Ajker Patrika

এক ইউনিয়নেই ১১ ইটভাটা, কৃষি জমি সব পুকুরে পরিণত

মো. হারুক হোসেন
এক ইউনিয়নেই ১১ ইটভাটা, কৃষি জমি সব পুকুরে পরিণত

রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর): এক সময় চাষের জমি থাকলেও এখন তা দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই। বড় বড় গর্ত, কোনো কোনোটির আকার পুকুরের মতো। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ৯ নম্বর ভোলাকোট ইউনিয়নের বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে এ দৃশ্যই চোখে পড়বে। কারণ, ইটভাটা। এই এক ইউনিয়নেই রয়েছে ১১টি ইটভাটা। আর এসব ইটভাটার চাহিদা মেটাতেই মাটির জোগান দিতে দিতে কৃষি জমিগুলো আজ পুকুরে পরিণত হয়েছে।

ভোলাকোট ইউনিয়নের অধিকাংশ চাষের জমির মাটি চলে গেছে স্থানীয় ১১টি ইটভাটায়। ছোট একটি অঞ্চলে এতগুলো ইটভাটা থাকায় মাটির জোগান দিতে দিতে কৃষিজমিই এখন বিলীন প্রায়। অধিকাংশ জমির মাটিই পুড়ে ইট হয়ে গেছে। আবার ভাটাগুলোর কারণে ধুলা-বালি আর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকে পুরো এলাকা। একের পর এক ট্রাক, ট্রলি, হ্যান্ডট্রলি ও পিকআপে করে আনা–নেওয়া হয় ইট ও জমির মাটি। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় রাস্তার পাশে বসবাসরত পরিবারগুলোকে। পাশাপাশি ইউনিয়নের সড়কগুলোতে চলাচলেও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের।

রামগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে সাত–আট কিলোমিটার দূরে আথাকরা, নাগমুদ, টিউরি, ভোলাকোট, লক্ষ্মীধরপাড়া, দেহলাসহ কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত ভোলাকোট ইউনিয়নে বসতিও অনেক। এই সব মানুষকেই রাস্তায় চলাচলে নিত্য ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এতগুলো ইটভাটা থাকার কারণে এলাকাটির পরিবেশের ওপর পেড়েছে বিরূপ প্রভাব। সড়কের পাশের অধিকাংশ গাছ মরে গেছে বা শুকিয়ে গেছে। টিকে থাকা গাছগুলোর অধিকাংশেরই পাতার রং পরিবর্তন হয়ে হলুদ হয়ে গেছে। ফলদ গাছগুলোর ফলনও কমে গেছে।

টিউরি গ্রামের আবুল খায়ের বলেন, ‘আমার সাতটি নারিকেল গাছ আছে। প্রতি বছর গাছের নারিকেল খাওয়ার পর ২–৩ হাজার টাকা বিক্রি করতাম। ইটভাটার ছাই ও ধুলোর কারণে গাছগুলোতে নারিকেল ধরাই বন্ধ হয়ে গেছে।’

স্থানীয়রা জানান, ভোলাকোট ইউনিয়নে রয়েছে ১১টি ইটভাটা। এই ইউনিয়নের এক গ্রামেই রয়েছে চারটি ইটভাটা। এসব ইটভাটায় মাটি পোড়ানোর কারণে সৃষ্ট ধুলোবালির কারণে গ্রামের পুরো চিত্রই পাল্টে গেছে। ইটভাটার সঙ্গে সম্পৃক্ত মাটি ব্যবসায়ীদের কারণে এ এলাকায় এখন ধানসহ কোনো ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে না। সব জমির মাটি চলে গেছে স্থানীয় ইটভাটাগুলোতে। হাজার হাজার একর ফসলি জমি এখন পুকুরে পরিণত হয়েছে। সরেজমিনে ভোলাকোট ইউনিয়নের আলীপুর, দেহলা, আথাকরা, টিউরি, নাগমুদ গ্রামে গিয়ে এ ভাষ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।

ওপরের মাটি তুলে নেওয়ার কারণে এসব ফসলি জমিতে এখন আগের চেয়ে অনেক কম ফসল উৎপাদন হয়। ছবি: মো. ফারুক হোসেনইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনে লোকালয়, কৃষিজমি ও বসতবাড়ির নির্দিষ্ট দূরত্বে ইটভাটা নিষিদ্ধ। ফসলি জমির মাটি দিয়ে ইট তৈরিও নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ আইনের ২০১৩-এর ৫ (১) ধারা অনুযায়ী, ইট তৈরির জন্য পাহাড়, টিলা ও কৃষিজমি থেকে মাটি নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই আইন লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

কিন্তু এসব আইনের তোয়াক্কা করছেন না রামগঞ্জের কোনো ইটভাটা মালিক। সবগুলো ইটভাটার পাশেই রয়েছে শত শত লোকের বসত–বাড়ি ও কৃষিজমি। ভাটা নির্মাণ বন্ধের দাবিতে স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এসব আইন অমান্য করে গত ১৫ বছরে রামগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে ২৭টি ইটভাটা, যার ১১টি ভোলাকোট ইউনিয়নে।

তবে ইটভাটা মালিকেরা বলছেন, তাঁরা সব নিয়ম মেনেই ইটভাটাগুলো করেছেন। ইটভাটা মালিক আমির হোসেন, মুরাদ হোসেন ও জাহাঙ্গীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ইটভাটাগুলো আগেই করা হয়েছে। তখন গ্রামে বসতি কম ছিল। সরকারি সব নিয়ম মেনেই ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তাঁরা।

ছোট একটি এলাকায় এতগুলো ইটভাটা থাকায় তার প্রভাব পড়েছে স্থানীয়দের স্বাস্থ্যের ওপর। আথাকরা গ্রামের ইসমাইল হোসেন জানান, এ ইউনিয়নের ১১টি ইটভাটার কারণে নভেম্বর-মে সময়ে স্থানীয় লোকজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ভাটার ধোঁয়ায় বাতাস দূষিত হয়ে যায়। এ দূষণের শিকার হয়ে শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে তাঁর গলায় চর্ম রোগ দেখা দেয়। অনেক চিকিৎসককে দেখিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। বর্ষা মৌসুমে ভাটা বন্ধ থাকলে এ চর্ম রোগ কিছু কমে।

এসব ইটভাটার কারণে অঞ্চলটির অবকাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেহলা গ্রামের গিয়াস উদ্দিন বলেন, মাটি ও ইটবাহী ট্রলি–ট্রাক ও পিকআপের চলাচলের কারণে গ্রামের রাস্তাগুলোর অবস্থা ভয়াবহ। নতুন করে সড়কগুলোর বেশির ভাগ সংস্কার করা হলেও ভাটার ইট ও মাটি আনা–নেওয়ার কারণে সরকারি সেসব সড়ক দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে স্থানীয় লোকজন ইটভাটা স্থাপন, জমির মাটি লুট ও সরকারি সম্পদ নষ্টের প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন ও এসব বন্ধের দাবিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার স্মারকলিপি দিলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

এ বিষয়ে রামগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রায়হানুল হায়দার বলেন, ‘ভাটাগুলোর কারণে জমির চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। মাটির উপরের অংশ (টপ সয়েল) নিয়ে যাওয়ার কারণে ফসল উৎপাদন আগের তুলনায় অর্ধেকে নেমেছে। জমির মালিক হলেও তিনি কিন্তু এসব মাটি বিক্রি করতে পারেন না। আমি স্থানীয় কৃষকদের মাটি বিক্রি করতে বরাবরই নিরুৎসাহিত করছি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সার্বিক বিষয়ে রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপ্তি চাকমা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইটভাটাগুলো আগেই গড়ে উঠেছে। নতুন করে আমরা ইটভাটা নির্মাণের প্রস্তাব স্থগিত রেখেছি। স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগের কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতে বেশ কয়েকটি ভাটা মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। সম্প্রতি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কৃষি জমির মাটি কাটা ও ব্রিজের মুখ ভরাট করে ভাটার কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় মোরশেদ ব্রিকস ও সানাউল্লাহ ব্রিকসকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পীরগঞ্জে আরও ৯ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ শনাক্ত

পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি  
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ছবি: সংগৃহীত
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ছবি: সংগৃহীত

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় আরও ৯ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ পাওয়া গেছে। আজ বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাসুদ রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিরা হলেন রামনাথপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামের আশুরা বেগম (৬৫), রবিউল ইসলাম (৫৫), শাহিন মিয়া (২৩), শরীফ মিয়া (২২), খাসা মিয়া (৫২), চেরাগপুরের রওহাবুল মিয়া (৩২), দ্বারিয়াপুরের শিল্পী (২৮), মামুন (১৬) ও খোরশেদ ইসলাম (২৫)।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চেরাগপুর গ্রামের শমসের আলীর ছেলে সাদেক আলী ৪ অক্টোবর অসুস্থ গরু জবাই করে ১৮টি পরিবারের মধ্যে মাংস বিতরণ করেন। পরে ১১ অক্টোবর দ্বারিয়াপুর গ্রামের টুটুল মিয়াও অসুস্থ গরু জবাই করে গ্রামবাসীর মধ্যে মাংস ভাগ করে দেন। ধারণা করা হচ্ছে, এসব গরুর মাংস খেয়ে বা কাটাকাটির সময় সংস্পর্শে এসে তাঁরা অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়েছেন।

আক্রান্ত শিল্পী, মামুন ও খোরশেদ জানান, গরু জবাইয়ের পরপরই কয়েকজনের শরীরে ঘা দেখা দেয়। তাঁরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন।

রংপুর জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার পর্যন্ত রংপুরের পীরগাছায় ৩৮, কাউনিয়ায় ১৮, মিঠাপুকুরে ১২, গঙ্গাচড়ায় ৭, পীরগঞ্জে একজনসহ জেলায় ৭৮ জন সন্দেহজনক অ্যানথ্রাক্স রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে পীরগঞ্জের নতুন ৯ জন আক্রান্তের তথ্য এখনো ওই হিসাবে যুক্ত হয়নি।

জেলা সিভিল সার্জন শাহীন সুলতানা জানান, জেলায় এখন পর্যন্ত অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্তের সংখ্যা ১১। তবে সন্দেহজনক রোগীর সংখ্যা আরও বেশি। তিনি বলেন, ‘অ্যানথ্রাক্স রোগীর শরীরে কাঁচা ঘা না থাকলে নমুনা সংগ্রহ করা যায় না, তাই অনেক ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না।’ এদিকে গত জুলাই ও সেপ্টেম্বরে পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গে দুজনের মৃত্যু হয়। পরে গাইবান্ধায়ও একাধিক আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সর্বশেষ ৪ অক্টোবর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের রোজিনা বেগম (৪৫) অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তাড়াশে কীটনাশকের দোকান থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার মালপত্র চুরি

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় সার ও কীটনাশকের দোকানে চুরি। ছবি: আজকের পত্রিকা
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় সার ও কীটনাশকের দোকানে চুরি। ছবি: আজকের পত্রিকা

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় রাতের আঁধারে সার ও কীটনাশকের দোকানে চুরি হয়েছে। এতে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার মালপত্র খোয়া গেছে মালিকের।

গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উপজেলার কাস্তা বাজারে মেসার্স জিসা এন্টারপ্রাইজে এই ঘটনা ঘটে।

দোকানের মালিক জাহাঙ্গীর আলম দাবি করে বলেন, ‘রাত সাড়ে ৯টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাই। সকালে এসে দেখি দোকানের পেছনের টিন কাটা। দোকান থেকে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার কীটনাশক ও অন্য মালপত্র চুরি হয়ে গেছে।’

এ বিষয়ে তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘চুরির বিষয়ে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘আমি বিএনপি করি, তবে শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি 
পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সোহাগ মৃধা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সোহাগ মৃধা। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘আমি বিএনপি করে শ ম রেজাউলের আমলে মামলায় জেল খেটেছি। এমনকি আমাকে মেরে ফেলারও চেষ্টা হয়েছে। তবে শেখ হাসিনার আদর্শ ধারণ করে এযাবৎ কাজ করেছি।’ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এমন মন্তব্য করে আবারও আলোচনায় পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের বিতর্কিত ইউপি সদস্য সোহাগ মৃধা।

জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে নিজের ঘরে আগুন দিয়ে ভাই ও চাচাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোসহ বিভিন্ন অভিযোগে তিনি আগে থেকেই সমালোচিত। অভিযোগ উঠেছে, ওই মামলায় রেহাই পেতে তাঁর ভাই ও চাচা ৫০ হাজার টাকা দিলেও হয়রানি থেকে মুক্তি পাননি। তাঁরা এখনো ভুগছেন সেই ঘর পোড়ানোর মামলায়। বিতর্কিত মন্তব্য করে এখন তিনি আবারও আলোচনায় উঠে এসেছেন।

সোহাগ মৃধার চাচা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘ওয়ারিশ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে সোহাগ তার ভাইকে হয়রানি করত। আমি প্রতিবাদ করায় আমাকে চুরির মামলায় ফাঁসায়। পরে নিজের ঘরে আগুন দিয়ে আমি ও তার ভাই তৈমুর রেজার নামে মামলা দেয়। তখন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আমাদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েও রেহাই দেয়নি।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আওয়ামী আমলে সোহাগ মৃধা এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে রেখেছিলেন। প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো, সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অপকর্মে তিনি জড়িত ছিলেন। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন তিনি বিএনপি পরিচয়ে সক্রিয় হয়েছেন।

জানতে চাইলে বলদিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. সোহাগ হোসেন বলেন, ‘সোহাগ মৃধা কেমন মানুষ, তা সবাই জানে। সে আমার বাবাকেও একসময় হয়রানি করেছে।’

উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. ফকরুল আলম বলেন, ‘শুনেছি সোহাগ মৃধা আওয়ামী লীগ করতেন। এখন কীভাবে বিএনপি করলেন জানি না। কেউ নিজেকে বিএনপি বললেই সে বিএনপি হয়ে যায় না। তিনি আমাদের দলের কেউ নন।’

এসব নিয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য সোহাগ মৃধা বলেন, ‘আমি কাউকে মিথ্যা মামলা দিইনি। আমি বিএনপি করি, তবে শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী। ইউপি সদস্যদের নির্দিষ্ট দল থাকে না—যে সরকার আসে, তার হয়ে কাজ করি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লাউয়াছড়া বন থেকে টহল দলের সদস্যের লাশ উদ্ধার

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে দায়িত্বরত মো. সিরাজ মিয়া (৭০) নামের এক বন টহল দলের (সিপিজি) সদস্যের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ বুধবার ভোরে লাউয়াছড়া বনের শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের জানকিছড়া এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

নিহত সিরাজ মিয়া শ্রীমঙ্গল উপজেলার ডলুছড়া এলাকার বাসিন্দা।

পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, সিরাজ মিয়া মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে লাউয়াছড়া বনের জানকিছড়া এলাকায় বন পাহারায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। আজ সকালে খবর পাওয়া যায়, লাউয়াছড়া বনের শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ প্রধান সড়কের পাশে সিপিজি ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় তাঁর মরদেহ পড়ে আছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান বন বিভাগের সদস্যরা।

জানতে চাইলে লাউয়াছড়া বনের বনবিট কর্মকর্তা মারজুক হোসেন বলেন, ‘নিহত সিরাজ মিয়ার ডিউটি শেষ হয়েছিল ভোর ৫টার দিকে। সকাল ৬টার দিকে খবর পাই, তাঁর মরদেহ সড়কের পাশে পড়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, ডিউটি শেষে বাড়ি ফেরার পথে কোনো গাড়ির ধাক্কায় তিনি মারা গেছেন। মরদেহের পাশে গ্লাস ভাঙা টুকরো পাওয়া গেছে।’

কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জাফর মো. মাহফুজুল কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি সড়ক দুর্ঘটনা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত