Ajker Patrika

বরগুনার আমতলী

হাতের টানেই উঠে যাচ্ছে সড়কের পিচ ঢালাই

  • তিন কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে ব্যয় ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
  • ঢালাইয়ে পর্যাপ্ত বিটুমিন ব্যবহার না করার অভিযোগ।
  • ঠিকাদার বলছেন, কাজে ভুলত্রুটি হতে পারে, এ জন্য তাঁর ফাঁসি হবে না।
মো. হোসাইন আলী কাজী, আমতলী (বরগুনা) 
সংস্কার করা সড়কে হাত দিয়ে টান দিতেই পিচ ঢালাই উঠে যাচ্ছে। সম্প্রতি বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নে। ছবি: আজকের পত্রিকা
সংস্কার করা সড়কে হাত দিয়ে টান দিতেই পিচ ঢালাই উঠে যাচ্ছে। সম্প্রতি বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরগুনার আমতলী উপজেলায় সম্প্রতি তিন কিলোমিটারের একটি সড়ক সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। এই কাজে সরকার ১ কোটি ৬৭ লাখ ১৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রকল্পটির ঠিকাদার কাজে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। পিচ ঢালাইয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটুমিন ব্যবহার করা হয়নি। হাত দিয়ে সামান্য একটু টান দিলেই পিচ ঢালাইয়ের আস্তরণ উঠে যাচ্ছে। তাঁদের শঙ্কা, নিম্নমানের কাজ করায় সড়কটি বেশি দিন টেকসই হবে না।

যদিও প্রকল্পটির ঠিকাদার বলছেন, তিনি সড়কের কাজ ঠিকমতোই করেছেন। তবে কাজ করলে ভুলত্রুটি হতে পারে। এতে তাঁর ফাঁসি হবে না।

জানা গেছে, আমতলীর চাওড়া ইউনিয়নের লোদা সেতু থেকে ৩ হাজার ১৬০ মিটার সড়ক সংস্কারের জন্য দরপত্র আহ্বান করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর। ওই কাজে ১ কোটি ৬৭ লাখ ১৪ হাজার ৬৮৯ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল কাজের দরপত্র হয়। মেসার্স রহমান ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটির দায়িত্ব পায়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক শাহীন তালুকদার। ওই বছরের ১ মে কাজ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদার এক মাস পরে কাজ শুরু করেন। গত বছরের ৩০ নভেম্বর ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, কাজ শুরু করেই ঠিকাদার শাহীন তালুকদার এলজিইডি বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান খান ও উপজেলা প্রকৌশলী ইদ্রিস আলীর যোগসাজশে দুই কিস্তির টাকা তুলে নেন। এরপর গত দেড় বছর ঠিকাদার কোনো কাজ করেননি। চলতি বছরের মার্চের প্রথম দিকে ওই সড়কের কাজ পুনরায় শুরু করেন ঠিকাদার। ২২ মার্চ পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, শুরুতেই ঠিকাদার নিম্নমানের খোয়া দিয়ে সড়কের কাজ করেছেন। দরপত্রে ৫ ইঞ্চি সাব বেজ করার কথা উল্লেখ থাকলেও ঠিকাদার শাহীন মাত্র ৩ ইঞ্চি বেজ করেছেন। এ ছাড়া খোয়ার ওপর বিটুমিন না ছিটিয়েই পুরো তিন কিলোমিটার সড়ক ঢালাই দিয়েছেন। দরপত্রে ১ ইঞ্চি ঢালাই দেওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার দিয়েছেন মাত্র আধা ইঞ্চি।

গত মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে ঢালাই উঠে গেছে। স্থানীয় কয়েকজন হাত দিয়ে টান দিয়ে পিচ ঢালাই উঠে যাওয়ার বিষয়টি দেখান।

কাউনিয়া গ্রামের বশির উদ্দিন বলেন, ‘পায়ের ঘষাতেই সড়কের পিচ উঠে যাচ্ছে। এমন রাস্তা নির্মাণ জীবনে দেখিনি।’

একই গ্রামের শাহজাহান হাওলাদার ও জাহাঙ্গীর মিয়ার অভিযোগ, ঠিকাদার সড়কে বিটুমিন না দিয়ে ঢালাই দিয়েছেন। এতে হাত দিয়ে টান দিলেই সড়কের ঢালাই উঠে যাচ্ছে। তাঁরা বিটুমিন ছাড়া কাজ করতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন তা শোনেননি। উল্টো হুমকি-ধমকি দিয়েছেন।

সংস্কার করা সড়কে হাত দিয়ে টান দিতেই পিচ ঢালাই উঠে যাচ্ছে। সম্প্রতি বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নে। ছবি: আজকের পত্রিকা
সংস্কার করা সড়কে হাত দিয়ে টান দিতেই পিচ ঢালাই উঠে যাচ্ছে। সম্প্রতি বরগুনার আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নে। ছবি: আজকের পত্রিকা

অটোরিকশাচালক বাহাদুর ও আল আমিন বলেন, সড়কের ঢালাইয়ের কাজ শেষ হওয়ার তিন দিনের মাথায় অটোরিকশার চাকায় পিচ উঠে যাচ্ছে।

অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদার শাহীন তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সড়কের কাজ ঠিকমতোই করেছি। তবে কাজ করলে ভুলত্রুটি হতে পারে। এতে আমার ফাঁসি হবে না। পিচ উঠে গেলে আবার বিটুমিন দিয়ে ঢালাই দেওয়া হবে।’

আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘সড়ক সংস্কারে বিটুমিন না ছিটিয়ে ঢালাই দেওয়া এবং ঢালাই উঠে যাওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। সড়কটি সরেজমিন দেখতে সহকারী প্রকৌশলী নিজাম উদ্দিনকে পাঠিয়েছিলাম। ঠিকাদারের সঙ্গে কাজে অনিয়মে আমার কোনো যোগসাজশ ছিল না।’

এলজিইডি বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসান বলেন, ঠিকাদারের সঙ্গে স্থানীয়দের দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাই তাঁরা এমন অপবাদ দিচ্ছেন। ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশ করে টাকা আত্মসাতে সহায়তার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, ‘সড়কের কাজের অনিয়মের অভিযোগ শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এলজিইডির বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শেখ মোহা. নুরুল ইসলাম বলেন, সড়ক সংস্কারে অনিয়ম এবং ঠিকাদারের সঙ্গে প্রকৌশলীদের কোনো ধরনের সখ্য এবং অনিয়ম পাওয়া গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির ওপর হামলাকারীরা সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছে কি না—তা শতভাগ নিশ্চিত নয় বিজিবি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা

বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ঢাকায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলি বর্ষণকারী ব্যক্তিরা ময়মনসিংহ সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পালিয়েছে কি না—তা এখনো শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

সোমবার ময়মনসিংহ নগরীর খাগডহর বিজিবি ক্যাম্পে তিনি আরও জানান, শুক্রবার ৯টার মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় সম্ভাব্য পাচারের রুটগুলো চিহ্নিত করে টহল এবং চেকপোস্ট বসানো হয় সীমান্তের অধিকাংশ স্থানে। পরদিন অর্থাৎ শনিবারে পুলিশ এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। ঢাকা থেকে আগত পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বিজিবি ময়মনসিংহ সেক্টর কমান্ডারের নিয়মিত যোগাযোগ এবং অপারেশন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আলোচনায় দুটি স্থানে একসঙ্গে অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে অবস্থানরত ফিলিপ স্নালকে আটকের পরিকল্পনা করা হয়। পুলিশের আরেকটি টিম হালুয়াঘাট এলাকায় অপারেশনের প্ল্যান করে। হালুয়াঘাটে অপারেশনের বিষয়ে বিজিবির সোর্স এবং অন্যান্য বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করেছে। অপর দিকে নালিতাবাড়ীর বারোমারি এলাকায় অপারেশন পরিচালিত হয় বিজিবির নেতৃত্বে এবং ঢাকা হতে আগত ও হালুয়াঘাট থানার পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে। কিন্তু ফিলিপকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী ডেলটা চিরান, শ্বশুর ইয়ারসন রংডি এবং মানব পাচারকারী লুইস লেংমিঞ্জাকে আটক করা হয়। তাদের বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়।’

তাঁদের পরিবারের তিনজনসহ এ পর্যন্ত বিজিবি চারজনকে আটক করেছে। এঁদের মধ্যে সোমবার সকালে মানব পাচারকারী বেঞ্জামিন চিরামকে আটক করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরগুনায় স্বামীকে গলা টিপে হত্যা, স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিক আটক

বরগুনা প্রতিনিধি
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত

বরগুনার বামনা উপজেলায় পরকীয়া প্রেমের জেরে এক প্রবাসফেরত স্বামীকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আব্দুল জলিল (৪৫)। তিনি উপজেলার রামনা ইউনিয়নের ঘোপখালী গ্রামের বাসিন্দা।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫) ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিক আলামিনকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে আব্দুল জলিলের নিজ বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর ধরে একই এলাকার আবু খতিবের ছেলে আলামিন নিহতের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে নাজমা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় ১৫ দিন আগে প্রবাস থেকে বাড়িতে ফিরে স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন আব্দুল জলিল।

অভিযোগ রয়েছে, রোববার বিকেলে স্ত্রী ও ওই গৃহকর্মী মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় আব্দুল জলিলকে গলা টিপে হত্যা করেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে বামনা থানায় নিয়ে যায়। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিককে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা দুজনই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলা দায়েরের পর আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মহান বিজয় দিবসে মেট্রোরেল সাময়িক বন্ধ থাকবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আগামী ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) মেট্রোরেল চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় প্যারাজাম্প অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে প্যারাট্রুপারদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডিএমটিসিএল ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর দুপুর ১১টা ৫০ মিনিট হতে ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত, অর্থাৎ মোট ৪০ মিনিটের জন্য মেট্রোরেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।

ডিএমটিসিএল সাময়িক অসুবিধার জন্য যাত্রীসাধারণের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। যাত্রীদের এই সময়সূচি মেনে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয়মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত

বাসায় আটকে রেখে ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গায়ক নোবেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর ডেমরা থানার উপপরিদর্শক এসআই মুরাদ হোসেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) ইলামনি আজ সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আগামী ২৮ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্রটি উপস্থাপন করা হবে। পরে এ সংক্রান্ত মামলা বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে।

নোবেলের আইনজীবী মোসতাক আহমেদ জানান, এই ধর্ষণ মামলার বাদীকে বিয়ে করেছেন নোবেল। তাঁরা সংসার করছেন।

গত ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন ইডেন কলেজের ওই ছাত্রী। নোবেলকে গ্রেপ্তার করার পর কারাগারে পাঠানো হলে বিয়ের শর্তে তিনি জামিন পান। ১৯ জুন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বসে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে নোবেল ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেন।

এই মামলায় অভিযোগ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় নোবেলের। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নোবেল তাঁর স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ছাত্রীকে ডেমরার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আটকে রাখেন, মোবাইল ফোন ও টাকা কেড়ে নেন। এরপর ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করেন। কথামতো না চললে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখান।

অভিযোগে বলা হয়, ওই তরুণীকে ছয় মাস ধরে ডেমরার ওই বাসায় আটকে রাখা হয়, মারধর করা হতো প্রায়ই। দু-তিন জনের সহায়তায় বাদীকে চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রাখেন নোবেল। ওই ঘটনার ভিডিও ছড়ালে বাদীর বাবা-মা তাঁকে চিনতে পারেন। এরপর পরিবার পুলিশের সহায়তায় তাঁকে ১৯ মে উদ্ধার করে এবং পুলিশ নোবেলকে গ্রেপ্তার করে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নোবেল বাদীকে আটক রেখে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে রাখেন। বাসায় না থাকলে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। নোবেল নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে তাঁকে মারপিট করেছেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, বাদীর অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি নোবেল জামিনে আছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আরও বলেছেন, বাদীকে মারধর ও ধর্ষণে আসামিকে আরও কয়েকজন সহযোগিতা করেছেন। তবে তাঁদের নাম-ঠিকানা উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব হলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

এখন কী হবে:

নোবেলের আইনজীবী বলেছেন, নোবেল মামলার বাদীকে বিয়ে করে সংসার করছেন। তাই এই অভিযোগপত্রে নোবেলের কোনো সমস্যা হবে না। বিচারিক ট্রাইব্যুনালে বাদী আপসনামা দেওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তি হবে। খালাস পাবেন নোবেল।

উল্লেখ্য, ভারতের সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান ‘সা রে গা মা’ দিয়ে পরিচিতি পান এই গায়ক। এর আগে মাদকে আসক্ত হয়ে সংগীত ছেড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও শ্রোতাদের সামনে হাজির হন। সেবার নোবেল জানিয়েছিলেন, তিনি আর কখনো দর্শকদের হতাশ করবেন না। সব অতীত পেছনে ফেলে নিয়মিত গান উপহার দেবেন।

কিন্তু ২০২৩ সালে অগ্রিম টাকা নিয়ে গান গাইতে না যাওয়ায় প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। জানা যায়, ওই বছর ১৬ মে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬-এর অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়ার প্রতারণায় অভিযোগে আটক হয়েছিলেন। সে সময় একদিন রিমান্ডেও ছিলেন এই গায়ক। পরে আপসের মাধ্যমে ওই মামলা থেকে অব্যাহতিও পান নোবেল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত