সৌভিক রেজা

বিশিষ্ট সাহিত্যিক-রাজনীতিবিদ এবং ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা হুমায়ুন কবির একবার বলেছিলেন, ‘প্রতিভার জন্মরহস্য কেউ বলতে পারে না। প্রতিভা তো সব সময়েই তা-ই যা প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যতিক্রম।’ আর এসবের পাশাপাশি ‘প্রতিভা’র দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘প্রতিভার একটা কাজ হলো তাঁর জনগোষ্ঠীর অচেতন এবং অবচেতন মনস্ক্রিয়ায় যেসব আবেগ ও আইডিয়া তোলপাড় করে, সেগুলোকে বাইরে ফুটিয়ে তোলা।’
সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে পুরোনো এই কথাগুলো আবার আমাদের স্মরণ করতে হলো। কেননা, বুদ্ধদেব বসুর মতো মানুষও সুধীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘বিশ শতকের একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি’। নিজের বক্তব্যকে বিস্তারে নিয়ে তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, ‘তাঁর মতো নানাগুণসমন্বিত পুরুষ রবীন্দ্রনাথের পরে আমি অন্য কাউকে দেখিনি...একটি প্রশ্ন মাঝে-মাঝে আমার মনে জাগছে: যাকে আমরা প্রতিভা বলি, সে-বস্তুটি কী?’ বুদ্ধদেব যে সরাসরি উত্তর খুঁজে পেয়েছিলেন, তা নয়। বোধকরি, এসব প্রশ্নের কোনো সহজ উত্তর আমাদের কারওরই জানা নেই। অগত্যা বুদ্ধদেব বসুকে বলতে হয়েছিল, ‘তা [প্রতিভা] কি বুদ্ধিরই কোনো উচ্চতর স্তর, না কি বুদ্ধির সীমাতিক্রম্য কোনো বিশেষ ক্ষমতা, যার প্রয়োগের ক্ষেত্র এক ও অনন্য?’ তিনিও এই সব প্রশ্নের কোনো সুরাহা করতে না-পেরে প্রসঙ্গ পাল্টাতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে এটি ভাবা অনুচিত হবে যে, সেটি ছিল বুদ্ধদেবের অক্ষমতা। কেননা বুদ্ধদেবের ওই গুচ্ছ প্রশ্নের মধ্যেই উত্তরের একটি আভাস আমরা কিন্তু ঠিকই পেয়ে যায়।
২.
নিজের বিষয়ে কী অকপটেই-না সুধীন্দ্রনাথ দত্ত আমাদের জানিয়েছিলেন, ‘পিতৃদেব (হীরেন্দ্রনাথ দত্ত) ছিলেন নিশ্চিন্ত বৈদান্তিক; এবং আকৈশোর অদ্বৈতের অনির্বচনীয় আতিশয্যে উত্ত্যক্ত হয়ে, আমি...অল্প বয়সেই অনেকান্ত জড়বাদের আশ্রয় নিয়েছিলুম।’ শুধু তা-ই নয়, কবিতা রচনায় সোজাসুজি প্রেরণার গুরুত্বকে অস্বীকার করেছিলেন। কারণ তাঁর মনে হয়েছিল যে, প্রেরণার মধ্যে অলৌকিকের আভাস রয়েছে। ফলে, প্রেরণার পরিবর্তে তাঁর কাছে গুরুত্ব পেয়েছিল অভিজ্ঞতা। তিনি মনে করতেন যে কাব্যের সৃষ্টির উৎসে উক্তি ও উপলব্ধি একদম অবিচ্ছেদ্য। তিনি এ-ও বিশ্বাস করতেন, শুধু প্রতিভা থাকলেই কবিতা রচনা সম্ভব নয়, কেননা কাব্য হচ্ছে, তাঁর ভাষায়, ‘অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিরন্তর প্রযত্নের পুরস্কার।’ সেই পরিশ্রম ও নিরন্তর প্রযত্নের শৈল্পিক নমুনা আমরা সুধীন্দ্রনাথের কাব্যেই নানাভাবে দেখতে পাই―
‘অকস্মাৎ স্বপ্ন গেল টুটে। দেখিলাম ত্রস্ত চোখে
জনশূন্য রঙ্গালয়ে নির্বাপিত সমস্ত দেউটি,
নিস্তব্ধ সকল যন্ত্র, মঞ্চ-’পরে যবনিকা ঢাকা।
অলক্ষ্যে কখন পার্শ্ব হতে প্রেমিক-প্রেমিকা চলে
গেছে অমৃতসংকেতে। শান্তি, শান্তি, শান্তি চারিধারে!
কেবল অন্তর মোর উত্তরঙ্গ ক্ষুব্ধ হাহাকারে।’ (অর্কেস্ট্রা)
সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কাব্যরচনার নেপথ্যের শক্তি হিসেবে বুদ্ধদেব বসু এই কবির ‘জাগ্রত আত্মচেতনা’র কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘কবিতা লেখা ব্যাপারটা আসলে জড়ের সঙ্গে চৈতন্যের সংগ্রাম, ভাবনার সঙ্গে ভাষার ও ভাষার সঙ্গে ছন্দ, মিল, ধ্বনিমাধুর্যের এক বিরামহীন মল্লযুদ্ধ।’ সেই সঙ্গে তিনি চিহ্নিত করেছিলেন যে ‘বুদ্ধির আদেশ শিরোধার্য করে অতি ধীরে সাহিত্যের পথে’ সুধীন্দ্রনাথ দত্ত অগ্রসর হয়েছিলেন। এতে করে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে ঠিকই, ব্যক্তিগতভাবে সুধীন্দ্রনাথ পাঠকের কাছ থেকে সাড়া পেলেন কম। পাঠককে অগ্রাহ্য করবার সামর্থ্য অবশ্য তাঁর ছিল, যে-কারণে রবীন্দ্রনাথকে লেখা এক চিঠিতে তিনি বলতে পেরেছিলেন, ‘জনসাধারণের রুচির প্রতি আমার অশ্রদ্ধা এত গভীর যে তাদের নিন্দা-প্রশংসায় আমি উদাসীন।’ এই মনোভাবের জন্য সুধীন্দ্রনাথকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে, এখনো দিতে হচ্ছে।
৩.
কবির দিক থেকে পাঠকের রুচিকে অগ্রাহ্য করবার সামর্থ্য ও তাঁর আত্মচেতনাকে স্বীকার করে নিয়েও রবীন্দ্রনাথ এক চিঠিতে সুধীন্দ্রনাথকে লিখেছিলেন, ‘তোমার রচনায় যে বিশেষ আত্মকীয়তা দেখেছি, সেটাকে অনাদর করা যায় না।’ আর এরপরেই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘তোমার রচনাকে থিওরি দ্বারা পীড়ন না করে...সাংঘাতিক ঘনসন্নদ্ধ অলংকারের দ্বারা তার অঙ্গকে আচ্ছন্ন না করে তার দেহকে সহজ সজীবতার লাবণ্যে যদি প্রকাশ করো, তাহলে তোমার এই লেখাগুলি রসিক সমাজের উপাদেয় ভোজের আয়োজনে লাগবে।’
সুধীন্দ্রনাথকে এসবের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ আরও বলেছিলেন, ‘মানুষের মধ্যে যে লোকটা বুদ্ধিমান তার দাবির দিকে না তাকিয়ে যে লোকটা রসবিলাসী তাকে খুশি করবার চেষ্টা কোরো।’
এখানে বলে রাখা ভালো যে, রবীন্দ্রনাথের সেই উপদেশকে মান্যতা দেবার গরজ সুধীন্দ্রনাথ সেদিন দেখাননি। এখানেও হয়তো, তাঁর সেই জাগ্রত আত্মচেতনা, তাঁকে অন্যের উপদেশে পথ চলতে নিষেধ করেছিল।
৪.
সাহিত্যে প্রেরণার বদলে সুধীন্দ্রনাথ যেমন অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, ঠিক অনেকটা সেরকমই তিনি রবীন্দ্রনাথের বদলে টিএস এলিয়টের সাহিত্য-ভাবনাকেই খানিকটা শিরোধার্য করেছিলেন। সুধীন্দ্রনাথের নিজের বয়ানে দেখতে পাই, তিনি জানিয়েছিলেন, ‘এলিয়ট কবিকে ঘটক আখ্যা দিয়েছেন; এবং আমিও মনে করি যে ব্যক্তিগত মনীষায় জাতীয় মানস ফুটিয়ে তোলাই কবিজীবনের সার্থকতা।’
আর এলিয়টের প্রণোদনায় উজ্জীবিত হয়েই তিনি বলতে পেরেছিলেন, ‘বিষয় নির্বাচনে কবির স্বাধীনতা যদিও অনন্ত, তবু বিষয়বৈচিত্র্যের সঙ্গে কবিতার মৌলিকতা বা সাফল্য বিজড়িত নয়।’ এর অন্তর্নিহিত কারণ হিসেবে তাঁর মনে হয়েছিল বাংলা ‘কাব্যের মুখ্য সম্বল আবেগ; এবং আমাদের আবেগ সংখ্যা যেহেতু অত্যল্প, তাই প্রসঙ্গের দিক থেকে কবিতাবিশেষকে যত অপূর্বই দেখাক না কেন, ফলাফলের বিচারে তার মধ্যে একটা আনুপূর্বিকতা ধরা পড়বেই।’
সে-কারণেই তিনি ওই পথে চরতে চাননি। বরং তিন আজীবন এই বিশ্বাসে স্থিত ছিলেন যে, ‘ভাব ও ভাষার অবিচ্ছেদ্য সমীকরণই...কবির একমাত্র কর্তব্য।’ সেই আত্ম-উপলব্ধির জায়গা থেকেই তিনি লিখেছিলেন―
‘নির্বাপিত চক্ষে জাগে সংসারীর ভীরু কাণ্ডজ্ঞান।
ঊর্ধ্ববাহু আজ রিক্তাকাশে
যৌবনযজ্ঞানি মোর যে-অনাম দেবতার আশে,
জানি সে-অচেনা
কোনও দিন আমার হবে না;
তবুও নিশ্চয়
আমার উদ্যত অর্ঘ্য, প্রেয়সী, তোমার তরে নয়।’ (কস্মৈ দেবায়)
৫.
যিনি বিশ্বাস করতেন, ‘কবির পক্ষে সমাজকে বোঝা দরকার, কবিতার অস্থি-র ভেতরে থাকবে ইতিহাসচেতনা ও মর্মে থাকবে পরিচ্ছন্ন কালজ্ঞান’, সেই জীবনানন্দ দাশও মনে করতেন যে, সুধীন্দ্রনাথের ‘প্রতিভা এবং আন্তরিকতা এঁর নিজের জিনিশ। আর কিছু জানাবার নেই মেনে হয়তো তিনি আত্মজিজ্ঞাসায় চুপ হয়ে আছেন। এ রকম আত্মপ্রসাদহীন সংযম দেশি-বিদেশি খুব কম লেখকের বেলাই দেখা যায়। তিনি আধুনিক বাংলা কাব্যের সবচেয়ে নিরাশাকরোজ্জ্বল চেতনা।’
আর সেই সঙ্গে এটিও জীবনানন্দ স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে, ‘আধুনিক সাহিত্যের প্রায় বারো আনা তথাকথিত প্রাগ্রসর কবিতার চেয়ে সুধীন্দ্রনাথের কবিতা বেশি প্রবীণ।’ রবীন্দ্রনাথও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন যে, ‘সুধীন্দ্রনাথের বইখানিতে (‘স্বগত’) জমেছে তাঁর মনন-সাধনার ফসল।’ সেই মনন-সাধনার ফসল যেমন তাঁর কাব্যে, তেমনই তাঁর প্রবন্ধে স্বকীয়তায় স্থান করে নিতে পেরেছিল।
সম্ভবত সে-জন্যই রবীন্দ্রনাথ অমিয় চক্রবর্তীকে বলেছিলেন, ‘সুধীন্দ্র দেশ-বিদেশের নানা সাহিত্যক্ষেত্র ভ্রমণ করে বেড়াচ্ছেন—মনের অভিজ্ঞতা কেবলি বাড়িয়ে চলায় তাঁর শখ— সেই শখ নিছক আরামে মেটাবার নয় বলেই আমাদের দেশে মননভূমির ভবঘুরে এত অল্প।’
তাঁর সাহিত্যের প্রতি রবীন্দ্রনাথের এই মনোভাব সুধীন্দ্রনাথ জানতেন, বুঝতেও তো পারতেন। দুজনের সাহিত্যদৃষ্টির যে পার্থক্য, সেটাকে মান্যতা দিয়েই তিনি বলেছিলেন, ‘তাঁর (রবীন্দ্রনাথ) আর আমার ধর্ম আকাশ-পাতালের মতো পৃথক। তিনি সূর্য, উদয়াস্ত নির্বিকার: আমি অন্ধকারে বদ্ধমূল, আলোর দিকে উঠছি; সদ্গতির আগেই হয়তো তমসায় আবার তলাব।’
নিজের ভবিষ্যৎ যেন এই কবি দেখতে পেয়েছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও সাহিত্যিক জীবনের অন্তিমপর্বের দিকে যদি তাকাই, তাহলে সত্যিকার অর্থেই যে-কারও মনে হবে, এই সেই কবি, যিনি অন্ধকারে তলিয়ে গেলেন!
৬.
কবির কর্তব্য, তাঁর উদ্দেশ্য ও ব্রত সম্পর্কে সুধীন্দ্রনাথ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, ‘কবির কর্তব্য তার প্রতিদিনের বিশৃঙ্খল অভিজ্ঞতায় একটা পরম উপলব্ধির মাল্যরচনা। কবির উদ্দেশ্য তার চারপাশের অবচ্ছিন্ন জীবনের সঙ্গে প্রবহমান জীবনের সমীকরণ। কবির ব্রত তার স্বকীয় চৈতন্যের রসায়নে শুদ্ধ চৈতন্যের উদ্ভাবন।’
জীবনের শেষ দশটি বছরে এক ‘দশমী’ ছাড়া তাঁর আর কোনো নতুন কবিতার বই বের হয়নি, প্রবন্ধ-গ্রন্থও নয়। তাতে বাংলা সাহিত্যের এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো বটে, কিন্তু এই কবি তাঁর বিশ্বাস থেকে, নিজের স্বভাবধর্ম থেকে আমৃত্যু একচুলও নড়েননি।
৭.
২৫ জুন এই প্রতিভাবান সাহিত্যিকের প্রয়াণ দিবস। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
লেখক: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশিষ্ট সাহিত্যিক-রাজনীতিবিদ এবং ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা হুমায়ুন কবির একবার বলেছিলেন, ‘প্রতিভার জন্মরহস্য কেউ বলতে পারে না। প্রতিভা তো সব সময়েই তা-ই যা প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যতিক্রম।’ আর এসবের পাশাপাশি ‘প্রতিভা’র দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘প্রতিভার একটা কাজ হলো তাঁর জনগোষ্ঠীর অচেতন এবং অবচেতন মনস্ক্রিয়ায় যেসব আবেগ ও আইডিয়া তোলপাড় করে, সেগুলোকে বাইরে ফুটিয়ে তোলা।’
সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে পুরোনো এই কথাগুলো আবার আমাদের স্মরণ করতে হলো। কেননা, বুদ্ধদেব বসুর মতো মানুষও সুধীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘বিশ শতকের একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি’। নিজের বক্তব্যকে বিস্তারে নিয়ে তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, ‘তাঁর মতো নানাগুণসমন্বিত পুরুষ রবীন্দ্রনাথের পরে আমি অন্য কাউকে দেখিনি...একটি প্রশ্ন মাঝে-মাঝে আমার মনে জাগছে: যাকে আমরা প্রতিভা বলি, সে-বস্তুটি কী?’ বুদ্ধদেব যে সরাসরি উত্তর খুঁজে পেয়েছিলেন, তা নয়। বোধকরি, এসব প্রশ্নের কোনো সহজ উত্তর আমাদের কারওরই জানা নেই। অগত্যা বুদ্ধদেব বসুকে বলতে হয়েছিল, ‘তা [প্রতিভা] কি বুদ্ধিরই কোনো উচ্চতর স্তর, না কি বুদ্ধির সীমাতিক্রম্য কোনো বিশেষ ক্ষমতা, যার প্রয়োগের ক্ষেত্র এক ও অনন্য?’ তিনিও এই সব প্রশ্নের কোনো সুরাহা করতে না-পেরে প্রসঙ্গ পাল্টাতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে এটি ভাবা অনুচিত হবে যে, সেটি ছিল বুদ্ধদেবের অক্ষমতা। কেননা বুদ্ধদেবের ওই গুচ্ছ প্রশ্নের মধ্যেই উত্তরের একটি আভাস আমরা কিন্তু ঠিকই পেয়ে যায়।
২.
নিজের বিষয়ে কী অকপটেই-না সুধীন্দ্রনাথ দত্ত আমাদের জানিয়েছিলেন, ‘পিতৃদেব (হীরেন্দ্রনাথ দত্ত) ছিলেন নিশ্চিন্ত বৈদান্তিক; এবং আকৈশোর অদ্বৈতের অনির্বচনীয় আতিশয্যে উত্ত্যক্ত হয়ে, আমি...অল্প বয়সেই অনেকান্ত জড়বাদের আশ্রয় নিয়েছিলুম।’ শুধু তা-ই নয়, কবিতা রচনায় সোজাসুজি প্রেরণার গুরুত্বকে অস্বীকার করেছিলেন। কারণ তাঁর মনে হয়েছিল যে, প্রেরণার মধ্যে অলৌকিকের আভাস রয়েছে। ফলে, প্রেরণার পরিবর্তে তাঁর কাছে গুরুত্ব পেয়েছিল অভিজ্ঞতা। তিনি মনে করতেন যে কাব্যের সৃষ্টির উৎসে উক্তি ও উপলব্ধি একদম অবিচ্ছেদ্য। তিনি এ-ও বিশ্বাস করতেন, শুধু প্রতিভা থাকলেই কবিতা রচনা সম্ভব নয়, কেননা কাব্য হচ্ছে, তাঁর ভাষায়, ‘অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিরন্তর প্রযত্নের পুরস্কার।’ সেই পরিশ্রম ও নিরন্তর প্রযত্নের শৈল্পিক নমুনা আমরা সুধীন্দ্রনাথের কাব্যেই নানাভাবে দেখতে পাই―
‘অকস্মাৎ স্বপ্ন গেল টুটে। দেখিলাম ত্রস্ত চোখে
জনশূন্য রঙ্গালয়ে নির্বাপিত সমস্ত দেউটি,
নিস্তব্ধ সকল যন্ত্র, মঞ্চ-’পরে যবনিকা ঢাকা।
অলক্ষ্যে কখন পার্শ্ব হতে প্রেমিক-প্রেমিকা চলে
গেছে অমৃতসংকেতে। শান্তি, শান্তি, শান্তি চারিধারে!
কেবল অন্তর মোর উত্তরঙ্গ ক্ষুব্ধ হাহাকারে।’ (অর্কেস্ট্রা)
সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কাব্যরচনার নেপথ্যের শক্তি হিসেবে বুদ্ধদেব বসু এই কবির ‘জাগ্রত আত্মচেতনা’র কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘কবিতা লেখা ব্যাপারটা আসলে জড়ের সঙ্গে চৈতন্যের সংগ্রাম, ভাবনার সঙ্গে ভাষার ও ভাষার সঙ্গে ছন্দ, মিল, ধ্বনিমাধুর্যের এক বিরামহীন মল্লযুদ্ধ।’ সেই সঙ্গে তিনি চিহ্নিত করেছিলেন যে ‘বুদ্ধির আদেশ শিরোধার্য করে অতি ধীরে সাহিত্যের পথে’ সুধীন্দ্রনাথ দত্ত অগ্রসর হয়েছিলেন। এতে করে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে ঠিকই, ব্যক্তিগতভাবে সুধীন্দ্রনাথ পাঠকের কাছ থেকে সাড়া পেলেন কম। পাঠককে অগ্রাহ্য করবার সামর্থ্য অবশ্য তাঁর ছিল, যে-কারণে রবীন্দ্রনাথকে লেখা এক চিঠিতে তিনি বলতে পেরেছিলেন, ‘জনসাধারণের রুচির প্রতি আমার অশ্রদ্ধা এত গভীর যে তাদের নিন্দা-প্রশংসায় আমি উদাসীন।’ এই মনোভাবের জন্য সুধীন্দ্রনাথকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে, এখনো দিতে হচ্ছে।
৩.
কবির দিক থেকে পাঠকের রুচিকে অগ্রাহ্য করবার সামর্থ্য ও তাঁর আত্মচেতনাকে স্বীকার করে নিয়েও রবীন্দ্রনাথ এক চিঠিতে সুধীন্দ্রনাথকে লিখেছিলেন, ‘তোমার রচনায় যে বিশেষ আত্মকীয়তা দেখেছি, সেটাকে অনাদর করা যায় না।’ আর এরপরেই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘তোমার রচনাকে থিওরি দ্বারা পীড়ন না করে...সাংঘাতিক ঘনসন্নদ্ধ অলংকারের দ্বারা তার অঙ্গকে আচ্ছন্ন না করে তার দেহকে সহজ সজীবতার লাবণ্যে যদি প্রকাশ করো, তাহলে তোমার এই লেখাগুলি রসিক সমাজের উপাদেয় ভোজের আয়োজনে লাগবে।’
সুধীন্দ্রনাথকে এসবের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ আরও বলেছিলেন, ‘মানুষের মধ্যে যে লোকটা বুদ্ধিমান তার দাবির দিকে না তাকিয়ে যে লোকটা রসবিলাসী তাকে খুশি করবার চেষ্টা কোরো।’
এখানে বলে রাখা ভালো যে, রবীন্দ্রনাথের সেই উপদেশকে মান্যতা দেবার গরজ সুধীন্দ্রনাথ সেদিন দেখাননি। এখানেও হয়তো, তাঁর সেই জাগ্রত আত্মচেতনা, তাঁকে অন্যের উপদেশে পথ চলতে নিষেধ করেছিল।
৪.
সাহিত্যে প্রেরণার বদলে সুধীন্দ্রনাথ যেমন অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, ঠিক অনেকটা সেরকমই তিনি রবীন্দ্রনাথের বদলে টিএস এলিয়টের সাহিত্য-ভাবনাকেই খানিকটা শিরোধার্য করেছিলেন। সুধীন্দ্রনাথের নিজের বয়ানে দেখতে পাই, তিনি জানিয়েছিলেন, ‘এলিয়ট কবিকে ঘটক আখ্যা দিয়েছেন; এবং আমিও মনে করি যে ব্যক্তিগত মনীষায় জাতীয় মানস ফুটিয়ে তোলাই কবিজীবনের সার্থকতা।’
আর এলিয়টের প্রণোদনায় উজ্জীবিত হয়েই তিনি বলতে পেরেছিলেন, ‘বিষয় নির্বাচনে কবির স্বাধীনতা যদিও অনন্ত, তবু বিষয়বৈচিত্র্যের সঙ্গে কবিতার মৌলিকতা বা সাফল্য বিজড়িত নয়।’ এর অন্তর্নিহিত কারণ হিসেবে তাঁর মনে হয়েছিল বাংলা ‘কাব্যের মুখ্য সম্বল আবেগ; এবং আমাদের আবেগ সংখ্যা যেহেতু অত্যল্প, তাই প্রসঙ্গের দিক থেকে কবিতাবিশেষকে যত অপূর্বই দেখাক না কেন, ফলাফলের বিচারে তার মধ্যে একটা আনুপূর্বিকতা ধরা পড়বেই।’
সে-কারণেই তিনি ওই পথে চরতে চাননি। বরং তিন আজীবন এই বিশ্বাসে স্থিত ছিলেন যে, ‘ভাব ও ভাষার অবিচ্ছেদ্য সমীকরণই...কবির একমাত্র কর্তব্য।’ সেই আত্ম-উপলব্ধির জায়গা থেকেই তিনি লিখেছিলেন―
‘নির্বাপিত চক্ষে জাগে সংসারীর ভীরু কাণ্ডজ্ঞান।
ঊর্ধ্ববাহু আজ রিক্তাকাশে
যৌবনযজ্ঞানি মোর যে-অনাম দেবতার আশে,
জানি সে-অচেনা
কোনও দিন আমার হবে না;
তবুও নিশ্চয়
আমার উদ্যত অর্ঘ্য, প্রেয়সী, তোমার তরে নয়।’ (কস্মৈ দেবায়)
৫.
যিনি বিশ্বাস করতেন, ‘কবির পক্ষে সমাজকে বোঝা দরকার, কবিতার অস্থি-র ভেতরে থাকবে ইতিহাসচেতনা ও মর্মে থাকবে পরিচ্ছন্ন কালজ্ঞান’, সেই জীবনানন্দ দাশও মনে করতেন যে, সুধীন্দ্রনাথের ‘প্রতিভা এবং আন্তরিকতা এঁর নিজের জিনিশ। আর কিছু জানাবার নেই মেনে হয়তো তিনি আত্মজিজ্ঞাসায় চুপ হয়ে আছেন। এ রকম আত্মপ্রসাদহীন সংযম দেশি-বিদেশি খুব কম লেখকের বেলাই দেখা যায়। তিনি আধুনিক বাংলা কাব্যের সবচেয়ে নিরাশাকরোজ্জ্বল চেতনা।’
আর সেই সঙ্গে এটিও জীবনানন্দ স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে, ‘আধুনিক সাহিত্যের প্রায় বারো আনা তথাকথিত প্রাগ্রসর কবিতার চেয়ে সুধীন্দ্রনাথের কবিতা বেশি প্রবীণ।’ রবীন্দ্রনাথও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন যে, ‘সুধীন্দ্রনাথের বইখানিতে (‘স্বগত’) জমেছে তাঁর মনন-সাধনার ফসল।’ সেই মনন-সাধনার ফসল যেমন তাঁর কাব্যে, তেমনই তাঁর প্রবন্ধে স্বকীয়তায় স্থান করে নিতে পেরেছিল।
সম্ভবত সে-জন্যই রবীন্দ্রনাথ অমিয় চক্রবর্তীকে বলেছিলেন, ‘সুধীন্দ্র দেশ-বিদেশের নানা সাহিত্যক্ষেত্র ভ্রমণ করে বেড়াচ্ছেন—মনের অভিজ্ঞতা কেবলি বাড়িয়ে চলায় তাঁর শখ— সেই শখ নিছক আরামে মেটাবার নয় বলেই আমাদের দেশে মননভূমির ভবঘুরে এত অল্প।’
তাঁর সাহিত্যের প্রতি রবীন্দ্রনাথের এই মনোভাব সুধীন্দ্রনাথ জানতেন, বুঝতেও তো পারতেন। দুজনের সাহিত্যদৃষ্টির যে পার্থক্য, সেটাকে মান্যতা দিয়েই তিনি বলেছিলেন, ‘তাঁর (রবীন্দ্রনাথ) আর আমার ধর্ম আকাশ-পাতালের মতো পৃথক। তিনি সূর্য, উদয়াস্ত নির্বিকার: আমি অন্ধকারে বদ্ধমূল, আলোর দিকে উঠছি; সদ্গতির আগেই হয়তো তমসায় আবার তলাব।’
নিজের ভবিষ্যৎ যেন এই কবি দেখতে পেয়েছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও সাহিত্যিক জীবনের অন্তিমপর্বের দিকে যদি তাকাই, তাহলে সত্যিকার অর্থেই যে-কারও মনে হবে, এই সেই কবি, যিনি অন্ধকারে তলিয়ে গেলেন!
৬.
কবির কর্তব্য, তাঁর উদ্দেশ্য ও ব্রত সম্পর্কে সুধীন্দ্রনাথ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, ‘কবির কর্তব্য তার প্রতিদিনের বিশৃঙ্খল অভিজ্ঞতায় একটা পরম উপলব্ধির মাল্যরচনা। কবির উদ্দেশ্য তার চারপাশের অবচ্ছিন্ন জীবনের সঙ্গে প্রবহমান জীবনের সমীকরণ। কবির ব্রত তার স্বকীয় চৈতন্যের রসায়নে শুদ্ধ চৈতন্যের উদ্ভাবন।’
জীবনের শেষ দশটি বছরে এক ‘দশমী’ ছাড়া তাঁর আর কোনো নতুন কবিতার বই বের হয়নি, প্রবন্ধ-গ্রন্থও নয়। তাতে বাংলা সাহিত্যের এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো বটে, কিন্তু এই কবি তাঁর বিশ্বাস থেকে, নিজের স্বভাবধর্ম থেকে আমৃত্যু একচুলও নড়েননি।
৭.
২৫ জুন এই প্রতিভাবান সাহিত্যিকের প্রয়াণ দিবস। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
লেখক: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
সৌভিক রেজা

বিশিষ্ট সাহিত্যিক-রাজনীতিবিদ এবং ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা হুমায়ুন কবির একবার বলেছিলেন, ‘প্রতিভার জন্মরহস্য কেউ বলতে পারে না। প্রতিভা তো সব সময়েই তা-ই যা প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যতিক্রম।’ আর এসবের পাশাপাশি ‘প্রতিভা’র দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘প্রতিভার একটা কাজ হলো তাঁর জনগোষ্ঠীর অচেতন এবং অবচেতন মনস্ক্রিয়ায় যেসব আবেগ ও আইডিয়া তোলপাড় করে, সেগুলোকে বাইরে ফুটিয়ে তোলা।’
সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে পুরোনো এই কথাগুলো আবার আমাদের স্মরণ করতে হলো। কেননা, বুদ্ধদেব বসুর মতো মানুষও সুধীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘বিশ শতকের একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি’। নিজের বক্তব্যকে বিস্তারে নিয়ে তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, ‘তাঁর মতো নানাগুণসমন্বিত পুরুষ রবীন্দ্রনাথের পরে আমি অন্য কাউকে দেখিনি...একটি প্রশ্ন মাঝে-মাঝে আমার মনে জাগছে: যাকে আমরা প্রতিভা বলি, সে-বস্তুটি কী?’ বুদ্ধদেব যে সরাসরি উত্তর খুঁজে পেয়েছিলেন, তা নয়। বোধকরি, এসব প্রশ্নের কোনো সহজ উত্তর আমাদের কারওরই জানা নেই। অগত্যা বুদ্ধদেব বসুকে বলতে হয়েছিল, ‘তা [প্রতিভা] কি বুদ্ধিরই কোনো উচ্চতর স্তর, না কি বুদ্ধির সীমাতিক্রম্য কোনো বিশেষ ক্ষমতা, যার প্রয়োগের ক্ষেত্র এক ও অনন্য?’ তিনিও এই সব প্রশ্নের কোনো সুরাহা করতে না-পেরে প্রসঙ্গ পাল্টাতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে এটি ভাবা অনুচিত হবে যে, সেটি ছিল বুদ্ধদেবের অক্ষমতা। কেননা বুদ্ধদেবের ওই গুচ্ছ প্রশ্নের মধ্যেই উত্তরের একটি আভাস আমরা কিন্তু ঠিকই পেয়ে যায়।
২.
নিজের বিষয়ে কী অকপটেই-না সুধীন্দ্রনাথ দত্ত আমাদের জানিয়েছিলেন, ‘পিতৃদেব (হীরেন্দ্রনাথ দত্ত) ছিলেন নিশ্চিন্ত বৈদান্তিক; এবং আকৈশোর অদ্বৈতের অনির্বচনীয় আতিশয্যে উত্ত্যক্ত হয়ে, আমি...অল্প বয়সেই অনেকান্ত জড়বাদের আশ্রয় নিয়েছিলুম।’ শুধু তা-ই নয়, কবিতা রচনায় সোজাসুজি প্রেরণার গুরুত্বকে অস্বীকার করেছিলেন। কারণ তাঁর মনে হয়েছিল যে, প্রেরণার মধ্যে অলৌকিকের আভাস রয়েছে। ফলে, প্রেরণার পরিবর্তে তাঁর কাছে গুরুত্ব পেয়েছিল অভিজ্ঞতা। তিনি মনে করতেন যে কাব্যের সৃষ্টির উৎসে উক্তি ও উপলব্ধি একদম অবিচ্ছেদ্য। তিনি এ-ও বিশ্বাস করতেন, শুধু প্রতিভা থাকলেই কবিতা রচনা সম্ভব নয়, কেননা কাব্য হচ্ছে, তাঁর ভাষায়, ‘অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিরন্তর প্রযত্নের পুরস্কার।’ সেই পরিশ্রম ও নিরন্তর প্রযত্নের শৈল্পিক নমুনা আমরা সুধীন্দ্রনাথের কাব্যেই নানাভাবে দেখতে পাই―
‘অকস্মাৎ স্বপ্ন গেল টুটে। দেখিলাম ত্রস্ত চোখে
জনশূন্য রঙ্গালয়ে নির্বাপিত সমস্ত দেউটি,
নিস্তব্ধ সকল যন্ত্র, মঞ্চ-’পরে যবনিকা ঢাকা।
অলক্ষ্যে কখন পার্শ্ব হতে প্রেমিক-প্রেমিকা চলে
গেছে অমৃতসংকেতে। শান্তি, শান্তি, শান্তি চারিধারে!
কেবল অন্তর মোর উত্তরঙ্গ ক্ষুব্ধ হাহাকারে।’ (অর্কেস্ট্রা)
সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কাব্যরচনার নেপথ্যের শক্তি হিসেবে বুদ্ধদেব বসু এই কবির ‘জাগ্রত আত্মচেতনা’র কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘কবিতা লেখা ব্যাপারটা আসলে জড়ের সঙ্গে চৈতন্যের সংগ্রাম, ভাবনার সঙ্গে ভাষার ও ভাষার সঙ্গে ছন্দ, মিল, ধ্বনিমাধুর্যের এক বিরামহীন মল্লযুদ্ধ।’ সেই সঙ্গে তিনি চিহ্নিত করেছিলেন যে ‘বুদ্ধির আদেশ শিরোধার্য করে অতি ধীরে সাহিত্যের পথে’ সুধীন্দ্রনাথ দত্ত অগ্রসর হয়েছিলেন। এতে করে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে ঠিকই, ব্যক্তিগতভাবে সুধীন্দ্রনাথ পাঠকের কাছ থেকে সাড়া পেলেন কম। পাঠককে অগ্রাহ্য করবার সামর্থ্য অবশ্য তাঁর ছিল, যে-কারণে রবীন্দ্রনাথকে লেখা এক চিঠিতে তিনি বলতে পেরেছিলেন, ‘জনসাধারণের রুচির প্রতি আমার অশ্রদ্ধা এত গভীর যে তাদের নিন্দা-প্রশংসায় আমি উদাসীন।’ এই মনোভাবের জন্য সুধীন্দ্রনাথকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে, এখনো দিতে হচ্ছে।
৩.
কবির দিক থেকে পাঠকের রুচিকে অগ্রাহ্য করবার সামর্থ্য ও তাঁর আত্মচেতনাকে স্বীকার করে নিয়েও রবীন্দ্রনাথ এক চিঠিতে সুধীন্দ্রনাথকে লিখেছিলেন, ‘তোমার রচনায় যে বিশেষ আত্মকীয়তা দেখেছি, সেটাকে অনাদর করা যায় না।’ আর এরপরেই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘তোমার রচনাকে থিওরি দ্বারা পীড়ন না করে...সাংঘাতিক ঘনসন্নদ্ধ অলংকারের দ্বারা তার অঙ্গকে আচ্ছন্ন না করে তার দেহকে সহজ সজীবতার লাবণ্যে যদি প্রকাশ করো, তাহলে তোমার এই লেখাগুলি রসিক সমাজের উপাদেয় ভোজের আয়োজনে লাগবে।’
সুধীন্দ্রনাথকে এসবের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ আরও বলেছিলেন, ‘মানুষের মধ্যে যে লোকটা বুদ্ধিমান তার দাবির দিকে না তাকিয়ে যে লোকটা রসবিলাসী তাকে খুশি করবার চেষ্টা কোরো।’
এখানে বলে রাখা ভালো যে, রবীন্দ্রনাথের সেই উপদেশকে মান্যতা দেবার গরজ সুধীন্দ্রনাথ সেদিন দেখাননি। এখানেও হয়তো, তাঁর সেই জাগ্রত আত্মচেতনা, তাঁকে অন্যের উপদেশে পথ চলতে নিষেধ করেছিল।
৪.
সাহিত্যে প্রেরণার বদলে সুধীন্দ্রনাথ যেমন অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, ঠিক অনেকটা সেরকমই তিনি রবীন্দ্রনাথের বদলে টিএস এলিয়টের সাহিত্য-ভাবনাকেই খানিকটা শিরোধার্য করেছিলেন। সুধীন্দ্রনাথের নিজের বয়ানে দেখতে পাই, তিনি জানিয়েছিলেন, ‘এলিয়ট কবিকে ঘটক আখ্যা দিয়েছেন; এবং আমিও মনে করি যে ব্যক্তিগত মনীষায় জাতীয় মানস ফুটিয়ে তোলাই কবিজীবনের সার্থকতা।’
আর এলিয়টের প্রণোদনায় উজ্জীবিত হয়েই তিনি বলতে পেরেছিলেন, ‘বিষয় নির্বাচনে কবির স্বাধীনতা যদিও অনন্ত, তবু বিষয়বৈচিত্র্যের সঙ্গে কবিতার মৌলিকতা বা সাফল্য বিজড়িত নয়।’ এর অন্তর্নিহিত কারণ হিসেবে তাঁর মনে হয়েছিল বাংলা ‘কাব্যের মুখ্য সম্বল আবেগ; এবং আমাদের আবেগ সংখ্যা যেহেতু অত্যল্প, তাই প্রসঙ্গের দিক থেকে কবিতাবিশেষকে যত অপূর্বই দেখাক না কেন, ফলাফলের বিচারে তার মধ্যে একটা আনুপূর্বিকতা ধরা পড়বেই।’
সে-কারণেই তিনি ওই পথে চরতে চাননি। বরং তিন আজীবন এই বিশ্বাসে স্থিত ছিলেন যে, ‘ভাব ও ভাষার অবিচ্ছেদ্য সমীকরণই...কবির একমাত্র কর্তব্য।’ সেই আত্ম-উপলব্ধির জায়গা থেকেই তিনি লিখেছিলেন―
‘নির্বাপিত চক্ষে জাগে সংসারীর ভীরু কাণ্ডজ্ঞান।
ঊর্ধ্ববাহু আজ রিক্তাকাশে
যৌবনযজ্ঞানি মোর যে-অনাম দেবতার আশে,
জানি সে-অচেনা
কোনও দিন আমার হবে না;
তবুও নিশ্চয়
আমার উদ্যত অর্ঘ্য, প্রেয়সী, তোমার তরে নয়।’ (কস্মৈ দেবায়)
৫.
যিনি বিশ্বাস করতেন, ‘কবির পক্ষে সমাজকে বোঝা দরকার, কবিতার অস্থি-র ভেতরে থাকবে ইতিহাসচেতনা ও মর্মে থাকবে পরিচ্ছন্ন কালজ্ঞান’, সেই জীবনানন্দ দাশও মনে করতেন যে, সুধীন্দ্রনাথের ‘প্রতিভা এবং আন্তরিকতা এঁর নিজের জিনিশ। আর কিছু জানাবার নেই মেনে হয়তো তিনি আত্মজিজ্ঞাসায় চুপ হয়ে আছেন। এ রকম আত্মপ্রসাদহীন সংযম দেশি-বিদেশি খুব কম লেখকের বেলাই দেখা যায়। তিনি আধুনিক বাংলা কাব্যের সবচেয়ে নিরাশাকরোজ্জ্বল চেতনা।’
আর সেই সঙ্গে এটিও জীবনানন্দ স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে, ‘আধুনিক সাহিত্যের প্রায় বারো আনা তথাকথিত প্রাগ্রসর কবিতার চেয়ে সুধীন্দ্রনাথের কবিতা বেশি প্রবীণ।’ রবীন্দ্রনাথও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন যে, ‘সুধীন্দ্রনাথের বইখানিতে (‘স্বগত’) জমেছে তাঁর মনন-সাধনার ফসল।’ সেই মনন-সাধনার ফসল যেমন তাঁর কাব্যে, তেমনই তাঁর প্রবন্ধে স্বকীয়তায় স্থান করে নিতে পেরেছিল।
সম্ভবত সে-জন্যই রবীন্দ্রনাথ অমিয় চক্রবর্তীকে বলেছিলেন, ‘সুধীন্দ্র দেশ-বিদেশের নানা সাহিত্যক্ষেত্র ভ্রমণ করে বেড়াচ্ছেন—মনের অভিজ্ঞতা কেবলি বাড়িয়ে চলায় তাঁর শখ— সেই শখ নিছক আরামে মেটাবার নয় বলেই আমাদের দেশে মননভূমির ভবঘুরে এত অল্প।’
তাঁর সাহিত্যের প্রতি রবীন্দ্রনাথের এই মনোভাব সুধীন্দ্রনাথ জানতেন, বুঝতেও তো পারতেন। দুজনের সাহিত্যদৃষ্টির যে পার্থক্য, সেটাকে মান্যতা দিয়েই তিনি বলেছিলেন, ‘তাঁর (রবীন্দ্রনাথ) আর আমার ধর্ম আকাশ-পাতালের মতো পৃথক। তিনি সূর্য, উদয়াস্ত নির্বিকার: আমি অন্ধকারে বদ্ধমূল, আলোর দিকে উঠছি; সদ্গতির আগেই হয়তো তমসায় আবার তলাব।’
নিজের ভবিষ্যৎ যেন এই কবি দেখতে পেয়েছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও সাহিত্যিক জীবনের অন্তিমপর্বের দিকে যদি তাকাই, তাহলে সত্যিকার অর্থেই যে-কারও মনে হবে, এই সেই কবি, যিনি অন্ধকারে তলিয়ে গেলেন!
৬.
কবির কর্তব্য, তাঁর উদ্দেশ্য ও ব্রত সম্পর্কে সুধীন্দ্রনাথ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, ‘কবির কর্তব্য তার প্রতিদিনের বিশৃঙ্খল অভিজ্ঞতায় একটা পরম উপলব্ধির মাল্যরচনা। কবির উদ্দেশ্য তার চারপাশের অবচ্ছিন্ন জীবনের সঙ্গে প্রবহমান জীবনের সমীকরণ। কবির ব্রত তার স্বকীয় চৈতন্যের রসায়নে শুদ্ধ চৈতন্যের উদ্ভাবন।’
জীবনের শেষ দশটি বছরে এক ‘দশমী’ ছাড়া তাঁর আর কোনো নতুন কবিতার বই বের হয়নি, প্রবন্ধ-গ্রন্থও নয়। তাতে বাংলা সাহিত্যের এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো বটে, কিন্তু এই কবি তাঁর বিশ্বাস থেকে, নিজের স্বভাবধর্ম থেকে আমৃত্যু একচুলও নড়েননি।
৭.
২৫ জুন এই প্রতিভাবান সাহিত্যিকের প্রয়াণ দিবস। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
লেখক: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশিষ্ট সাহিত্যিক-রাজনীতিবিদ এবং ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা হুমায়ুন কবির একবার বলেছিলেন, ‘প্রতিভার জন্মরহস্য কেউ বলতে পারে না। প্রতিভা তো সব সময়েই তা-ই যা প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যতিক্রম।’ আর এসবের পাশাপাশি ‘প্রতিভা’র দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘প্রতিভার একটা কাজ হলো তাঁর জনগোষ্ঠীর অচেতন এবং অবচেতন মনস্ক্রিয়ায় যেসব আবেগ ও আইডিয়া তোলপাড় করে, সেগুলোকে বাইরে ফুটিয়ে তোলা।’
সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে পুরোনো এই কথাগুলো আবার আমাদের স্মরণ করতে হলো। কেননা, বুদ্ধদেব বসুর মতো মানুষও সুধীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘বিশ শতকের একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি’। নিজের বক্তব্যকে বিস্তারে নিয়ে তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, ‘তাঁর মতো নানাগুণসমন্বিত পুরুষ রবীন্দ্রনাথের পরে আমি অন্য কাউকে দেখিনি...একটি প্রশ্ন মাঝে-মাঝে আমার মনে জাগছে: যাকে আমরা প্রতিভা বলি, সে-বস্তুটি কী?’ বুদ্ধদেব যে সরাসরি উত্তর খুঁজে পেয়েছিলেন, তা নয়। বোধকরি, এসব প্রশ্নের কোনো সহজ উত্তর আমাদের কারওরই জানা নেই। অগত্যা বুদ্ধদেব বসুকে বলতে হয়েছিল, ‘তা [প্রতিভা] কি বুদ্ধিরই কোনো উচ্চতর স্তর, না কি বুদ্ধির সীমাতিক্রম্য কোনো বিশেষ ক্ষমতা, যার প্রয়োগের ক্ষেত্র এক ও অনন্য?’ তিনিও এই সব প্রশ্নের কোনো সুরাহা করতে না-পেরে প্রসঙ্গ পাল্টাতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে এটি ভাবা অনুচিত হবে যে, সেটি ছিল বুদ্ধদেবের অক্ষমতা। কেননা বুদ্ধদেবের ওই গুচ্ছ প্রশ্নের মধ্যেই উত্তরের একটি আভাস আমরা কিন্তু ঠিকই পেয়ে যায়।
২.
নিজের বিষয়ে কী অকপটেই-না সুধীন্দ্রনাথ দত্ত আমাদের জানিয়েছিলেন, ‘পিতৃদেব (হীরেন্দ্রনাথ দত্ত) ছিলেন নিশ্চিন্ত বৈদান্তিক; এবং আকৈশোর অদ্বৈতের অনির্বচনীয় আতিশয্যে উত্ত্যক্ত হয়ে, আমি...অল্প বয়সেই অনেকান্ত জড়বাদের আশ্রয় নিয়েছিলুম।’ শুধু তা-ই নয়, কবিতা রচনায় সোজাসুজি প্রেরণার গুরুত্বকে অস্বীকার করেছিলেন। কারণ তাঁর মনে হয়েছিল যে, প্রেরণার মধ্যে অলৌকিকের আভাস রয়েছে। ফলে, প্রেরণার পরিবর্তে তাঁর কাছে গুরুত্ব পেয়েছিল অভিজ্ঞতা। তিনি মনে করতেন যে কাব্যের সৃষ্টির উৎসে উক্তি ও উপলব্ধি একদম অবিচ্ছেদ্য। তিনি এ-ও বিশ্বাস করতেন, শুধু প্রতিভা থাকলেই কবিতা রচনা সম্ভব নয়, কেননা কাব্য হচ্ছে, তাঁর ভাষায়, ‘অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিরন্তর প্রযত্নের পুরস্কার।’ সেই পরিশ্রম ও নিরন্তর প্রযত্নের শৈল্পিক নমুনা আমরা সুধীন্দ্রনাথের কাব্যেই নানাভাবে দেখতে পাই―
‘অকস্মাৎ স্বপ্ন গেল টুটে। দেখিলাম ত্রস্ত চোখে
জনশূন্য রঙ্গালয়ে নির্বাপিত সমস্ত দেউটি,
নিস্তব্ধ সকল যন্ত্র, মঞ্চ-’পরে যবনিকা ঢাকা।
অলক্ষ্যে কখন পার্শ্ব হতে প্রেমিক-প্রেমিকা চলে
গেছে অমৃতসংকেতে। শান্তি, শান্তি, শান্তি চারিধারে!
কেবল অন্তর মোর উত্তরঙ্গ ক্ষুব্ধ হাহাকারে।’ (অর্কেস্ট্রা)
সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কাব্যরচনার নেপথ্যের শক্তি হিসেবে বুদ্ধদেব বসু এই কবির ‘জাগ্রত আত্মচেতনা’র কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘কবিতা লেখা ব্যাপারটা আসলে জড়ের সঙ্গে চৈতন্যের সংগ্রাম, ভাবনার সঙ্গে ভাষার ও ভাষার সঙ্গে ছন্দ, মিল, ধ্বনিমাধুর্যের এক বিরামহীন মল্লযুদ্ধ।’ সেই সঙ্গে তিনি চিহ্নিত করেছিলেন যে ‘বুদ্ধির আদেশ শিরোধার্য করে অতি ধীরে সাহিত্যের পথে’ সুধীন্দ্রনাথ দত্ত অগ্রসর হয়েছিলেন। এতে করে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে ঠিকই, ব্যক্তিগতভাবে সুধীন্দ্রনাথ পাঠকের কাছ থেকে সাড়া পেলেন কম। পাঠককে অগ্রাহ্য করবার সামর্থ্য অবশ্য তাঁর ছিল, যে-কারণে রবীন্দ্রনাথকে লেখা এক চিঠিতে তিনি বলতে পেরেছিলেন, ‘জনসাধারণের রুচির প্রতি আমার অশ্রদ্ধা এত গভীর যে তাদের নিন্দা-প্রশংসায় আমি উদাসীন।’ এই মনোভাবের জন্য সুধীন্দ্রনাথকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে, এখনো দিতে হচ্ছে।
৩.
কবির দিক থেকে পাঠকের রুচিকে অগ্রাহ্য করবার সামর্থ্য ও তাঁর আত্মচেতনাকে স্বীকার করে নিয়েও রবীন্দ্রনাথ এক চিঠিতে সুধীন্দ্রনাথকে লিখেছিলেন, ‘তোমার রচনায় যে বিশেষ আত্মকীয়তা দেখেছি, সেটাকে অনাদর করা যায় না।’ আর এরপরেই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘তোমার রচনাকে থিওরি দ্বারা পীড়ন না করে...সাংঘাতিক ঘনসন্নদ্ধ অলংকারের দ্বারা তার অঙ্গকে আচ্ছন্ন না করে তার দেহকে সহজ সজীবতার লাবণ্যে যদি প্রকাশ করো, তাহলে তোমার এই লেখাগুলি রসিক সমাজের উপাদেয় ভোজের আয়োজনে লাগবে।’
সুধীন্দ্রনাথকে এসবের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ আরও বলেছিলেন, ‘মানুষের মধ্যে যে লোকটা বুদ্ধিমান তার দাবির দিকে না তাকিয়ে যে লোকটা রসবিলাসী তাকে খুশি করবার চেষ্টা কোরো।’
এখানে বলে রাখা ভালো যে, রবীন্দ্রনাথের সেই উপদেশকে মান্যতা দেবার গরজ সুধীন্দ্রনাথ সেদিন দেখাননি। এখানেও হয়তো, তাঁর সেই জাগ্রত আত্মচেতনা, তাঁকে অন্যের উপদেশে পথ চলতে নিষেধ করেছিল।
৪.
সাহিত্যে প্রেরণার বদলে সুধীন্দ্রনাথ যেমন অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, ঠিক অনেকটা সেরকমই তিনি রবীন্দ্রনাথের বদলে টিএস এলিয়টের সাহিত্য-ভাবনাকেই খানিকটা শিরোধার্য করেছিলেন। সুধীন্দ্রনাথের নিজের বয়ানে দেখতে পাই, তিনি জানিয়েছিলেন, ‘এলিয়ট কবিকে ঘটক আখ্যা দিয়েছেন; এবং আমিও মনে করি যে ব্যক্তিগত মনীষায় জাতীয় মানস ফুটিয়ে তোলাই কবিজীবনের সার্থকতা।’
আর এলিয়টের প্রণোদনায় উজ্জীবিত হয়েই তিনি বলতে পেরেছিলেন, ‘বিষয় নির্বাচনে কবির স্বাধীনতা যদিও অনন্ত, তবু বিষয়বৈচিত্র্যের সঙ্গে কবিতার মৌলিকতা বা সাফল্য বিজড়িত নয়।’ এর অন্তর্নিহিত কারণ হিসেবে তাঁর মনে হয়েছিল বাংলা ‘কাব্যের মুখ্য সম্বল আবেগ; এবং আমাদের আবেগ সংখ্যা যেহেতু অত্যল্প, তাই প্রসঙ্গের দিক থেকে কবিতাবিশেষকে যত অপূর্বই দেখাক না কেন, ফলাফলের বিচারে তার মধ্যে একটা আনুপূর্বিকতা ধরা পড়বেই।’
সে-কারণেই তিনি ওই পথে চরতে চাননি। বরং তিন আজীবন এই বিশ্বাসে স্থিত ছিলেন যে, ‘ভাব ও ভাষার অবিচ্ছেদ্য সমীকরণই...কবির একমাত্র কর্তব্য।’ সেই আত্ম-উপলব্ধির জায়গা থেকেই তিনি লিখেছিলেন―
‘নির্বাপিত চক্ষে জাগে সংসারীর ভীরু কাণ্ডজ্ঞান।
ঊর্ধ্ববাহু আজ রিক্তাকাশে
যৌবনযজ্ঞানি মোর যে-অনাম দেবতার আশে,
জানি সে-অচেনা
কোনও দিন আমার হবে না;
তবুও নিশ্চয়
আমার উদ্যত অর্ঘ্য, প্রেয়সী, তোমার তরে নয়।’ (কস্মৈ দেবায়)
৫.
যিনি বিশ্বাস করতেন, ‘কবির পক্ষে সমাজকে বোঝা দরকার, কবিতার অস্থি-র ভেতরে থাকবে ইতিহাসচেতনা ও মর্মে থাকবে পরিচ্ছন্ন কালজ্ঞান’, সেই জীবনানন্দ দাশও মনে করতেন যে, সুধীন্দ্রনাথের ‘প্রতিভা এবং আন্তরিকতা এঁর নিজের জিনিশ। আর কিছু জানাবার নেই মেনে হয়তো তিনি আত্মজিজ্ঞাসায় চুপ হয়ে আছেন। এ রকম আত্মপ্রসাদহীন সংযম দেশি-বিদেশি খুব কম লেখকের বেলাই দেখা যায়। তিনি আধুনিক বাংলা কাব্যের সবচেয়ে নিরাশাকরোজ্জ্বল চেতনা।’
আর সেই সঙ্গে এটিও জীবনানন্দ স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে, ‘আধুনিক সাহিত্যের প্রায় বারো আনা তথাকথিত প্রাগ্রসর কবিতার চেয়ে সুধীন্দ্রনাথের কবিতা বেশি প্রবীণ।’ রবীন্দ্রনাথও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন যে, ‘সুধীন্দ্রনাথের বইখানিতে (‘স্বগত’) জমেছে তাঁর মনন-সাধনার ফসল।’ সেই মনন-সাধনার ফসল যেমন তাঁর কাব্যে, তেমনই তাঁর প্রবন্ধে স্বকীয়তায় স্থান করে নিতে পেরেছিল।
সম্ভবত সে-জন্যই রবীন্দ্রনাথ অমিয় চক্রবর্তীকে বলেছিলেন, ‘সুধীন্দ্র দেশ-বিদেশের নানা সাহিত্যক্ষেত্র ভ্রমণ করে বেড়াচ্ছেন—মনের অভিজ্ঞতা কেবলি বাড়িয়ে চলায় তাঁর শখ— সেই শখ নিছক আরামে মেটাবার নয় বলেই আমাদের দেশে মননভূমির ভবঘুরে এত অল্প।’
তাঁর সাহিত্যের প্রতি রবীন্দ্রনাথের এই মনোভাব সুধীন্দ্রনাথ জানতেন, বুঝতেও তো পারতেন। দুজনের সাহিত্যদৃষ্টির যে পার্থক্য, সেটাকে মান্যতা দিয়েই তিনি বলেছিলেন, ‘তাঁর (রবীন্দ্রনাথ) আর আমার ধর্ম আকাশ-পাতালের মতো পৃথক। তিনি সূর্য, উদয়াস্ত নির্বিকার: আমি অন্ধকারে বদ্ধমূল, আলোর দিকে উঠছি; সদ্গতির আগেই হয়তো তমসায় আবার তলাব।’
নিজের ভবিষ্যৎ যেন এই কবি দেখতে পেয়েছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও সাহিত্যিক জীবনের অন্তিমপর্বের দিকে যদি তাকাই, তাহলে সত্যিকার অর্থেই যে-কারও মনে হবে, এই সেই কবি, যিনি অন্ধকারে তলিয়ে গেলেন!
৬.
কবির কর্তব্য, তাঁর উদ্দেশ্য ও ব্রত সম্পর্কে সুধীন্দ্রনাথ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, ‘কবির কর্তব্য তার প্রতিদিনের বিশৃঙ্খল অভিজ্ঞতায় একটা পরম উপলব্ধির মাল্যরচনা। কবির উদ্দেশ্য তার চারপাশের অবচ্ছিন্ন জীবনের সঙ্গে প্রবহমান জীবনের সমীকরণ। কবির ব্রত তার স্বকীয় চৈতন্যের রসায়নে শুদ্ধ চৈতন্যের উদ্ভাবন।’
জীবনের শেষ দশটি বছরে এক ‘দশমী’ ছাড়া তাঁর আর কোনো নতুন কবিতার বই বের হয়নি, প্রবন্ধ-গ্রন্থও নয়। তাতে বাংলা সাহিত্যের এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো বটে, কিন্তু এই কবি তাঁর বিশ্বাস থেকে, নিজের স্বভাবধর্ম থেকে আমৃত্যু একচুলও নড়েননি।
৭.
২৫ জুন এই প্রতিভাবান সাহিত্যিকের প্রয়াণ দিবস। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
লেখক: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

বিশিষ্ট সাহিত্যিক-রাজনীতিবিদ এবং ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা হুমায়ুন কবির একবার বলেছিলেন, ‘প্রতিভার জন্মরহস্য কেউ বলতে পারে না। প্রতিভা তো সব সময়েই তা-ই যা প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যতিক্রম।’
২৭ জুন ২০২৩
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

বিশিষ্ট সাহিত্যিক-রাজনীতিবিদ এবং ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা হুমায়ুন কবির একবার বলেছিলেন, ‘প্রতিভার জন্মরহস্য কেউ বলতে পারে না। প্রতিভা তো সব সময়েই তা-ই যা প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যতিক্রম।’
২৭ জুন ২০২৩
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

বিশিষ্ট সাহিত্যিক-রাজনীতিবিদ এবং ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা হুমায়ুন কবির একবার বলেছিলেন, ‘প্রতিভার জন্মরহস্য কেউ বলতে পারে না। প্রতিভা তো সব সময়েই তা-ই যা প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যতিক্রম।’
২৭ জুন ২০২৩
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

বিশিষ্ট সাহিত্যিক-রাজনীতিবিদ এবং ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা হুমায়ুন কবির একবার বলেছিলেন, ‘প্রতিভার জন্মরহস্য কেউ বলতে পারে না। প্রতিভা তো সব সময়েই তা-ই যা প্রাকৃতিক নিয়মের ব্যতিক্রম।’
২৭ জুন ২০২৩
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে