ইমদাদুল হক মিলন

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি কিন্তু ভয়াবহ নাক ডাকি। তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাতে পারবে তো!
১৯৯৬ সালের কথা। ইলেকশন অবজারভার করতে সুনীলদার সঙ্গে আমাকে পাঠানো হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে। আমাদের সঙ্গে এক তরুণ সরকারি কর্মকর্তা। ঢাকা থেকে গাড়ি নিয়ে রওনা দিয়েছি। মাওয়া হয়ে চলে যাব বরিশালে। মাওয়ার আগের গ্রামটি মেদিনীমণ্ডল। আমার জন্মের গ্রাম।
১২ বছর বয়স পর্যন্ত ওই গ্রামে নানির কাছে ছিলাম। ছেলেবেলা আচ্ছন্ন করে রাখা গ্রাম। সড়কের পাশেই আমার নানাবাড়ি। সেই বাড়ি বরাবর গাড়ি আসতেই সুনীলদাকে হাত তুলে দেখালাম, ওই যে সুনীলদা, ওটা আমার নানাবাড়ি। গ্রামের নামটাও বললাম।
আশ্চর্য স্মৃতিশক্তি সুনীলদার। গ্রামের নাম শুনে বললেন, মণীন্দ্র ঠাকুরের বাড়ি কোনটা?
মণীন্দ্র ঠাকুরের নাম শুনে আমি অবাক। আপনি কী করে এই নাম জানলেন?
সুনীলদা হাসলেন। তোমার একটা গল্প পড়েছিলাম। ‘জীবনযাত্রা’। সেই গল্পের মূল চরিত্র মণীন্দ্র ঠাকুর। ঠাকুরবাড়িটাও দেখালাম।
বরিশালে তেমন কোনো ভালো হোটেল তখন ছিল না। তারপরও সবচেয়ে ভালো যে হোটেল, সেখানে আমাদের তোলা হলো। পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
প্রথমে বরিশালের ডিসি অফিসে গেলাম। ডিসি ভদ্রলোকের ওখানে চা খেয়ে হোটেলে। আমাদের হোটেলে পৌঁছে দিয়ে তরুণ কর্মকর্তা চলে গেলেন তাঁর আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানেই থাকবেন। সকালবেলা আমাদের নিয়ে বেরোবেন।
কাল ইলেকশন।
রুমে ঢুকে সুনীলদা একটা হাঁফ ছাড়লেন। ব্যাগ থেকে দ্রব্য বের করে নিজেই দুটো গ্লাসে ঢাললেন। এসো, শুরু করা যাক।
দ্রব্য চলার ফাঁকেই নাক ডাকার কথাটা বললেন। আমি গায়েই মাখলাম না।
মাঝারি সাইজের একটাই ভালো রুম পাওয়া গেছে হোটেলে। দুটো সিঙ্গেল বেড পাতা। একটা উত্তর-দক্ষিণে, একটা পুবে-পশ্চিমে। সুনীলদা উত্তর-দক্ষিণের বেডে বসেছেন; অর্থাৎ এই বেডেই তিনি ঘুমাবেন। অন্যটা আমার।
পানাহার শেষ করে সাড়ে ১১টার দিকে শুয়ে পড়লাম। শোয়ার মিনিটখানেকের মধ্যে শুরু হলো সুনীলদার নাকডাকা। ক্রমে এমন অবস্থা, আমি হতভম্ব।
নেশাফেসা উধাও হয়ে গেল। একজন মানুষ শোয়ার মিনিটখানেকের মধ্যে এভাবে ঘুমিয়ে পড়তে পারে, এটা এক বিস্ময় আর হচ্ছে নাকডাকা। এ রকম শব্দে নাক ডাকেন বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি!
রাতটা যে আমার কেমন করে কাটল!
মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে পড়ি, আচমকা জেগে যাই। মনে হচ্ছে সুনীলদার নাকডাকার শব্দে আমি তো বটেই, এই হোটেলের অন্যান্য রুমের লোকজনও ঘুমাতে পারছে না।
মাঝরাতের দিকে সুনীলদার নাকডাকার শব্দটা যেন আরেকটু বাড়ল। শুনে মনে হলো, শুধু এই হোটেলের না, বোধ হয় পুরো বরিশাল শহরের ঘুম ভেঙে গেছে।
সকালবেলা কথাটা বললাম সুনীলদাকে। শুনে বললেন, টর্পেডো তো বলে, আমার নাকডাকার শব্দে নাকি পুরো জাতি জেগে যায়।
টর্পেডো মানে তারাপদ রায়। তারাপদ রায়ের টর্পেডো নামটা দিয়েছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়।
আমরা তারপর নির্বাচন ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, দেখতে বেরিয়েছিলাম। গাবখান নামের ছোট্ট এক নদীর এপারে আওয়ামী লীগের নেতা আমির হোসেন আমুর সঙ্গে দেখা। একটা চায়ের দোকানের সামনের বেঞ্চে আমু সাহেব মাঝখানে, সুনীলদা আর আমি দুপাশে। চা খেতে খেতে কথা হলো। দুয়েকটা কেন্দ্র ঘুরে দেখার পরেই সুনীলদা বললেন, অনেক হয়েছে। চলো, এবার ধানসিঁড়ি নদীটা দেখে আসি।
নদীর প্রতি আশ্চর্য এক টান ছিল সুনীলদার। তাঁর কবিতায় আছে, ‘নদীটির স্বাস্থ্য ছিল ভালো/হঠাৎ বনের পাশে সে আমাকে/ একটুখানি চমকে দেয়’।
বন-পাহাড় আর পৃথিবী চষে বেড়ানো মানুষ সুনীলদা। একবার এক পাহাড়ি নদী দেখে এতটাই উত্তেজিত হয়েছিলেন, সেই নদীতে নেমে সাঁতার কাটতে কাটতে তাঁর মনে হয়েছিল তিনি যেন রমণসুখ অনুভব করছেন।
ধানসিঁড়ি জীবনানন্দের নদী। বরিশালে এসে এই নদী না দেখে তিনি কি পারেন?
আশ্চর্য ব্যাপার। ধানসিঁড়ির সন্ধান কেউ আমাদের দিতে পারছিল না। এলাকার কেউ নদীটা চেনেই না।
শেষ পর্যন্ত এক যুবক ধানসিঁড়ির কাছে নিয়ে এল আমাদের। দুটো বসতবাড়ির মাঝখান দিয়ে নদীতীরে এলাম আমরা। সেখানে পুরোনো পাকা ঘাটলা। একটা ছইঅলা নৌকা বাঁধা আছে। খালি গায়ের মাঝি উদাস ভঙ্গিতে বসে বিড়ি টানছে। হাফপ্যান্ট পরা একটি কিশোর ছেলে আছে সঙ্গে। রোগা পটকা, রোদে পোড়া শরীর। ছেলেটিকে দেখে আমার মনে পড়ল সুনীলদার কবিতার লাইন,
‘নবীন কিশোর, তোমায় দিলাম
ভুবনডাঙার মাঠ!’
সেই নৌকা ভাড়া করে আমরা ধানসিঁড়ি দেখতে বেরোলাম। খালের মতো চিরল নদী। এপারে মানুষের বসতি, ওপারে বাবলাগাছের বন। মাঝিটি গ্রাম্য কুসংস্কারে বিশ্বাসী। আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে নদী দেখছি, বাবলাগাছগুলো দেখিয়ে সে বলল, খুব গরম গাছ।
গাছ কী করে গরম হয় বুঝতে পারলাম না। দুজনেই তাকালাম তার মুখের দিকে।
বিড়ি খাওয়া কালো ঠোঁট মেলে হাসল মাঝি। রাইত-বিরাইতে এই দিকটায় চলাফিরা ঠিক না আরকি!
বুঝলাম তেনাদের কথা বলতে চাইছে। কিন্তু ওসবে আমাদের মন নেই। আমরা মুগ্ধ চোখে দেখছি জীবনানন্দের ধানসিঁড়ি। সুনীলদার মধ্যে কী রকম যেন একটা ঘোর তৈরি হয়েছে। আমি আগেও লক্ষ করেছি অনেকের মধ্যে থেকেও, তুমুল হইহল্লা আর আড্ডার মধ্যে থেকেও সুনীলদা কোন ফাঁকে যেন আলাদা হয়ে যান। কোন ফাঁকে যেন চলে যান নিজের তৈরি করা ভুবনে। চারপাশে সবাই আছে, তিনি থেকেও নেই। কোথায় যেন হারিয়ে গেছেন।
নৌকায় বসেই ঠিক করলাম ঢাকায় ফিরে এই ভ্রমণ নিয়ে একটা লেখা লিখব। সুনীলদার কবিতার লাইন হবে লেখার শিরোনাম। ‘বিষণ্ন আলোয় এই বাংলাদেশ’। সেই লেখা আর লেখা হলো না। সুনীলদা ঠিকই কলকাতায় ফিরে ‘দেশ’ পত্রিকায় লিখলেন ‘ধানসিঁড়ি নদীর সন্ধানে’। সেই লেখার সঙ্গে আরও কিছু লেখা একত্র করে ‘আনন্দ’ থেকে বই বেরোল। ‘ধানসিঁড়ি নদীর সন্ধানে ও অন্যান্য’।
দুপুরের দিকে রওনা দিয়েছিলাম ভান্ডারিয়ার দিকে। সঙ্গে গাড়ি আর সেই তরুণ কর্মকর্তা। ভান্ডারিয়া আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নির্বাচনী এলাকা। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ছেলে। ইত্তেফাকের সম্পাদক। সুনীলদা বেশ উৎসাহ দেখালেন তাঁর এলাকায় যেতে।
ভান্ডারিয়া এলাকার একটা ভোটকেন্দ্রে ঘোরার সময় সুনীলদা আমাদের সঙ্গের তরুণ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এখান থেকে চাখার কত দূর? শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেবের বাড়িটা একটু দেখতে চাই। এলাকাটা দেখতে চাই।
ওই তরুণ কর্মকর্তাও আমাদের মতোই উৎসাহী। বললেন, চলুন।
আমরা চাখারের দিকে রওনা দিলাম।
চাখার ভান্ডারিয়ার মতো উন্নত এলাকা নয়। সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখলাম। শেরেবাংলার বাড়িতে ঢুকলাম। পুরোনো আমলের বনেদি দালানবাড়ি। লালচে রঙের।
সামনের দিককার লম্বা মতন একটা রুমে শেরেবাংলার ব্যবহারের জিনিসপত্র ইত্যাদি নিয়ে একটা মিউজিয়াম। মিউজিয়াম ঘুরে ঘুরে দেখছি। পুরোনো টেবিলের ওপর বিশাল আকৃতির, মোটা কাচের সবুজাভ একটা গ্লাস। এ রকম গ্লাস আমি আমার নানাবাড়িতে দেখেছি। কিন্তু এত বড় দেখিনি। গ্লাসের গায়ে একটা কাগজ সাঁটা। গোটা গোটা হাতে লেখা, ‘এই গ্লাসে শেরেবাংলা ইসবগুলের শরবত খেতেন’।
শেরেবাংলা বিশালদেহী মানুষ ছিলেন। তাঁর খাওয়া-দাওয়ার নানা রকমের কাহিনি আমরা শুনেছি। চল্লিশটা ফজলি আম নাকি এক বসায় খেতে পারতেন।
অবিভক্ত বাংলার এই অবিসংবাদিত নেতার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আবার বরিশালে। ততক্ষণে বরিশালে রটে গেছে এই শহরে এসেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
পরদিন সকালবেলা দলে দলে লোকজন আসতে লাগল। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর। অনেকের হাতেই সুনীলদার বই। তারা অটোগ্রাফ নেবে। শিশু-কিশোরদের হাতে ‘কাকাবাবু’ সিরিজের বই। ভালো রকম একটা ভিড় লেগে গেল হোটেলে। আমাদের রুমে জায়গায়ই হয় না। অনেকে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
সাংবাদিক নেতারা এলেন। প্রেসক্লাবে একবার যেতেই হবে। সেদিনই ফেরার কথা আমাদের। কিন্তু অবস্থা এমন দাঁড়াল, ফেরার পথ বন্ধ। অন্তত একটা দিন বরিশালবাসীকে দিতেই হবে।
সেই দিনটা আমরা রয়ে গেলাম।
এক ফাঁকে বরিশাল শহরে জীবনানন্দ দাশের বাড়িটি দেখা হলো। বিকেলে প্রেসক্লাবে জমল ভালোরকমের আড্ডা। ঘন দুধের চা আর শিঙাড়া। সাংবাদিকদের সঙ্গে আছেন শহরের শ্রদ্ধেয়জনেরা। সুনীলদার পাঠক সবাই। গল্পে আড্ডায় অনেকটা রাত হলো। চমৎকার কাটল সময়টা।
পরদিন সকালে ঢাকার পথে রওনা।
গাড়িতে সুনীলদার গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ভ্রমণকাহিনি আর ছোটদের লেখা নিয়ে অনেক রকমের কথা হলো। আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করছিলাম, তিনি তাঁর মতো করে বলে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটা কবিতার কথা মনে এল আমার।
‘মহারাজ, আমি তোমার সেই পুরোনো বালকভৃত্য/ মহারাজ, মনে পড়ে না?’
আমি কবিতার অতি নগণ্য একজন পাঠক। কিন্তু কোনো কোনো কবিতার ভেতরকার রহস্য বুঝে উঠতে পারি না। তাৎপর্য বুঝে উঠতে পারি না। সুনীলদার এ কবিতাটি তেমন এক কবিতা।
কথাটা বললাম সুনীলদাকে। তিনি হাসিমুখে আমার দিকে তাকালেন। কবিতাটির আসলে কোনো অর্থ নেই। কোনো কোনো অর্থহীন কবিতাও লেখা হয়।
বাক্যের পর বাক্য সাজিয়ে, সুন্দর সুন্দর শব্দ বসিয়ে অর্থহীন কবিতাও কবিরা লেখেন।
শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম।
ঢাকায় সুনীলদার থাকার ব্যবস্থা ছিল শেরাটন হোটেলে। সন্ধ্যাবেলা শেরাটনের গেট দিয়ে যখন গাড়ি ঢুকছে, সুনীলদা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, একটা অধ্যায় শেষ হলো।
প্রিয় সুনীলদা, আপনার জীবনের কোনো অধ্যায় কি আসলে শেষ হয়েছে! বাংলা সাহিত্যের সব অধ্যায়েই তো রয়ে গেছেন আপনি। ‘কাকাবাবু’ সিরিজের এক লেখায় আপনি লিখেছিলেন, ‘আকাশ কখনও পুরনো হয় না। আকাশ প্রতিদিন নতুন।’ বাংলা সাহিত্যের এক আকাশ আপনি। আপনার কোনো শেষ নেই।
আপনি প্রতিদিন নতুন।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি কিন্তু ভয়াবহ নাক ডাকি। তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাতে পারবে তো!
১৯৯৬ সালের কথা। ইলেকশন অবজারভার করতে সুনীলদার সঙ্গে আমাকে পাঠানো হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে। আমাদের সঙ্গে এক তরুণ সরকারি কর্মকর্তা। ঢাকা থেকে গাড়ি নিয়ে রওনা দিয়েছি। মাওয়া হয়ে চলে যাব বরিশালে। মাওয়ার আগের গ্রামটি মেদিনীমণ্ডল। আমার জন্মের গ্রাম।
১২ বছর বয়স পর্যন্ত ওই গ্রামে নানির কাছে ছিলাম। ছেলেবেলা আচ্ছন্ন করে রাখা গ্রাম। সড়কের পাশেই আমার নানাবাড়ি। সেই বাড়ি বরাবর গাড়ি আসতেই সুনীলদাকে হাত তুলে দেখালাম, ওই যে সুনীলদা, ওটা আমার নানাবাড়ি। গ্রামের নামটাও বললাম।
আশ্চর্য স্মৃতিশক্তি সুনীলদার। গ্রামের নাম শুনে বললেন, মণীন্দ্র ঠাকুরের বাড়ি কোনটা?
মণীন্দ্র ঠাকুরের নাম শুনে আমি অবাক। আপনি কী করে এই নাম জানলেন?
সুনীলদা হাসলেন। তোমার একটা গল্প পড়েছিলাম। ‘জীবনযাত্রা’। সেই গল্পের মূল চরিত্র মণীন্দ্র ঠাকুর। ঠাকুরবাড়িটাও দেখালাম।
বরিশালে তেমন কোনো ভালো হোটেল তখন ছিল না। তারপরও সবচেয়ে ভালো যে হোটেল, সেখানে আমাদের তোলা হলো। পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
প্রথমে বরিশালের ডিসি অফিসে গেলাম। ডিসি ভদ্রলোকের ওখানে চা খেয়ে হোটেলে। আমাদের হোটেলে পৌঁছে দিয়ে তরুণ কর্মকর্তা চলে গেলেন তাঁর আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানেই থাকবেন। সকালবেলা আমাদের নিয়ে বেরোবেন।
কাল ইলেকশন।
রুমে ঢুকে সুনীলদা একটা হাঁফ ছাড়লেন। ব্যাগ থেকে দ্রব্য বের করে নিজেই দুটো গ্লাসে ঢাললেন। এসো, শুরু করা যাক।
দ্রব্য চলার ফাঁকেই নাক ডাকার কথাটা বললেন। আমি গায়েই মাখলাম না।
মাঝারি সাইজের একটাই ভালো রুম পাওয়া গেছে হোটেলে। দুটো সিঙ্গেল বেড পাতা। একটা উত্তর-দক্ষিণে, একটা পুবে-পশ্চিমে। সুনীলদা উত্তর-দক্ষিণের বেডে বসেছেন; অর্থাৎ এই বেডেই তিনি ঘুমাবেন। অন্যটা আমার।
পানাহার শেষ করে সাড়ে ১১টার দিকে শুয়ে পড়লাম। শোয়ার মিনিটখানেকের মধ্যে শুরু হলো সুনীলদার নাকডাকা। ক্রমে এমন অবস্থা, আমি হতভম্ব।
নেশাফেসা উধাও হয়ে গেল। একজন মানুষ শোয়ার মিনিটখানেকের মধ্যে এভাবে ঘুমিয়ে পড়তে পারে, এটা এক বিস্ময় আর হচ্ছে নাকডাকা। এ রকম শব্দে নাক ডাকেন বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি!
রাতটা যে আমার কেমন করে কাটল!
মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে পড়ি, আচমকা জেগে যাই। মনে হচ্ছে সুনীলদার নাকডাকার শব্দে আমি তো বটেই, এই হোটেলের অন্যান্য রুমের লোকজনও ঘুমাতে পারছে না।
মাঝরাতের দিকে সুনীলদার নাকডাকার শব্দটা যেন আরেকটু বাড়ল। শুনে মনে হলো, শুধু এই হোটেলের না, বোধ হয় পুরো বরিশাল শহরের ঘুম ভেঙে গেছে।
সকালবেলা কথাটা বললাম সুনীলদাকে। শুনে বললেন, টর্পেডো তো বলে, আমার নাকডাকার শব্দে নাকি পুরো জাতি জেগে যায়।
টর্পেডো মানে তারাপদ রায়। তারাপদ রায়ের টর্পেডো নামটা দিয়েছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়।
আমরা তারপর নির্বাচন ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, দেখতে বেরিয়েছিলাম। গাবখান নামের ছোট্ট এক নদীর এপারে আওয়ামী লীগের নেতা আমির হোসেন আমুর সঙ্গে দেখা। একটা চায়ের দোকানের সামনের বেঞ্চে আমু সাহেব মাঝখানে, সুনীলদা আর আমি দুপাশে। চা খেতে খেতে কথা হলো। দুয়েকটা কেন্দ্র ঘুরে দেখার পরেই সুনীলদা বললেন, অনেক হয়েছে। চলো, এবার ধানসিঁড়ি নদীটা দেখে আসি।
নদীর প্রতি আশ্চর্য এক টান ছিল সুনীলদার। তাঁর কবিতায় আছে, ‘নদীটির স্বাস্থ্য ছিল ভালো/হঠাৎ বনের পাশে সে আমাকে/ একটুখানি চমকে দেয়’।
বন-পাহাড় আর পৃথিবী চষে বেড়ানো মানুষ সুনীলদা। একবার এক পাহাড়ি নদী দেখে এতটাই উত্তেজিত হয়েছিলেন, সেই নদীতে নেমে সাঁতার কাটতে কাটতে তাঁর মনে হয়েছিল তিনি যেন রমণসুখ অনুভব করছেন।
ধানসিঁড়ি জীবনানন্দের নদী। বরিশালে এসে এই নদী না দেখে তিনি কি পারেন?
আশ্চর্য ব্যাপার। ধানসিঁড়ির সন্ধান কেউ আমাদের দিতে পারছিল না। এলাকার কেউ নদীটা চেনেই না।
শেষ পর্যন্ত এক যুবক ধানসিঁড়ির কাছে নিয়ে এল আমাদের। দুটো বসতবাড়ির মাঝখান দিয়ে নদীতীরে এলাম আমরা। সেখানে পুরোনো পাকা ঘাটলা। একটা ছইঅলা নৌকা বাঁধা আছে। খালি গায়ের মাঝি উদাস ভঙ্গিতে বসে বিড়ি টানছে। হাফপ্যান্ট পরা একটি কিশোর ছেলে আছে সঙ্গে। রোগা পটকা, রোদে পোড়া শরীর। ছেলেটিকে দেখে আমার মনে পড়ল সুনীলদার কবিতার লাইন,
‘নবীন কিশোর, তোমায় দিলাম
ভুবনডাঙার মাঠ!’
সেই নৌকা ভাড়া করে আমরা ধানসিঁড়ি দেখতে বেরোলাম। খালের মতো চিরল নদী। এপারে মানুষের বসতি, ওপারে বাবলাগাছের বন। মাঝিটি গ্রাম্য কুসংস্কারে বিশ্বাসী। আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে নদী দেখছি, বাবলাগাছগুলো দেখিয়ে সে বলল, খুব গরম গাছ।
গাছ কী করে গরম হয় বুঝতে পারলাম না। দুজনেই তাকালাম তার মুখের দিকে।
বিড়ি খাওয়া কালো ঠোঁট মেলে হাসল মাঝি। রাইত-বিরাইতে এই দিকটায় চলাফিরা ঠিক না আরকি!
বুঝলাম তেনাদের কথা বলতে চাইছে। কিন্তু ওসবে আমাদের মন নেই। আমরা মুগ্ধ চোখে দেখছি জীবনানন্দের ধানসিঁড়ি। সুনীলদার মধ্যে কী রকম যেন একটা ঘোর তৈরি হয়েছে। আমি আগেও লক্ষ করেছি অনেকের মধ্যে থেকেও, তুমুল হইহল্লা আর আড্ডার মধ্যে থেকেও সুনীলদা কোন ফাঁকে যেন আলাদা হয়ে যান। কোন ফাঁকে যেন চলে যান নিজের তৈরি করা ভুবনে। চারপাশে সবাই আছে, তিনি থেকেও নেই। কোথায় যেন হারিয়ে গেছেন।
নৌকায় বসেই ঠিক করলাম ঢাকায় ফিরে এই ভ্রমণ নিয়ে একটা লেখা লিখব। সুনীলদার কবিতার লাইন হবে লেখার শিরোনাম। ‘বিষণ্ন আলোয় এই বাংলাদেশ’। সেই লেখা আর লেখা হলো না। সুনীলদা ঠিকই কলকাতায় ফিরে ‘দেশ’ পত্রিকায় লিখলেন ‘ধানসিঁড়ি নদীর সন্ধানে’। সেই লেখার সঙ্গে আরও কিছু লেখা একত্র করে ‘আনন্দ’ থেকে বই বেরোল। ‘ধানসিঁড়ি নদীর সন্ধানে ও অন্যান্য’।
দুপুরের দিকে রওনা দিয়েছিলাম ভান্ডারিয়ার দিকে। সঙ্গে গাড়ি আর সেই তরুণ কর্মকর্তা। ভান্ডারিয়া আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নির্বাচনী এলাকা। তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ছেলে। ইত্তেফাকের সম্পাদক। সুনীলদা বেশ উৎসাহ দেখালেন তাঁর এলাকায় যেতে।
ভান্ডারিয়া এলাকার একটা ভোটকেন্দ্রে ঘোরার সময় সুনীলদা আমাদের সঙ্গের তরুণ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এখান থেকে চাখার কত দূর? শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেবের বাড়িটা একটু দেখতে চাই। এলাকাটা দেখতে চাই।
ওই তরুণ কর্মকর্তাও আমাদের মতোই উৎসাহী। বললেন, চলুন।
আমরা চাখারের দিকে রওনা দিলাম।
চাখার ভান্ডারিয়ার মতো উন্নত এলাকা নয়। সবকিছু ঘুরে ঘুরে দেখলাম। শেরেবাংলার বাড়িতে ঢুকলাম। পুরোনো আমলের বনেদি দালানবাড়ি। লালচে রঙের।
সামনের দিককার লম্বা মতন একটা রুমে শেরেবাংলার ব্যবহারের জিনিসপত্র ইত্যাদি নিয়ে একটা মিউজিয়াম। মিউজিয়াম ঘুরে ঘুরে দেখছি। পুরোনো টেবিলের ওপর বিশাল আকৃতির, মোটা কাচের সবুজাভ একটা গ্লাস। এ রকম গ্লাস আমি আমার নানাবাড়িতে দেখেছি। কিন্তু এত বড় দেখিনি। গ্লাসের গায়ে একটা কাগজ সাঁটা। গোটা গোটা হাতে লেখা, ‘এই গ্লাসে শেরেবাংলা ইসবগুলের শরবত খেতেন’।
শেরেবাংলা বিশালদেহী মানুষ ছিলেন। তাঁর খাওয়া-দাওয়ার নানা রকমের কাহিনি আমরা শুনেছি। চল্লিশটা ফজলি আম নাকি এক বসায় খেতে পারতেন।
অবিভক্ত বাংলার এই অবিসংবাদিত নেতার বাড়ি থেকে বেরিয়ে আবার বরিশালে। ততক্ষণে বরিশালে রটে গেছে এই শহরে এসেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
পরদিন সকালবেলা দলে দলে লোকজন আসতে লাগল। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর। অনেকের হাতেই সুনীলদার বই। তারা অটোগ্রাফ নেবে। শিশু-কিশোরদের হাতে ‘কাকাবাবু’ সিরিজের বই। ভালো রকম একটা ভিড় লেগে গেল হোটেলে। আমাদের রুমে জায়গায়ই হয় না। অনেকে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
সাংবাদিক নেতারা এলেন। প্রেসক্লাবে একবার যেতেই হবে। সেদিনই ফেরার কথা আমাদের। কিন্তু অবস্থা এমন দাঁড়াল, ফেরার পথ বন্ধ। অন্তত একটা দিন বরিশালবাসীকে দিতেই হবে।
সেই দিনটা আমরা রয়ে গেলাম।
এক ফাঁকে বরিশাল শহরে জীবনানন্দ দাশের বাড়িটি দেখা হলো। বিকেলে প্রেসক্লাবে জমল ভালোরকমের আড্ডা। ঘন দুধের চা আর শিঙাড়া। সাংবাদিকদের সঙ্গে আছেন শহরের শ্রদ্ধেয়জনেরা। সুনীলদার পাঠক সবাই। গল্পে আড্ডায় অনেকটা রাত হলো। চমৎকার কাটল সময়টা।
পরদিন সকালে ঢাকার পথে রওনা।
গাড়িতে সুনীলদার গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ভ্রমণকাহিনি আর ছোটদের লেখা নিয়ে অনেক রকমের কথা হলো। আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করছিলাম, তিনি তাঁর মতো করে বলে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ একটা কবিতার কথা মনে এল আমার।
‘মহারাজ, আমি তোমার সেই পুরোনো বালকভৃত্য/ মহারাজ, মনে পড়ে না?’
আমি কবিতার অতি নগণ্য একজন পাঠক। কিন্তু কোনো কোনো কবিতার ভেতরকার রহস্য বুঝে উঠতে পারি না। তাৎপর্য বুঝে উঠতে পারি না। সুনীলদার এ কবিতাটি তেমন এক কবিতা।
কথাটা বললাম সুনীলদাকে। তিনি হাসিমুখে আমার দিকে তাকালেন। কবিতাটির আসলে কোনো অর্থ নেই। কোনো কোনো অর্থহীন কবিতাও লেখা হয়।
বাক্যের পর বাক্য সাজিয়ে, সুন্দর সুন্দর শব্দ বসিয়ে অর্থহীন কবিতাও কবিরা লেখেন।
শুনে বিস্মিত হয়েছিলাম।
ঢাকায় সুনীলদার থাকার ব্যবস্থা ছিল শেরাটন হোটেলে। সন্ধ্যাবেলা শেরাটনের গেট দিয়ে যখন গাড়ি ঢুকছে, সুনীলদা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, একটা অধ্যায় শেষ হলো।
প্রিয় সুনীলদা, আপনার জীবনের কোনো অধ্যায় কি আসলে শেষ হয়েছে! বাংলা সাহিত্যের সব অধ্যায়েই তো রয়ে গেছেন আপনি। ‘কাকাবাবু’ সিরিজের এক লেখায় আপনি লিখেছিলেন, ‘আকাশ কখনও পুরনো হয় না। আকাশ প্রতিদিন নতুন।’ বাংলা সাহিত্যের এক আকাশ আপনি। আপনার কোনো শেষ নেই।
আপনি প্রতিদিন নতুন।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি কিন্তু ভয়াবহ নাক ডাকি। তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাতে পারবে তো! ১৯৯৬ সালের কথা। ইলেকশন অবজারভার করতে সুনীলদার সঙ্গে আমাকে পাঠানো হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি কিন্তু ভয়াবহ নাক ডাকি। তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাতে পারবে তো! ১৯৯৬ সালের কথা। ইলেকশন অবজারভার করতে সুনীলদার সঙ্গে আমাকে পাঠানো হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি কিন্তু ভয়াবহ নাক ডাকি। তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাতে পারবে তো! ১৯৯৬ সালের কথা। ইলেকশন অবজারভার করতে সুনীলদার সঙ্গে আমাকে পাঠানো হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি কিন্তু ভয়াবহ নাক ডাকি। তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাতে পারবে তো! ১৯৯৬ সালের কথা। ইলেকশন অবজারভার করতে সুনীলদার সঙ্গে আমাকে পাঠানো হয়েছে বরিশাল অঞ্চলে।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে