আজকের পত্রিকা ডেস্ক
তেহরানে শুক্রবার ইসরায়েলি হামলার পর এখন দুই শত্রু—ইরান ও ইসরায়েল মুখোমুখি। অথচ এই ইসরায়েলই একসময় ছিল ইরানের মিত্র। ইরাকের সাবেক ও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলাকালে ইরানকে সহায়তা করেছিল তারা। তখন ইরানের প্রধান শত্রু ছিল মুজাহিদীন-ই-খালক (এমইকে)। একসময় সংগঠনটি দ্বিতীয় বিপ্লব ঘটিয়ে ইরানের ধর্মীয় শাসকগোষ্ঠীকে উৎখাত করার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু এখন দেশটির ভেতরে সবচেয়ে ঘৃণিত রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর একটি এমইকে।
এদিকে ইসরায়েলের বিরোধী নেতা নাফতালি বেনেট ও ইয়াইর লাপিদ এখন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মতো করে ইরানিদের আহ্বান জানাচ্ছেন সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নামতে। কিন্তু বহু পরিচিত এই আহ্বানে কান দিচ্ছে না কেউ। এমনই, ইরানের ক্ষমতাচ্যুত রাজপরিবারের সাবেক যুবরাজ রেজা শাহ পাহলভিও একই আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
ইরানের সরকার জনসমর্থন হারিয়েছে, তা নতুন কিছু নয়। কয়েক বছর পরপরই সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির শাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে হাজারো মানুষ। নারী নিপীড়ন, সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যের—তাও আবার কট্টর দ্বাদশ শিয়া মতবাদের নামে—অভিযোগও আছে। এর ওপর যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা মধ্যবিত্ত ও দরিদ্রদের জীবন দুঃসহ করে তুলেছে।
ইরানে ২০২২ সালে নৈতিকতা পুলিশের হাতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর যে আন্দোলন হয়েছিল, তা ছিল ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভ। দেশের বহু শহরের নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত নিয়ে নিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলার পর কিছু ইসরায়েলবিরোধী মিছিল ছাড়া আর তেমন কিছু দেখা যায়নি। ইসরায়েলি নেতারা যেভাবে আশা করছেন, সত্যিই কি ইরানিরা এই মুহূর্তে তাদের সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠবে?
১৯৮৬ সালে সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে মৈত্রী গড়ে তুলে এমইকের নেতা মাসউদ রাজাভি বলেছিলেন, ‘আল্লাহর কসম, আরব ও পার্সিদের মধ্যে আমাদের চেয়ে বড় মিত্র আর কাউকে পাবেন না।’ অথচ এই রাজাভিই একসময় ইসলামি বিপ্লবের প্রধান নেতাদের একজন ছিলেন। কিন্তু ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় তিনি যখন ইরাকের সঙ্গে হাত মেলান, তখনই দেশের জনগণের কাছে তাঁর রাজনৈতিক ভিত্তি ভেঙে পড়ে।
আয়াতুল্লাহর শাসনের বিরুদ্ধে তখন ইরানিরা ক্ষুব্ধ ছিল ঠিকই, কিন্তু তারা মনে করেছিল সাদ্দাম হোসেন আরও বড় শত্রু। তাই তাঁর সঙ্গে হাত মেলানো এমইকের বিশ্বাসযোগ্যতা একেবারে শেষ হয়ে যায়। এখন অনেকটা সেই চিত্রই ফিরে এসেছে। বর্তমানে ইরানে সরকারের বিরোধিতাকারীদের মাঝেও এমইকের প্রতি ঘৃণা অনেক গভীর।
কোরআনের প্রাচীন শব্দ ‘মুনাফিক’—অর্থাৎ ভণ্ড মুসলমান—আজ এমইকেই বোঝাতে ব্যবহার হয়। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় থেকে সরকার এমইকেকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে তুলে ধরায় এই ধারণা আরও পোক্ত হয়েছে। এখন যখন নেতানিয়াহু বলছেন, ‘এই তো সময়, ইরানিরা জেগে ওঠো’—তখন তা অনেকটা সেই পুরোনো আহ্বানের মতোই শোনায়, যার পেছনে আসলে রয়েছে বোমাবর্ষণ।
তাই প্রশ্ন উঠছে, ইসরায়েলি নেতারা কি সত্যিই ইরানিদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে উত্তেজিত করতে পারবেন? উত্তরটা খুব স্পষ্ট—না। নেতানিয়াহু ও তাঁর সহযোগীদের এই দাবি অবাস্তব। এমনকি এই দলে আছেন রেজা পাহলভিও, যিনি ইরানের সাবেক শাহর পুত্র। তাঁর বাবা যাঁর শাসনামলে দেশের জনগণ আন্দোলনে ফুঁসে উঠেছিল, সেই শাহের পতন ঘটাতে যে এমইকেও ভূমিকা রেখেছিল।
পাহলভি এখন ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে বলছেন, পুরো পরিস্থিতির জন্য দায়ী কেবল ইরান সরকারই। তিনি বলছেন, যেন ‘ইরানই এই ক্ষেপণাস্ত্রযুদ্ধ শুরু করেছে।’ নেতানিয়াহুর মতো করে তিনি বলছেন, এই মুহূর্তেই ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে উৎখাত করার সুযোগ এসেছে। ঠিক যেমন করে রাজাভি একসময় ইরাকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু এখন ইসরায়েল যখন ইরানের শহরে শহরে হামলা চালাচ্ছে, তখন পাহলভির এমন আহ্বান জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। বরং, এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে ক্ষোভ, অপমান ও ঘৃণার ঝড় চলছে। একসময় যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হতো ‘রাজা দীর্ঘজীবী হোক’ ধ্বনি, এখন সেখানে তাঁকে গালাগাল দেওয়া হচ্ছে। অনেকে তাঁকেও ‘মুনাফিক’ বলে গালি দিচ্ছে, যেমন একসময় রাজাভিকেও দেওয়া হয়েছিল।
ইসরায়েলি হামলায় শিশুদের মৃতদেহের ছবি ছড়িয়ে পড়ছে। ফ্ল্যাটে হামলায় পরিবারের পর পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্য ইরানিদের মনে করিয়ে দিচ্ছে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়কার ছবি, কিংবা আরও সাম্প্রতিক সময়ে গাজার ধ্বংসযজ্ঞ। বোমার শব্দ, ধ্বংসস্তূপ, ছিন্নভিন্ন দেহ—এই সবকিছুর মধ্য দিয়ে যেন ইরানিরা ফের একবার ভয়াবহ এক অতীতকে অনুভব করছে।
এমন সময় ইরান সরকার নেতানিয়াহু ও পাহলভিকে জনগণের সামনে একেবারে ভয়ংকর শত্রু হিসেবে তুলে ধরছে। মানুষও তাতে সাড়া দিচ্ছে। এমনকি পাহলভির পক্ষে থাকা লোকজনও এখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তিনি যখন বলছেন, পারসি ও ইহুদিরা মিলে কাজ করতে পারে, তখন তা রাজাভির সেই ‘আরব ও পারসি মিত্র’ কথার কথাই মনে করিয়ে দেয়।
এই পরিবর্তন একেবারে স্বাভাবিক। ইরানে থাকা মানুষের সঙ্গে কথা বললে শোনা যায় একটাই কথা—তারা খামেনির সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ ঠিকই, কিন্তু এখন তাদের প্রথম চাওয়া জীবন বাঁচানো। হামলা বন্ধ হোক। এখন আর নৈতিকতা পুলিশের বিরুদ্ধেও মানুষ ক্ষোভ ঝাড়ছে না। তাদের মনোযোগ শুধুই জীবন রক্ষায়।
একসময় যারা প্রতিদিন বাজারদরের চাপে ক্ষুব্ধ থাকত, তারা এখন কেবল বলছে—‘বোমা থামুক।’ যে সরকার একসময় ছিল অগঠিত, যার বিরুদ্ধে তখন ছিল বিপ্লব, সেই সরকারই ৮০—র দশকে যুদ্ধের সুযোগে নিজের ভিত শক্ত করে ফেলে। তখন নারীরা বাধ্য হয় হিজাব আন্দোলন থামাতে, কারণ ইরাকি ক্ষেপণাস্ত্র এসে ভেঙে ফেলছিল তাদের বাড়িঘর।
এখনো সে রকমই সময়। ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বাহিনী এখন সরাসরি তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে না। বরং তারা দেখছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী তাদের দেশ, তাদের শহর ধ্বংস করে দিচ্ছেন। তাই তারা এখন সব দোষ দিচ্ছে নেতানিয়াহু ও তাঁর মিত্রদের ওপর। এমনকি ইহুদিদের প্রতিও রাগ ছড়িয়ে পড়ছে।
পারসি টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোয় এখন ঘুরছে একটাই কথা—‘খামেনির বিচার পরে করব। আগে নেতানিয়াহুকে থামাও।’ এটাই কারণ, কেন আজ ইরানিরা জেগে উঠছে না।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
তেহরানে শুক্রবার ইসরায়েলি হামলার পর এখন দুই শত্রু—ইরান ও ইসরায়েল মুখোমুখি। অথচ এই ইসরায়েলই একসময় ছিল ইরানের মিত্র। ইরাকের সাবেক ও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলাকালে ইরানকে সহায়তা করেছিল তারা। তখন ইরানের প্রধান শত্রু ছিল মুজাহিদীন-ই-খালক (এমইকে)। একসময় সংগঠনটি দ্বিতীয় বিপ্লব ঘটিয়ে ইরানের ধর্মীয় শাসকগোষ্ঠীকে উৎখাত করার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু এখন দেশটির ভেতরে সবচেয়ে ঘৃণিত রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর একটি এমইকে।
এদিকে ইসরায়েলের বিরোধী নেতা নাফতালি বেনেট ও ইয়াইর লাপিদ এখন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মতো করে ইরানিদের আহ্বান জানাচ্ছেন সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নামতে। কিন্তু বহু পরিচিত এই আহ্বানে কান দিচ্ছে না কেউ। এমনই, ইরানের ক্ষমতাচ্যুত রাজপরিবারের সাবেক যুবরাজ রেজা শাহ পাহলভিও একই আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
ইরানের সরকার জনসমর্থন হারিয়েছে, তা নতুন কিছু নয়। কয়েক বছর পরপরই সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির শাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে হাজারো মানুষ। নারী নিপীড়ন, সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যের—তাও আবার কট্টর দ্বাদশ শিয়া মতবাদের নামে—অভিযোগও আছে। এর ওপর যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা মধ্যবিত্ত ও দরিদ্রদের জীবন দুঃসহ করে তুলেছে।
ইরানে ২০২২ সালে নৈতিকতা পুলিশের হাতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর যে আন্দোলন হয়েছিল, তা ছিল ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভ। দেশের বহু শহরের নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত নিয়ে নিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলার পর কিছু ইসরায়েলবিরোধী মিছিল ছাড়া আর তেমন কিছু দেখা যায়নি। ইসরায়েলি নেতারা যেভাবে আশা করছেন, সত্যিই কি ইরানিরা এই মুহূর্তে তাদের সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠবে?
১৯৮৬ সালে সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে মৈত্রী গড়ে তুলে এমইকের নেতা মাসউদ রাজাভি বলেছিলেন, ‘আল্লাহর কসম, আরব ও পার্সিদের মধ্যে আমাদের চেয়ে বড় মিত্র আর কাউকে পাবেন না।’ অথচ এই রাজাভিই একসময় ইসলামি বিপ্লবের প্রধান নেতাদের একজন ছিলেন। কিন্তু ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় তিনি যখন ইরাকের সঙ্গে হাত মেলান, তখনই দেশের জনগণের কাছে তাঁর রাজনৈতিক ভিত্তি ভেঙে পড়ে।
আয়াতুল্লাহর শাসনের বিরুদ্ধে তখন ইরানিরা ক্ষুব্ধ ছিল ঠিকই, কিন্তু তারা মনে করেছিল সাদ্দাম হোসেন আরও বড় শত্রু। তাই তাঁর সঙ্গে হাত মেলানো এমইকের বিশ্বাসযোগ্যতা একেবারে শেষ হয়ে যায়। এখন অনেকটা সেই চিত্রই ফিরে এসেছে। বর্তমানে ইরানে সরকারের বিরোধিতাকারীদের মাঝেও এমইকের প্রতি ঘৃণা অনেক গভীর।
কোরআনের প্রাচীন শব্দ ‘মুনাফিক’—অর্থাৎ ভণ্ড মুসলমান—আজ এমইকেই বোঝাতে ব্যবহার হয়। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় থেকে সরকার এমইকেকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে তুলে ধরায় এই ধারণা আরও পোক্ত হয়েছে। এখন যখন নেতানিয়াহু বলছেন, ‘এই তো সময়, ইরানিরা জেগে ওঠো’—তখন তা অনেকটা সেই পুরোনো আহ্বানের মতোই শোনায়, যার পেছনে আসলে রয়েছে বোমাবর্ষণ।
তাই প্রশ্ন উঠছে, ইসরায়েলি নেতারা কি সত্যিই ইরানিদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে উত্তেজিত করতে পারবেন? উত্তরটা খুব স্পষ্ট—না। নেতানিয়াহু ও তাঁর সহযোগীদের এই দাবি অবাস্তব। এমনকি এই দলে আছেন রেজা পাহলভিও, যিনি ইরানের সাবেক শাহর পুত্র। তাঁর বাবা যাঁর শাসনামলে দেশের জনগণ আন্দোলনে ফুঁসে উঠেছিল, সেই শাহের পতন ঘটাতে যে এমইকেও ভূমিকা রেখেছিল।
পাহলভি এখন ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে বলছেন, পুরো পরিস্থিতির জন্য দায়ী কেবল ইরান সরকারই। তিনি বলছেন, যেন ‘ইরানই এই ক্ষেপণাস্ত্রযুদ্ধ শুরু করেছে।’ নেতানিয়াহুর মতো করে তিনি বলছেন, এই মুহূর্তেই ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে উৎখাত করার সুযোগ এসেছে। ঠিক যেমন করে রাজাভি একসময় ইরাকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু এখন ইসরায়েল যখন ইরানের শহরে শহরে হামলা চালাচ্ছে, তখন পাহলভির এমন আহ্বান জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। বরং, এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে ক্ষোভ, অপমান ও ঘৃণার ঝড় চলছে। একসময় যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হতো ‘রাজা দীর্ঘজীবী হোক’ ধ্বনি, এখন সেখানে তাঁকে গালাগাল দেওয়া হচ্ছে। অনেকে তাঁকেও ‘মুনাফিক’ বলে গালি দিচ্ছে, যেমন একসময় রাজাভিকেও দেওয়া হয়েছিল।
ইসরায়েলি হামলায় শিশুদের মৃতদেহের ছবি ছড়িয়ে পড়ছে। ফ্ল্যাটে হামলায় পরিবারের পর পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্য ইরানিদের মনে করিয়ে দিচ্ছে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়কার ছবি, কিংবা আরও সাম্প্রতিক সময়ে গাজার ধ্বংসযজ্ঞ। বোমার শব্দ, ধ্বংসস্তূপ, ছিন্নভিন্ন দেহ—এই সবকিছুর মধ্য দিয়ে যেন ইরানিরা ফের একবার ভয়াবহ এক অতীতকে অনুভব করছে।
এমন সময় ইরান সরকার নেতানিয়াহু ও পাহলভিকে জনগণের সামনে একেবারে ভয়ংকর শত্রু হিসেবে তুলে ধরছে। মানুষও তাতে সাড়া দিচ্ছে। এমনকি পাহলভির পক্ষে থাকা লোকজনও এখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তিনি যখন বলছেন, পারসি ও ইহুদিরা মিলে কাজ করতে পারে, তখন তা রাজাভির সেই ‘আরব ও পারসি মিত্র’ কথার কথাই মনে করিয়ে দেয়।
এই পরিবর্তন একেবারে স্বাভাবিক। ইরানে থাকা মানুষের সঙ্গে কথা বললে শোনা যায় একটাই কথা—তারা খামেনির সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ ঠিকই, কিন্তু এখন তাদের প্রথম চাওয়া জীবন বাঁচানো। হামলা বন্ধ হোক। এখন আর নৈতিকতা পুলিশের বিরুদ্ধেও মানুষ ক্ষোভ ঝাড়ছে না। তাদের মনোযোগ শুধুই জীবন রক্ষায়।
একসময় যারা প্রতিদিন বাজারদরের চাপে ক্ষুব্ধ থাকত, তারা এখন কেবল বলছে—‘বোমা থামুক।’ যে সরকার একসময় ছিল অগঠিত, যার বিরুদ্ধে তখন ছিল বিপ্লব, সেই সরকারই ৮০—র দশকে যুদ্ধের সুযোগে নিজের ভিত শক্ত করে ফেলে। তখন নারীরা বাধ্য হয় হিজাব আন্দোলন থামাতে, কারণ ইরাকি ক্ষেপণাস্ত্র এসে ভেঙে ফেলছিল তাদের বাড়িঘর।
এখনো সে রকমই সময়। ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বাহিনী এখন সরাসরি তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে না। বরং তারা দেখছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী তাদের দেশ, তাদের শহর ধ্বংস করে দিচ্ছেন। তাই তারা এখন সব দোষ দিচ্ছে নেতানিয়াহু ও তাঁর মিত্রদের ওপর। এমনকি ইহুদিদের প্রতিও রাগ ছড়িয়ে পড়ছে।
পারসি টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোয় এখন ঘুরছে একটাই কথা—‘খামেনির বিচার পরে করব। আগে নেতানিয়াহুকে থামাও।’ এটাই কারণ, কেন আজ ইরানিরা জেগে উঠছে না।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
তেহরানে শুক্রবার ইসরায়েলি হামলার পর এখন দুই শত্রু—ইরান ও ইসরায়েল মুখোমুখি। অথচ এই ইসরায়েলই একসময় ছিল ইরানের মিত্র। ইরাকের সাবেক ও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলাকালে ইরানকে সহায়তা করেছিল তারা। তখন ইরানের প্রধান শত্রু ছিল মুজাহিদীন-ই-খালক (এমইকে)। একসময় সংগঠনটি দ্বিতীয় বিপ্লব ঘটিয়ে ইরানের ধর্মীয় শাসকগোষ্ঠীকে উৎখাত করার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু এখন দেশটির ভেতরে সবচেয়ে ঘৃণিত রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর একটি এমইকে।
এদিকে ইসরায়েলের বিরোধী নেতা নাফতালি বেনেট ও ইয়াইর লাপিদ এখন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মতো করে ইরানিদের আহ্বান জানাচ্ছেন সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নামতে। কিন্তু বহু পরিচিত এই আহ্বানে কান দিচ্ছে না কেউ। এমনই, ইরানের ক্ষমতাচ্যুত রাজপরিবারের সাবেক যুবরাজ রেজা শাহ পাহলভিও একই আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
ইরানের সরকার জনসমর্থন হারিয়েছে, তা নতুন কিছু নয়। কয়েক বছর পরপরই সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির শাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে হাজারো মানুষ। নারী নিপীড়ন, সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যের—তাও আবার কট্টর দ্বাদশ শিয়া মতবাদের নামে—অভিযোগও আছে। এর ওপর যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা মধ্যবিত্ত ও দরিদ্রদের জীবন দুঃসহ করে তুলেছে।
ইরানে ২০২২ সালে নৈতিকতা পুলিশের হাতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর যে আন্দোলন হয়েছিল, তা ছিল ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভ। দেশের বহু শহরের নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত নিয়ে নিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলার পর কিছু ইসরায়েলবিরোধী মিছিল ছাড়া আর তেমন কিছু দেখা যায়নি। ইসরায়েলি নেতারা যেভাবে আশা করছেন, সত্যিই কি ইরানিরা এই মুহূর্তে তাদের সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠবে?
১৯৮৬ সালে সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে মৈত্রী গড়ে তুলে এমইকের নেতা মাসউদ রাজাভি বলেছিলেন, ‘আল্লাহর কসম, আরব ও পার্সিদের মধ্যে আমাদের চেয়ে বড় মিত্র আর কাউকে পাবেন না।’ অথচ এই রাজাভিই একসময় ইসলামি বিপ্লবের প্রধান নেতাদের একজন ছিলেন। কিন্তু ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় তিনি যখন ইরাকের সঙ্গে হাত মেলান, তখনই দেশের জনগণের কাছে তাঁর রাজনৈতিক ভিত্তি ভেঙে পড়ে।
আয়াতুল্লাহর শাসনের বিরুদ্ধে তখন ইরানিরা ক্ষুব্ধ ছিল ঠিকই, কিন্তু তারা মনে করেছিল সাদ্দাম হোসেন আরও বড় শত্রু। তাই তাঁর সঙ্গে হাত মেলানো এমইকের বিশ্বাসযোগ্যতা একেবারে শেষ হয়ে যায়। এখন অনেকটা সেই চিত্রই ফিরে এসেছে। বর্তমানে ইরানে সরকারের বিরোধিতাকারীদের মাঝেও এমইকের প্রতি ঘৃণা অনেক গভীর।
কোরআনের প্রাচীন শব্দ ‘মুনাফিক’—অর্থাৎ ভণ্ড মুসলমান—আজ এমইকেই বোঝাতে ব্যবহার হয়। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় থেকে সরকার এমইকেকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে তুলে ধরায় এই ধারণা আরও পোক্ত হয়েছে। এখন যখন নেতানিয়াহু বলছেন, ‘এই তো সময়, ইরানিরা জেগে ওঠো’—তখন তা অনেকটা সেই পুরোনো আহ্বানের মতোই শোনায়, যার পেছনে আসলে রয়েছে বোমাবর্ষণ।
তাই প্রশ্ন উঠছে, ইসরায়েলি নেতারা কি সত্যিই ইরানিদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে উত্তেজিত করতে পারবেন? উত্তরটা খুব স্পষ্ট—না। নেতানিয়াহু ও তাঁর সহযোগীদের এই দাবি অবাস্তব। এমনকি এই দলে আছেন রেজা পাহলভিও, যিনি ইরানের সাবেক শাহর পুত্র। তাঁর বাবা যাঁর শাসনামলে দেশের জনগণ আন্দোলনে ফুঁসে উঠেছিল, সেই শাহের পতন ঘটাতে যে এমইকেও ভূমিকা রেখেছিল।
পাহলভি এখন ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে বলছেন, পুরো পরিস্থিতির জন্য দায়ী কেবল ইরান সরকারই। তিনি বলছেন, যেন ‘ইরানই এই ক্ষেপণাস্ত্রযুদ্ধ শুরু করেছে।’ নেতানিয়াহুর মতো করে তিনি বলছেন, এই মুহূর্তেই ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে উৎখাত করার সুযোগ এসেছে। ঠিক যেমন করে রাজাভি একসময় ইরাকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু এখন ইসরায়েল যখন ইরানের শহরে শহরে হামলা চালাচ্ছে, তখন পাহলভির এমন আহ্বান জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। বরং, এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে ক্ষোভ, অপমান ও ঘৃণার ঝড় চলছে। একসময় যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হতো ‘রাজা দীর্ঘজীবী হোক’ ধ্বনি, এখন সেখানে তাঁকে গালাগাল দেওয়া হচ্ছে। অনেকে তাঁকেও ‘মুনাফিক’ বলে গালি দিচ্ছে, যেমন একসময় রাজাভিকেও দেওয়া হয়েছিল।
ইসরায়েলি হামলায় শিশুদের মৃতদেহের ছবি ছড়িয়ে পড়ছে। ফ্ল্যাটে হামলায় পরিবারের পর পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্য ইরানিদের মনে করিয়ে দিচ্ছে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়কার ছবি, কিংবা আরও সাম্প্রতিক সময়ে গাজার ধ্বংসযজ্ঞ। বোমার শব্দ, ধ্বংসস্তূপ, ছিন্নভিন্ন দেহ—এই সবকিছুর মধ্য দিয়ে যেন ইরানিরা ফের একবার ভয়াবহ এক অতীতকে অনুভব করছে।
এমন সময় ইরান সরকার নেতানিয়াহু ও পাহলভিকে জনগণের সামনে একেবারে ভয়ংকর শত্রু হিসেবে তুলে ধরছে। মানুষও তাতে সাড়া দিচ্ছে। এমনকি পাহলভির পক্ষে থাকা লোকজনও এখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তিনি যখন বলছেন, পারসি ও ইহুদিরা মিলে কাজ করতে পারে, তখন তা রাজাভির সেই ‘আরব ও পারসি মিত্র’ কথার কথাই মনে করিয়ে দেয়।
এই পরিবর্তন একেবারে স্বাভাবিক। ইরানে থাকা মানুষের সঙ্গে কথা বললে শোনা যায় একটাই কথা—তারা খামেনির সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ ঠিকই, কিন্তু এখন তাদের প্রথম চাওয়া জীবন বাঁচানো। হামলা বন্ধ হোক। এখন আর নৈতিকতা পুলিশের বিরুদ্ধেও মানুষ ক্ষোভ ঝাড়ছে না। তাদের মনোযোগ শুধুই জীবন রক্ষায়।
একসময় যারা প্রতিদিন বাজারদরের চাপে ক্ষুব্ধ থাকত, তারা এখন কেবল বলছে—‘বোমা থামুক।’ যে সরকার একসময় ছিল অগঠিত, যার বিরুদ্ধে তখন ছিল বিপ্লব, সেই সরকারই ৮০—র দশকে যুদ্ধের সুযোগে নিজের ভিত শক্ত করে ফেলে। তখন নারীরা বাধ্য হয় হিজাব আন্দোলন থামাতে, কারণ ইরাকি ক্ষেপণাস্ত্র এসে ভেঙে ফেলছিল তাদের বাড়িঘর।
এখনো সে রকমই সময়। ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বাহিনী এখন সরাসরি তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে না। বরং তারা দেখছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী তাদের দেশ, তাদের শহর ধ্বংস করে দিচ্ছেন। তাই তারা এখন সব দোষ দিচ্ছে নেতানিয়াহু ও তাঁর মিত্রদের ওপর। এমনকি ইহুদিদের প্রতিও রাগ ছড়িয়ে পড়ছে।
পারসি টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোয় এখন ঘুরছে একটাই কথা—‘খামেনির বিচার পরে করব। আগে নেতানিয়াহুকে থামাও।’ এটাই কারণ, কেন আজ ইরানিরা জেগে উঠছে না।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
তেহরানে শুক্রবার ইসরায়েলি হামলার পর এখন দুই শত্রু—ইরান ও ইসরায়েল মুখোমুখি। অথচ এই ইসরায়েলই একসময় ছিল ইরানের মিত্র। ইরাকের সাবেক ও প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলাকালে ইরানকে সহায়তা করেছিল তারা। তখন ইরানের প্রধান শত্রু ছিল মুজাহিদীন-ই-খালক (এমইকে)। একসময় সংগঠনটি দ্বিতীয় বিপ্লব ঘটিয়ে ইরানের ধর্মীয় শাসকগোষ্ঠীকে উৎখাত করার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু এখন দেশটির ভেতরে সবচেয়ে ঘৃণিত রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর একটি এমইকে।
এদিকে ইসরায়েলের বিরোধী নেতা নাফতালি বেনেট ও ইয়াইর লাপিদ এখন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মতো করে ইরানিদের আহ্বান জানাচ্ছেন সরকারবিরোধী বিক্ষোভে নামতে। কিন্তু বহু পরিচিত এই আহ্বানে কান দিচ্ছে না কেউ। এমনই, ইরানের ক্ষমতাচ্যুত রাজপরিবারের সাবেক যুবরাজ রেজা শাহ পাহলভিও একই আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
ইরানের সরকার জনসমর্থন হারিয়েছে, তা নতুন কিছু নয়। কয়েক বছর পরপরই সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির শাসনের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামে হাজারো মানুষ। নারী নিপীড়ন, সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যের—তাও আবার কট্টর দ্বাদশ শিয়া মতবাদের নামে—অভিযোগও আছে। এর ওপর যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা মধ্যবিত্ত ও দরিদ্রদের জীবন দুঃসহ করে তুলেছে।
ইরানে ২০২২ সালে নৈতিকতা পুলিশের হাতে মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর যে আন্দোলন হয়েছিল, তা ছিল ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভ। দেশের বহু শহরের নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত নিয়ে নিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু সম্প্রতি ইসরায়েলি হামলার পর কিছু ইসরায়েলবিরোধী মিছিল ছাড়া আর তেমন কিছু দেখা যায়নি। ইসরায়েলি নেতারা যেভাবে আশা করছেন, সত্যিই কি ইরানিরা এই মুহূর্তে তাদের সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠবে?
১৯৮৬ সালে সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে মৈত্রী গড়ে তুলে এমইকের নেতা মাসউদ রাজাভি বলেছিলেন, ‘আল্লাহর কসম, আরব ও পার্সিদের মধ্যে আমাদের চেয়ে বড় মিত্র আর কাউকে পাবেন না।’ অথচ এই রাজাভিই একসময় ইসলামি বিপ্লবের প্রধান নেতাদের একজন ছিলেন। কিন্তু ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় তিনি যখন ইরাকের সঙ্গে হাত মেলান, তখনই দেশের জনগণের কাছে তাঁর রাজনৈতিক ভিত্তি ভেঙে পড়ে।
আয়াতুল্লাহর শাসনের বিরুদ্ধে তখন ইরানিরা ক্ষুব্ধ ছিল ঠিকই, কিন্তু তারা মনে করেছিল সাদ্দাম হোসেন আরও বড় শত্রু। তাই তাঁর সঙ্গে হাত মেলানো এমইকের বিশ্বাসযোগ্যতা একেবারে শেষ হয়ে যায়। এখন অনেকটা সেই চিত্রই ফিরে এসেছে। বর্তমানে ইরানে সরকারের বিরোধিতাকারীদের মাঝেও এমইকের প্রতি ঘৃণা অনেক গভীর।
কোরআনের প্রাচীন শব্দ ‘মুনাফিক’—অর্থাৎ ভণ্ড মুসলমান—আজ এমইকেই বোঝাতে ব্যবহার হয়। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় থেকে সরকার এমইকেকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে তুলে ধরায় এই ধারণা আরও পোক্ত হয়েছে। এখন যখন নেতানিয়াহু বলছেন, ‘এই তো সময়, ইরানিরা জেগে ওঠো’—তখন তা অনেকটা সেই পুরোনো আহ্বানের মতোই শোনায়, যার পেছনে আসলে রয়েছে বোমাবর্ষণ।
তাই প্রশ্ন উঠছে, ইসরায়েলি নেতারা কি সত্যিই ইরানিদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে উত্তেজিত করতে পারবেন? উত্তরটা খুব স্পষ্ট—না। নেতানিয়াহু ও তাঁর সহযোগীদের এই দাবি অবাস্তব। এমনকি এই দলে আছেন রেজা পাহলভিও, যিনি ইরানের সাবেক শাহর পুত্র। তাঁর বাবা যাঁর শাসনামলে দেশের জনগণ আন্দোলনে ফুঁসে উঠেছিল, সেই শাহের পতন ঘটাতে যে এমইকেও ভূমিকা রেখেছিল।
পাহলভি এখন ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে বলছেন, পুরো পরিস্থিতির জন্য দায়ী কেবল ইরান সরকারই। তিনি বলছেন, যেন ‘ইরানই এই ক্ষেপণাস্ত্রযুদ্ধ শুরু করেছে।’ নেতানিয়াহুর মতো করে তিনি বলছেন, এই মুহূর্তেই ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে উৎখাত করার সুযোগ এসেছে। ঠিক যেমন করে রাজাভি একসময় ইরাকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু এখন ইসরায়েল যখন ইরানের শহরে শহরে হামলা চালাচ্ছে, তখন পাহলভির এমন আহ্বান জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। বরং, এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে ক্ষোভ, অপমান ও ঘৃণার ঝড় চলছে। একসময় যাকে উদ্দেশ্য করে বলা হতো ‘রাজা দীর্ঘজীবী হোক’ ধ্বনি, এখন সেখানে তাঁকে গালাগাল দেওয়া হচ্ছে। অনেকে তাঁকেও ‘মুনাফিক’ বলে গালি দিচ্ছে, যেমন একসময় রাজাভিকেও দেওয়া হয়েছিল।
ইসরায়েলি হামলায় শিশুদের মৃতদেহের ছবি ছড়িয়ে পড়ছে। ফ্ল্যাটে হামলায় পরিবারের পর পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই দৃশ্য ইরানিদের মনে করিয়ে দিচ্ছে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়কার ছবি, কিংবা আরও সাম্প্রতিক সময়ে গাজার ধ্বংসযজ্ঞ। বোমার শব্দ, ধ্বংসস্তূপ, ছিন্নভিন্ন দেহ—এই সবকিছুর মধ্য দিয়ে যেন ইরানিরা ফের একবার ভয়াবহ এক অতীতকে অনুভব করছে।
এমন সময় ইরান সরকার নেতানিয়াহু ও পাহলভিকে জনগণের সামনে একেবারে ভয়ংকর শত্রু হিসেবে তুলে ধরছে। মানুষও তাতে সাড়া দিচ্ছে। এমনকি পাহলভির পক্ষে থাকা লোকজনও এখন মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তিনি যখন বলছেন, পারসি ও ইহুদিরা মিলে কাজ করতে পারে, তখন তা রাজাভির সেই ‘আরব ও পারসি মিত্র’ কথার কথাই মনে করিয়ে দেয়।
এই পরিবর্তন একেবারে স্বাভাবিক। ইরানে থাকা মানুষের সঙ্গে কথা বললে শোনা যায় একটাই কথা—তারা খামেনির সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ ঠিকই, কিন্তু এখন তাদের প্রথম চাওয়া জীবন বাঁচানো। হামলা বন্ধ হোক। এখন আর নৈতিকতা পুলিশের বিরুদ্ধেও মানুষ ক্ষোভ ঝাড়ছে না। তাদের মনোযোগ শুধুই জীবন রক্ষায়।
একসময় যারা প্রতিদিন বাজারদরের চাপে ক্ষুব্ধ থাকত, তারা এখন কেবল বলছে—‘বোমা থামুক।’ যে সরকার একসময় ছিল অগঠিত, যার বিরুদ্ধে তখন ছিল বিপ্লব, সেই সরকারই ৮০—র দশকে যুদ্ধের সুযোগে নিজের ভিত শক্ত করে ফেলে। তখন নারীরা বাধ্য হয় হিজাব আন্দোলন থামাতে, কারণ ইরাকি ক্ষেপণাস্ত্র এসে ভেঙে ফেলছিল তাদের বাড়িঘর।
এখনো সে রকমই সময়। ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বাহিনী এখন সরাসরি তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে না। বরং তারা দেখছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী তাদের দেশ, তাদের শহর ধ্বংস করে দিচ্ছেন। তাই তারা এখন সব দোষ দিচ্ছে নেতানিয়াহু ও তাঁর মিত্রদের ওপর। এমনকি ইহুদিদের প্রতিও রাগ ছড়িয়ে পড়ছে।
পারসি টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোয় এখন ঘুরছে একটাই কথা—‘খামেনির বিচার পরে করব। আগে নেতানিয়াহুকে থামাও।’ এটাই কারণ, কেন আজ ইরানিরা জেগে উঠছে না।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
বিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে।
৭ ঘণ্টা আগেগাজায় স্থল অভিযানের শুরু থেকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে অবিরাম বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়ও একই অবস্থান ছিল নেতানিয়াহুর সরকারের। এমনকি গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
৯ ঘণ্টা আগেভারতে আজকাল দিন শুরু হয় দুই ধরনের সংবাদ দিয়ে: একদিকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায়—পাকিস্তানবিরোধী বিতর্ক, হিন্দুদের গৌরবগাথা আর নতুন ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা; অন্যদিকে অন্ধকার এক বাস্তবতা—প্রতিদিন কোথাও না কোথাও কোনো মুসলমান নিগৃহীত হচ্ছে, পিটিয়ে মারা হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় বন্দী করা হচ্ছে, অথবা দেশদ্রোহী..
১৫ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
বিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে। আর রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক দৃষ্টিতে দেখছেন সবার চালচলন।
এ খেলার মূল বাজি রুশ অপরিশোধিত তেল। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এ তেল যাচ্ছে ভারত ও চীনে। ট্রাম্প এখন সেটা বন্ধ করতে চান এবং বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে ওয়াশিংটনের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরে থেকে তেলের বাজারে ভারত মস্কোর অন্যতম বড় ক্রেতায় পরিণত হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো এড়িয়ে গেলেও ভারত সস্তা দামে রুশ তেল কিনছে—যা ঘরোয়া জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখতে ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হয়েছে। বাইডেন প্রশাসন এ নিয়ে মাঝেমধ্যে সমালোচনা করলেও বৈশ্বিক জ্বালানি স্থিতিশীলতার স্বার্থে বিষয়টি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে বেশ নড়েচড়ে বসেছে। রুশ তেল কেনার অপরাধে তারা ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বেশ উত্তেজনাও চলছে। অনেকে বলছেন, এতে ট্রাম্প-মোদির বন্ধুত্ব হয়তো শেষ হয়ে গেছে।
অবশ্য ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত আর রুশ তেল কিনবে না। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—ট্রাম্প কি ‘ব্লাফ’ দিচ্ছেন, না সত্যিই মোদির কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন যে, ভারত রুশ তেল কেনা বন্ধ করবে? ট্রাম্প দাবি করেছেন, ‘ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনছে, এটার জন্য আমি অসন্তুষ্ট ছিলাম। কিন্তু মোদি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁরা আর রুশ তেল কিনবেন না। এটা বড় পদক্ষেপ। এখন আমরা চীনকেও একই কাজ করাতে যাচ্ছি।’
তবে প্রশ্ন দুটি থেকেই যায়—প্রথমত, মোদি কি সত্যিই এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন? দ্বিতীয়ত, বিশ্বের সবচেয়ে বড় রুশ তেল আমদানিকারক চীন কি যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশ মেনে চলবে?
চীন প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি ব্যারেল তেল আমদানি করে, যার বড় অংশই আসে রাশিয়া থেকে। ২০২৩ সালে রাশিয়া সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে চীনের সবচেয়ে বড় জ্বালানি সরবরাহকারী হয়। এটিই প্রমাণ করে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মস্কো-বেইজিং সম্পর্ককে আরও শক্ত করেছে। চীন ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘একতরফা ও অর্থনৈতিক জবরদস্তি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে পাল্টাব্যবস্থার হুমকি দিয়েছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল অনেকটা সতর্ক। দিল্লি জানিয়েছে, রুশ তেল আমদানি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও দামের ভারসাম্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে সত্যিই ফোনালাপ হয়েছিল কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখা ও সরবরাহ নিশ্চিত করাই আমাদের নীতির মূল লক্ষ্য। এ জন্য আমরা উৎস বৈচিত্র্য বজায় রেখে বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী তেল আমদানি করি।’
এই অস্পষ্ট মন্তব্যের পর অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—ফোনালাপ আদৌ হয়েছিল কি না এবং হয়ে থাকলে মোদি সত্যিই কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কি না।
মস্কো অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছে, ভারত তাদের জ্বালানি নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। রুশ সরকার বলেছে, ‘ভারতের অর্থনীতির জন্য রুশ তেল অপরিহার্য। আমরা ভারত সরকারের নীতিকে সম্মান করি এবং তেল ও গ্যাস খাতে সহযোগিতা চালিয়ে যাব।’
উল্লেখ্য, একসময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ নিজেরাই চেয়েছিল ভারত রুশ তেল কিনুক, যাতে বৈশ্বিক তেলের দাম বেড়ে না যায়। ভারতে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা রুশ তেল কেনা নিষিদ্ধ করিনি, বরং মূল্যসীমা নির্ধারণে ভারতকে সহায়তা করতে বলেছিলাম। ভারত ঠিক তা-ই করেছে। এখন এই প্রশাসন বলছে, ভারত নাকি রাশিয়ার যুদ্ধ যন্ত্রে অর্থ জোগাচ্ছে। এটা একধরনের নীতিগত দ্বিচারিতা।’
পশ্চিমা বাজার হারানোর ক্ষতি পোষাতে রাশিয়া ইতিমধ্যে এশীয় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেছে। ভারত ও চীন এখন রাশিয়ার জন্য প্রধান বৈদেশিক মুদ্রার উৎস। একই সঙ্গে ইউরোপও রাশিয়া থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনছে।
ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক বহু পুরোনো। সেই স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মস্কো ছিল ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক মিত্র। এখনো প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, পারমাণবিক প্রকল্প, জ্বালানি বিনিয়োগ ও যৌথ উদ্যোগ—সব ক্ষেত্রে এ সম্পর্ক অটুট।
এ দীর্ঘ সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সত্ত্বেও ভারত সহজে রুশ তেল থেকে সরে আসবে না। তবে দিল্লির জন্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত বাণিজ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে। অনেকের মতে, ওয়াশিংটন হয়তো কৃষিপণ্য ও শুল্কে ছাড় দিয়ে ভারতকে রুশ তেল আমদানি কমানোর প্রস্তাব দেবে।
তবে বর্তমানে ভারতের রুশ তেল আমদানি কমার কোনো ইঙ্গিত নেই। সেপ্টেম্বর মাসে ভারত দৈনিক ১৬ লাখ ব্যারেল তেল কিনেছে, যা অক্টোবরে বেড়ে ১৮ লাখ ব্যারেল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব তেল পরিবহন হচ্ছে পশ্চিমাদের নজরদারির বাইরে থাকা ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা তেলবাহী গোপন জাহাজের মাধ্যমে।
বিশ্লেষকেরা সতর্ক করছেন, ভারত হঠাৎ রুশ তেল কেনা কমালে বিশ্ববাজারে সরবরাহ ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে, দাম পড়ে যেতে পারে এবং রাশিয়া আরও বেশি চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
২০২২ সালে যখন রাশিয়ার কারণে বিশ্বে তেলের দাম বেড়ে যায়, তখন বাইডেন প্রশাসন ভারতকে ছাড় দিয়েছিল, যেন বিশ্বে ঘাটতি না হয়। সে সময় ক্রুড অয়েলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৮০–৯০ ডলার। এখন তা নেমে এসেছে প্রায় ৬১ ডলারে, যা মার্কিন শেল তেল উৎপাদকদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
ট্রাম্প হয়তো ভাবছেন, ভারত ও চীনকে রুশ তেল কেনা কমাতে বাধ্য করলে সরবরাহ কমে যাবে, ফলে দাম কিছুটা বাড়বে। কিন্তু তাঁকে খেয়াল রাখতে হবে, এতে যেন তাঁর নিজ দেশের ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
তবে এই ‘গেম’ অত্যন্ত সূক্ষ্ম। কারণ, বেশি চাপ দিলে দাম উল্টো বেড়ে যেতে পারে আর কম চাপ দিলে রাশিয়া বিপুল অর্থ উপার্জন চালিয়ে যাবে। যেকোনো ভুল হিসাব মার্কিন কৌশলকে দুর্বল করতে পারে বা মস্কোর অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে। তাই এ মুহূর্তে ট্রাম্পের বাজি সফল হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। আর মোদির জন্য এটি নিঃসন্দেহে সূক্ষ্ম ভারসাম্যের খেলা। তবে ভারসাম্য রক্ষা করা এত সহজ নয়। রাশিয়া থেকে সরে আসা মানে পুরোনো জোট দুর্বল করা; আবার যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করা মানে নতুন বাণিজ্য সম্পর্ককে ঝুঁকিতে ফেলা। তাই অর্থনৈতিক বাস্তবতা, ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব ও অনিশ্চিত মার্কিন রাজনীতির দাবার বোর্ডে মোদিকে একসঙ্গে চাল দিতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া থেকে অনূদিত
বিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে। আর রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক দৃষ্টিতে দেখছেন সবার চালচলন।
এ খেলার মূল বাজি রুশ অপরিশোধিত তেল। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এ তেল যাচ্ছে ভারত ও চীনে। ট্রাম্প এখন সেটা বন্ধ করতে চান এবং বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে ওয়াশিংটনের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরে থেকে তেলের বাজারে ভারত মস্কোর অন্যতম বড় ক্রেতায় পরিণত হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো এড়িয়ে গেলেও ভারত সস্তা দামে রুশ তেল কিনছে—যা ঘরোয়া জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখতে ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হয়েছে। বাইডেন প্রশাসন এ নিয়ে মাঝেমধ্যে সমালোচনা করলেও বৈশ্বিক জ্বালানি স্থিতিশীলতার স্বার্থে বিষয়টি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে বেশ নড়েচড়ে বসেছে। রুশ তেল কেনার অপরাধে তারা ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বেশ উত্তেজনাও চলছে। অনেকে বলছেন, এতে ট্রাম্প-মোদির বন্ধুত্ব হয়তো শেষ হয়ে গেছে।
অবশ্য ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত আর রুশ তেল কিনবে না। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—ট্রাম্প কি ‘ব্লাফ’ দিচ্ছেন, না সত্যিই মোদির কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন যে, ভারত রুশ তেল কেনা বন্ধ করবে? ট্রাম্প দাবি করেছেন, ‘ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনছে, এটার জন্য আমি অসন্তুষ্ট ছিলাম। কিন্তু মোদি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁরা আর রুশ তেল কিনবেন না। এটা বড় পদক্ষেপ। এখন আমরা চীনকেও একই কাজ করাতে যাচ্ছি।’
তবে প্রশ্ন দুটি থেকেই যায়—প্রথমত, মোদি কি সত্যিই এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন? দ্বিতীয়ত, বিশ্বের সবচেয়ে বড় রুশ তেল আমদানিকারক চীন কি যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশ মেনে চলবে?
চীন প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি ব্যারেল তেল আমদানি করে, যার বড় অংশই আসে রাশিয়া থেকে। ২০২৩ সালে রাশিয়া সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে চীনের সবচেয়ে বড় জ্বালানি সরবরাহকারী হয়। এটিই প্রমাণ করে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মস্কো-বেইজিং সম্পর্ককে আরও শক্ত করেছে। চীন ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘একতরফা ও অর্থনৈতিক জবরদস্তি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে পাল্টাব্যবস্থার হুমকি দিয়েছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল অনেকটা সতর্ক। দিল্লি জানিয়েছে, রুশ তেল আমদানি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও দামের ভারসাম্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে সত্যিই ফোনালাপ হয়েছিল কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখা ও সরবরাহ নিশ্চিত করাই আমাদের নীতির মূল লক্ষ্য। এ জন্য আমরা উৎস বৈচিত্র্য বজায় রেখে বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী তেল আমদানি করি।’
এই অস্পষ্ট মন্তব্যের পর অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—ফোনালাপ আদৌ হয়েছিল কি না এবং হয়ে থাকলে মোদি সত্যিই কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কি না।
মস্কো অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছে, ভারত তাদের জ্বালানি নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। রুশ সরকার বলেছে, ‘ভারতের অর্থনীতির জন্য রুশ তেল অপরিহার্য। আমরা ভারত সরকারের নীতিকে সম্মান করি এবং তেল ও গ্যাস খাতে সহযোগিতা চালিয়ে যাব।’
উল্লেখ্য, একসময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ নিজেরাই চেয়েছিল ভারত রুশ তেল কিনুক, যাতে বৈশ্বিক তেলের দাম বেড়ে না যায়। ভারতে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা রুশ তেল কেনা নিষিদ্ধ করিনি, বরং মূল্যসীমা নির্ধারণে ভারতকে সহায়তা করতে বলেছিলাম। ভারত ঠিক তা-ই করেছে। এখন এই প্রশাসন বলছে, ভারত নাকি রাশিয়ার যুদ্ধ যন্ত্রে অর্থ জোগাচ্ছে। এটা একধরনের নীতিগত দ্বিচারিতা।’
পশ্চিমা বাজার হারানোর ক্ষতি পোষাতে রাশিয়া ইতিমধ্যে এশীয় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেছে। ভারত ও চীন এখন রাশিয়ার জন্য প্রধান বৈদেশিক মুদ্রার উৎস। একই সঙ্গে ইউরোপও রাশিয়া থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনছে।
ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক বহু পুরোনো। সেই স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মস্কো ছিল ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক মিত্র। এখনো প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, পারমাণবিক প্রকল্প, জ্বালানি বিনিয়োগ ও যৌথ উদ্যোগ—সব ক্ষেত্রে এ সম্পর্ক অটুট।
এ দীর্ঘ সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সত্ত্বেও ভারত সহজে রুশ তেল থেকে সরে আসবে না। তবে দিল্লির জন্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত বাণিজ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে। অনেকের মতে, ওয়াশিংটন হয়তো কৃষিপণ্য ও শুল্কে ছাড় দিয়ে ভারতকে রুশ তেল আমদানি কমানোর প্রস্তাব দেবে।
তবে বর্তমানে ভারতের রুশ তেল আমদানি কমার কোনো ইঙ্গিত নেই। সেপ্টেম্বর মাসে ভারত দৈনিক ১৬ লাখ ব্যারেল তেল কিনেছে, যা অক্টোবরে বেড়ে ১৮ লাখ ব্যারেল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব তেল পরিবহন হচ্ছে পশ্চিমাদের নজরদারির বাইরে থাকা ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা তেলবাহী গোপন জাহাজের মাধ্যমে।
বিশ্লেষকেরা সতর্ক করছেন, ভারত হঠাৎ রুশ তেল কেনা কমালে বিশ্ববাজারে সরবরাহ ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে, দাম পড়ে যেতে পারে এবং রাশিয়া আরও বেশি চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
২০২২ সালে যখন রাশিয়ার কারণে বিশ্বে তেলের দাম বেড়ে যায়, তখন বাইডেন প্রশাসন ভারতকে ছাড় দিয়েছিল, যেন বিশ্বে ঘাটতি না হয়। সে সময় ক্রুড অয়েলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৮০–৯০ ডলার। এখন তা নেমে এসেছে প্রায় ৬১ ডলারে, যা মার্কিন শেল তেল উৎপাদকদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
ট্রাম্প হয়তো ভাবছেন, ভারত ও চীনকে রুশ তেল কেনা কমাতে বাধ্য করলে সরবরাহ কমে যাবে, ফলে দাম কিছুটা বাড়বে। কিন্তু তাঁকে খেয়াল রাখতে হবে, এতে যেন তাঁর নিজ দেশের ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
তবে এই ‘গেম’ অত্যন্ত সূক্ষ্ম। কারণ, বেশি চাপ দিলে দাম উল্টো বেড়ে যেতে পারে আর কম চাপ দিলে রাশিয়া বিপুল অর্থ উপার্জন চালিয়ে যাবে। যেকোনো ভুল হিসাব মার্কিন কৌশলকে দুর্বল করতে পারে বা মস্কোর অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে। তাই এ মুহূর্তে ট্রাম্পের বাজি সফল হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। আর মোদির জন্য এটি নিঃসন্দেহে সূক্ষ্ম ভারসাম্যের খেলা। তবে ভারসাম্য রক্ষা করা এত সহজ নয়। রাশিয়া থেকে সরে আসা মানে পুরোনো জোট দুর্বল করা; আবার যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করা মানে নতুন বাণিজ্য সম্পর্ককে ঝুঁকিতে ফেলা। তাই অর্থনৈতিক বাস্তবতা, ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব ও অনিশ্চিত মার্কিন রাজনীতির দাবার বোর্ডে মোদিকে একসঙ্গে চাল দিতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া থেকে অনূদিত
তাই প্রশ্ন উঠছে, ইসরায়েলি নেতারা কি সত্যিই ইরানিদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে উত্তেজিত করতে পারবেন? উত্তরটা খুব স্পষ্ট—না। নেতানিয়াহু ও তাঁর সহযোগীদের এই দাবি অবাস্তব। এমনকি এই দলে আছেন রেজা পাহলভিও, যিনি ইরানের সাবেক শাহর পুত্র। তাঁর বাবা যাঁর শাসনামলে দেশের জনগণ আন্দোলনে ফুঁসে উঠেছিল, সেই শাহের পতন...
১৮ জুন ২০২৫গাজায় স্থল অভিযানের শুরু থেকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে অবিরাম বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়ও একই অবস্থান ছিল নেতানিয়াহুর সরকারের। এমনকি গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
৯ ঘণ্টা আগেভারতে আজকাল দিন শুরু হয় দুই ধরনের সংবাদ দিয়ে: একদিকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায়—পাকিস্তানবিরোধী বিতর্ক, হিন্দুদের গৌরবগাথা আর নতুন ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা; অন্যদিকে অন্ধকার এক বাস্তবতা—প্রতিদিন কোথাও না কোথাও কোনো মুসলমান নিগৃহীত হচ্ছে, পিটিয়ে মারা হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় বন্দী করা হচ্ছে, অথবা দেশদ্রোহী..
১৫ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
১ দিন আগেদ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের নিবন্ধ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
গাজায় স্থল অভিযানের শুরু থেকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে অবিরাম বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়ও একই অবস্থান ছিল নেতানিয়াহুর সরকারের। এমনকি গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখাচ্ছে। গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে আনুমানিক ১৫ হাজার হামাস যোদ্ধা আবারও সংগঠিত হয়ে উঠে এসেছে। তাদের অনেকে পূর্ণ সশস্ত্র এবং এরই মধ্যে গাজায় প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করেছে। গাজা থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন বলছে, তারা সন্দেহভাজন সহযোগীদের খুঁজে বের করে প্রকাশ্যে হত্যা করছে। অর্থাৎ হামাস ধ্বংস হয়নি, রক্তাক্ত ও বিভক্ত হলেও সংগঠনটি টিকে গেছে।
এ ফলাফল আসলে অপ্রত্যাশিত নয়। বিশ্বের সব প্রভাবশালী সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষজ্ঞ বহু আগে সতর্ক করেছিলেন, হামাসকে কেবল সামরিক শক্তি দিয়ে ধ্বংস করা সম্ভব নয়। হামাস শুধু একটি সশস্ত্র নেটওয়ার্ক বা সুড়ঙ্গ ব্যবস্থা নয়, এটি ফিলিস্তিনি সমাজের গভীরে শিকড় গেড়ে বসা একটি রাজনৈতিক ও আদর্শিক আন্দোলন। যেমনটা যুক্তরাষ্ট্র আল-কায়েদা বা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ক্ষেত্রে দেখেছে, নেতা হত্যা করা যায়, অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়, এলাকা দখল করা যায়, কিন্তু কোনো আদর্শকে বোমা মেরে ধ্বংস করা যায় না।
ইসরায়েলের ঘোষিত ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ শুরু থেকে ছিল এক মরীচিকা। হামাসের নেতৃত্বকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সংগঠনটি এখনো স্থানীয় সেল ও মিলিশিয়া আকারে সক্রিয়। ইসরায়েলি অভিযানে গাজার অসংখ্য সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত, আবাসিক এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু যেসব মূল কারণ হামাসের উত্থান ঘটিয়েছিল (বঞ্চনা, রাষ্ট্রহীনতা ও হতাশা), সেগুলো আজও বহাল ও আরও তীব্র।
২০০০-এর দশকের শুরুতে ফাতাহ নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অদক্ষতার প্রতীকে পরিণত হয়। কয়েক বছরের ব্যর্থ শান্তি আলোচনা, অর্থনৈতিক পতন ও ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা পিএর প্রতি আস্থা হারায়। হামাস এ ক্ষোভকে রাজনৈতিক পুঁজি বানায়, নিজেদের পরিচয় দেয় দুর্নীতিমুক্ত, শৃঙ্খলাবদ্ধ, ন্যায় ও প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে।
২০০৬ সালে গাজায় হামাস নির্বাচনে জয় পায় মূলত ফাতাহর স্থবিরতার কারণে; উগ্র ইসলামপন্থার প্রতি সমর্থন হিসেবে নয়। কিন্তু বিজয়ী হয়ে হামাস ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার চিরাচরিত একনায়কতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের গাজা থেকে উৎখাত করে, নির্বাচন বাতিল করে আর জনগণের কল্যাণে ব্যয় না করে বিপুল অর্থ ব্যয় করে সুড়ঙ্গ, রকেট তৈরি ও সশস্ত্র বাহিনীর পেছনে।
তবে এখানে ইসরায়েলের নীতির ভূমিকাও উপেক্ষা করা যায় না। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজাকে বিভক্ত রাখার নীতি হাতে নেয়। নেতানিয়াহু জানতেন, একটি ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব দ্বিরাষ্ট্র বাস্তবায়নের প্রস্তাবকে শক্তিশালী করত আর বিভক্ত নেতৃত্ব সেই সম্ভাবনাকে দুর্বল করেছে। এ কৌশলের অর্থ দাঁড়ায়, পশ্চিম তীর পিএকে দুর্বল করার পাশাপাশি গাজায় হামাসের শাসনকে পরোক্ষভাবে মেনে নেওয়া।
এ স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ দীর্ঘ মেয়াদে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। হামাসকে শক্তিশালী হতে দিয়ে নেতানিয়াহু কার্যত দ্বিরাষ্ট্র সমাধানকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রেখেছেন। হামাসের অস্তিত্ব ইসরায়েলের জন্য রাজনৈতিক আপসে না গিয়ে বসতি সম্প্রসারণ ও দখল চালিয়ে যাওয়ার পথে এক সহজ অজুহাত ছিল।
কিন্তু এ নীতি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ভয়াবহভাবে উল্টো ফল দিয়েছে। হামাসের হামলা ইসরায়েলের নিরাপত্তাবোধ ভেঙে দিয়েছে, ভয়াবহ এক যুদ্ধের সূচনা করেছে এবং শান্তিপ্রক্রিয়াকে পুরো এক প্রজন্ম পিছিয়ে দিয়েছে।
গাজার জনগণের মধ্যে হামাসের প্রতি গভীর ভালোবাসা নেই। অনেক ফিলিস্তিনি হামাসকেই দোষারোপ করছে ধ্বংস ও রক্তপাত ডেকে আনার জন্য। কিন্তু বিকল্প রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা বিশ্বাসযোগ্য শান্তির রূপরেখা না থাকায় হামাসের বয়ান টিকে আছে। চরমপন্থা বাঁচে হতাশার ওপর আর গাজায় এখন হতাশার প্রাচুর্য।
হামাসকে প্রকৃত অর্থে পরাজিত করার একমাত্র উপায় অস্ত্র নয়, বরং আদর্শিক লড়াই। হামাস যে বক্তব্যের ওপর টিকে আছে—তা হলো, রাষ্ট্রহীন মানুষের জন্য সম্মানের একমাত্র পথ হচ্ছে সহিংসতা। এ বক্তব্য ভেঙে দেওয়ার একমাত্র উপায় হলো ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি বাস্তব, আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত ও বিশ্বাসযোগ্য দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথ তৈরি করা।
এর অর্থ হলো, ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈধতা ফিরিয়ে আনা ও একটি নতুন প্রযুক্তিগত বা বহুপক্ষীয় প্রশাসনের মাধ্যমে গাজাকে পুনর্গঠন করা। শহীদ হওয়ার বাসন নয়, শাসন ও উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নেতৃত্বকে ক্ষমতায় আনা। গাজার রাজনৈতিক সংস্কার ও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমার শর্তে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোকে তহবিল পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া। ইসরায়েলকেও বুঝতে হবে, স্থায়ী অবরোধ ও দখলদারত্ব নিরাপত্তা বাড়ায় না; প্রকৃত নিরাপত্তা আসে সহাবস্থান থেকে।
ইসরায়েলের অভিযান প্রমাণ করেছে, যেমনটা বিশেষজ্ঞরা বহু আগে বলেছেন, আপনি একটি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারেন, কিন্তু একটি আদর্শকে নয়। হামাসকে সত্যিকার অর্থে পরাজিত করতে হলে ফিলিস্তিনের নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে ও চিন্তায় বিশ্বাসযোগ্য শান্তি ও সমৃদ্ধির ভবিষ্যৎ দেখাতে হবে।
ন্যাশনাল ইন্টারেস্টে বিশ্লেষণটি লিখেছেন ড. আজিম ইব্রাহিম। তিনি নিউ লাইনস ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসির সিনিয়র ডিরেক্টর এবং ‘অথরিটেরিয়ান সেঞ্চুরি: উইমেনস অব আ পোস্ট-লিবারাল ফিউচার’ বইটির লেখক। অনুবাদ করেছেন আবদুল বাছেদ।
গাজায় স্থল অভিযানের শুরু থেকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে অবিরাম বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়ও একই অবস্থান ছিল নেতানিয়াহুর সরকারের। এমনকি গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখাচ্ছে। গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে আনুমানিক ১৫ হাজার হামাস যোদ্ধা আবারও সংগঠিত হয়ে উঠে এসেছে। তাদের অনেকে পূর্ণ সশস্ত্র এবং এরই মধ্যে গাজায় প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করেছে। গাজা থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন বলছে, তারা সন্দেহভাজন সহযোগীদের খুঁজে বের করে প্রকাশ্যে হত্যা করছে। অর্থাৎ হামাস ধ্বংস হয়নি, রক্তাক্ত ও বিভক্ত হলেও সংগঠনটি টিকে গেছে।
এ ফলাফল আসলে অপ্রত্যাশিত নয়। বিশ্বের সব প্রভাবশালী সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষজ্ঞ বহু আগে সতর্ক করেছিলেন, হামাসকে কেবল সামরিক শক্তি দিয়ে ধ্বংস করা সম্ভব নয়। হামাস শুধু একটি সশস্ত্র নেটওয়ার্ক বা সুড়ঙ্গ ব্যবস্থা নয়, এটি ফিলিস্তিনি সমাজের গভীরে শিকড় গেড়ে বসা একটি রাজনৈতিক ও আদর্শিক আন্দোলন। যেমনটা যুক্তরাষ্ট্র আল-কায়েদা বা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ক্ষেত্রে দেখেছে, নেতা হত্যা করা যায়, অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়, এলাকা দখল করা যায়, কিন্তু কোনো আদর্শকে বোমা মেরে ধ্বংস করা যায় না।
ইসরায়েলের ঘোষিত ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ শুরু থেকে ছিল এক মরীচিকা। হামাসের নেতৃত্বকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সংগঠনটি এখনো স্থানীয় সেল ও মিলিশিয়া আকারে সক্রিয়। ইসরায়েলি অভিযানে গাজার অসংখ্য সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত, আবাসিক এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু যেসব মূল কারণ হামাসের উত্থান ঘটিয়েছিল (বঞ্চনা, রাষ্ট্রহীনতা ও হতাশা), সেগুলো আজও বহাল ও আরও তীব্র।
২০০০-এর দশকের শুরুতে ফাতাহ নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অদক্ষতার প্রতীকে পরিণত হয়। কয়েক বছরের ব্যর্থ শান্তি আলোচনা, অর্থনৈতিক পতন ও ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা পিএর প্রতি আস্থা হারায়। হামাস এ ক্ষোভকে রাজনৈতিক পুঁজি বানায়, নিজেদের পরিচয় দেয় দুর্নীতিমুক্ত, শৃঙ্খলাবদ্ধ, ন্যায় ও প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে।
২০০৬ সালে গাজায় হামাস নির্বাচনে জয় পায় মূলত ফাতাহর স্থবিরতার কারণে; উগ্র ইসলামপন্থার প্রতি সমর্থন হিসেবে নয়। কিন্তু বিজয়ী হয়ে হামাস ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার চিরাচরিত একনায়কতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের গাজা থেকে উৎখাত করে, নির্বাচন বাতিল করে আর জনগণের কল্যাণে ব্যয় না করে বিপুল অর্থ ব্যয় করে সুড়ঙ্গ, রকেট তৈরি ও সশস্ত্র বাহিনীর পেছনে।
তবে এখানে ইসরায়েলের নীতির ভূমিকাও উপেক্ষা করা যায় না। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজাকে বিভক্ত রাখার নীতি হাতে নেয়। নেতানিয়াহু জানতেন, একটি ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব দ্বিরাষ্ট্র বাস্তবায়নের প্রস্তাবকে শক্তিশালী করত আর বিভক্ত নেতৃত্ব সেই সম্ভাবনাকে দুর্বল করেছে। এ কৌশলের অর্থ দাঁড়ায়, পশ্চিম তীর পিএকে দুর্বল করার পাশাপাশি গাজায় হামাসের শাসনকে পরোক্ষভাবে মেনে নেওয়া।
এ স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ দীর্ঘ মেয়াদে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। হামাসকে শক্তিশালী হতে দিয়ে নেতানিয়াহু কার্যত দ্বিরাষ্ট্র সমাধানকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রেখেছেন। হামাসের অস্তিত্ব ইসরায়েলের জন্য রাজনৈতিক আপসে না গিয়ে বসতি সম্প্রসারণ ও দখল চালিয়ে যাওয়ার পথে এক সহজ অজুহাত ছিল।
কিন্তু এ নীতি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ভয়াবহভাবে উল্টো ফল দিয়েছে। হামাসের হামলা ইসরায়েলের নিরাপত্তাবোধ ভেঙে দিয়েছে, ভয়াবহ এক যুদ্ধের সূচনা করেছে এবং শান্তিপ্রক্রিয়াকে পুরো এক প্রজন্ম পিছিয়ে দিয়েছে।
গাজার জনগণের মধ্যে হামাসের প্রতি গভীর ভালোবাসা নেই। অনেক ফিলিস্তিনি হামাসকেই দোষারোপ করছে ধ্বংস ও রক্তপাত ডেকে আনার জন্য। কিন্তু বিকল্প রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা বিশ্বাসযোগ্য শান্তির রূপরেখা না থাকায় হামাসের বয়ান টিকে আছে। চরমপন্থা বাঁচে হতাশার ওপর আর গাজায় এখন হতাশার প্রাচুর্য।
হামাসকে প্রকৃত অর্থে পরাজিত করার একমাত্র উপায় অস্ত্র নয়, বরং আদর্শিক লড়াই। হামাস যে বক্তব্যের ওপর টিকে আছে—তা হলো, রাষ্ট্রহীন মানুষের জন্য সম্মানের একমাত্র পথ হচ্ছে সহিংসতা। এ বক্তব্য ভেঙে দেওয়ার একমাত্র উপায় হলো ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি বাস্তব, আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত ও বিশ্বাসযোগ্য দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথ তৈরি করা।
এর অর্থ হলো, ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈধতা ফিরিয়ে আনা ও একটি নতুন প্রযুক্তিগত বা বহুপক্ষীয় প্রশাসনের মাধ্যমে গাজাকে পুনর্গঠন করা। শহীদ হওয়ার বাসন নয়, শাসন ও উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নেতৃত্বকে ক্ষমতায় আনা। গাজার রাজনৈতিক সংস্কার ও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমার শর্তে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোকে তহবিল পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া। ইসরায়েলকেও বুঝতে হবে, স্থায়ী অবরোধ ও দখলদারত্ব নিরাপত্তা বাড়ায় না; প্রকৃত নিরাপত্তা আসে সহাবস্থান থেকে।
ইসরায়েলের অভিযান প্রমাণ করেছে, যেমনটা বিশেষজ্ঞরা বহু আগে বলেছেন, আপনি একটি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারেন, কিন্তু একটি আদর্শকে নয়। হামাসকে সত্যিকার অর্থে পরাজিত করতে হলে ফিলিস্তিনের নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে ও চিন্তায় বিশ্বাসযোগ্য শান্তি ও সমৃদ্ধির ভবিষ্যৎ দেখাতে হবে।
ন্যাশনাল ইন্টারেস্টে বিশ্লেষণটি লিখেছেন ড. আজিম ইব্রাহিম। তিনি নিউ লাইনস ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসির সিনিয়র ডিরেক্টর এবং ‘অথরিটেরিয়ান সেঞ্চুরি: উইমেনস অব আ পোস্ট-লিবারাল ফিউচার’ বইটির লেখক। অনুবাদ করেছেন আবদুল বাছেদ।
তাই প্রশ্ন উঠছে, ইসরায়েলি নেতারা কি সত্যিই ইরানিদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে উত্তেজিত করতে পারবেন? উত্তরটা খুব স্পষ্ট—না। নেতানিয়াহু ও তাঁর সহযোগীদের এই দাবি অবাস্তব। এমনকি এই দলে আছেন রেজা পাহলভিও, যিনি ইরানের সাবেক শাহর পুত্র। তাঁর বাবা যাঁর শাসনামলে দেশের জনগণ আন্দোলনে ফুঁসে উঠেছিল, সেই শাহের পতন...
১৮ জুন ২০২৫বিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে।
৭ ঘণ্টা আগেভারতে আজকাল দিন শুরু হয় দুই ধরনের সংবাদ দিয়ে: একদিকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায়—পাকিস্তানবিরোধী বিতর্ক, হিন্দুদের গৌরবগাথা আর নতুন ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা; অন্যদিকে অন্ধকার এক বাস্তবতা—প্রতিদিন কোথাও না কোথাও কোনো মুসলমান নিগৃহীত হচ্ছে, পিটিয়ে মারা হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় বন্দী করা হচ্ছে, অথবা দেশদ্রোহী..
১৫ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
ভারতে আজকাল দিন শুরু হয় দুই ধরনের সংবাদ দিয়ে: একদিকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায়—পাকিস্তানবিরোধী বিতর্ক, হিন্দুদের গৌরবগাথা আর নতুন ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা; অন্যদিকে অন্ধকার এক বাস্তবতা—প্রতিদিন কোথাও না কোথাও কোনো মুসলমান নিগৃহীত হচ্ছে, পিটিয়ে মারা হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় বন্দী করা হচ্ছে, অথবা দেশদ্রোহী তকমা পাচ্ছে। এই দুই বাস্তবতার মাঝখানে একটি বার্তা স্পষ্ট—মুসলমানদের কষ্টক্লিষ্ট মুখ হয় অদৃশ্য করে দেওয়া হয়, নয়তো সেটিকে পরিণত করা হয় এক ধরনের টিভি ‘শো’তে, যা সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে সান্ধ্যকালীন বিনোদন। আজ ভারতে মুসলমানের জন্মই যেন আজন্ম পাপ! তার জন্মই হয় অপরাধী হয়ে। তাদের কণ্ঠস্বর কেউ শোনে না।
গত সেপ্টেম্বরে উত্তর প্রদেশের আজমগড়ে সাত বছরের এক মুসলিম শিশুর লাশ উদ্ধার হয়। লাশ ব্যাগে ভরা ছিল। প্রতিবেশীরাই জড়িত ছিল এ হত্যাকাণ্ডে। খবরটা স্থানীয়ভাবে একদিন দুদিন প্রচারিত হলেও দেশের বড় কোনো সংবাদমাধ্যমে জায়গা পায়নি। সেসময় নিউজরুমে আলোচনায় ছিল ‘লাভ জিহাদ’, সীমান্ত উত্তেজনা ও ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ। ফলে একটি মুসলিম শিশুর মৃত্যু জাতীয় ক্ষোভের গল্প হিসেবে ভাইরাল হয়নি। ধীরে ধীরে তা হারিয়ে গেছে। দ্রুত স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়া আর দশটা ঘটনার তালিকায় যোগ হয়েছে এই শিশুহত্যা।
সমাজবিজ্ঞানী স্ট্যানলি কোহেন এটিকে বলেন— ‘স্টেটস অব ডিনায়াল’। রাষ্ট্র এখানে নির্লিপ্ত। এখানে নৃশংসতাগুলো আড়াল করা হয় না, বরং এমনভাবে গ্রহণ করা হয় যেন তা স্বাভাবিক। ভারত আজ সেই অবস্থায়। এখানে মুসলমান হত্যার খবর গণমাধ্যমের শিরোনাম হওয়ার যোগ্য নয়, যেন এটা নিত্যদিনের সাধারণ ব্যাপার।
কানপুরে মুসলমানেরা ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের করে। গ্রেপ্তার করে ১ হাজার ৩০০ জনকে। ভালোবাসার প্রকাশও যেন আজ অপরাধ। অথচ মহারাষ্ট্র বা মধ্যপ্রদেশে যখন হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো প্রকাশ্যে গণহত্যার ডাক দেয়, তখন টেলিভিশন হয় তাদের মুখপত্র, নয়তো নীরব দর্শক। মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা যেন এক মঞ্চনাটক, যেখানে মুসলমানেরা চিরকাল অপরাধী/ভিলেন চরিত্রে আর হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলো সভ্যতার ধারক-বাহক ও রক্ষক হিসেবে অভিনয় করে।
ইন্দোরে ‘জিহাদি-মুক্ত বাজার’ নীতিতে রাতারাতি মুসলিম ব্যবসায়ীদের দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে—এ যেন অর্থনৈতিক লিঞ্চিং বা গণপ্রহার। অনেক পরিবার এতে উপার্জন হারায়, শিশুরা স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়, নারীরা খাবারের জন্য প্রতিবেশীর দ্বারে দ্বারে ঘোরে। অথচ দেশের বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলো এটিকে দেখায় ‘আইন-শৃঙ্খলার সমন্বয়’ হিসেবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংখ্যাগুরুরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, নানা মিম বানায়, বানানো হয় অনেক ভিডিও। এসব দেখে মনে হয়, মুসলমানদের প্রতি নিপীড়ন ও বঞ্চনা যেন বিনোদনের উপকরণ!
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এ সংস্কৃতির জন্মদাতা। তিনি প্রকাশ্যে মুসলমানদের ‘অনুপ্রবেশকারী’, ‘সন্ত্রাসীদের সহযোগী’ আখ্যা দেন। এমন ভাষা এখন ভারতের মূলধারার রাজনীতিরই অংশ। তথাকথিত বিরোধী দলগুলোও প্রতিবাদ না করে বরং নিজস্ব সংস্করণে নিজেদের হিন্দুত্ববাদী প্রমাণ করতে প্রতিযোগিতা করছে। মুসলমানেরা তাই এখন ভারতের রাজনীতিতে নাগরিক নয়, বরং নাটকের প্রপস মাত্র। (প্রপস বলতে মঞ্চ বা পর্দায় অভিনয়ের জন্য ব্যবহৃত বস্তু যেমন; আসবাব, অস্ত্র, পোশাক ইত্যাদি)
ভারতে আজকের দিনে একজন মুসলিম হিসেবে বাঁচা মানে ‘স্থায়ী সন্দেহভাজন’ আতঙ্কে থাকা। মসজিদে তাঁদের ওপর নজর রাখা হয়, বাজারে আড়চোখে তাকানো হয়, শ্রেণিকক্ষে সন্দেহ করা হয়। প্রতি শুক্রবার জুমার জামাতে যাওয়াই ঝুঁকি বলে মনে হয়। আজানের প্রতিটি ধ্বনি কারও কারও কাছে উসকানি বলে মনে হয়।
গীতিকার ও কবি সাহির লুধিয়ানভি একবার লিখেছিলেন, ‘যিনহে নাজ হ্যায় হিন্দ পার, ওহ কাহাঁ হ্যায়?’ (ভারতের জন্য যারা গর্বিত, তারা এখন কোথায়?)। প্রশ্নটি আজও প্রতিধ্বনিত হয়—যারা ভারত ও ভারতের মহত্ত্ব নিয়ে গর্বিত, তারা আজ কোথায়? তারা কী মুসলিমদের এ দুর্দশা দেখেন না?
উগান্ডায় জন্ম নেওয়া ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম গবেষক মাহমুদ মামদানি তাঁর ‘গুড মুসলিম, ব্যাড মুসলিম’ বইয়ে লিখেছেন—রাষ্ট্র ও সমাজ মুসলমানদের ভাগ করে ‘ভালো’ ও ‘খারাপ’ দুই শ্রেণিতে। ‘ভালো’ মুসলমান সে, যে চুপচাপ থাকে; আর ‘খারাপ’ সে, যে আত্মপরিচয় ও মর্যাদা জানান দিতে চায়। ভারতের বাস্তবতাও তা-ই—যে মুসলমান নিজের ধর্মবিশ্বাস আড়াল করে, সে টিকে থাকে; আর যে ভালোবাসা প্রকাশ করে, সমঅধিকার চায়, তাঁকে বলা হয় ‘মুজরিম’ বা অপরাধী। মামদানি আমাদের মনে করিয়ে দেন, এটি ধর্মতত্ত্বের বিষয় নয়, ক্ষমতার বিষয়। এই ক্ষমতাবানেরাই ঠিক করে দেয়, কোনটি বৈধ আর কোনটি অবৈধ— হোক সেটা ধর্মবিশ্বাস বা অধিকারের প্রশ্ন।
এই কারণেই গণপিটুনির ভিডিওগুলো হোয়াটসঅ্যাপে মিমের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এই কারণেই মুসলমানদের জন্মহার বেশি, তারা দ্রুতই হিন্দুদের ছাড়িয়ে যাবে— সংবাদ উপস্থাপকেরা এমন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বলেন আর হাসেন। এই কারণেই জনতা মুসলমানদের দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার পরে হাসি-তামাশা করে। ঘৃণা এখন আর শুধু রাজনীতি নয়, এটি এখন সমাজের বিনোদনে পরিণত হয়েছে। আর নিষ্ঠুরতা যখন কমেডি হয়ে ওঠে, যখন কাউকে অপমান করার ভিডিও প্রাইম-টাইম স্ক্রিপ্ট হয়ে যায়, তখন গণতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদের মধ্যে কোনো ফারাক থাকে না।
কিন্তু ইতিহাস দেখুন, যে সমাজ সংখ্যালঘুদের কষ্টকে বিনোদনে পরিণত করে, সে সমাজ নিজেও রক্ষা পায় না। নাৎসি জার্মানিতে ইহুদি নিধনে তথাকথিত লিবারেলদের বা উদারপন্থীদের নীরবতা, কৃষ্ণাঙ্গদের গণপিটুনির শিকার হতে দেখেও শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের উদাসীনতা, কিংবা গাজায় বোমা হামলা দেখে ইসরায়েলিদের উল্লাস—সবই মনে করিয়ে দেয়, ঘৃণার বিনোদন একসময় নিজের সমাজকেই গ্রাস করে। ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়।
তাহলে প্রশ্নটা রয়ে যায়—আমরা মুসলিম, না মুজরিম? কেন প্রতিদিন আমাদের বিচার হয়, অথচ হত্যাকারীরা মুক্ত থাকে? কেন আমাদের সন্তানদের মৃত্যু চাপা পড়ে রাষ্ট্রীয় উৎসবের আড়ালে?
এর উত্তর তালাশ করতে হবে শুধু মুসলমানদের নয়, ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠেরও। তারা কি ঘৃণাকে টেলিভিশন শো হিসেবে দেখবে, নাকি একদিন টেলিভিশন বন্ধ করে দেবে? কারণ ঘৃণা যেদিন দেশের একমাত্র বিনোদন হয়ে উঠবে, সেদিন শুধু মুসলমানের লাশ নয় ভারতের প্রজাতন্ত্রেরও পর্দা নামবে। সেদিন কেউ জিজ্ঞেস করবে না আপনি হিন্দু নাকি মুসলিম, ডানপন্থী নাকি উদারপন্থী। সেদিন ঘৃণার অট্টহাসিই হবে এই প্রজাতন্ত্রের একমাত্র অবশিষ্ট আওয়াজ।
আল-জাজিরায় প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে সংক্ষেপিত
লেখক: ইসমাইল সালাউদ্দিন, ভারতীয় লেখক ও গবেষক, মুসলিম পরিচয়, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে কাজ করেন
ভারতে আজকাল দিন শুরু হয় দুই ধরনের সংবাদ দিয়ে: একদিকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায়—পাকিস্তানবিরোধী বিতর্ক, হিন্দুদের গৌরবগাথা আর নতুন ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা; অন্যদিকে অন্ধকার এক বাস্তবতা—প্রতিদিন কোথাও না কোথাও কোনো মুসলমান নিগৃহীত হচ্ছে, পিটিয়ে মারা হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় বন্দী করা হচ্ছে, অথবা দেশদ্রোহী তকমা পাচ্ছে। এই দুই বাস্তবতার মাঝখানে একটি বার্তা স্পষ্ট—মুসলমানদের কষ্টক্লিষ্ট মুখ হয় অদৃশ্য করে দেওয়া হয়, নয়তো সেটিকে পরিণত করা হয় এক ধরনের টিভি ‘শো’তে, যা সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে সান্ধ্যকালীন বিনোদন। আজ ভারতে মুসলমানের জন্মই যেন আজন্ম পাপ! তার জন্মই হয় অপরাধী হয়ে। তাদের কণ্ঠস্বর কেউ শোনে না।
গত সেপ্টেম্বরে উত্তর প্রদেশের আজমগড়ে সাত বছরের এক মুসলিম শিশুর লাশ উদ্ধার হয়। লাশ ব্যাগে ভরা ছিল। প্রতিবেশীরাই জড়িত ছিল এ হত্যাকাণ্ডে। খবরটা স্থানীয়ভাবে একদিন দুদিন প্রচারিত হলেও দেশের বড় কোনো সংবাদমাধ্যমে জায়গা পায়নি। সেসময় নিউজরুমে আলোচনায় ছিল ‘লাভ জিহাদ’, সীমান্ত উত্তেজনা ও ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ। ফলে একটি মুসলিম শিশুর মৃত্যু জাতীয় ক্ষোভের গল্প হিসেবে ভাইরাল হয়নি। ধীরে ধীরে তা হারিয়ে গেছে। দ্রুত স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়া আর দশটা ঘটনার তালিকায় যোগ হয়েছে এই শিশুহত্যা।
সমাজবিজ্ঞানী স্ট্যানলি কোহেন এটিকে বলেন— ‘স্টেটস অব ডিনায়াল’। রাষ্ট্র এখানে নির্লিপ্ত। এখানে নৃশংসতাগুলো আড়াল করা হয় না, বরং এমনভাবে গ্রহণ করা হয় যেন তা স্বাভাবিক। ভারত আজ সেই অবস্থায়। এখানে মুসলমান হত্যার খবর গণমাধ্যমের শিরোনাম হওয়ার যোগ্য নয়, যেন এটা নিত্যদিনের সাধারণ ব্যাপার।
কানপুরে মুসলমানেরা ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের করে। গ্রেপ্তার করে ১ হাজার ৩০০ জনকে। ভালোবাসার প্রকাশও যেন আজ অপরাধ। অথচ মহারাষ্ট্র বা মধ্যপ্রদেশে যখন হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো প্রকাশ্যে গণহত্যার ডাক দেয়, তখন টেলিভিশন হয় তাদের মুখপত্র, নয়তো নীরব দর্শক। মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা যেন এক মঞ্চনাটক, যেখানে মুসলমানেরা চিরকাল অপরাধী/ভিলেন চরিত্রে আর হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলো সভ্যতার ধারক-বাহক ও রক্ষক হিসেবে অভিনয় করে।
ইন্দোরে ‘জিহাদি-মুক্ত বাজার’ নীতিতে রাতারাতি মুসলিম ব্যবসায়ীদের দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে—এ যেন অর্থনৈতিক লিঞ্চিং বা গণপ্রহার। অনেক পরিবার এতে উপার্জন হারায়, শিশুরা স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়, নারীরা খাবারের জন্য প্রতিবেশীর দ্বারে দ্বারে ঘোরে। অথচ দেশের বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলো এটিকে দেখায় ‘আইন-শৃঙ্খলার সমন্বয়’ হিসেবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংখ্যাগুরুরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, নানা মিম বানায়, বানানো হয় অনেক ভিডিও। এসব দেখে মনে হয়, মুসলমানদের প্রতি নিপীড়ন ও বঞ্চনা যেন বিনোদনের উপকরণ!
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এ সংস্কৃতির জন্মদাতা। তিনি প্রকাশ্যে মুসলমানদের ‘অনুপ্রবেশকারী’, ‘সন্ত্রাসীদের সহযোগী’ আখ্যা দেন। এমন ভাষা এখন ভারতের মূলধারার রাজনীতিরই অংশ। তথাকথিত বিরোধী দলগুলোও প্রতিবাদ না করে বরং নিজস্ব সংস্করণে নিজেদের হিন্দুত্ববাদী প্রমাণ করতে প্রতিযোগিতা করছে। মুসলমানেরা তাই এখন ভারতের রাজনীতিতে নাগরিক নয়, বরং নাটকের প্রপস মাত্র। (প্রপস বলতে মঞ্চ বা পর্দায় অভিনয়ের জন্য ব্যবহৃত বস্তু যেমন; আসবাব, অস্ত্র, পোশাক ইত্যাদি)
ভারতে আজকের দিনে একজন মুসলিম হিসেবে বাঁচা মানে ‘স্থায়ী সন্দেহভাজন’ আতঙ্কে থাকা। মসজিদে তাঁদের ওপর নজর রাখা হয়, বাজারে আড়চোখে তাকানো হয়, শ্রেণিকক্ষে সন্দেহ করা হয়। প্রতি শুক্রবার জুমার জামাতে যাওয়াই ঝুঁকি বলে মনে হয়। আজানের প্রতিটি ধ্বনি কারও কারও কাছে উসকানি বলে মনে হয়।
গীতিকার ও কবি সাহির লুধিয়ানভি একবার লিখেছিলেন, ‘যিনহে নাজ হ্যায় হিন্দ পার, ওহ কাহাঁ হ্যায়?’ (ভারতের জন্য যারা গর্বিত, তারা এখন কোথায়?)। প্রশ্নটি আজও প্রতিধ্বনিত হয়—যারা ভারত ও ভারতের মহত্ত্ব নিয়ে গর্বিত, তারা আজ কোথায়? তারা কী মুসলিমদের এ দুর্দশা দেখেন না?
উগান্ডায় জন্ম নেওয়া ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম গবেষক মাহমুদ মামদানি তাঁর ‘গুড মুসলিম, ব্যাড মুসলিম’ বইয়ে লিখেছেন—রাষ্ট্র ও সমাজ মুসলমানদের ভাগ করে ‘ভালো’ ও ‘খারাপ’ দুই শ্রেণিতে। ‘ভালো’ মুসলমান সে, যে চুপচাপ থাকে; আর ‘খারাপ’ সে, যে আত্মপরিচয় ও মর্যাদা জানান দিতে চায়। ভারতের বাস্তবতাও তা-ই—যে মুসলমান নিজের ধর্মবিশ্বাস আড়াল করে, সে টিকে থাকে; আর যে ভালোবাসা প্রকাশ করে, সমঅধিকার চায়, তাঁকে বলা হয় ‘মুজরিম’ বা অপরাধী। মামদানি আমাদের মনে করিয়ে দেন, এটি ধর্মতত্ত্বের বিষয় নয়, ক্ষমতার বিষয়। এই ক্ষমতাবানেরাই ঠিক করে দেয়, কোনটি বৈধ আর কোনটি অবৈধ— হোক সেটা ধর্মবিশ্বাস বা অধিকারের প্রশ্ন।
এই কারণেই গণপিটুনির ভিডিওগুলো হোয়াটসঅ্যাপে মিমের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এই কারণেই মুসলমানদের জন্মহার বেশি, তারা দ্রুতই হিন্দুদের ছাড়িয়ে যাবে— সংবাদ উপস্থাপকেরা এমন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বলেন আর হাসেন। এই কারণেই জনতা মুসলমানদের দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার পরে হাসি-তামাশা করে। ঘৃণা এখন আর শুধু রাজনীতি নয়, এটি এখন সমাজের বিনোদনে পরিণত হয়েছে। আর নিষ্ঠুরতা যখন কমেডি হয়ে ওঠে, যখন কাউকে অপমান করার ভিডিও প্রাইম-টাইম স্ক্রিপ্ট হয়ে যায়, তখন গণতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদের মধ্যে কোনো ফারাক থাকে না।
কিন্তু ইতিহাস দেখুন, যে সমাজ সংখ্যালঘুদের কষ্টকে বিনোদনে পরিণত করে, সে সমাজ নিজেও রক্ষা পায় না। নাৎসি জার্মানিতে ইহুদি নিধনে তথাকথিত লিবারেলদের বা উদারপন্থীদের নীরবতা, কৃষ্ণাঙ্গদের গণপিটুনির শিকার হতে দেখেও শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের উদাসীনতা, কিংবা গাজায় বোমা হামলা দেখে ইসরায়েলিদের উল্লাস—সবই মনে করিয়ে দেয়, ঘৃণার বিনোদন একসময় নিজের সমাজকেই গ্রাস করে। ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়।
তাহলে প্রশ্নটা রয়ে যায়—আমরা মুসলিম, না মুজরিম? কেন প্রতিদিন আমাদের বিচার হয়, অথচ হত্যাকারীরা মুক্ত থাকে? কেন আমাদের সন্তানদের মৃত্যু চাপা পড়ে রাষ্ট্রীয় উৎসবের আড়ালে?
এর উত্তর তালাশ করতে হবে শুধু মুসলমানদের নয়, ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠেরও। তারা কি ঘৃণাকে টেলিভিশন শো হিসেবে দেখবে, নাকি একদিন টেলিভিশন বন্ধ করে দেবে? কারণ ঘৃণা যেদিন দেশের একমাত্র বিনোদন হয়ে উঠবে, সেদিন শুধু মুসলমানের লাশ নয় ভারতের প্রজাতন্ত্রেরও পর্দা নামবে। সেদিন কেউ জিজ্ঞেস করবে না আপনি হিন্দু নাকি মুসলিম, ডানপন্থী নাকি উদারপন্থী। সেদিন ঘৃণার অট্টহাসিই হবে এই প্রজাতন্ত্রের একমাত্র অবশিষ্ট আওয়াজ।
আল-জাজিরায় প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে সংক্ষেপিত
লেখক: ইসমাইল সালাউদ্দিন, ভারতীয় লেখক ও গবেষক, মুসলিম পরিচয়, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে কাজ করেন
তাই প্রশ্ন উঠছে, ইসরায়েলি নেতারা কি সত্যিই ইরানিদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে উত্তেজিত করতে পারবেন? উত্তরটা খুব স্পষ্ট—না। নেতানিয়াহু ও তাঁর সহযোগীদের এই দাবি অবাস্তব। এমনকি এই দলে আছেন রেজা পাহলভিও, যিনি ইরানের সাবেক শাহর পুত্র। তাঁর বাবা যাঁর শাসনামলে দেশের জনগণ আন্দোলনে ফুঁসে উঠেছিল, সেই শাহের পতন...
১৮ জুন ২০২৫বিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে।
৭ ঘণ্টা আগেগাজায় স্থল অভিযানের শুরু থেকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে অবিরাম বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়ও একই অবস্থান ছিল নেতানিয়াহুর সরকারের। এমনকি গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
৯ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
১ দিন আগেসিএনএনের প্রতিবেদন
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
গাজা যুদ্ধবিরতির পর গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বিশ্বনেতাদের সামনে নিজের সাফল্য তুলে ধরছিলেন, তখন তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিজের ‘প্রিয় ফিল্ড মার্শাল’ বলে সম্বোধন করেন। এরপর মঞ্চ ছেড়ে দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে, যিনি ট্রাম্পের উদ্যোগের প্রশংসা করে ঘোষণা দেন, তিনি ট্রাম্পকে আবারও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেবেন।
এক বছর আগেও এমন দৃশ্য কল্পনা করা কঠিন ছিল। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকাভুক্ত ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে পাকিস্তানের কথিত সম্পর্কের কারণে ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছিল। তা ছাড়া চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়াটাও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ছিল এক অস্বস্তির কারণ।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুরো মেয়াদে কোনো পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেননি। এমনকি ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর তিনি পাকিস্তানকে বলেছিলেন ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর একটি’।
কিন্তু ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
পাকিস্তানের নেতারা এখন প্রায়ই হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রিত হচ্ছেন। দেশটির সামরিক বাহিনী পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি র্যাথিয়ন ক্ষেপণাস্ত্র। বাণিজ্যে তারা পেয়েছে প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় কম শুল্কের সুবিধা।
এই কূটনৈতিক সাফল্যের পেছনে রয়েছে দুটি মূল উপাদান। প্রথমত, চীনের নিয়ন্ত্রণে না থাকা দুর্লভ খনিজে প্রবেশাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের প্রশংসা।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের এই সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতেও বেশ সাড়া ফেলেছে। ফলে ভারতের জন্য এটি ক্ষোভের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র দিল্লির ওপর বড় অঙ্কের শুল্ক আরোপ করেছে এবং রাশিয়া থেকে সস্তা তেল কেনা নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বিপরীতে, পাকিস্তান প্রতিনিয়ত যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।
পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র এই উষ্ণ সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। তিনি বর্তমানে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান। ৫৭ বছর বয়সী এই সেনা কর্মকর্তা শান্ত ও সংযত চরিত্রের বলে পরিচিত। গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চার দিনের সংঘাতে আসিম মুনির আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন। সে সময় উভয় দেশের বেশ কয়েকজন সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। পরিস্থিতি একসময় পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে গড়াচ্ছিল।
এই অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। সংঘাত থামলে ট্রাম্প নিজের কৃতিত্ব দাবি করেন, আর পাকিস্তান তা প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়। এরপরই ইসলামাবাদ ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দেয়। অন্যদিকে, ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে, যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই।
এ ছাড়া পাকিস্তান এই সংঘাতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাতটি জেট ভূপাতিতের দাবি করে, যা প্রকাশ্যে বারবার উল্লেখ করেন ট্রাম্প। ভারত এই সংখ্যা কখনোই নিশ্চিত করেনি এবং প্রাথমিকভাবে তাদের কোনো জেট ভূপাতিত হওয়ার কথা অস্বীকার করেছিল।
এর কিছুদিন পর আসিম মুনির ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদে উন্নীত হন এবং একা ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে দুপুরের খাবার খান। সেখানে কোনো বেসামরিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না।
ওয়াশিংটনভিত্তিক লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুজা নওয়াজ বলেন, ট্রাম্প ‘জয়ীদের’ পছন্দ করেন। তিনি সব সময় বলেছেন যে...তিনি পরাজিতদের পছন্দ করেন না। তাই তিনি স্পষ্টতই ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের মধ্যে একজন বিজয়ীকে দেখেছেন, যিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ইচ্ছুক...ট্রাম্প যখন যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখন নিশ্চয়ই তাঁরা একই পথে ছিলেন।
পাকিস্তান কেন ট্রাম্পের কাছে গুরুত্বপূর্ণ
এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সুবিধা পাচ্ছে। কারণ, তাদের ভৌগোলিক অবস্থান।’ কুগেলম্যান ইসলামাবাদ ও ইরানের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য পাকিস্তান এমন একটি দেশ, ‘যা ওয়াশিংটন থেকে তেহরানে বার্তা পৌঁছানোর ভূমিকা পালন করতে পারে।’
তবে কঠিন আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করার ইতিহাস পাকিস্তানের রয়েছে। ১৯৭১ সালে তারা ইসলামাবাদ থেকে বেইজিংয়ে হেনরি কিসিঞ্জারের গোপন সফরের ব্যবস্থা করেছিল, যার ফলে মাও সে-তুংয়ের কমিউনিস্ট চীনের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়।
কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় তাস হলো দুর্লভ খনিজ সম্পদ। চীনের নিয়ন্ত্রণে নেই এমন এই খনিজ সম্পদগুলো আইফোন থেকে শুরু করে এমআরআই মেশিন, এমনকি সবচেয়ে উন্নত যুদ্ধবিমান এবং সামরিক অস্ত্রশস্ত্রের জন্য প্রয়োজন।
বর্তমানে ১৭ ধরনের খনিজ পদার্থের বৈশ্বিক সরবরাহে চীনের প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে; বিশেষ করে প্রক্রিয়াকরণ ও পরিশোধনের ক্ষেত্রে তাদের কর্তৃত্ব রয়েছে। শুল্ক, প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বিরোধ চলার কারণে বেইজিং এই সুবিধা কাজে লাগাতে চাইছে।
পাকিস্তান সরকারের হিসাবে, দেশটির ভূমির নিচে প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের অপ্রাপ্ত খনিজ সম্পদ রয়েছে। তাই ইসলামাবাদ নিজেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ খনিজের নতুন কেন্দ্র’ হিসেবে তুলে ধরছে এবং এ কারণেই ট্রাম্প প্রশাসনের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে ওভাল অফিসের বৈঠকে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায়, জেনারেল মুনির গর্বের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পাকিস্তানের খনিজ পদার্থের নমুনাখচিত একটি কাঠের বাক্স উপহার দিচ্ছেন।
একই মাসে ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস কোম্পানি (ইউএসএসএম) সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এরপর পাকিস্তানের বিরল খনিজ পদার্থ প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। এই চুক্তির অংশ হিসেবে পাকিস্তান ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে খনিজ পদার্থের প্রথম চালান পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। চালানের পরিমাণ নির্দিষ্ট না করলেও জানা গেছে, এতে অ্যান্টিমনি, কপার কনসেন্ট্রেট, নিওডিমিয়াম, প্রাসেওডিমিয়ামসহ দুর্লভ খনিজ উপাদান রয়েছে।
পাকিস্তানের বেশির ভাগ দুর্লভ খনিজ বেলুচিস্তান প্রদেশে রয়েছে বলে মনে করা হয়। রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের দাবিতে এই কৌশলগত ও খনিজসমৃদ্ধ অঞ্চলটিতে বছরের পর বছর ধরে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ চলছে।
গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের অভিযোগ, এই গোষ্ঠীকে ভারত অর্থায়ন করে আসছে। পরের মাসেই পাকিস্তানে র্যাথিয়ন অ্যাডভান্স মিডিয়াম রেঞ্জ এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল বিক্রির অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
কেউ কেউ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার ক্ষেত্রে মুনিরের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পাকিস্তানের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে সামরিক বাহিনীর প্রভাব নিয়ে পুরোনো উদ্বেগগুলোকে আবার সামনে এনেছে।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান চারজন ভিন্ন সামরিক শাসকের নেতৃত্বে ছিল এবং তিনটি অভ্যুত্থান দেখেছে। ১৯৭৩ সালে বর্তমান সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর থেকে কোনো প্রধানমন্ত্রীই পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।
মুনিরের সমালোচকেরা বলেন, তিনি সামরিক বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছেন। সরকারি সিদ্ধান্ত এবং এমনকি সুপ্রিম কোর্টের ওপরও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছেন।
গত মাসে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে বলেছে, রাষ্ট্রটি ‘বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নমত ও সমালোচনা, বিশেষ করে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সমালোচনা করার জন্য স্থানীয় অধিকারকর্মী এবং বিরোধী দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।’
এ ছাড়া ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস কোম্পানির (ইউএসএসএম) সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির পাকিস্তানি অংশীদার হলো সামরিক মালিকানাধীন ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন। অর্থাৎ মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি সফল হলে লাভের বড় অংশও যাবে সামরিক বাহিনীর হাতে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে জানতে চাইলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ যৌথ স্বার্থের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। এর বাইরে কিছু নেই।’
তবে বিশ্লেষকেরা বলেছেন, এই উষ্ণ সম্পর্কেরও একটি সীমা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেন হাক্কানি বলেন, ‘এই সম্পর্ক সব সময় ট্রাম্পের মর্জির ওপর নির্ভর করবে। ট্রাম্পের সম্পর্ক পাকিস্তানের প্রতি নয়, বরং প্রশংসার প্রতি। পাকিস্তান তাঁকে ভালোবাসে, আর এ জন্যই তিনিও পাকিস্তানকে ভালোবাসছেন।’
তাই ধারণা করা হচ্ছে, এই সম্পর্ক কত দিন টিকে থাকবে, তা নির্ভর করবে হোয়াইট হাউসে বসা ট্রাম্পের মনোভাবের ওপর। কারণ, ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি সব সময় অনিশ্চিত।
গাজা যুদ্ধবিরতির পর গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বিশ্বনেতাদের সামনে নিজের সাফল্য তুলে ধরছিলেন, তখন তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিজের ‘প্রিয় ফিল্ড মার্শাল’ বলে সম্বোধন করেন। এরপর মঞ্চ ছেড়ে দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে, যিনি ট্রাম্পের উদ্যোগের প্রশংসা করে ঘোষণা দেন, তিনি ট্রাম্পকে আবারও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেবেন।
এক বছর আগেও এমন দৃশ্য কল্পনা করা কঠিন ছিল। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকাভুক্ত ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে পাকিস্তানের কথিত সম্পর্কের কারণে ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছিল। তা ছাড়া চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়াটাও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ছিল এক অস্বস্তির কারণ।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুরো মেয়াদে কোনো পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেননি। এমনকি ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর তিনি পাকিস্তানকে বলেছিলেন ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর একটি’।
কিন্তু ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
পাকিস্তানের নেতারা এখন প্রায়ই হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রিত হচ্ছেন। দেশটির সামরিক বাহিনী পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি র্যাথিয়ন ক্ষেপণাস্ত্র। বাণিজ্যে তারা পেয়েছে প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় কম শুল্কের সুবিধা।
এই কূটনৈতিক সাফল্যের পেছনে রয়েছে দুটি মূল উপাদান। প্রথমত, চীনের নিয়ন্ত্রণে না থাকা দুর্লভ খনিজে প্রবেশাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের প্রশংসা।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের এই সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতেও বেশ সাড়া ফেলেছে। ফলে ভারতের জন্য এটি ক্ষোভের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র দিল্লির ওপর বড় অঙ্কের শুল্ক আরোপ করেছে এবং রাশিয়া থেকে সস্তা তেল কেনা নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বিপরীতে, পাকিস্তান প্রতিনিয়ত যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।
পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র এই উষ্ণ সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। তিনি বর্তমানে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান। ৫৭ বছর বয়সী এই সেনা কর্মকর্তা শান্ত ও সংযত চরিত্রের বলে পরিচিত। গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চার দিনের সংঘাতে আসিম মুনির আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন। সে সময় উভয় দেশের বেশ কয়েকজন সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। পরিস্থিতি একসময় পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে গড়াচ্ছিল।
এই অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। সংঘাত থামলে ট্রাম্প নিজের কৃতিত্ব দাবি করেন, আর পাকিস্তান তা প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়। এরপরই ইসলামাবাদ ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দেয়। অন্যদিকে, ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে, যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই।
এ ছাড়া পাকিস্তান এই সংঘাতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাতটি জেট ভূপাতিতের দাবি করে, যা প্রকাশ্যে বারবার উল্লেখ করেন ট্রাম্প। ভারত এই সংখ্যা কখনোই নিশ্চিত করেনি এবং প্রাথমিকভাবে তাদের কোনো জেট ভূপাতিত হওয়ার কথা অস্বীকার করেছিল।
এর কিছুদিন পর আসিম মুনির ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদে উন্নীত হন এবং একা ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে দুপুরের খাবার খান। সেখানে কোনো বেসামরিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না।
ওয়াশিংটনভিত্তিক লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুজা নওয়াজ বলেন, ট্রাম্প ‘জয়ীদের’ পছন্দ করেন। তিনি সব সময় বলেছেন যে...তিনি পরাজিতদের পছন্দ করেন না। তাই তিনি স্পষ্টতই ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের মধ্যে একজন বিজয়ীকে দেখেছেন, যিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ইচ্ছুক...ট্রাম্প যখন যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখন নিশ্চয়ই তাঁরা একই পথে ছিলেন।
পাকিস্তান কেন ট্রাম্পের কাছে গুরুত্বপূর্ণ
এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সুবিধা পাচ্ছে। কারণ, তাদের ভৌগোলিক অবস্থান।’ কুগেলম্যান ইসলামাবাদ ও ইরানের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য পাকিস্তান এমন একটি দেশ, ‘যা ওয়াশিংটন থেকে তেহরানে বার্তা পৌঁছানোর ভূমিকা পালন করতে পারে।’
তবে কঠিন আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করার ইতিহাস পাকিস্তানের রয়েছে। ১৯৭১ সালে তারা ইসলামাবাদ থেকে বেইজিংয়ে হেনরি কিসিঞ্জারের গোপন সফরের ব্যবস্থা করেছিল, যার ফলে মাও সে-তুংয়ের কমিউনিস্ট চীনের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়।
কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় তাস হলো দুর্লভ খনিজ সম্পদ। চীনের নিয়ন্ত্রণে নেই এমন এই খনিজ সম্পদগুলো আইফোন থেকে শুরু করে এমআরআই মেশিন, এমনকি সবচেয়ে উন্নত যুদ্ধবিমান এবং সামরিক অস্ত্রশস্ত্রের জন্য প্রয়োজন।
বর্তমানে ১৭ ধরনের খনিজ পদার্থের বৈশ্বিক সরবরাহে চীনের প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে; বিশেষ করে প্রক্রিয়াকরণ ও পরিশোধনের ক্ষেত্রে তাদের কর্তৃত্ব রয়েছে। শুল্ক, প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বিরোধ চলার কারণে বেইজিং এই সুবিধা কাজে লাগাতে চাইছে।
পাকিস্তান সরকারের হিসাবে, দেশটির ভূমির নিচে প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের অপ্রাপ্ত খনিজ সম্পদ রয়েছে। তাই ইসলামাবাদ নিজেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ খনিজের নতুন কেন্দ্র’ হিসেবে তুলে ধরছে এবং এ কারণেই ট্রাম্প প্রশাসনের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে ওভাল অফিসের বৈঠকে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায়, জেনারেল মুনির গর্বের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পাকিস্তানের খনিজ পদার্থের নমুনাখচিত একটি কাঠের বাক্স উপহার দিচ্ছেন।
একই মাসে ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস কোম্পানি (ইউএসএসএম) সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এরপর পাকিস্তানের বিরল খনিজ পদার্থ প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। এই চুক্তির অংশ হিসেবে পাকিস্তান ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে খনিজ পদার্থের প্রথম চালান পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। চালানের পরিমাণ নির্দিষ্ট না করলেও জানা গেছে, এতে অ্যান্টিমনি, কপার কনসেন্ট্রেট, নিওডিমিয়াম, প্রাসেওডিমিয়ামসহ দুর্লভ খনিজ উপাদান রয়েছে।
পাকিস্তানের বেশির ভাগ দুর্লভ খনিজ বেলুচিস্তান প্রদেশে রয়েছে বলে মনে করা হয়। রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের দাবিতে এই কৌশলগত ও খনিজসমৃদ্ধ অঞ্চলটিতে বছরের পর বছর ধরে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ চলছে।
গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের অভিযোগ, এই গোষ্ঠীকে ভারত অর্থায়ন করে আসছে। পরের মাসেই পাকিস্তানে র্যাথিয়ন অ্যাডভান্স মিডিয়াম রেঞ্জ এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল বিক্রির অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
কেউ কেউ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার ক্ষেত্রে মুনিরের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পাকিস্তানের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে সামরিক বাহিনীর প্রভাব নিয়ে পুরোনো উদ্বেগগুলোকে আবার সামনে এনেছে।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান চারজন ভিন্ন সামরিক শাসকের নেতৃত্বে ছিল এবং তিনটি অভ্যুত্থান দেখেছে। ১৯৭৩ সালে বর্তমান সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর থেকে কোনো প্রধানমন্ত্রীই পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।
মুনিরের সমালোচকেরা বলেন, তিনি সামরিক বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছেন। সরকারি সিদ্ধান্ত এবং এমনকি সুপ্রিম কোর্টের ওপরও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছেন।
গত মাসে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে বলেছে, রাষ্ট্রটি ‘বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নমত ও সমালোচনা, বিশেষ করে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সমালোচনা করার জন্য স্থানীয় অধিকারকর্মী এবং বিরোধী দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।’
এ ছাড়া ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস কোম্পানির (ইউএসএসএম) সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির পাকিস্তানি অংশীদার হলো সামরিক মালিকানাধীন ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন। অর্থাৎ মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি সফল হলে লাভের বড় অংশও যাবে সামরিক বাহিনীর হাতে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে জানতে চাইলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ যৌথ স্বার্থের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। এর বাইরে কিছু নেই।’
তবে বিশ্লেষকেরা বলেছেন, এই উষ্ণ সম্পর্কেরও একটি সীমা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেন হাক্কানি বলেন, ‘এই সম্পর্ক সব সময় ট্রাম্পের মর্জির ওপর নির্ভর করবে। ট্রাম্পের সম্পর্ক পাকিস্তানের প্রতি নয়, বরং প্রশংসার প্রতি। পাকিস্তান তাঁকে ভালোবাসে, আর এ জন্যই তিনিও পাকিস্তানকে ভালোবাসছেন।’
তাই ধারণা করা হচ্ছে, এই সম্পর্ক কত দিন টিকে থাকবে, তা নির্ভর করবে হোয়াইট হাউসে বসা ট্রাম্পের মনোভাবের ওপর। কারণ, ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি সব সময় অনিশ্চিত।
তাই প্রশ্ন উঠছে, ইসরায়েলি নেতারা কি সত্যিই ইরানিদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে উত্তেজিত করতে পারবেন? উত্তরটা খুব স্পষ্ট—না। নেতানিয়াহু ও তাঁর সহযোগীদের এই দাবি অবাস্তব। এমনকি এই দলে আছেন রেজা পাহলভিও, যিনি ইরানের সাবেক শাহর পুত্র। তাঁর বাবা যাঁর শাসনামলে দেশের জনগণ আন্দোলনে ফুঁসে উঠেছিল, সেই শাহের পতন...
১৮ জুন ২০২৫বিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে।
৭ ঘণ্টা আগেগাজায় স্থল অভিযানের শুরু থেকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে অবিরাম বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়ও একই অবস্থান ছিল নেতানিয়াহুর সরকারের। এমনকি গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
৯ ঘণ্টা আগেভারতে আজকাল দিন শুরু হয় দুই ধরনের সংবাদ দিয়ে: একদিকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায়—পাকিস্তানবিরোধী বিতর্ক, হিন্দুদের গৌরবগাথা আর নতুন ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা; অন্যদিকে অন্ধকার এক বাস্তবতা—প্রতিদিন কোথাও না কোথাও কোনো মুসলমান নিগৃহীত হচ্ছে, পিটিয়ে মারা হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় বন্দী করা হচ্ছে, অথবা দেশদ্রোহী..
১৫ ঘণ্টা আগে