নওশাদ জামিল

ঘুমের ভেতর থেকে উঠে এসে আমাকে বিড়বিড় করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শায়লা। মুখটি তার স্পষ্ট নয়। ছায়া ছায়া, কুয়াশাময়। মধ্য জানুয়ারির ভোররাত্রি। চারদিকে ঘন শীত, শিরশিরে কুয়াশা। প্রকৃতি থেকে বিদায় নেওয়ার আগে শীত প্রবল শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল; কুয়াশারাশি ঢাকার ওপর প্রবল ক্রোধে, কিংবা ক্ষোভে আছড়ে পড়েছিল। ভোরের হিমরাশি ঠেলে কুয়াশার ভেতর থেকে, ঘুমের ভেতর থেকে, স্বপ্নের ভেতর থেকে উঠে আসে শায়লা। অস্ফুট সুরে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। উত্তর পাবে না জেনেও বলে, ‘তোমার মেয়েটার কী নাম রেখেছ? দেখতে কার মতো হয়েছে? তোমার মতো, নাকি তরীর মতো?’
শীতের আলস্য দূরে ঠেলে হঠাৎ ঘুম ভাঙার পর বোঝার চেষ্টা করি—ঘটনাটি কি স্মৃতির, নাকি বিস্মৃতির? নাকি স্বপ্নের? বোধহয় স্মৃতি নয়, বিস্মৃতিও নয়। ছায়াই হবে মনে হয়। শায়লা তো আমার কাছে ছায়া হয়েই আছে দূরে। অনেক অনেক দূরে ওড়াউড়ি করে ছায়াগুলো। মাঝেমধ্যে অন্ধকার নামলে জেগে ওঠে, আবার মিলিয়েও যায়। ছায়া নয়, ভুল বললাম; শায়লা আমার কাছে আছে স্মৃতি হয়ে। স্মৃতির কাছে তো জবাব দেওয়ার কিছু নেই। শায়লাকে উত্তর দিই না।
কম্বলের ভেতর থেকে মাথাটা বের করে চারপাশ দেখি—ভোরের একটা মিহি সরু আলোর রেখা ঢুকেছে আমার ঘরে। পর্দা গলে ওই আলোর স্ফুরণ আমাকে স্পর্শ করে। শীতস্পর্শে মুখ থিরথির করে। আমি আবার মুখ ঢুকিয়ে নিই লেপের ভেতরে। বউকে হালকা করে জড়িয়ে ধরি। তারপর বউয়ের বুকে হাত রেখে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমের অতলে ডুবে যাই।
শায়লার কথা আমার বউ জানে না যে ঠিক তা নয়। তরীর সঙ্গে বিয়ের অনেক আগেই সব বলেছিলাম। তরী সব শুনে, সব জেনে আমাকে আশ্রয় দিয়েছিল; ভালোবেসে কাছে ডেকে নিয়েছিল। সে বলেছিল, ‘সময় সবকিছুকে ম্লান করে দেয়।’
তরীর কথাই ঠিক। সময় ম্লান করে দিয়েছিল শায়লাকে, আমাকে ভুলিয়েও দিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পরে হঠাৎ কেন শায়লার কথা মনে বাজল? মনের ভেতর খচখচ করে উঠল, কেঁপে উঠল হৃদয়ের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সেই মায়াহরিণ।
বছর দুয়েক আগে নিঝুম দ্বীপ বেড়াতে গিয়ে কেওড়াবনের ফাঁকে ফাঁকে অনেক হরিণ দেখেছিলাম, অনেক কাছ থেকে হরিণের চোখ দেখেছিলাম, তখন শায়লার কথা মনে পড়েছিল। তার হরিণী চোখ মনে পড়েছিল। আমি শায়লার প্রেমে পড়েছিলাম তার গভীর ঘনকালো, নিবিড় চোখ দেখেই। মেয়েদের চোখ যে এত সুন্দর, এত আকর্ষণীয়, এত মোহময় হতে পারে—আমি আগে তা বুঝিনি। একদিন, সম্ভবত সেদিন কী একটা আবৃত্তি উৎসব ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই সেজেগুজে চোখে কাজল দিয়ে এসেছিল সে। শাড়ি পরেছিল। খোঁপায় ফুল ছিল কি না মনে নেই। উপলক্ষ ছাড়াই মাঝেমধ্যেই খোঁপায় ফুল গুঁজে দিত, যত্ন করে পরিপাটি হয়ে সাজত। সাধারণত যেসব মেয়ে খুব পরিপাটি করে সাজে, তারা কথা বলে মেপে মেপে, ধীরে ধীরে। শায়লা তেমন নয়। কথা বলতে বলতে হাসে, হাসতে হাসতে কথা বলে। কথায় রাখঢাকের ব্যাপার নেই। ফলে অল্পতেই তার সঙ্গে আমার ভাব জমে গিয়েছিল, গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল।
শায়লার কথা যখন ভাবি, মনে করি, তখন কীভাবে যেন আমার ভেতরটা এলোমেলো হয়ে যায়; তছনছ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর কেন এমন হয়, বুঝতে পারি না। তবে এলোমেলো ভাব কেটেও যায় দ্রুত। তারপর ফিরে আসি নিজের জগতে। ফিরে আসি ঘরে, সংসারে। সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখি তরী ড্রয়িংরুমে বসে একমনে টিভি দেখছে। ইংরেজি একটা মুভি দেখছে। ড্রয়িংরুমে গিয়ে তার পাশে বসি। তারপর তরীকে জড়িয়ে ধরে চুমো দিয়ে বলি, ‘আই লাভ ইউ।’
‘হঠাৎ এত পিরিত উঠল কেন?’
‘হঠাৎ হবে কেন?’
সে বলে, ‘প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন না। আগে উত্তর, পরে প্রশ্ন।’
বউয়ের কথায় আমার খানিকটা অভিমান হয়। অভিমানের সুরে বলি, ‘তুমি আমাকে ভালোবাসো না!’ এ কথা শুনে বউ হাসে মৃদু মৃদু। চোখেমুখে হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘আহা! আমি তোমাকে তো রাগানোর জন্য বলেছিলাম!’
‘রাগ না, ছাই! তিয়ার জন্মের পর তুমি আমাকে ভুলেই গেছ!’
‘তোমাকে ভুলব কেন! আজব কথা বলো! ঘুমাচ্ছিলা তো, তাই তোমাকে ডাকিনি।’
আমাদের দুই বছরের কন্যা তিয়া। হেলেদুলে, টলমল করে হাঁটতে পারে ও। যখন হাঁটে, কিংবা যখন ওর দুই হাত ধরে হাঁটানোর চেষ্টা করি, তখন ওকে আমার পুতুলই মনে হয়। ঠিক যেন জাপানি পুতুল। আমার বুকটা ভরে ওঠে আনন্দে, উচ্ছ্বাসে। তিয়ার জন্মের পর থেকে তরী সারাক্ষণ বাচ্চাকে নিয়ে মেতে থাকে। তিয়াকে নিয়ে ডুবে থাকে। যত্ন করে কুসুম গরম পানিতে গোসল করায়, লোশন মাখিয়ে দেয় ওর কোমল ত্বকে। মাঝেমধ্যে গান শোনায়। ও কিছু বোঝে কি না কে জানে। তবে হাততালি দিয়ে, খুশিতে আবোল-তাবোল শব্দ করে। এতেই তরী খুব খুশি হয়। তখন চুকচুক করে চুমো দেয় তিয়ার মখমল গালে। আমার খুব ভালো লাগে মা-মেয়ের এই চিরন্তন ভালোবাসায়।
সকালে নাশতা করে মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করি কিছুক্ষণ। তিয়াকে আদর করতে করতে হঠাৎ মনে পড়ে শায়লার কথা। শায়লাও কি তবে আমার মেয়ের মা হতে চেয়েছিল?
ছুটির দিন থাকায় আমি ঘুম থেকে উঠি বেলা করে। তারপর কিছুক্ষণ তরীর সঙ্গে সাংসারিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। জানতে চাই, ঘরে বাজার আছে কি না। বাজারের কথা শুনে তরী খুশি হয়। কেননা সাধারণত সকালে আমি সংসার কিংবা বাজারবিষয়ক কোনো কথা বলি না। সাংসারিক কথায় খুশি হয়ে সে বলে, ‘বাজারে যেতে হবে না।’ বউয়ের কথায় আমিও খুশি হই খুব।
খুশি প্রকাশ করে তাকে বলি, ‘দুপুরে কী রান্না করবে? গরুর মাংস-খিচুড়ি হবে নাকি?’
‘নিশ্চয় হবে। ফ্রিজে মাংস আছে। তবে রান্নাটা করতে হবে তোমাকেই।’
‘মানে?’
‘মানে আর কী, তুমি রান্না করবে।’
‘আমি একা রান্না করতে পারব না। তুমি যদি হেল্প করো, তাহলে রান্না করতে পারি।’
শেষমেশ আমাদের দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি হয়। আমি গরুর মাংস রান্না করব, খিচুড়ি রান্না করবে তরী। রান্না করার বিষয়ে তরী খুব উদাসীন। রান্নাটা এনজয় করে না সে। তবুও আমাকে খুশি করার জন্য মাঝেমধ্যে রান্না করে। আমাদের অলিখিত চুক্তি এই যে ছুটির দিনে আমরা দুপুরে রান্না করব। একে অপরকে হেল্প করব। দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি নেওয়ার আগে আমি আর তরী পত্রিকা পড়তে পড়তে গল্প করি। সমসাময়িক রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য নিয়ে আলাপ করি। তারপর এক ফাঁকে তরীকে বলি শায়লার কথা। বলি রাতের ঘটনা। আমার কথা শুনে থ হয়ে গেল সে। কিছুটা রাগত স্বরে বলে, ‘শায়লার সঙ্গে দেখা হয়েছে আমাকে আগে বলোনি কেন?’
‘তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।’
‘না, তোমার ভুলে যাওয়ার তো কথা নয়! আমাকে মিথ্যা কথা বলতেছ!’
‘তোমাকে মিথ্যা বলব কেন! আমি তো মিথ্যা বলি না, এটা তো তুমি জানোই। এখন মনে পড়ল তাই সঙ্গে সঙ্গে বললাম।’
শায়লার সঙ্গে কী কথা হয়েছিল, কোথায় দেখা হয়েছিল, কবে দেখা হয়েছিল—তরীর চোখে কোনো কৌতূহল নেই। কিছুই বলে না সে। মুখ অন্ধকার করে টিভি দেখতে বসে, কিছুক্ষণ পরে সিনেমায় ডুব মারে। দুপুরের রান্নার কথাও ওঠায় না। কারণটা যে শায়লা তা আর বোঝার বাকি নেই। পরিস্থিতি মাঝারি পর্যায়ের, অভিমানের দিকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে গলা উঁচু করে চিল্লাচিল্লি করবে। ১০ মিনিটের একটা ঝড় বইবে। তারপর সব স্বাভাবিক। আপাতত আবহ চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার লক্ষণ নেই। মাঝারি পর্যায়েই থাকবে।
তরীর সঙ্গে আমার তেমন একটা ঝগড়া হয় না, কথা-কাটাকাটিও হয় না। তবে কখনো যদি সে আমার ওপর রাগ করে, তখন মুখের ওপর চিল্লাচিল্লি করে। এখন ওই অবস্থা হবে কি না বুঝতে পারি না। ফলে পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি। কিন্তু কিছুই বলি না। কেননা আমি এখন কিছু বলতে গেলেই ঝড় ওঠার পূর্বাভাব মিলবে। বিপদসংকেত বাড়বে। তাই চুপচাপ হয়ে আমি তরীর সঙ্গে টিভি দেখি কিছুক্ষণ। তারপর আমাদের রুমে ঢুকে তিয়াকে আদর করি। বুয়া ওকে দুধ গরম করে দিয়েছে। দুধ খেতে খেতে রাজকন্যা ঘুমিয়ে পড়েছে।
কিছুক্ষণ পর কাজের মেয়েটিকে ডেকে বলি কফি বানাতে। কফির কথা বলে আমার রুমে ঢুকে আমি কী করব ভাবি। খাটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ধ্যানের মতো পড়ে থাকি, ঠিক যেন তখনই আমার চোখে ভেসে ওঠে শায়লার হাসি। কতদিন পর দেখলাম শায়লাকে, কতদিন পর! আমার ভেতরটা হাহাকার করে, মনটা কেমন করে। বুঝতে পারি না কেন এমন করে। শায়লাকে তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। প্রায় আট বছর আগের স্মৃতি কেন মনে পড়ল? কোথাও কি দেখেছি শায়লাকে, নাকি শায়লার মতো কাউকে দেখেছিলাম!
সপ্তাহখানেক আগের ঘটনা। যানজটে গাড়ি থেমে ছিল অনেকক্ষণ, পান্থপথ সিগন্যালে। গাড়ির গ্লাস নামিয়ে সিগারেটের ধোয়া ছাড়ি অন্যমনস্ক হয়ে। হঠাৎ লক্ষ করি, চমকে উঠি—শায়লা দাঁড়িয়ে পথের পাশে। ঠিক দাঁড়িয়ে নয়, আমার সামনে দিয়ে, গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল সে। শায়লা বলে চিৎকার করে উঠেছিলাম। দুই-একবার ডাক দিয়েছিলাম। মেয়েটি আমাকে ফিরেও তাকায়নি। ব্যস, এইটুকু। মেয়েটি শায়লাই ছিল নাকি কে জানে। নাকি শায়লার মতো অন্য কেউ? শায়লার কথা যত ভাবি, মন তত উথালপাথাল করে।
কাজের মেয়ে কফি দিয়ে যায়। কফিতে চুমুক দিতে দিতে ভাবি, শায়লাকে নিয়ে একটি গল্প লিখতে হবে। কিন্তু কীভাবে লিখব, কোন জায়গা থেকে শুরু করব—বুঝতে পারি না। মাথাটা হঠাৎ জট পাকিয়ে ওঠে, দুমড়েমুচড়ে জেগে ওঠে স্মৃতিগুলো।
‘তুমি এখনো শুয়ে আছ! আমি তো খিচুড়ি রান্না করছি, মাংস রান্না করবা কখন?’—বউয়ের কথা শুনে যেন জ্ঞান ফেরে আমার। বউকে বলি, ‘ঠিক আছে। রান্না করব।’
আলস্য ঝেড়ে ফ্রিজ থেকে মাংস বের করতে হবে। মাংস অনেকক্ষণ পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। আমি ঝটপট উঠি বিছানা থেকে। ডিপফ্রিজের ডানা খুলতেই আমার চোখের পাতায় যেন একটা বিস্ফোরণ ঘটল। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎচমক খেলল সারা শরীরে। তোলপাড় করে অচেনা এক কালো সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ল মনের বালুকাবেলায়। কয়েকটি বড় বড় মাংসের পোঁটলা। তাতে হালকা কুয়াশা জড়িয়ে। ফ্রিজের ডানা খুলতেই কুয়াশারা জেগে উঠল, চোখের পাতা নড়েচড়ে উঠল। পোঁটলাগুলোর একটিতে পড়ে আছে হরিণের মাংস, যেন ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার চোখ যেন ছানাবড়া। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখি—মাংসগুলো সতেজ, হিমশীতল বরফে ঢাকা।
সপ্তাহখানেক আগে খুলনা থেকে বেড়াতে এসেছিল আমার বন্ধু সজীব। সে একবার কথাচ্ছলে বলেছিল, ‘হরিণের মাংস আর রেড ওয়াইন দারুণ হবে দোস্ত!’
একদিন সজীব প্রায় পাঁচ কেজি মাংস নিয়ে উপস্থিত হয় বাসায়। বন্ধুকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এই কাজ করে সে। কিন্তু সারপ্রাইজ তো দূরের কথা, হরিণের মাংস শুনেই চিল্লাচিল্লি শুরু করে তরী। বন্ধুর সামনেই খেপে যায়। রেগে গিয়ে তরী বলে, ‘আমি এই মাংস খাব না। তোমরাও খেতে পারবে না!’ অগত্যা মাংসগুলোর স্থান হয় ডিপফ্রিজের এক কোনায়। মাংস বের করতে দেরি হচ্ছে দেখে তরী বলে, ‘ওইগুলো হরিণের মাংস, গরুর মাংস ওপরের তাকে।’ তরীর কথায় আমি যেন চমকে উঠি, বিহ্বল হয়ে পড়ি।
সজীব যেদিন এসেছিল, মাংস দেখে আমার ভেতরটা কেঁপে উঠেছিল। দারুণ সারপ্রাইজড হয়েছিলাম। কেন? হরিণের মাংস তো আমার পছন্দ না। একবার ভুল করে খেতে গিয়ে পরে খারাপই লেগেছিল। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে নয়, পশুপ্রেমের জন্যও নয়, অন্য কিছু হতে পারে বোধহয়। সজীব দুই দিন থেকে আবার ফিরে গেছে খুলনায়, তার কর্মস্থলে। বাসায় আমরা জম্পেশ আড্ডা দিয়েছি। প্রাণখুলে হেসেছি, অনেক গল্প করেছি। আড্ডা দিতে দিতে, ওয়াইনে চুমুক দিতে দিতে সজীব বলে, ‘দোস্ত! শায়লার কী খবর!’ শায়লার কথা শুনে যেন লাফ দিয়ে উঠি। ভাগ্য ভালো যে তখন তরী ছিল না আমাদের আড্ডায়। নেশাতুর কণ্ঠে আমি বলি, ‘শায়লা! আমার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই দোস্ত!’
আড্ডায় শায়লাকে নিয়ে আমাদের কথা আর এগোয়নি। আমরা আবার নতুন পেগ শুরু করি। কয়েক চুমুক দিয়েই আনন্দে সজীব গান শুরু করে, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি!’
তরী মাংস রান্না করার সব মসলা প্রস্তুত করে রেখেছে। আমার কাজ শুধু পরিমাণমতো মসলা দিয়ে মাংস মাখিয়ে উনুনে বসিয়ে দেয়া। যখন চুলায় মাংস বসিয়েছি, বউ তখন পাশে দাঁড়িয়ে। আগুনের লেলিহান শিখায়, মসলার রসায়নে একটু পরই লাল হয়ে ওঠে মাংস। কিছুক্ষণ পর ঢাকনা খুলতেই ওঠে ধূমায়িত সুঘ্রাণ। ছড়িয়ে পড়ে ঘরময়। বউ আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ঢেকে রাখো!’

ঘুমের ভেতর থেকে উঠে এসে আমাকে বিড়বিড় করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শায়লা। মুখটি তার স্পষ্ট নয়। ছায়া ছায়া, কুয়াশাময়। মধ্য জানুয়ারির ভোররাত্রি। চারদিকে ঘন শীত, শিরশিরে কুয়াশা। প্রকৃতি থেকে বিদায় নেওয়ার আগে শীত প্রবল শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল; কুয়াশারাশি ঢাকার ওপর প্রবল ক্রোধে, কিংবা ক্ষোভে আছড়ে পড়েছিল। ভোরের হিমরাশি ঠেলে কুয়াশার ভেতর থেকে, ঘুমের ভেতর থেকে, স্বপ্নের ভেতর থেকে উঠে আসে শায়লা। অস্ফুট সুরে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। উত্তর পাবে না জেনেও বলে, ‘তোমার মেয়েটার কী নাম রেখেছ? দেখতে কার মতো হয়েছে? তোমার মতো, নাকি তরীর মতো?’
শীতের আলস্য দূরে ঠেলে হঠাৎ ঘুম ভাঙার পর বোঝার চেষ্টা করি—ঘটনাটি কি স্মৃতির, নাকি বিস্মৃতির? নাকি স্বপ্নের? বোধহয় স্মৃতি নয়, বিস্মৃতিও নয়। ছায়াই হবে মনে হয়। শায়লা তো আমার কাছে ছায়া হয়েই আছে দূরে। অনেক অনেক দূরে ওড়াউড়ি করে ছায়াগুলো। মাঝেমধ্যে অন্ধকার নামলে জেগে ওঠে, আবার মিলিয়েও যায়। ছায়া নয়, ভুল বললাম; শায়লা আমার কাছে আছে স্মৃতি হয়ে। স্মৃতির কাছে তো জবাব দেওয়ার কিছু নেই। শায়লাকে উত্তর দিই না।
কম্বলের ভেতর থেকে মাথাটা বের করে চারপাশ দেখি—ভোরের একটা মিহি সরু আলোর রেখা ঢুকেছে আমার ঘরে। পর্দা গলে ওই আলোর স্ফুরণ আমাকে স্পর্শ করে। শীতস্পর্শে মুখ থিরথির করে। আমি আবার মুখ ঢুকিয়ে নিই লেপের ভেতরে। বউকে হালকা করে জড়িয়ে ধরি। তারপর বউয়ের বুকে হাত রেখে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমের অতলে ডুবে যাই।
শায়লার কথা আমার বউ জানে না যে ঠিক তা নয়। তরীর সঙ্গে বিয়ের অনেক আগেই সব বলেছিলাম। তরী সব শুনে, সব জেনে আমাকে আশ্রয় দিয়েছিল; ভালোবেসে কাছে ডেকে নিয়েছিল। সে বলেছিল, ‘সময় সবকিছুকে ম্লান করে দেয়।’
তরীর কথাই ঠিক। সময় ম্লান করে দিয়েছিল শায়লাকে, আমাকে ভুলিয়েও দিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পরে হঠাৎ কেন শায়লার কথা মনে বাজল? মনের ভেতর খচখচ করে উঠল, কেঁপে উঠল হৃদয়ের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সেই মায়াহরিণ।
বছর দুয়েক আগে নিঝুম দ্বীপ বেড়াতে গিয়ে কেওড়াবনের ফাঁকে ফাঁকে অনেক হরিণ দেখেছিলাম, অনেক কাছ থেকে হরিণের চোখ দেখেছিলাম, তখন শায়লার কথা মনে পড়েছিল। তার হরিণী চোখ মনে পড়েছিল। আমি শায়লার প্রেমে পড়েছিলাম তার গভীর ঘনকালো, নিবিড় চোখ দেখেই। মেয়েদের চোখ যে এত সুন্দর, এত আকর্ষণীয়, এত মোহময় হতে পারে—আমি আগে তা বুঝিনি। একদিন, সম্ভবত সেদিন কী একটা আবৃত্তি উৎসব ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই সেজেগুজে চোখে কাজল দিয়ে এসেছিল সে। শাড়ি পরেছিল। খোঁপায় ফুল ছিল কি না মনে নেই। উপলক্ষ ছাড়াই মাঝেমধ্যেই খোঁপায় ফুল গুঁজে দিত, যত্ন করে পরিপাটি হয়ে সাজত। সাধারণত যেসব মেয়ে খুব পরিপাটি করে সাজে, তারা কথা বলে মেপে মেপে, ধীরে ধীরে। শায়লা তেমন নয়। কথা বলতে বলতে হাসে, হাসতে হাসতে কথা বলে। কথায় রাখঢাকের ব্যাপার নেই। ফলে অল্পতেই তার সঙ্গে আমার ভাব জমে গিয়েছিল, গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল।
শায়লার কথা যখন ভাবি, মনে করি, তখন কীভাবে যেন আমার ভেতরটা এলোমেলো হয়ে যায়; তছনছ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর কেন এমন হয়, বুঝতে পারি না। তবে এলোমেলো ভাব কেটেও যায় দ্রুত। তারপর ফিরে আসি নিজের জগতে। ফিরে আসি ঘরে, সংসারে। সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখি তরী ড্রয়িংরুমে বসে একমনে টিভি দেখছে। ইংরেজি একটা মুভি দেখছে। ড্রয়িংরুমে গিয়ে তার পাশে বসি। তারপর তরীকে জড়িয়ে ধরে চুমো দিয়ে বলি, ‘আই লাভ ইউ।’
‘হঠাৎ এত পিরিত উঠল কেন?’
‘হঠাৎ হবে কেন?’
সে বলে, ‘প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন না। আগে উত্তর, পরে প্রশ্ন।’
বউয়ের কথায় আমার খানিকটা অভিমান হয়। অভিমানের সুরে বলি, ‘তুমি আমাকে ভালোবাসো না!’ এ কথা শুনে বউ হাসে মৃদু মৃদু। চোখেমুখে হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘আহা! আমি তোমাকে তো রাগানোর জন্য বলেছিলাম!’
‘রাগ না, ছাই! তিয়ার জন্মের পর তুমি আমাকে ভুলেই গেছ!’
‘তোমাকে ভুলব কেন! আজব কথা বলো! ঘুমাচ্ছিলা তো, তাই তোমাকে ডাকিনি।’
আমাদের দুই বছরের কন্যা তিয়া। হেলেদুলে, টলমল করে হাঁটতে পারে ও। যখন হাঁটে, কিংবা যখন ওর দুই হাত ধরে হাঁটানোর চেষ্টা করি, তখন ওকে আমার পুতুলই মনে হয়। ঠিক যেন জাপানি পুতুল। আমার বুকটা ভরে ওঠে আনন্দে, উচ্ছ্বাসে। তিয়ার জন্মের পর থেকে তরী সারাক্ষণ বাচ্চাকে নিয়ে মেতে থাকে। তিয়াকে নিয়ে ডুবে থাকে। যত্ন করে কুসুম গরম পানিতে গোসল করায়, লোশন মাখিয়ে দেয় ওর কোমল ত্বকে। মাঝেমধ্যে গান শোনায়। ও কিছু বোঝে কি না কে জানে। তবে হাততালি দিয়ে, খুশিতে আবোল-তাবোল শব্দ করে। এতেই তরী খুব খুশি হয়। তখন চুকচুক করে চুমো দেয় তিয়ার মখমল গালে। আমার খুব ভালো লাগে মা-মেয়ের এই চিরন্তন ভালোবাসায়।
সকালে নাশতা করে মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করি কিছুক্ষণ। তিয়াকে আদর করতে করতে হঠাৎ মনে পড়ে শায়লার কথা। শায়লাও কি তবে আমার মেয়ের মা হতে চেয়েছিল?
ছুটির দিন থাকায় আমি ঘুম থেকে উঠি বেলা করে। তারপর কিছুক্ষণ তরীর সঙ্গে সাংসারিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। জানতে চাই, ঘরে বাজার আছে কি না। বাজারের কথা শুনে তরী খুশি হয়। কেননা সাধারণত সকালে আমি সংসার কিংবা বাজারবিষয়ক কোনো কথা বলি না। সাংসারিক কথায় খুশি হয়ে সে বলে, ‘বাজারে যেতে হবে না।’ বউয়ের কথায় আমিও খুশি হই খুব।
খুশি প্রকাশ করে তাকে বলি, ‘দুপুরে কী রান্না করবে? গরুর মাংস-খিচুড়ি হবে নাকি?’
‘নিশ্চয় হবে। ফ্রিজে মাংস আছে। তবে রান্নাটা করতে হবে তোমাকেই।’
‘মানে?’
‘মানে আর কী, তুমি রান্না করবে।’
‘আমি একা রান্না করতে পারব না। তুমি যদি হেল্প করো, তাহলে রান্না করতে পারি।’
শেষমেশ আমাদের দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি হয়। আমি গরুর মাংস রান্না করব, খিচুড়ি রান্না করবে তরী। রান্না করার বিষয়ে তরী খুব উদাসীন। রান্নাটা এনজয় করে না সে। তবুও আমাকে খুশি করার জন্য মাঝেমধ্যে রান্না করে। আমাদের অলিখিত চুক্তি এই যে ছুটির দিনে আমরা দুপুরে রান্না করব। একে অপরকে হেল্প করব। দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি নেওয়ার আগে আমি আর তরী পত্রিকা পড়তে পড়তে গল্প করি। সমসাময়িক রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য নিয়ে আলাপ করি। তারপর এক ফাঁকে তরীকে বলি শায়লার কথা। বলি রাতের ঘটনা। আমার কথা শুনে থ হয়ে গেল সে। কিছুটা রাগত স্বরে বলে, ‘শায়লার সঙ্গে দেখা হয়েছে আমাকে আগে বলোনি কেন?’
‘তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।’
‘না, তোমার ভুলে যাওয়ার তো কথা নয়! আমাকে মিথ্যা কথা বলতেছ!’
‘তোমাকে মিথ্যা বলব কেন! আমি তো মিথ্যা বলি না, এটা তো তুমি জানোই। এখন মনে পড়ল তাই সঙ্গে সঙ্গে বললাম।’
শায়লার সঙ্গে কী কথা হয়েছিল, কোথায় দেখা হয়েছিল, কবে দেখা হয়েছিল—তরীর চোখে কোনো কৌতূহল নেই। কিছুই বলে না সে। মুখ অন্ধকার করে টিভি দেখতে বসে, কিছুক্ষণ পরে সিনেমায় ডুব মারে। দুপুরের রান্নার কথাও ওঠায় না। কারণটা যে শায়লা তা আর বোঝার বাকি নেই। পরিস্থিতি মাঝারি পর্যায়ের, অভিমানের দিকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে গলা উঁচু করে চিল্লাচিল্লি করবে। ১০ মিনিটের একটা ঝড় বইবে। তারপর সব স্বাভাবিক। আপাতত আবহ চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার লক্ষণ নেই। মাঝারি পর্যায়েই থাকবে।
তরীর সঙ্গে আমার তেমন একটা ঝগড়া হয় না, কথা-কাটাকাটিও হয় না। তবে কখনো যদি সে আমার ওপর রাগ করে, তখন মুখের ওপর চিল্লাচিল্লি করে। এখন ওই অবস্থা হবে কি না বুঝতে পারি না। ফলে পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি। কিন্তু কিছুই বলি না। কেননা আমি এখন কিছু বলতে গেলেই ঝড় ওঠার পূর্বাভাব মিলবে। বিপদসংকেত বাড়বে। তাই চুপচাপ হয়ে আমি তরীর সঙ্গে টিভি দেখি কিছুক্ষণ। তারপর আমাদের রুমে ঢুকে তিয়াকে আদর করি। বুয়া ওকে দুধ গরম করে দিয়েছে। দুধ খেতে খেতে রাজকন্যা ঘুমিয়ে পড়েছে।
কিছুক্ষণ পর কাজের মেয়েটিকে ডেকে বলি কফি বানাতে। কফির কথা বলে আমার রুমে ঢুকে আমি কী করব ভাবি। খাটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ধ্যানের মতো পড়ে থাকি, ঠিক যেন তখনই আমার চোখে ভেসে ওঠে শায়লার হাসি। কতদিন পর দেখলাম শায়লাকে, কতদিন পর! আমার ভেতরটা হাহাকার করে, মনটা কেমন করে। বুঝতে পারি না কেন এমন করে। শায়লাকে তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। প্রায় আট বছর আগের স্মৃতি কেন মনে পড়ল? কোথাও কি দেখেছি শায়লাকে, নাকি শায়লার মতো কাউকে দেখেছিলাম!
সপ্তাহখানেক আগের ঘটনা। যানজটে গাড়ি থেমে ছিল অনেকক্ষণ, পান্থপথ সিগন্যালে। গাড়ির গ্লাস নামিয়ে সিগারেটের ধোয়া ছাড়ি অন্যমনস্ক হয়ে। হঠাৎ লক্ষ করি, চমকে উঠি—শায়লা দাঁড়িয়ে পথের পাশে। ঠিক দাঁড়িয়ে নয়, আমার সামনে দিয়ে, গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল সে। শায়লা বলে চিৎকার করে উঠেছিলাম। দুই-একবার ডাক দিয়েছিলাম। মেয়েটি আমাকে ফিরেও তাকায়নি। ব্যস, এইটুকু। মেয়েটি শায়লাই ছিল নাকি কে জানে। নাকি শায়লার মতো অন্য কেউ? শায়লার কথা যত ভাবি, মন তত উথালপাথাল করে।
কাজের মেয়ে কফি দিয়ে যায়। কফিতে চুমুক দিতে দিতে ভাবি, শায়লাকে নিয়ে একটি গল্প লিখতে হবে। কিন্তু কীভাবে লিখব, কোন জায়গা থেকে শুরু করব—বুঝতে পারি না। মাথাটা হঠাৎ জট পাকিয়ে ওঠে, দুমড়েমুচড়ে জেগে ওঠে স্মৃতিগুলো।
‘তুমি এখনো শুয়ে আছ! আমি তো খিচুড়ি রান্না করছি, মাংস রান্না করবা কখন?’—বউয়ের কথা শুনে যেন জ্ঞান ফেরে আমার। বউকে বলি, ‘ঠিক আছে। রান্না করব।’
আলস্য ঝেড়ে ফ্রিজ থেকে মাংস বের করতে হবে। মাংস অনেকক্ষণ পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। আমি ঝটপট উঠি বিছানা থেকে। ডিপফ্রিজের ডানা খুলতেই আমার চোখের পাতায় যেন একটা বিস্ফোরণ ঘটল। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎচমক খেলল সারা শরীরে। তোলপাড় করে অচেনা এক কালো সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ল মনের বালুকাবেলায়। কয়েকটি বড় বড় মাংসের পোঁটলা। তাতে হালকা কুয়াশা জড়িয়ে। ফ্রিজের ডানা খুলতেই কুয়াশারা জেগে উঠল, চোখের পাতা নড়েচড়ে উঠল। পোঁটলাগুলোর একটিতে পড়ে আছে হরিণের মাংস, যেন ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার চোখ যেন ছানাবড়া। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখি—মাংসগুলো সতেজ, হিমশীতল বরফে ঢাকা।
সপ্তাহখানেক আগে খুলনা থেকে বেড়াতে এসেছিল আমার বন্ধু সজীব। সে একবার কথাচ্ছলে বলেছিল, ‘হরিণের মাংস আর রেড ওয়াইন দারুণ হবে দোস্ত!’
একদিন সজীব প্রায় পাঁচ কেজি মাংস নিয়ে উপস্থিত হয় বাসায়। বন্ধুকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এই কাজ করে সে। কিন্তু সারপ্রাইজ তো দূরের কথা, হরিণের মাংস শুনেই চিল্লাচিল্লি শুরু করে তরী। বন্ধুর সামনেই খেপে যায়। রেগে গিয়ে তরী বলে, ‘আমি এই মাংস খাব না। তোমরাও খেতে পারবে না!’ অগত্যা মাংসগুলোর স্থান হয় ডিপফ্রিজের এক কোনায়। মাংস বের করতে দেরি হচ্ছে দেখে তরী বলে, ‘ওইগুলো হরিণের মাংস, গরুর মাংস ওপরের তাকে।’ তরীর কথায় আমি যেন চমকে উঠি, বিহ্বল হয়ে পড়ি।
সজীব যেদিন এসেছিল, মাংস দেখে আমার ভেতরটা কেঁপে উঠেছিল। দারুণ সারপ্রাইজড হয়েছিলাম। কেন? হরিণের মাংস তো আমার পছন্দ না। একবার ভুল করে খেতে গিয়ে পরে খারাপই লেগেছিল। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে নয়, পশুপ্রেমের জন্যও নয়, অন্য কিছু হতে পারে বোধহয়। সজীব দুই দিন থেকে আবার ফিরে গেছে খুলনায়, তার কর্মস্থলে। বাসায় আমরা জম্পেশ আড্ডা দিয়েছি। প্রাণখুলে হেসেছি, অনেক গল্প করেছি। আড্ডা দিতে দিতে, ওয়াইনে চুমুক দিতে দিতে সজীব বলে, ‘দোস্ত! শায়লার কী খবর!’ শায়লার কথা শুনে যেন লাফ দিয়ে উঠি। ভাগ্য ভালো যে তখন তরী ছিল না আমাদের আড্ডায়। নেশাতুর কণ্ঠে আমি বলি, ‘শায়লা! আমার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই দোস্ত!’
আড্ডায় শায়লাকে নিয়ে আমাদের কথা আর এগোয়নি। আমরা আবার নতুন পেগ শুরু করি। কয়েক চুমুক দিয়েই আনন্দে সজীব গান শুরু করে, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি!’
তরী মাংস রান্না করার সব মসলা প্রস্তুত করে রেখেছে। আমার কাজ শুধু পরিমাণমতো মসলা দিয়ে মাংস মাখিয়ে উনুনে বসিয়ে দেয়া। যখন চুলায় মাংস বসিয়েছি, বউ তখন পাশে দাঁড়িয়ে। আগুনের লেলিহান শিখায়, মসলার রসায়নে একটু পরই লাল হয়ে ওঠে মাংস। কিছুক্ষণ পর ঢাকনা খুলতেই ওঠে ধূমায়িত সুঘ্রাণ। ছড়িয়ে পড়ে ঘরময়। বউ আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ঢেকে রাখো!’
নওশাদ জামিল

ঘুমের ভেতর থেকে উঠে এসে আমাকে বিড়বিড় করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শায়লা। মুখটি তার স্পষ্ট নয়। ছায়া ছায়া, কুয়াশাময়। মধ্য জানুয়ারির ভোররাত্রি। চারদিকে ঘন শীত, শিরশিরে কুয়াশা। প্রকৃতি থেকে বিদায় নেওয়ার আগে শীত প্রবল শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল; কুয়াশারাশি ঢাকার ওপর প্রবল ক্রোধে, কিংবা ক্ষোভে আছড়ে পড়েছিল। ভোরের হিমরাশি ঠেলে কুয়াশার ভেতর থেকে, ঘুমের ভেতর থেকে, স্বপ্নের ভেতর থেকে উঠে আসে শায়লা। অস্ফুট সুরে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। উত্তর পাবে না জেনেও বলে, ‘তোমার মেয়েটার কী নাম রেখেছ? দেখতে কার মতো হয়েছে? তোমার মতো, নাকি তরীর মতো?’
শীতের আলস্য দূরে ঠেলে হঠাৎ ঘুম ভাঙার পর বোঝার চেষ্টা করি—ঘটনাটি কি স্মৃতির, নাকি বিস্মৃতির? নাকি স্বপ্নের? বোধহয় স্মৃতি নয়, বিস্মৃতিও নয়। ছায়াই হবে মনে হয়। শায়লা তো আমার কাছে ছায়া হয়েই আছে দূরে। অনেক অনেক দূরে ওড়াউড়ি করে ছায়াগুলো। মাঝেমধ্যে অন্ধকার নামলে জেগে ওঠে, আবার মিলিয়েও যায়। ছায়া নয়, ভুল বললাম; শায়লা আমার কাছে আছে স্মৃতি হয়ে। স্মৃতির কাছে তো জবাব দেওয়ার কিছু নেই। শায়লাকে উত্তর দিই না।
কম্বলের ভেতর থেকে মাথাটা বের করে চারপাশ দেখি—ভোরের একটা মিহি সরু আলোর রেখা ঢুকেছে আমার ঘরে। পর্দা গলে ওই আলোর স্ফুরণ আমাকে স্পর্শ করে। শীতস্পর্শে মুখ থিরথির করে। আমি আবার মুখ ঢুকিয়ে নিই লেপের ভেতরে। বউকে হালকা করে জড়িয়ে ধরি। তারপর বউয়ের বুকে হাত রেখে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমের অতলে ডুবে যাই।
শায়লার কথা আমার বউ জানে না যে ঠিক তা নয়। তরীর সঙ্গে বিয়ের অনেক আগেই সব বলেছিলাম। তরী সব শুনে, সব জেনে আমাকে আশ্রয় দিয়েছিল; ভালোবেসে কাছে ডেকে নিয়েছিল। সে বলেছিল, ‘সময় সবকিছুকে ম্লান করে দেয়।’
তরীর কথাই ঠিক। সময় ম্লান করে দিয়েছিল শায়লাকে, আমাকে ভুলিয়েও দিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পরে হঠাৎ কেন শায়লার কথা মনে বাজল? মনের ভেতর খচখচ করে উঠল, কেঁপে উঠল হৃদয়ের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সেই মায়াহরিণ।
বছর দুয়েক আগে নিঝুম দ্বীপ বেড়াতে গিয়ে কেওড়াবনের ফাঁকে ফাঁকে অনেক হরিণ দেখেছিলাম, অনেক কাছ থেকে হরিণের চোখ দেখেছিলাম, তখন শায়লার কথা মনে পড়েছিল। তার হরিণী চোখ মনে পড়েছিল। আমি শায়লার প্রেমে পড়েছিলাম তার গভীর ঘনকালো, নিবিড় চোখ দেখেই। মেয়েদের চোখ যে এত সুন্দর, এত আকর্ষণীয়, এত মোহময় হতে পারে—আমি আগে তা বুঝিনি। একদিন, সম্ভবত সেদিন কী একটা আবৃত্তি উৎসব ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই সেজেগুজে চোখে কাজল দিয়ে এসেছিল সে। শাড়ি পরেছিল। খোঁপায় ফুল ছিল কি না মনে নেই। উপলক্ষ ছাড়াই মাঝেমধ্যেই খোঁপায় ফুল গুঁজে দিত, যত্ন করে পরিপাটি হয়ে সাজত। সাধারণত যেসব মেয়ে খুব পরিপাটি করে সাজে, তারা কথা বলে মেপে মেপে, ধীরে ধীরে। শায়লা তেমন নয়। কথা বলতে বলতে হাসে, হাসতে হাসতে কথা বলে। কথায় রাখঢাকের ব্যাপার নেই। ফলে অল্পতেই তার সঙ্গে আমার ভাব জমে গিয়েছিল, গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল।
শায়লার কথা যখন ভাবি, মনে করি, তখন কীভাবে যেন আমার ভেতরটা এলোমেলো হয়ে যায়; তছনছ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর কেন এমন হয়, বুঝতে পারি না। তবে এলোমেলো ভাব কেটেও যায় দ্রুত। তারপর ফিরে আসি নিজের জগতে। ফিরে আসি ঘরে, সংসারে। সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখি তরী ড্রয়িংরুমে বসে একমনে টিভি দেখছে। ইংরেজি একটা মুভি দেখছে। ড্রয়িংরুমে গিয়ে তার পাশে বসি। তারপর তরীকে জড়িয়ে ধরে চুমো দিয়ে বলি, ‘আই লাভ ইউ।’
‘হঠাৎ এত পিরিত উঠল কেন?’
‘হঠাৎ হবে কেন?’
সে বলে, ‘প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন না। আগে উত্তর, পরে প্রশ্ন।’
বউয়ের কথায় আমার খানিকটা অভিমান হয়। অভিমানের সুরে বলি, ‘তুমি আমাকে ভালোবাসো না!’ এ কথা শুনে বউ হাসে মৃদু মৃদু। চোখেমুখে হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘আহা! আমি তোমাকে তো রাগানোর জন্য বলেছিলাম!’
‘রাগ না, ছাই! তিয়ার জন্মের পর তুমি আমাকে ভুলেই গেছ!’
‘তোমাকে ভুলব কেন! আজব কথা বলো! ঘুমাচ্ছিলা তো, তাই তোমাকে ডাকিনি।’
আমাদের দুই বছরের কন্যা তিয়া। হেলেদুলে, টলমল করে হাঁটতে পারে ও। যখন হাঁটে, কিংবা যখন ওর দুই হাত ধরে হাঁটানোর চেষ্টা করি, তখন ওকে আমার পুতুলই মনে হয়। ঠিক যেন জাপানি পুতুল। আমার বুকটা ভরে ওঠে আনন্দে, উচ্ছ্বাসে। তিয়ার জন্মের পর থেকে তরী সারাক্ষণ বাচ্চাকে নিয়ে মেতে থাকে। তিয়াকে নিয়ে ডুবে থাকে। যত্ন করে কুসুম গরম পানিতে গোসল করায়, লোশন মাখিয়ে দেয় ওর কোমল ত্বকে। মাঝেমধ্যে গান শোনায়। ও কিছু বোঝে কি না কে জানে। তবে হাততালি দিয়ে, খুশিতে আবোল-তাবোল শব্দ করে। এতেই তরী খুব খুশি হয়। তখন চুকচুক করে চুমো দেয় তিয়ার মখমল গালে। আমার খুব ভালো লাগে মা-মেয়ের এই চিরন্তন ভালোবাসায়।
সকালে নাশতা করে মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করি কিছুক্ষণ। তিয়াকে আদর করতে করতে হঠাৎ মনে পড়ে শায়লার কথা। শায়লাও কি তবে আমার মেয়ের মা হতে চেয়েছিল?
ছুটির দিন থাকায় আমি ঘুম থেকে উঠি বেলা করে। তারপর কিছুক্ষণ তরীর সঙ্গে সাংসারিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। জানতে চাই, ঘরে বাজার আছে কি না। বাজারের কথা শুনে তরী খুশি হয়। কেননা সাধারণত সকালে আমি সংসার কিংবা বাজারবিষয়ক কোনো কথা বলি না। সাংসারিক কথায় খুশি হয়ে সে বলে, ‘বাজারে যেতে হবে না।’ বউয়ের কথায় আমিও খুশি হই খুব।
খুশি প্রকাশ করে তাকে বলি, ‘দুপুরে কী রান্না করবে? গরুর মাংস-খিচুড়ি হবে নাকি?’
‘নিশ্চয় হবে। ফ্রিজে মাংস আছে। তবে রান্নাটা করতে হবে তোমাকেই।’
‘মানে?’
‘মানে আর কী, তুমি রান্না করবে।’
‘আমি একা রান্না করতে পারব না। তুমি যদি হেল্প করো, তাহলে রান্না করতে পারি।’
শেষমেশ আমাদের দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি হয়। আমি গরুর মাংস রান্না করব, খিচুড়ি রান্না করবে তরী। রান্না করার বিষয়ে তরী খুব উদাসীন। রান্নাটা এনজয় করে না সে। তবুও আমাকে খুশি করার জন্য মাঝেমধ্যে রান্না করে। আমাদের অলিখিত চুক্তি এই যে ছুটির দিনে আমরা দুপুরে রান্না করব। একে অপরকে হেল্প করব। দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি নেওয়ার আগে আমি আর তরী পত্রিকা পড়তে পড়তে গল্প করি। সমসাময়িক রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য নিয়ে আলাপ করি। তারপর এক ফাঁকে তরীকে বলি শায়লার কথা। বলি রাতের ঘটনা। আমার কথা শুনে থ হয়ে গেল সে। কিছুটা রাগত স্বরে বলে, ‘শায়লার সঙ্গে দেখা হয়েছে আমাকে আগে বলোনি কেন?’
‘তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।’
‘না, তোমার ভুলে যাওয়ার তো কথা নয়! আমাকে মিথ্যা কথা বলতেছ!’
‘তোমাকে মিথ্যা বলব কেন! আমি তো মিথ্যা বলি না, এটা তো তুমি জানোই। এখন মনে পড়ল তাই সঙ্গে সঙ্গে বললাম।’
শায়লার সঙ্গে কী কথা হয়েছিল, কোথায় দেখা হয়েছিল, কবে দেখা হয়েছিল—তরীর চোখে কোনো কৌতূহল নেই। কিছুই বলে না সে। মুখ অন্ধকার করে টিভি দেখতে বসে, কিছুক্ষণ পরে সিনেমায় ডুব মারে। দুপুরের রান্নার কথাও ওঠায় না। কারণটা যে শায়লা তা আর বোঝার বাকি নেই। পরিস্থিতি মাঝারি পর্যায়ের, অভিমানের দিকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে গলা উঁচু করে চিল্লাচিল্লি করবে। ১০ মিনিটের একটা ঝড় বইবে। তারপর সব স্বাভাবিক। আপাতত আবহ চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার লক্ষণ নেই। মাঝারি পর্যায়েই থাকবে।
তরীর সঙ্গে আমার তেমন একটা ঝগড়া হয় না, কথা-কাটাকাটিও হয় না। তবে কখনো যদি সে আমার ওপর রাগ করে, তখন মুখের ওপর চিল্লাচিল্লি করে। এখন ওই অবস্থা হবে কি না বুঝতে পারি না। ফলে পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি। কিন্তু কিছুই বলি না। কেননা আমি এখন কিছু বলতে গেলেই ঝড় ওঠার পূর্বাভাব মিলবে। বিপদসংকেত বাড়বে। তাই চুপচাপ হয়ে আমি তরীর সঙ্গে টিভি দেখি কিছুক্ষণ। তারপর আমাদের রুমে ঢুকে তিয়াকে আদর করি। বুয়া ওকে দুধ গরম করে দিয়েছে। দুধ খেতে খেতে রাজকন্যা ঘুমিয়ে পড়েছে।
কিছুক্ষণ পর কাজের মেয়েটিকে ডেকে বলি কফি বানাতে। কফির কথা বলে আমার রুমে ঢুকে আমি কী করব ভাবি। খাটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ধ্যানের মতো পড়ে থাকি, ঠিক যেন তখনই আমার চোখে ভেসে ওঠে শায়লার হাসি। কতদিন পর দেখলাম শায়লাকে, কতদিন পর! আমার ভেতরটা হাহাকার করে, মনটা কেমন করে। বুঝতে পারি না কেন এমন করে। শায়লাকে তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। প্রায় আট বছর আগের স্মৃতি কেন মনে পড়ল? কোথাও কি দেখেছি শায়লাকে, নাকি শায়লার মতো কাউকে দেখেছিলাম!
সপ্তাহখানেক আগের ঘটনা। যানজটে গাড়ি থেমে ছিল অনেকক্ষণ, পান্থপথ সিগন্যালে। গাড়ির গ্লাস নামিয়ে সিগারেটের ধোয়া ছাড়ি অন্যমনস্ক হয়ে। হঠাৎ লক্ষ করি, চমকে উঠি—শায়লা দাঁড়িয়ে পথের পাশে। ঠিক দাঁড়িয়ে নয়, আমার সামনে দিয়ে, গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল সে। শায়লা বলে চিৎকার করে উঠেছিলাম। দুই-একবার ডাক দিয়েছিলাম। মেয়েটি আমাকে ফিরেও তাকায়নি। ব্যস, এইটুকু। মেয়েটি শায়লাই ছিল নাকি কে জানে। নাকি শায়লার মতো অন্য কেউ? শায়লার কথা যত ভাবি, মন তত উথালপাথাল করে।
কাজের মেয়ে কফি দিয়ে যায়। কফিতে চুমুক দিতে দিতে ভাবি, শায়লাকে নিয়ে একটি গল্প লিখতে হবে। কিন্তু কীভাবে লিখব, কোন জায়গা থেকে শুরু করব—বুঝতে পারি না। মাথাটা হঠাৎ জট পাকিয়ে ওঠে, দুমড়েমুচড়ে জেগে ওঠে স্মৃতিগুলো।
‘তুমি এখনো শুয়ে আছ! আমি তো খিচুড়ি রান্না করছি, মাংস রান্না করবা কখন?’—বউয়ের কথা শুনে যেন জ্ঞান ফেরে আমার। বউকে বলি, ‘ঠিক আছে। রান্না করব।’
আলস্য ঝেড়ে ফ্রিজ থেকে মাংস বের করতে হবে। মাংস অনেকক্ষণ পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। আমি ঝটপট উঠি বিছানা থেকে। ডিপফ্রিজের ডানা খুলতেই আমার চোখের পাতায় যেন একটা বিস্ফোরণ ঘটল। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎচমক খেলল সারা শরীরে। তোলপাড় করে অচেনা এক কালো সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ল মনের বালুকাবেলায়। কয়েকটি বড় বড় মাংসের পোঁটলা। তাতে হালকা কুয়াশা জড়িয়ে। ফ্রিজের ডানা খুলতেই কুয়াশারা জেগে উঠল, চোখের পাতা নড়েচড়ে উঠল। পোঁটলাগুলোর একটিতে পড়ে আছে হরিণের মাংস, যেন ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার চোখ যেন ছানাবড়া। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখি—মাংসগুলো সতেজ, হিমশীতল বরফে ঢাকা।
সপ্তাহখানেক আগে খুলনা থেকে বেড়াতে এসেছিল আমার বন্ধু সজীব। সে একবার কথাচ্ছলে বলেছিল, ‘হরিণের মাংস আর রেড ওয়াইন দারুণ হবে দোস্ত!’
একদিন সজীব প্রায় পাঁচ কেজি মাংস নিয়ে উপস্থিত হয় বাসায়। বন্ধুকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এই কাজ করে সে। কিন্তু সারপ্রাইজ তো দূরের কথা, হরিণের মাংস শুনেই চিল্লাচিল্লি শুরু করে তরী। বন্ধুর সামনেই খেপে যায়। রেগে গিয়ে তরী বলে, ‘আমি এই মাংস খাব না। তোমরাও খেতে পারবে না!’ অগত্যা মাংসগুলোর স্থান হয় ডিপফ্রিজের এক কোনায়। মাংস বের করতে দেরি হচ্ছে দেখে তরী বলে, ‘ওইগুলো হরিণের মাংস, গরুর মাংস ওপরের তাকে।’ তরীর কথায় আমি যেন চমকে উঠি, বিহ্বল হয়ে পড়ি।
সজীব যেদিন এসেছিল, মাংস দেখে আমার ভেতরটা কেঁপে উঠেছিল। দারুণ সারপ্রাইজড হয়েছিলাম। কেন? হরিণের মাংস তো আমার পছন্দ না। একবার ভুল করে খেতে গিয়ে পরে খারাপই লেগেছিল। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে নয়, পশুপ্রেমের জন্যও নয়, অন্য কিছু হতে পারে বোধহয়। সজীব দুই দিন থেকে আবার ফিরে গেছে খুলনায়, তার কর্মস্থলে। বাসায় আমরা জম্পেশ আড্ডা দিয়েছি। প্রাণখুলে হেসেছি, অনেক গল্প করেছি। আড্ডা দিতে দিতে, ওয়াইনে চুমুক দিতে দিতে সজীব বলে, ‘দোস্ত! শায়লার কী খবর!’ শায়লার কথা শুনে যেন লাফ দিয়ে উঠি। ভাগ্য ভালো যে তখন তরী ছিল না আমাদের আড্ডায়। নেশাতুর কণ্ঠে আমি বলি, ‘শায়লা! আমার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই দোস্ত!’
আড্ডায় শায়লাকে নিয়ে আমাদের কথা আর এগোয়নি। আমরা আবার নতুন পেগ শুরু করি। কয়েক চুমুক দিয়েই আনন্দে সজীব গান শুরু করে, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি!’
তরী মাংস রান্না করার সব মসলা প্রস্তুত করে রেখেছে। আমার কাজ শুধু পরিমাণমতো মসলা দিয়ে মাংস মাখিয়ে উনুনে বসিয়ে দেয়া। যখন চুলায় মাংস বসিয়েছি, বউ তখন পাশে দাঁড়িয়ে। আগুনের লেলিহান শিখায়, মসলার রসায়নে একটু পরই লাল হয়ে ওঠে মাংস। কিছুক্ষণ পর ঢাকনা খুলতেই ওঠে ধূমায়িত সুঘ্রাণ। ছড়িয়ে পড়ে ঘরময়। বউ আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ঢেকে রাখো!’

ঘুমের ভেতর থেকে উঠে এসে আমাকে বিড়বিড় করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শায়লা। মুখটি তার স্পষ্ট নয়। ছায়া ছায়া, কুয়াশাময়। মধ্য জানুয়ারির ভোররাত্রি। চারদিকে ঘন শীত, শিরশিরে কুয়াশা। প্রকৃতি থেকে বিদায় নেওয়ার আগে শীত প্রবল শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল; কুয়াশারাশি ঢাকার ওপর প্রবল ক্রোধে, কিংবা ক্ষোভে আছড়ে পড়েছিল। ভোরের হিমরাশি ঠেলে কুয়াশার ভেতর থেকে, ঘুমের ভেতর থেকে, স্বপ্নের ভেতর থেকে উঠে আসে শায়লা। অস্ফুট সুরে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। উত্তর পাবে না জেনেও বলে, ‘তোমার মেয়েটার কী নাম রেখেছ? দেখতে কার মতো হয়েছে? তোমার মতো, নাকি তরীর মতো?’
শীতের আলস্য দূরে ঠেলে হঠাৎ ঘুম ভাঙার পর বোঝার চেষ্টা করি—ঘটনাটি কি স্মৃতির, নাকি বিস্মৃতির? নাকি স্বপ্নের? বোধহয় স্মৃতি নয়, বিস্মৃতিও নয়। ছায়াই হবে মনে হয়। শায়লা তো আমার কাছে ছায়া হয়েই আছে দূরে। অনেক অনেক দূরে ওড়াউড়ি করে ছায়াগুলো। মাঝেমধ্যে অন্ধকার নামলে জেগে ওঠে, আবার মিলিয়েও যায়। ছায়া নয়, ভুল বললাম; শায়লা আমার কাছে আছে স্মৃতি হয়ে। স্মৃতির কাছে তো জবাব দেওয়ার কিছু নেই। শায়লাকে উত্তর দিই না।
কম্বলের ভেতর থেকে মাথাটা বের করে চারপাশ দেখি—ভোরের একটা মিহি সরু আলোর রেখা ঢুকেছে আমার ঘরে। পর্দা গলে ওই আলোর স্ফুরণ আমাকে স্পর্শ করে। শীতস্পর্শে মুখ থিরথির করে। আমি আবার মুখ ঢুকিয়ে নিই লেপের ভেতরে। বউকে হালকা করে জড়িয়ে ধরি। তারপর বউয়ের বুকে হাত রেখে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমের অতলে ডুবে যাই।
শায়লার কথা আমার বউ জানে না যে ঠিক তা নয়। তরীর সঙ্গে বিয়ের অনেক আগেই সব বলেছিলাম। তরী সব শুনে, সব জেনে আমাকে আশ্রয় দিয়েছিল; ভালোবেসে কাছে ডেকে নিয়েছিল। সে বলেছিল, ‘সময় সবকিছুকে ম্লান করে দেয়।’
তরীর কথাই ঠিক। সময় ম্লান করে দিয়েছিল শায়লাকে, আমাকে ভুলিয়েও দিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পরে হঠাৎ কেন শায়লার কথা মনে বাজল? মনের ভেতর খচখচ করে উঠল, কেঁপে উঠল হৃদয়ের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সেই মায়াহরিণ।
বছর দুয়েক আগে নিঝুম দ্বীপ বেড়াতে গিয়ে কেওড়াবনের ফাঁকে ফাঁকে অনেক হরিণ দেখেছিলাম, অনেক কাছ থেকে হরিণের চোখ দেখেছিলাম, তখন শায়লার কথা মনে পড়েছিল। তার হরিণী চোখ মনে পড়েছিল। আমি শায়লার প্রেমে পড়েছিলাম তার গভীর ঘনকালো, নিবিড় চোখ দেখেই। মেয়েদের চোখ যে এত সুন্দর, এত আকর্ষণীয়, এত মোহময় হতে পারে—আমি আগে তা বুঝিনি। একদিন, সম্ভবত সেদিন কী একটা আবৃত্তি উৎসব ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই সেজেগুজে চোখে কাজল দিয়ে এসেছিল সে। শাড়ি পরেছিল। খোঁপায় ফুল ছিল কি না মনে নেই। উপলক্ষ ছাড়াই মাঝেমধ্যেই খোঁপায় ফুল গুঁজে দিত, যত্ন করে পরিপাটি হয়ে সাজত। সাধারণত যেসব মেয়ে খুব পরিপাটি করে সাজে, তারা কথা বলে মেপে মেপে, ধীরে ধীরে। শায়লা তেমন নয়। কথা বলতে বলতে হাসে, হাসতে হাসতে কথা বলে। কথায় রাখঢাকের ব্যাপার নেই। ফলে অল্পতেই তার সঙ্গে আমার ভাব জমে গিয়েছিল, গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল।
শায়লার কথা যখন ভাবি, মনে করি, তখন কীভাবে যেন আমার ভেতরটা এলোমেলো হয়ে যায়; তছনছ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর কেন এমন হয়, বুঝতে পারি না। তবে এলোমেলো ভাব কেটেও যায় দ্রুত। তারপর ফিরে আসি নিজের জগতে। ফিরে আসি ঘরে, সংসারে। সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখি তরী ড্রয়িংরুমে বসে একমনে টিভি দেখছে। ইংরেজি একটা মুভি দেখছে। ড্রয়িংরুমে গিয়ে তার পাশে বসি। তারপর তরীকে জড়িয়ে ধরে চুমো দিয়ে বলি, ‘আই লাভ ইউ।’
‘হঠাৎ এত পিরিত উঠল কেন?’
‘হঠাৎ হবে কেন?’
সে বলে, ‘প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন না। আগে উত্তর, পরে প্রশ্ন।’
বউয়ের কথায় আমার খানিকটা অভিমান হয়। অভিমানের সুরে বলি, ‘তুমি আমাকে ভালোবাসো না!’ এ কথা শুনে বউ হাসে মৃদু মৃদু। চোখেমুখে হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘আহা! আমি তোমাকে তো রাগানোর জন্য বলেছিলাম!’
‘রাগ না, ছাই! তিয়ার জন্মের পর তুমি আমাকে ভুলেই গেছ!’
‘তোমাকে ভুলব কেন! আজব কথা বলো! ঘুমাচ্ছিলা তো, তাই তোমাকে ডাকিনি।’
আমাদের দুই বছরের কন্যা তিয়া। হেলেদুলে, টলমল করে হাঁটতে পারে ও। যখন হাঁটে, কিংবা যখন ওর দুই হাত ধরে হাঁটানোর চেষ্টা করি, তখন ওকে আমার পুতুলই মনে হয়। ঠিক যেন জাপানি পুতুল। আমার বুকটা ভরে ওঠে আনন্দে, উচ্ছ্বাসে। তিয়ার জন্মের পর থেকে তরী সারাক্ষণ বাচ্চাকে নিয়ে মেতে থাকে। তিয়াকে নিয়ে ডুবে থাকে। যত্ন করে কুসুম গরম পানিতে গোসল করায়, লোশন মাখিয়ে দেয় ওর কোমল ত্বকে। মাঝেমধ্যে গান শোনায়। ও কিছু বোঝে কি না কে জানে। তবে হাততালি দিয়ে, খুশিতে আবোল-তাবোল শব্দ করে। এতেই তরী খুব খুশি হয়। তখন চুকচুক করে চুমো দেয় তিয়ার মখমল গালে। আমার খুব ভালো লাগে মা-মেয়ের এই চিরন্তন ভালোবাসায়।
সকালে নাশতা করে মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করি কিছুক্ষণ। তিয়াকে আদর করতে করতে হঠাৎ মনে পড়ে শায়লার কথা। শায়লাও কি তবে আমার মেয়ের মা হতে চেয়েছিল?
ছুটির দিন থাকায় আমি ঘুম থেকে উঠি বেলা করে। তারপর কিছুক্ষণ তরীর সঙ্গে সাংসারিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। জানতে চাই, ঘরে বাজার আছে কি না। বাজারের কথা শুনে তরী খুশি হয়। কেননা সাধারণত সকালে আমি সংসার কিংবা বাজারবিষয়ক কোনো কথা বলি না। সাংসারিক কথায় খুশি হয়ে সে বলে, ‘বাজারে যেতে হবে না।’ বউয়ের কথায় আমিও খুশি হই খুব।
খুশি প্রকাশ করে তাকে বলি, ‘দুপুরে কী রান্না করবে? গরুর মাংস-খিচুড়ি হবে নাকি?’
‘নিশ্চয় হবে। ফ্রিজে মাংস আছে। তবে রান্নাটা করতে হবে তোমাকেই।’
‘মানে?’
‘মানে আর কী, তুমি রান্না করবে।’
‘আমি একা রান্না করতে পারব না। তুমি যদি হেল্প করো, তাহলে রান্না করতে পারি।’
শেষমেশ আমাদের দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি হয়। আমি গরুর মাংস রান্না করব, খিচুড়ি রান্না করবে তরী। রান্না করার বিষয়ে তরী খুব উদাসীন। রান্নাটা এনজয় করে না সে। তবুও আমাকে খুশি করার জন্য মাঝেমধ্যে রান্না করে। আমাদের অলিখিত চুক্তি এই যে ছুটির দিনে আমরা দুপুরে রান্না করব। একে অপরকে হেল্প করব। দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি নেওয়ার আগে আমি আর তরী পত্রিকা পড়তে পড়তে গল্প করি। সমসাময়িক রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য নিয়ে আলাপ করি। তারপর এক ফাঁকে তরীকে বলি শায়লার কথা। বলি রাতের ঘটনা। আমার কথা শুনে থ হয়ে গেল সে। কিছুটা রাগত স্বরে বলে, ‘শায়লার সঙ্গে দেখা হয়েছে আমাকে আগে বলোনি কেন?’
‘তোমাকে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।’
‘না, তোমার ভুলে যাওয়ার তো কথা নয়! আমাকে মিথ্যা কথা বলতেছ!’
‘তোমাকে মিথ্যা বলব কেন! আমি তো মিথ্যা বলি না, এটা তো তুমি জানোই। এখন মনে পড়ল তাই সঙ্গে সঙ্গে বললাম।’
শায়লার সঙ্গে কী কথা হয়েছিল, কোথায় দেখা হয়েছিল, কবে দেখা হয়েছিল—তরীর চোখে কোনো কৌতূহল নেই। কিছুই বলে না সে। মুখ অন্ধকার করে টিভি দেখতে বসে, কিছুক্ষণ পরে সিনেমায় ডুব মারে। দুপুরের রান্নার কথাও ওঠায় না। কারণটা যে শায়লা তা আর বোঝার বাকি নেই। পরিস্থিতি মাঝারি পর্যায়ের, অভিমানের দিকে। চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে গলা উঁচু করে চিল্লাচিল্লি করবে। ১০ মিনিটের একটা ঝড় বইবে। তারপর সব স্বাভাবিক। আপাতত আবহ চূড়ান্ত পর্যায়ে যাওয়ার লক্ষণ নেই। মাঝারি পর্যায়েই থাকবে।
তরীর সঙ্গে আমার তেমন একটা ঝগড়া হয় না, কথা-কাটাকাটিও হয় না। তবে কখনো যদি সে আমার ওপর রাগ করে, তখন মুখের ওপর চিল্লাচিল্লি করে। এখন ওই অবস্থা হবে কি না বুঝতে পারি না। ফলে পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি। কিন্তু কিছুই বলি না। কেননা আমি এখন কিছু বলতে গেলেই ঝড় ওঠার পূর্বাভাব মিলবে। বিপদসংকেত বাড়বে। তাই চুপচাপ হয়ে আমি তরীর সঙ্গে টিভি দেখি কিছুক্ষণ। তারপর আমাদের রুমে ঢুকে তিয়াকে আদর করি। বুয়া ওকে দুধ গরম করে দিয়েছে। দুধ খেতে খেতে রাজকন্যা ঘুমিয়ে পড়েছে।
কিছুক্ষণ পর কাজের মেয়েটিকে ডেকে বলি কফি বানাতে। কফির কথা বলে আমার রুমে ঢুকে আমি কী করব ভাবি। খাটে গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ধ্যানের মতো পড়ে থাকি, ঠিক যেন তখনই আমার চোখে ভেসে ওঠে শায়লার হাসি। কতদিন পর দেখলাম শায়লাকে, কতদিন পর! আমার ভেতরটা হাহাকার করে, মনটা কেমন করে। বুঝতে পারি না কেন এমন করে। শায়লাকে তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। প্রায় আট বছর আগের স্মৃতি কেন মনে পড়ল? কোথাও কি দেখেছি শায়লাকে, নাকি শায়লার মতো কাউকে দেখেছিলাম!
সপ্তাহখানেক আগের ঘটনা। যানজটে গাড়ি থেমে ছিল অনেকক্ষণ, পান্থপথ সিগন্যালে। গাড়ির গ্লাস নামিয়ে সিগারেটের ধোয়া ছাড়ি অন্যমনস্ক হয়ে। হঠাৎ লক্ষ করি, চমকে উঠি—শায়লা দাঁড়িয়ে পথের পাশে। ঠিক দাঁড়িয়ে নয়, আমার সামনে দিয়ে, গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল সে। শায়লা বলে চিৎকার করে উঠেছিলাম। দুই-একবার ডাক দিয়েছিলাম। মেয়েটি আমাকে ফিরেও তাকায়নি। ব্যস, এইটুকু। মেয়েটি শায়লাই ছিল নাকি কে জানে। নাকি শায়লার মতো অন্য কেউ? শায়লার কথা যত ভাবি, মন তত উথালপাথাল করে।
কাজের মেয়ে কফি দিয়ে যায়। কফিতে চুমুক দিতে দিতে ভাবি, শায়লাকে নিয়ে একটি গল্প লিখতে হবে। কিন্তু কীভাবে লিখব, কোন জায়গা থেকে শুরু করব—বুঝতে পারি না। মাথাটা হঠাৎ জট পাকিয়ে ওঠে, দুমড়েমুচড়ে জেগে ওঠে স্মৃতিগুলো।
‘তুমি এখনো শুয়ে আছ! আমি তো খিচুড়ি রান্না করছি, মাংস রান্না করবা কখন?’—বউয়ের কথা শুনে যেন জ্ঞান ফেরে আমার। বউকে বলি, ‘ঠিক আছে। রান্না করব।’
আলস্য ঝেড়ে ফ্রিজ থেকে মাংস বের করতে হবে। মাংস অনেকক্ষণ পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। আমি ঝটপট উঠি বিছানা থেকে। ডিপফ্রিজের ডানা খুলতেই আমার চোখের পাতায় যেন একটা বিস্ফোরণ ঘটল। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎচমক খেলল সারা শরীরে। তোলপাড় করে অচেনা এক কালো সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ল মনের বালুকাবেলায়। কয়েকটি বড় বড় মাংসের পোঁটলা। তাতে হালকা কুয়াশা জড়িয়ে। ফ্রিজের ডানা খুলতেই কুয়াশারা জেগে উঠল, চোখের পাতা নড়েচড়ে উঠল। পোঁটলাগুলোর একটিতে পড়ে আছে হরিণের মাংস, যেন ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার চোখ যেন ছানাবড়া। হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখি—মাংসগুলো সতেজ, হিমশীতল বরফে ঢাকা।
সপ্তাহখানেক আগে খুলনা থেকে বেড়াতে এসেছিল আমার বন্ধু সজীব। সে একবার কথাচ্ছলে বলেছিল, ‘হরিণের মাংস আর রেড ওয়াইন দারুণ হবে দোস্ত!’
একদিন সজীব প্রায় পাঁচ কেজি মাংস নিয়ে উপস্থিত হয় বাসায়। বন্ধুকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এই কাজ করে সে। কিন্তু সারপ্রাইজ তো দূরের কথা, হরিণের মাংস শুনেই চিল্লাচিল্লি শুরু করে তরী। বন্ধুর সামনেই খেপে যায়। রেগে গিয়ে তরী বলে, ‘আমি এই মাংস খাব না। তোমরাও খেতে পারবে না!’ অগত্যা মাংসগুলোর স্থান হয় ডিপফ্রিজের এক কোনায়। মাংস বের করতে দেরি হচ্ছে দেখে তরী বলে, ‘ওইগুলো হরিণের মাংস, গরুর মাংস ওপরের তাকে।’ তরীর কথায় আমি যেন চমকে উঠি, বিহ্বল হয়ে পড়ি।
সজীব যেদিন এসেছিল, মাংস দেখে আমার ভেতরটা কেঁপে উঠেছিল। দারুণ সারপ্রাইজড হয়েছিলাম। কেন? হরিণের মাংস তো আমার পছন্দ না। একবার ভুল করে খেতে গিয়ে পরে খারাপই লেগেছিল। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে নয়, পশুপ্রেমের জন্যও নয়, অন্য কিছু হতে পারে বোধহয়। সজীব দুই দিন থেকে আবার ফিরে গেছে খুলনায়, তার কর্মস্থলে। বাসায় আমরা জম্পেশ আড্ডা দিয়েছি। প্রাণখুলে হেসেছি, অনেক গল্প করেছি। আড্ডা দিতে দিতে, ওয়াইনে চুমুক দিতে দিতে সজীব বলে, ‘দোস্ত! শায়লার কী খবর!’ শায়লার কথা শুনে যেন লাফ দিয়ে উঠি। ভাগ্য ভালো যে তখন তরী ছিল না আমাদের আড্ডায়। নেশাতুর কণ্ঠে আমি বলি, ‘শায়লা! আমার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ নেই দোস্ত!’
আড্ডায় শায়লাকে নিয়ে আমাদের কথা আর এগোয়নি। আমরা আবার নতুন পেগ শুরু করি। কয়েক চুমুক দিয়েই আনন্দে সজীব গান শুরু করে, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলা রে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি!’
তরী মাংস রান্না করার সব মসলা প্রস্তুত করে রেখেছে। আমার কাজ শুধু পরিমাণমতো মসলা দিয়ে মাংস মাখিয়ে উনুনে বসিয়ে দেয়া। যখন চুলায় মাংস বসিয়েছি, বউ তখন পাশে দাঁড়িয়ে। আগুনের লেলিহান শিখায়, মসলার রসায়নে একটু পরই লাল হয়ে ওঠে মাংস। কিছুক্ষণ পর ঢাকনা খুলতেই ওঠে ধূমায়িত সুঘ্রাণ। ছড়িয়ে পড়ে ঘরময়। বউ আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ঢেকে রাখো!’

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

ঘুমের ভেতর থেকে উঠে এসে আমাকে বিড়বিড় করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শায়লা। মুখটি তার স্পষ্ট নয়। ছায়া ছায়া, কুয়াশাময়। মধ্য জানুয়ারির ভোররাত্রি। চারদিকে ঘন শীত, শিরশিরে কুয়াশা। প্রকৃতি থেকে বিদায় নেওয়ার আগে শীত প্রবল শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল;
২৫ ডিসেম্বর ২০২২
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।
মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।
মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।
নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।
বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

ঘুমের ভেতর থেকে উঠে এসে আমাকে বিড়বিড় করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শায়লা। মুখটি তার স্পষ্ট নয়। ছায়া ছায়া, কুয়াশাময়। মধ্য জানুয়ারির ভোররাত্রি। চারদিকে ঘন শীত, শিরশিরে কুয়াশা। প্রকৃতি থেকে বিদায় নেওয়ার আগে শীত প্রবল শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল;
২৫ ডিসেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।
১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।
তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।
ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।
তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।
২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।
চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।
তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

ঘুমের ভেতর থেকে উঠে এসে আমাকে বিড়বিড় করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শায়লা। মুখটি তার স্পষ্ট নয়। ছায়া ছায়া, কুয়াশাময়। মধ্য জানুয়ারির ভোররাত্রি। চারদিকে ঘন শীত, শিরশিরে কুয়াশা। প্রকৃতি থেকে বিদায় নেওয়ার আগে শীত প্রবল শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল;
২৫ ডিসেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
১৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম। তিনি হাঙ্গেরিয়ান ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই; সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাঁকে ফ্রানৎস কাফকা ও স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসলোর জন্য সাহিত্যে এটা প্রথম পুরস্কার নয়, ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এ পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো—মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা ও আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই একধরনের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তারা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন ও পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে একধরনের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমনে। এই উপন্যাস অবলম্বনে একই শিরোনামে সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। সামুদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসলোর সাহিত্য।

ঘুমের ভেতর থেকে উঠে এসে আমাকে বিড়বিড় করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শায়লা। মুখটি তার স্পষ্ট নয়। ছায়া ছায়া, কুয়াশাময়। মধ্য জানুয়ারির ভোররাত্রি। চারদিকে ঘন শীত, শিরশিরে কুয়াশা। প্রকৃতি থেকে বিদায় নেওয়ার আগে শীত প্রবল শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল;
২৫ ডিসেম্বর ২০২২
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
৬ দিন আগে
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
১১ দিন আগে
হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য।
১৭ দিন আগে