মইনুল হাসান
‘আমি একটু ঘুমাব, অনেক দিন ভালো ঘুমাইনি।’
আপনি অবসরে যাওয়ার পর কী করবেন বলে ঠিক করেছেন—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল এমন করেই জবাব দিয়েছিলেন। তিনি ইউরোপের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ জার্মানির প্রথম নারী চ্যান্সেলর। ২০০৫ সালের ২২ নভেম্বর তিনি সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং এক নাগাড়ে চার মেয়াদে মোট ১৬ বছর এই পদে থেকেছেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে তিনি নেতৃত্বের পদে থেকেছেন। জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে এ সময়ের মধ্যে অ্যাঙ্গেলা মের্কেল যুক্তরাষ্ট্রের চারজন এবং ফ্রান্সের চারজন প্রেসিডেন্টকে দেখেছেন। বিশ্ব রাজনীতিতে অ্যাঙ্গেলা মের্কেল পরিণত হয়েছেন এক বিস্ময়কর কিংবদন্তিতে।
এ বছর ২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হলো সাধারণ নির্বাচন। দেশটির ২০ তম এ সাধারণ নির্বাচনে শলৎজের দল এসপিডি ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে। অন্যদিকে মের্কেলের মধ্যডানপন্থী সিডিইউ পেয়েছে ২৪ দশমিক ১ শতাংশ ভোট। নতুন সরকার গঠন পর্যন্ত ‘অন্তর্বর্তীকালীন চ্যান্সেলর’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। তারপর তিনি অবসর নেবেন।
চার মেয়াদে একটি শক্তিশালী দেশের সরকার প্রধান হিসেবে তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করেন তিনি। ২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের ফুকোশিমায় প্রাণঘাতী পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটলে তিনি জার্মানিকে পারমাণবিক শক্তি নির্ভরশীলতা থেকে বের করে আনার উদ্যোগ নেন। জার্মানির অর্থনীতি ও রাজনীতিতে সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলেই তাঁকে বলা হয় ‘লৌহমানবী’। অথচ তাঁর আছে এক কোমল হৃদয়।
২০১৫ সালে যখন মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে লাখ লাখ মানুষ ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছিল, তখন অন্য দেশগুলো দরজা বন্ধ রাখলেও মের্কেল তাদের জন্য জার্মানির দরজা খুলে দিয়েছিলেন। উগ্রপন্থীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি ১০ লাখ শরণার্থীকে নিজ দেশে আশ্রয় দিয়েছেন, যা মানবজাতির জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ কাজ তাঁর জন্য মোটেই সহজ ছিল না। তাঁকে নাস্তানাবুদ করতে উগ্রপন্থীরা তাঁর বিরুদ্ধে মুসলিম শরণার্থীদের দিয়ে দেশ দখলের অভিযোগ তোলে। এমনকি তাঁর নিজের দলের মধ্যেই তিনি কঠোর সমালোচনার সম্মুখীন হন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সক্রিয় এবং কার্যকর রাখতে তাঁর অবদান কম নয়। গ্রিসকে ইউরো জোনের ভেতরে রেখে ইউরো মুদ্রাকে বাঁচিয়ে দেন তিনি। এ ছাড়া প্যারিস এবং তাঁর নিজ দেশে সন্ত্রাসী হামলা, কোভিড-১৯ মহামারি ও ব্রেক্সিটের সমস্যা মোকাবিলা ও এর সমাধানে তাঁর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ইউয়ের অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সব সময় একমত না হলেও সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টির কারণ হননি। অ্যাঙ্গেলা মের্কেল কখনোই জার্মানির স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করেননি।
টাইম ম্যাগাজিন ২০১৫ সালে অ্যাঙ্গেলা মের্কেলকে বছরের ‘সেরা ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে মনোনীত করেছিল। বলা হয়েছে, ‘অ্যাঙ্গেলা মের্কেল নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আজকের দুনিয়ায় তা বিরল।’ স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর অবস্থান ও নৈতিকতাকে ভিত্তি করে নেতৃত্ব দেওয়া তাঁর একটি অসাধারণ গুণ। এ জন্যই তিনি সেরা ব্যক্তিত্ব। এ ছাড়া নামকরা ফোর্বস ম্যাগাজিন ২০০৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত, শুধু ২০১০ সাল ছাড়া তাঁকে চৌদ্দবার বিশ্বের ক্ষমতাধর নারী হিসেবে মনোনীত করেছে। তাঁকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে জাতিসংঘেও তিনি খ্যাতি লাভ করেছেন।
অ্যাঙ্গেলা ডরোথেয়া মের্কেল ১৯৫৪ সালের ১৭ জুলাই পশ্চিম জার্মানির হামবুর্গে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা হোর্স্ট কাসনার একজন ধর্মযাজক, আর মা হারলিন ছিলেন ল্যাটিন ভাষা ও ইংরেজির শিক্ষক। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার বয়স যখন দুই মাস, তিনি পরিবারের সঙ্গে কমিউনিস্ট-পূর্ব জার্মানিতে বার্লিনের উপকণ্ঠে এক গ্রামে চলে যান এবং সেখানেই কাটে তাঁর শৈশব। শিক্ষাজীবনে পদার্থ বিজ্ঞানে অর্জন করেছেন উচ্চতর ডিগ্রি। ডক্টরেট করেছেন কোয়ান্টাম রসায়নে। তিনি একজন বিজ্ঞানী। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে গবেষণা ও বিজ্ঞান ছিল তাঁর জগৎ।
সেই ৯ নভেম্বর ১৯৮৯ রাত থেকে খুব একটা ঘুমানোর সুযোগ তাঁর হয়নি। সেদিন জার্মানিকে পূর্ব ও পশ্চিম নাম দিয়ে বিভক্ত করা বিশাল বার্লিন বিভেদের প্রাচীরটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে সমাপ্তি ঘটে পূর্ব জার্মানিতে ৪০ বছরের কমিউনিস্ট শাসনের। সে সময় অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের বয়স ছিল ৩৫। তিনি বলেছিলেন, ‘পঁয়ত্রিশটি বছরের বন্দীদশার অসহ্য জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছেন’, পেয়েছেন নতুন জীবনের স্বাদ। মুক্ত জীবনের শুরুতেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। দীর্ঘ ৪১ বছর বিভক্ত থাকার পর ১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর জার্মান জাতি আবার একত্রিত হয়েছিল। দুই মাস পর ১৯৯০ সালে মধ্য দক্ষিণপন্থী ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নে যোগ দিয়েছিলেন। পরের বছর চ্যান্সেলর হেলমুট কোহলের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হন। হেলমুট কোহল তাঁকে তাঁর নিজের মেয়ের মতোই স্নেহ করতেন।
সত্যিকার অর্থেই মানবিক ও নৈতিক বলে বলীয়ান অত্যন্ত মার্জিত, সৎ, নির্লোভ এবং সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত একজন রাষ্ট্রনায়ক তিনি। প্রায় নিখুঁত এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য নিজ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছেন অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। হিটলারের ‘রেসিস্ট-ফ্যাসিস্ট’ দুর্নাম কাটিয়ে জার্মানিকে একটি মানবিক রাষ্ট্রে পরিণত করার অনেকখানি কৃতিত্ব তাঁরই প্রাপ্য। জনগণের একরাশ ভালোবাসা সম্বল করে নিজে থেকেই বিদায় নিতে যাচ্ছেন তিনি।
জার্মানিতে অনেকেই ‘মোতথি’ অর্থাৎ ‘মা’ সম্বোধনে তাঁর প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা প্রকাশ করে থাকেন। অথচ শিশুদের খুব প্রিয় ৬৭ বছর বয়সী অ্যাঙ্গেলা মের্কেল ব্যক্তিগত জীবনে নিঃসন্তান। তারপরও তাঁর আছে অগণিত সন্তান। বিশ্ব রাজনীতির অস্থির মঞ্চ থেকে বিদেয় নিলেও যারা তাঁকে ভালোবেসে ‘মা’ বলে ডাকেন, তাঁদের তিনি ভুলে থাকতে পারবেন কি? অবসর গ্রহণের পরে সত্যিই কি তিনি ঘুমাবেন?
মইনুল হাসান: ফ্রান্স প্রবাসী লেখক ও গবেষক
‘আমি একটু ঘুমাব, অনেক দিন ভালো ঘুমাইনি।’
আপনি অবসরে যাওয়ার পর কী করবেন বলে ঠিক করেছেন—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল এমন করেই জবাব দিয়েছিলেন। তিনি ইউরোপের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ জার্মানির প্রথম নারী চ্যান্সেলর। ২০০৫ সালের ২২ নভেম্বর তিনি সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং এক নাগাড়ে চার মেয়াদে মোট ১৬ বছর এই পদে থেকেছেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে তিনি নেতৃত্বের পদে থেকেছেন। জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে এ সময়ের মধ্যে অ্যাঙ্গেলা মের্কেল যুক্তরাষ্ট্রের চারজন এবং ফ্রান্সের চারজন প্রেসিডেন্টকে দেখেছেন। বিশ্ব রাজনীতিতে অ্যাঙ্গেলা মের্কেল পরিণত হয়েছেন এক বিস্ময়কর কিংবদন্তিতে।
এ বছর ২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হলো সাধারণ নির্বাচন। দেশটির ২০ তম এ সাধারণ নির্বাচনে শলৎজের দল এসপিডি ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে। অন্যদিকে মের্কেলের মধ্যডানপন্থী সিডিইউ পেয়েছে ২৪ দশমিক ১ শতাংশ ভোট। নতুন সরকার গঠন পর্যন্ত ‘অন্তর্বর্তীকালীন চ্যান্সেলর’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। তারপর তিনি অবসর নেবেন।
চার মেয়াদে একটি শক্তিশালী দেশের সরকার প্রধান হিসেবে তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করেন তিনি। ২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের ফুকোশিমায় প্রাণঘাতী পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটলে তিনি জার্মানিকে পারমাণবিক শক্তি নির্ভরশীলতা থেকে বের করে আনার উদ্যোগ নেন। জার্মানির অর্থনীতি ও রাজনীতিতে সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলেই তাঁকে বলা হয় ‘লৌহমানবী’। অথচ তাঁর আছে এক কোমল হৃদয়।
২০১৫ সালে যখন মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে লাখ লাখ মানুষ ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছিল, তখন অন্য দেশগুলো দরজা বন্ধ রাখলেও মের্কেল তাদের জন্য জার্মানির দরজা খুলে দিয়েছিলেন। উগ্রপন্থীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি ১০ লাখ শরণার্থীকে নিজ দেশে আশ্রয় দিয়েছেন, যা মানবজাতির জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ কাজ তাঁর জন্য মোটেই সহজ ছিল না। তাঁকে নাস্তানাবুদ করতে উগ্রপন্থীরা তাঁর বিরুদ্ধে মুসলিম শরণার্থীদের দিয়ে দেশ দখলের অভিযোগ তোলে। এমনকি তাঁর নিজের দলের মধ্যেই তিনি কঠোর সমালোচনার সম্মুখীন হন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সক্রিয় এবং কার্যকর রাখতে তাঁর অবদান কম নয়। গ্রিসকে ইউরো জোনের ভেতরে রেখে ইউরো মুদ্রাকে বাঁচিয়ে দেন তিনি। এ ছাড়া প্যারিস এবং তাঁর নিজ দেশে সন্ত্রাসী হামলা, কোভিড-১৯ মহামারি ও ব্রেক্সিটের সমস্যা মোকাবিলা ও এর সমাধানে তাঁর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ইউয়ের অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সব সময় একমত না হলেও সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টির কারণ হননি। অ্যাঙ্গেলা মের্কেল কখনোই জার্মানির স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করেননি।
টাইম ম্যাগাজিন ২০১৫ সালে অ্যাঙ্গেলা মের্কেলকে বছরের ‘সেরা ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে মনোনীত করেছিল। বলা হয়েছে, ‘অ্যাঙ্গেলা মের্কেল নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আজকের দুনিয়ায় তা বিরল।’ স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর অবস্থান ও নৈতিকতাকে ভিত্তি করে নেতৃত্ব দেওয়া তাঁর একটি অসাধারণ গুণ। এ জন্যই তিনি সেরা ব্যক্তিত্ব। এ ছাড়া নামকরা ফোর্বস ম্যাগাজিন ২০০৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত, শুধু ২০১০ সাল ছাড়া তাঁকে চৌদ্দবার বিশ্বের ক্ষমতাধর নারী হিসেবে মনোনীত করেছে। তাঁকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে জাতিসংঘেও তিনি খ্যাতি লাভ করেছেন।
অ্যাঙ্গেলা ডরোথেয়া মের্কেল ১৯৫৪ সালের ১৭ জুলাই পশ্চিম জার্মানির হামবুর্গে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা হোর্স্ট কাসনার একজন ধর্মযাজক, আর মা হারলিন ছিলেন ল্যাটিন ভাষা ও ইংরেজির শিক্ষক। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার বয়স যখন দুই মাস, তিনি পরিবারের সঙ্গে কমিউনিস্ট-পূর্ব জার্মানিতে বার্লিনের উপকণ্ঠে এক গ্রামে চলে যান এবং সেখানেই কাটে তাঁর শৈশব। শিক্ষাজীবনে পদার্থ বিজ্ঞানে অর্জন করেছেন উচ্চতর ডিগ্রি। ডক্টরেট করেছেন কোয়ান্টাম রসায়নে। তিনি একজন বিজ্ঞানী। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে গবেষণা ও বিজ্ঞান ছিল তাঁর জগৎ।
সেই ৯ নভেম্বর ১৯৮৯ রাত থেকে খুব একটা ঘুমানোর সুযোগ তাঁর হয়নি। সেদিন জার্মানিকে পূর্ব ও পশ্চিম নাম দিয়ে বিভক্ত করা বিশাল বার্লিন বিভেদের প্রাচীরটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে সমাপ্তি ঘটে পূর্ব জার্মানিতে ৪০ বছরের কমিউনিস্ট শাসনের। সে সময় অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের বয়স ছিল ৩৫। তিনি বলেছিলেন, ‘পঁয়ত্রিশটি বছরের বন্দীদশার অসহ্য জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছেন’, পেয়েছেন নতুন জীবনের স্বাদ। মুক্ত জীবনের শুরুতেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। দীর্ঘ ৪১ বছর বিভক্ত থাকার পর ১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর জার্মান জাতি আবার একত্রিত হয়েছিল। দুই মাস পর ১৯৯০ সালে মধ্য দক্ষিণপন্থী ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নে যোগ দিয়েছিলেন। পরের বছর চ্যান্সেলর হেলমুট কোহলের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হন। হেলমুট কোহল তাঁকে তাঁর নিজের মেয়ের মতোই স্নেহ করতেন।
সত্যিকার অর্থেই মানবিক ও নৈতিক বলে বলীয়ান অত্যন্ত মার্জিত, সৎ, নির্লোভ এবং সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত একজন রাষ্ট্রনায়ক তিনি। প্রায় নিখুঁত এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য নিজ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছেন অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। হিটলারের ‘রেসিস্ট-ফ্যাসিস্ট’ দুর্নাম কাটিয়ে জার্মানিকে একটি মানবিক রাষ্ট্রে পরিণত করার অনেকখানি কৃতিত্ব তাঁরই প্রাপ্য। জনগণের একরাশ ভালোবাসা সম্বল করে নিজে থেকেই বিদায় নিতে যাচ্ছেন তিনি।
জার্মানিতে অনেকেই ‘মোতথি’ অর্থাৎ ‘মা’ সম্বোধনে তাঁর প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা প্রকাশ করে থাকেন। অথচ শিশুদের খুব প্রিয় ৬৭ বছর বয়সী অ্যাঙ্গেলা মের্কেল ব্যক্তিগত জীবনে নিঃসন্তান। তারপরও তাঁর আছে অগণিত সন্তান। বিশ্ব রাজনীতির অস্থির মঞ্চ থেকে বিদেয় নিলেও যারা তাঁকে ভালোবেসে ‘মা’ বলে ডাকেন, তাঁদের তিনি ভুলে থাকতে পারবেন কি? অবসর গ্রহণের পরে সত্যিই কি তিনি ঘুমাবেন?
মইনুল হাসান: ফ্রান্স প্রবাসী লেখক ও গবেষক
মইনুল হাসান
‘আমি একটু ঘুমাব, অনেক দিন ভালো ঘুমাইনি।’
আপনি অবসরে যাওয়ার পর কী করবেন বলে ঠিক করেছেন—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল এমন করেই জবাব দিয়েছিলেন। তিনি ইউরোপের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ জার্মানির প্রথম নারী চ্যান্সেলর। ২০০৫ সালের ২২ নভেম্বর তিনি সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং এক নাগাড়ে চার মেয়াদে মোট ১৬ বছর এই পদে থেকেছেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে তিনি নেতৃত্বের পদে থেকেছেন। জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে এ সময়ের মধ্যে অ্যাঙ্গেলা মের্কেল যুক্তরাষ্ট্রের চারজন এবং ফ্রান্সের চারজন প্রেসিডেন্টকে দেখেছেন। বিশ্ব রাজনীতিতে অ্যাঙ্গেলা মের্কেল পরিণত হয়েছেন এক বিস্ময়কর কিংবদন্তিতে।
এ বছর ২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হলো সাধারণ নির্বাচন। দেশটির ২০ তম এ সাধারণ নির্বাচনে শলৎজের দল এসপিডি ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে। অন্যদিকে মের্কেলের মধ্যডানপন্থী সিডিইউ পেয়েছে ২৪ দশমিক ১ শতাংশ ভোট। নতুন সরকার গঠন পর্যন্ত ‘অন্তর্বর্তীকালীন চ্যান্সেলর’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। তারপর তিনি অবসর নেবেন।
চার মেয়াদে একটি শক্তিশালী দেশের সরকার প্রধান হিসেবে তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করেন তিনি। ২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের ফুকোশিমায় প্রাণঘাতী পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটলে তিনি জার্মানিকে পারমাণবিক শক্তি নির্ভরশীলতা থেকে বের করে আনার উদ্যোগ নেন। জার্মানির অর্থনীতি ও রাজনীতিতে সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলেই তাঁকে বলা হয় ‘লৌহমানবী’। অথচ তাঁর আছে এক কোমল হৃদয়।
২০১৫ সালে যখন মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে লাখ লাখ মানুষ ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছিল, তখন অন্য দেশগুলো দরজা বন্ধ রাখলেও মের্কেল তাদের জন্য জার্মানির দরজা খুলে দিয়েছিলেন। উগ্রপন্থীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি ১০ লাখ শরণার্থীকে নিজ দেশে আশ্রয় দিয়েছেন, যা মানবজাতির জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ কাজ তাঁর জন্য মোটেই সহজ ছিল না। তাঁকে নাস্তানাবুদ করতে উগ্রপন্থীরা তাঁর বিরুদ্ধে মুসলিম শরণার্থীদের দিয়ে দেশ দখলের অভিযোগ তোলে। এমনকি তাঁর নিজের দলের মধ্যেই তিনি কঠোর সমালোচনার সম্মুখীন হন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সক্রিয় এবং কার্যকর রাখতে তাঁর অবদান কম নয়। গ্রিসকে ইউরো জোনের ভেতরে রেখে ইউরো মুদ্রাকে বাঁচিয়ে দেন তিনি। এ ছাড়া প্যারিস এবং তাঁর নিজ দেশে সন্ত্রাসী হামলা, কোভিড-১৯ মহামারি ও ব্রেক্সিটের সমস্যা মোকাবিলা ও এর সমাধানে তাঁর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ইউয়ের অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সব সময় একমত না হলেও সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টির কারণ হননি। অ্যাঙ্গেলা মের্কেল কখনোই জার্মানির স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করেননি।
টাইম ম্যাগাজিন ২০১৫ সালে অ্যাঙ্গেলা মের্কেলকে বছরের ‘সেরা ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে মনোনীত করেছিল। বলা হয়েছে, ‘অ্যাঙ্গেলা মের্কেল নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আজকের দুনিয়ায় তা বিরল।’ স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর অবস্থান ও নৈতিকতাকে ভিত্তি করে নেতৃত্ব দেওয়া তাঁর একটি অসাধারণ গুণ। এ জন্যই তিনি সেরা ব্যক্তিত্ব। এ ছাড়া নামকরা ফোর্বস ম্যাগাজিন ২০০৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত, শুধু ২০১০ সাল ছাড়া তাঁকে চৌদ্দবার বিশ্বের ক্ষমতাধর নারী হিসেবে মনোনীত করেছে। তাঁকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে জাতিসংঘেও তিনি খ্যাতি লাভ করেছেন।
অ্যাঙ্গেলা ডরোথেয়া মের্কেল ১৯৫৪ সালের ১৭ জুলাই পশ্চিম জার্মানির হামবুর্গে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা হোর্স্ট কাসনার একজন ধর্মযাজক, আর মা হারলিন ছিলেন ল্যাটিন ভাষা ও ইংরেজির শিক্ষক। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার বয়স যখন দুই মাস, তিনি পরিবারের সঙ্গে কমিউনিস্ট-পূর্ব জার্মানিতে বার্লিনের উপকণ্ঠে এক গ্রামে চলে যান এবং সেখানেই কাটে তাঁর শৈশব। শিক্ষাজীবনে পদার্থ বিজ্ঞানে অর্জন করেছেন উচ্চতর ডিগ্রি। ডক্টরেট করেছেন কোয়ান্টাম রসায়নে। তিনি একজন বিজ্ঞানী। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে গবেষণা ও বিজ্ঞান ছিল তাঁর জগৎ।
সেই ৯ নভেম্বর ১৯৮৯ রাত থেকে খুব একটা ঘুমানোর সুযোগ তাঁর হয়নি। সেদিন জার্মানিকে পূর্ব ও পশ্চিম নাম দিয়ে বিভক্ত করা বিশাল বার্লিন বিভেদের প্রাচীরটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে সমাপ্তি ঘটে পূর্ব জার্মানিতে ৪০ বছরের কমিউনিস্ট শাসনের। সে সময় অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের বয়স ছিল ৩৫। তিনি বলেছিলেন, ‘পঁয়ত্রিশটি বছরের বন্দীদশার অসহ্য জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছেন’, পেয়েছেন নতুন জীবনের স্বাদ। মুক্ত জীবনের শুরুতেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। দীর্ঘ ৪১ বছর বিভক্ত থাকার পর ১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর জার্মান জাতি আবার একত্রিত হয়েছিল। দুই মাস পর ১৯৯০ সালে মধ্য দক্ষিণপন্থী ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নে যোগ দিয়েছিলেন। পরের বছর চ্যান্সেলর হেলমুট কোহলের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হন। হেলমুট কোহল তাঁকে তাঁর নিজের মেয়ের মতোই স্নেহ করতেন।
সত্যিকার অর্থেই মানবিক ও নৈতিক বলে বলীয়ান অত্যন্ত মার্জিত, সৎ, নির্লোভ এবং সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত একজন রাষ্ট্রনায়ক তিনি। প্রায় নিখুঁত এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য নিজ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছেন অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। হিটলারের ‘রেসিস্ট-ফ্যাসিস্ট’ দুর্নাম কাটিয়ে জার্মানিকে একটি মানবিক রাষ্ট্রে পরিণত করার অনেকখানি কৃতিত্ব তাঁরই প্রাপ্য। জনগণের একরাশ ভালোবাসা সম্বল করে নিজে থেকেই বিদায় নিতে যাচ্ছেন তিনি।
জার্মানিতে অনেকেই ‘মোতথি’ অর্থাৎ ‘মা’ সম্বোধনে তাঁর প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা প্রকাশ করে থাকেন। অথচ শিশুদের খুব প্রিয় ৬৭ বছর বয়সী অ্যাঙ্গেলা মের্কেল ব্যক্তিগত জীবনে নিঃসন্তান। তারপরও তাঁর আছে অগণিত সন্তান। বিশ্ব রাজনীতির অস্থির মঞ্চ থেকে বিদেয় নিলেও যারা তাঁকে ভালোবেসে ‘মা’ বলে ডাকেন, তাঁদের তিনি ভুলে থাকতে পারবেন কি? অবসর গ্রহণের পরে সত্যিই কি তিনি ঘুমাবেন?
মইনুল হাসান: ফ্রান্স প্রবাসী লেখক ও গবেষক
‘আমি একটু ঘুমাব, অনেক দিন ভালো ঘুমাইনি।’
আপনি অবসরে যাওয়ার পর কী করবেন বলে ঠিক করেছেন—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল এমন করেই জবাব দিয়েছিলেন। তিনি ইউরোপের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ জার্মানির প্রথম নারী চ্যান্সেলর। ২০০৫ সালের ২২ নভেম্বর তিনি সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং এক নাগাড়ে চার মেয়াদে মোট ১৬ বছর এই পদে থেকেছেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে তিনি নেতৃত্বের পদে থেকেছেন। জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে এ সময়ের মধ্যে অ্যাঙ্গেলা মের্কেল যুক্তরাষ্ট্রের চারজন এবং ফ্রান্সের চারজন প্রেসিডেন্টকে দেখেছেন। বিশ্ব রাজনীতিতে অ্যাঙ্গেলা মের্কেল পরিণত হয়েছেন এক বিস্ময়কর কিংবদন্তিতে।
এ বছর ২৬ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হলো সাধারণ নির্বাচন। দেশটির ২০ তম এ সাধারণ নির্বাচনে শলৎজের দল এসপিডি ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে। অন্যদিকে মের্কেলের মধ্যডানপন্থী সিডিইউ পেয়েছে ২৪ দশমিক ১ শতাংশ ভোট। নতুন সরকার গঠন পর্যন্ত ‘অন্তর্বর্তীকালীন চ্যান্সেলর’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। তারপর তিনি অবসর নেবেন।
চার মেয়াদে একটি শক্তিশালী দেশের সরকার প্রধান হিসেবে তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে অনেক চড়াই-উতরাই। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করেন তিনি। ২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের ফুকোশিমায় প্রাণঘাতী পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটলে তিনি জার্মানিকে পারমাণবিক শক্তি নির্ভরশীলতা থেকে বের করে আনার উদ্যোগ নেন। জার্মানির অর্থনীতি ও রাজনীতিতে সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলেই তাঁকে বলা হয় ‘লৌহমানবী’। অথচ তাঁর আছে এক কোমল হৃদয়।
২০১৫ সালে যখন মধ্যপ্রাচ্য থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে লাখ লাখ মানুষ ইউরোপে পাড়ি জমাচ্ছিল, তখন অন্য দেশগুলো দরজা বন্ধ রাখলেও মের্কেল তাদের জন্য জার্মানির দরজা খুলে দিয়েছিলেন। উগ্রপন্থীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও তিনি ১০ লাখ শরণার্থীকে নিজ দেশে আশ্রয় দিয়েছেন, যা মানবজাতির জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এ কাজ তাঁর জন্য মোটেই সহজ ছিল না। তাঁকে নাস্তানাবুদ করতে উগ্রপন্থীরা তাঁর বিরুদ্ধে মুসলিম শরণার্থীদের দিয়ে দেশ দখলের অভিযোগ তোলে। এমনকি তাঁর নিজের দলের মধ্যেই তিনি কঠোর সমালোচনার সম্মুখীন হন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সক্রিয় এবং কার্যকর রাখতে তাঁর অবদান কম নয়। গ্রিসকে ইউরো জোনের ভেতরে রেখে ইউরো মুদ্রাকে বাঁচিয়ে দেন তিনি। এ ছাড়া প্যারিস এবং তাঁর নিজ দেশে সন্ত্রাসী হামলা, কোভিড-১৯ মহামারি ও ব্রেক্সিটের সমস্যা মোকাবিলা ও এর সমাধানে তাঁর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ইউয়ের অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সব সময় একমত না হলেও সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টির কারণ হননি। অ্যাঙ্গেলা মের্কেল কখনোই জার্মানির স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করেননি।
টাইম ম্যাগাজিন ২০১৫ সালে অ্যাঙ্গেলা মের্কেলকে বছরের ‘সেরা ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে মনোনীত করেছিল। বলা হয়েছে, ‘অ্যাঙ্গেলা মের্কেল নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আজকের দুনিয়ায় তা বিরল।’ স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর অবস্থান ও নৈতিকতাকে ভিত্তি করে নেতৃত্ব দেওয়া তাঁর একটি অসাধারণ গুণ। এ জন্যই তিনি সেরা ব্যক্তিত্ব। এ ছাড়া নামকরা ফোর্বস ম্যাগাজিন ২০০৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত, শুধু ২০১০ সাল ছাড়া তাঁকে চৌদ্দবার বিশ্বের ক্ষমতাধর নারী হিসেবে মনোনীত করেছে। তাঁকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে জাতিসংঘেও তিনি খ্যাতি লাভ করেছেন।
অ্যাঙ্গেলা ডরোথেয়া মের্কেল ১৯৫৪ সালের ১৭ জুলাই পশ্চিম জার্মানির হামবুর্গে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা হোর্স্ট কাসনার একজন ধর্মযাজক, আর মা হারলিন ছিলেন ল্যাটিন ভাষা ও ইংরেজির শিক্ষক। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার বয়স যখন দুই মাস, তিনি পরিবারের সঙ্গে কমিউনিস্ট-পূর্ব জার্মানিতে বার্লিনের উপকণ্ঠে এক গ্রামে চলে যান এবং সেখানেই কাটে তাঁর শৈশব। শিক্ষাজীবনে পদার্থ বিজ্ঞানে অর্জন করেছেন উচ্চতর ডিগ্রি। ডক্টরেট করেছেন কোয়ান্টাম রসায়নে। তিনি একজন বিজ্ঞানী। রাজনীতিতে প্রবেশের আগে গবেষণা ও বিজ্ঞান ছিল তাঁর জগৎ।
সেই ৯ নভেম্বর ১৯৮৯ রাত থেকে খুব একটা ঘুমানোর সুযোগ তাঁর হয়নি। সেদিন জার্মানিকে পূর্ব ও পশ্চিম নাম দিয়ে বিভক্ত করা বিশাল বার্লিন বিভেদের প্রাচীরটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে সমাপ্তি ঘটে পূর্ব জার্মানিতে ৪০ বছরের কমিউনিস্ট শাসনের। সে সময় অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের বয়স ছিল ৩৫। তিনি বলেছিলেন, ‘পঁয়ত্রিশটি বছরের বন্দীদশার অসহ্য জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছেন’, পেয়েছেন নতুন জীবনের স্বাদ। মুক্ত জীবনের শুরুতেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। দীর্ঘ ৪১ বছর বিভক্ত থাকার পর ১৯৯০ সালের ৩ অক্টোবর জার্মান জাতি আবার একত্রিত হয়েছিল। দুই মাস পর ১৯৯০ সালে মধ্য দক্ষিণপন্থী ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নে যোগ দিয়েছিলেন। পরের বছর চ্যান্সেলর হেলমুট কোহলের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হন। হেলমুট কোহল তাঁকে তাঁর নিজের মেয়ের মতোই স্নেহ করতেন।
সত্যিকার অর্থেই মানবিক ও নৈতিক বলে বলীয়ান অত্যন্ত মার্জিত, সৎ, নির্লোভ এবং সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত একজন রাষ্ট্রনায়ক তিনি। প্রায় নিখুঁত এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য নিজ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছেন অ্যাঙ্গেলা মের্কেল। হিটলারের ‘রেসিস্ট-ফ্যাসিস্ট’ দুর্নাম কাটিয়ে জার্মানিকে একটি মানবিক রাষ্ট্রে পরিণত করার অনেকখানি কৃতিত্ব তাঁরই প্রাপ্য। জনগণের একরাশ ভালোবাসা সম্বল করে নিজে থেকেই বিদায় নিতে যাচ্ছেন তিনি।
জার্মানিতে অনেকেই ‘মোতথি’ অর্থাৎ ‘মা’ সম্বোধনে তাঁর প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা প্রকাশ করে থাকেন। অথচ শিশুদের খুব প্রিয় ৬৭ বছর বয়সী অ্যাঙ্গেলা মের্কেল ব্যক্তিগত জীবনে নিঃসন্তান। তারপরও তাঁর আছে অগণিত সন্তান। বিশ্ব রাজনীতির অস্থির মঞ্চ থেকে বিদেয় নিলেও যারা তাঁকে ভালোবেসে ‘মা’ বলে ডাকেন, তাঁদের তিনি ভুলে থাকতে পারবেন কি? অবসর গ্রহণের পরে সত্যিই কি তিনি ঘুমাবেন?
মইনুল হাসান: ফ্রান্স প্রবাসী লেখক ও গবেষক
‘মি. মানদানি’, ‘মি. মানদামি’, ‘জোরহান মানদামি, ‘জোহরান মানদামি’—এগুলো নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির নামের কিছু বহুল প্রচলিত সংস্করণ। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি থেকেই অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জোহরান মামদানির নামের উচ্চারণ নিয়ে বিতর্কের সূচনা।
৪১ মিনিট আগে‘প্রতিটি প্রজন্মই নিজস্ব কারণ ও লক্ষ্য নিয়ে এগোয়, পুরোনো সংগ্রামের উত্তরাধিকার নিয়ে নয়। সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এই ধারা দেখা যায়—যুবকেরা শাসন বদলাতে পারে, কিন্তু টেকসই পরিবর্তন বা তাদের নিজস্ব ভবিষ্যতের উন্নতি প্রায়ই অধরা থেকে যায়, তা আরব বসন্ত হোক, বাংলাদেশ হোক বা হয়তো নেপাল।’
৪২ মিনিট আগে১৯ অক্টোবর নয়াদিল্লি ছিল বেশ সতর্ক অবস্থায়। সেদিন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত শিক্ষার্থী শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন। হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, জ্বালানো হয়েছিল মশাল। তাঁদের দাবি—তিস্তা নদী মাস্টারপ্ল্যান অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাঁরা মনে করেন, এই প্রকল্প বাংলাদেশের কৃষিনির্
১০ ঘণ্টা আগেগত সপ্তাহে মিসরে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি উদ্যাপনকালে ট্রাম্প তাঁর প্রধান কূটনৈতিক আলোচক স্টিভ উইটকফের দিকে ফিরে বলেন, ‘এবার আমাদের রাশিয়ার বিষয়টা মীমাংসা করতে হবে।’ তবে গাজা ইস্যুতে উইটকফ ও তাঁর দল যে অনুকূল পরিস্থিতি পেয়েছিলেন, তা ইউক্রেন যুদ্ধে পুনরায় সৃষ্টি করা কঠিন। চার বছর ছুঁইছুঁই সময় ধরে চলছে
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
‘মি. মানদানি’, ‘মি. মানদামি’, ‘জোরহান মানদামি, ‘জোহরান মানদামি’—এগুলো নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির নামের কিছু বহুল প্রচলিত সংস্করণ।
নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি থেকেই অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জোহরান মামদানির নামের উচ্চারণ নিয়ে বিতর্কের সূচনা। সে সময় নামের ভুল উচ্চারণ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমোকে এক কড়া জবাব দিয়েছিলেন মামদানি। গত সপ্তাহে মেয়র নির্বাচনের ত্রিমুখী বিতর্ক অনুষ্ঠানে বিষয়টি আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
বিতর্কের এক ঘণ্টার বেশি সময় পরও সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু এম কুমো একবারও এই দৌড়ে এগিয়ে থাকা প্রার্থীর নামটি উল্লেখ করার প্রয়োজন বোধ করেননি। তিনি তাঁকে কেবল ‘অ্যাসেম্বলিম্যান’ ও সাবেক মেয়র বিল ডি ব্লাসিওর একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ হিসেবে আখ্যায়িত করে দায়িত্ব সারেন। নির্বাচনী প্রচারে বারবার ভুলভাবে উচ্চারণ করার পর একধরনের ‘আত্মসংযম’ দেখিয়ে বিতর্কেও তিনি সেই নাম বলা থেকে বিরত থাকেন। তাঁর উচ্চারণ এতটাই ভুল ছিল যে, গত জুনে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি বিতর্কে অ্যাসেম্বলিম্যান জোহরান মামদানি নিজেই তাঁকে এক উচিত জবাব দেন।
তবে শুধু কুমোই নন, নানা কারণে মামদানির প্রথম ও শেষ নামটি উচ্চারণের ক্ষেত্রে বেশ অদ্ভুত, এমনকি সৃজনশীল ভাষাগত বিভ্রাটের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া গত সপ্তাহে সাধারণ নির্বাচনের প্রথম বিতর্কে তাঁর নাম বলতে হিমশিম খেয়েছিলেন, তাঁকে ‘জোর-হান’ বলে ডেকেছিলেন। এমনকি নিউইয়র্কে অ্যাটর্নি জেনারেল ও মামদানির একজন প্রধান রাজনৈতিক সহযোগী লেটিটিয়া জেমসও এ মাসে ওয়াশিংটন হাইটসে একটি বড় নির্বাচনী জনসভায় তাঁর নাম ভুলভাবে উচ্চারণ করেন, মঞ্চে আসার সময় তাঁকে উৎসাহের সঙ্গে ‘মানদামি’ বলে চিৎকার করে স্বাগত জানান।
মামদানির জন্য তাঁর নাম বিকৃত করা অবশ্য নতুন কিছু নয়। ম্যানহাটনে একজন অভিবাসী হিসেবে বেড়ে ওঠার সময় তাঁর নামের ভুল উচ্চারণ ছিল একটি সাধারণ ঘটনা। তিনি বলেন, ‘এটা প্রায়ই ঘটত। তবে সত্যি বলতে, যাঁরা চেষ্টা করেন এবং ভুল করেন, তাঁদের প্রতি আমার কোনো বিরক্তি নেই। চেষ্টা করাটাই আমার কাছে সব।’
শহরের প্রথম মুসলিম মেয়র হওয়ার দৌড়ে থাকা মামদানি অবশ্য মনে করেন, কুমোর মতো কিছু ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর নাম ভুল উচ্চারণ করছেন অথবা সঠিকভাবে বলার চেষ্টা করেন না। তিনি বলেন, ‘যাঁরা আমার নাম ভুল উচ্চারণ করার জন্য অতিরিক্ত চেষ্টা করেন, সেটা কোনো ভুল নয়, সেটা একধরনের বার্তা।’
সাবেক মেয়র ডি ব্লাসিও মামদানির আরও একজন সহযোগী, যিনি স্বীকার করেছেন যে—তিনিও মামদানির নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছেন। ডি ব্লাসিও বলেন, ‘আমি মনে করি, আমি এখন কাছাকাছি আছি, তবে আমার বেশ কিছুদিন লেগেছে!’ তিনি যোগ করেন, ‘আমার মনে হয়, আমেরিকান ইংরেজির কানে, এই নামের গঠন কিছুটা অপ্রত্যাশিত। এর ছন্দটা সঠিকভাবে ধরতে কিছু অনুশীলন লাগে।’
স্লিওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি ভালো করার চেষ্টা করছেন, ‘সময় লাগবে। এটা ইচ্ছাকৃত নয়।’ স্লিওয়ার নামও অনেকে ভুল উচ্চারণ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মামদানির কষ্ট বুঝি। গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলস প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৪৬ বছরের মধ্যে প্রায় ৩৩ বছর আমার নাম ক্রমাগত ভুল উচ্চারণ করা হয়েছে। আমি এতে অবশ্য আপত্তি করি না।’
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মামদানির নাম বলার ব্যর্থ প্রচেষ্টা হয়তো এতটাও উদারভাবে দেখা যেতে পারে না, কারণ, ট্রাম্প বারবার এ প্রার্থীর ওপর কথার আক্রমণ করে তাঁকে গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়েছেন। তাঁর প্রেস সেক্রেটারি, ক্যারোলিন লিভিট, তাঁর প্রথম ও শেষ নামের অংশগুলোকে একত্র করে আরও অদ্ভুত উচ্চারণ ব্যবহার করেছিলেন।
তবে কিছু ভুল উচ্চারণ ইচ্ছাকৃত হলেও বেশ কয়েকজন ভাষাতত্ত্ববিদ দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, মামদানির প্রথম ও শেষ উভয় নামেই এমন অক্ষর বিন্যাস ও স্বরধ্বনি রয়েছে, যা ইংরেজিতে সাধারণত দেখা যায় না। তাই অনেকের পক্ষে এটি উচ্চারণে হিমশিম খাওয়াটা আশ্চর্যজনক কিছু নয়।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক জিলিয়ান গ্যালাগার জানান, ইংরেজিতে ‘মড’-এর চেয়ে ‘নড’ ক্রমযুক্ত শত শত শব্দ বেশি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ব্যঞ্জনবর্ণের গুচ্ছ ভুল উচ্চারণের কারণ হতে পারে। একটি প্রক্রিয়া, যা অ্যাসিমিলেশন নামে পরিচিত, তাতে মামদানির শেষ নামের দ্বিতীয় ‘ম’ অক্ষরটি ‘ন’-এ পরিবর্তিত হয়ে ‘মানদানি’র মতো শোনাতে পারে। অন্য একটি প্রক্রিয়া, যা সাবস্টিটিউশন নামে পরিচিত, তাতে বক্তারা মামদানির ‘ন’ অক্ষরটিকে অন্য একটি ‘ম’ দিয়ে প্রতিস্থাপন করে ফেলেন।
এ ধরনের কথার প্যাটার্ন এড়িয়ে চলা কঠিন হতে পারে। এনওয়াইইউ সোসিওলিঙ্গুইস্টিকস ল্যাবের সহপরিচালক অধ্যাপক লরেল ম্যাকেনজি বলেন, ‘মামদানিতে ‘‘ম’’-এর পাশে ‘‘দ’’ আছে, যা ইংরেজিভাষীদের জন্য কঠিন। আমাদের জিহ্বা এই নির্দিষ্ট ক্রমের ধ্বনি তৈরি করতে অভ্যস্ত নয়।’
প্রায়ই, ‘জোহরান’কে তীক্ষ্ণ ‘জোহর-অ্যান’ (Zohr-ANNE) হিসেবে উচ্চারণ করা হয়। সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের গ্র্যাজুয়েট সেন্টারের সহযোগী গবেষণা অধ্যাপক সুজান ভ্যান ডের ফিস্ট বলেন, এই ভুল উচ্চারণ ঘটে আমেরিকানাইজড ইংরেজিতে স্বরধ্বনি ভিন্নভাবে উচ্চারিত হওয়ার কারণে।
মামদানি জানান, একবার নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি ম্যানহাটনের একটি মসজিদে জুমার নামাজে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে কেউ এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন কি না যে, কেউ তাঁদের নাম ধারাবাহিকভাবে ভুল উচ্চারণ করেছেন। কক্ষের বেশির ভাগ মানুষই হাত তুলেছিলেন।
মামদানি বলেন, অগণিত অভিবাসী এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন। যখন কেউ কারও নাম নিয়ে উপহাস করে বা ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করে, তখন এর মানে হলো, কেউ যেন বলতে চায় যে, এই ব্যক্তি এখানে থাকার যোগ্য নয়।
মামদানি জানান, তিনি তাঁর নাম নিয়ে গর্বিত। তাঁর মা তাঁর প্রথম নামটি বেছে নিয়েছিলেন, যার অর্থ ‘আকাশের প্রথম তারা’। তাঁর বাবা তাঁর মাঝের নাম ‘কোয়ামে’ বেছে নিয়েছিলেন ঘানার প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন, সেই কোয়ামে নক্রুমার সম্মানে।
তবে মামদানি মনে করেন, তাঁর নাম উচ্চারণে ভুল করা বা বিকৃত করা ইচ্ছাকৃত। এর পেছনে কোনো রাজনীতি রয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, অ্যান্ড্রু কুমোর মতো মানুষদের ‘জন ক্যাটসিমাটিডিস’-এর মতো কঠিন নাম উচ্চারণে কোনো দিন ভুল হয় না। যিনি আসলে এক গ্রিক বিলিয়নিয়ার মুদি ব্যবসায়ী। কিন্তু মামদানি নামটা নাকি উচ্চারণ করা কঠিন! আসলে এটা পক্ষপাতের বিষয়।
অন্যরাও কুমোর এমন ভুলে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। সাংবাদিক আনন্দ গিরিধরদাস এমএসএনবিসিতে এক সাক্ষাৎকারে সরাসরি বলেন, ‘আপনি এমন এক বৃহৎ ও বৈচিত্র্যময় শহরকে নেতৃত্ব দিতে চান। অন্তত মানুষের নাম ঠিকভাবে উচ্চারণ করা শেখা উচিত।’
অন্যদিকে কুমোর মুখপাত্র রিচ অ্যাজোপার্ডি বলেছেন, ‘সাবেক গভর্নর কুমোর নামও প্রায়ই ভুল উচ্চারণ করা হয়। যেমন অনেকে ‘‘কুমো’’কে ‘‘কোমো’’ (ইতালির এক হ্রদের নামের মতো) বলেন। এটা ইচ্ছাকৃত নয়, তাই এতে বাড়াবাড়ি করার কিছু নেই। আমাদের নামও মানুষ প্রায়ই ভুল বলে, কিন্তু আমরা তা নিয়ে কান্নাকাটি করি না।’
তবে ম্যাকেনজি ও অন্যরা বলেন, কঠিন নাম উচ্চারণ করা মোটেও অসম্ভব কিছু নয়। একটু অনুশীলন আর আগ্রহ থাকলেই সম্ভব। বিশেষ করে, নিউইয়র্কের মতো শহরে, যেখানে বিশ্বের নানা প্রান্তের অভিবাসী সম্প্রদায় বসবাস করে।
ম্যাকেনজি বলেন, ‘আমরা তো সবাই ‘‘গেম অব থ্রোনস’’-এর সময় ‘‘ডেনেরিস টার্গারিয়ান’’ নামটা ঠিকঠাক শিখেছিলাম, তাই না? তাহলে মানুষের নাম শেখা কেন নয়? আমরা পারব, শুধু একটু চেষ্টা করতে হবে, একটু অনুশীলন করতে হবে।’
‘মি. মানদানি’, ‘মি. মানদামি’, ‘জোরহান মানদামি, ‘জোহরান মানদামি’—এগুলো নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির নামের কিছু বহুল প্রচলিত সংস্করণ।
নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি থেকেই অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জোহরান মামদানির নামের উচ্চারণ নিয়ে বিতর্কের সূচনা। সে সময় নামের ভুল উচ্চারণ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমোকে এক কড়া জবাব দিয়েছিলেন মামদানি। গত সপ্তাহে মেয়র নির্বাচনের ত্রিমুখী বিতর্ক অনুষ্ঠানে বিষয়টি আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
বিতর্কের এক ঘণ্টার বেশি সময় পরও সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু এম কুমো একবারও এই দৌড়ে এগিয়ে থাকা প্রার্থীর নামটি উল্লেখ করার প্রয়োজন বোধ করেননি। তিনি তাঁকে কেবল ‘অ্যাসেম্বলিম্যান’ ও সাবেক মেয়র বিল ডি ব্লাসিওর একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ হিসেবে আখ্যায়িত করে দায়িত্ব সারেন। নির্বাচনী প্রচারে বারবার ভুলভাবে উচ্চারণ করার পর একধরনের ‘আত্মসংযম’ দেখিয়ে বিতর্কেও তিনি সেই নাম বলা থেকে বিরত থাকেন। তাঁর উচ্চারণ এতটাই ভুল ছিল যে, গত জুনে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি বিতর্কে অ্যাসেম্বলিম্যান জোহরান মামদানি নিজেই তাঁকে এক উচিত জবাব দেন।
তবে শুধু কুমোই নন, নানা কারণে মামদানির প্রথম ও শেষ নামটি উচ্চারণের ক্ষেত্রে বেশ অদ্ভুত, এমনকি সৃজনশীল ভাষাগত বিভ্রাটের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া গত সপ্তাহে সাধারণ নির্বাচনের প্রথম বিতর্কে তাঁর নাম বলতে হিমশিম খেয়েছিলেন, তাঁকে ‘জোর-হান’ বলে ডেকেছিলেন। এমনকি নিউইয়র্কে অ্যাটর্নি জেনারেল ও মামদানির একজন প্রধান রাজনৈতিক সহযোগী লেটিটিয়া জেমসও এ মাসে ওয়াশিংটন হাইটসে একটি বড় নির্বাচনী জনসভায় তাঁর নাম ভুলভাবে উচ্চারণ করেন, মঞ্চে আসার সময় তাঁকে উৎসাহের সঙ্গে ‘মানদামি’ বলে চিৎকার করে স্বাগত জানান।
মামদানির জন্য তাঁর নাম বিকৃত করা অবশ্য নতুন কিছু নয়। ম্যানহাটনে একজন অভিবাসী হিসেবে বেড়ে ওঠার সময় তাঁর নামের ভুল উচ্চারণ ছিল একটি সাধারণ ঘটনা। তিনি বলেন, ‘এটা প্রায়ই ঘটত। তবে সত্যি বলতে, যাঁরা চেষ্টা করেন এবং ভুল করেন, তাঁদের প্রতি আমার কোনো বিরক্তি নেই। চেষ্টা করাটাই আমার কাছে সব।’
শহরের প্রথম মুসলিম মেয়র হওয়ার দৌড়ে থাকা মামদানি অবশ্য মনে করেন, কুমোর মতো কিছু ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর নাম ভুল উচ্চারণ করছেন অথবা সঠিকভাবে বলার চেষ্টা করেন না। তিনি বলেন, ‘যাঁরা আমার নাম ভুল উচ্চারণ করার জন্য অতিরিক্ত চেষ্টা করেন, সেটা কোনো ভুল নয়, সেটা একধরনের বার্তা।’
সাবেক মেয়র ডি ব্লাসিও মামদানির আরও একজন সহযোগী, যিনি স্বীকার করেছেন যে—তিনিও মামদানির নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছেন। ডি ব্লাসিও বলেন, ‘আমি মনে করি, আমি এখন কাছাকাছি আছি, তবে আমার বেশ কিছুদিন লেগেছে!’ তিনি যোগ করেন, ‘আমার মনে হয়, আমেরিকান ইংরেজির কানে, এই নামের গঠন কিছুটা অপ্রত্যাশিত। এর ছন্দটা সঠিকভাবে ধরতে কিছু অনুশীলন লাগে।’
স্লিওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি ভালো করার চেষ্টা করছেন, ‘সময় লাগবে। এটা ইচ্ছাকৃত নয়।’ স্লিওয়ার নামও অনেকে ভুল উচ্চারণ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মামদানির কষ্ট বুঝি। গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলস প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৪৬ বছরের মধ্যে প্রায় ৩৩ বছর আমার নাম ক্রমাগত ভুল উচ্চারণ করা হয়েছে। আমি এতে অবশ্য আপত্তি করি না।’
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মামদানির নাম বলার ব্যর্থ প্রচেষ্টা হয়তো এতটাও উদারভাবে দেখা যেতে পারে না, কারণ, ট্রাম্প বারবার এ প্রার্থীর ওপর কথার আক্রমণ করে তাঁকে গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়েছেন। তাঁর প্রেস সেক্রেটারি, ক্যারোলিন লিভিট, তাঁর প্রথম ও শেষ নামের অংশগুলোকে একত্র করে আরও অদ্ভুত উচ্চারণ ব্যবহার করেছিলেন।
তবে কিছু ভুল উচ্চারণ ইচ্ছাকৃত হলেও বেশ কয়েকজন ভাষাতত্ত্ববিদ দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, মামদানির প্রথম ও শেষ উভয় নামেই এমন অক্ষর বিন্যাস ও স্বরধ্বনি রয়েছে, যা ইংরেজিতে সাধারণত দেখা যায় না। তাই অনেকের পক্ষে এটি উচ্চারণে হিমশিম খাওয়াটা আশ্চর্যজনক কিছু নয়।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক জিলিয়ান গ্যালাগার জানান, ইংরেজিতে ‘মড’-এর চেয়ে ‘নড’ ক্রমযুক্ত শত শত শব্দ বেশি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ব্যঞ্জনবর্ণের গুচ্ছ ভুল উচ্চারণের কারণ হতে পারে। একটি প্রক্রিয়া, যা অ্যাসিমিলেশন নামে পরিচিত, তাতে মামদানির শেষ নামের দ্বিতীয় ‘ম’ অক্ষরটি ‘ন’-এ পরিবর্তিত হয়ে ‘মানদানি’র মতো শোনাতে পারে। অন্য একটি প্রক্রিয়া, যা সাবস্টিটিউশন নামে পরিচিত, তাতে বক্তারা মামদানির ‘ন’ অক্ষরটিকে অন্য একটি ‘ম’ দিয়ে প্রতিস্থাপন করে ফেলেন।
এ ধরনের কথার প্যাটার্ন এড়িয়ে চলা কঠিন হতে পারে। এনওয়াইইউ সোসিওলিঙ্গুইস্টিকস ল্যাবের সহপরিচালক অধ্যাপক লরেল ম্যাকেনজি বলেন, ‘মামদানিতে ‘‘ম’’-এর পাশে ‘‘দ’’ আছে, যা ইংরেজিভাষীদের জন্য কঠিন। আমাদের জিহ্বা এই নির্দিষ্ট ক্রমের ধ্বনি তৈরি করতে অভ্যস্ত নয়।’
প্রায়ই, ‘জোহরান’কে তীক্ষ্ণ ‘জোহর-অ্যান’ (Zohr-ANNE) হিসেবে উচ্চারণ করা হয়। সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের গ্র্যাজুয়েট সেন্টারের সহযোগী গবেষণা অধ্যাপক সুজান ভ্যান ডের ফিস্ট বলেন, এই ভুল উচ্চারণ ঘটে আমেরিকানাইজড ইংরেজিতে স্বরধ্বনি ভিন্নভাবে উচ্চারিত হওয়ার কারণে।
মামদানি জানান, একবার নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি ম্যানহাটনের একটি মসজিদে জুমার নামাজে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে কেউ এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন কি না যে, কেউ তাঁদের নাম ধারাবাহিকভাবে ভুল উচ্চারণ করেছেন। কক্ষের বেশির ভাগ মানুষই হাত তুলেছিলেন।
মামদানি বলেন, অগণিত অভিবাসী এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন। যখন কেউ কারও নাম নিয়ে উপহাস করে বা ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করে, তখন এর মানে হলো, কেউ যেন বলতে চায় যে, এই ব্যক্তি এখানে থাকার যোগ্য নয়।
মামদানি জানান, তিনি তাঁর নাম নিয়ে গর্বিত। তাঁর মা তাঁর প্রথম নামটি বেছে নিয়েছিলেন, যার অর্থ ‘আকাশের প্রথম তারা’। তাঁর বাবা তাঁর মাঝের নাম ‘কোয়ামে’ বেছে নিয়েছিলেন ঘানার প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন, সেই কোয়ামে নক্রুমার সম্মানে।
তবে মামদানি মনে করেন, তাঁর নাম উচ্চারণে ভুল করা বা বিকৃত করা ইচ্ছাকৃত। এর পেছনে কোনো রাজনীতি রয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, অ্যান্ড্রু কুমোর মতো মানুষদের ‘জন ক্যাটসিমাটিডিস’-এর মতো কঠিন নাম উচ্চারণে কোনো দিন ভুল হয় না। যিনি আসলে এক গ্রিক বিলিয়নিয়ার মুদি ব্যবসায়ী। কিন্তু মামদানি নামটা নাকি উচ্চারণ করা কঠিন! আসলে এটা পক্ষপাতের বিষয়।
অন্যরাও কুমোর এমন ভুলে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। সাংবাদিক আনন্দ গিরিধরদাস এমএসএনবিসিতে এক সাক্ষাৎকারে সরাসরি বলেন, ‘আপনি এমন এক বৃহৎ ও বৈচিত্র্যময় শহরকে নেতৃত্ব দিতে চান। অন্তত মানুষের নাম ঠিকভাবে উচ্চারণ করা শেখা উচিত।’
অন্যদিকে কুমোর মুখপাত্র রিচ অ্যাজোপার্ডি বলেছেন, ‘সাবেক গভর্নর কুমোর নামও প্রায়ই ভুল উচ্চারণ করা হয়। যেমন অনেকে ‘‘কুমো’’কে ‘‘কোমো’’ (ইতালির এক হ্রদের নামের মতো) বলেন। এটা ইচ্ছাকৃত নয়, তাই এতে বাড়াবাড়ি করার কিছু নেই। আমাদের নামও মানুষ প্রায়ই ভুল বলে, কিন্তু আমরা তা নিয়ে কান্নাকাটি করি না।’
তবে ম্যাকেনজি ও অন্যরা বলেন, কঠিন নাম উচ্চারণ করা মোটেও অসম্ভব কিছু নয়। একটু অনুশীলন আর আগ্রহ থাকলেই সম্ভব। বিশেষ করে, নিউইয়র্কের মতো শহরে, যেখানে বিশ্বের নানা প্রান্তের অভিবাসী সম্প্রদায় বসবাস করে।
ম্যাকেনজি বলেন, ‘আমরা তো সবাই ‘‘গেম অব থ্রোনস’’-এর সময় ‘‘ডেনেরিস টার্গারিয়ান’’ নামটা ঠিকঠাক শিখেছিলাম, তাই না? তাহলে মানুষের নাম শেখা কেন নয়? আমরা পারব, শুধু একটু চেষ্টা করতে হবে, একটু অনুশীলন করতে হবে।’
‘আমি একটু ঘুমাব, অনেক দিন ভালো ঘুমাইনি।’ আপনি অবসরে যাওয়ার পর কী করবেন বলে ঠিক করেছেন—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল এমন করেই জবাব দিয়েছিলেন। তিনি ইউরোপের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ জার্মানির প্রথম নারী চ্যান্সেলর। ২০০৫ সালের ২২ নভেম্বর তিনি সরকার প্রধানে
২২ অক্টোবর ২০২১‘প্রতিটি প্রজন্মই নিজস্ব কারণ ও লক্ষ্য নিয়ে এগোয়, পুরোনো সংগ্রামের উত্তরাধিকার নিয়ে নয়। সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এই ধারা দেখা যায়—যুবকেরা শাসন বদলাতে পারে, কিন্তু টেকসই পরিবর্তন বা তাদের নিজস্ব ভবিষ্যতের উন্নতি প্রায়ই অধরা থেকে যায়, তা আরব বসন্ত হোক, বাংলাদেশ হোক বা হয়তো নেপাল।’
৪২ মিনিট আগে১৯ অক্টোবর নয়াদিল্লি ছিল বেশ সতর্ক অবস্থায়। সেদিন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত শিক্ষার্থী শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন। হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, জ্বালানো হয়েছিল মশাল। তাঁদের দাবি—তিস্তা নদী মাস্টারপ্ল্যান অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাঁরা মনে করেন, এই প্রকল্প বাংলাদেশের কৃষিনির্
১০ ঘণ্টা আগেগত সপ্তাহে মিসরে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি উদ্যাপনকালে ট্রাম্প তাঁর প্রধান কূটনৈতিক আলোচক স্টিভ উইটকফের দিকে ফিরে বলেন, ‘এবার আমাদের রাশিয়ার বিষয়টা মীমাংসা করতে হবে।’ তবে গাজা ইস্যুতে উইটকফ ও তাঁর দল যে অনুকূল পরিস্থিতি পেয়েছিলেন, তা ইউক্রেন যুদ্ধে পুনরায় সৃষ্টি করা কঠিন। চার বছর ছুঁইছুঁই সময় ধরে চলছে
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
ভারতে জেনারেশন জেড বা জেন-জি তরুণের সংখ্যা বিশাল—৩৭ কোটি। অর্থাৎ, দেশটির মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশই তাঁরা। ২৫ বছরের কম বয়সী অস্থির প্রকৃতির এই তরুণেরা হাইপার কানেক্টেড, অর্থাৎ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পরস্পরের সঙ্গে তীব্রভাবে যুক্ত। স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বদৌলতে রাজনীতি, দুর্নীতি ও বৈষম্যের তথ্য প্রতিনিয়তই জানছেন তাঁরা। সেই তথ্যপ্রবাহের সূত্র ধরেই এশিয়া ও আফ্রিকায় বিদ্যমান ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে রাজপথে নেমে এসেছেন তাঁরা।
১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই তরুণেরাই গত মাসে নেপালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার পতন ঘটিয়েছেন। মাদাগাস্কারে তরুণদের আন্দোলন সেখানকার শাসককে সরিয়ে দিয়েছে। জীবনযাত্রার বাড়তি খরচ, দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ার তরুণদের তীব্র বিক্ষোভে সরকার মাথা নোয়াতে বাধ্য করেছে। আর বাংলাদেশে চাকরিতে কোটাপদ্ধতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ধারাবাহিকতা গত বছর সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এনক্রিপটেড অ্যাপের মাধ্যমে সংগঠিত ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব আন্দোলন দ্রুতগতির, বিকেন্দ্রীভূত, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষে ভরা।
কিন্তু কাছাকাছি পরিস্থিতি হলেও লাগোয়া প্রতিবেশী দেশ ভারতের জেন-জি প্রজন্মের মধ্যে এনক্রিপটেড অ্যাপ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমনির্ভর আন্দোলনের ঢেউ এখনো তেমন আলোড়ন তুলতে পারেননি। সবচেয়ে তরুণ এই প্রজন্ম ভারতে কেন আওয়াজ তুলছেন না, প্রতিবাদে রাস্তায় কেন নামছেন না? তাঁরা কি ভীত বা কেউ কি তাঁদের রাস্তায় নামতে বাধা দিচ্ছে?
বিবিসি বলছে, মূলত ‘দেশবিরোধী’ তকমা পাওয়ার ভয়, জাতিগত ও আঞ্চলিক বিভাজন, অর্থনৈতিক চাপ যেন ভারতের তরুণদের কাঁধে ভারী বোঝা হয়ে চেপে বসেছে। তাঁর সঙ্গে ‘প্রতিবাদে কিছুই বদলাবে না’—এমন সাধারণ মনোভাবও আছে। সব মিলিয়ে ভারতে জেন-জি আন্দোলনের জোরালো কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। গত সেপ্টেম্বরে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখ অঞ্চলের জন্য ‘রাজ্যে মর্যাদা’ দাবিতে অসন্তোষের ক্ষীণ স্ফুলিঙ্গ দেখা গেছে; বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়।
ওই ঘটনাকে জেন-জি দ্রোহ ও দীর্ঘদিনের অবদমিত ক্ষোভের প্রতিফলন হিসেবে তুলে ধরেছেন এই বিক্ষোভের অন্যতম অনুপ্রেরণাদাতা পরিবেশবাদী অধিকারকর্মী সোনম ওয়াংচুক। ভারতের জাতীয় রাজনীতিতেও এই বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়ে। কর্ণাটকের নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে সোচ্চার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্সে লিখেছেন, ‘জেন-জি প্রজন্মই ভোট কারচুপি রুখবে ও সংবিধানকে রক্ষা করবে।’ তারপরও জেন-জি প্রজন্মের কাছ থেকে সাড়া নেই।
নেপালসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের তরুণদের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লির পুলিশ কমিশনার নাকি রাজধানীতে তরুণদের সম্ভাব্য আন্দোলন ঠেকাতে জরুরি পরিকল্পনা প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছেন। অনলাইনে এ নিয়ে তুমুল তর্ক-বিতর্ক চলছে। ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুমলাইভ বলছে, জেন-জি প্রজন্মের ভেতরেই যেন এক অনলাইন যুদ্ধ চলছে। রেডিট ও এক্সে ভারতের তরুণদের একইভাবে রাস্তায় নামার আহ্বান জানাচ্ছেন কেউ কেউ; একে ন্যায়বিচারের আহ্বান মনে করছেন তাঁরা। অন্য পক্ষ নেপালের সহিংসতার দৃষ্টান্ত টেনে সতর্ক করছেন, তাঁরা বিদেশি হস্তক্ষেপের ছায়া দেখছেন।
ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে সত্তরের দশকের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ক্যাম্পাস বিক্ষোভ—ভারতের ছাত্ররাজনীতি সব সময়ই দৃষ্টি কাড়ে। তবু বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নেপাল বা বাংলাদেশের মতো ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে টলিয়ে দেওয়া এত সম্ভব নয়। একটা কারণ হলো, আঞ্চলিক বিভক্তি। আশপাশের দেশগুলোর তরুণদের মতো তাঁরাও ক্ষুব্ধ। কিন্তু তাঁদের ক্ষোভ মূলত আঞ্চলিক ইস্যুগুলোকে ঘিরে। ফলে বেকারত্ব, দুর্নীতি আর বৈষম্য নিয়ে দেশজুড়ে তরুণদের বিক্ষোভ গড়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব।
বিহারের ২৬ বছর বয়সী সাংবাদিক বিপুল কুমার বলেন, ‘আমাদের সবাইকে এক করতে পারবে—এমন কোনো শক্তি আমি দেখি না। নেপালের তুলনায় ভারতে ক্ষমতা অনেক বেশি বিকেন্দ্রীকৃত, তরুণদের ক্ষোভও তেমনই বিক্ষিপ্ত। আমি চাই, কেন্দ্রীয় সরকারকে চ্যালেঞ্জ করা হোক। কিন্তু অনেক তরুণ কেবল সরকারি চাকরি বাড়ুক—এটাই চায়।’
ভারতীয় থিংকট্যাংক ইয়ুথ পলিসি সেন্টারের প্রধান সুধাংশু কৌশিক মনে করেন, জেন-জি বিদ্রোহের দিক থেকে ভারত হয়তো ‘ব্যতিক্রম’ হয়েই থাকবে। তিনি বলেন, ‘বয়সই একমাত্র বিষয় নয়। ভারতে তরুণেরা আঞ্চলিক, ভাষাগত ও জাতিভিত্তিক পরিচয়ের সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত, যা প্রায়ই তাদের একে অপরের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেয়।’
সুধাংশু কৌশিকের প্রশ্ন, যদি সত্যিই ভারতে কোনো জেন-জি বিদ্রোহ হয়, কোন তরুণদের হবে সেটা? দলিত তরুণদের, শহুরে তরুণদের, না তামিলভাষী তরুণদের? তাঁর ভাষায়, ‘বাস্তবতা হলো, ভারতের তরুণসমাজ এত বৈচিত্র্যময় ও পরস্পরবিরোধী যে তাদের এক ছাতার নিচে আনা কঠিন।’
শহুরে তরুণেরা কাজের সুযোগ ও নগর-পরিকাঠামো নিয়ে আন্দোলন করবে; একসময় ‘অস্পৃশ্য’ বিবেচিত দলিত তরুণেরা লড়বে জাতিগত বৈষম্য ও সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নে; আর তামিল তরুণেরা সোচ্চার হবে ভাষা, আঞ্চলিক অধিকার কিংবা স্থানীয় ঐতিহ্য রক্ষায়। আবার রাজ্যভেদেও তরুণদের ক্ষোভের কারণ আলাদা। গুজরাট ও হরিয়ানায় উচ্চবর্ণের তরুণেরা কোটা বাড়ানোর দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। অন্যদিকে তামিলনাড়ুতে তরুণেরা প্রতিবাদ করেছে ঐতিহ্যবাহী খেলা জল্লিকাত্তু নিষিদ্ধের রায়কে ঘিরে।
আঞ্চলিক বিভাজন ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর চেপে বসেছে ‘দেশবিরোধী’ ট্যাগ পাওয়ার বড় ভয়। এ কারণে সবচেয়ে সচেতন ও পরস্পরের সঙ্গে হাইপার কানেক্টেড তরুণেরাও রাস্তায় নামতে ভয় পায় বলে মনে করেন জেন-জি প্রজন্মের তরুণ ২৩ বছর বয়সী রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতক ধৈর্য চৌধুরী। ভারতের সরকারি রাজনীতিক ও টেলিভিশন উপস্থাপকদের প্রায়ই আন্দোলনকারীদের এই ‘ট্যাগ’ দিতে শোনা যায়।
এখানেই শেষ নয়, আরও একটি বাধা কাজ করে ভারতীয় তরুণদের সামনে। তা হলো— দেশটির শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিবাদ নিষিদ্ধ বা সীমিত করেছে। অথচ, এই প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় রাজনৈতিক বিতর্ক ও আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র ছিল। ২৩ বছর বয়সী গবেষক হাজারা নাজিব বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল, কিন্তু এখন তারা সেই চেতনা হারিয়েছে।’
সরকার অবশ্য দাবি করে, তরুণদের উদ্যম এখনো অটুট। আর তাঁরা নানা প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে সেই শক্তিকে গঠনমূলক পথে নিতে চান। কিন্তু বাস্তবে অর্থনৈতিক চাপই তরুণদের জীবনপথ নির্ধারণ করে দিচ্ছে। সুধাংশু কৌশিক বলেন, ‘ভারতের অর্থনীতি এখন তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো করছে। কিন্তু তবু বেকারত্বের আতঙ্ক বাড়ছে। তরুণেরা নিজেরাই পথ খুঁজছে, বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা বছর বছর বাড়ছে।’
তরুণেরা ভোট দিতেও খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ১৮ বছর বয়সী ভোটারদের মধ্যে মাত্র ৩৮ শতাংশ নিজেদের নাম নিবন্ধন করেছিল। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রচলিত রাজনীতির ওপর আস্থা ক্রমেই কমছে। ২৯ শতাংশ তরুণ ভারতীয় রাজনীতি পুরোপুরি এড়িয়ে চলেন।
কৌশিকের পর্যবেক্ষণ হলো, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বহু ভারতীয় তরুণ ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত পরিচয় খুঁজে নিচ্ছে। অতএব, অবাক হওয়ার কিছু নেই। ভারতীয় থিংকট্যাংক সিএসডিএস-লোকনীতি পরিচালিত এক বুথফেরত জরিপে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তরুণদের মধ্যেও শক্ত সমর্থন ধরে রেখেছে। ২০১৯ সালে এই সমর্থনের হার ছিল ৪০ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে এসে সামান্যই কমেছে।
তবে ভারতের জেন-জি প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনার শিকড় আরও গভীরে। কৈশোরে দেখা এক দশকের রাস্তাঘাটের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে এটি উৎসারিত। এই প্রজন্মের বয়োজ্যেষ্ঠরা কিশোর বয়সে আন্না হাজারের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দিল্লির গণধর্ষণ ঘটনার পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ পর্যন্ত ২০১০-এর দশকের বড় বড় আন্দোলন দেখেছেন।
২০১৯ সালে একের পর এক ক্যাম্পাস ও সড়ক নিয়ে আন্দোলনেও শিক্ষার্থীরাই নেতৃত্ব দেন। কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের প্রতিবাদ থেকে শুরু করে কৃষি আইন, বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে তরুণেরাই ছিলেন সোচ্চার। এর মধ্যে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এর মূল্যও অনেক বেশি।
সিএএ বিরোধী আন্দোলনের সময় ২০১৯ সালে দিল্লির জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া ও আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করলে ছাত্রদের বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। ছাত্রনেতা উমর খালিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারে পর পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি কারাগারে। তাঁকে দিল্লি দাঙ্গায় ‘মূল ষড়যন্ত্রকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে উমর খালিদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ইয়ুথ ফেলো ২৬ বছর বয়সী যতিন ঝা বলেন, ‘সরকার প্রতিবাদ নিয়ে এমন কুৎসা রটায় যে খুব কম মানুষই প্রতিবাদের কথা ভাবতে পারে।’ তবে সরকারের দাবি, এই আন্দোলনগুলোতে ‘বাইরের প্রভাব’ ও ‘রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান’ আছে। তারা কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করছে।
ভারতীয় তরুণসমাজের এই নীরবতাকে ‘গভীর প্রজন্মগত বৈশিষ্ট্যের’ প্রতিফলন বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানী দীপঙ্কর গুপ্ত। তাঁর ভাষায়, ‘যুবশক্তি ক্ষণস্থায়ী; প্রতিটি প্রজন্মই নিজস্ব কারণ ও লক্ষ্য নিয়ে এগোয়, পুরোনো সংগ্রামের উত্তরাধিকার নিয়ে নয়।’ তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এই ধারা দেখা যায়—যুবকেরা শাসন বদলাতে পারে, কিন্তু টেকসই পরিবর্তন বা তাদের নিজস্ব ভবিষ্যতের উন্নতি প্রায়ই অধরা থেকে যায়, তা আরব বসন্ত হোক, বাংলাদেশ হোক বা হয়তো নেপাল।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
ভারতে জেনারেশন জেড বা জেন-জি তরুণের সংখ্যা বিশাল—৩৭ কোটি। অর্থাৎ, দেশটির মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশই তাঁরা। ২৫ বছরের কম বয়সী অস্থির প্রকৃতির এই তরুণেরা হাইপার কানেক্টেড, অর্থাৎ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পরস্পরের সঙ্গে তীব্রভাবে যুক্ত। স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বদৌলতে রাজনীতি, দুর্নীতি ও বৈষম্যের তথ্য প্রতিনিয়তই জানছেন তাঁরা। সেই তথ্যপ্রবাহের সূত্র ধরেই এশিয়া ও আফ্রিকায় বিদ্যমান ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে রাজপথে নেমে এসেছেন তাঁরা।
১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই তরুণেরাই গত মাসে নেপালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার পতন ঘটিয়েছেন। মাদাগাস্কারে তরুণদের আন্দোলন সেখানকার শাসককে সরিয়ে দিয়েছে। জীবনযাত্রার বাড়তি খরচ, দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ার তরুণদের তীব্র বিক্ষোভে সরকার মাথা নোয়াতে বাধ্য করেছে। আর বাংলাদেশে চাকরিতে কোটাপদ্ধতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ধারাবাহিকতা গত বছর সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এনক্রিপটেড অ্যাপের মাধ্যমে সংগঠিত ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব আন্দোলন দ্রুতগতির, বিকেন্দ্রীভূত, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষে ভরা।
কিন্তু কাছাকাছি পরিস্থিতি হলেও লাগোয়া প্রতিবেশী দেশ ভারতের জেন-জি প্রজন্মের মধ্যে এনক্রিপটেড অ্যাপ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমনির্ভর আন্দোলনের ঢেউ এখনো তেমন আলোড়ন তুলতে পারেননি। সবচেয়ে তরুণ এই প্রজন্ম ভারতে কেন আওয়াজ তুলছেন না, প্রতিবাদে রাস্তায় কেন নামছেন না? তাঁরা কি ভীত বা কেউ কি তাঁদের রাস্তায় নামতে বাধা দিচ্ছে?
বিবিসি বলছে, মূলত ‘দেশবিরোধী’ তকমা পাওয়ার ভয়, জাতিগত ও আঞ্চলিক বিভাজন, অর্থনৈতিক চাপ যেন ভারতের তরুণদের কাঁধে ভারী বোঝা হয়ে চেপে বসেছে। তাঁর সঙ্গে ‘প্রতিবাদে কিছুই বদলাবে না’—এমন সাধারণ মনোভাবও আছে। সব মিলিয়ে ভারতে জেন-জি আন্দোলনের জোরালো কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। গত সেপ্টেম্বরে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখ অঞ্চলের জন্য ‘রাজ্যে মর্যাদা’ দাবিতে অসন্তোষের ক্ষীণ স্ফুলিঙ্গ দেখা গেছে; বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়।
ওই ঘটনাকে জেন-জি দ্রোহ ও দীর্ঘদিনের অবদমিত ক্ষোভের প্রতিফলন হিসেবে তুলে ধরেছেন এই বিক্ষোভের অন্যতম অনুপ্রেরণাদাতা পরিবেশবাদী অধিকারকর্মী সোনম ওয়াংচুক। ভারতের জাতীয় রাজনীতিতেও এই বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়ে। কর্ণাটকের নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে সোচ্চার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্সে লিখেছেন, ‘জেন-জি প্রজন্মই ভোট কারচুপি রুখবে ও সংবিধানকে রক্ষা করবে।’ তারপরও জেন-জি প্রজন্মের কাছ থেকে সাড়া নেই।
নেপালসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের তরুণদের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লির পুলিশ কমিশনার নাকি রাজধানীতে তরুণদের সম্ভাব্য আন্দোলন ঠেকাতে জরুরি পরিকল্পনা প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছেন। অনলাইনে এ নিয়ে তুমুল তর্ক-বিতর্ক চলছে। ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুমলাইভ বলছে, জেন-জি প্রজন্মের ভেতরেই যেন এক অনলাইন যুদ্ধ চলছে। রেডিট ও এক্সে ভারতের তরুণদের একইভাবে রাস্তায় নামার আহ্বান জানাচ্ছেন কেউ কেউ; একে ন্যায়বিচারের আহ্বান মনে করছেন তাঁরা। অন্য পক্ষ নেপালের সহিংসতার দৃষ্টান্ত টেনে সতর্ক করছেন, তাঁরা বিদেশি হস্তক্ষেপের ছায়া দেখছেন।
ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে সত্তরের দশকের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ক্যাম্পাস বিক্ষোভ—ভারতের ছাত্ররাজনীতি সব সময়ই দৃষ্টি কাড়ে। তবু বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নেপাল বা বাংলাদেশের মতো ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে টলিয়ে দেওয়া এত সম্ভব নয়। একটা কারণ হলো, আঞ্চলিক বিভক্তি। আশপাশের দেশগুলোর তরুণদের মতো তাঁরাও ক্ষুব্ধ। কিন্তু তাঁদের ক্ষোভ মূলত আঞ্চলিক ইস্যুগুলোকে ঘিরে। ফলে বেকারত্ব, দুর্নীতি আর বৈষম্য নিয়ে দেশজুড়ে তরুণদের বিক্ষোভ গড়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব।
বিহারের ২৬ বছর বয়সী সাংবাদিক বিপুল কুমার বলেন, ‘আমাদের সবাইকে এক করতে পারবে—এমন কোনো শক্তি আমি দেখি না। নেপালের তুলনায় ভারতে ক্ষমতা অনেক বেশি বিকেন্দ্রীকৃত, তরুণদের ক্ষোভও তেমনই বিক্ষিপ্ত। আমি চাই, কেন্দ্রীয় সরকারকে চ্যালেঞ্জ করা হোক। কিন্তু অনেক তরুণ কেবল সরকারি চাকরি বাড়ুক—এটাই চায়।’
ভারতীয় থিংকট্যাংক ইয়ুথ পলিসি সেন্টারের প্রধান সুধাংশু কৌশিক মনে করেন, জেন-জি বিদ্রোহের দিক থেকে ভারত হয়তো ‘ব্যতিক্রম’ হয়েই থাকবে। তিনি বলেন, ‘বয়সই একমাত্র বিষয় নয়। ভারতে তরুণেরা আঞ্চলিক, ভাষাগত ও জাতিভিত্তিক পরিচয়ের সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত, যা প্রায়ই তাদের একে অপরের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেয়।’
সুধাংশু কৌশিকের প্রশ্ন, যদি সত্যিই ভারতে কোনো জেন-জি বিদ্রোহ হয়, কোন তরুণদের হবে সেটা? দলিত তরুণদের, শহুরে তরুণদের, না তামিলভাষী তরুণদের? তাঁর ভাষায়, ‘বাস্তবতা হলো, ভারতের তরুণসমাজ এত বৈচিত্র্যময় ও পরস্পরবিরোধী যে তাদের এক ছাতার নিচে আনা কঠিন।’
শহুরে তরুণেরা কাজের সুযোগ ও নগর-পরিকাঠামো নিয়ে আন্দোলন করবে; একসময় ‘অস্পৃশ্য’ বিবেচিত দলিত তরুণেরা লড়বে জাতিগত বৈষম্য ও সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নে; আর তামিল তরুণেরা সোচ্চার হবে ভাষা, আঞ্চলিক অধিকার কিংবা স্থানীয় ঐতিহ্য রক্ষায়। আবার রাজ্যভেদেও তরুণদের ক্ষোভের কারণ আলাদা। গুজরাট ও হরিয়ানায় উচ্চবর্ণের তরুণেরা কোটা বাড়ানোর দাবিতে রাস্তায় নেমেছে। অন্যদিকে তামিলনাড়ুতে তরুণেরা প্রতিবাদ করেছে ঐতিহ্যবাহী খেলা জল্লিকাত্তু নিষিদ্ধের রায়কে ঘিরে।
আঞ্চলিক বিভাজন ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর চেপে বসেছে ‘দেশবিরোধী’ ট্যাগ পাওয়ার বড় ভয়। এ কারণে সবচেয়ে সচেতন ও পরস্পরের সঙ্গে হাইপার কানেক্টেড তরুণেরাও রাস্তায় নামতে ভয় পায় বলে মনে করেন জেন-জি প্রজন্মের তরুণ ২৩ বছর বয়সী রাষ্ট্রবিজ্ঞানের স্নাতক ধৈর্য চৌধুরী। ভারতের সরকারি রাজনীতিক ও টেলিভিশন উপস্থাপকদের প্রায়ই আন্দোলনকারীদের এই ‘ট্যাগ’ দিতে শোনা যায়।
এখানেই শেষ নয়, আরও একটি বাধা কাজ করে ভারতীয় তরুণদের সামনে। তা হলো— দেশটির শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিবাদ নিষিদ্ধ বা সীমিত করেছে। অথচ, এই প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় রাজনৈতিক বিতর্ক ও আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র ছিল। ২৩ বছর বয়সী গবেষক হাজারা নাজিব বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল, কিন্তু এখন তারা সেই চেতনা হারিয়েছে।’
সরকার অবশ্য দাবি করে, তরুণদের উদ্যম এখনো অটুট। আর তাঁরা নানা প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে সেই শক্তিকে গঠনমূলক পথে নিতে চান। কিন্তু বাস্তবে অর্থনৈতিক চাপই তরুণদের জীবনপথ নির্ধারণ করে দিচ্ছে। সুধাংশু কৌশিক বলেন, ‘ভারতের অর্থনীতি এখন তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো করছে। কিন্তু তবু বেকারত্বের আতঙ্ক বাড়ছে। তরুণেরা নিজেরাই পথ খুঁজছে, বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা বছর বছর বাড়ছে।’
তরুণেরা ভোট দিতেও খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ১৮ বছর বয়সী ভোটারদের মধ্যে মাত্র ৩৮ শতাংশ নিজেদের নাম নিবন্ধন করেছিল। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রচলিত রাজনীতির ওপর আস্থা ক্রমেই কমছে। ২৯ শতাংশ তরুণ ভারতীয় রাজনীতি পুরোপুরি এড়িয়ে চলেন।
কৌশিকের পর্যবেক্ষণ হলো, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বহু ভারতীয় তরুণ ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত পরিচয় খুঁজে নিচ্ছে। অতএব, অবাক হওয়ার কিছু নেই। ভারতীয় থিংকট্যাংক সিএসডিএস-লোকনীতি পরিচালিত এক বুথফেরত জরিপে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তরুণদের মধ্যেও শক্ত সমর্থন ধরে রেখেছে। ২০১৯ সালে এই সমর্থনের হার ছিল ৪০ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে এসে সামান্যই কমেছে।
তবে ভারতের জেন-জি প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনার শিকড় আরও গভীরে। কৈশোরে দেখা এক দশকের রাস্তাঘাটের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে এটি উৎসারিত। এই প্রজন্মের বয়োজ্যেষ্ঠরা কিশোর বয়সে আন্না হাজারের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দিল্লির গণধর্ষণ ঘটনার পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ পর্যন্ত ২০১০-এর দশকের বড় বড় আন্দোলন দেখেছেন।
২০১৯ সালে একের পর এক ক্যাম্পাস ও সড়ক নিয়ে আন্দোলনেও শিক্ষার্থীরাই নেতৃত্ব দেন। কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের প্রতিবাদ থেকে শুরু করে কৃষি আইন, বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে তরুণেরাই ছিলেন সোচ্চার। এর মধ্যে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এর মূল্যও অনেক বেশি।
সিএএ বিরোধী আন্দোলনের সময় ২০১৯ সালে দিল্লির জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া ও আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করলে ছাত্রদের বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। ছাত্রনেতা উমর খালিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারে পর পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি কারাগারে। তাঁকে দিল্লি দাঙ্গায় ‘মূল ষড়যন্ত্রকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে উমর খালিদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ইয়ুথ ফেলো ২৬ বছর বয়সী যতিন ঝা বলেন, ‘সরকার প্রতিবাদ নিয়ে এমন কুৎসা রটায় যে খুব কম মানুষই প্রতিবাদের কথা ভাবতে পারে।’ তবে সরকারের দাবি, এই আন্দোলনগুলোতে ‘বাইরের প্রভাব’ ও ‘রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান’ আছে। তারা কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করছে।
ভারতীয় তরুণসমাজের এই নীরবতাকে ‘গভীর প্রজন্মগত বৈশিষ্ট্যের’ প্রতিফলন বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানী দীপঙ্কর গুপ্ত। তাঁর ভাষায়, ‘যুবশক্তি ক্ষণস্থায়ী; প্রতিটি প্রজন্মই নিজস্ব কারণ ও লক্ষ্য নিয়ে এগোয়, পুরোনো সংগ্রামের উত্তরাধিকার নিয়ে নয়।’ তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এই ধারা দেখা যায়—যুবকেরা শাসন বদলাতে পারে, কিন্তু টেকসই পরিবর্তন বা তাদের নিজস্ব ভবিষ্যতের উন্নতি প্রায়ই অধরা থেকে যায়, তা আরব বসন্ত হোক, বাংলাদেশ হোক বা হয়তো নেপাল।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
‘আমি একটু ঘুমাব, অনেক দিন ভালো ঘুমাইনি।’ আপনি অবসরে যাওয়ার পর কী করবেন বলে ঠিক করেছেন—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল এমন করেই জবাব দিয়েছিলেন। তিনি ইউরোপের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ জার্মানির প্রথম নারী চ্যান্সেলর। ২০০৫ সালের ২২ নভেম্বর তিনি সরকার প্রধানে
২২ অক্টোবর ২০২১‘মি. মানদানি’, ‘মি. মানদামি’, ‘জোরহান মানদামি, ‘জোহরান মানদামি’—এগুলো নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির নামের কিছু বহুল প্রচলিত সংস্করণ। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি থেকেই অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জোহরান মামদানির নামের উচ্চারণ নিয়ে বিতর্কের সূচনা।
৪১ মিনিট আগে১৯ অক্টোবর নয়াদিল্লি ছিল বেশ সতর্ক অবস্থায়। সেদিন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত শিক্ষার্থী শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন। হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, জ্বালানো হয়েছিল মশাল। তাঁদের দাবি—তিস্তা নদী মাস্টারপ্ল্যান অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাঁরা মনে করেন, এই প্রকল্প বাংলাদেশের কৃষিনির্
১০ ঘণ্টা আগেগত সপ্তাহে মিসরে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি উদ্যাপনকালে ট্রাম্প তাঁর প্রধান কূটনৈতিক আলোচক স্টিভ উইটকফের দিকে ফিরে বলেন, ‘এবার আমাদের রাশিয়ার বিষয়টা মীমাংসা করতে হবে।’ তবে গাজা ইস্যুতে উইটকফ ও তাঁর দল যে অনুকূল পরিস্থিতি পেয়েছিলেন, তা ইউক্রেন যুদ্ধে পুনরায় সৃষ্টি করা কঠিন। চার বছর ছুঁইছুঁই সময় ধরে চলছে
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
১৯ অক্টোবর নয়াদিল্লি ছিল বেশ সতর্ক অবস্থায়। সেদিন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত শিক্ষার্থী শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন। হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, জ্বালানো হয়েছিল মশাল। তাঁদের দাবি—তিস্তা নদী মাস্টারপ্ল্যান অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাঁরা মনে করেন, এই প্রকল্প বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে এক নতুন বিপ্লব ঘটাবে।
এই বিক্ষোভ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দেশের নানা প্রান্তে তিস্তা নিয়ে ক্ষোভ জমছে। কারণ, ভারত-বাংলাদেশের বহুদিনের পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে। এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে তিস্তা নদী—৪১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এক আন্তর্জাতিক জলধারা, যা একসময় কৃষির প্রাণস্রোত ছিল, এখন পরিণত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে।
তিস্তার উৎপত্তি পূর্ব হিমালয়ের পাওহুনরি পর্বত থেকে। এটি ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য অতিক্রম করে বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে প্রবেশ করে। পরে যমুনা নদীর সঙ্গে মিশে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ে। দুই দেশই তিস্তার পানি কৃষি ও সেচের কাজে ব্যবহার করে। বাংলাদেশের ছয়টি উত্তরাঞ্চলীয় জেলায় কয়েক লাখ কৃষক শুষ্ক মৌসুমে পানির ঘাটতিতে ফসল ফলাতে হিমশিম খান। আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইএফপিআরআই) হিসাবে, তিস্তার পানির স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ১৫ লাখ টন ধান হারায়।
অন্যদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তিস্তা সেচ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গজলডোবা ব্যারাজসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অভিন্ন নদী ৫৪টি। তবে তিস্তা ব্যবস্থাপনা বরাবরই দুই দেশের মধ্যে বিরোধের বিষয়। ১৯৮৩ সালে একটি অন্তর্বর্তী চুক্তিতে তিস্তার পানির ৩৯ শতাংশ ভারতের এবং ৩৬ শতাংশ বাংলাদেশের ভাগে পড়ে। কিন্তু সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১১ সালে নতুন একটি সমঝোতার আশা জেগেছিল, যেখানে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের জন্য ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ পানির অংশ নির্ধারণ করা হয়।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের কৃষকদের ক্ষতির আশঙ্কায় সেই চুক্তির বিরোধিতা করেন এবং আলোচনা থমকে যায়। এর পর থেকে অগ্রগতি বলতে কার্যত কিছুই হয়নি। এর ফলে ঢাকায় এমন ধারণা তৈরি হয় যে বাংলাদেশ-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ভারত হয় অনিচ্ছুক, নয়তো অক্ষম, যদিও তাদের রয়েছে কৌশলগত ও ভৌগোলিক সুবিধা।
বাংলাদেশের জনগণের দাবির বিপরীতে ভারত নীরব—এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ তিস্তা নিয়ে চীনের সহায়তা চাইছে। ২০২৫ সালের মার্চে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বেইজিং সফরে গিয়ে চীনকে ‘পানিব্যবস্থাপনায় পারদর্শী’ বলে প্রশংসা করেন। সেখানে তিনি ৫০ বছরের তিস্তা মাস্টারপ্ল্যান হাতে পান, যা নদী পুনর্বাসন ও অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর জোর দেয়।
চীন তিস্তা প্রকল্পে ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগ মিলিয়ে ২১০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার ঘোষণা দেয়। যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিস্তা রিভার কম্প্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন প্রজেক্টে (টিআরসিএমআরপি) অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জলাধার নির্মাণ, নদী খনন, সড়ক ও স্যাটেলাইট শহর উন্নয়ন পরিকল্পনা।
এ ছাড়া দুই দেশ যৌথভাবে ইয়ারলুন সাংপো-যমুনা (বাংলাদেশে যা ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নামে পরিচিত) নদীর পানিবিজ্ঞান খাতে তথ্য বিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেয়, যা নতুন দিল্লিকে উদ্বিগ্ন করেছে। কারণ, এতে চীনের পানিনিয়ন্ত্রণ দক্ষিণ এশিয়ার নিম্নাঞ্চলের প্রবাহে প্রভাব ফেলতে পারে। এর পাশাপাশি চীন বাংলাদেশের মোংলা বন্দর, চট্টগ্রাম অর্থনৈতিক অঞ্চল, টেক্সটাইল, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ডিজিটাল অর্থনীতিতেও বিনিয়োগ করছে, যা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে দুই দেশের সহযোগিতাকে গভীর করছে।
ভারতের কাছে এটি কেবল পানি নয়, ‘নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতির প্রশ্ন’। তিস্তা প্রকল্পের অবস্থান ভারতের কৌশলগত ‘শিলিগুড়ি করিডর’–এর কাছাকাছি, যাকে বলা হয় ‘চিকেনস নেক’। মাত্র ৬০ কিলোমিটার লম্বা ও ২২ কিলোমিটার চওড়া এই স্থলপথ ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করেছে। ফলে ভারতের দৃষ্টিতে এর আশপাশে কোনো ‘বিদেশি শক্তির’ উপস্থিতি সরাসরি নিরাপত্তা ঝুঁকি।
এরই মধ্যে ভারত সরকার ব্রহ্মপুত্রের উজানে চীনের বিশাল বাঁধ প্রকল্প নিয়েও সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। তিস্তা ইস্যু সামনে আসার সময়টাও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তিস্তা ইস্যুকে কাজে লাগাতে পারে। অপর দিকে আওয়ামী লীগকে অভিযুক্ত ভারতের প্রতি অতিমাত্রায় অনুগত হওয়ার অভিযোগে। তিস্তার তাড়না আরও বেড়েছে ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানি চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে। সেই মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই তিস্তা প্রশ্নে জাতীয় বিতর্ক এখন নতুন মাত্রা পাচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:
১৯ অক্টোবর নয়াদিল্লি ছিল বেশ সতর্ক অবস্থায়। সেদিন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত শিক্ষার্থী শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন। হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, জ্বালানো হয়েছিল মশাল। তাঁদের দাবি—তিস্তা নদী মাস্টারপ্ল্যান অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাঁরা মনে করেন, এই প্রকল্প বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে এক নতুন বিপ্লব ঘটাবে।
এই বিক্ষোভ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। দেশের নানা প্রান্তে তিস্তা নিয়ে ক্ষোভ জমছে। কারণ, ভারত-বাংলাদেশের বহুদিনের পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে। এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে তিস্তা নদী—৪১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এক আন্তর্জাতিক জলধারা, যা একসময় কৃষির প্রাণস্রোত ছিল, এখন পরিণত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে।
তিস্তার উৎপত্তি পূর্ব হিমালয়ের পাওহুনরি পর্বত থেকে। এটি ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য অতিক্রম করে বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে প্রবেশ করে। পরে যমুনা নদীর সঙ্গে মিশে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ে। দুই দেশই তিস্তার পানি কৃষি ও সেচের কাজে ব্যবহার করে। বাংলাদেশের ছয়টি উত্তরাঞ্চলীয় জেলায় কয়েক লাখ কৃষক শুষ্ক মৌসুমে পানির ঘাটতিতে ফসল ফলাতে হিমশিম খান। আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইএফপিআরআই) হিসাবে, তিস্তার পানির স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ১৫ লাখ টন ধান হারায়।
অন্যদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তিস্তা সেচ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গজলডোবা ব্যারাজসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নদীর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অভিন্ন নদী ৫৪টি। তবে তিস্তা ব্যবস্থাপনা বরাবরই দুই দেশের মধ্যে বিরোধের বিষয়। ১৯৮৩ সালে একটি অন্তর্বর্তী চুক্তিতে তিস্তার পানির ৩৯ শতাংশ ভারতের এবং ৩৬ শতাংশ বাংলাদেশের ভাগে পড়ে। কিন্তু সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১১ সালে নতুন একটি সমঝোতার আশা জেগেছিল, যেখানে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের জন্য ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ পানির অংশ নির্ধারণ করা হয়।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের কৃষকদের ক্ষতির আশঙ্কায় সেই চুক্তির বিরোধিতা করেন এবং আলোচনা থমকে যায়। এর পর থেকে অগ্রগতি বলতে কার্যত কিছুই হয়নি। এর ফলে ঢাকায় এমন ধারণা তৈরি হয় যে বাংলাদেশ-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ভারত হয় অনিচ্ছুক, নয়তো অক্ষম, যদিও তাদের রয়েছে কৌশলগত ও ভৌগোলিক সুবিধা।
বাংলাদেশের জনগণের দাবির বিপরীতে ভারত নীরব—এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ তিস্তা নিয়ে চীনের সহায়তা চাইছে। ২০২৫ সালের মার্চে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বেইজিং সফরে গিয়ে চীনকে ‘পানিব্যবস্থাপনায় পারদর্শী’ বলে প্রশংসা করেন। সেখানে তিনি ৫০ বছরের তিস্তা মাস্টারপ্ল্যান হাতে পান, যা নদী পুনর্বাসন ও অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর জোর দেয়।
চীন তিস্তা প্রকল্পে ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগ মিলিয়ে ২১০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার ঘোষণা দেয়। যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিস্তা রিভার কম্প্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন প্রজেক্টে (টিআরসিএমআরপি) অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জলাধার নির্মাণ, নদী খনন, সড়ক ও স্যাটেলাইট শহর উন্নয়ন পরিকল্পনা।
এ ছাড়া দুই দেশ যৌথভাবে ইয়ারলুন সাংপো-যমুনা (বাংলাদেশে যা ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নামে পরিচিত) নদীর পানিবিজ্ঞান খাতে তথ্য বিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেয়, যা নতুন দিল্লিকে উদ্বিগ্ন করেছে। কারণ, এতে চীনের পানিনিয়ন্ত্রণ দক্ষিণ এশিয়ার নিম্নাঞ্চলের প্রবাহে প্রভাব ফেলতে পারে। এর পাশাপাশি চীন বাংলাদেশের মোংলা বন্দর, চট্টগ্রাম অর্থনৈতিক অঞ্চল, টেক্সটাইল, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ডিজিটাল অর্থনীতিতেও বিনিয়োগ করছে, যা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে দুই দেশের সহযোগিতাকে গভীর করছে।
ভারতের কাছে এটি কেবল পানি নয়, ‘নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতির প্রশ্ন’। তিস্তা প্রকল্পের অবস্থান ভারতের কৌশলগত ‘শিলিগুড়ি করিডর’–এর কাছাকাছি, যাকে বলা হয় ‘চিকেনস নেক’। মাত্র ৬০ কিলোমিটার লম্বা ও ২২ কিলোমিটার চওড়া এই স্থলপথ ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করেছে। ফলে ভারতের দৃষ্টিতে এর আশপাশে কোনো ‘বিদেশি শক্তির’ উপস্থিতি সরাসরি নিরাপত্তা ঝুঁকি।
এরই মধ্যে ভারত সরকার ব্রহ্মপুত্রের উজানে চীনের বিশাল বাঁধ প্রকল্প নিয়েও সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। তিস্তা ইস্যু সামনে আসার সময়টাও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তিস্তা ইস্যুকে কাজে লাগাতে পারে। অপর দিকে আওয়ামী লীগকে অভিযুক্ত ভারতের প্রতি অতিমাত্রায় অনুগত হওয়ার অভিযোগে। তিস্তার তাড়না আরও বেড়েছে ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানি চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে। সেই মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই তিস্তা প্রশ্নে জাতীয় বিতর্ক এখন নতুন মাত্রা পাচ্ছে।
আরও খবর পড়ুন:
‘আমি একটু ঘুমাব, অনেক দিন ভালো ঘুমাইনি।’ আপনি অবসরে যাওয়ার পর কী করবেন বলে ঠিক করেছেন—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল এমন করেই জবাব দিয়েছিলেন। তিনি ইউরোপের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ জার্মানির প্রথম নারী চ্যান্সেলর। ২০০৫ সালের ২২ নভেম্বর তিনি সরকার প্রধানে
২২ অক্টোবর ২০২১‘মি. মানদানি’, ‘মি. মানদামি’, ‘জোরহান মানদামি, ‘জোহরান মানদামি’—এগুলো নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির নামের কিছু বহুল প্রচলিত সংস্করণ। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি থেকেই অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জোহরান মামদানির নামের উচ্চারণ নিয়ে বিতর্কের সূচনা।
৪১ মিনিট আগে‘প্রতিটি প্রজন্মই নিজস্ব কারণ ও লক্ষ্য নিয়ে এগোয়, পুরোনো সংগ্রামের উত্তরাধিকার নিয়ে নয়। সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এই ধারা দেখা যায়—যুবকেরা শাসন বদলাতে পারে, কিন্তু টেকসই পরিবর্তন বা তাদের নিজস্ব ভবিষ্যতের উন্নতি প্রায়ই অধরা থেকে যায়, তা আরব বসন্ত হোক, বাংলাদেশ হোক বা হয়তো নেপাল।’
৪২ মিনিট আগেগত সপ্তাহে মিসরে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি উদ্যাপনকালে ট্রাম্প তাঁর প্রধান কূটনৈতিক আলোচক স্টিভ উইটকফের দিকে ফিরে বলেন, ‘এবার আমাদের রাশিয়ার বিষয়টা মীমাংসা করতে হবে।’ তবে গাজা ইস্যুতে উইটকফ ও তাঁর দল যে অনুকূল পরিস্থিতি পেয়েছিলেন, তা ইউক্রেন যুদ্ধে পুনরায় সৃষ্টি করা কঠিন। চার বছর ছুঁইছুঁই সময় ধরে চলছে
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ দুই নেতার আসন্ন বৈঠক নিয়ে ছড়িয়ে পড়া খবরগুলো এখন বেশ অতিরঞ্জিত বলেই মনে হচ্ছে। কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বুদাপেস্টে ‘দুই সপ্তাহের মধ্যেই’ বৈঠক করবেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই বৈঠক অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। দুই দেশের শীর্ষ কূটনীতিকদের প্রাথমিক আলোচনাও বাতিল হয়েছে।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি কোনো অর্থহীন বৈঠক করতে চাই না। সময় নষ্ট করতে চাই না, দেখি কী হয়।’ বৈঠক হবে কি হবে না—এই দোলাচলই যেন ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানতে ট্রাম্পের চেষ্টার সর্বশেষ অধ্যায়। গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি করানোর পর থেকে বিষয়টি তাঁর বিশেষ নজরে এসেছে।
গত সপ্তাহে মিসরে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি উদ্যাপনকালে ট্রাম্প তাঁর প্রধান কূটনৈতিক আলোচক স্টিভ উইটকফের দিকে ফিরে বলেন, ‘এবার আমাদের রাশিয়ার বিষয়টা মীমাংসা করতে হবে।’ তবে গাজা ইস্যুতে উইটকফ ও তাঁর দল যে অনুকূল পরিস্থিতি পেয়েছিলেন, তা ইউক্রেন যুদ্ধে পুনরায় সৃষ্টি করা কঠিন। চার বছর ছুঁইছুঁই সময় ধরে চলছে এই যুদ্ধ।
উইটকফের মতে, গাজা চুক্তি সম্ভব হয়েছিল মূলত ইসরায়েলের এক অপ্রত্যাশিত ভুল পদক্ষেপের কারণে। আর সেটি ছিল কাতারে হামাসের আলোচকদের ওপর হামলা। এতে যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্ররা ক্ষুব্ধ হয়। একই সঙ্গে এই হামলা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর ট্রাম্পের চাপ প্রয়োগের পথ খুলে দেয়, যা শেষ পর্যন্ত একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির পথে আগায়।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে তাঁর প্রথম মেয়াদ থেকেই ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করেছেন, পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি বসতি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিও বদলে দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে সমর্থন জানিয়ে আবারও সেই ঘনিষ্ঠতা দেখিয়েছেন।
ইসরায়েলিদের মধ্যে ট্রাম্প এখন নেতানিয়াহুর চেয়েও জনপ্রিয়। ফলে ইসরায়েলি নেতার ওপর তাঁর প্রভাবও অনন্য। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরব বিশ্বের কয়েকটি প্রধান দেশের সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে তাঁর কূটনৈতিক প্রভাব ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী।
কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সে ধরনের প্রভাববলয় নেই। গত ৯ মাসে তিনি পুতিন ও জেলেনস্কি—দুজনকেই কখনো চাপ, কখনো সমঝোতার মাধ্যমে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ফল হয়নি বললেই চলে। তিনি রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানিতে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ইউক্রেনকে দূরপাল্লার অস্ত্র দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু বুঝতে পেরেছেন, এই পদক্ষেপগুলো নিলে বৈশ্বিক অর্থনীতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে এবং যুদ্ধ আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে ভলোদিমির জেলেনস্কির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ইউক্রেনের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও দেশটিতে অস্ত্র পাঠানোও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে ইউরোপীয় মিত্রদের উদ্বেগের মুখে তিনি আবার পিছু হটেন। ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলো সতর্ক করে বলেছিল, ইউক্রেনের পতন পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। মূলত সেই আশঙ্কা থেকেই ট্রাম্প পিছু হটেন।
ট্রাম্প প্রায়ই নিজের ‘চুক্তি করার দক্ষতা’ নিয়ে গর্ব করেন। দাবি করেন, সামনাসামনি বৈঠকেই তিনি সমাধান বের করে ফেলতে পারেন। কিন্তু পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর বৈঠকগুলোর কোনোটি যুদ্ধের সমাধান এগিয়ে নেয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, পুতিন হয়তো ট্রাম্পের এই ‘চুক্তির নেশা’ ও মুখোমুখি আলোচনার প্রতি বিশ্বাসকে নিজের পক্ষে ব্যবহার করছেন।
গত জুলাইয়ে পুতিন আলাস্কায় এক সম্মেলনের প্রস্তাবে রাজি হন। সে সময় মার্কিন কংগ্রেসের রিপাবলিকান সিনেটরদের সমর্থিত রাশিয়ার একটি নিষেধাজ্ঞা বিলে ট্রাম্পের স্বাক্ষরের সম্ভাবনা তৈরি হয়। পরে সেই বিল স্থগিত করা হয়। গত সপ্তাহে খবর ছড়ায়, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে টমাহক ক্রুজ মিসাইল ও প্যাট্রিয়ট অ্যান্টি-এয়ার মিসাইল পাঠানোর কথা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। আর ঠিক তখনই পুতিন ফোন করেন ট্রাম্পকে। আর ট্রাম্প ঘোষণা দেন সম্ভাব্য এক সম্মেলনের, যা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে।
পরদিন ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক ছিল টান টান, জেলেনস্কি ফিরে যান খালি হাতে। ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেন, তাঁকে পুতিন প্রভাবিত করতে পারেননি। তাঁর ভাষায়, ‘জীবনে অনেকবার আমি সেরা চালবাজদের সঙ্গে খেলেছি, কিন্তু প্রতিবারই ভালোভাবে বেরিয়ে এসেছি।’
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পরে ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘যে মুহূর্তে আমাদের জন্য দূরপাল্লার অস্ত্র পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেল, রাশিয়া প্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে কূটনীতিতে আগ্রহ হারাল।’
অল্প ক’দিনের মধ্যেই ট্রাম্প একের পর এক দোদুল্যমান অবস্থান প্রকাশ করেছেন। একদিকে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর ভাবনা, অন্যদিকে পুতিনের সঙ্গে বুদাপেস্টে বৈঠকের পরিকল্পনা, আর ব্যক্তিগতভাবে জেলেনস্কিকে চাপ দিয়েছেন পুরো দনবাস অঞ্চল ছাড়তে। শেষ পর্যন্ত তিনি অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরতির আহ্বানে। তাঁর প্রস্তাবিত বর্তমান যুদ্ধরেখা ধরে অস্ত্রবিরতি রাশিয়া স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
গত বছর নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ করতে পারবেন। এখন তিনি সে দাবি থেকে সরে এসে স্বীকার করছেন, যুদ্ধ থামানো তাঁর কল্পনার চেয়ে অনেক কঠিন কাজ। এটা এক বিরল স্বীকারোক্তি। বিশেষ করে, নিজের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা এবং এক এমন শান্তির কাঠামো গড়ার জটিলতা, যেখানে কোনো পক্ষই লড়াই ছাড়তে চায় না, বা ছাড়তে পারে না—এমন অবস্থানে যুদ্ধ থামানো আসলেই কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ দুই নেতার আসন্ন বৈঠক নিয়ে ছড়িয়ে পড়া খবরগুলো এখন বেশ অতিরঞ্জিত বলেই মনে হচ্ছে। কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বুদাপেস্টে ‘দুই সপ্তাহের মধ্যেই’ বৈঠক করবেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই বৈঠক অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। দুই দেশের শীর্ষ কূটনীতিকদের প্রাথমিক আলোচনাও বাতিল হয়েছে।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি কোনো অর্থহীন বৈঠক করতে চাই না। সময় নষ্ট করতে চাই না, দেখি কী হয়।’ বৈঠক হবে কি হবে না—এই দোলাচলই যেন ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানতে ট্রাম্পের চেষ্টার সর্বশেষ অধ্যায়। গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি করানোর পর থেকে বিষয়টি তাঁর বিশেষ নজরে এসেছে।
গত সপ্তাহে মিসরে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি উদ্যাপনকালে ট্রাম্প তাঁর প্রধান কূটনৈতিক আলোচক স্টিভ উইটকফের দিকে ফিরে বলেন, ‘এবার আমাদের রাশিয়ার বিষয়টা মীমাংসা করতে হবে।’ তবে গাজা ইস্যুতে উইটকফ ও তাঁর দল যে অনুকূল পরিস্থিতি পেয়েছিলেন, তা ইউক্রেন যুদ্ধে পুনরায় সৃষ্টি করা কঠিন। চার বছর ছুঁইছুঁই সময় ধরে চলছে এই যুদ্ধ।
উইটকফের মতে, গাজা চুক্তি সম্ভব হয়েছিল মূলত ইসরায়েলের এক অপ্রত্যাশিত ভুল পদক্ষেপের কারণে। আর সেটি ছিল কাতারে হামাসের আলোচকদের ওপর হামলা। এতে যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্ররা ক্ষুব্ধ হয়। একই সঙ্গে এই হামলা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর ট্রাম্পের চাপ প্রয়োগের পথ খুলে দেয়, যা শেষ পর্যন্ত একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির পথে আগায়।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে তাঁর প্রথম মেয়াদ থেকেই ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করেছেন, পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি বসতি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিও বদলে দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে সমর্থন জানিয়ে আবারও সেই ঘনিষ্ঠতা দেখিয়েছেন।
ইসরায়েলিদের মধ্যে ট্রাম্প এখন নেতানিয়াহুর চেয়েও জনপ্রিয়। ফলে ইসরায়েলি নেতার ওপর তাঁর প্রভাবও অনন্য। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরব বিশ্বের কয়েকটি প্রধান দেশের সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে তাঁর কূটনৈতিক প্রভাব ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী।
কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সে ধরনের প্রভাববলয় নেই। গত ৯ মাসে তিনি পুতিন ও জেলেনস্কি—দুজনকেই কখনো চাপ, কখনো সমঝোতার মাধ্যমে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ফল হয়নি বললেই চলে। তিনি রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানিতে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ইউক্রেনকে দূরপাল্লার অস্ত্র দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু বুঝতে পেরেছেন, এই পদক্ষেপগুলো নিলে বৈশ্বিক অর্থনীতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে এবং যুদ্ধ আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে ভলোদিমির জেলেনস্কির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ইউক্রেনের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও দেশটিতে অস্ত্র পাঠানোও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে ইউরোপীয় মিত্রদের উদ্বেগের মুখে তিনি আবার পিছু হটেন। ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলো সতর্ক করে বলেছিল, ইউক্রেনের পতন পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। মূলত সেই আশঙ্কা থেকেই ট্রাম্প পিছু হটেন।
ট্রাম্প প্রায়ই নিজের ‘চুক্তি করার দক্ষতা’ নিয়ে গর্ব করেন। দাবি করেন, সামনাসামনি বৈঠকেই তিনি সমাধান বের করে ফেলতে পারেন। কিন্তু পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর বৈঠকগুলোর কোনোটি যুদ্ধের সমাধান এগিয়ে নেয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, পুতিন হয়তো ট্রাম্পের এই ‘চুক্তির নেশা’ ও মুখোমুখি আলোচনার প্রতি বিশ্বাসকে নিজের পক্ষে ব্যবহার করছেন।
গত জুলাইয়ে পুতিন আলাস্কায় এক সম্মেলনের প্রস্তাবে রাজি হন। সে সময় মার্কিন কংগ্রেসের রিপাবলিকান সিনেটরদের সমর্থিত রাশিয়ার একটি নিষেধাজ্ঞা বিলে ট্রাম্পের স্বাক্ষরের সম্ভাবনা তৈরি হয়। পরে সেই বিল স্থগিত করা হয়। গত সপ্তাহে খবর ছড়ায়, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে টমাহক ক্রুজ মিসাইল ও প্যাট্রিয়ট অ্যান্টি-এয়ার মিসাইল পাঠানোর কথা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। আর ঠিক তখনই পুতিন ফোন করেন ট্রাম্পকে। আর ট্রাম্প ঘোষণা দেন সম্ভাব্য এক সম্মেলনের, যা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে।
পরদিন ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক ছিল টান টান, জেলেনস্কি ফিরে যান খালি হাতে। ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেন, তাঁকে পুতিন প্রভাবিত করতে পারেননি। তাঁর ভাষায়, ‘জীবনে অনেকবার আমি সেরা চালবাজদের সঙ্গে খেলেছি, কিন্তু প্রতিবারই ভালোভাবে বেরিয়ে এসেছি।’
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পরে ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘যে মুহূর্তে আমাদের জন্য দূরপাল্লার অস্ত্র পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেল, রাশিয়া প্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে কূটনীতিতে আগ্রহ হারাল।’
অল্প ক’দিনের মধ্যেই ট্রাম্প একের পর এক দোদুল্যমান অবস্থান প্রকাশ করেছেন। একদিকে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর ভাবনা, অন্যদিকে পুতিনের সঙ্গে বুদাপেস্টে বৈঠকের পরিকল্পনা, আর ব্যক্তিগতভাবে জেলেনস্কিকে চাপ দিয়েছেন পুরো দনবাস অঞ্চল ছাড়তে। শেষ পর্যন্ত তিনি অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরতির আহ্বানে। তাঁর প্রস্তাবিত বর্তমান যুদ্ধরেখা ধরে অস্ত্রবিরতি রাশিয়া স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
গত বছর নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ করতে পারবেন। এখন তিনি সে দাবি থেকে সরে এসে স্বীকার করছেন, যুদ্ধ থামানো তাঁর কল্পনার চেয়ে অনেক কঠিন কাজ। এটা এক বিরল স্বীকারোক্তি। বিশেষ করে, নিজের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা এবং এক এমন শান্তির কাঠামো গড়ার জটিলতা, যেখানে কোনো পক্ষই লড়াই ছাড়তে চায় না, বা ছাড়তে পারে না—এমন অবস্থানে যুদ্ধ থামানো আসলেই কঠিন।
‘আমি একটু ঘুমাব, অনেক দিন ভালো ঘুমাইনি।’ আপনি অবসরে যাওয়ার পর কী করবেন বলে ঠিক করেছেন—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেল এমন করেই জবাব দিয়েছিলেন। তিনি ইউরোপের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ জার্মানির প্রথম নারী চ্যান্সেলর। ২০০৫ সালের ২২ নভেম্বর তিনি সরকার প্রধানে
২২ অক্টোবর ২০২১‘মি. মানদানি’, ‘মি. মানদামি’, ‘জোরহান মানদামি, ‘জোহরান মানদামি’—এগুলো নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির নামের কিছু বহুল প্রচলিত সংস্করণ। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি থেকেই অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জোহরান মামদানির নামের উচ্চারণ নিয়ে বিতর্কের সূচনা।
৪১ মিনিট আগে‘প্রতিটি প্রজন্মই নিজস্ব কারণ ও লক্ষ্য নিয়ে এগোয়, পুরোনো সংগ্রামের উত্তরাধিকার নিয়ে নয়। সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এই ধারা দেখা যায়—যুবকেরা শাসন বদলাতে পারে, কিন্তু টেকসই পরিবর্তন বা তাদের নিজস্ব ভবিষ্যতের উন্নতি প্রায়ই অধরা থেকে যায়, তা আরব বসন্ত হোক, বাংলাদেশ হোক বা হয়তো নেপাল।’
৪২ মিনিট আগে১৯ অক্টোবর নয়াদিল্লি ছিল বেশ সতর্ক অবস্থায়। সেদিন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত শিক্ষার্থী শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন। হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড, জ্বালানো হয়েছিল মশাল। তাঁদের দাবি—তিস্তা নদী মাস্টারপ্ল্যান অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। তাঁরা মনে করেন, এই প্রকল্প বাংলাদেশের কৃষিনির্
১০ ঘণ্টা আগে