Ajker Patrika

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ /যুক্তরাষ্ট্রের ‘যুদ্ধ ক্ষমতা আইন’ কি ট্রাম্পকে আটকাতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২০ জুন ২০২৫, ১৭: ৫৭
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএএনএন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএএনএন

যুক্তরাষ্ট্র ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে অংশ নেবে কি না, তা নিয়ে গত সপ্তাহ থেকে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। গত বুধবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি স্বভাবসুলভ জবাব দেন, ‘আমরা যুদ্ধে যোগ দিতেও পারি, না-ও পারি’।

ট্রাম্প প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এবং ট্রাম্পের মিত্ররা কয়েক দিন ধরে বেশ জোর দিয়ে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে অংশ নেবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের এবং ট্রাম্পের দূরদর্শিতার ওপর তাঁদের ভরসা রয়েছে। এর আগে, গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘এখন থেকে কী হবে, সে বিষয়ে ট্রাম্পই এককভাবে দিকনির্দেশনা দেবেন।’

তবে যুদ্ধবিরোধী সমর্থকেরা যুক্তি দিচ্ছেন, যুদ্ধে জড়ানোর বিষয়টি ট্রাম্পের একক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। সংবিধান অনুযায়ী যুদ্ধ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেবল কংগ্রেসের। ট্রাম্প ক্রমেই যুদ্ধে জড়িত হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন দেখে কিছু আইনপ্রণেতা এখন যুদ্ধ ক্ষমতা আইন (ওয়ার পাওয়ার অ্যাক্ট) অনুযায়ী কংগ্রেসের সেই ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, আইন অনুযায়ী যুদ্ধ ঘোষণার জন্য কী নিয়ম মানতে হবে প্রশাসনকে? কংগ্রেসের সম্মতি ছাড়াই ট্রাম্প কি যুক্তরাষ্ট্রকে এই যুদ্ধে জড়াতে পারেন?

মার্কিন সংবিধান কী বলে

মার্কিন সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা কংগ্রেসের। অনেক আইনজীবী এটিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেন, দেশের সামরিক হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার চূড়ান্ত অধিকার কংগ্রেসের, প্রেসিডেন্টের নয়। অর্থাৎ, যুদ্ধের ব্যাপারে প্রধান নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আইন প্রণয়নকারী শাখা এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আইনপ্রণেতারা।

যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ কবে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল

১৯৪২ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে সবশেষ যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকে আর আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি দেশটি। ঘোষণা না করেই কোরিয়া, ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে জড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া বহু দেশে সামরিক হামলা ও হস্তক্ষেপ চালিয়েছে দেশটি। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে সার্বিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেনের নাম।

যুদ্ধ বিষয়ে প্রেসিডেন্টের কী ক্ষমতা আছে

মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হলেন সশস্ত্র বাহিনীর ‘সর্বাধিনায়ক’ (কমান্ডার চিফ)। এর ফলে প্রেসিডেন্ট হামলা বা আসন্ন হুমকির জবাবে সামরিক বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিতে পারেন। তবে এর বাইরের যুদ্ধসংক্রান্ত ক্ষমতা কংগ্রেস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ প্রেসিডেন্টকে কেবল তখনই সামরিক অভিযান পরিচালনার ক্ষমতা দেয়, যখন কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ অনুমোদন করে। আইনপ্রণেতাদের নির্ধারিত নীতিমালার অধীনে প্রেসিডেন্টকে সেনাবাহিনী ব্যবস্থাপনা করতে হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই ‘জরুরি ভিত্তিতে সামরিক বাহিনী পরিচালনার ক্ষমতা’র একপ্রকার অপব্যবহার করেই অন্য দেশে হামলা চালিয়েছেন। এসব হামলাকে তাঁরা আত্মরক্ষামূলক বা হুমকির জবাব হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা না করেও কীভাবে ইরাকসহ বিভিন্ন দেশে সেনা পাঠিয়েছে

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর, কংগ্রেস দ্রুত একটি আইন পাস করে, যা ‘অথরাইজেশন ফর ইউজ অব মিলিটারি ফোর্স’ (এইউএমএফ) নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে ব্যাপক সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালে আরেকটি এইউএমএফ পাস হয়, যা যুক্তরাষ্ট্রকে ইরাকের সাদ্দাম হোসেন সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোর অনুমতি দেয়। এই অনুমোদনকে ভিত্তি করে ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে সামরিক অভিযান চালায়।

এই দুটি অনুমোদন এখনো বলবৎ আছে এবং পরবর্তী প্রেসিডেন্টরাও কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন সামরিক হস্তক্ষেপে তা ব্যবহার করে চলেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ সালে ইরাকের বাগদাদে ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার নির্দেশ দেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প—এবং এই অভিযান পরিচালিত হয় ২০০২ সালের ইরাক এইউএমএফের অধীনে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকালে আশঙ্কা দেখা দেয়, তিনি ২০০১ সালের এইউএমএফ আইনের অপব্যাখ্যা করে ইরানে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এই দাবি করে যে তেহরান আল-কায়েদার সহযোগী। যদিও এর পক্ষে কোনো শক্তিশালী প্রমাণ ছিল না।

যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা আইন (ওয়ার পাওয়ার অ্যাক্ট) কখন পাস হয়

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে যুদ্ধসংক্রান্ত ক্ষমতার বিষয়টি নির্ধারণ করে দেওয়া থাকলেও সময়ের সঙ্গে প্রেসিডেন্টরা নানা উপায়ে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছেন। এই প্রেক্ষাপটে, ১৯৭৩ সালে—ভিয়েতনাম যুদ্ধ ও এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে দীর্ঘকালীন মার্কিন হস্তক্ষেপের পর—যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ‘ওয়ার পাওয়ার্স রেজ্যুলেশন’ নামের একটি আইন পাস করে। এর লক্ষ্য ছিল প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ-সম্পর্কিত ক্ষমতা সীমিত করা এবং কংগ্রেসের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এই আইন পাস করা হয় প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের গোপনে কম্বোডিয়ায় বোমা বর্ষণের পর, যা হাজার হাজার বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির কারণ হয়েছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয়। আইনটির উদ্দেশ্য ছিল—এ ধরনের গোপন ও একতরফা সামরিক অভিযানে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে আনা।

ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্টের প্রধান বিধান

১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ভেটো অগ্রাহ্য করে পাস করে ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট বা ওয়ার পাওয়ার্স রেজ্যুলেশন। এই আইনের মূল লক্ষ্য ছিল যুদ্ধসংক্রান্ত বিষয়ে প্রেসিডেন্টের একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা সীমিত করা এবং কংগ্রেসের ভূমিকা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।

আইন অনুযায়ী, যদি কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা না করে, তাহলে প্রেসিডেন্ট সেনা মোতায়েনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসকে তা অবহিত করতে বাধ্য। সেনা মোতায়েনের এই অনুমোদন সর্বোচ্চ ৬০ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে, এবং বিশেষ প্রয়োজন হলে আরও ৩০ দিন সময় বাড়ানো যেতে পারে। তবে এই সময়সীমার পর কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া ওই সামরিক উপস্থিতি অব্যাহত রাখা যাবে না। আইনটিতে আরও বলা হয়েছে, বিদেশে মার্কিন সেনা মোতায়েনের আগে প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেসের সঙ্গে সর্বোচ্চ মাত্রায় যোগাযোগ করতে হবে এবং কংগ্রেসের পরামর্শ নিতে হবে।

এসব বিধানের মাধ্যমে ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট কংগ্রেসের সাংবিধানিক কর্তৃত্বকে সুরক্ষিত করতে চায় এবং যুদ্ধসংক্রান্ত সিদ্ধান্তের ওপর প্রেসিডেন্টের একচেটিয়া প্রভাব রোধ করে।

ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট কেন আবার আলোচনায়

ইরানে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়তে থাকায় নতুন করে আলোচনায় ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট। গত সোমবার ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কেইন একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন—প্রস্তাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালাতে হলে কংগ্রেসের পূর্বানুমতি নিতে বাধ্য করার কথা বলা হয়। পরদিন, প্রতিনিধি পরিষদেও এমন একটি বিল উত্থাপন করেন রিপাবলিকান থমাস ম্যাসি এবং ডেমোক্র্যাট রো খন্না। এদিকে আরও একটি বিল উত্থাপন করেন বার্নি স্যান্ডার্স। ‘নো ওয়ার অ্যাগেইনস্ট ইরান অ্যাক্ট’ নামে তোলা ওই প্রস্তাবে তিনি দাবি করেন, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ হিসেবে কোনো ধরনের অর্থ ব্যয় করতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র। তবে এসব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যেহেতু কংগ্রেস বর্তমানে রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে, তাই এসব বিল পাস হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।

সংবিধানেই তো স্পষ্টভাবে বলা আছে, তবু নতুন আইন কেন দরকার?

যদিও মার্কিন সংবিধানের প্রথম অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, যুদ্ধ ঘোষণার অধিকার কেবল কংগ্রেসেরই আছে, বাস্তবে প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেসের মধ্যে এই ক্ষমতা নিয়ে বারবার দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণটি ১৮৬১ সালের গৃহযুদ্ধের শুরুতে দেখা যায়। কংগ্রেস তখনো দক্ষিণের বিদ্রোহী রাজ্যগুলোর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি, কিন্তু প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন দ্রুত পদক্ষেপ হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলের বন্দরগুলো অবরোধ করে দেন। পরে সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত দেন, প্রেসিডেন্ট হঠাৎ কোনো আক্রমণ হলে তা প্রতিহত করার জন্য এমন পদক্ষেপ নিতে পারেন—অর্থাৎ, তা ছিল সংবিধানসম্মত।

ইতিহাসে ১১ বার কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। বাকি সময়ে তারা সাধারণত ‘রেজ্যুলেশন’ বা ‘AUMF’-এর মতো আইন পাস করে প্রেসিডেন্টকে সামরিক পদক্ষেপের অনুমোদন দিয়েছে। ফলে প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে নয়, বরং কংগ্রেসের বিস্তৃত অনুমোদনের ভিত্তিতে যুদ্ধ পরিচালনা করে থাকেন। তাই নতুন একটি আইন জরুরি হয়ে পড়েছে।

ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্ট কার্যকর কতটা

১৯৭৩ সালে আইনটি পাস হওয়ার পর থেকে সমালোচকেরা বলে আসছেন, এটি কার্যত অচল! এটি অনেকটা কংগ্রেসের অসন্তোষ জানানোর রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু প্রেসিডেন্টকে আটকানোর মতো যথেষ্ট শক্তিশালী নয়।

আশির দশকে, সিনেটর জো বাইডেন নেতৃত্বাধীন একটি উপকমিটি এই আইনকে উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ বলে মন্তব্য করেছিলেন। কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া পরিচালিত যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে আনার চেষ্টা বন্ধে যেকোনো রেভল্যুশনে প্রেসিডেন্ট ভেটো দিতে পারেন—আর তা ঠেকাতে হাউস ও সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট দরকার হয়, যা সচরাচর পাওয়া যায় না।

তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই আইন কংগ্রেসের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং প্রেসিডেন্টকে সেনা মোতায়েনের পর দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার একটি কাঠামো বজায় রেখেছে। ১৯৭৩ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রেসিডেন্টরা কংগ্রেসে ১০০-র বেশি রিপোর্ট জমা দিয়েছেন, যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির কিছুটা ধারণা দেয়।

প্রেসিডেন্টদের দৃষ্টিভঙ্গি

ওয়ার পাওয়ার্স অ্যাক্টের সবচেয়ে জোরালো বিরোধিতা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন। কিন্তু তিনি একমাত্র নন। আধুনিক আমেরিকান প্রেসিডেন্টরাও প্রায়শই এই আইনের আওতায় বাধ্যবাধকতাগুলো এড়িয়ে যান এবং আইনকে অতিক্রম করার জন্য বিভিন্ন সৃজনশীল আইনি যুক্তি ব্যবহার করেন। বিশেষ করে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে নির্বাহী শাখা তাঁর সামরিক ক্ষমতা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করেছে। ২০০১ সালের (এইউএমএফ) এবং ২০০২ সালের ইরাক যুদ্ধের অনুমোদন আইনটি ব্যবহার করে কমপক্ষে ১৯টি দেশে বিভিন্ন ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর’ বিরুদ্ধে হামলা চালানো হয়েছে।

ফ্রেন্ডস কমিটি অন ন্যাশনাল লেজিসলেশনের বৈদেশিক নীতিবিষয়ক আইন পরিচালক হিদার ব্র্যান্ডন-স্মিথ জানান, এই অনুমোদন এমন গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে, যাদের ৯/১১ হামলার সঙ্গে কোনো সম্পর্কই ছিল না, যেমন আইএসআইএস। আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ এই আইন পর্যালোচনা বা বাতিলের আহ্বান করলেও বিভিন্ন প্রশাসন এ ব্যাপারে তেমন আগ্রহ দেখায়নি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কংগ্রেস কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন ২০২৩ সালে সিনেট ‘২০০১ সালের এইউএমএফ’ বাতিলের পক্ষে ভোট দিয়েছে, কিন্তু সেটি মূলত প্রতীকী হিসেবে দেখা হয়। ২০২১ সালে হাউস ‘২০০২ সালের এইউএমএফ’ বাতিলের পক্ষে ভোট দিয়েও উভয় আইন এখনো কার্যকর অবস্থায় রয়েছে।

বিদ্যমান আইন ট্রাম্পকে ইরানের যুদ্ধে জড়াতে বাধা দিতে পারবে কি

এটি সময়ের ব্যাপার, তবে বর্তমানে তা খুব সম্ভব বলে মনে করছেন না অনেকে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে কংগ্রেস প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল। ২০১৯ সালে কংগ্রেস সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইয়েমেন যুদ্ধের প্রতি আমেরিকার সমর্থন বন্ধের বিল পাস করেছিল, কিন্তু তাতে ভেটো দেন ট্রাম্প।

এক বছর পর, ২০২০ সালে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন ড্রোন হামলায় ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা করেন, তখন কংগ্রেসের দুই কক্ষই একটি আইন পাস করে—যার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো সামরিক পদক্ষেপের আগে প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেসের অনুমতি নিতে বাধ্য করা। কিন্তু ট্রাম্প সেই আইনে ভেটো দেন। আর কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের সমর্থন এত কম ছিল যে সেই ভেটো ঠেকানো যায়নি।

এখন ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে কংগ্রেসের দুই কক্ষই রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে প্রেসিডেন্টের যুদ্ধ ক্ষমতা সীমিত করার নতুন কোনো আইন পাস করাটা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত