অনলাইন ডেস্ক
চলতি বছর জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক মাস না যেতেই হোয়াইট হাউসে নিমন্ত্রণ জানান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে। দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বিদেশি নেতা হিসেবে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রিত হন নেতানিয়াহু। সে সময় এক যৌথ বিবৃতিতে গাজা দখলের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র সেখানে রিভেরা (দৃষ্টিনন্দন নগর) বানাবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্য ছিল আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, যেকোনো মূল্যে ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বহুদিনের প্রকাশ্য কূটনৈতিক অবস্থানকেও একপ্রকার অগ্রাহ্য করা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এর জেরে গাজায় সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মহলে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্ক। ডেমোক্র্যাটদের আমলে গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইসরায়েলকে ১৮ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সহায়তা দেওয়া হয়েছে—যা মার্কিন ইতিহাসে নজিরবিহীন। গাজার নিরস্ত্র মানুষদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যেতে যুক্তরাষ্ট্রের এই ঢালাও সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠেন মার্কিনেরাও। ইসরায়েলকে ঢালাও সহায়তা দেওয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ‘জেনোসাইড জো’ বলে অভিহিত করেন তাঁরা।
বাইডেনের এই সমর্থন ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদেও অব্যাহত। বরং বাইডেনের তুলনায় আরও এক ধাপ এগিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট। ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারী বিদেশি শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে বিতাড়িত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। বিক্ষোভ দমনে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ এনে হার্ভার্ড, কলাম্বিয়ার মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তহবিল স্থগিত করে চলেছেন। বিক্ষোভকারীদের চরমপন্থী বাম ও উন্মাদ আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
তবে সরকারি পর্যায়ে ইসরায়েল প্রশ্নে অবস্থানের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না হলেও মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। জনমত জরিপে দেখা গেছে, ইসরায়েলের জনপ্রিয়তা নেমে গেছে কয়েক ধাপ। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর দূরত্বও নাকি বেড়ে গেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য সফরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করেছেন তিনি। ইরান, গাজা, সিরিয়া ও ইয়েমেনের ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। কিন্তু পুরো সফরে তিনি নেতানিয়াহুকে এড়িয়ে গেছেন।
গ্যালাপের এক জরিপে দেখা গেছে, গত মার্চে মাত্র ৪৬ শতাংশ মার্কিন নাগরিকের সমর্থন পেয়েছে ইসরায়েল, যা গত ২৫ বছরে সর্বনিম্ন। একই সময়ে পিউ রিসার্চের এক জরিপে উঠে এসেছে, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে ৩৩ শতাংশ মার্কিন নাগরিক, যা ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই পরিবর্তন অনেকটা তরুণ ভোটার ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে বেশি হলেও রিপাবলিকানদের মনোভাবেও পরিবর্তন আসছে। ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৯ বছরের কম বয়সী রিপাবলিকানদের মধ্যে ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব ২৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৭ শতাংশে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি সমর্থনের সূচনা ইসরায়েলের জন্মলগ্নেই—১৯৪৮ সালে। যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম দেশ হিসেবে নবগঠিত ইসরায়েলকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এই সম্পর্কের ভিত্তি একক সিদ্ধান্তে গড়ে ওঠেনি। তখন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যানের প্রশাসনে তীব্র বিভাজন চলছিল। সিআইএ ও স্টেট ডিপার্টমেন্ট ইহুদি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিপক্ষে পরামর্শ দেয়, কারণ এতে আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি ছিল। এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ মার্শাল প্রেসিডেন্টকে হুমকি দেন, যদি তিনি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেন, তাহলে ট্রুম্যানকে ভোট দেবেন না। তবু ১৯৪৮ সালের ১৪ মে যখন ডেভিড বেন-গুরিয়ন ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, ঠিক তার দুই ঘণ্টার মধ্যেই ট্রুম্যান ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেন।
ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন ইতিহাসবিদ রশিদ খালিদি বলেন, ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের শিকড় সংস্কৃতি ও যোগাযোগে নিহিত ছিল। আরবদের কাছে মার্কিন জনমতকে বোঝার মতো কাঠামো বা যোগাযোগের মাধ্যম ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানকে জনপ্রিয় করে তোলে সাহিত্য ও গণমাধ্যম—বিশেষ করে ১৯৫৮ সালের উপন্যাস ও এর পরবর্তী সময়ে হলিউডে নির্মিত চলচ্চিত্রে ইসরায়েলের জন্মের গল্পকে রোমান্টিসাইজ (আবেগমথিত) করে উপস্থাপন করা হয়।
ইসরায়েলের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট মনে করতেন, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে নতুন মোড় নেয় এই সম্পর্ক। যুদ্ধে ইসরায়েল আরব দেশগুলোর সঙ্গে ছয় দিনের যুদ্ধে জয়ী হয় এবং ভূখণ্ড প্রায় তিনগুণ বাড়িয়ে ফেলে। এ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পারে, ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে এক কৌশলগত শক্তি। এরপর ইসরায়েল হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক সহায়তা প্রাপক। ইসরায়েলকে জাতিসংঘে কূটনৈতিক সহায়তা এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি উদ্যোগেও যুক্তরাষ্ট্র হয়ে ওঠে মূল মধ্যস্থতাকারী।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সম্পর্ক আর সরল থাকেনি। ২০২৩ সালে নেতানিয়াহুর বিচারব্যবস্থা সংস্কারের বিরোধিতায় ইসরায়েলের মধ্যেই গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। খোদ নেতানিয়াহু ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ইসরায়েলিরাও ফিলিস্তিনের সঙ্গে দুই রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে কথা বলতে শুরু করেন। এই ঘটনাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেও ইসরায়েল সম্পর্কে সন্দেহ ও উদ্বেগ তৈরি করে, বিশেষ করে তরুণ ও প্রগতিশীল ইহুদি মার্কিনদের মধ্যে।
তেল আবিবভিত্তিক থিংকট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ সম্প্রতি একটি গবেষণায় জানিয়েছে, মার্কিন জনমত এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় প্রবেশ করেছে। তাদের মতে, ইসরায়েলের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এই ঝুঁকি বাস্তবে পরিণত হলে ইসরায়েলের জন্য তা অত্যন্ত নেতিবাচক হবে।
প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের অধীনে অসলো শান্তি চুক্তির মধ্যস্থতাকারী ডেনিস রস মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েল সম্পর্কে মতপার্থক্য এখন দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ট্রাম্পের প্রতি ডেমোক্র্যাটদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও পড়ছে। রস বিশ্বাস করেন, যদি ইসরায়েল মধ্যপন্থী সরকার নিয়ে আসে, তবে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে সম্পর্ক আবারও ঘনিষ্ঠ হতে পারে।
ডেমোক্র্যাটদের ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই এখনো ঐতিহ্যগতভাবে ইসরায়েলপন্থী। যেমন, মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমার বা সাবেক ট্রান্সপোর্টেশন সেক্রেটারি পিট বুটিগিগ। তবে কংগ্রেসওম্যান আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজের মতো প্রগতিশীল রাজনীতিকদের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্সি এখনো রাজনৈতিক বাস্তবতায় দুরূহ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
জেক সুলিভান বলেন, এখন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক কেবল পররাষ্ট্রনীতির প্রশ্ন নয়, বরং দুটি দেশের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভবিষ্যতের প্রশ্ন। তিনি বলেন, আমেরিকা ও ইসরায়েলের গণতন্ত্র কোন পথে যাচ্ছে, সেটিই নির্ধারণ করবে দুই দেশের সম্পর্ক আগামী পাঁচ, দশ বা পনেরো বছরে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
এই মুহূর্তে কংগ্রেসে যদিও উভয় দলই ইসরায়েলপন্থী অবস্থান ধরে রেখেছে, কিন্তু জনমতের পরিবর্তন ভবিষ্যতের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই ‘বিশেষ সম্পর্ক’ যে আজ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই বলেই মনে করেন অনেকে।
চলতি বছর জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক মাস না যেতেই হোয়াইট হাউসে নিমন্ত্রণ জানান ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে। দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম বিদেশি নেতা হিসেবে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রিত হন নেতানিয়াহু। সে সময় এক যৌথ বিবৃতিতে গাজা দখলের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র সেখানে রিভেরা (দৃষ্টিনন্দন নগর) বানাবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্য ছিল আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, যেকোনো মূল্যে ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বহুদিনের প্রকাশ্য কূটনৈতিক অবস্থানকেও একপ্রকার অগ্রাহ্য করা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এর জেরে গাজায় সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মহলে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্ক। ডেমোক্র্যাটদের আমলে গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ইসরায়েলকে ১৮ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সহায়তা দেওয়া হয়েছে—যা মার্কিন ইতিহাসে নজিরবিহীন। গাজার নিরস্ত্র মানুষদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যেতে যুক্তরাষ্ট্রের এই ঢালাও সমর্থনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠেন মার্কিনেরাও। ইসরায়েলকে ঢালাও সহায়তা দেওয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ‘জেনোসাইড জো’ বলে অভিহিত করেন তাঁরা।
বাইডেনের এই সমর্থন ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদেও অব্যাহত। বরং বাইডেনের তুলনায় আরও এক ধাপ এগিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট। ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারী বিদেশি শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে বিতাড়িত করার পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। বিক্ষোভ দমনে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ এনে হার্ভার্ড, কলাম্বিয়ার মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তহবিল স্থগিত করে চলেছেন। বিক্ষোভকারীদের চরমপন্থী বাম ও উন্মাদ আখ্যা দিয়েছেন তিনি।
তবে সরকারি পর্যায়ে ইসরায়েল প্রশ্নে অবস্থানের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না হলেও মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। জনমত জরিপে দেখা গেছে, ইসরায়েলের জনপ্রিয়তা নেমে গেছে কয়েক ধাপ। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর দূরত্বও নাকি বেড়ে গেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য সফরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করেছেন তিনি। ইরান, গাজা, সিরিয়া ও ইয়েমেনের ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছেন। কিন্তু পুরো সফরে তিনি নেতানিয়াহুকে এড়িয়ে গেছেন।
গ্যালাপের এক জরিপে দেখা গেছে, গত মার্চে মাত্র ৪৬ শতাংশ মার্কিন নাগরিকের সমর্থন পেয়েছে ইসরায়েল, যা গত ২৫ বছরে সর্বনিম্ন। একই সময়ে পিউ রিসার্চের এক জরিপে উঠে এসেছে, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে ৩৩ শতাংশ মার্কিন নাগরিক, যা ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই পরিবর্তন অনেকটা তরুণ ভোটার ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে বেশি হলেও রিপাবলিকানদের মনোভাবেও পরিবর্তন আসছে। ২০২২ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৯ বছরের কম বয়সী রিপাবলিকানদের মধ্যে ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব ২৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৭ শতাংশে পৌঁছেছে।
ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি সমর্থনের সূচনা ইসরায়েলের জন্মলগ্নেই—১৯৪৮ সালে। যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম দেশ হিসেবে নবগঠিত ইসরায়েলকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু এই সম্পর্কের ভিত্তি একক সিদ্ধান্তে গড়ে ওঠেনি। তখন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যানের প্রশাসনে তীব্র বিভাজন চলছিল। সিআইএ ও স্টেট ডিপার্টমেন্ট ইহুদি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিপক্ষে পরামর্শ দেয়, কারণ এতে আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি ছিল। এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ মার্শাল প্রেসিডেন্টকে হুমকি দেন, যদি তিনি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেন, তাহলে ট্রুম্যানকে ভোট দেবেন না। তবু ১৯৪৮ সালের ১৪ মে যখন ডেভিড বেন-গুরিয়ন ইসরায়েলের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, ঠিক তার দুই ঘণ্টার মধ্যেই ট্রুম্যান ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেন।
ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন ইতিহাসবিদ রশিদ খালিদি বলেন, ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের শিকড় সংস্কৃতি ও যোগাযোগে নিহিত ছিল। আরবদের কাছে মার্কিন জনমতকে বোঝার মতো কাঠামো বা যোগাযোগের মাধ্যম ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানকে জনপ্রিয় করে তোলে সাহিত্য ও গণমাধ্যম—বিশেষ করে ১৯৫৮ সালের উপন্যাস ও এর পরবর্তী সময়ে হলিউডে নির্মিত চলচ্চিত্রে ইসরায়েলের জন্মের গল্পকে রোমান্টিসাইজ (আবেগমথিত) করে উপস্থাপন করা হয়।
ইসরায়েলের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট মনে করতেন, ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে নতুন মোড় নেয় এই সম্পর্ক। যুদ্ধে ইসরায়েল আরব দেশগুলোর সঙ্গে ছয় দিনের যুদ্ধে জয়ী হয় এবং ভূখণ্ড প্রায় তিনগুণ বাড়িয়ে ফেলে। এ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পারে, ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে এক কৌশলগত শক্তি। এরপর ইসরায়েল হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক সহায়তা প্রাপক। ইসরায়েলকে জাতিসংঘে কূটনৈতিক সহায়তা এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি উদ্যোগেও যুক্তরাষ্ট্র হয়ে ওঠে মূল মধ্যস্থতাকারী।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সম্পর্ক আর সরল থাকেনি। ২০২৩ সালে নেতানিয়াহুর বিচারব্যবস্থা সংস্কারের বিরোধিতায় ইসরায়েলের মধ্যেই গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। খোদ নেতানিয়াহু ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ইসরায়েলিরাও ফিলিস্তিনের সঙ্গে দুই রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে কথা বলতে শুরু করেন। এই ঘটনাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেও ইসরায়েল সম্পর্কে সন্দেহ ও উদ্বেগ তৈরি করে, বিশেষ করে তরুণ ও প্রগতিশীল ইহুদি মার্কিনদের মধ্যে।
তেল আবিবভিত্তিক থিংকট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ সম্প্রতি একটি গবেষণায় জানিয়েছে, মার্কিন জনমত এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় প্রবেশ করেছে। তাদের মতে, ইসরায়েলের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এই ঝুঁকি বাস্তবে পরিণত হলে ইসরায়েলের জন্য তা অত্যন্ত নেতিবাচক হবে।
প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের অধীনে অসলো শান্তি চুক্তির মধ্যস্থতাকারী ডেনিস রস মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েল সম্পর্কে মতপার্থক্য এখন দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ট্রাম্পের প্রতি ডেমোক্র্যাটদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও পড়ছে। রস বিশ্বাস করেন, যদি ইসরায়েল মধ্যপন্থী সরকার নিয়ে আসে, তবে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে সম্পর্ক আবারও ঘনিষ্ঠ হতে পারে।
ডেমোক্র্যাটদের ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই এখনো ঐতিহ্যগতভাবে ইসরায়েলপন্থী। যেমন, মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমার বা সাবেক ট্রান্সপোর্টেশন সেক্রেটারি পিট বুটিগিগ। তবে কংগ্রেসওম্যান আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজের মতো প্রগতিশীল রাজনীতিকদের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্সি এখনো রাজনৈতিক বাস্তবতায় দুরূহ বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
জেক সুলিভান বলেন, এখন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক কেবল পররাষ্ট্রনীতির প্রশ্ন নয়, বরং দুটি দেশের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভবিষ্যতের প্রশ্ন। তিনি বলেন, আমেরিকা ও ইসরায়েলের গণতন্ত্র কোন পথে যাচ্ছে, সেটিই নির্ধারণ করবে দুই দেশের সম্পর্ক আগামী পাঁচ, দশ বা পনেরো বছরে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
এই মুহূর্তে কংগ্রেসে যদিও উভয় দলই ইসরায়েলপন্থী অবস্থান ধরে রেখেছে, কিন্তু জনমতের পরিবর্তন ভবিষ্যতের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই ‘বিশেষ সম্পর্ক’ যে আজ এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে, তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই বলেই মনে করেন অনেকে।
এর মধ্যেই সম্প্রতি মার্কিন কংগ্রেসের একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন করছাড় বিল অনুমোদন করেছে। এই বিলটি ২০১৭ সালে করা ট্রাম্পের করছাড়কে আরও দীর্ঘায়িত করবে এবং জাতীয় ঋণে আরও ৫ ট্রিলিয়ন ডলার যুক্ত করতে পারে।
৩ ঘণ্টা আগেসেনাবাহিনীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে এই আমূল পরিবর্তনের পেছনে ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’। ভারতের আকস্মিক হামলা রুখে দিয়েই মূলত পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মন পেয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। চার দিনের সংঘাতের পর তাই তাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে সশস্ত্র বাহিনী।
১১ ঘণ্টা আগেচীনের জায়গা দখল করে বিশ্বজুড়ে পণ্য তৈরির কেন্দ্র হয়ে ওঠার বড় একটা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল ভারত। সেই স্বপ্ন আরও বাস্তব মনে হচ্ছিল, যখন প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল ঘোষণা দেয়—তারা আমেরিকায় বিক্রির জন্য আইফোনগুলো এখন থেকে ভারতেই তৈরি করবে।
১ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর ব্যবহারে বিধিনিষেধ আসায় রপ্তানিকারকদের অনেকটা পথ ঘুরে ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে পণ্য পাঠাতে হবে। এতে সময় লেগে যাবে ৮ থেকে ১০ দিন। কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের রপ্তানি ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি পণ্য নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, এতে অনানুষ্ঠানিক বাণিজ্য বেড়ে যাবে...
২ দিন আগে