Ajker Patrika

এক উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ-অচল ৩৯ সেতু

তারিকুল ইসলাম কাজী রাকিব, পাথরঘাটা (বরগুনা) 
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১: ১৪
ভাঙা সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল। পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের হোগলাপাশা এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভাঙা সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল। পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের হোগলাপাশা এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ঝুঁকিপূর্ণ ৩৯টি সেতুর জন্য ভোগান্তির শিকার হচ্ছে কয়েক লাখ মানুষ। সেতুগুলোর বেশির ভাগই সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এগুলোর ওপর হালকা যানবাহন উঠলেও কেঁপে ওঠে। রয়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। তবু উপায় না পেয়ে অনেকে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে সেতুগুলো দিয়ে। কোথাও পার হতে হচ্ছে নৌকায়। এদিকে কিছু সেতু ভেঙে খালে পড়ে গেলেও সেখানে কোনো সতর্কবার্তা টানানো হয়নি।

পাথরঘাটা এলজিইডি কার্যালয়ের তথ্যমতে, উপজেলায় লোহার ও পাকা মিলে শতাধিক সেতু রয়েছে। এর মধ্যে সদর ইউনিয়নের পাঁচটি, চরদুয়ানীতে ছয়টি, কালমেঘায় সাতটি, কাকচিড়ায় চারটি, কাঁঠালতলীতে ৯টি, নাচনাপাড়ায় সাতটি এবং রাহহানপুর ইউনিয়নের একটি সেতু এখন সম্পূর্ণভাবে অনুপযোগী ও মেরামতের অযোগ্য। এগুলো ১৯৯৭ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে নির্মিত। প্রায় দুই দশক ধরে সংস্কার না হওয়ায় সেতুগুলো এখন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। সেতুগুলোর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২ হাজার ৩৫৮ দশমিক ৫ মিটার।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কাকচিড়া ইউনিয়নের রূপধন বাজারে একটি সেতু দীর্ঘদিন ধরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ না থাকায় স্থানীয়রা নিজেরাই বাঁশের সাঁকো তৈরি করে যাতায়াত করছেন। স্থানীয়রা বলছেন, রূপধন এলাকায় প্রচুর আলু উৎপাদন হয়। কিন্তু সেতুটি অনুপযোগী থাকায় কৃষকদের উৎপাদিত আলু ঠিকমতো বাজারজাত করা যাচ্ছে না। ফলে তাঁদের কম দামে বিক্রি করে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।

নাচনাপাড়া ইউনিয়নের নাচনাপাড়া বাজারের উত্তর পাশে মাঠবাড়িয়া ও পাথরঘাটা উপজেলার সংযোগকারী একটি কাঠের ব্রিজ অনেক আগেই ভেঙে গেছে। পরে এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে সাঁকো তৈরি করে। সম্প্রতি জোয়ারের চাপে সেটিও ভেঙে পড়েছে। বর্তমানে দুপাশের মানুষ বাধ্য হয়ে নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে।

সেতু ভেঙে যাওয়ায় সাঁকো দিয়ে পারাপার। কাকচিড়া ইউনিয়নের রূপধন এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
সেতু ভেঙে যাওয়ায় সাঁকো দিয়ে পারাপার। কাকচিড়া ইউনিয়নের রূপধন এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই দ্রুত এসব সেতুর সংস্কার ও নতুন করে নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

পাথরঘাটা উপজেলা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী সমীরন মন্ডল জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ৩৯টি সেতুর তালিকা তৈরি করে পুনর্নির্মাণের জন্য বাজেট প্রস্তাব আকারে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে সেতুগুলো সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

একাংশের সংবাদ সম্মেলন: রাজশাহী জেলা এনসিপির কমিটি পুনর্গঠনের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহী জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির একাংশের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহী জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির একাংশের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একাংশ সংবাদ সম্মেলন করেছে। আজ সোমবার বেলা আড়াইটায় রাজশাহী নগরের সিঅ্যান্ডবি মোড়ের জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের সামনে এ সংবাদ সম্মেলন করে রাজশাহী জেলা এনসিপির সদ্যঘোষিত কমিটি পুনর্গঠনের দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাজশাহী জেলা এনসিপির সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদুল ইসলাম সাজু। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করার জন্য রাজশাহী এনসিপিকে নিয়ে যে নোংরামি চলছে, সেটি আমরা বরদাশত করব না। আমাদের ক্লিয়ার মেসেজ, জাতীয় নাগরিক পার্টি আপনারা রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠিত বা পরিচিত করেননি। এনসিপি প্রতিষ্ঠায় আমাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী জেলার প্রতিটি ভাইয়ের শ্রম, ঘাম, পরিশ্রম ও ত্যাগ রয়েছে। এ দলকে সামনে রেখে নোংরামি বন্ধ করুন। তা না হলে কালো শক্তির বিপক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা করা হবে এবং তাদের রাজশাহী থেকে বিতাড়িত করা হবে।’

নাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, এই বাংলাদেশ এখনো পরিশ্রমীদের সঠিক মূল্যায়ন দিতে শেখেনি। যদি শিখত, তাহলে সব ঝামেলা উপেক্ষা করে সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাজশাহীতে সংগঠনটি সুন্দরভাবে সাজাতে পারত।

লিখিত বক্তব্যে জেলা এনসিপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাজু আরও বলেন, ‘একটা প্রশ্ন প্রিয় কেন্দ্রীয় ভাইদের কাছে, যোগ্যতা কি বয়সের মাপকাঠিতে হয়? যদি হতো, তাহলে তো নাহিদ ইসলাম ভাইয়ের নেতৃত্বে সারা বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা লাভ করত না। প্রিয় ভাইয়েরা ঢাকায় নেতৃত্ব দিয়েছেন আর আমরা রাজশাহীতে, পার্থক্য এটাই। আফসোস যারা নিজের জন্য রাজনীতি করে, তারাই আজ যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে। মাঠে-ময়দানে লড়াই-সংগ্রামে না থেকেও।’

সাজু বলেন, ‘রাজনীতিকে নষ্ট করবেন না প্রিয় অভিভাবকবৃন্দ। আমরা তরুণ প্রজন্ম রাজশাহীতে এনসিপি নিয়ে সম্ভাবনা ও সুন্দর স্বপ্ন দেখি। ব্যক্তিস্বার্থের জন্য দলটাকে ধ্বংস করবেন না। কেন্দ্রের কাছে অনুরোধ, রাজশাহী জেলা কমিটি যোগ্যতার ভিত্তিতে পুনর্মূল্যায়ন করবেন এবং যে প্রতিবন্ধকতাগুলো রয়েছে, সেগুলো সমাধান করবেন। অন্যথায় আমাদের ছুটি দেবেন। আমরা কোনো কালো শক্তি, লোভ-লালসা ও ক্ষমতার চেয়ারের জন্য নিজেদের আদর্শকে বিসর্জন দিতে চাই না।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী জেলা এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল আলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইফাত উদ্দিন আবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি আব্দুল বাসির, এনসিপির জেলার সদস্য নিজাম উদ্দিন রাজা, আজিজুল ইসলাম প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, এনসিপির রাজশাহী জেলা কমিটি ঘোষণার পর থেকে দলটির একটি অংশ আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের অভিযোগে জেলার আহ্বায়ক সাইফুলকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে আসছে। এর মধ্যে কর্মসূচি ও পাল্টা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজশাহী জেলা ও মহানগর। এসব ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পাঁচজনকে বিশৃঙ্খলার দায়ে শোকজও করেছে। শোকজের পরদিনই এই সংবাদ সম্মেলন করল জেলা এনসিপির একাংশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধর্ষণ মামলায় পলাতক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ২৩ বছর পর গ্রেপ্তার

বগুড়া প্রতিনিধি
গ্রেপ্তার যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হাফিজুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তার যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হাফিজুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

বগুড়ায় ২৩ বছর ধরে পলাতক থাকা ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হাফিজুর রহমান (৫৫) অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। তিনি গাবতলী উপজেলার পদ্মপাড়া গ্রামের মৃত আফজাল হোসেনের ছেলে। গত রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বগুড়া শহরতলির শাকপালা মোড় এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বগুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতোয়ার হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ছিলিমপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ, পরিদর্শক লাল মিয়ার নেতৃত্বে একটি দল অভিযান চালিয়ে হাফিজুরকে গ্রেপ্তার করে গাবতলী থানায় হস্তান্তর করেছে।

পরিদর্শক লাল মিয়া বলেন, রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ হওয়া অপহরণ করে ধর্ষণ মামলায় ২০০২ সালে হাফিজুরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। পলাতক থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি ছিল। কিন্তু আদালতে আত্মসমর্পণ না করে তিনি দীর্ঘদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ান। তিনি কয়েক বছর ধরে শাজাহানপুর উপজেলার ডোমনপুকুর গুচ্ছগ্রামে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছিলেন এবং শহরতলির শাকপালায় ভাঙারির ব্যবসা করতেন।

পুলিশ জানায়, ১৯৯৭ সালে রংপুরের এক তরুণীকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন হাফিজুর। এ ঘটনার পর তরুণীর বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অপহরণ করে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। কিছুদিন পর হাফিজুর ওই তরুণীকে তালাক দিয়ে নিজ এলাকায় ফিরে আরেকটি বিয়ে করে এলাকা ছেড়ে দেন।

গ্রেপ্তারের পর হাফিজুর পুলিশকে জানান, রায় ঘোষণার পর তিনি দীর্ঘদিন ঢাকা এবং চট্টগ্রামে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। কয়েক বছর আগে বগুড়ায় ফিরে গুচ্ছগ্রামে ঘর নিয়ে বসবাস শুরু করেন এবং ভাঙারির ব্যবসা করতেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুশিয়ারায় গোসল করতে নেমে নারী নিখোঁজ

জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি 
কুশিয়ারা নদী। ছবি: সংগৃহীত
কুশিয়ারা নদী। ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে কুশিয়ারা নদীতে গোসল করতে নেমে হাসিনা আক্তার বুলু (২২) নামের এক নারী নিখোঁজ হয়েছেন।

আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের রাণীনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিখোঁজ ওই নারী রাণীনগর গ্রামের তামিম মিয়ার স্ত্রী ও দুই সন্তানের জননী।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, আজ বেলা ১টার দিকে ওই গৃহবধূ বসতবাড়ির পাশে কুশিয়ারা নদীতে গোসল করতে নেমে ডুবে যান। এর পর থেকে পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও উদ্ধার করতে পারেননি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ করছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জগন্নাথপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুর উদ্দিন বলেন, স্থানীয়ভাবে ওই গৃহবধূকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। সুনামগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলকে জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উদীচী ট্র্যাজেডি দিবসে ৩ মিনিট স্তব্ধ নেত্রকোনা

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
নেত্রকোনায় উদীচী কার্যালয়ে বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
নেত্রকোনায় উদীচী কার্যালয়ে বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে নানা কর্মসূচি পালিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ ৮ ডিসেম্বর, নেত্রকোনা ট্র্যাজেডি দিবস। দুই দশক আগে ২০০৫ সালের এই দিনে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী নেত্রকোনা কার্যালয়ের সামনে আত্মঘাতী বোমা হামলা করে জঙ্গিসংগঠন জেএমবি। ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে আজ সোমবার ১০টা ৪০ মিনিট থেকে তিন মিনিট ‘স্তব্ধ নেত্রকোনা’ কর্মসূচি পালিত হয়।

নেত্রকোনা ট্র্যাজেডি দিবস উদ্‌যাপন কমিটি এই কর্মসূচি দেয়।

কর্মসূচি অনুযায়ী, ঘড়ির কাটায় ১০টা ৪০ বাজার সঙ্গে সঙ্গে নেত্রকোনাবাসী তিন মিনিট নীরবতা পালন করেন। এ সময় শহরের রাস্তায় যানবাহনগুলো দাঁড়িয়ে থাকে, হাঁটেননি কোনো পথচারীও। দোকানিরাও এ সময় নেমে আসেন রাস্তায়। তাঁরা শ্রদ্ধা জানান ২০ বছর আগে নেত্রকোনা উদীচীতে বোমা হামলায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি। পাশাপাশি ঘৃণা জানানো হয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে।

দিনটি উপলক্ষে আজ সকাল ৯টা ১০ মিনিটে জেলা শহরের উদীচী কার্যালয়ের সামনে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ, উদীচী ট্র্যাজেডি স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, স্মৃতিচারণ ও গণসংগীত হয়। সেখানে মানব না এই বন্ধনে, তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর, কারা মোর ঘর ভেঙেছে, এ লড়াই বাঁচার লড়াই, প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য ইত্যাদি গণসংগীত গান শিল্পীরা। এ সময় ট্র্যাজেডি দিবস উদ্‌যাপন কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও উদীচীর সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীরের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জেলা উদীচীর সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক, প্রবীণ সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পাল, বোমা হামলায় আহত সংস্কৃতিকর্মী তুষার কান্তি রায়, জেলা উদীচীর সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান খান, গবেষক আলী আহাম্মদ খান আইয়োব, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মেলন পরিষদ নেত্রকোনা শাখার সভাপতি পূরবী কুণ্ডু, কবি এনামূল হক পলাশ, নারী নেত্রী কোহিনূর বেগম, নারী প্রগতির কেন্দ্র ব্যবস্থাপক মৃণাল চক্রবর্তী, প্রথম আলোর প্রতিনিধি পল্লব চক্রবর্তী প্রমুখ। পরে তিন মিনিট ‘স্তব্ধ নেত্রকোনা’ কর্মসূচি পালন শেষে সন্ত্রাস, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী মানববন্ধন হয়। শেষে শহীদদের কবর জিয়ারত, শ্মশানের স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও শহীদদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয়।

আজ সমাবেশ চলাকালে নেত্রকোনা উদীচীর সহসভাপতি মাসুদুর রহমান খান বলেন, ‘দ্রুত বিচার ও বিস্ফোরক মামলার রায় কার্যকর হওয়ায় আমরা খুশি। তবে জঙ্গিবাদের মূল উৎপাটন করতে হলে আরও শিকড়ে যেতে হবে। স্থানীয় মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে। তা না হলে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস নির্মূল সম্ভব হবে না।’

২০০৫ সালের ৮ ডিসেম্বর উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী নেত্রকোনা সংসদ কার্যালয়ের সামনে জেএমবির বোমা হামলায় প্রাণ হারান জেলা উদীচীর সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক খাজা হায়দার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুদীপ্তা পাল শেলি, মোটরসাইকেল মেকানিকস যাদব দাস, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী রাণী আক্তার, মাছ বিক্রেতা আফতাব উদ্দিন, শ্রমিক রইছ মিয়া ও ভিক্ষুক জয়নাল। এ ছাড়া বোমা হামলাকারী আল বাকি মো. কাফিও নিহত হন। আহত হন অর্ধশতাধিক।

এদিকে ঘটনার ২০ বছর পার হলেও এখনো সেই স্মৃতি তাড়া করে বেড়ায় নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম খাজা হায়দার হোসেনকে হারিয়ে এখনো দিশেহারা তাঁর স্ত্রী শাহানাজ পারভিন। স্বামীর রেখে যাওয়া এক চিলতে জায়গার ওপর একটি টিনের চালাঘরে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে থাকেন তিনি। আর শহরের নিউটাউন এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকে সুদীপ্তা পাল শেলির পরিবার। একমাত্র উপার্জনক্ষম মেয়েকে হারানোর কষ্ট বুকে নিয়ে দিন পার করছেন মা অরুণা রাণী পাল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত