Ajker Patrika

ক্রিকেট ছাড়া সব ক্ষেত্রেই ভারত–পাকিস্তান থেকে এগিয়ে বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩০ মে ২০২১, ১৫: ৫১
Thumbnail image

ঢাকা: বাংলাদেশ–ভারত ক্রিকেট ম্যাচ দুই দেশের ক্রিকেট ভক্তদের জন্য এক ভীষণ উত্তেজনাকর বিষয়। খেলোয়াড় থেকে সমর্থক সবার শরীরী ভাষাতেই লড়াইয়ের ভঙ্গি থাকে স্পষ্ট। পারস্পরিক খোঁচাখুঁচি, আর তর্ক–বিতর্কে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জমজমাট হয়ে ওঠে। এক পক্ষ যদি হাজির করে পরিসংখ্যানের বহর, তো অন্য পক্ষ তা উড়িয়ে দেয় আবেগী ভাষায়। এই তর্কে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের সমর্থকদেরই অধিকাংশ সময় নীরব হয়ে যেতে হয়। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ফরম্যাটে ভারতের সঙ্গে হওয়া ৫৩টি ক্রিকেট ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে মাত্র পাঁচটিতে। বিপরীতে ভারত জয় পেয়েছে ৪৫ টিতে। তবু ক্রিকেটে দুই দেশের মুখোমুখি হওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার পারদ উঠতেই থাকে। এই একই বিষয় বাংলাদেশ–পাকিস্তান খেলার ক্ষেত্রেও সত্য। এর সঙ্গে অবশ্য অনেক ব্যবসায়িক বিষয়ও জড়িত। সে অন্য প্রসঙ্গ।

সে যা হোক, ক্রিকেট নিয়ে এই যে ক্রিকেট ঘিরে উত্তেজনা ও শেষে বাংলাদেশেরই পিছু হটা, এই একই বাস্তবতা হয়তো অন্য আরও খেলার ক্ষেত্রেও বিদ্যমান। কিন্তু খেলার এই মাঠ থেকে বের হলেই দৃশ্যটি অন্য রকম। সেখানে ২৩ বছর আগে স্বাধীন হওয়া প্রতিবেশীর চেয়ে অনেকখানি এগিয়ে বাংলাদেশ। শুধু ভারত কেন ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে যে যমজের জন্ম, তাদের থেকে আর্থ–সামাজিক নানা সূচকে অনেক এগিয়ে রয়েছে ১৯৭১ সালে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ অনেকগুলো ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে এগিয়ে গেছে। এই এগিয়ে যাওয়াকে তারা ‘সাউথ এশিয়ান মিরাকল’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। এর সমর্থনে সংবাদমাধ্যমটি বিশ্বব্যাংকের বৈশ্বিক উন্নয়ন সূচকের (ডব্লিউডিআই) তথ্যকে প্রমাণ হিসেবে হাজির করেছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা পরিচালিত গবেষণায় উঠে আসা তথ্য সন্নিবেশিত করে বিশ্বব্যাংক এই সূচক তৈরি করে।

ডব্লিউডিআইয়ের তথ্যমতে, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) বিপরীতে গড় সঞ্চয়ের পরিমাণ, নবজাতক ও শিশু মৃত্যুহার, নিরাপদ শৈশব, প্রাথমিক শিক্ষা ইত্যাদি নানা সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান থেকে অনেকখানি এগিয়ে রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় জিডিপির বিপরীতে গড় সঞ্চয়ের পরিমাণের বিষয়টি। বাংলাদেশের গড় সঞ্চয়ের হার এর জিডিপির ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এই একই হার ভারত ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৩১ দশমিক ১ ও ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ। এই হার একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয়। এ হার বেশি হওয়ার অর্থ হচ্ছে, দেশটির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আয়ের বিপরীতে ভোগ কম। গড় সঞ্চয়ের হার বেশি হলে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বাড়ে। আর এ বিবেচনাতেই বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একে অগ্রগতি হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ রয়েছে।

 গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে নবজাতক ও শিশু মৃত্যুহার কমানোর ক্ষেত্রে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি হাজারে নবজাতক শিশু মৃত্যুর হার ২৫ দশমিক ১ শতাংশ। এই একই হার ভারত ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৯ ও ৫৭ দশমিক ২ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে ভারত পিছিয়ে পড়ছে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্যের কারণে। শুধু নবজাতক মৃত্যুহার কমানোই নয় নিরাপদ শৈশব নিশ্চিতের ক্ষেত্রেও অনেকখানি এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১৭ সালের হিসাব তুলে ধরে ডব্লিউডিআই জানায়, বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৫–১৪ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা এখন মাত্র ৪ দশমিক ১ শতাংশ। ভারত ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এ হার যথাক্রমে ৫ দশমিক ৭ ও ৯ দশমিক ৭ শতাংশ।

প্রাথমিক শিক্ষায় বাংলাদেশ ও ভারতের অবস্থান বেশ কাছাকাছি। ডব্লিউডিআইয়ের ২০১৭ সালের হিসাব তুলে ধরে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, ২০০০ সালের পর থেকে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষায় শিশুদের অন্তর্ভুক্তি ১১৬ দশমিক ৫ শতাংশ নিশ্চিত করেছে। ভারতের ক্ষেত্রে এ হার ১১২ দশমিক ৯ শতাংশ। এ ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। দেশটিতে এ হার ৯৪ দশমিক ৩ শতাংশ। একই সময়ে জন্মহার নিয়ন্ত্রণেও অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি একজন নারীর সন্তান জন্মদানের হার ২ শতাংশ। ভারত ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এ হার যথাক্রমে ২ দশমিক ২ ও ৩ দশমিক ৫ শতাংশ।

সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে সম্ভবত গড় আয়ুষ্কালের ক্ষেত্রে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুষ্কাল এখন ৭২ দশমিক ৩ বছর বলে উল্লেখ করেছে ডব্লিউডিআই। ভারত ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এ হার যথাক্রমে ৬৯ দশমিক ৪ ও ৬৭ দশমিক ১ শতাংশ। তবে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের শিক্ষার হারে এখনো ভারত থেকে পিছিয়ে বাংলাদেশ। তবে পাকিস্তান থেকে অনেকটা এগিয়ে। ভারতে ১৫ বা তদূর্ধ্ব বয়সীদের শিক্ষার হার ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ হার ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ। আর পাকিস্তানে এ হার ৫৯ শতাংশের কিছু বেশি।

এ ছাড়া আরও বেশ কিছু সূচকেই বাংলাদেশ গত ৫০ বছরে অনেকটাই এগিয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এই ইতিবাচক পরিসংখ্যানগুলোর দিকে তাকানো প্রয়োজন। একটি দেশের সবকিছু সমান গতিতে এগোয় না। বহু বিষয় নিয়ে দেশের জনগণের অভিযোগ রয়েছে, রয়েছে ক্ষোভও। সেসব ক্ষোভ দেশের আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশাতেই তৈরি হয়, দানা বাঁধে। এখনো অনেক কিছুই হয়তো নাই। কিন্তু এই নাই–বোধের মধ্যেই অনেকটা অগোচরেই জমা হয়েছে এমন বহু অর্জন যা নিয়ে বাংলাদেশ অনায়াসে গর্ব করতে পারে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এই গৌরবের উপাদানগুলোর দিকেও তাকানো জরুরি। টাইমস অব ইন্ডিয়ার গত ২৬ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদন অন্তত সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত