Ajker Patrika

নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা ছাত্রদল কর্মী ইপ্সিতার, ধর্ষণের অভিযোগ আসে ৯৯৯ থেকে

শিমুল চৌধুরী, ভোলা 
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, ২২: ৫৪
সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতা। ছবি: সংগৃহীত
সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতা। ছবি: সংগৃহীত

ভোলা থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ কর্ণফুলী-৪ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হওয়া ভোলা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতার মরদেহ চার দিন পর গত শনিবার (২১ জুন) রাতে লক্ষ্মীপুরসংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

তবে ইপ্সিতার পরিবার মরদেহ উদ্ধারের খবর পেয়েছে গতকাল রোববার (২২ জুন) বিকেলে। ১৭ জুন ঢাকাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ কর্ণফুলী-৪ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হন ওই কলেজছাত্রী। এ ঘটনায় লক্ষ্মীপুর নৌ পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লক্ষ্মীপুর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ঝলক মোহন্ত।

কলেজছাত্রী ইপ্সিতার বাবা বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে মেয়ের লাশ শনাক্ত করেছি। গত চার দিন ধরে পানিতে থাকার কারণে লাশটি অর্ধগলিত হয়ে গেছে। তাই বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের তত্ত্বাবধানেই মেয়ের লাশ গতকাল সকালে দাফন করা হয়েছে।’

গত শনিবার রাতে লক্ষ্মীপুর থানার মেঘনা নদীতে ভাসমান অবস্থায় একটি মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা নৌ পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে তা ভোলা সদর মডেল থানাসহ বিভিন্ন থানায় জানানো হয়।

পরে লক্ষ্মীপুর নৌ থানা-পুলিশ মরদেহের পরিচয় পেতে বিলম্ব হওয়ায় পরদিন অর্থাৎ গতকাল সকালে আইনি প্রক্রিয়া শেষে লক্ষ্মীপুর আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম কর্তৃক মরদেহটি দাফন করা হয়। লাশের বিভিন্ন অঙ্গে ক্ষতের চিহ্ন দেখা গেছে।

ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাহাদাৎ মো. হাচনাইন পারভেজ আজকের পত্রিকাকে জানান, ভোলা সদর মডেল থানায় ইপ্সিতার বাবার করা সাধারণ ডায়েরির আলোকে থানা-পুলিশ ইপ্সিতার পরিবারকে লক্ষ্মীপুর নৌ থানায় এক নারীর মরদেহ পাওয়া গেছে মর্মে খবর দেয়। তাৎক্ষণিক ইপ্সিতার বাবা মরদেহের ছবি দেখে নিশ্চিত হন তাঁর মেয়ে।

সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতা ভোলা সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি কলেজ ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।

ভোলা জেলা ছাত্রদলের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মো. জসিম উদ্দিন আজ সোমবার রাতে বলেন, ‘সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতা ভোলা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের একজন সক্রিয় সদস্য। গত রমজান মাসে যখন ছাত্রদলের একটি কেন্দ্রীয় টিম আসে, তখন সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতা ছাত্রদলের সদস্য ফরম সংগ্রহ করেন। সেই থেকেই তিনি ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত।’

নিহত ইপ্সিতার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৭ জুন সকালের দিকে বাসা থেকে প্রাইভেট পড়ানোর নাম বলে বের হন তিনি। পরে আর বাসায় ফেরেননি। পরদিন ইপ্সিতার বাবা ভোলা সদর মডেল থানায় নিখোঁজ দাবি করে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতা। ছবি: সংগৃহীত
সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতা। ছবি: সংগৃহীত

এ ঘটনায় ইপ্সিতার সহপাঠীদের ভেতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তাঁরা অনেকে এ ঘটনাকে একটি হত্যা উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশাসনের কাছে তদন্তের দাবি করে পোস্ট দেন। অনেকে ধর্ষণের শিকার হয়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন বলেও মন্তব্য করেন।

তবে ইপ্সিতার বাবা বলেন, তাঁরা কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন না।

এ বিষয়ে কর্ণফুলী লঞ্চ কোম্পানির ম্যানেজার আলাউদ্দিন জানান, ১৭ জুন সকালে কর্ণফুলী-৪ লঞ্চ থেকে মেহেন্দীগঞ্জের পরে ইলিশা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে লঞ্চের তৃতীয় তলা থেকে এক তরুণী নদীতে ঝাঁপ দেন। লঞ্চের মাস্টার খবর পেয়ে এক ঘণ্টাব্যাপী তাঁকে উদ্ধারের জন্য লঞ্চ ব্যাক গিয়ার দিয়ে খোঁজাখুঁজি করেন। তাঁকে না পেয়ে পরে লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে চলে যায়। এ ঘটনায় লঞ্চে থাকা অন্য আরেক নারী ৯৯৯-এ কল দিয়ে ঝাঁপ দেওয়া তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ দেন।

পরে মুন্সিগঞ্জ সদর থানার পুলিশ ওই লঞ্চ থেকে দুজন স্টাফ ও অভিযোগকারীকে হেফাজতে নেয়। ঘটনার প্রাথমিক তথ্য জেনে পরে পুলিশ তাঁদের ছেড়ে দেয়।

মুন্সিগঞ্জ থানার ওসি এম সাইফুল আলম জানান, ১৭ জুন কর্ণফুলী-৪ লঞ্চ থেকে এক নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ৯৯৯-এ অভিযোগ আসে। পরে পুলিশ ওই লঞ্চের দুই স্টাফ ও অভিযোগকারীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসে। ঘটনার তথ্যাদি সংগ্রহ করে তাঁদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতা। ছবি: সংগৃহীত
সুকর্ণা আক্তার ইপ্সিতা। ছবি: সংগৃহীত

লঞ্চের সুপারভাইজার নান্টু দে জানান, ভোলার ইলিশা ঘাট থেকে সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে কর্ণফুলী-৪। কালিগঞ্জ ঘাট পার হওয়ার কিছু সময় পর তিনি খবর পান, এক নারী তৃতীয় তলা থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চটি ঘুরিয়ে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি গিয়ে লাইফবয়া ফেলা হয়। একবার ওই তরুণীকে নদীতে ভাসতে দেখা গেলেও কাছে পৌঁছানোর আগেই তিনি চোখের আড়াল হয়ে যান। পরে ঘণ্টাখানেক খোঁজাখুঁজির পর কোস্ট গার্ডকে জানিয়ে লঞ্চটি ঢাকার পথে রওনা দেয়। পরে কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের সদস্যরা ওই নারীকে উদ্ধারের জন্য অভিযান চালায়। কিন্তু নিখোঁজ তরুণীকে ওই দিন আর উদ্ধার করা যায়নি।

লঞ্চের কর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইলিশা ঘাট থেকে লঞ্চে ওঠার সময় ওই তরুণী কেবিন নেন। তবে কেবিন ভাড়ার টাকা না থাকায় কেবিনম্যান তাঁকে ওপরের তলায় অবস্থান করতে বলেন। পরে তাঁকে তৃতীয় তলায় মোবাইলে কারও সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। কথোপকথনের একপর্যায়ে তিনি অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন এবং হঠাৎ করেই নদীতে ঝাঁপ দেন। তাৎক্ষণিক যাত্রীরা চিৎকার শুরু করলে লঞ্চ থামিয়ে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। তবে পানিতে ডুবে যাওয়ায় তাঁকে আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

লক্ষ্মীপুর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ঝলক মোহন্ত আজ বিকেলে বলেন, ‘এ ঘটনায় লক্ষ্মীপুর নৌ পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে বলে জেনেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

ইসরায়েলে ২০ লাখ রুশভাষীর বাস, রাশিয়াকে তাঁদের কথা ভাবতে হয়: পুতিন

গুমে জড়িত ছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা: গুম কমিশনের প্রতিবেদন

ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা কাতারের, পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি

চীন-পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থায় ঝামেলা বাড়বে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত