপড়। এতে সে খুশিও হয়েছিল। কিন্তু নানাবাড়িতে যাওয়ার আগেই পরপারে পাড়ি দিল সে।

বাবা হারানো মেয়েটি পরিবারে তিন ভাই–বোনের মধ্যে সবার বড়। নানাবাড়িতে থেকে স্থানীয় একটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ত সে। পড়াশোনা শেষ না করেই লাশ হয়ে বাবার বাড়িতে ফিরতে হলো তাকে।

প্রথমে ছেলে, পরে নাতনিকে হারিয়ে শোকে কাতর মেয়েটির দাদি। আজ নিজবাড়িতে কান্না করতে করতে বারবার অচেতন হচ্ছিলেন তিনি। তাঁর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ১৮ মার্চ দুপুরে বাবার কবর জিয়ারত করতে পাঙ্গাশিয়ার নানাবাড়ি থেকে দক্ষিণ পাঙ্গাশিয়া দাদার বাড়িতে যায় মেয়েটি। দুপুরে খাওয়াদাওয়া শেষে দাদাবাড়ির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বিকেল হয়ে যায়। বিকেলে বাবার কবর জিয়ারত করে সন্ধ্যার দিকে ফের নানাবাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয় সে। মায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে হেঁটে পাঙ্গাশিয়া নানাবাড়ির দিকে যাচ্ছিল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পাঙ্গাশিয়ার আলগি নামক স্থানে পৌঁছালে পথরোধ করে তারই সহপাঠী সাকিব মুন্সী ও সিফাত মুন্সী। তার হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয় সাকিব। মুখ চেপে ধরে সড়কের পাশে জলিল মুন্সীর বাগানে ঝোপের মধ্যে নিয়ে যায়। সেখানে দুই বখাটে দলবদ্ধ ধর্ষণ শেষে মোবাইলে ছবি ও ভিডিও করে। বিষয়টি কাউকে জানালে এসব ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয় ওই দুই বখাটে।

এ ঘটনার পর পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে নিজেই বাদী হয়ে দুমকী থানায় ওই দুই তরুণকে আসামি করে একটি মামলা করে মেয়েটি। মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় সাকিব ও সিফাতকে। তারা বর্তমানে যশোর সংশোধনাগারে রয়েছে।

দুমকী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন বলেন, মামলার পরই দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা কারাগারে রয়েছে। দুজনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে, দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সহকর্মীদের গালি দিয়ে শাস্তি পেলেন এসপি হাসান নাহিদ

স্কাউটসের অনুষ্ঠানে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গান, বেরিয়ে গেলেন ক্ষুব্ধ অতিথিরা

চোখের পাতার কাঁপুনি: কারণ, সতর্কতা ও করণীয়

‘মরতে পারতাম, আল্লাহ বাঁচিয়েছেন’— ছিনতাইয়ের শিকার শিক্ষিকার কণ্ঠে গা শিউরানো গল্প

সিদ্ধেশ্বরীতে ছিনতাইয়ের শিকার সেই নারীকে খুঁজছে পুলিশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত