তিনি একটিও ভোট পাননি। সরাসরি জনগণের কাছ থেকে অনুমোদনও পাননি। তিনি সরকারের বেতনভুক্ত কেউ না। কিন্তু মার্কিন প্রশাসনে এখন সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি। বিশ্বের শীর্ষ এই ধনী ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামোর বিরুদ্ধে একপ্রকার ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছেন। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে তিনি প্রশাসনের আকার ও কার্যপরিধি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছেন, একই সঙ্গে সরকারের সবচেয়ে সংবেদনশীল কিছু গোপন তথ্যের নিয়ন্ত্রণও পেয়েছেন।
নিজের মালিকানাধীন শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে জনমত গঠনে প্রভাব ফেলেছেন। যারা তাঁর বিরোধিতা করবে, তাদের নির্বাচনে জেতা কঠিন করে তুলতে নিজের বিপুল সম্পদ কাজে লাগানোর হুমকি দিয়েছেন। এই ব্যক্তিটি আর কেউই নন—বিখ্যাত ইলন মাস্ক।
মাস্কের প্রভাব–প্রতিপত্তি যেন কোনো ধরনের জবাবদিহির বাইরে। তাঁর প্রতাপ ওয়াশিংটনের প্রভাবশালী মহলে স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি করেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব বিষয়ে তাঁর প্রভাব বিস্তৃত এবং অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত। তবে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস এখন পর্যন্ত মাস্ককে নিয়ন্ত্রণে আনার কোনো আগ্রহ দেখায়নি। তাঁর মতো কোনো বেসরকারি ব্যক্তিকে মার্কিন প্রশাসনের অন্দরে এর আগে কখনোই এত প্রভাবশালী অবস্থানে দেখা যায়নি।
দিন কয়েক আগে ফ্লোরিডা থেকে ওয়াশিংটনে আসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের রাষ্ট্রীয় বাহন এয়ারফোর্স ওয়ান থেকে নেমে ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি ইলন ভালো কাজ করছেন। তিনি ব্যাপকভাবে খরচ কমানোর পক্ষপাতী। কখনো কখনো আমরা তাঁর সঙ্গে একমত হব না এবং আমরা তাঁর নির্দেশিত পথে যাব না। কিন্তু আমি মনে করি, তিনি দারুণ কাজ করছেন। তিনি বুদ্ধিমান। খুব বুদ্ধিমান। আর তিনি আমাদের ফেডারেল বাজেট কমানোর ব্যাপারে বেশ আগ্রহী।’
গত কয়েক দিনে মার্কিন সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মাস্কের খবরদারি ব্যাপক হয়েছে। কারণ, তিনি ট্রাম্প প্রতিষ্ঠিত ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি বা সরকারি কর্মদক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) প্রধান হিসেবে ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁর ঘোষিত লক্ষ্য, মার্কিন সরকারের বার্ষিক ব্যয় ৫০০ বিলিয়ন ডলার কমানো। ডিওজিইর ক্ষমতা সীমিত। এটি কোনো প্রকৃত সরকারি সংস্থা নয়। মাস্কের এই টাস্কফোর্স মূলত প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে গঠিত। আর বাজেট নির্ধারণের ক্ষমতা এখনো কংগ্রেসের হাতেই।
ট্রাম্প প্রশাসনে মাস্কের ভূমিকা এখনো অস্পষ্ট। অবশ্য মাস্ক তাঁর এক্স বায়োতে নিজেকে হোয়াইট হাউসের প্রযুক্তি বিষয়ক ‘সহায়তাকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মাস্ক ট্রাম্পের জন্য একজন বিশেষ সরকারি কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। এই বিষয়টি প্রশাসনে তাঁর আনুষ্ঠানিক অবস্থান নিশ্চিত করলেও তাঁকে ফেডারেল নীতিমালা এড়ানোর সুযোগ দিচ্ছে।’ ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মাস্ক কোনো বেতন পাচ্ছেন না।’
মাস্কের আইনি ক্ষমতা না থাকলেও তিনি ক্ষমতার খুব কাছাকাছি। কখনো কখনো হোয়াইট হাউস প্রাঙ্গণে থেকেই কাজ করছেন। প্রেসিডেন্টের সবচেয়ে প্রভাবশালী উপদেষ্টার ভূমিকা স্পষ্টত ভালোই উপভোগ করছেন মাস্ক। ট্রাম্প যদি মনে করেন, তাঁর কোনো সহযোগী তাঁকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে তবে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেন। তবে ট্রাম্পের ভাষায়, তিনি এখনো মাস্কের প্রতি ‘মুগ্ধ’ এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি তাঁর হয়ে কাজ করছেন—এই বিষয়টি তিনি উপভোগ করেন।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প মনে করেন, মাস্ক বিতর্কিত পদক্ষেপের জন্য জনগণের প্রতিক্রিয়া নিজ কাঁধে নিতে প্রস্তুত। এই বিষয়টি প্রেসিডেন্টকে জনগণের তোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে।
গত সপ্তাহে মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির দিকে নজর দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা একাধিক পোস্টে তিনি প্রমাণ ছাড়াই ঘোষণা করেছেন, এটি একটি ‘অশুভ ও সন্ত্রাসী সংস্থা’ এবং এটির ‘মরে যাওয়াই ভালো।’
ট্রাম্প প্রশাসন আর্থিকভাবে লাভজনক ‘আমেরিকা সবার আগে’ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। আর এই নীতির আলোকেই ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বের সবচেয়ে বড় খাদ্য সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাটিকে বন্ধ করে কর্মী প্রত্যাহার করে ব্যাপক বিভ্রান্তির মুখে ফেলে দেয় বিশ্ববাসীকে। সম্প্রতি মাস্ক সেই সংস্থাকে বিলুপ্ত করার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ‘হন্তারক’ হয়ে উঠেছেন। এক্সে এক লাইভ চ্যাটে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের সঙ্গে আমি ইউএসএআইডির ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছি এবং তিনি (ট্রাম্প) একমত হয়েছেন যে, আমাদের এটি বন্ধ করে দেওয়া উচিত এবং তাই আমরা এটি বন্ধ করছি।’
এর কয়েক ঘণ্টা পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ঘোষণা করেন, তিনি সংস্থাটির কার্যনির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন। তিনি বলেন, হোয়াইট হাউস এটিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। সংস্থাটির সমর্থকেরা দীর্ঘদিন ধরে এটিকে আমেরিকার ‘সফট পাওয়ার’ বিস্তারের কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে দেখেন। তাদের মতে, এটি চীন-রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি ডিটারেন্ট (প্রতিরোধক) হিসেবে কাজ করে। ইউএসএআইডির সম্ভাব্য বিলুপ্তি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। তিনি এক্সে লিখেছেন, ইউএসএআইডির গুপ্তচর ব্যবস্থা ‘বন্ধ’ করতে মাস্ক ‘স্মার্ট পদক্ষেপ’ নিচ্ছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আমেরিকার ডিপ স্টেট ইলন মাস্ককে পুরোপুরি গিলে ফেলতে পারবে না।
মাস্ক সম্ভবত ইউএসএআইডি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনায় সফল হবেন না। কারণ, এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট এই পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন। কারণ, কংগ্রেস এটিকে একটি আলাদা সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং সেটির নিয়ন্ত্রণ স্থানান্তর বা কার্যক্রম বন্ধ করতে হলে পরবর্তী করণীয়ও কংগ্রেসেই সারতে হবে। অবশ্য রিপাবলিকানরা খুব বেশি প্রতিক্রিয়া জানাননি। সম্ভবত তাঁরা মাস্ক এবং ট্রাম্পকে উসকে দিতে চান না।
এমনকি রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা মাস্কের টেসলা, এক্স এবং বোরিং কোম্পানি থেকে সাবেক কর্মীদের বিভিন্ন সরকারি সংস্থায়ও নিয়োগে আপত্তি জানাচ্ছেন না। যার মধ্যে অফিস অব পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট অন্যতম। এই বিভাগটি মূলত ফেডারেল সরকারের কর্মীদের দেখভাল করে। এ ছাড়া, জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিসেও মাস্ক তাঁর কোম্পানিগুলোর সাবেক ও বর্তমান কর্মীদের নিয়োগ দিয়েছেন।
গত সপ্তাহে মার্কিন অর্থমন্ত্রী বা ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট ডিওজিই–এর কর্মীদের মার্কিন ফেডারেল সরকারের অর্থ লেনদেন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ দেন। এর ফলে মাস্কের ফেডারেল সরকারের ব্যয় পর্যবেক্ষণ এবং সম্ভাব্য সীমিতকরণের একটি শক্তিশালী টুল পেয়ে গেছেন। এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় এক শীর্ষ ট্রেজারি কর্মকর্তা ডেভিড লেব্রিক পদত্যাগ করেন।
ফেডারেল সরকারের ব্যয় কমানোর বিষয়ে মাস্ক তাঁর সাম্প্রতিক এক এক্স পোস্টে বলেন, ‘করদাতাদের অর্থ নিয়ে দুর্নীতি এবং অপচয় রোধের একমাত্র উপায় হলো লেনদেনের গতিপথে নজর রাখা এবং সন্দেহজনক লেনদেনগুলো পর্যালোচনার জন্য স্থগিত করা। এটি স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের ক্ষুব্ধ করে তুলবে যারা দুর্নীতি এবং প্রতারণামূলক লেনদেনে সাহায্য–সহায়তা করেন এবং লাভবান হন। হতাশাজনক!’
ট্রেজারি বিভাগের এই অধিদপ্তরটি মূলত আমলা পরিচালিত। এটি নিজস্ব প্রক্রিয়ায়, ২০২৩ অর্থবছরে ৫ লাখ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ লেনদেন করেছে। পেমেন্ট সিস্টেমে প্রবেশাধিকার অত্যন্ত সুরক্ষিত। কারণ, এতে এমন সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য রয়েছে যা থেকে লাখ লাখ মার্কিনকে সামাজিক নিরাপত্তা, কর রেয়াত এবং অন্যান্য অর্থ পরিশোধ করা হয়।
এ ছাড়া, নিকট অতীতে মাস্কের দুটি কোম্পানি—টেসলা এবং স্পেসএক্স—ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থের চুক্তি পেয়েছে। কিছু ডেমোক্র্যাটের মতে, এখন মাস্কের প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই বিষয়টি স্বার্থের সংঘাত তৈরি করতে পারে। মাস্কের বিদেশেও ব্যবসায়িক আগ্রহ রয়েছে, বিশেষ করে চীনে।
মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ডেমোক্র্যাটদের একটি গ্রুপ ঘোষণা করেছে, তাঁরা পেমেন্ট সিস্টেমে মাস্কের প্রবেশাধিকার নিয়ে আদালতে যাবেন। মেরিল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক রিপ্রেজেনটেটিভ জেমি রাসকিন বলেছেন, ‘ইলন মাস্ক, তুমি হয়তো ট্রেজারির আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা অবৈধভাবে দখল করেছ, কিন্তু তুমি আমেরিকান জনগণের টাকা নিয়ন্ত্রণ করো না।’ আদালতকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তোমার কোনো চতুর্থ শাখা (আদালত) নেই যার নাম “ইলন মাস্ক”।’
কিছুদিন আগে ওয়াশিংটন ডিসির অন্তর্বর্তী অ্যাটর্নি এড মার্টিন মাস্ককে চিঠি দিয়ে আশ্বস্ত করে বলেছেন, তাঁর কার্যালয় ডিওজিইর কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে এমন যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেবে।
সপ্তাহ খানেক আগে মার্কিন সরকারের অফিস অব পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট থেকে কর্মীদের কাছে পাঠানো ‘ফর্ক ইন দ্য রোড’—শীর্ষক এক চিঠিতে মাস্ক দাবি করেন, সব ফেডারেল কর্মচারীকে তাঁদের কর্মস্থল পরিবর্তন মেনে নিতে হবে নইলে পদত্যাগ করতে হবে। ২০২২ সালে টুইটার কেনার পর মাস্ক তাঁর কর্মীদের একই ধরনের চিঠি দিয়েছিলেন।
টুইটার অধিগ্রহণের পর একে ‘এক্স’ হিসেবে নামকরণ করে মাস্ক কোম্পানিটির বাজারমূল্য ধসিয়ে দেন এবং ব্যবহারকারীদের ব্যাপকভাবে বের হয়ে যাওয়ার পথে ঠেলে দেন। তবে এর ফলে তিনি একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হাতে পেয়েছেন। তিনি এখন ইউরোপীয় দেশগুলোর নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া, ব্যবসায়ও উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ২০২৪ সালে প্ল্যাটফর্মটি রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার আয় করেছে, যার বেশির ভাগই এসেছে রিপাবলিকানদের কাছ থেকে। গত সপ্তাহে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, জেফ বেজোসের মালিকানাধীন আমাজন এক্সে বিজ্ঞাপন ব্যয় বাড়িয়েছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে বড় খবর ছিল পটোম্যাক নদীর ওপর এক সামরিক হেলিকপ্টারের সঙ্গে বেসামরিক যাত্রীবাহী বিমানের সংঘর্ষে ৬৭ জনের প্রাণহানি। এই ঘটনার কারণে আড়ালে চলে রাজধানীতে মাস্কের প্রভাব বিস্তারের তৎপরতা। মার্কিন ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি) এই দুর্ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব নেয়। কিন্তু সরকারি সংস্থাটি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, সংবাদ সম্মেলন বা তদন্ত–সংক্রান্ত অন্য যেকোনো আপডেট তাদের এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা হবে। ই–মেইলের মাধ্যমে আর কোনো তথ্য বিতরণ করবে না তারা। কিন্তু দুর্ঘটনা ও ভুক্তভোগীদের খবরের মধ্যে এই খবরটিতে মানুষ সেভাবে নজর দেয়নি। এই বিষয়টি মূলত প্রমাণ করে, মাস্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারে কতটা প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন!
দ্য আটলান্টিক থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
তিনি একটিও ভোট পাননি। সরাসরি জনগণের কাছ থেকে অনুমোদনও পাননি। তিনি সরকারের বেতনভুক্ত কেউ না। কিন্তু মার্কিন প্রশাসনে এখন সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি। বিশ্বের শীর্ষ এই ধনী ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামোর বিরুদ্ধে একপ্রকার ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছেন। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে তিনি প্রশাসনের আকার ও কার্যপরিধি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছেন, একই সঙ্গে সরকারের সবচেয়ে সংবেদনশীল কিছু গোপন তথ্যের নিয়ন্ত্রণও পেয়েছেন।
নিজের মালিকানাধীন শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে জনমত গঠনে প্রভাব ফেলেছেন। যারা তাঁর বিরোধিতা করবে, তাদের নির্বাচনে জেতা কঠিন করে তুলতে নিজের বিপুল সম্পদ কাজে লাগানোর হুমকি দিয়েছেন। এই ব্যক্তিটি আর কেউই নন—বিখ্যাত ইলন মাস্ক।
মাস্কের প্রভাব–প্রতিপত্তি যেন কোনো ধরনের জবাবদিহির বাইরে। তাঁর প্রতাপ ওয়াশিংটনের প্রভাবশালী মহলে স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি করেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব বিষয়ে তাঁর প্রভাব বিস্তৃত এবং অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত। তবে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস এখন পর্যন্ত মাস্ককে নিয়ন্ত্রণে আনার কোনো আগ্রহ দেখায়নি। তাঁর মতো কোনো বেসরকারি ব্যক্তিকে মার্কিন প্রশাসনের অন্দরে এর আগে কখনোই এত প্রভাবশালী অবস্থানে দেখা যায়নি।
দিন কয়েক আগে ফ্লোরিডা থেকে ওয়াশিংটনে আসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের রাষ্ট্রীয় বাহন এয়ারফোর্স ওয়ান থেকে নেমে ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি ইলন ভালো কাজ করছেন। তিনি ব্যাপকভাবে খরচ কমানোর পক্ষপাতী। কখনো কখনো আমরা তাঁর সঙ্গে একমত হব না এবং আমরা তাঁর নির্দেশিত পথে যাব না। কিন্তু আমি মনে করি, তিনি দারুণ কাজ করছেন। তিনি বুদ্ধিমান। খুব বুদ্ধিমান। আর তিনি আমাদের ফেডারেল বাজেট কমানোর ব্যাপারে বেশ আগ্রহী।’
গত কয়েক দিনে মার্কিন সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মাস্কের খবরদারি ব্যাপক হয়েছে। কারণ, তিনি ট্রাম্প প্রতিষ্ঠিত ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি বা সরকারি কর্মদক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) প্রধান হিসেবে ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁর ঘোষিত লক্ষ্য, মার্কিন সরকারের বার্ষিক ব্যয় ৫০০ বিলিয়ন ডলার কমানো। ডিওজিইর ক্ষমতা সীমিত। এটি কোনো প্রকৃত সরকারি সংস্থা নয়। মাস্কের এই টাস্কফোর্স মূলত প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে গঠিত। আর বাজেট নির্ধারণের ক্ষমতা এখনো কংগ্রেসের হাতেই।
ট্রাম্প প্রশাসনে মাস্কের ভূমিকা এখনো অস্পষ্ট। অবশ্য মাস্ক তাঁর এক্স বায়োতে নিজেকে হোয়াইট হাউসের প্রযুক্তি বিষয়ক ‘সহায়তাকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মাস্ক ট্রাম্পের জন্য একজন বিশেষ সরকারি কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। এই বিষয়টি প্রশাসনে তাঁর আনুষ্ঠানিক অবস্থান নিশ্চিত করলেও তাঁকে ফেডারেল নীতিমালা এড়ানোর সুযোগ দিচ্ছে।’ ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মাস্ক কোনো বেতন পাচ্ছেন না।’
মাস্কের আইনি ক্ষমতা না থাকলেও তিনি ক্ষমতার খুব কাছাকাছি। কখনো কখনো হোয়াইট হাউস প্রাঙ্গণে থেকেই কাজ করছেন। প্রেসিডেন্টের সবচেয়ে প্রভাবশালী উপদেষ্টার ভূমিকা স্পষ্টত ভালোই উপভোগ করছেন মাস্ক। ট্রাম্প যদি মনে করেন, তাঁর কোনো সহযোগী তাঁকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে তবে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেন। তবে ট্রাম্পের ভাষায়, তিনি এখনো মাস্কের প্রতি ‘মুগ্ধ’ এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি তাঁর হয়ে কাজ করছেন—এই বিষয়টি তিনি উপভোগ করেন।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প মনে করেন, মাস্ক বিতর্কিত পদক্ষেপের জন্য জনগণের প্রতিক্রিয়া নিজ কাঁধে নিতে প্রস্তুত। এই বিষয়টি প্রেসিডেন্টকে জনগণের তোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে।
গত সপ্তাহে মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির দিকে নজর দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা একাধিক পোস্টে তিনি প্রমাণ ছাড়াই ঘোষণা করেছেন, এটি একটি ‘অশুভ ও সন্ত্রাসী সংস্থা’ এবং এটির ‘মরে যাওয়াই ভালো।’
ট্রাম্প প্রশাসন আর্থিকভাবে লাভজনক ‘আমেরিকা সবার আগে’ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। আর এই নীতির আলোকেই ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বের সবচেয়ে বড় খাদ্য সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাটিকে বন্ধ করে কর্মী প্রত্যাহার করে ব্যাপক বিভ্রান্তির মুখে ফেলে দেয় বিশ্ববাসীকে। সম্প্রতি মাস্ক সেই সংস্থাকে বিলুপ্ত করার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ‘হন্তারক’ হয়ে উঠেছেন। এক্সে এক লাইভ চ্যাটে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের সঙ্গে আমি ইউএসএআইডির ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছি এবং তিনি (ট্রাম্প) একমত হয়েছেন যে, আমাদের এটি বন্ধ করে দেওয়া উচিত এবং তাই আমরা এটি বন্ধ করছি।’
এর কয়েক ঘণ্টা পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ঘোষণা করেন, তিনি সংস্থাটির কার্যনির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন। তিনি বলেন, হোয়াইট হাউস এটিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। সংস্থাটির সমর্থকেরা দীর্ঘদিন ধরে এটিকে আমেরিকার ‘সফট পাওয়ার’ বিস্তারের কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে দেখেন। তাদের মতে, এটি চীন-রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি ডিটারেন্ট (প্রতিরোধক) হিসেবে কাজ করে। ইউএসএআইডির সম্ভাব্য বিলুপ্তি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। তিনি এক্সে লিখেছেন, ইউএসএআইডির গুপ্তচর ব্যবস্থা ‘বন্ধ’ করতে মাস্ক ‘স্মার্ট পদক্ষেপ’ নিচ্ছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আমেরিকার ডিপ স্টেট ইলন মাস্ককে পুরোপুরি গিলে ফেলতে পারবে না।
মাস্ক সম্ভবত ইউএসএআইডি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনায় সফল হবেন না। কারণ, এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট এই পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন। কারণ, কংগ্রেস এটিকে একটি আলাদা সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং সেটির নিয়ন্ত্রণ স্থানান্তর বা কার্যক্রম বন্ধ করতে হলে পরবর্তী করণীয়ও কংগ্রেসেই সারতে হবে। অবশ্য রিপাবলিকানরা খুব বেশি প্রতিক্রিয়া জানাননি। সম্ভবত তাঁরা মাস্ক এবং ট্রাম্পকে উসকে দিতে চান না।
এমনকি রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা মাস্কের টেসলা, এক্স এবং বোরিং কোম্পানি থেকে সাবেক কর্মীদের বিভিন্ন সরকারি সংস্থায়ও নিয়োগে আপত্তি জানাচ্ছেন না। যার মধ্যে অফিস অব পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট অন্যতম। এই বিভাগটি মূলত ফেডারেল সরকারের কর্মীদের দেখভাল করে। এ ছাড়া, জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিসেও মাস্ক তাঁর কোম্পানিগুলোর সাবেক ও বর্তমান কর্মীদের নিয়োগ দিয়েছেন।
গত সপ্তাহে মার্কিন অর্থমন্ত্রী বা ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট ডিওজিই–এর কর্মীদের মার্কিন ফেডারেল সরকারের অর্থ লেনদেন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ দেন। এর ফলে মাস্কের ফেডারেল সরকারের ব্যয় পর্যবেক্ষণ এবং সম্ভাব্য সীমিতকরণের একটি শক্তিশালী টুল পেয়ে গেছেন। এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় এক শীর্ষ ট্রেজারি কর্মকর্তা ডেভিড লেব্রিক পদত্যাগ করেন।
ফেডারেল সরকারের ব্যয় কমানোর বিষয়ে মাস্ক তাঁর সাম্প্রতিক এক এক্স পোস্টে বলেন, ‘করদাতাদের অর্থ নিয়ে দুর্নীতি এবং অপচয় রোধের একমাত্র উপায় হলো লেনদেনের গতিপথে নজর রাখা এবং সন্দেহজনক লেনদেনগুলো পর্যালোচনার জন্য স্থগিত করা। এটি স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের ক্ষুব্ধ করে তুলবে যারা দুর্নীতি এবং প্রতারণামূলক লেনদেনে সাহায্য–সহায়তা করেন এবং লাভবান হন। হতাশাজনক!’
ট্রেজারি বিভাগের এই অধিদপ্তরটি মূলত আমলা পরিচালিত। এটি নিজস্ব প্রক্রিয়ায়, ২০২৩ অর্থবছরে ৫ লাখ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ লেনদেন করেছে। পেমেন্ট সিস্টেমে প্রবেশাধিকার অত্যন্ত সুরক্ষিত। কারণ, এতে এমন সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য রয়েছে যা থেকে লাখ লাখ মার্কিনকে সামাজিক নিরাপত্তা, কর রেয়াত এবং অন্যান্য অর্থ পরিশোধ করা হয়।
এ ছাড়া, নিকট অতীতে মাস্কের দুটি কোম্পানি—টেসলা এবং স্পেসএক্স—ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থের চুক্তি পেয়েছে। কিছু ডেমোক্র্যাটের মতে, এখন মাস্কের প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই বিষয়টি স্বার্থের সংঘাত তৈরি করতে পারে। মাস্কের বিদেশেও ব্যবসায়িক আগ্রহ রয়েছে, বিশেষ করে চীনে।
মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ডেমোক্র্যাটদের একটি গ্রুপ ঘোষণা করেছে, তাঁরা পেমেন্ট সিস্টেমে মাস্কের প্রবেশাধিকার নিয়ে আদালতে যাবেন। মেরিল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক রিপ্রেজেনটেটিভ জেমি রাসকিন বলেছেন, ‘ইলন মাস্ক, তুমি হয়তো ট্রেজারির আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা অবৈধভাবে দখল করেছ, কিন্তু তুমি আমেরিকান জনগণের টাকা নিয়ন্ত্রণ করো না।’ আদালতকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তোমার কোনো চতুর্থ শাখা (আদালত) নেই যার নাম “ইলন মাস্ক”।’
কিছুদিন আগে ওয়াশিংটন ডিসির অন্তর্বর্তী অ্যাটর্নি এড মার্টিন মাস্ককে চিঠি দিয়ে আশ্বস্ত করে বলেছেন, তাঁর কার্যালয় ডিওজিইর কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে এমন যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেবে।
সপ্তাহ খানেক আগে মার্কিন সরকারের অফিস অব পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট থেকে কর্মীদের কাছে পাঠানো ‘ফর্ক ইন দ্য রোড’—শীর্ষক এক চিঠিতে মাস্ক দাবি করেন, সব ফেডারেল কর্মচারীকে তাঁদের কর্মস্থল পরিবর্তন মেনে নিতে হবে নইলে পদত্যাগ করতে হবে। ২০২২ সালে টুইটার কেনার পর মাস্ক তাঁর কর্মীদের একই ধরনের চিঠি দিয়েছিলেন।
টুইটার অধিগ্রহণের পর একে ‘এক্স’ হিসেবে নামকরণ করে মাস্ক কোম্পানিটির বাজারমূল্য ধসিয়ে দেন এবং ব্যবহারকারীদের ব্যাপকভাবে বের হয়ে যাওয়ার পথে ঠেলে দেন। তবে এর ফলে তিনি একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হাতে পেয়েছেন। তিনি এখন ইউরোপীয় দেশগুলোর নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া, ব্যবসায়ও উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ২০২৪ সালে প্ল্যাটফর্মটি রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার আয় করেছে, যার বেশির ভাগই এসেছে রিপাবলিকানদের কাছ থেকে। গত সপ্তাহে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, জেফ বেজোসের মালিকানাধীন আমাজন এক্সে বিজ্ঞাপন ব্যয় বাড়িয়েছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে বড় খবর ছিল পটোম্যাক নদীর ওপর এক সামরিক হেলিকপ্টারের সঙ্গে বেসামরিক যাত্রীবাহী বিমানের সংঘর্ষে ৬৭ জনের প্রাণহানি। এই ঘটনার কারণে আড়ালে চলে রাজধানীতে মাস্কের প্রভাব বিস্তারের তৎপরতা। মার্কিন ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি) এই দুর্ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব নেয়। কিন্তু সরকারি সংস্থাটি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, সংবাদ সম্মেলন বা তদন্ত–সংক্রান্ত অন্য যেকোনো আপডেট তাদের এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা হবে। ই–মেইলের মাধ্যমে আর কোনো তথ্য বিতরণ করবে না তারা। কিন্তু দুর্ঘটনা ও ভুক্তভোগীদের খবরের মধ্যে এই খবরটিতে মানুষ সেভাবে নজর দেয়নি। এই বিষয়টি মূলত প্রমাণ করে, মাস্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারে কতটা প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন!
দ্য আটলান্টিক থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
তিনি একটিও ভোট পাননি। সরাসরি জনগণের কাছ থেকে অনুমোদনও পাননি। তিনি সরকারের বেতনভুক্ত কেউ না। কিন্তু মার্কিন প্রশাসনে এখন সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি। বিশ্বের শীর্ষ এই ধনী ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামোর বিরুদ্ধে একপ্রকার ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছেন। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে তিনি প্রশাসনের আকার ও কার্যপরিধি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছেন, একই সঙ্গে সরকারের সবচেয়ে সংবেদনশীল কিছু গোপন তথ্যের নিয়ন্ত্রণও পেয়েছেন।
নিজের মালিকানাধীন শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে জনমত গঠনে প্রভাব ফেলেছেন। যারা তাঁর বিরোধিতা করবে, তাদের নির্বাচনে জেতা কঠিন করে তুলতে নিজের বিপুল সম্পদ কাজে লাগানোর হুমকি দিয়েছেন। এই ব্যক্তিটি আর কেউই নন—বিখ্যাত ইলন মাস্ক।
মাস্কের প্রভাব–প্রতিপত্তি যেন কোনো ধরনের জবাবদিহির বাইরে। তাঁর প্রতাপ ওয়াশিংটনের প্রভাবশালী মহলে স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি করেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব বিষয়ে তাঁর প্রভাব বিস্তৃত এবং অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত। তবে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস এখন পর্যন্ত মাস্ককে নিয়ন্ত্রণে আনার কোনো আগ্রহ দেখায়নি। তাঁর মতো কোনো বেসরকারি ব্যক্তিকে মার্কিন প্রশাসনের অন্দরে এর আগে কখনোই এত প্রভাবশালী অবস্থানে দেখা যায়নি।
দিন কয়েক আগে ফ্লোরিডা থেকে ওয়াশিংটনে আসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের রাষ্ট্রীয় বাহন এয়ারফোর্স ওয়ান থেকে নেমে ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি ইলন ভালো কাজ করছেন। তিনি ব্যাপকভাবে খরচ কমানোর পক্ষপাতী। কখনো কখনো আমরা তাঁর সঙ্গে একমত হব না এবং আমরা তাঁর নির্দেশিত পথে যাব না। কিন্তু আমি মনে করি, তিনি দারুণ কাজ করছেন। তিনি বুদ্ধিমান। খুব বুদ্ধিমান। আর তিনি আমাদের ফেডারেল বাজেট কমানোর ব্যাপারে বেশ আগ্রহী।’
গত কয়েক দিনে মার্কিন সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মাস্কের খবরদারি ব্যাপক হয়েছে। কারণ, তিনি ট্রাম্প প্রতিষ্ঠিত ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি বা সরকারি কর্মদক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) প্রধান হিসেবে ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁর ঘোষিত লক্ষ্য, মার্কিন সরকারের বার্ষিক ব্যয় ৫০০ বিলিয়ন ডলার কমানো। ডিওজিইর ক্ষমতা সীমিত। এটি কোনো প্রকৃত সরকারি সংস্থা নয়। মাস্কের এই টাস্কফোর্স মূলত প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে গঠিত। আর বাজেট নির্ধারণের ক্ষমতা এখনো কংগ্রেসের হাতেই।
ট্রাম্প প্রশাসনে মাস্কের ভূমিকা এখনো অস্পষ্ট। অবশ্য মাস্ক তাঁর এক্স বায়োতে নিজেকে হোয়াইট হাউসের প্রযুক্তি বিষয়ক ‘সহায়তাকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মাস্ক ট্রাম্পের জন্য একজন বিশেষ সরকারি কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। এই বিষয়টি প্রশাসনে তাঁর আনুষ্ঠানিক অবস্থান নিশ্চিত করলেও তাঁকে ফেডারেল নীতিমালা এড়ানোর সুযোগ দিচ্ছে।’ ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মাস্ক কোনো বেতন পাচ্ছেন না।’
মাস্কের আইনি ক্ষমতা না থাকলেও তিনি ক্ষমতার খুব কাছাকাছি। কখনো কখনো হোয়াইট হাউস প্রাঙ্গণে থেকেই কাজ করছেন। প্রেসিডেন্টের সবচেয়ে প্রভাবশালী উপদেষ্টার ভূমিকা স্পষ্টত ভালোই উপভোগ করছেন মাস্ক। ট্রাম্প যদি মনে করেন, তাঁর কোনো সহযোগী তাঁকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে তবে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেন। তবে ট্রাম্পের ভাষায়, তিনি এখনো মাস্কের প্রতি ‘মুগ্ধ’ এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি তাঁর হয়ে কাজ করছেন—এই বিষয়টি তিনি উপভোগ করেন।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প মনে করেন, মাস্ক বিতর্কিত পদক্ষেপের জন্য জনগণের প্রতিক্রিয়া নিজ কাঁধে নিতে প্রস্তুত। এই বিষয়টি প্রেসিডেন্টকে জনগণের তোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে।
গত সপ্তাহে মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির দিকে নজর দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা একাধিক পোস্টে তিনি প্রমাণ ছাড়াই ঘোষণা করেছেন, এটি একটি ‘অশুভ ও সন্ত্রাসী সংস্থা’ এবং এটির ‘মরে যাওয়াই ভালো।’
ট্রাম্প প্রশাসন আর্থিকভাবে লাভজনক ‘আমেরিকা সবার আগে’ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। আর এই নীতির আলোকেই ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বের সবচেয়ে বড় খাদ্য সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাটিকে বন্ধ করে কর্মী প্রত্যাহার করে ব্যাপক বিভ্রান্তির মুখে ফেলে দেয় বিশ্ববাসীকে। সম্প্রতি মাস্ক সেই সংস্থাকে বিলুপ্ত করার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ‘হন্তারক’ হয়ে উঠেছেন। এক্সে এক লাইভ চ্যাটে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের সঙ্গে আমি ইউএসএআইডির ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছি এবং তিনি (ট্রাম্প) একমত হয়েছেন যে, আমাদের এটি বন্ধ করে দেওয়া উচিত এবং তাই আমরা এটি বন্ধ করছি।’
এর কয়েক ঘণ্টা পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ঘোষণা করেন, তিনি সংস্থাটির কার্যনির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন। তিনি বলেন, হোয়াইট হাউস এটিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। সংস্থাটির সমর্থকেরা দীর্ঘদিন ধরে এটিকে আমেরিকার ‘সফট পাওয়ার’ বিস্তারের কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে দেখেন। তাদের মতে, এটি চীন-রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি ডিটারেন্ট (প্রতিরোধক) হিসেবে কাজ করে। ইউএসএআইডির সম্ভাব্য বিলুপ্তি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। তিনি এক্সে লিখেছেন, ইউএসএআইডির গুপ্তচর ব্যবস্থা ‘বন্ধ’ করতে মাস্ক ‘স্মার্ট পদক্ষেপ’ নিচ্ছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আমেরিকার ডিপ স্টেট ইলন মাস্ককে পুরোপুরি গিলে ফেলতে পারবে না।
মাস্ক সম্ভবত ইউএসএআইডি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনায় সফল হবেন না। কারণ, এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট এই পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন। কারণ, কংগ্রেস এটিকে একটি আলাদা সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং সেটির নিয়ন্ত্রণ স্থানান্তর বা কার্যক্রম বন্ধ করতে হলে পরবর্তী করণীয়ও কংগ্রেসেই সারতে হবে। অবশ্য রিপাবলিকানরা খুব বেশি প্রতিক্রিয়া জানাননি। সম্ভবত তাঁরা মাস্ক এবং ট্রাম্পকে উসকে দিতে চান না।
এমনকি রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা মাস্কের টেসলা, এক্স এবং বোরিং কোম্পানি থেকে সাবেক কর্মীদের বিভিন্ন সরকারি সংস্থায়ও নিয়োগে আপত্তি জানাচ্ছেন না। যার মধ্যে অফিস অব পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট অন্যতম। এই বিভাগটি মূলত ফেডারেল সরকারের কর্মীদের দেখভাল করে। এ ছাড়া, জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিসেও মাস্ক তাঁর কোম্পানিগুলোর সাবেক ও বর্তমান কর্মীদের নিয়োগ দিয়েছেন।
গত সপ্তাহে মার্কিন অর্থমন্ত্রী বা ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট ডিওজিই–এর কর্মীদের মার্কিন ফেডারেল সরকারের অর্থ লেনদেন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ দেন। এর ফলে মাস্কের ফেডারেল সরকারের ব্যয় পর্যবেক্ষণ এবং সম্ভাব্য সীমিতকরণের একটি শক্তিশালী টুল পেয়ে গেছেন। এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় এক শীর্ষ ট্রেজারি কর্মকর্তা ডেভিড লেব্রিক পদত্যাগ করেন।
ফেডারেল সরকারের ব্যয় কমানোর বিষয়ে মাস্ক তাঁর সাম্প্রতিক এক এক্স পোস্টে বলেন, ‘করদাতাদের অর্থ নিয়ে দুর্নীতি এবং অপচয় রোধের একমাত্র উপায় হলো লেনদেনের গতিপথে নজর রাখা এবং সন্দেহজনক লেনদেনগুলো পর্যালোচনার জন্য স্থগিত করা। এটি স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের ক্ষুব্ধ করে তুলবে যারা দুর্নীতি এবং প্রতারণামূলক লেনদেনে সাহায্য–সহায়তা করেন এবং লাভবান হন। হতাশাজনক!’
ট্রেজারি বিভাগের এই অধিদপ্তরটি মূলত আমলা পরিচালিত। এটি নিজস্ব প্রক্রিয়ায়, ২০২৩ অর্থবছরে ৫ লাখ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ লেনদেন করেছে। পেমেন্ট সিস্টেমে প্রবেশাধিকার অত্যন্ত সুরক্ষিত। কারণ, এতে এমন সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য রয়েছে যা থেকে লাখ লাখ মার্কিনকে সামাজিক নিরাপত্তা, কর রেয়াত এবং অন্যান্য অর্থ পরিশোধ করা হয়।
এ ছাড়া, নিকট অতীতে মাস্কের দুটি কোম্পানি—টেসলা এবং স্পেসএক্স—ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থের চুক্তি পেয়েছে। কিছু ডেমোক্র্যাটের মতে, এখন মাস্কের প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই বিষয়টি স্বার্থের সংঘাত তৈরি করতে পারে। মাস্কের বিদেশেও ব্যবসায়িক আগ্রহ রয়েছে, বিশেষ করে চীনে।
মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ডেমোক্র্যাটদের একটি গ্রুপ ঘোষণা করেছে, তাঁরা পেমেন্ট সিস্টেমে মাস্কের প্রবেশাধিকার নিয়ে আদালতে যাবেন। মেরিল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক রিপ্রেজেনটেটিভ জেমি রাসকিন বলেছেন, ‘ইলন মাস্ক, তুমি হয়তো ট্রেজারির আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা অবৈধভাবে দখল করেছ, কিন্তু তুমি আমেরিকান জনগণের টাকা নিয়ন্ত্রণ করো না।’ আদালতকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তোমার কোনো চতুর্থ শাখা (আদালত) নেই যার নাম “ইলন মাস্ক”।’
কিছুদিন আগে ওয়াশিংটন ডিসির অন্তর্বর্তী অ্যাটর্নি এড মার্টিন মাস্ককে চিঠি দিয়ে আশ্বস্ত করে বলেছেন, তাঁর কার্যালয় ডিওজিইর কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে এমন যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেবে।
সপ্তাহ খানেক আগে মার্কিন সরকারের অফিস অব পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট থেকে কর্মীদের কাছে পাঠানো ‘ফর্ক ইন দ্য রোড’—শীর্ষক এক চিঠিতে মাস্ক দাবি করেন, সব ফেডারেল কর্মচারীকে তাঁদের কর্মস্থল পরিবর্তন মেনে নিতে হবে নইলে পদত্যাগ করতে হবে। ২০২২ সালে টুইটার কেনার পর মাস্ক তাঁর কর্মীদের একই ধরনের চিঠি দিয়েছিলেন।
টুইটার অধিগ্রহণের পর একে ‘এক্স’ হিসেবে নামকরণ করে মাস্ক কোম্পানিটির বাজারমূল্য ধসিয়ে দেন এবং ব্যবহারকারীদের ব্যাপকভাবে বের হয়ে যাওয়ার পথে ঠেলে দেন। তবে এর ফলে তিনি একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হাতে পেয়েছেন। তিনি এখন ইউরোপীয় দেশগুলোর নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া, ব্যবসায়ও উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ২০২৪ সালে প্ল্যাটফর্মটি রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার আয় করেছে, যার বেশির ভাগই এসেছে রিপাবলিকানদের কাছ থেকে। গত সপ্তাহে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, জেফ বেজোসের মালিকানাধীন আমাজন এক্সে বিজ্ঞাপন ব্যয় বাড়িয়েছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে বড় খবর ছিল পটোম্যাক নদীর ওপর এক সামরিক হেলিকপ্টারের সঙ্গে বেসামরিক যাত্রীবাহী বিমানের সংঘর্ষে ৬৭ জনের প্রাণহানি। এই ঘটনার কারণে আড়ালে চলে রাজধানীতে মাস্কের প্রভাব বিস্তারের তৎপরতা। মার্কিন ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি) এই দুর্ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব নেয়। কিন্তু সরকারি সংস্থাটি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, সংবাদ সম্মেলন বা তদন্ত–সংক্রান্ত অন্য যেকোনো আপডেট তাদের এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা হবে। ই–মেইলের মাধ্যমে আর কোনো তথ্য বিতরণ করবে না তারা। কিন্তু দুর্ঘটনা ও ভুক্তভোগীদের খবরের মধ্যে এই খবরটিতে মানুষ সেভাবে নজর দেয়নি। এই বিষয়টি মূলত প্রমাণ করে, মাস্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারে কতটা প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন!
দ্য আটলান্টিক থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
তিনি একটিও ভোট পাননি। সরাসরি জনগণের কাছ থেকে অনুমোদনও পাননি। তিনি সরকারের বেতনভুক্ত কেউ না। কিন্তু মার্কিন প্রশাসনে এখন সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি। বিশ্বের শীর্ষ এই ধনী ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামোর বিরুদ্ধে একপ্রকার ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছেন। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে তিনি প্রশাসনের আকার ও কার্যপরিধি কমানোর উদ্যোগ নিয়েছেন, একই সঙ্গে সরকারের সবচেয়ে সংবেদনশীল কিছু গোপন তথ্যের নিয়ন্ত্রণও পেয়েছেন।
নিজের মালিকানাধীন শক্তিশালী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে জনমত গঠনে প্রভাব ফেলেছেন। যারা তাঁর বিরোধিতা করবে, তাদের নির্বাচনে জেতা কঠিন করে তুলতে নিজের বিপুল সম্পদ কাজে লাগানোর হুমকি দিয়েছেন। এই ব্যক্তিটি আর কেউই নন—বিখ্যাত ইলন মাস্ক।
মাস্কের প্রভাব–প্রতিপত্তি যেন কোনো ধরনের জবাবদিহির বাইরে। তাঁর প্রতাপ ওয়াশিংটনের প্রভাবশালী মহলে স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি করেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব বিষয়ে তাঁর প্রভাব বিস্তৃত এবং অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত। তবে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস এখন পর্যন্ত মাস্ককে নিয়ন্ত্রণে আনার কোনো আগ্রহ দেখায়নি। তাঁর মতো কোনো বেসরকারি ব্যক্তিকে মার্কিন প্রশাসনের অন্দরে এর আগে কখনোই এত প্রভাবশালী অবস্থানে দেখা যায়নি।
দিন কয়েক আগে ফ্লোরিডা থেকে ওয়াশিংটনে আসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের রাষ্ট্রীয় বাহন এয়ারফোর্স ওয়ান থেকে নেমে ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি ইলন ভালো কাজ করছেন। তিনি ব্যাপকভাবে খরচ কমানোর পক্ষপাতী। কখনো কখনো আমরা তাঁর সঙ্গে একমত হব না এবং আমরা তাঁর নির্দেশিত পথে যাব না। কিন্তু আমি মনে করি, তিনি দারুণ কাজ করছেন। তিনি বুদ্ধিমান। খুব বুদ্ধিমান। আর তিনি আমাদের ফেডারেল বাজেট কমানোর ব্যাপারে বেশ আগ্রহী।’
গত কয়েক দিনে মার্কিন সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মাস্কের খবরদারি ব্যাপক হয়েছে। কারণ, তিনি ট্রাম্প প্রতিষ্ঠিত ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি বা সরকারি কর্মদক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) প্রধান হিসেবে ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁর ঘোষিত লক্ষ্য, মার্কিন সরকারের বার্ষিক ব্যয় ৫০০ বিলিয়ন ডলার কমানো। ডিওজিইর ক্ষমতা সীমিত। এটি কোনো প্রকৃত সরকারি সংস্থা নয়। মাস্কের এই টাস্কফোর্স মূলত প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে গঠিত। আর বাজেট নির্ধারণের ক্ষমতা এখনো কংগ্রেসের হাতেই।
ট্রাম্প প্রশাসনে মাস্কের ভূমিকা এখনো অস্পষ্ট। অবশ্য মাস্ক তাঁর এক্স বায়োতে নিজেকে হোয়াইট হাউসের প্রযুক্তি বিষয়ক ‘সহায়তাকারী’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মাস্ক ট্রাম্পের জন্য একজন বিশেষ সরকারি কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। এই বিষয়টি প্রশাসনে তাঁর আনুষ্ঠানিক অবস্থান নিশ্চিত করলেও তাঁকে ফেডারেল নীতিমালা এড়ানোর সুযোগ দিচ্ছে।’ ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মাস্ক কোনো বেতন পাচ্ছেন না।’
মাস্কের আইনি ক্ষমতা না থাকলেও তিনি ক্ষমতার খুব কাছাকাছি। কখনো কখনো হোয়াইট হাউস প্রাঙ্গণে থেকেই কাজ করছেন। প্রেসিডেন্টের সবচেয়ে প্রভাবশালী উপদেষ্টার ভূমিকা স্পষ্টত ভালোই উপভোগ করছেন মাস্ক। ট্রাম্প যদি মনে করেন, তাঁর কোনো সহযোগী তাঁকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে তবে তিনি তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেন। তবে ট্রাম্পের ভাষায়, তিনি এখনো মাস্কের প্রতি ‘মুগ্ধ’ এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি তাঁর হয়ে কাজ করছেন—এই বিষয়টি তিনি উপভোগ করেন।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প মনে করেন, মাস্ক বিতর্কিত পদক্ষেপের জন্য জনগণের প্রতিক্রিয়া নিজ কাঁধে নিতে প্রস্তুত। এই বিষয়টি প্রেসিডেন্টকে জনগণের তোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে।
গত সপ্তাহে মাস্ক যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির দিকে নজর দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা একাধিক পোস্টে তিনি প্রমাণ ছাড়াই ঘোষণা করেছেন, এটি একটি ‘অশুভ ও সন্ত্রাসী সংস্থা’ এবং এটির ‘মরে যাওয়াই ভালো।’
ট্রাম্প প্রশাসন আর্থিকভাবে লাভজনক ‘আমেরিকা সবার আগে’ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। আর এই নীতির আলোকেই ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বের সবচেয়ে বড় খাদ্য সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাটিকে বন্ধ করে কর্মী প্রত্যাহার করে ব্যাপক বিভ্রান্তির মুখে ফেলে দেয় বিশ্ববাসীকে। সম্প্রতি মাস্ক সেই সংস্থাকে বিলুপ্ত করার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ‘হন্তারক’ হয়ে উঠেছেন। এক্সে এক লাইভ চ্যাটে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের সঙ্গে আমি ইউএসএআইডির ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছি এবং তিনি (ট্রাম্প) একমত হয়েছেন যে, আমাদের এটি বন্ধ করে দেওয়া উচিত এবং তাই আমরা এটি বন্ধ করছি।’
এর কয়েক ঘণ্টা পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ঘোষণা করেন, তিনি সংস্থাটির কার্যনির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করছেন। তিনি বলেন, হোয়াইট হাউস এটিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। সংস্থাটির সমর্থকেরা দীর্ঘদিন ধরে এটিকে আমেরিকার ‘সফট পাওয়ার’ বিস্তারের কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে দেখেন। তাদের মতে, এটি চীন-রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি ডিটারেন্ট (প্রতিরোধক) হিসেবে কাজ করে। ইউএসএআইডির সম্ভাব্য বিলুপ্তি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ। তিনি এক্সে লিখেছেন, ইউএসএআইডির গুপ্তচর ব্যবস্থা ‘বন্ধ’ করতে মাস্ক ‘স্মার্ট পদক্ষেপ’ নিচ্ছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আমেরিকার ডিপ স্টেট ইলন মাস্ককে পুরোপুরি গিলে ফেলতে পারবে না।
মাস্ক সম্ভবত ইউএসএআইডি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনায় সফল হবেন না। কারণ, এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট এই পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন। কারণ, কংগ্রেস এটিকে একটি আলাদা সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং সেটির নিয়ন্ত্রণ স্থানান্তর বা কার্যক্রম বন্ধ করতে হলে পরবর্তী করণীয়ও কংগ্রেসেই সারতে হবে। অবশ্য রিপাবলিকানরা খুব বেশি প্রতিক্রিয়া জানাননি। সম্ভবত তাঁরা মাস্ক এবং ট্রাম্পকে উসকে দিতে চান না।
এমনকি রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা মাস্কের টেসলা, এক্স এবং বোরিং কোম্পানি থেকে সাবেক কর্মীদের বিভিন্ন সরকারি সংস্থায়ও নিয়োগে আপত্তি জানাচ্ছেন না। যার মধ্যে অফিস অব পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট অন্যতম। এই বিভাগটি মূলত ফেডারেল সরকারের কর্মীদের দেখভাল করে। এ ছাড়া, জেনারেল সার্ভিসেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিসেও মাস্ক তাঁর কোম্পানিগুলোর সাবেক ও বর্তমান কর্মীদের নিয়োগ দিয়েছেন।
গত সপ্তাহে মার্কিন অর্থমন্ত্রী বা ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট ডিওজিই–এর কর্মীদের মার্কিন ফেডারেল সরকারের অর্থ লেনদেন ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ দেন। এর ফলে মাস্কের ফেডারেল সরকারের ব্যয় পর্যবেক্ষণ এবং সম্ভাব্য সীমিতকরণের একটি শক্তিশালী টুল পেয়ে গেছেন। এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় এক শীর্ষ ট্রেজারি কর্মকর্তা ডেভিড লেব্রিক পদত্যাগ করেন।
ফেডারেল সরকারের ব্যয় কমানোর বিষয়ে মাস্ক তাঁর সাম্প্রতিক এক এক্স পোস্টে বলেন, ‘করদাতাদের অর্থ নিয়ে দুর্নীতি এবং অপচয় রোধের একমাত্র উপায় হলো লেনদেনের গতিপথে নজর রাখা এবং সন্দেহজনক লেনদেনগুলো পর্যালোচনার জন্য স্থগিত করা। এটি স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের ক্ষুব্ধ করে তুলবে যারা দুর্নীতি এবং প্রতারণামূলক লেনদেনে সাহায্য–সহায়তা করেন এবং লাভবান হন। হতাশাজনক!’
ট্রেজারি বিভাগের এই অধিদপ্তরটি মূলত আমলা পরিচালিত। এটি নিজস্ব প্রক্রিয়ায়, ২০২৩ অর্থবছরে ৫ লাখ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ লেনদেন করেছে। পেমেন্ট সিস্টেমে প্রবেশাধিকার অত্যন্ত সুরক্ষিত। কারণ, এতে এমন সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য রয়েছে যা থেকে লাখ লাখ মার্কিনকে সামাজিক নিরাপত্তা, কর রেয়াত এবং অন্যান্য অর্থ পরিশোধ করা হয়।
এ ছাড়া, নিকট অতীতে মাস্কের দুটি কোম্পানি—টেসলা এবং স্পেসএক্স—ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থের চুক্তি পেয়েছে। কিছু ডেমোক্র্যাটের মতে, এখন মাস্কের প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানিগুলোর তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই বিষয়টি স্বার্থের সংঘাত তৈরি করতে পারে। মাস্কের বিদেশেও ব্যবসায়িক আগ্রহ রয়েছে, বিশেষ করে চীনে।
মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট ও নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ডেমোক্র্যাটদের একটি গ্রুপ ঘোষণা করেছে, তাঁরা পেমেন্ট সিস্টেমে মাস্কের প্রবেশাধিকার নিয়ে আদালতে যাবেন। মেরিল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক রিপ্রেজেনটেটিভ জেমি রাসকিন বলেছেন, ‘ইলন মাস্ক, তুমি হয়তো ট্রেজারির আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা অবৈধভাবে দখল করেছ, কিন্তু তুমি আমেরিকান জনগণের টাকা নিয়ন্ত্রণ করো না।’ আদালতকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তোমার কোনো চতুর্থ শাখা (আদালত) নেই যার নাম “ইলন মাস্ক”।’
কিছুদিন আগে ওয়াশিংটন ডিসির অন্তর্বর্তী অ্যাটর্নি এড মার্টিন মাস্ককে চিঠি দিয়ে আশ্বস্ত করে বলেছেন, তাঁর কার্যালয় ডিওজিইর কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে এমন যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সব ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেবে।
সপ্তাহ খানেক আগে মার্কিন সরকারের অফিস অব পার্সোনেল ম্যানেজমেন্ট থেকে কর্মীদের কাছে পাঠানো ‘ফর্ক ইন দ্য রোড’—শীর্ষক এক চিঠিতে মাস্ক দাবি করেন, সব ফেডারেল কর্মচারীকে তাঁদের কর্মস্থল পরিবর্তন মেনে নিতে হবে নইলে পদত্যাগ করতে হবে। ২০২২ সালে টুইটার কেনার পর মাস্ক তাঁর কর্মীদের একই ধরনের চিঠি দিয়েছিলেন।
টুইটার অধিগ্রহণের পর একে ‘এক্স’ হিসেবে নামকরণ করে মাস্ক কোম্পানিটির বাজারমূল্য ধসিয়ে দেন এবং ব্যবহারকারীদের ব্যাপকভাবে বের হয়ে যাওয়ার পথে ঠেলে দেন। তবে এর ফলে তিনি একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হাতে পেয়েছেন। তিনি এখন ইউরোপীয় দেশগুলোর নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছেন। এ ছাড়া, ব্যবসায়ও উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। ২০২৪ সালে প্ল্যাটফর্মটি রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ ডলার আয় করেছে, যার বেশির ভাগই এসেছে রিপাবলিকানদের কাছ থেকে। গত সপ্তাহে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, জেফ বেজোসের মালিকানাধীন আমাজন এক্সে বিজ্ঞাপন ব্যয় বাড়িয়েছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে বড় খবর ছিল পটোম্যাক নদীর ওপর এক সামরিক হেলিকপ্টারের সঙ্গে বেসামরিক যাত্রীবাহী বিমানের সংঘর্ষে ৬৭ জনের প্রাণহানি। এই ঘটনার কারণে আড়ালে চলে রাজধানীতে মাস্কের প্রভাব বিস্তারের তৎপরতা। মার্কিন ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি) এই দুর্ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব নেয়। কিন্তু সরকারি সংস্থাটি স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, সংবাদ সম্মেলন বা তদন্ত–সংক্রান্ত অন্য যেকোনো আপডেট তাদের এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা হবে। ই–মেইলের মাধ্যমে আর কোনো তথ্য বিতরণ করবে না তারা। কিন্তু দুর্ঘটনা ও ভুক্তভোগীদের খবরের মধ্যে এই খবরটিতে মানুষ সেভাবে নজর দেয়নি। এই বিষয়টি মূলত প্রমাণ করে, মাস্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারে কতটা প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন!
দ্য আটলান্টিক থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
বিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে।
৬ ঘণ্টা আগেগাজায় স্থল অভিযানের শুরু থেকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে অবিরাম বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়ও একই অবস্থান ছিল নেতানিয়াহুর সরকারের। এমনকি গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
৮ ঘণ্টা আগেভারতে আজকাল দিন শুরু হয় দুই ধরনের সংবাদ দিয়ে: একদিকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায়—পাকিস্তানবিরোধী বিতর্ক, হিন্দুদের গৌরবগাথা আর নতুন ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা; অন্যদিকে অন্ধকার এক বাস্তবতা—প্রতিদিন কোথাও না কোথাও কোনো মুসলমান নিগৃহীত হচ্ছে, পিটিয়ে মারা হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় বন্দী করা হচ্ছে, অথবা দেশদ্রোহী..
১৪ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
বিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে। আর রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক দৃষ্টিতে দেখছেন সবার চালচলন।
এ খেলার মূল বাজি রুশ অপরিশোধিত তেল। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এ তেল যাচ্ছে ভারত ও চীনে। ট্রাম্প এখন সেটা বন্ধ করতে চান এবং বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে ওয়াশিংটনের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরে থেকে তেলের বাজারে ভারত মস্কোর অন্যতম বড় ক্রেতায় পরিণত হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো এড়িয়ে গেলেও ভারত সস্তা দামে রুশ তেল কিনছে—যা ঘরোয়া জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখতে ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হয়েছে। বাইডেন প্রশাসন এ নিয়ে মাঝেমধ্যে সমালোচনা করলেও বৈশ্বিক জ্বালানি স্থিতিশীলতার স্বার্থে বিষয়টি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে বেশ নড়েচড়ে বসেছে। রুশ তেল কেনার অপরাধে তারা ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বেশ উত্তেজনাও চলছে। অনেকে বলছেন, এতে ট্রাম্প-মোদির বন্ধুত্ব হয়তো শেষ হয়ে গেছে।
অবশ্য ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত আর রুশ তেল কিনবে না। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—ট্রাম্প কি ‘ব্লাফ’ দিচ্ছেন, না সত্যিই মোদির কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন যে, ভারত রুশ তেল কেনা বন্ধ করবে? ট্রাম্প দাবি করেছেন, ‘ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনছে, এটার জন্য আমি অসন্তুষ্ট ছিলাম। কিন্তু মোদি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁরা আর রুশ তেল কিনবেন না। এটা বড় পদক্ষেপ। এখন আমরা চীনকেও একই কাজ করাতে যাচ্ছি।’
তবে প্রশ্ন দুটি থেকেই যায়—প্রথমত, মোদি কি সত্যিই এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন? দ্বিতীয়ত, বিশ্বের সবচেয়ে বড় রুশ তেল আমদানিকারক চীন কি যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশ মেনে চলবে?
চীন প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি ব্যারেল তেল আমদানি করে, যার বড় অংশই আসে রাশিয়া থেকে। ২০২৩ সালে রাশিয়া সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে চীনের সবচেয়ে বড় জ্বালানি সরবরাহকারী হয়। এটিই প্রমাণ করে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মস্কো-বেইজিং সম্পর্ককে আরও শক্ত করেছে। চীন ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘একতরফা ও অর্থনৈতিক জবরদস্তি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে পাল্টাব্যবস্থার হুমকি দিয়েছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল অনেকটা সতর্ক। দিল্লি জানিয়েছে, রুশ তেল আমদানি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও দামের ভারসাম্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে সত্যিই ফোনালাপ হয়েছিল কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখা ও সরবরাহ নিশ্চিত করাই আমাদের নীতির মূল লক্ষ্য। এ জন্য আমরা উৎস বৈচিত্র্য বজায় রেখে বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী তেল আমদানি করি।’
এই অস্পষ্ট মন্তব্যের পর অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—ফোনালাপ আদৌ হয়েছিল কি না এবং হয়ে থাকলে মোদি সত্যিই কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কি না।
মস্কো অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছে, ভারত তাদের জ্বালানি নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। রুশ সরকার বলেছে, ‘ভারতের অর্থনীতির জন্য রুশ তেল অপরিহার্য। আমরা ভারত সরকারের নীতিকে সম্মান করি এবং তেল ও গ্যাস খাতে সহযোগিতা চালিয়ে যাব।’
উল্লেখ্য, একসময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ নিজেরাই চেয়েছিল ভারত রুশ তেল কিনুক, যাতে বৈশ্বিক তেলের দাম বেড়ে না যায়। ভারতে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা রুশ তেল কেনা নিষিদ্ধ করিনি, বরং মূল্যসীমা নির্ধারণে ভারতকে সহায়তা করতে বলেছিলাম। ভারত ঠিক তা-ই করেছে। এখন এই প্রশাসন বলছে, ভারত নাকি রাশিয়ার যুদ্ধ যন্ত্রে অর্থ জোগাচ্ছে। এটা একধরনের নীতিগত দ্বিচারিতা।’
পশ্চিমা বাজার হারানোর ক্ষতি পোষাতে রাশিয়া ইতিমধ্যে এশীয় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেছে। ভারত ও চীন এখন রাশিয়ার জন্য প্রধান বৈদেশিক মুদ্রার উৎস। একই সঙ্গে ইউরোপও রাশিয়া থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনছে।
ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক বহু পুরোনো। সেই স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মস্কো ছিল ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক মিত্র। এখনো প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, পারমাণবিক প্রকল্প, জ্বালানি বিনিয়োগ ও যৌথ উদ্যোগ—সব ক্ষেত্রে এ সম্পর্ক অটুট।
এ দীর্ঘ সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সত্ত্বেও ভারত সহজে রুশ তেল থেকে সরে আসবে না। তবে দিল্লির জন্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত বাণিজ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে। অনেকের মতে, ওয়াশিংটন হয়তো কৃষিপণ্য ও শুল্কে ছাড় দিয়ে ভারতকে রুশ তেল আমদানি কমানোর প্রস্তাব দেবে।
তবে বর্তমানে ভারতের রুশ তেল আমদানি কমার কোনো ইঙ্গিত নেই। সেপ্টেম্বর মাসে ভারত দৈনিক ১৬ লাখ ব্যারেল তেল কিনেছে, যা অক্টোবরে বেড়ে ১৮ লাখ ব্যারেল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব তেল পরিবহন হচ্ছে পশ্চিমাদের নজরদারির বাইরে থাকা ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা তেলবাহী গোপন জাহাজের মাধ্যমে।
বিশ্লেষকেরা সতর্ক করছেন, ভারত হঠাৎ রুশ তেল কেনা কমালে বিশ্ববাজারে সরবরাহ ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে, দাম পড়ে যেতে পারে এবং রাশিয়া আরও বেশি চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
২০২২ সালে যখন রাশিয়ার কারণে বিশ্বে তেলের দাম বেড়ে যায়, তখন বাইডেন প্রশাসন ভারতকে ছাড় দিয়েছিল, যেন বিশ্বে ঘাটতি না হয়। সে সময় ক্রুড অয়েলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৮০–৯০ ডলার। এখন তা নেমে এসেছে প্রায় ৬১ ডলারে, যা মার্কিন শেল তেল উৎপাদকদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
ট্রাম্প হয়তো ভাবছেন, ভারত ও চীনকে রুশ তেল কেনা কমাতে বাধ্য করলে সরবরাহ কমে যাবে, ফলে দাম কিছুটা বাড়বে। কিন্তু তাঁকে খেয়াল রাখতে হবে, এতে যেন তাঁর নিজ দেশের ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
তবে এই ‘গেম’ অত্যন্ত সূক্ষ্ম। কারণ, বেশি চাপ দিলে দাম উল্টো বেড়ে যেতে পারে আর কম চাপ দিলে রাশিয়া বিপুল অর্থ উপার্জন চালিয়ে যাবে। যেকোনো ভুল হিসাব মার্কিন কৌশলকে দুর্বল করতে পারে বা মস্কোর অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে। তাই এ মুহূর্তে ট্রাম্পের বাজি সফল হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। আর মোদির জন্য এটি নিঃসন্দেহে সূক্ষ্ম ভারসাম্যের খেলা। তবে ভারসাম্য রক্ষা করা এত সহজ নয়। রাশিয়া থেকে সরে আসা মানে পুরোনো জোট দুর্বল করা; আবার যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করা মানে নতুন বাণিজ্য সম্পর্ককে ঝুঁকিতে ফেলা। তাই অর্থনৈতিক বাস্তবতা, ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব ও অনিশ্চিত মার্কিন রাজনীতির দাবার বোর্ডে মোদিকে একসঙ্গে চাল দিতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া থেকে অনূদিত
বিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে। আর রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক দৃষ্টিতে দেখছেন সবার চালচলন।
এ খেলার মূল বাজি রুশ অপরিশোধিত তেল। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এ তেল যাচ্ছে ভারত ও চীনে। ট্রাম্প এখন সেটা বন্ধ করতে চান এবং বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে ওয়াশিংটনের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরে থেকে তেলের বাজারে ভারত মস্কোর অন্যতম বড় ক্রেতায় পরিণত হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো এড়িয়ে গেলেও ভারত সস্তা দামে রুশ তেল কিনছে—যা ঘরোয়া জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখতে ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হয়েছে। বাইডেন প্রশাসন এ নিয়ে মাঝেমধ্যে সমালোচনা করলেও বৈশ্বিক জ্বালানি স্থিতিশীলতার স্বার্থে বিষয়টি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে বেশ নড়েচড়ে বসেছে। রুশ তেল কেনার অপরাধে তারা ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বেশ উত্তেজনাও চলছে। অনেকে বলছেন, এতে ট্রাম্প-মোদির বন্ধুত্ব হয়তো শেষ হয়ে গেছে।
অবশ্য ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত আর রুশ তেল কিনবে না। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—ট্রাম্প কি ‘ব্লাফ’ দিচ্ছেন, না সত্যিই মোদির কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন যে, ভারত রুশ তেল কেনা বন্ধ করবে? ট্রাম্প দাবি করেছেন, ‘ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনছে, এটার জন্য আমি অসন্তুষ্ট ছিলাম। কিন্তু মোদি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁরা আর রুশ তেল কিনবেন না। এটা বড় পদক্ষেপ। এখন আমরা চীনকেও একই কাজ করাতে যাচ্ছি।’
তবে প্রশ্ন দুটি থেকেই যায়—প্রথমত, মোদি কি সত্যিই এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন? দ্বিতীয়ত, বিশ্বের সবচেয়ে বড় রুশ তেল আমদানিকারক চীন কি যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশ মেনে চলবে?
চীন প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি ব্যারেল তেল আমদানি করে, যার বড় অংশই আসে রাশিয়া থেকে। ২০২৩ সালে রাশিয়া সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে চীনের সবচেয়ে বড় জ্বালানি সরবরাহকারী হয়। এটিই প্রমাণ করে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মস্কো-বেইজিং সম্পর্ককে আরও শক্ত করেছে। চীন ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘একতরফা ও অর্থনৈতিক জবরদস্তি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে পাল্টাব্যবস্থার হুমকি দিয়েছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল অনেকটা সতর্ক। দিল্লি জানিয়েছে, রুশ তেল আমদানি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও দামের ভারসাম্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে সত্যিই ফোনালাপ হয়েছিল কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখা ও সরবরাহ নিশ্চিত করাই আমাদের নীতির মূল লক্ষ্য। এ জন্য আমরা উৎস বৈচিত্র্য বজায় রেখে বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী তেল আমদানি করি।’
এই অস্পষ্ট মন্তব্যের পর অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—ফোনালাপ আদৌ হয়েছিল কি না এবং হয়ে থাকলে মোদি সত্যিই কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কি না।
মস্কো অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছে, ভারত তাদের জ্বালানি নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। রুশ সরকার বলেছে, ‘ভারতের অর্থনীতির জন্য রুশ তেল অপরিহার্য। আমরা ভারত সরকারের নীতিকে সম্মান করি এবং তেল ও গ্যাস খাতে সহযোগিতা চালিয়ে যাব।’
উল্লেখ্য, একসময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ নিজেরাই চেয়েছিল ভারত রুশ তেল কিনুক, যাতে বৈশ্বিক তেলের দাম বেড়ে না যায়। ভারতে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা রুশ তেল কেনা নিষিদ্ধ করিনি, বরং মূল্যসীমা নির্ধারণে ভারতকে সহায়তা করতে বলেছিলাম। ভারত ঠিক তা-ই করেছে। এখন এই প্রশাসন বলছে, ভারত নাকি রাশিয়ার যুদ্ধ যন্ত্রে অর্থ জোগাচ্ছে। এটা একধরনের নীতিগত দ্বিচারিতা।’
পশ্চিমা বাজার হারানোর ক্ষতি পোষাতে রাশিয়া ইতিমধ্যে এশীয় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেছে। ভারত ও চীন এখন রাশিয়ার জন্য প্রধান বৈদেশিক মুদ্রার উৎস। একই সঙ্গে ইউরোপও রাশিয়া থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনছে।
ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক বহু পুরোনো। সেই স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মস্কো ছিল ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক মিত্র। এখনো প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, পারমাণবিক প্রকল্প, জ্বালানি বিনিয়োগ ও যৌথ উদ্যোগ—সব ক্ষেত্রে এ সম্পর্ক অটুট।
এ দীর্ঘ সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সত্ত্বেও ভারত সহজে রুশ তেল থেকে সরে আসবে না। তবে দিল্লির জন্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত বাণিজ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে। অনেকের মতে, ওয়াশিংটন হয়তো কৃষিপণ্য ও শুল্কে ছাড় দিয়ে ভারতকে রুশ তেল আমদানি কমানোর প্রস্তাব দেবে।
তবে বর্তমানে ভারতের রুশ তেল আমদানি কমার কোনো ইঙ্গিত নেই। সেপ্টেম্বর মাসে ভারত দৈনিক ১৬ লাখ ব্যারেল তেল কিনেছে, যা অক্টোবরে বেড়ে ১৮ লাখ ব্যারেল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব তেল পরিবহন হচ্ছে পশ্চিমাদের নজরদারির বাইরে থাকা ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা তেলবাহী গোপন জাহাজের মাধ্যমে।
বিশ্লেষকেরা সতর্ক করছেন, ভারত হঠাৎ রুশ তেল কেনা কমালে বিশ্ববাজারে সরবরাহ ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে, দাম পড়ে যেতে পারে এবং রাশিয়া আরও বেশি চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
২০২২ সালে যখন রাশিয়ার কারণে বিশ্বে তেলের দাম বেড়ে যায়, তখন বাইডেন প্রশাসন ভারতকে ছাড় দিয়েছিল, যেন বিশ্বে ঘাটতি না হয়। সে সময় ক্রুড অয়েলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৮০–৯০ ডলার। এখন তা নেমে এসেছে প্রায় ৬১ ডলারে, যা মার্কিন শেল তেল উৎপাদকদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
ট্রাম্প হয়তো ভাবছেন, ভারত ও চীনকে রুশ তেল কেনা কমাতে বাধ্য করলে সরবরাহ কমে যাবে, ফলে দাম কিছুটা বাড়বে। কিন্তু তাঁকে খেয়াল রাখতে হবে, এতে যেন তাঁর নিজ দেশের ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
তবে এই ‘গেম’ অত্যন্ত সূক্ষ্ম। কারণ, বেশি চাপ দিলে দাম উল্টো বেড়ে যেতে পারে আর কম চাপ দিলে রাশিয়া বিপুল অর্থ উপার্জন চালিয়ে যাবে। যেকোনো ভুল হিসাব মার্কিন কৌশলকে দুর্বল করতে পারে বা মস্কোর অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে। তাই এ মুহূর্তে ট্রাম্পের বাজি সফল হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। আর মোদির জন্য এটি নিঃসন্দেহে সূক্ষ্ম ভারসাম্যের খেলা। তবে ভারসাম্য রক্ষা করা এত সহজ নয়। রাশিয়া থেকে সরে আসা মানে পুরোনো জোট দুর্বল করা; আবার যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করা মানে নতুন বাণিজ্য সম্পর্ককে ঝুঁকিতে ফেলা। তাই অর্থনৈতিক বাস্তবতা, ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব ও অনিশ্চিত মার্কিন রাজনীতির দাবার বোর্ডে মোদিকে একসঙ্গে চাল দিতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া থেকে অনূদিত
মাস্কের প্রভাব–প্রতিপত্তি যেন কোনো ধরনের জবাবদিহির বাইরে। তাঁর প্রতাপ ওয়াশিংটনের প্রভাবশালী মহলে স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি করেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব বিষয়ে তাঁর প্রভাব বিস্তৃত এবং অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত।
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫গাজায় স্থল অভিযানের শুরু থেকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে অবিরাম বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়ও একই অবস্থান ছিল নেতানিয়াহুর সরকারের। এমনকি গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
৮ ঘণ্টা আগেভারতে আজকাল দিন শুরু হয় দুই ধরনের সংবাদ দিয়ে: একদিকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায়—পাকিস্তানবিরোধী বিতর্ক, হিন্দুদের গৌরবগাথা আর নতুন ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা; অন্যদিকে অন্ধকার এক বাস্তবতা—প্রতিদিন কোথাও না কোথাও কোনো মুসলমান নিগৃহীত হচ্ছে, পিটিয়ে মারা হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় বন্দী করা হচ্ছে, অথবা দেশদ্রোহী..
১৪ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
১ দিন আগেদ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের নিবন্ধ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
গাজায় স্থল অভিযানের শুরু থেকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে অবিরাম বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়ও একই অবস্থান ছিল নেতানিয়াহুর সরকারের। এমনকি গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখাচ্ছে। গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে আনুমানিক ১৫ হাজার হামাস যোদ্ধা আবারও সংগঠিত হয়ে উঠে এসেছে। তাদের অনেকে পূর্ণ সশস্ত্র এবং এরই মধ্যে গাজায় প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করেছে। গাজা থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন বলছে, তারা সন্দেহভাজন সহযোগীদের খুঁজে বের করে প্রকাশ্যে হত্যা করছে। অর্থাৎ হামাস ধ্বংস হয়নি, রক্তাক্ত ও বিভক্ত হলেও সংগঠনটি টিকে গেছে।
এ ফলাফল আসলে অপ্রত্যাশিত নয়। বিশ্বের সব প্রভাবশালী সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষজ্ঞ বহু আগে সতর্ক করেছিলেন, হামাসকে কেবল সামরিক শক্তি দিয়ে ধ্বংস করা সম্ভব নয়। হামাস শুধু একটি সশস্ত্র নেটওয়ার্ক বা সুড়ঙ্গ ব্যবস্থা নয়, এটি ফিলিস্তিনি সমাজের গভীরে শিকড় গেড়ে বসা একটি রাজনৈতিক ও আদর্শিক আন্দোলন। যেমনটা যুক্তরাষ্ট্র আল-কায়েদা বা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ক্ষেত্রে দেখেছে, নেতা হত্যা করা যায়, অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়, এলাকা দখল করা যায়, কিন্তু কোনো আদর্শকে বোমা মেরে ধ্বংস করা যায় না।
ইসরায়েলের ঘোষিত ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ শুরু থেকে ছিল এক মরীচিকা। হামাসের নেতৃত্বকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সংগঠনটি এখনো স্থানীয় সেল ও মিলিশিয়া আকারে সক্রিয়। ইসরায়েলি অভিযানে গাজার অসংখ্য সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত, আবাসিক এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু যেসব মূল কারণ হামাসের উত্থান ঘটিয়েছিল (বঞ্চনা, রাষ্ট্রহীনতা ও হতাশা), সেগুলো আজও বহাল ও আরও তীব্র।
২০০০-এর দশকের শুরুতে ফাতাহ নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অদক্ষতার প্রতীকে পরিণত হয়। কয়েক বছরের ব্যর্থ শান্তি আলোচনা, অর্থনৈতিক পতন ও ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা পিএর প্রতি আস্থা হারায়। হামাস এ ক্ষোভকে রাজনৈতিক পুঁজি বানায়, নিজেদের পরিচয় দেয় দুর্নীতিমুক্ত, শৃঙ্খলাবদ্ধ, ন্যায় ও প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে।
২০০৬ সালে গাজায় হামাস নির্বাচনে জয় পায় মূলত ফাতাহর স্থবিরতার কারণে; উগ্র ইসলামপন্থার প্রতি সমর্থন হিসেবে নয়। কিন্তু বিজয়ী হয়ে হামাস ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার চিরাচরিত একনায়কতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের গাজা থেকে উৎখাত করে, নির্বাচন বাতিল করে আর জনগণের কল্যাণে ব্যয় না করে বিপুল অর্থ ব্যয় করে সুড়ঙ্গ, রকেট তৈরি ও সশস্ত্র বাহিনীর পেছনে।
তবে এখানে ইসরায়েলের নীতির ভূমিকাও উপেক্ষা করা যায় না। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজাকে বিভক্ত রাখার নীতি হাতে নেয়। নেতানিয়াহু জানতেন, একটি ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব দ্বিরাষ্ট্র বাস্তবায়নের প্রস্তাবকে শক্তিশালী করত আর বিভক্ত নেতৃত্ব সেই সম্ভাবনাকে দুর্বল করেছে। এ কৌশলের অর্থ দাঁড়ায়, পশ্চিম তীর পিএকে দুর্বল করার পাশাপাশি গাজায় হামাসের শাসনকে পরোক্ষভাবে মেনে নেওয়া।
এ স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ দীর্ঘ মেয়াদে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। হামাসকে শক্তিশালী হতে দিয়ে নেতানিয়াহু কার্যত দ্বিরাষ্ট্র সমাধানকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রেখেছেন। হামাসের অস্তিত্ব ইসরায়েলের জন্য রাজনৈতিক আপসে না গিয়ে বসতি সম্প্রসারণ ও দখল চালিয়ে যাওয়ার পথে এক সহজ অজুহাত ছিল।
কিন্তু এ নীতি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ভয়াবহভাবে উল্টো ফল দিয়েছে। হামাসের হামলা ইসরায়েলের নিরাপত্তাবোধ ভেঙে দিয়েছে, ভয়াবহ এক যুদ্ধের সূচনা করেছে এবং শান্তিপ্রক্রিয়াকে পুরো এক প্রজন্ম পিছিয়ে দিয়েছে।
গাজার জনগণের মধ্যে হামাসের প্রতি গভীর ভালোবাসা নেই। অনেক ফিলিস্তিনি হামাসকেই দোষারোপ করছে ধ্বংস ও রক্তপাত ডেকে আনার জন্য। কিন্তু বিকল্প রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা বিশ্বাসযোগ্য শান্তির রূপরেখা না থাকায় হামাসের বয়ান টিকে আছে। চরমপন্থা বাঁচে হতাশার ওপর আর গাজায় এখন হতাশার প্রাচুর্য।
হামাসকে প্রকৃত অর্থে পরাজিত করার একমাত্র উপায় অস্ত্র নয়, বরং আদর্শিক লড়াই। হামাস যে বক্তব্যের ওপর টিকে আছে—তা হলো, রাষ্ট্রহীন মানুষের জন্য সম্মানের একমাত্র পথ হচ্ছে সহিংসতা। এ বক্তব্য ভেঙে দেওয়ার একমাত্র উপায় হলো ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি বাস্তব, আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত ও বিশ্বাসযোগ্য দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথ তৈরি করা।
এর অর্থ হলো, ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈধতা ফিরিয়ে আনা ও একটি নতুন প্রযুক্তিগত বা বহুপক্ষীয় প্রশাসনের মাধ্যমে গাজাকে পুনর্গঠন করা। শহীদ হওয়ার বাসন নয়, শাসন ও উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নেতৃত্বকে ক্ষমতায় আনা। গাজার রাজনৈতিক সংস্কার ও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমার শর্তে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোকে তহবিল পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া। ইসরায়েলকেও বুঝতে হবে, স্থায়ী অবরোধ ও দখলদারত্ব নিরাপত্তা বাড়ায় না; প্রকৃত নিরাপত্তা আসে সহাবস্থান থেকে।
ইসরায়েলের অভিযান প্রমাণ করেছে, যেমনটা বিশেষজ্ঞরা বহু আগে বলেছেন, আপনি একটি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারেন, কিন্তু একটি আদর্শকে নয়। হামাসকে সত্যিকার অর্থে পরাজিত করতে হলে ফিলিস্তিনের নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে ও চিন্তায় বিশ্বাসযোগ্য শান্তি ও সমৃদ্ধির ভবিষ্যৎ দেখাতে হবে।
ন্যাশনাল ইন্টারেস্টে বিশ্লেষণটি লিখেছেন ড. আজিম ইব্রাহিম। তিনি নিউ লাইনস ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসির সিনিয়র ডিরেক্টর এবং ‘অথরিটেরিয়ান সেঞ্চুরি: উইমেনস অব আ পোস্ট-লিবারাল ফিউচার’ বইটির লেখক। অনুবাদ করেছেন আবদুল বাছেদ।
গাজায় স্থল অভিযানের শুরু থেকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে অবিরাম বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়ও একই অবস্থান ছিল নেতানিয়াহুর সরকারের। এমনকি গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখাচ্ছে। গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে আনুমানিক ১৫ হাজার হামাস যোদ্ধা আবারও সংগঠিত হয়ে উঠে এসেছে। তাদের অনেকে পূর্ণ সশস্ত্র এবং এরই মধ্যে গাজায় প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করেছে। গাজা থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন বলছে, তারা সন্দেহভাজন সহযোগীদের খুঁজে বের করে প্রকাশ্যে হত্যা করছে। অর্থাৎ হামাস ধ্বংস হয়নি, রক্তাক্ত ও বিভক্ত হলেও সংগঠনটি টিকে গেছে।
এ ফলাফল আসলে অপ্রত্যাশিত নয়। বিশ্বের সব প্রভাবশালী সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষজ্ঞ বহু আগে সতর্ক করেছিলেন, হামাসকে কেবল সামরিক শক্তি দিয়ে ধ্বংস করা সম্ভব নয়। হামাস শুধু একটি সশস্ত্র নেটওয়ার্ক বা সুড়ঙ্গ ব্যবস্থা নয়, এটি ফিলিস্তিনি সমাজের গভীরে শিকড় গেড়ে বসা একটি রাজনৈতিক ও আদর্শিক আন্দোলন। যেমনটা যুক্তরাষ্ট্র আল-কায়েদা বা ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ক্ষেত্রে দেখেছে, নেতা হত্যা করা যায়, অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়, এলাকা দখল করা যায়, কিন্তু কোনো আদর্শকে বোমা মেরে ধ্বংস করা যায় না।
ইসরায়েলের ঘোষিত ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ শুরু থেকে ছিল এক মরীচিকা। হামাসের নেতৃত্বকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সংগঠনটি এখনো স্থানীয় সেল ও মিলিশিয়া আকারে সক্রিয়। ইসরায়েলি অভিযানে গাজার অসংখ্য সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত, আবাসিক এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু যেসব মূল কারণ হামাসের উত্থান ঘটিয়েছিল (বঞ্চনা, রাষ্ট্রহীনতা ও হতাশা), সেগুলো আজও বহাল ও আরও তীব্র।
২০০০-এর দশকের শুরুতে ফাতাহ নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অদক্ষতার প্রতীকে পরিণত হয়। কয়েক বছরের ব্যর্থ শান্তি আলোচনা, অর্থনৈতিক পতন ও ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা পিএর প্রতি আস্থা হারায়। হামাস এ ক্ষোভকে রাজনৈতিক পুঁজি বানায়, নিজেদের পরিচয় দেয় দুর্নীতিমুক্ত, শৃঙ্খলাবদ্ধ, ন্যায় ও প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে।
২০০৬ সালে গাজায় হামাস নির্বাচনে জয় পায় মূলত ফাতাহর স্থবিরতার কারণে; উগ্র ইসলামপন্থার প্রতি সমর্থন হিসেবে নয়। কিন্তু বিজয়ী হয়ে হামাস ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার চিরাচরিত একনায়কতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করে। প্রতিদ্বন্দ্বীদের গাজা থেকে উৎখাত করে, নির্বাচন বাতিল করে আর জনগণের কল্যাণে ব্যয় না করে বিপুল অর্থ ব্যয় করে সুড়ঙ্গ, রকেট তৈরি ও সশস্ত্র বাহিনীর পেছনে।
তবে এখানে ইসরায়েলের নীতির ভূমিকাও উপেক্ষা করা যায় না। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজাকে বিভক্ত রাখার নীতি হাতে নেয়। নেতানিয়াহু জানতেন, একটি ঐক্যবদ্ধ ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব দ্বিরাষ্ট্র বাস্তবায়নের প্রস্তাবকে শক্তিশালী করত আর বিভক্ত নেতৃত্ব সেই সম্ভাবনাকে দুর্বল করেছে। এ কৌশলের অর্থ দাঁড়ায়, পশ্চিম তীর পিএকে দুর্বল করার পাশাপাশি গাজায় হামাসের শাসনকে পরোক্ষভাবে মেনে নেওয়া।
এ স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ দীর্ঘ মেয়াদে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে। হামাসকে শক্তিশালী হতে দিয়ে নেতানিয়াহু কার্যত দ্বিরাষ্ট্র সমাধানকে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রেখেছেন। হামাসের অস্তিত্ব ইসরায়েলের জন্য রাজনৈতিক আপসে না গিয়ে বসতি সম্প্রসারণ ও দখল চালিয়ে যাওয়ার পথে এক সহজ অজুহাত ছিল।
কিন্তু এ নীতি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলায় ভয়াবহভাবে উল্টো ফল দিয়েছে। হামাসের হামলা ইসরায়েলের নিরাপত্তাবোধ ভেঙে দিয়েছে, ভয়াবহ এক যুদ্ধের সূচনা করেছে এবং শান্তিপ্রক্রিয়াকে পুরো এক প্রজন্ম পিছিয়ে দিয়েছে।
গাজার জনগণের মধ্যে হামাসের প্রতি গভীর ভালোবাসা নেই। অনেক ফিলিস্তিনি হামাসকেই দোষারোপ করছে ধ্বংস ও রক্তপাত ডেকে আনার জন্য। কিন্তু বিকল্প রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা বিশ্বাসযোগ্য শান্তির রূপরেখা না থাকায় হামাসের বয়ান টিকে আছে। চরমপন্থা বাঁচে হতাশার ওপর আর গাজায় এখন হতাশার প্রাচুর্য।
হামাসকে প্রকৃত অর্থে পরাজিত করার একমাত্র উপায় অস্ত্র নয়, বরং আদর্শিক লড়াই। হামাস যে বক্তব্যের ওপর টিকে আছে—তা হলো, রাষ্ট্রহীন মানুষের জন্য সম্মানের একমাত্র পথ হচ্ছে সহিংসতা। এ বক্তব্য ভেঙে দেওয়ার একমাত্র উপায় হলো ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি বাস্তব, আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থিত ও বিশ্বাসযোগ্য দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পথ তৈরি করা।
এর অর্থ হলো, ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈধতা ফিরিয়ে আনা ও একটি নতুন প্রযুক্তিগত বা বহুপক্ষীয় প্রশাসনের মাধ্যমে গাজাকে পুনর্গঠন করা। শহীদ হওয়ার বাসন নয়, শাসন ও উন্নয়নের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নেতৃত্বকে ক্ষমতায় আনা। গাজার রাজনৈতিক সংস্কার ও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমার শর্তে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোকে তহবিল পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়া। ইসরায়েলকেও বুঝতে হবে, স্থায়ী অবরোধ ও দখলদারত্ব নিরাপত্তা বাড়ায় না; প্রকৃত নিরাপত্তা আসে সহাবস্থান থেকে।
ইসরায়েলের অভিযান প্রমাণ করেছে, যেমনটা বিশেষজ্ঞরা বহু আগে বলেছেন, আপনি একটি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারেন, কিন্তু একটি আদর্শকে নয়। হামাসকে সত্যিকার অর্থে পরাজিত করতে হলে ফিলিস্তিনের নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে ও চিন্তায় বিশ্বাসযোগ্য শান্তি ও সমৃদ্ধির ভবিষ্যৎ দেখাতে হবে।
ন্যাশনাল ইন্টারেস্টে বিশ্লেষণটি লিখেছেন ড. আজিম ইব্রাহিম। তিনি নিউ লাইনস ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসির সিনিয়র ডিরেক্টর এবং ‘অথরিটেরিয়ান সেঞ্চুরি: উইমেনস অব আ পোস্ট-লিবারাল ফিউচার’ বইটির লেখক। অনুবাদ করেছেন আবদুল বাছেদ।
মাস্কের প্রভাব–প্রতিপত্তি যেন কোনো ধরনের জবাবদিহির বাইরে। তাঁর প্রতাপ ওয়াশিংটনের প্রভাবশালী মহলে স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি করেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব বিষয়ে তাঁর প্রভাব বিস্তৃত এবং অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত।
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে।
৬ ঘণ্টা আগেভারতে আজকাল দিন শুরু হয় দুই ধরনের সংবাদ দিয়ে: একদিকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায়—পাকিস্তানবিরোধী বিতর্ক, হিন্দুদের গৌরবগাথা আর নতুন ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা; অন্যদিকে অন্ধকার এক বাস্তবতা—প্রতিদিন কোথাও না কোথাও কোনো মুসলমান নিগৃহীত হচ্ছে, পিটিয়ে মারা হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় বন্দী করা হচ্ছে, অথবা দেশদ্রোহী..
১৪ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
১ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
ভারতে আজকাল দিন শুরু হয় দুই ধরনের সংবাদ দিয়ে: একদিকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায়—পাকিস্তানবিরোধী বিতর্ক, হিন্দুদের গৌরবগাথা আর নতুন ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা; অন্যদিকে অন্ধকার এক বাস্তবতা—প্রতিদিন কোথাও না কোথাও কোনো মুসলমান নিগৃহীত হচ্ছে, পিটিয়ে মারা হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় বন্দী করা হচ্ছে, অথবা দেশদ্রোহী তকমা পাচ্ছে। এই দুই বাস্তবতার মাঝখানে একটি বার্তা স্পষ্ট—মুসলমানদের কষ্টক্লিষ্ট মুখ হয় অদৃশ্য করে দেওয়া হয়, নয়তো সেটিকে পরিণত করা হয় এক ধরনের টিভি ‘শো’তে, যা সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে সান্ধ্যকালীন বিনোদন। আজ ভারতে মুসলমানের জন্মই যেন আজন্ম পাপ! তার জন্মই হয় অপরাধী হয়ে। তাদের কণ্ঠস্বর কেউ শোনে না।
গত সেপ্টেম্বরে উত্তর প্রদেশের আজমগড়ে সাত বছরের এক মুসলিম শিশুর লাশ উদ্ধার হয়। লাশ ব্যাগে ভরা ছিল। প্রতিবেশীরাই জড়িত ছিল এ হত্যাকাণ্ডে। খবরটা স্থানীয়ভাবে একদিন দুদিন প্রচারিত হলেও দেশের বড় কোনো সংবাদমাধ্যমে জায়গা পায়নি। সেসময় নিউজরুমে আলোচনায় ছিল ‘লাভ জিহাদ’, সীমান্ত উত্তেজনা ও ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ। ফলে একটি মুসলিম শিশুর মৃত্যু জাতীয় ক্ষোভের গল্প হিসেবে ভাইরাল হয়নি। ধীরে ধীরে তা হারিয়ে গেছে। দ্রুত স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়া আর দশটা ঘটনার তালিকায় যোগ হয়েছে এই শিশুহত্যা।
সমাজবিজ্ঞানী স্ট্যানলি কোহেন এটিকে বলেন— ‘স্টেটস অব ডিনায়াল’। রাষ্ট্র এখানে নির্লিপ্ত। এখানে নৃশংসতাগুলো আড়াল করা হয় না, বরং এমনভাবে গ্রহণ করা হয় যেন তা স্বাভাবিক। ভারত আজ সেই অবস্থায়। এখানে মুসলমান হত্যার খবর গণমাধ্যমের শিরোনাম হওয়ার যোগ্য নয়, যেন এটা নিত্যদিনের সাধারণ ব্যাপার।
কানপুরে মুসলমানেরা ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের করে। গ্রেপ্তার করে ১ হাজার ৩০০ জনকে। ভালোবাসার প্রকাশও যেন আজ অপরাধ। অথচ মহারাষ্ট্র বা মধ্যপ্রদেশে যখন হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো প্রকাশ্যে গণহত্যার ডাক দেয়, তখন টেলিভিশন হয় তাদের মুখপত্র, নয়তো নীরব দর্শক। মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা যেন এক মঞ্চনাটক, যেখানে মুসলমানেরা চিরকাল অপরাধী/ভিলেন চরিত্রে আর হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলো সভ্যতার ধারক-বাহক ও রক্ষক হিসেবে অভিনয় করে।
ইন্দোরে ‘জিহাদি-মুক্ত বাজার’ নীতিতে রাতারাতি মুসলিম ব্যবসায়ীদের দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে—এ যেন অর্থনৈতিক লিঞ্চিং বা গণপ্রহার। অনেক পরিবার এতে উপার্জন হারায়, শিশুরা স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়, নারীরা খাবারের জন্য প্রতিবেশীর দ্বারে দ্বারে ঘোরে। অথচ দেশের বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলো এটিকে দেখায় ‘আইন-শৃঙ্খলার সমন্বয়’ হিসেবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংখ্যাগুরুরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, নানা মিম বানায়, বানানো হয় অনেক ভিডিও। এসব দেখে মনে হয়, মুসলমানদের প্রতি নিপীড়ন ও বঞ্চনা যেন বিনোদনের উপকরণ!
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এ সংস্কৃতির জন্মদাতা। তিনি প্রকাশ্যে মুসলমানদের ‘অনুপ্রবেশকারী’, ‘সন্ত্রাসীদের সহযোগী’ আখ্যা দেন। এমন ভাষা এখন ভারতের মূলধারার রাজনীতিরই অংশ। তথাকথিত বিরোধী দলগুলোও প্রতিবাদ না করে বরং নিজস্ব সংস্করণে নিজেদের হিন্দুত্ববাদী প্রমাণ করতে প্রতিযোগিতা করছে। মুসলমানেরা তাই এখন ভারতের রাজনীতিতে নাগরিক নয়, বরং নাটকের প্রপস মাত্র। (প্রপস বলতে মঞ্চ বা পর্দায় অভিনয়ের জন্য ব্যবহৃত বস্তু যেমন; আসবাব, অস্ত্র, পোশাক ইত্যাদি)
ভারতে আজকের দিনে একজন মুসলিম হিসেবে বাঁচা মানে ‘স্থায়ী সন্দেহভাজন’ আতঙ্কে থাকা। মসজিদে তাঁদের ওপর নজর রাখা হয়, বাজারে আড়চোখে তাকানো হয়, শ্রেণিকক্ষে সন্দেহ করা হয়। প্রতি শুক্রবার জুমার জামাতে যাওয়াই ঝুঁকি বলে মনে হয়। আজানের প্রতিটি ধ্বনি কারও কারও কাছে উসকানি বলে মনে হয়।
গীতিকার ও কবি সাহির লুধিয়ানভি একবার লিখেছিলেন, ‘যিনহে নাজ হ্যায় হিন্দ পার, ওহ কাহাঁ হ্যায়?’ (ভারতের জন্য যারা গর্বিত, তারা এখন কোথায়?)। প্রশ্নটি আজও প্রতিধ্বনিত হয়—যারা ভারত ও ভারতের মহত্ত্ব নিয়ে গর্বিত, তারা আজ কোথায়? তারা কী মুসলিমদের এ দুর্দশা দেখেন না?
উগান্ডায় জন্ম নেওয়া ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম গবেষক মাহমুদ মামদানি তাঁর ‘গুড মুসলিম, ব্যাড মুসলিম’ বইয়ে লিখেছেন—রাষ্ট্র ও সমাজ মুসলমানদের ভাগ করে ‘ভালো’ ও ‘খারাপ’ দুই শ্রেণিতে। ‘ভালো’ মুসলমান সে, যে চুপচাপ থাকে; আর ‘খারাপ’ সে, যে আত্মপরিচয় ও মর্যাদা জানান দিতে চায়। ভারতের বাস্তবতাও তা-ই—যে মুসলমান নিজের ধর্মবিশ্বাস আড়াল করে, সে টিকে থাকে; আর যে ভালোবাসা প্রকাশ করে, সমঅধিকার চায়, তাঁকে বলা হয় ‘মুজরিম’ বা অপরাধী। মামদানি আমাদের মনে করিয়ে দেন, এটি ধর্মতত্ত্বের বিষয় নয়, ক্ষমতার বিষয়। এই ক্ষমতাবানেরাই ঠিক করে দেয়, কোনটি বৈধ আর কোনটি অবৈধ— হোক সেটা ধর্মবিশ্বাস বা অধিকারের প্রশ্ন।
এই কারণেই গণপিটুনির ভিডিওগুলো হোয়াটসঅ্যাপে মিমের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এই কারণেই মুসলমানদের জন্মহার বেশি, তারা দ্রুতই হিন্দুদের ছাড়িয়ে যাবে— সংবাদ উপস্থাপকেরা এমন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বলেন আর হাসেন। এই কারণেই জনতা মুসলমানদের দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার পরে হাসি-তামাশা করে। ঘৃণা এখন আর শুধু রাজনীতি নয়, এটি এখন সমাজের বিনোদনে পরিণত হয়েছে। আর নিষ্ঠুরতা যখন কমেডি হয়ে ওঠে, যখন কাউকে অপমান করার ভিডিও প্রাইম-টাইম স্ক্রিপ্ট হয়ে যায়, তখন গণতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদের মধ্যে কোনো ফারাক থাকে না।
কিন্তু ইতিহাস দেখুন, যে সমাজ সংখ্যালঘুদের কষ্টকে বিনোদনে পরিণত করে, সে সমাজ নিজেও রক্ষা পায় না। নাৎসি জার্মানিতে ইহুদি নিধনে তথাকথিত লিবারেলদের বা উদারপন্থীদের নীরবতা, কৃষ্ণাঙ্গদের গণপিটুনির শিকার হতে দেখেও শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের উদাসীনতা, কিংবা গাজায় বোমা হামলা দেখে ইসরায়েলিদের উল্লাস—সবই মনে করিয়ে দেয়, ঘৃণার বিনোদন একসময় নিজের সমাজকেই গ্রাস করে। ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়।
তাহলে প্রশ্নটা রয়ে যায়—আমরা মুসলিম, না মুজরিম? কেন প্রতিদিন আমাদের বিচার হয়, অথচ হত্যাকারীরা মুক্ত থাকে? কেন আমাদের সন্তানদের মৃত্যু চাপা পড়ে রাষ্ট্রীয় উৎসবের আড়ালে?
এর উত্তর তালাশ করতে হবে শুধু মুসলমানদের নয়, ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠেরও। তারা কি ঘৃণাকে টেলিভিশন শো হিসেবে দেখবে, নাকি একদিন টেলিভিশন বন্ধ করে দেবে? কারণ ঘৃণা যেদিন দেশের একমাত্র বিনোদন হয়ে উঠবে, সেদিন শুধু মুসলমানের লাশ নয় ভারতের প্রজাতন্ত্রেরও পর্দা নামবে। সেদিন কেউ জিজ্ঞেস করবে না আপনি হিন্দু নাকি মুসলিম, ডানপন্থী নাকি উদারপন্থী। সেদিন ঘৃণার অট্টহাসিই হবে এই প্রজাতন্ত্রের একমাত্র অবশিষ্ট আওয়াজ।
আল-জাজিরায় প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে সংক্ষেপিত
লেখক: ইসমাইল সালাউদ্দিন, ভারতীয় লেখক ও গবেষক, মুসলিম পরিচয়, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে কাজ করেন
ভারতে আজকাল দিন শুরু হয় দুই ধরনের সংবাদ দিয়ে: একদিকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায়—পাকিস্তানবিরোধী বিতর্ক, হিন্দুদের গৌরবগাথা আর নতুন ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা; অন্যদিকে অন্ধকার এক বাস্তবতা—প্রতিদিন কোথাও না কোথাও কোনো মুসলমান নিগৃহীত হচ্ছে, পিটিয়ে মারা হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় বন্দী করা হচ্ছে, অথবা দেশদ্রোহী তকমা পাচ্ছে। এই দুই বাস্তবতার মাঝখানে একটি বার্তা স্পষ্ট—মুসলমানদের কষ্টক্লিষ্ট মুখ হয় অদৃশ্য করে দেওয়া হয়, নয়তো সেটিকে পরিণত করা হয় এক ধরনের টিভি ‘শো’তে, যা সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে সান্ধ্যকালীন বিনোদন। আজ ভারতে মুসলমানের জন্মই যেন আজন্ম পাপ! তার জন্মই হয় অপরাধী হয়ে। তাদের কণ্ঠস্বর কেউ শোনে না।
গত সেপ্টেম্বরে উত্তর প্রদেশের আজমগড়ে সাত বছরের এক মুসলিম শিশুর লাশ উদ্ধার হয়। লাশ ব্যাগে ভরা ছিল। প্রতিবেশীরাই জড়িত ছিল এ হত্যাকাণ্ডে। খবরটা স্থানীয়ভাবে একদিন দুদিন প্রচারিত হলেও দেশের বড় কোনো সংবাদমাধ্যমে জায়গা পায়নি। সেসময় নিউজরুমে আলোচনায় ছিল ‘লাভ জিহাদ’, সীমান্ত উত্তেজনা ও ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ। ফলে একটি মুসলিম শিশুর মৃত্যু জাতীয় ক্ষোভের গল্প হিসেবে ভাইরাল হয়নি। ধীরে ধীরে তা হারিয়ে গেছে। দ্রুত স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়া আর দশটা ঘটনার তালিকায় যোগ হয়েছে এই শিশুহত্যা।
সমাজবিজ্ঞানী স্ট্যানলি কোহেন এটিকে বলেন— ‘স্টেটস অব ডিনায়াল’। রাষ্ট্র এখানে নির্লিপ্ত। এখানে নৃশংসতাগুলো আড়াল করা হয় না, বরং এমনভাবে গ্রহণ করা হয় যেন তা স্বাভাবিক। ভারত আজ সেই অবস্থায়। এখানে মুসলমান হত্যার খবর গণমাধ্যমের শিরোনাম হওয়ার যোগ্য নয়, যেন এটা নিত্যদিনের সাধারণ ব্যাপার।
কানপুরে মুসলমানেরা ‘আই লাভ মুহাম্মদ’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধেই এফআইআর দায়ের করে। গ্রেপ্তার করে ১ হাজার ৩০০ জনকে। ভালোবাসার প্রকাশও যেন আজ অপরাধ। অথচ মহারাষ্ট্র বা মধ্যপ্রদেশে যখন হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো প্রকাশ্যে গণহত্যার ডাক দেয়, তখন টেলিভিশন হয় তাদের মুখপত্র, নয়তো নীরব দর্শক। মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা যেন এক মঞ্চনাটক, যেখানে মুসলমানেরা চিরকাল অপরাধী/ভিলেন চরিত্রে আর হিন্দুত্ববাদী শক্তিগুলো সভ্যতার ধারক-বাহক ও রক্ষক হিসেবে অভিনয় করে।
ইন্দোরে ‘জিহাদি-মুক্ত বাজার’ নীতিতে রাতারাতি মুসলিম ব্যবসায়ীদের দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে—এ যেন অর্থনৈতিক লিঞ্চিং বা গণপ্রহার। অনেক পরিবার এতে উপার্জন হারায়, শিশুরা স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়, নারীরা খাবারের জন্য প্রতিবেশীর দ্বারে দ্বারে ঘোরে। অথচ দেশের বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলো এটিকে দেখায় ‘আইন-শৃঙ্খলার সমন্বয়’ হিসেবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংখ্যাগুরুরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, নানা মিম বানায়, বানানো হয় অনেক ভিডিও। এসব দেখে মনে হয়, মুসলমানদের প্রতি নিপীড়ন ও বঞ্চনা যেন বিনোদনের উপকরণ!
উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এ সংস্কৃতির জন্মদাতা। তিনি প্রকাশ্যে মুসলমানদের ‘অনুপ্রবেশকারী’, ‘সন্ত্রাসীদের সহযোগী’ আখ্যা দেন। এমন ভাষা এখন ভারতের মূলধারার রাজনীতিরই অংশ। তথাকথিত বিরোধী দলগুলোও প্রতিবাদ না করে বরং নিজস্ব সংস্করণে নিজেদের হিন্দুত্ববাদী প্রমাণ করতে প্রতিযোগিতা করছে। মুসলমানেরা তাই এখন ভারতের রাজনীতিতে নাগরিক নয়, বরং নাটকের প্রপস মাত্র। (প্রপস বলতে মঞ্চ বা পর্দায় অভিনয়ের জন্য ব্যবহৃত বস্তু যেমন; আসবাব, অস্ত্র, পোশাক ইত্যাদি)
ভারতে আজকের দিনে একজন মুসলিম হিসেবে বাঁচা মানে ‘স্থায়ী সন্দেহভাজন’ আতঙ্কে থাকা। মসজিদে তাঁদের ওপর নজর রাখা হয়, বাজারে আড়চোখে তাকানো হয়, শ্রেণিকক্ষে সন্দেহ করা হয়। প্রতি শুক্রবার জুমার জামাতে যাওয়াই ঝুঁকি বলে মনে হয়। আজানের প্রতিটি ধ্বনি কারও কারও কাছে উসকানি বলে মনে হয়।
গীতিকার ও কবি সাহির লুধিয়ানভি একবার লিখেছিলেন, ‘যিনহে নাজ হ্যায় হিন্দ পার, ওহ কাহাঁ হ্যায়?’ (ভারতের জন্য যারা গর্বিত, তারা এখন কোথায়?)। প্রশ্নটি আজও প্রতিধ্বনিত হয়—যারা ভারত ও ভারতের মহত্ত্ব নিয়ে গর্বিত, তারা আজ কোথায়? তারা কী মুসলিমদের এ দুর্দশা দেখেন না?
উগান্ডায় জন্ম নেওয়া ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম গবেষক মাহমুদ মামদানি তাঁর ‘গুড মুসলিম, ব্যাড মুসলিম’ বইয়ে লিখেছেন—রাষ্ট্র ও সমাজ মুসলমানদের ভাগ করে ‘ভালো’ ও ‘খারাপ’ দুই শ্রেণিতে। ‘ভালো’ মুসলমান সে, যে চুপচাপ থাকে; আর ‘খারাপ’ সে, যে আত্মপরিচয় ও মর্যাদা জানান দিতে চায়। ভারতের বাস্তবতাও তা-ই—যে মুসলমান নিজের ধর্মবিশ্বাস আড়াল করে, সে টিকে থাকে; আর যে ভালোবাসা প্রকাশ করে, সমঅধিকার চায়, তাঁকে বলা হয় ‘মুজরিম’ বা অপরাধী। মামদানি আমাদের মনে করিয়ে দেন, এটি ধর্মতত্ত্বের বিষয় নয়, ক্ষমতার বিষয়। এই ক্ষমতাবানেরাই ঠিক করে দেয়, কোনটি বৈধ আর কোনটি অবৈধ— হোক সেটা ধর্মবিশ্বাস বা অধিকারের প্রশ্ন।
এই কারণেই গণপিটুনির ভিডিওগুলো হোয়াটসঅ্যাপে মিমের মতো ছড়িয়ে পড়ে। এই কারণেই মুসলমানদের জন্মহার বেশি, তারা দ্রুতই হিন্দুদের ছাড়িয়ে যাবে— সংবাদ উপস্থাপকেরা এমন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বলেন আর হাসেন। এই কারণেই জনতা মুসলমানদের দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার পরে হাসি-তামাশা করে। ঘৃণা এখন আর শুধু রাজনীতি নয়, এটি এখন সমাজের বিনোদনে পরিণত হয়েছে। আর নিষ্ঠুরতা যখন কমেডি হয়ে ওঠে, যখন কাউকে অপমান করার ভিডিও প্রাইম-টাইম স্ক্রিপ্ট হয়ে যায়, তখন গণতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদের মধ্যে কোনো ফারাক থাকে না।
কিন্তু ইতিহাস দেখুন, যে সমাজ সংখ্যালঘুদের কষ্টকে বিনোদনে পরিণত করে, সে সমাজ নিজেও রক্ষা পায় না। নাৎসি জার্মানিতে ইহুদি নিধনে তথাকথিত লিবারেলদের বা উদারপন্থীদের নীরবতা, কৃষ্ণাঙ্গদের গণপিটুনির শিকার হতে দেখেও শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের উদাসীনতা, কিংবা গাজায় বোমা হামলা দেখে ইসরায়েলিদের উল্লাস—সবই মনে করিয়ে দেয়, ঘৃণার বিনোদন একসময় নিজের সমাজকেই গ্রাস করে। ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়।
তাহলে প্রশ্নটা রয়ে যায়—আমরা মুসলিম, না মুজরিম? কেন প্রতিদিন আমাদের বিচার হয়, অথচ হত্যাকারীরা মুক্ত থাকে? কেন আমাদের সন্তানদের মৃত্যু চাপা পড়ে রাষ্ট্রীয় উৎসবের আড়ালে?
এর উত্তর তালাশ করতে হবে শুধু মুসলমানদের নয়, ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠেরও। তারা কি ঘৃণাকে টেলিভিশন শো হিসেবে দেখবে, নাকি একদিন টেলিভিশন বন্ধ করে দেবে? কারণ ঘৃণা যেদিন দেশের একমাত্র বিনোদন হয়ে উঠবে, সেদিন শুধু মুসলমানের লাশ নয় ভারতের প্রজাতন্ত্রেরও পর্দা নামবে। সেদিন কেউ জিজ্ঞেস করবে না আপনি হিন্দু নাকি মুসলিম, ডানপন্থী নাকি উদারপন্থী। সেদিন ঘৃণার অট্টহাসিই হবে এই প্রজাতন্ত্রের একমাত্র অবশিষ্ট আওয়াজ।
আল-জাজিরায় প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে সংক্ষেপিত
লেখক: ইসমাইল সালাউদ্দিন, ভারতীয় লেখক ও গবেষক, মুসলিম পরিচয়, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে কাজ করেন
মাস্কের প্রভাব–প্রতিপত্তি যেন কোনো ধরনের জবাবদিহির বাইরে। তাঁর প্রতাপ ওয়াশিংটনের প্রভাবশালী মহলে স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি করেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব বিষয়ে তাঁর প্রভাব বিস্তৃত এবং অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত।
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে।
৬ ঘণ্টা আগেগাজায় স্থল অভিযানের শুরু থেকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে অবিরাম বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়ও একই অবস্থান ছিল নেতানিয়াহুর সরকারের। এমনকি গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
৮ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
১ দিন আগেসিএনএনের প্রতিবেদন
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
গাজা যুদ্ধবিরতির পর গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বিশ্বনেতাদের সামনে নিজের সাফল্য তুলে ধরছিলেন, তখন তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিজের ‘প্রিয় ফিল্ড মার্শাল’ বলে সম্বোধন করেন। এরপর মঞ্চ ছেড়ে দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে, যিনি ট্রাম্পের উদ্যোগের প্রশংসা করে ঘোষণা দেন, তিনি ট্রাম্পকে আবারও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেবেন।
এক বছর আগেও এমন দৃশ্য কল্পনা করা কঠিন ছিল। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকাভুক্ত ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে পাকিস্তানের কথিত সম্পর্কের কারণে ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছিল। তা ছাড়া চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়াটাও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ছিল এক অস্বস্তির কারণ।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুরো মেয়াদে কোনো পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেননি। এমনকি ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর তিনি পাকিস্তানকে বলেছিলেন ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর একটি’।
কিন্তু ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
পাকিস্তানের নেতারা এখন প্রায়ই হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রিত হচ্ছেন। দেশটির সামরিক বাহিনী পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি র্যাথিয়ন ক্ষেপণাস্ত্র। বাণিজ্যে তারা পেয়েছে প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় কম শুল্কের সুবিধা।
এই কূটনৈতিক সাফল্যের পেছনে রয়েছে দুটি মূল উপাদান। প্রথমত, চীনের নিয়ন্ত্রণে না থাকা দুর্লভ খনিজে প্রবেশাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের প্রশংসা।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের এই সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতেও বেশ সাড়া ফেলেছে। ফলে ভারতের জন্য এটি ক্ষোভের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র দিল্লির ওপর বড় অঙ্কের শুল্ক আরোপ করেছে এবং রাশিয়া থেকে সস্তা তেল কেনা নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বিপরীতে, পাকিস্তান প্রতিনিয়ত যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।
পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র এই উষ্ণ সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। তিনি বর্তমানে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান। ৫৭ বছর বয়সী এই সেনা কর্মকর্তা শান্ত ও সংযত চরিত্রের বলে পরিচিত। গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চার দিনের সংঘাতে আসিম মুনির আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন। সে সময় উভয় দেশের বেশ কয়েকজন সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। পরিস্থিতি একসময় পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে গড়াচ্ছিল।
এই অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। সংঘাত থামলে ট্রাম্প নিজের কৃতিত্ব দাবি করেন, আর পাকিস্তান তা প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়। এরপরই ইসলামাবাদ ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দেয়। অন্যদিকে, ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে, যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই।
এ ছাড়া পাকিস্তান এই সংঘাতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাতটি জেট ভূপাতিতের দাবি করে, যা প্রকাশ্যে বারবার উল্লেখ করেন ট্রাম্প। ভারত এই সংখ্যা কখনোই নিশ্চিত করেনি এবং প্রাথমিকভাবে তাদের কোনো জেট ভূপাতিত হওয়ার কথা অস্বীকার করেছিল।
এর কিছুদিন পর আসিম মুনির ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদে উন্নীত হন এবং একা ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে দুপুরের খাবার খান। সেখানে কোনো বেসামরিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না।
ওয়াশিংটনভিত্তিক লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুজা নওয়াজ বলেন, ট্রাম্প ‘জয়ীদের’ পছন্দ করেন। তিনি সব সময় বলেছেন যে...তিনি পরাজিতদের পছন্দ করেন না। তাই তিনি স্পষ্টতই ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের মধ্যে একজন বিজয়ীকে দেখেছেন, যিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ইচ্ছুক...ট্রাম্প যখন যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখন নিশ্চয়ই তাঁরা একই পথে ছিলেন।
পাকিস্তান কেন ট্রাম্পের কাছে গুরুত্বপূর্ণ
এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সুবিধা পাচ্ছে। কারণ, তাদের ভৌগোলিক অবস্থান।’ কুগেলম্যান ইসলামাবাদ ও ইরানের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য পাকিস্তান এমন একটি দেশ, ‘যা ওয়াশিংটন থেকে তেহরানে বার্তা পৌঁছানোর ভূমিকা পালন করতে পারে।’
তবে কঠিন আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করার ইতিহাস পাকিস্তানের রয়েছে। ১৯৭১ সালে তারা ইসলামাবাদ থেকে বেইজিংয়ে হেনরি কিসিঞ্জারের গোপন সফরের ব্যবস্থা করেছিল, যার ফলে মাও সে-তুংয়ের কমিউনিস্ট চীনের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়।
কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় তাস হলো দুর্লভ খনিজ সম্পদ। চীনের নিয়ন্ত্রণে নেই এমন এই খনিজ সম্পদগুলো আইফোন থেকে শুরু করে এমআরআই মেশিন, এমনকি সবচেয়ে উন্নত যুদ্ধবিমান এবং সামরিক অস্ত্রশস্ত্রের জন্য প্রয়োজন।
বর্তমানে ১৭ ধরনের খনিজ পদার্থের বৈশ্বিক সরবরাহে চীনের প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে; বিশেষ করে প্রক্রিয়াকরণ ও পরিশোধনের ক্ষেত্রে তাদের কর্তৃত্ব রয়েছে। শুল্ক, প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বিরোধ চলার কারণে বেইজিং এই সুবিধা কাজে লাগাতে চাইছে।
পাকিস্তান সরকারের হিসাবে, দেশটির ভূমির নিচে প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের অপ্রাপ্ত খনিজ সম্পদ রয়েছে। তাই ইসলামাবাদ নিজেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ খনিজের নতুন কেন্দ্র’ হিসেবে তুলে ধরছে এবং এ কারণেই ট্রাম্প প্রশাসনের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে ওভাল অফিসের বৈঠকে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায়, জেনারেল মুনির গর্বের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পাকিস্তানের খনিজ পদার্থের নমুনাখচিত একটি কাঠের বাক্স উপহার দিচ্ছেন।
একই মাসে ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস কোম্পানি (ইউএসএসএম) সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এরপর পাকিস্তানের বিরল খনিজ পদার্থ প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। এই চুক্তির অংশ হিসেবে পাকিস্তান ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে খনিজ পদার্থের প্রথম চালান পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। চালানের পরিমাণ নির্দিষ্ট না করলেও জানা গেছে, এতে অ্যান্টিমনি, কপার কনসেন্ট্রেট, নিওডিমিয়াম, প্রাসেওডিমিয়ামসহ দুর্লভ খনিজ উপাদান রয়েছে।
পাকিস্তানের বেশির ভাগ দুর্লভ খনিজ বেলুচিস্তান প্রদেশে রয়েছে বলে মনে করা হয়। রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের দাবিতে এই কৌশলগত ও খনিজসমৃদ্ধ অঞ্চলটিতে বছরের পর বছর ধরে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ চলছে।
গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের অভিযোগ, এই গোষ্ঠীকে ভারত অর্থায়ন করে আসছে। পরের মাসেই পাকিস্তানে র্যাথিয়ন অ্যাডভান্স মিডিয়াম রেঞ্জ এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল বিক্রির অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
কেউ কেউ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার ক্ষেত্রে মুনিরের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পাকিস্তানের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে সামরিক বাহিনীর প্রভাব নিয়ে পুরোনো উদ্বেগগুলোকে আবার সামনে এনেছে।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান চারজন ভিন্ন সামরিক শাসকের নেতৃত্বে ছিল এবং তিনটি অভ্যুত্থান দেখেছে। ১৯৭৩ সালে বর্তমান সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর থেকে কোনো প্রধানমন্ত্রীই পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।
মুনিরের সমালোচকেরা বলেন, তিনি সামরিক বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছেন। সরকারি সিদ্ধান্ত এবং এমনকি সুপ্রিম কোর্টের ওপরও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছেন।
গত মাসে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে বলেছে, রাষ্ট্রটি ‘বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নমত ও সমালোচনা, বিশেষ করে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সমালোচনা করার জন্য স্থানীয় অধিকারকর্মী এবং বিরোধী দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।’
এ ছাড়া ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস কোম্পানির (ইউএসএসএম) সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির পাকিস্তানি অংশীদার হলো সামরিক মালিকানাধীন ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন। অর্থাৎ মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি সফল হলে লাভের বড় অংশও যাবে সামরিক বাহিনীর হাতে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে জানতে চাইলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ যৌথ স্বার্থের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। এর বাইরে কিছু নেই।’
তবে বিশ্লেষকেরা বলেছেন, এই উষ্ণ সম্পর্কেরও একটি সীমা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেন হাক্কানি বলেন, ‘এই সম্পর্ক সব সময় ট্রাম্পের মর্জির ওপর নির্ভর করবে। ট্রাম্পের সম্পর্ক পাকিস্তানের প্রতি নয়, বরং প্রশংসার প্রতি। পাকিস্তান তাঁকে ভালোবাসে, আর এ জন্যই তিনিও পাকিস্তানকে ভালোবাসছেন।’
তাই ধারণা করা হচ্ছে, এই সম্পর্ক কত দিন টিকে থাকবে, তা নির্ভর করবে হোয়াইট হাউসে বসা ট্রাম্পের মনোভাবের ওপর। কারণ, ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি সব সময় অনিশ্চিত।
গাজা যুদ্ধবিরতির পর গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বিশ্বনেতাদের সামনে নিজের সাফল্য তুলে ধরছিলেন, তখন তিনি পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিজের ‘প্রিয় ফিল্ড মার্শাল’ বলে সম্বোধন করেন। এরপর মঞ্চ ছেড়ে দেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে, যিনি ট্রাম্পের উদ্যোগের প্রশংসা করে ঘোষণা দেন, তিনি ট্রাম্পকে আবারও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেবেন।
এক বছর আগেও এমন দৃশ্য কল্পনা করা কঠিন ছিল। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকাভুক্ত ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে পাকিস্তানের কথিত সম্পর্কের কারণে ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছিল। তা ছাড়া চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়াটাও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ছিল এক অস্বস্তির কারণ।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুরো মেয়াদে কোনো পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেননি। এমনকি ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর তিনি পাকিস্তানকে বলেছিলেন ‘বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর একটি’।
কিন্তু ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি যেন উল্টোপাল্টা এক দাবার ছক, যেখানে পুরোনো মিত্ররা দূরে সরে যাচ্ছে, আর আগে যাদের ‘শত্রু’ ভাবা হতো, তারাই এখন হোয়াইট হাউসে জায়গা পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান একেবারে আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে।
পাকিস্তানের নেতারা এখন প্রায়ই হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রিত হচ্ছেন। দেশটির সামরিক বাহিনী পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি র্যাথিয়ন ক্ষেপণাস্ত্র। বাণিজ্যে তারা পেয়েছে প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় কম শুল্কের সুবিধা।
এই কূটনৈতিক সাফল্যের পেছনে রয়েছে দুটি মূল উপাদান। প্রথমত, চীনের নিয়ন্ত্রণে না থাকা দুর্লভ খনিজে প্রবেশাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের প্রশংসা।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের এই সম্পর্ক দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতেও বেশ সাড়া ফেলেছে। ফলে ভারতের জন্য এটি ক্ষোভের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র দিল্লির ওপর বড় অঙ্কের শুল্ক আরোপ করেছে এবং রাশিয়া থেকে সস্তা তেল কেনা নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বিপরীতে, পাকিস্তান প্রতিনিয়ত যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।
পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র এই উষ্ণ সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির। তিনি বর্তমানে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ও গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান। ৫৭ বছর বয়সী এই সেনা কর্মকর্তা শান্ত ও সংযত চরিত্রের বলে পরিচিত। গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে চার দিনের সংঘাতে আসিম মুনির আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন। সে সময় উভয় দেশের বেশ কয়েকজন সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। পরিস্থিতি একসময় পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে গড়াচ্ছিল।
এই অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। সংঘাত থামলে ট্রাম্প নিজের কৃতিত্ব দাবি করেন, আর পাকিস্তান তা প্রকাশ্যে সমর্থন দেয়। এরপরই ইসলামাবাদ ট্রাম্পকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দেয়। অন্যদিকে, ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলে, যুদ্ধবিরতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই।
এ ছাড়া পাকিস্তান এই সংঘাতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাতটি জেট ভূপাতিতের দাবি করে, যা প্রকাশ্যে বারবার উল্লেখ করেন ট্রাম্প। ভারত এই সংখ্যা কখনোই নিশ্চিত করেনি এবং প্রাথমিকভাবে তাদের কোনো জেট ভূপাতিত হওয়ার কথা অস্বীকার করেছিল।
এর কিছুদিন পর আসিম মুনির ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদে উন্নীত হন এবং একা ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে দুপুরের খাবার খান। সেখানে কোনো বেসামরিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন না।
ওয়াশিংটনভিত্তিক লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুজা নওয়াজ বলেন, ট্রাম্প ‘জয়ীদের’ পছন্দ করেন। তিনি সব সময় বলেছেন যে...তিনি পরাজিতদের পছন্দ করেন না। তাই তিনি স্পষ্টতই ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের মধ্যে একজন বিজয়ীকে দেখেছেন, যিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ইচ্ছুক...ট্রাম্প যখন যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখন নিশ্চয়ই তাঁরা একই পথে ছিলেন।
পাকিস্তান কেন ট্রাম্পের কাছে গুরুত্বপূর্ণ
এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সুবিধা পাচ্ছে। কারণ, তাদের ভৌগোলিক অবস্থান।’ কুগেলম্যান ইসলামাবাদ ও ইরানের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য পাকিস্তান এমন একটি দেশ, ‘যা ওয়াশিংটন থেকে তেহরানে বার্তা পৌঁছানোর ভূমিকা পালন করতে পারে।’
তবে কঠিন আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করার ইতিহাস পাকিস্তানের রয়েছে। ১৯৭১ সালে তারা ইসলামাবাদ থেকে বেইজিংয়ে হেনরি কিসিঞ্জারের গোপন সফরের ব্যবস্থা করেছিল, যার ফলে মাও সে-তুংয়ের কমিউনিস্ট চীনের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়।
কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় তাস হলো দুর্লভ খনিজ সম্পদ। চীনের নিয়ন্ত্রণে নেই এমন এই খনিজ সম্পদগুলো আইফোন থেকে শুরু করে এমআরআই মেশিন, এমনকি সবচেয়ে উন্নত যুদ্ধবিমান এবং সামরিক অস্ত্রশস্ত্রের জন্য প্রয়োজন।
বর্তমানে ১৭ ধরনের খনিজ পদার্থের বৈশ্বিক সরবরাহে চীনের প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে; বিশেষ করে প্রক্রিয়াকরণ ও পরিশোধনের ক্ষেত্রে তাদের কর্তৃত্ব রয়েছে। শুল্ক, প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বিরোধ চলার কারণে বেইজিং এই সুবিধা কাজে লাগাতে চাইছে।
পাকিস্তান সরকারের হিসাবে, দেশটির ভূমির নিচে প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলারের অপ্রাপ্ত খনিজ সম্পদ রয়েছে। তাই ইসলামাবাদ নিজেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ খনিজের নতুন কেন্দ্র’ হিসেবে তুলে ধরছে এবং এ কারণেই ট্রাম্প প্রশাসনের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে ওভাল অফিসের বৈঠকে প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায়, জেনারেল মুনির গর্বের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পাকিস্তানের খনিজ পদার্থের নমুনাখচিত একটি কাঠের বাক্স উপহার দিচ্ছেন।
একই মাসে ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস কোম্পানি (ইউএসএসএম) সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এরপর পাকিস্তানের বিরল খনিজ পদার্থ প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। এই চুক্তির অংশ হিসেবে পাকিস্তান ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে খনিজ পদার্থের প্রথম চালান পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। চালানের পরিমাণ নির্দিষ্ট না করলেও জানা গেছে, এতে অ্যান্টিমনি, কপার কনসেন্ট্রেট, নিওডিমিয়াম, প্রাসেওডিমিয়ামসহ দুর্লভ খনিজ উপাদান রয়েছে।
পাকিস্তানের বেশির ভাগ দুর্লভ খনিজ বেলুচিস্তান প্রদেশে রয়েছে বলে মনে করা হয়। রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের দাবিতে এই কৌশলগত ও খনিজসমৃদ্ধ অঞ্চলটিতে বছরের পর বছর ধরে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহ চলছে।
গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মিকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে। দীর্ঘদিন ধরে পাকিস্তানের অভিযোগ, এই গোষ্ঠীকে ভারত অর্থায়ন করে আসছে। পরের মাসেই পাকিস্তানে র্যাথিয়ন অ্যাডভান্স মিডিয়াম রেঞ্জ এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল বিক্রির অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
কেউ কেউ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার ক্ষেত্রে মুনিরের এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পাকিস্তানের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে সামরিক বাহিনীর প্রভাব নিয়ে পুরোনো উদ্বেগগুলোকে আবার সামনে এনেছে।
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তান চারজন ভিন্ন সামরিক শাসকের নেতৃত্বে ছিল এবং তিনটি অভ্যুত্থান দেখেছে। ১৯৭৩ সালে বর্তমান সংবিধান কার্যকর হওয়ার পর থেকে কোনো প্রধানমন্ত্রীই পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।
মুনিরের সমালোচকেরা বলেন, তিনি সামরিক বাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছেন। সরকারি সিদ্ধান্ত এবং এমনকি সুপ্রিম কোর্টের ওপরও উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছেন।
গত মাসে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে বলেছে, রাষ্ট্রটি ‘বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নমত ও সমালোচনা, বিশেষ করে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সমালোচনা করার জন্য স্থানীয় অধিকারকর্মী এবং বিরোধী দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।’
এ ছাড়া ইউএস স্ট্র্যাটেজিক মেটালস কোম্পানির (ইউএসএসএম) সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির পাকিস্তানি অংশীদার হলো সামরিক মালিকানাধীন ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন। অর্থাৎ মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি সফল হলে লাভের বড় অংশও যাবে সামরিক বাহিনীর হাতে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে জানতে চাইলে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতাসহ যৌথ স্বার্থের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। এর বাইরে কিছু নেই।’
তবে বিশ্লেষকেরা বলেছেন, এই উষ্ণ সম্পর্কেরও একটি সীমা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসেন হাক্কানি বলেন, ‘এই সম্পর্ক সব সময় ট্রাম্পের মর্জির ওপর নির্ভর করবে। ট্রাম্পের সম্পর্ক পাকিস্তানের প্রতি নয়, বরং প্রশংসার প্রতি। পাকিস্তান তাঁকে ভালোবাসে, আর এ জন্যই তিনিও পাকিস্তানকে ভালোবাসছেন।’
তাই ধারণা করা হচ্ছে, এই সম্পর্ক কত দিন টিকে থাকবে, তা নির্ভর করবে হোয়াইট হাউসে বসা ট্রাম্পের মনোভাবের ওপর। কারণ, ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি সব সময় অনিশ্চিত।
মাস্কের প্রভাব–প্রতিপত্তি যেন কোনো ধরনের জবাবদিহির বাইরে। তাঁর প্রতাপ ওয়াশিংটনের প্রভাবশালী মহলে স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি করেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সব বিষয়ে তাঁর প্রভাব বিস্তৃত এবং অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত।
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে।
৬ ঘণ্টা আগেগাজায় স্থল অভিযানের শুরু থেকে ইসরায়েল জোর দিয়ে বলেছে, তারা ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’। টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে অবিরাম বিমান হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর সময়ও একই অবস্থান ছিল নেতানিয়াহুর সরকারের। এমনকি গত সপ্তাহে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষরের পরও একই কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
৮ ঘণ্টা আগেভারতে আজকাল দিন শুরু হয় দুই ধরনের সংবাদ দিয়ে: একদিকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায়—পাকিস্তানবিরোধী বিতর্ক, হিন্দুদের গৌরবগাথা আর নতুন ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা; অন্যদিকে অন্ধকার এক বাস্তবতা—প্রতিদিন কোথাও না কোথাও কোনো মুসলমান নিগৃহীত হচ্ছে, পিটিয়ে মারা হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় বন্দী করা হচ্ছে, অথবা দেশদ্রোহী..
১৪ ঘণ্টা আগে