আনিসুল হক

আমাদের এক বন্ধু ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখেছিল নোবেল সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার আগে আগে, ‘এবার সাহিত্যে নোবেল পাওয়া উচিত উৎপল শুভ্রর!’
এ কথাটা রসিকতার ছলে বলেছে, একটু খোঁচা মেরে বলেছে, নাকি আসলেই এটাই ছিল বন্ধুর মনের চাওয়া, তা আর অনুসন্ধান করার প্রবৃত্তি হয়নি। কিন্তু ক্রিকেট-সাহিত্য বলতে জগতে খুবই শ্রদ্ধেয় একটা জনরা আছে; আর তার লেখকেরা সব ভুবনবিখ্যাত; নোবেল পুরস্কার তাঁদের কেউ যদি পেয়ে যান, তাহলে নোবেল পুরস্কারই হয়তো গৌরবান্বিত হবে। বব ডিলান যদি নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন; তাহলে কবির সুমন কেন নন? আর গানের লেখক-সুরকার পারফরমার যদি নোবেল পেতে পারেন, ক্রিকেট-সাহিত্যিকেরাই বা কেন বাদ থাকবেন। আর তাই যদি হয়, তাহলে বাংলাদেশ থেকে আমার মনোনয়ন তো উৎপল শুভ্রই।
আমি ক্রিকেটের ক-ও বুঝি না। আমার সবকিছুই ক্ষণিকের আনন্দের জন্য। ‘স্ফুলিঙ্গ তার পাখায় পেল ক্ষণকালের ছন্দ। উড়ে গিয়ে ফুরিয়ে গেল সেই তারি আনন্দ॥’ আমি সবকিছু করি আনন্দের জন্য। আইনস্টাইন বলেছেন, জ্ঞানের চেয়ে কল্পনা মূল্যবান, আর আমার কাছে সবকিছুর চেয়ে আনন্দ মূল্যবান। তবে এই আনন্দও রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে পাওয়া আনন্দের ধারণা; এটা আর যা-ই হোক, ইন্দ্রিয় সুখ নয়; ভোগের নয়, উপভোগের। ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে, দিনরজনী কত অমৃত রস উথলি যায় অনন্ত গগনে।’ আমার আনন্দ, এই আনন্দ।
আমি ছোটবেলাটা কাটিয়েছি মাঠে-ঘাটে, অবাধ প্রান্তরে ছুটে বেড়িয়েছি, বর্ষাবিস্ফারিত নদীতে ঝাঁপ দিয়েছি, জাপটে ধরে ঢেউয়ের ঝুঁটি নৌকা বেয়েছি, গাছের একটা উঁচু নিঃসঙ্গ মগডালে সরীসৃপের মতো বুকে ঠেলে ঠেলে একা একা উঠে নামতে না পেরে ভয়ে কাঁদতে শুরু করেছি; জম্বুরা, কচুরিপানার দলা, ন্যাকড়ার পোঁটলা, দেশলাইয়ের বাক্স—নানান কিছুকে ফুটবল বানিয়ে খেলেছি; বৃষ্টিতে জগৎ ভেসে যাওয়া প্রহরগুলো কাটিয়েছি ফুটবল পায়ে মাঠে কিংবা পাড় উপচানো খালে এবং আমি ক্রিকেটও খেলেছি।
আমাদের শৈশব ছিল দারিদ্র্যের শৈশব। আমরা নিজেরা তক্তা কেটে ক্রিকেট ব্যাট বানাতাম। টেনিস বলে টেপ পেঁচিয়ে হতো ক্রিকেট বল। বাঁশের কঞ্চি হতো আমাদের উইকেট। পায়ে জুতা স্যান্ডেল কিছুই থাকত না। প্যাড হেলমেটের তো প্রশ্নই থাকত না। আমরা টসে জিতলে ব্যাট নিতাম। নিজেদের ব্যাটিং শেষ হলে পরের টিমকে আর ব্যাটিংয়ের সুযোগ দিতাম না, কোনো ছলে ঝগড়া লাগিয়ে খেলার অবসান ঘটাতাম। আমাদেরও বল পুকুরে পড়লে আউট, দেয়ালে লাগলে চার, গাছে লাগলে দুই হতো।
এলবিডব্লু হতো না। ওয়াইড বলকে আমরা বলতাম হোয়াইট বল। পেনাল্টিকে আমরা বলতাম পেলান্টিক। গোলকিপারকে গোলকি।
এত দারিদ্র্য নিয়ে ক্রিকেট খেলা যায় না। ক্রিকেট রাজার খেলা, ক্রিকেট খেলার রাজা। আমাদের খেলা ছিল প্রজার খেলা—ফুটবল। স্কুলের বারান্দায় এক টুকরা ইট পড়ে থাকলে আমরা সেটা নিয়ে ‘ক্যারি কাটতে’ থাকতাম। ভলিবল খেলেছি, স্কুলে অবশ্য বাস্কেট বলও ছিল। ছোটবেলায় ছেলেমেয়ে মিলে খেলতাম দাঁড়িয়া বাঁধা, গোল্লাছুট। হাডুডু খেলায় আমি বিশেষ রকমের ভালো ছিলাম।
ক্রিকেটের প্রেমে পড়লাম বাংলাদেশ যেদিন থেকে আইসিসি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হলো, সেদিন থেকে। বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে গিয়েই বাংলাদেশ হারিয়ে দিল পাকিস্তানকে, সে কি ভাই যায়রে ভোলা! শচীন-সৌরভের ভারতকে বাংলাদেশের পুঁচকে সাকিব-তামিম-মুশফিক পিটিয়ে তুলোধুনো করেছিল আরেক বিশ্বকাপে। ভাষ্যকাররা বলছিলেন, ফিয়ারলেস ক্রিকেট। এখানেই আসে রবীন্দ্রনাথের কথা আর গান। বাংলাদেশ যেদিন ভয়হীন ক্রিকেট খেলে ভারত কিংবা ইংল্যান্ডকে হারায়, রবীন্দ্রনাথ তখন বলেন: ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির’।
বাংলাদেশ যখন বিশ্বকাপে খেলতে যায়, তখন রবীন্দ্রনাথ বলেন: ‘বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো, সেইখানে যোগ তোমার সাথে আমারও...’ সাকিব আল হাসান যখন টি-টোয়েন্টির ক্যাপ্টেন হন এবং একাই লড়তে থাকেন, তখন এ কথা তাঁর মনে পড়েই: ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে’। আর যখন সবাই মিলেই এক টিম হয়ে উঠে দারুণ ছন্দে খেলতে থাকেন, তখন রবিবাবুর গানে তাঁরা কণ্ঠ মেলান: ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে, নইলে মোদের রাজার সাথে মিলব কী শর্তে’। তারপর সাকিব বা লিটন যখন দেখেন, তাঁদের পার্টনাররা একে একে চলে যাচ্ছেন, তাঁরা গেয়ে ওঠেন, ‘যেও না, যেও না ফিরে, দাঁড়াও বারেক দাঁড়াও হৃদয়-আসনে।’
কিন্তু ‘যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।’ আর মোস্তাফিজ যখন মার খেতে থাকেন, ছক্কা দিতে থাকেন, তার জন্যও রবিবাবু লিখে রেখে যেতে ভোলেননি, ‘আমি মারের সাগর পাড়ি দিব রে, ভীষণ ঝড়ের রাতে।’ কিংবা আশরাফুলকে যখন নিষিদ্ধ করা হয়, তিনি গেয়ে ওঠেন, ‘আমি তোমার প্রেমে হব সবার কলঙ্কভাগী, আমি সকল দাগে হব দাগী!’ আর এদিকে যখন বাম হাতি ব্যাটসম্যানের বিপরীতে বাম হাতি বোলার না দেওয়ার সিদ্ধান্তে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অটল থাকেন, তখন সাকিব গাইতে থাকেন রবীন্দ্রনাথের গান: ‘বল দাও মোরে বল দাও, প্রাণে দাও মোরে শকতি/ সকল হৃদয় লুটায়ে তোমারে করিতে প্রণতি।’ উইকেট পেলে সাকিব স্যালুট দেন, এখানে প্রণতি বলতে সেটাকেই বুঝিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ রসিক ছিলেন, তিনি যদি অ্যান্ড্রুজকে বলে থাকতে পারেন যে ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী’ গানের ইংরেজি হচ্ছে ‘আই অ্যাম সুগার...’ তিনি বলতেই পারতেন, ‘বল দাও মানে, গিভ মি দ্য বোল, আই উল হিট দ্য মিডল স্টাম্প অ্যান্ড দেন টেক আ বাও।’
বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে প্রকাশ করতে পারেন ক্রিকেট-মাঠের চড়াই-উতরাইয়ের অভিব্যক্তি। ভারতে এখন কোনো বাঙালি খেলোয়াড় নেই, বেচারা পশ্চিমবঙ্গবাসী, বেচারা রবীন্দ্রনাথ, বাংলাদেশিরাই আজ বিশ্বদরবারে রবীন্দ্রবার্তাবাহী! ইংরেজদের আছে শেক্সপিয়ার। তাদের দুই ব্যাটসম্যান যখন বলে, টু রান অর নট টু রান, দ্যাট ইজ দ্য কোশ্চেন, তখনই ঘটে যায় রানআউট। দুর্বল ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যদি একজন ভালো ব্যাটসম্যানের আগমনের সুযোগ করে দেয়, শেক্সপিয়ারের রোমিও জুলিয়েটের সংলাপ চলতে পারে: পার্টিং ইজ সাচ সুইট সরো।
রবীন্দ্রনাথ নিজে ক্রিকেট খেলতে নেমেছিলেন। বল এসে তাঁকে আঘাত করেছিল। এরপর তিনি আর ক্রিকেট খেলেননি।
আমার ক্ষেত্রে হয়েছিল তার চেয়েও ভয়ংকর ব্যাপার। ব্যাটসম্যানের নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে (শর্ট লেগ?) ফিল্ডিং করছিলাম, ব্যাটসম্যানের ব্যাট সোজা এসে পিঠ বরাবর কোপ বসাল। ভাগ্যিস পিঠ ব্যাটের কানায় লাগেনি, লেগেছে ব্যাটের মাঝবরাবর, তাই বেঁচে আছি এবং লিখছি।
পৃথিবীর বড় ক্রিকেটলেখকেরা যেমন বড় সাহিত্যিকের সম্মান পাবেন, তেমনি বড় সাহিত্যিকেরাও ক্রিকেট নিয়ে লিখেছেন। শামসুর রাহমান, শীর্ষেন্দু, নির্মলেন্দু গুণ, এমনকি হুমায়ূন আহমেদ পর্যন্ত। ক্রিকেট নিয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আছে—
‘তোমাদের গজগামিনীর দিনে;
কবির কল্পনা নেয়নি তো চিনে
কেনেনি ইসটিশনের টিকেট
হৃদয়ক্ষেত্রে খেলেনি ক্রিকেট।’
পাদটীকা: এবারের টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে নিয়ে আমার কোনো উত্তেজনা নেই। শঙ্কা আছে। হারাই হারাই সদা হয় ভয়। তবে আশাও আছে। শ্রীলঙ্কা যদি এশিয়া কাপ জিততে পারে, তাহলে বাংলাদেশ কেন এবারের বিশ্বকাপে ভালো করবে না। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলি,
মুহূর্ত তুলিয়া শির একত্র দাঁড়াও দেখি সবে,
যার ভয়ে তুমি ভীত সে অন্যায় ভীরু তোমা চেয়ে,
যখনি জাগিবে তুমি তখনই সে পলাইবে ধেয়ে।
সাকিব, ভয়হীন ক্রিকেট খেলুন। দায়িত্বহীন নয়। মাঠে শতভাগ দিন। দেড় শ ভাগ আদায় করেন সহখেলোয়াড়দের কাছে। নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়, খুলে যাবে এই (ফর্ম ফিরে পাওয়ার) দ্বার!

আমাদের এক বন্ধু ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখেছিল নোবেল সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার আগে আগে, ‘এবার সাহিত্যে নোবেল পাওয়া উচিত উৎপল শুভ্রর!’
এ কথাটা রসিকতার ছলে বলেছে, একটু খোঁচা মেরে বলেছে, নাকি আসলেই এটাই ছিল বন্ধুর মনের চাওয়া, তা আর অনুসন্ধান করার প্রবৃত্তি হয়নি। কিন্তু ক্রিকেট-সাহিত্য বলতে জগতে খুবই শ্রদ্ধেয় একটা জনরা আছে; আর তার লেখকেরা সব ভুবনবিখ্যাত; নোবেল পুরস্কার তাঁদের কেউ যদি পেয়ে যান, তাহলে নোবেল পুরস্কারই হয়তো গৌরবান্বিত হবে। বব ডিলান যদি নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন; তাহলে কবির সুমন কেন নন? আর গানের লেখক-সুরকার পারফরমার যদি নোবেল পেতে পারেন, ক্রিকেট-সাহিত্যিকেরাই বা কেন বাদ থাকবেন। আর তাই যদি হয়, তাহলে বাংলাদেশ থেকে আমার মনোনয়ন তো উৎপল শুভ্রই।
আমি ক্রিকেটের ক-ও বুঝি না। আমার সবকিছুই ক্ষণিকের আনন্দের জন্য। ‘স্ফুলিঙ্গ তার পাখায় পেল ক্ষণকালের ছন্দ। উড়ে গিয়ে ফুরিয়ে গেল সেই তারি আনন্দ॥’ আমি সবকিছু করি আনন্দের জন্য। আইনস্টাইন বলেছেন, জ্ঞানের চেয়ে কল্পনা মূল্যবান, আর আমার কাছে সবকিছুর চেয়ে আনন্দ মূল্যবান। তবে এই আনন্দও রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে পাওয়া আনন্দের ধারণা; এটা আর যা-ই হোক, ইন্দ্রিয় সুখ নয়; ভোগের নয়, উপভোগের। ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে, দিনরজনী কত অমৃত রস উথলি যায় অনন্ত গগনে।’ আমার আনন্দ, এই আনন্দ।
আমি ছোটবেলাটা কাটিয়েছি মাঠে-ঘাটে, অবাধ প্রান্তরে ছুটে বেড়িয়েছি, বর্ষাবিস্ফারিত নদীতে ঝাঁপ দিয়েছি, জাপটে ধরে ঢেউয়ের ঝুঁটি নৌকা বেয়েছি, গাছের একটা উঁচু নিঃসঙ্গ মগডালে সরীসৃপের মতো বুকে ঠেলে ঠেলে একা একা উঠে নামতে না পেরে ভয়ে কাঁদতে শুরু করেছি; জম্বুরা, কচুরিপানার দলা, ন্যাকড়ার পোঁটলা, দেশলাইয়ের বাক্স—নানান কিছুকে ফুটবল বানিয়ে খেলেছি; বৃষ্টিতে জগৎ ভেসে যাওয়া প্রহরগুলো কাটিয়েছি ফুটবল পায়ে মাঠে কিংবা পাড় উপচানো খালে এবং আমি ক্রিকেটও খেলেছি।
আমাদের শৈশব ছিল দারিদ্র্যের শৈশব। আমরা নিজেরা তক্তা কেটে ক্রিকেট ব্যাট বানাতাম। টেনিস বলে টেপ পেঁচিয়ে হতো ক্রিকেট বল। বাঁশের কঞ্চি হতো আমাদের উইকেট। পায়ে জুতা স্যান্ডেল কিছুই থাকত না। প্যাড হেলমেটের তো প্রশ্নই থাকত না। আমরা টসে জিতলে ব্যাট নিতাম। নিজেদের ব্যাটিং শেষ হলে পরের টিমকে আর ব্যাটিংয়ের সুযোগ দিতাম না, কোনো ছলে ঝগড়া লাগিয়ে খেলার অবসান ঘটাতাম। আমাদেরও বল পুকুরে পড়লে আউট, দেয়ালে লাগলে চার, গাছে লাগলে দুই হতো।
এলবিডব্লু হতো না। ওয়াইড বলকে আমরা বলতাম হোয়াইট বল। পেনাল্টিকে আমরা বলতাম পেলান্টিক। গোলকিপারকে গোলকি।
এত দারিদ্র্য নিয়ে ক্রিকেট খেলা যায় না। ক্রিকেট রাজার খেলা, ক্রিকেট খেলার রাজা। আমাদের খেলা ছিল প্রজার খেলা—ফুটবল। স্কুলের বারান্দায় এক টুকরা ইট পড়ে থাকলে আমরা সেটা নিয়ে ‘ক্যারি কাটতে’ থাকতাম। ভলিবল খেলেছি, স্কুলে অবশ্য বাস্কেট বলও ছিল। ছোটবেলায় ছেলেমেয়ে মিলে খেলতাম দাঁড়িয়া বাঁধা, গোল্লাছুট। হাডুডু খেলায় আমি বিশেষ রকমের ভালো ছিলাম।
ক্রিকেটের প্রেমে পড়লাম বাংলাদেশ যেদিন থেকে আইসিসি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হলো, সেদিন থেকে। বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলতে গিয়েই বাংলাদেশ হারিয়ে দিল পাকিস্তানকে, সে কি ভাই যায়রে ভোলা! শচীন-সৌরভের ভারতকে বাংলাদেশের পুঁচকে সাকিব-তামিম-মুশফিক পিটিয়ে তুলোধুনো করেছিল আরেক বিশ্বকাপে। ভাষ্যকাররা বলছিলেন, ফিয়ারলেস ক্রিকেট। এখানেই আসে রবীন্দ্রনাথের কথা আর গান। বাংলাদেশ যেদিন ভয়হীন ক্রিকেট খেলে ভারত কিংবা ইংল্যান্ডকে হারায়, রবীন্দ্রনাথ তখন বলেন: ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির’।
বাংলাদেশ যখন বিশ্বকাপে খেলতে যায়, তখন রবীন্দ্রনাথ বলেন: ‘বিশ্বসাথে যোগে যেথায় বিহারো, সেইখানে যোগ তোমার সাথে আমারও...’ সাকিব আল হাসান যখন টি-টোয়েন্টির ক্যাপ্টেন হন এবং একাই লড়তে থাকেন, তখন এ কথা তাঁর মনে পড়েই: ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে’। আর যখন সবাই মিলেই এক টিম হয়ে উঠে দারুণ ছন্দে খেলতে থাকেন, তখন রবিবাবুর গানে তাঁরা কণ্ঠ মেলান: ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে, নইলে মোদের রাজার সাথে মিলব কী শর্তে’। তারপর সাকিব বা লিটন যখন দেখেন, তাঁদের পার্টনাররা একে একে চলে যাচ্ছেন, তাঁরা গেয়ে ওঠেন, ‘যেও না, যেও না ফিরে, দাঁড়াও বারেক দাঁড়াও হৃদয়-আসনে।’
কিন্তু ‘যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়।’ আর মোস্তাফিজ যখন মার খেতে থাকেন, ছক্কা দিতে থাকেন, তার জন্যও রবিবাবু লিখে রেখে যেতে ভোলেননি, ‘আমি মারের সাগর পাড়ি দিব রে, ভীষণ ঝড়ের রাতে।’ কিংবা আশরাফুলকে যখন নিষিদ্ধ করা হয়, তিনি গেয়ে ওঠেন, ‘আমি তোমার প্রেমে হব সবার কলঙ্কভাগী, আমি সকল দাগে হব দাগী!’ আর এদিকে যখন বাম হাতি ব্যাটসম্যানের বিপরীতে বাম হাতি বোলার না দেওয়ার সিদ্ধান্তে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অটল থাকেন, তখন সাকিব গাইতে থাকেন রবীন্দ্রনাথের গান: ‘বল দাও মোরে বল দাও, প্রাণে দাও মোরে শকতি/ সকল হৃদয় লুটায়ে তোমারে করিতে প্রণতি।’ উইকেট পেলে সাকিব স্যালুট দেন, এখানে প্রণতি বলতে সেটাকেই বুঝিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ রসিক ছিলেন, তিনি যদি অ্যান্ড্রুজকে বলে থাকতে পারেন যে ‘আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী’ গানের ইংরেজি হচ্ছে ‘আই অ্যাম সুগার...’ তিনি বলতেই পারতেন, ‘বল দাও মানে, গিভ মি দ্য বোল, আই উল হিট দ্য মিডল স্টাম্প অ্যান্ড দেন টেক আ বাও।’
বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে প্রকাশ করতে পারেন ক্রিকেট-মাঠের চড়াই-উতরাইয়ের অভিব্যক্তি। ভারতে এখন কোনো বাঙালি খেলোয়াড় নেই, বেচারা পশ্চিমবঙ্গবাসী, বেচারা রবীন্দ্রনাথ, বাংলাদেশিরাই আজ বিশ্বদরবারে রবীন্দ্রবার্তাবাহী! ইংরেজদের আছে শেক্সপিয়ার। তাদের দুই ব্যাটসম্যান যখন বলে, টু রান অর নট টু রান, দ্যাট ইজ দ্য কোশ্চেন, তখনই ঘটে যায় রানআউট। দুর্বল ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যদি একজন ভালো ব্যাটসম্যানের আগমনের সুযোগ করে দেয়, শেক্সপিয়ারের রোমিও জুলিয়েটের সংলাপ চলতে পারে: পার্টিং ইজ সাচ সুইট সরো।
রবীন্দ্রনাথ নিজে ক্রিকেট খেলতে নেমেছিলেন। বল এসে তাঁকে আঘাত করেছিল। এরপর তিনি আর ক্রিকেট খেলেননি।
আমার ক্ষেত্রে হয়েছিল তার চেয়েও ভয়ংকর ব্যাপার। ব্যাটসম্যানের নাকের ডগায় দাঁড়িয়ে (শর্ট লেগ?) ফিল্ডিং করছিলাম, ব্যাটসম্যানের ব্যাট সোজা এসে পিঠ বরাবর কোপ বসাল। ভাগ্যিস পিঠ ব্যাটের কানায় লাগেনি, লেগেছে ব্যাটের মাঝবরাবর, তাই বেঁচে আছি এবং লিখছি।
পৃথিবীর বড় ক্রিকেটলেখকেরা যেমন বড় সাহিত্যিকের সম্মান পাবেন, তেমনি বড় সাহিত্যিকেরাও ক্রিকেট নিয়ে লিখেছেন। শামসুর রাহমান, শীর্ষেন্দু, নির্মলেন্দু গুণ, এমনকি হুমায়ূন আহমেদ পর্যন্ত। ক্রিকেট নিয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আছে—
‘তোমাদের গজগামিনীর দিনে;
কবির কল্পনা নেয়নি তো চিনে
কেনেনি ইসটিশনের টিকেট
হৃদয়ক্ষেত্রে খেলেনি ক্রিকেট।’
পাদটীকা: এবারের টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে নিয়ে আমার কোনো উত্তেজনা নেই। শঙ্কা আছে। হারাই হারাই সদা হয় ভয়। তবে আশাও আছে। শ্রীলঙ্কা যদি এশিয়া কাপ জিততে পারে, তাহলে বাংলাদেশ কেন এবারের বিশ্বকাপে ভালো করবে না। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলি,
মুহূর্ত তুলিয়া শির একত্র দাঁড়াও দেখি সবে,
যার ভয়ে তুমি ভীত সে অন্যায় ভীরু তোমা চেয়ে,
যখনি জাগিবে তুমি তখনই সে পলাইবে ধেয়ে।
সাকিব, ভয়হীন ক্রিকেট খেলুন। দায়িত্বহীন নয়। মাঠে শতভাগ দিন। দেড় শ ভাগ আদায় করেন সহখেলোয়াড়দের কাছে। নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়, খুলে যাবে এই (ফর্ম ফিরে পাওয়ার) দ্বার!

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

আমাদের এক বন্ধু ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখেছিল নোবেল সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার আগে আগে, ‘এবার সাহিত্যে নোবেল পাওয়া উচিত উৎপল শুভ্রর!’ এ কথাটা রসিকতার ছলে বলেছে, একটু খোঁচা মেরে বলেছে, নাকি আসলেই এটাই ছিল বন্ধুর মনের চাওয়া, তা আর অনুসন্ধান করার প্রবৃত্তি হয়নি। কিন্তু ক্রিকেট-সাহিত্য বলতে জগতে খুবই শ্
২২ অক্টোবর ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

আমাদের এক বন্ধু ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখেছিল নোবেল সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার আগে আগে, ‘এবার সাহিত্যে নোবেল পাওয়া উচিত উৎপল শুভ্রর!’ এ কথাটা রসিকতার ছলে বলেছে, একটু খোঁচা মেরে বলেছে, নাকি আসলেই এটাই ছিল বন্ধুর মনের চাওয়া, তা আর অনুসন্ধান করার প্রবৃত্তি হয়নি। কিন্তু ক্রিকেট-সাহিত্য বলতে জগতে খুবই শ্
২২ অক্টোবর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

আমাদের এক বন্ধু ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখেছিল নোবেল সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার আগে আগে, ‘এবার সাহিত্যে নোবেল পাওয়া উচিত উৎপল শুভ্রর!’ এ কথাটা রসিকতার ছলে বলেছে, একটু খোঁচা মেরে বলেছে, নাকি আসলেই এটাই ছিল বন্ধুর মনের চাওয়া, তা আর অনুসন্ধান করার প্রবৃত্তি হয়নি। কিন্তু ক্রিকেট-সাহিত্য বলতে জগতে খুবই শ্
২২ অক্টোবর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

আমাদের এক বন্ধু ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখেছিল নোবেল সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার আগে আগে, ‘এবার সাহিত্যে নোবেল পাওয়া উচিত উৎপল শুভ্রর!’ এ কথাটা রসিকতার ছলে বলেছে, একটু খোঁচা মেরে বলেছে, নাকি আসলেই এটাই ছিল বন্ধুর মনের চাওয়া, তা আর অনুসন্ধান করার প্রবৃত্তি হয়নি। কিন্তু ক্রিকেট-সাহিত্য বলতে জগতে খুবই শ্
২২ অক্টোবর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে