মারুফ ইসলাম

চীন কী শেষ পর্যন্ত তাইওয়ানে আক্রমণ করেই বসবে? গত পরশু মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে পা রাখার পর থেকে চীন যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তাতে এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এরই মধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে বেইজিং। তাইওয়ান থেকে বেশ কয়েকটি কৃষিপণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে তাইওয়ানের চারপাশ ঘিরে ‘নজিরবিহীন’ সামরিক মহড়া শুরু করেছে। তাইওয়ানের জলসীমা ও আকাশসীমা কার্যত অবরোধ করে ফেলেছে চীন।
এমন সব আয়োজন দেখে মনে শঙ্কা জাগাই স্বাভাবিক, চীন কী তাইওয়ানে আক্রমণ করেই বসবে? আরও সম্পূরক যে প্রশ্ন আসে মনে, তাইওয়ান নিয়ে চীনের এত আগ্রহ কেন? তার আগে জানা প্রয়োজন, তাইওয়ান নামের দেশটি আসলে কোথায়।
মানচিত্রে তাইওয়ান
চীনের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের উপকূল থেকে প্রায় ১০০ মাইল দূরের দেশ তাইওয়ান। এটি একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। তাইওয়ান ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রগুলোর মধ্যে একটি।
অন্যদিকে চীন দাবি করে, তাইওয়ান তাদের নিজেদের ভূখণ্ড। এটিকে নিজেদের কবজায় নিতে চীন সব সময়ই চেষ্টা করে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে তাইওয়ানের প্রধান রক্ষক হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
কেন চায় না, তার পেছনে একাধিক কারণ আছে বটে। চীন যদি তাইওয়ান দখল করে নেয়, তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য শিরে সংক্রান্তি হয়ে দেখা দেবে। গুয়াম দ্বীপ ও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো হুমকির মুখে পড়বে। তাইওয়ানকে চীন থেকে আলাদা রাখা তাই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য জরুরি।
তাইওয়ান কি সব সময় চীন থেকে আলাদা ছিল?
ইতিহাস বলছে, সতেরো শতকের দিকে তাইওয়ান প্রথম চীনের নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর ১৮৯৫ সালের যুদ্ধে জাপানের কাছে হেরে যায় চীন এবং জাপানের কাছে দ্বীপটি ছেড়ে দেয়।
এরপর ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান হেরে যাওয়ার পর চীন আবার দ্বীপটি দখল করে নেয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চীনে কয়েক বছর গৃহযুদ্ধ ছিল। ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টি বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণে নিলে চীনের জাতীয়তাবাদী দলের নেতারা তাইওয়ানে পালিয়ে যান। পরবর্তী কয়েক দশক তাঁরা তাইওয়ান শাসন করেছিলেন।
এই ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করেই চীন দাবি করে যে, তাইওয়ান মূলত চীনা প্রদেশ ছিল। অন্যদিকে তাইওয়ানও একই ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করে বলে, আধুনিক চীন রাষ্ট্র, যেটি ১৯৪৯ সালে মাও সেতুংয়ের হাতে গঠিত হয়েছিল, সেই রাষ্ট্রের কখনোই অংশ ছিল না তাইওয়ান। কিংবা ১৯১১ সালের বিপ্লবের পর স্বাধীন হয়েছিল যে তাইওয়ান, সেটিও কখনোই চীন রাষ্ট্রের অংশ ছিল না।
তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করলেও এখন পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র ১৩টি দেশ তাইওয়ানকে সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। চীন এখন অবধি তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেয়নি। ফলে চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের একটি বৈরী সম্পর্ক চলছে। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ৪০ বছর ধরেই ভীষণ খারাপ।’
সেই খারাপ অবস্থা গত কয়েক দিন ধরে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, যেকোনো মুহূর্তে তাইওয়ানে হামলা করে বসতে পারে চীন।
তাইওয়ান কি নিজেকে রক্ষা করতে পারবে
চীন যদি তাইওয়ানে আক্রমণ করেই বসে, তাইওয়ান কি নিজেকে রক্ষা করতে পারবে? চীনের যে শক্তি সামর্থ্য, তাতে তাইওয়ানের সেনাদের প্রতিহত করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না। কারণ চীন প্রতিরক্ষা খাতে শুধু যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি ব্যয় করে থাকে। দেশটি নৌবহর থেকে শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, উন্নত প্রযুক্তি ও সাইবার হামলার দিক থেকেও কয়েক গুণ এগিয়ে আছে। চীন ও তাইওয়ানের সামরিক সক্ষমতার ব্যবধান বিশাল।
চীনের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে তাইওয়ানকে তাই অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চাইতে হবে। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কি সরাসরি তাইওয়ানের পাশে দাঁড়াতে পারবে?
কূটনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ‘এক চীন’ নীতির সমর্থক। আনুষ্ঠানিকভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক রয়েছে। বরং তাইওয়ানের সঙ্গেই ওয়াশিংটনের সম্পর্ক অনানুষ্ঠানিক। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র হয়তো দ্ব্যর্থহীনভাবেই তাইওয়ানের পাশে দাঁড়াবে। গত মে মাসে সাংবাদিকেরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তাইওয়ানকে যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে সহায়তা করবে কি না? জবাবে বাইডেন বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ। ওয়াশিংটন তার অবস্থান পরিবর্তন করেনি।’
শেষ পর্যন্ত কী হতে পারে
যুক্তরাষ্ট্রের জার্মান মার্শাল ফান্ডের এশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক বনি গ্লেসার মনে করেন, চীন তাইওয়ানে হামলা করবে—এমন সম্ভাবনা নেই। চীন যতই হম্বিতম্বি করুক, তার নিজের সামর্থ্যের কিছু ঘাটতি এখনো আছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থেকেও চীন শিক্ষা নেবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। স্থলে যুদ্ধ করার চেয়ে জলে যুদ্ধ করা অবশ্যই অধিকতর কঠিন। তাইওয়ানের প্রায় ১০০ মাইলজুড়ে জলসীমায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া অবশ্যই কঠিন হবে।
ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে তাইওয়ানের জনগণও শিক্ষা নেবেন বলে মনে করেন বনি গ্লেসার। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনীয়রা যেভাবে নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষায় প্রাণপণ লড়াই করছে, তাইওয়ানের জনগণও তেমনি মরিয়া হয়ে লড়াই করবে।’
সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিলিপস ও’ব্রায়েন ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য স্পেকটেটরে লিখেছেন, তাইওয়ানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ানো সব পক্ষের জন্যই ধ্বংসাত্মক। সুতরাং যারাই তাইওয়ানে সেনা পাঠাতে চান না কেন, তাদের সাবধানে ভেবেচিন্তে পা ফেলা উচিত।
ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে বিশ্ব মোড়লদের সত্যিই শিক্ষা নেওয়া উচিত। কারণ যুদ্ধ সব সময়ই অপ্রত্যাশিত। অধ্যাপক ফিলিপস বলেছেন, ‘আপনার প্রতিপক্ষকে কখনোই ছোট করে দেখবেন না। ভাববেন না যে আপনার সিস্টেম সব সময়ই ভালোভাবে কাজ করবে।’
সুতরাং চীন শেষ পর্যন্ত তাইওয়ানে আক্রমণ করবে কি না, যুক্তরাষ্ট্র এ দ্বন্দ্বে সরাসরি জড়িয়ে পড়বে কি না, এসব প্রশ্নের উত্তর আসলে সময়ের হাতে তোলা আছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, সিএনএন ও ইন্ডিয়া টাইমস

চীন কী শেষ পর্যন্ত তাইওয়ানে আক্রমণ করেই বসবে? গত পরশু মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে পা রাখার পর থেকে চীন যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তাতে এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এরই মধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে বেইজিং। তাইওয়ান থেকে বেশ কয়েকটি কৃষিপণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে তাইওয়ানের চারপাশ ঘিরে ‘নজিরবিহীন’ সামরিক মহড়া শুরু করেছে। তাইওয়ানের জলসীমা ও আকাশসীমা কার্যত অবরোধ করে ফেলেছে চীন।
এমন সব আয়োজন দেখে মনে শঙ্কা জাগাই স্বাভাবিক, চীন কী তাইওয়ানে আক্রমণ করেই বসবে? আরও সম্পূরক যে প্রশ্ন আসে মনে, তাইওয়ান নিয়ে চীনের এত আগ্রহ কেন? তার আগে জানা প্রয়োজন, তাইওয়ান নামের দেশটি আসলে কোথায়।
মানচিত্রে তাইওয়ান
চীনের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের উপকূল থেকে প্রায় ১০০ মাইল দূরের দেশ তাইওয়ান। এটি একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। তাইওয়ান ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রগুলোর মধ্যে একটি।
অন্যদিকে চীন দাবি করে, তাইওয়ান তাদের নিজেদের ভূখণ্ড। এটিকে নিজেদের কবজায় নিতে চীন সব সময়ই চেষ্টা করে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে তাইওয়ানের প্রধান রক্ষক হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
কেন চায় না, তার পেছনে একাধিক কারণ আছে বটে। চীন যদি তাইওয়ান দখল করে নেয়, তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য শিরে সংক্রান্তি হয়ে দেখা দেবে। গুয়াম দ্বীপ ও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো হুমকির মুখে পড়বে। তাইওয়ানকে চীন থেকে আলাদা রাখা তাই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য জরুরি।
তাইওয়ান কি সব সময় চীন থেকে আলাদা ছিল?
ইতিহাস বলছে, সতেরো শতকের দিকে তাইওয়ান প্রথম চীনের নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর ১৮৯৫ সালের যুদ্ধে জাপানের কাছে হেরে যায় চীন এবং জাপানের কাছে দ্বীপটি ছেড়ে দেয়।
এরপর ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান হেরে যাওয়ার পর চীন আবার দ্বীপটি দখল করে নেয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চীনে কয়েক বছর গৃহযুদ্ধ ছিল। ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টি বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণে নিলে চীনের জাতীয়তাবাদী দলের নেতারা তাইওয়ানে পালিয়ে যান। পরবর্তী কয়েক দশক তাঁরা তাইওয়ান শাসন করেছিলেন।
এই ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করেই চীন দাবি করে যে, তাইওয়ান মূলত চীনা প্রদেশ ছিল। অন্যদিকে তাইওয়ানও একই ইতিহাসের দিকে ইঙ্গিত করে বলে, আধুনিক চীন রাষ্ট্র, যেটি ১৯৪৯ সালে মাও সেতুংয়ের হাতে গঠিত হয়েছিল, সেই রাষ্ট্রের কখনোই অংশ ছিল না তাইওয়ান। কিংবা ১৯১১ সালের বিপ্লবের পর স্বাধীন হয়েছিল যে তাইওয়ান, সেটিও কখনোই চীন রাষ্ট্রের অংশ ছিল না।
তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করলেও এখন পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র ১৩টি দেশ তাইওয়ানকে সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। চীন এখন অবধি তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দেয়নি। ফলে চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের একটি বৈরী সম্পর্ক চলছে। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ৪০ বছর ধরেই ভীষণ খারাপ।’
সেই খারাপ অবস্থা গত কয়েক দিন ধরে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, যেকোনো মুহূর্তে তাইওয়ানে হামলা করে বসতে পারে চীন।
তাইওয়ান কি নিজেকে রক্ষা করতে পারবে
চীন যদি তাইওয়ানে আক্রমণ করেই বসে, তাইওয়ান কি নিজেকে রক্ষা করতে পারবে? চীনের যে শক্তি সামর্থ্য, তাতে তাইওয়ানের সেনাদের প্রতিহত করতে খুব একটা বেগ পেতে হবে না। কারণ চীন প্রতিরক্ষা খাতে শুধু যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি ব্যয় করে থাকে। দেশটি নৌবহর থেকে শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, উন্নত প্রযুক্তি ও সাইবার হামলার দিক থেকেও কয়েক গুণ এগিয়ে আছে। চীন ও তাইওয়ানের সামরিক সক্ষমতার ব্যবধান বিশাল।
চীনের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে তাইওয়ানকে তাই অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চাইতে হবে। সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কি সরাসরি তাইওয়ানের পাশে দাঁড়াতে পারবে?
কূটনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ‘এক চীন’ নীতির সমর্থক। আনুষ্ঠানিকভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক রয়েছে। বরং তাইওয়ানের সঙ্গেই ওয়াশিংটনের সম্পর্ক অনানুষ্ঠানিক। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র হয়তো দ্ব্যর্থহীনভাবেই তাইওয়ানের পাশে দাঁড়াবে। গত মে মাসে সাংবাদিকেরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তাইওয়ানকে যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে সহায়তা করবে কি না? জবাবে বাইডেন বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ। ওয়াশিংটন তার অবস্থান পরিবর্তন করেনি।’
শেষ পর্যন্ত কী হতে পারে
যুক্তরাষ্ট্রের জার্মান মার্শাল ফান্ডের এশিয়া প্রোগ্রামের পরিচালক বনি গ্লেসার মনে করেন, চীন তাইওয়ানে হামলা করবে—এমন সম্ভাবনা নেই। চীন যতই হম্বিতম্বি করুক, তার নিজের সামর্থ্যের কিছু ঘাটতি এখনো আছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থেকেও চীন শিক্ষা নেবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। স্থলে যুদ্ধ করার চেয়ে জলে যুদ্ধ করা অবশ্যই অধিকতর কঠিন। তাইওয়ানের প্রায় ১০০ মাইলজুড়ে জলসীমায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া অবশ্যই কঠিন হবে।
ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে তাইওয়ানের জনগণও শিক্ষা নেবেন বলে মনে করেন বনি গ্লেসার। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেনীয়রা যেভাবে নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষায় প্রাণপণ লড়াই করছে, তাইওয়ানের জনগণও তেমনি মরিয়া হয়ে লড়াই করবে।’
সেন্ট অ্যান্ড্রুজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিলিপস ও’ব্রায়েন ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য স্পেকটেটরে লিখেছেন, তাইওয়ানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ানো সব পক্ষের জন্যই ধ্বংসাত্মক। সুতরাং যারাই তাইওয়ানে সেনা পাঠাতে চান না কেন, তাদের সাবধানে ভেবেচিন্তে পা ফেলা উচিত।
ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে বিশ্ব মোড়লদের সত্যিই শিক্ষা নেওয়া উচিত। কারণ যুদ্ধ সব সময়ই অপ্রত্যাশিত। অধ্যাপক ফিলিপস বলেছেন, ‘আপনার প্রতিপক্ষকে কখনোই ছোট করে দেখবেন না। ভাববেন না যে আপনার সিস্টেম সব সময়ই ভালোভাবে কাজ করবে।’
সুতরাং চীন শেষ পর্যন্ত তাইওয়ানে আক্রমণ করবে কি না, যুক্তরাষ্ট্র এ দ্বন্দ্বে সরাসরি জড়িয়ে পড়বে কি না, এসব প্রশ্নের উত্তর আসলে সময়ের হাতে তোলা আছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি, সিএনএন ও ইন্ডিয়া টাইমস

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা করছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান নানা সমস্যা ‘অনেকটাই সমাধান হবে।’ আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বেশ
২ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি। ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের প্রধান মারিয়া কোরিনা মাচাদোর দলের চারজন প্রতিনিধি ক্যাপিটল হিল অফিসের সোফায় বসেন। বৈঠক চলছে মাইক ওয়াল্টজের সঙ্গে, যিনি কিছুদিন পরই আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক হতে যাচ্ছেন।
১ দিন আগে
ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ। এমনই সতর্কবার্তাই দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
২ দিন আগে
সংবিধানবিরোধী হলেও তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) এয়ারফোর্স ওয়ানে মালয়েশিয়া থেকে জাপানের টোকিও যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সম্ভাবনার কথা জানান। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্ট
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা করছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান নানা সমস্যা ‘অনেকটাই সমাধান হবে’। আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই পরাশক্তির সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরস্পরের পণ্যের ওপর শতভাগের বেশি প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, আর বেইজিং রপ্তানি সীমিত করেছে প্রতিরক্ষা শিল্প ও এআই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য বিরল খনিজে।
গত আগস্ট থেকে বাণিজ্য উত্তেজনা কমাতে দুই দেশের কর্মকর্তারা আলোচনায় বসেছেন। গত সপ্তাহান্তে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে একটি বাণিজ্য চুক্তির কাঠামোতেও তারা একমত হন। দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংজু শহরে গতকাল বুধবার এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনের ফাঁকে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তিটি দুই দেশের জন্যই ইতিবাচক হবে এবং ‘সবার জন্য উত্তেজনাপূর্ণ কিছু নিয়ে আসবে’।
তবে প্রকৃতপক্ষে কোনো বাণিজ্য চুক্তি হতে যাচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করবে কেবল ট্রাম্প-সি বৈঠকই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই চুক্তি নিয়ে প্রত্যাশা খুব বেশি নয়। দুই দেশের সম্পর্কের গভীর জটিলতা এখন দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের দিকেই ইঙ্গিত করছে।
ট্রাম্প ও সি আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরী বুসানে সাক্ষাৎ করবেন। বৈঠকটি স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় শুরু হয়ে গেছে। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে প্রবেশে পর দুই নেতার প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ এটি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে জাপানের ওসাকায় জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে তাদের দেখা হয়েছিল।
বুধবার দক্ষিণ কোরিয়াগামী এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রেসিডেন্ট সির সঙ্গে আমাদের দারুণ একটি বৈঠক হবে। অনেক সমস্যার সমাধান হবে।’ একই দিনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে মতবিনিময় করবেন।
বৈঠকে আলোচনার বিষয়গুলো হতে পারে—বাণিজ্য শুল্ক, যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী ফেন্টানিল মাদক পাচার, চীনের বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা, যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও তাইওয়ান ইস্যুতে ভূরাজনৈতিক অবস্থান, যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে চীনা জাহাজের ওপর আরোপিত বন্দর ফি এবং টিকটকের মালিকানা বিক্রি সংক্রান্ত আলোচনা।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলেহান্দ্রো রেইয়েস বলেন, উভয় পক্ষই এই বৈঠকে অস্থিতিশীল প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে, তবে উদ্দেশ্য ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটনের লক্ষ্য হলো প্রমাণ করা যে, তাদের কঠোর অবস্থান ফল দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া ও জাপানের সঙ্গে যেসব বাণিজ্য চুক্তি করেছে, সেগুলো বাজারে প্রবেশাধিকারকে জাতীয় নিরাপত্তার সহযোগিতার সঙ্গে যুক্ত করছে। এসব চুক্তিতে অংশীদার দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ শৃঙ্খলার নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে বাধ্য করছে।’
রেইয়েস আরও বলেন, অন্যদিকে ‘বেইজিংয়ের লক্ষ্য শান্ত ও স্থিতিশীল ভাবমূর্তি উপস্থাপন করা। চীন সম্প্রতি সি চিনপিংয়ের ক্ষমতাকে পুনর্নিশ্চিত করেছে এবং আগামী পাঁচ বছরের পরিকল্পনার দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করেছে। চীন এখন বার্তা দিতে চায়— তারা পশ্চিমা চাপ সামলে উঠেছে, এখন উন্নয়ন ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।’
তবে রেইয়েসের মতে, বাণিজ্য শুল্ক, বিরল খনিজ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ভূরাজনৈতিক কৌশল—এসব ইস্যু এত গভীরে প্রোথিত যে সহজে মীমাংসা হবে না। তিনি বলেন, ‘এখন অবিশ্বাস কাঠামোগত। শক্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে দুই দেশের চিন্তাভাবনাতেই সেটি প্রোথিত।’
দর-কষাকষিতে কার অবস্থান কতটা শক্ত
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনার ভারসাম্য সাম্প্রতিক সময়ে বারবার বদলেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি সীমিত করেন, যা চীনের জন্য বড় ধাক্কা ছিল। চলতি বছরের শুরুতে ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্কারোপ করে উত্তেজনা আরও বাড়ান।
চীন পাল্টা ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসায়, যতক্ষণ না মে মাসে উভয় দেশ নতুন আলোচনার সুযোগ দিতে সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। এর মধ্যেই চীন এপ্রিল মাসে সাতটি বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়, পরে অক্টোবর মাসে আরও পাঁচটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। জবাবে ট্রাম্প ১০০ শতাংশ নতুন শুল্কের হুমকি দেন।
চীন এদিকে সরবরাহ শৃঙ্খলা বৈচিত্র্য আনতে আসিয়ান (আসিয়ান) সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি জোরদার করেছে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রও জাপান, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করেছে। বুধবার দক্ষিণ কোরিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক কমানোর একটি বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করেছে।
রেইয়েস বলেন, উভয় পক্ষের হাতেই ভিন্ন ধরনের শক্তি আছে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখন এক নতুন মিত্রজোট গড়ে তুলেছে, যারা কার্যত ওয়াশিংটনের শর্তে সই করেছে।’ মালয়েশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক চুক্তি তারই উদাহরণ। তিনি আরও বলেন, ‘তবে চীনের কাছে রয়েছে সহনশীলতা ও অর্থনৈতিক স্থিতি। তারা এখনো বিশ্ব উৎপাদনের কেন্দ্র, বিরল খনিজ প্রক্রিয়াজাতে প্রভাবশালী, এবং শুল্ক যুদ্ধেও ভেঙে পড়েনি। বরং এই যুদ্ধ তাদের আরও দক্ষ ও দ্রুত করেছে।’ তাঁর ভাষায়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের হাতে উচ্চ স্বরে চাপ প্রয়োগের ক্ষমতা, চীনের হাতে স্থিতিশীল সহনশক্তি। ওয়াশিংটন সংঘাত বাড়াতে পারে, কিন্তু বেইজিং টিকে থাকতে জানে।’
বৈঠকের সম্ভাব্য ফল
ট্রাম্প যদিও বৈঠককে ‘দারুণ’ বলে উল্লেখ করেছেন, বিশ্লেষকেরা খুব বড় কোনো ফলাফল আশা করছেন না। রেইয়েস বলেন, ‘বৈঠকের পর দুই পক্ষই হয়তো কিছু ছোট সাফল্যের কথা জানাবে— যেমন শুল্ক কার্যকরে বিলম্ব, বাণিজ্য স্থিতিশীলতা নিয়ে যৌথ বিবৃতি, বা বিরল খনিজ সহযোগিতায় একটি কার্যকরী কমিটি।’
তাঁর মতে, ‘এই সম্মেলন প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষ করার নয়; বরং নতুন একপর্যায়ে প্রবেশের ঘোষণা। যুক্তরাষ্ট্র নতুন চুক্তির মাধ্যমে জোট গড়ছে, চীনও তাই করছে সহনশীলতা ও স্থিতিশীলতা দিয়ে। মূলত, এই বৈঠক শেখাবে— প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষ করা নয়, বরং তা নিয়েই কীভাবে সহাবস্থান করা যায়।’
তথ্যসূত্র: আল–জাজিরা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা করছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান নানা সমস্যা ‘অনেকটাই সমাধান হবে’। আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই পরাশক্তির সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরস্পরের পণ্যের ওপর শতভাগের বেশি প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, আর বেইজিং রপ্তানি সীমিত করেছে প্রতিরক্ষা শিল্প ও এআই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য বিরল খনিজে।
গত আগস্ট থেকে বাণিজ্য উত্তেজনা কমাতে দুই দেশের কর্মকর্তারা আলোচনায় বসেছেন। গত সপ্তাহান্তে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে একটি বাণিজ্য চুক্তির কাঠামোতেও তারা একমত হন। দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংজু শহরে গতকাল বুধবার এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনের ফাঁকে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তিটি দুই দেশের জন্যই ইতিবাচক হবে এবং ‘সবার জন্য উত্তেজনাপূর্ণ কিছু নিয়ে আসবে’।
তবে প্রকৃতপক্ষে কোনো বাণিজ্য চুক্তি হতে যাচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করবে কেবল ট্রাম্প-সি বৈঠকই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই চুক্তি নিয়ে প্রত্যাশা খুব বেশি নয়। দুই দেশের সম্পর্কের গভীর জটিলতা এখন দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের দিকেই ইঙ্গিত করছে।
ট্রাম্প ও সি আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরী বুসানে সাক্ষাৎ করবেন। বৈঠকটি স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় শুরু হয়ে গেছে। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে প্রবেশে পর দুই নেতার প্রথম মুখোমুখি সাক্ষাৎ এটি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে জাপানের ওসাকায় জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে তাদের দেখা হয়েছিল।
বুধবার দক্ষিণ কোরিয়াগামী এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রেসিডেন্ট সির সঙ্গে আমাদের দারুণ একটি বৈঠক হবে। অনেক সমস্যার সমাধান হবে।’ একই দিনে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে মতবিনিময় করবেন।
বৈঠকে আলোচনার বিষয়গুলো হতে পারে—বাণিজ্য শুল্ক, যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী ফেন্টানিল মাদক পাচার, চীনের বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা, যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও তাইওয়ান ইস্যুতে ভূরাজনৈতিক অবস্থান, যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে চীনা জাহাজের ওপর আরোপিত বন্দর ফি এবং টিকটকের মালিকানা বিক্রি সংক্রান্ত আলোচনা।
হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলেহান্দ্রো রেইয়েস বলেন, উভয় পক্ষই এই বৈঠকে অস্থিতিশীল প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে, তবে উদ্দেশ্য ভিন্ন। তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটনের লক্ষ্য হলো প্রমাণ করা যে, তাদের কঠোর অবস্থান ফল দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া ও জাপানের সঙ্গে যেসব বাণিজ্য চুক্তি করেছে, সেগুলো বাজারে প্রবেশাধিকারকে জাতীয় নিরাপত্তার সহযোগিতার সঙ্গে যুক্ত করছে। এসব চুক্তিতে অংশীদার দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ও সরবরাহ শৃঙ্খলার নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে বাধ্য করছে।’
রেইয়েস আরও বলেন, অন্যদিকে ‘বেইজিংয়ের লক্ষ্য শান্ত ও স্থিতিশীল ভাবমূর্তি উপস্থাপন করা। চীন সম্প্রতি সি চিনপিংয়ের ক্ষমতাকে পুনর্নিশ্চিত করেছে এবং আগামী পাঁচ বছরের পরিকল্পনার দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করেছে। চীন এখন বার্তা দিতে চায়— তারা পশ্চিমা চাপ সামলে উঠেছে, এখন উন্নয়ন ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।’
তবে রেইয়েসের মতে, বাণিজ্য শুল্ক, বিরল খনিজ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ভূরাজনৈতিক কৌশল—এসব ইস্যু এত গভীরে প্রোথিত যে সহজে মীমাংসা হবে না। তিনি বলেন, ‘এখন অবিশ্বাস কাঠামোগত। শক্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে দুই দেশের চিন্তাভাবনাতেই সেটি প্রোথিত।’
দর-কষাকষিতে কার অবস্থান কতটা শক্ত
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনার ভারসাম্য সাম্প্রতিক সময়ে বারবার বদলেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর রপ্তানি সীমিত করেন, যা চীনের জন্য বড় ধাক্কা ছিল। চলতি বছরের শুরুতে ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্কারোপ করে উত্তেজনা আরও বাড়ান।
চীন পাল্টা ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসায়, যতক্ষণ না মে মাসে উভয় দেশ নতুন আলোচনার সুযোগ দিতে সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। এর মধ্যেই চীন এপ্রিল মাসে সাতটি বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়, পরে অক্টোবর মাসে আরও পাঁচটির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। জবাবে ট্রাম্প ১০০ শতাংশ নতুন শুল্কের হুমকি দেন।
চীন এদিকে সরবরাহ শৃঙ্খলা বৈচিত্র্য আনতে আসিয়ান (আসিয়ান) সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি জোরদার করেছে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রও জাপান, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করেছে। বুধবার দক্ষিণ কোরিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক কমানোর একটি বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করেছে।
রেইয়েস বলেন, উভয় পক্ষের হাতেই ভিন্ন ধরনের শক্তি আছে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখন এক নতুন মিত্রজোট গড়ে তুলেছে, যারা কার্যত ওয়াশিংটনের শর্তে সই করেছে।’ মালয়েশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক চুক্তি তারই উদাহরণ। তিনি আরও বলেন, ‘তবে চীনের কাছে রয়েছে সহনশীলতা ও অর্থনৈতিক স্থিতি। তারা এখনো বিশ্ব উৎপাদনের কেন্দ্র, বিরল খনিজ প্রক্রিয়াজাতে প্রভাবশালী, এবং শুল্ক যুদ্ধেও ভেঙে পড়েনি। বরং এই যুদ্ধ তাদের আরও দক্ষ ও দ্রুত করেছে।’ তাঁর ভাষায়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের হাতে উচ্চ স্বরে চাপ প্রয়োগের ক্ষমতা, চীনের হাতে স্থিতিশীল সহনশক্তি। ওয়াশিংটন সংঘাত বাড়াতে পারে, কিন্তু বেইজিং টিকে থাকতে জানে।’
বৈঠকের সম্ভাব্য ফল
ট্রাম্প যদিও বৈঠককে ‘দারুণ’ বলে উল্লেখ করেছেন, বিশ্লেষকেরা খুব বড় কোনো ফলাফল আশা করছেন না। রেইয়েস বলেন, ‘বৈঠকের পর দুই পক্ষই হয়তো কিছু ছোট সাফল্যের কথা জানাবে— যেমন শুল্ক কার্যকরে বিলম্ব, বাণিজ্য স্থিতিশীলতা নিয়ে যৌথ বিবৃতি, বা বিরল খনিজ সহযোগিতায় একটি কার্যকরী কমিটি।’
তাঁর মতে, ‘এই সম্মেলন প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষ করার নয়; বরং নতুন একপর্যায়ে প্রবেশের ঘোষণা। যুক্তরাষ্ট্র নতুন চুক্তির মাধ্যমে জোট গড়ছে, চীনও তাই করছে সহনশীলতা ও স্থিতিশীলতা দিয়ে। মূলত, এই বৈঠক শেখাবে— প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষ করা নয়, বরং তা নিয়েই কীভাবে সহাবস্থান করা যায়।’
তথ্যসূত্র: আল–জাজিরা

চীন কী শেষ পর্যন্ত তাইওয়ানে আক্রমণ করেই বসবে? গত পরশু মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে পা রাখার পর থেকে চীন যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তাতে এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
০৪ আগস্ট ২০২২
২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি। ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের প্রধান মারিয়া কোরিনা মাচাদোর দলের চারজন প্রতিনিধি ক্যাপিটল হিল অফিসের সোফায় বসেন। বৈঠক চলছে মাইক ওয়াল্টজের সঙ্গে, যিনি কিছুদিন পরই আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক হতে যাচ্ছেন।
১ দিন আগে
ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ। এমনই সতর্কবার্তাই দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
২ দিন আগে
সংবিধানবিরোধী হলেও তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) এয়ারফোর্স ওয়ানে মালয়েশিয়া থেকে জাপানের টোকিও যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সম্ভাবনার কথা জানান। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্ট
২ দিন আগেরয়টার্সের প্রতিবেদন
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি। ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের প্রধান মারিয়া কোরিনা মাচাদোর দলের চারজন প্রতিনিধি ক্যাপিটল হিল অফিসের সোফায় বসেন। বৈঠক চলছে মাইক ওয়াল্টজের সঙ্গে, যিনি কিছুদিন পরই আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক হতে যাচ্ছেন। ভেনেজুয়েলায় তাঁর গোপন আস্তানা থেকে মাচাদো বৈঠকে ভিডিও কলে অল্প কিছু সময়ের জন্য যোগ দেন।
ডেভিড স্মোলানস্কি, যিনি ওয়াশিংটনে মাচাদোর অফিসটা চালান, তিনি বৈঠকে ব্যাখ্যা করলেন, কীভাবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো আসলে দেশটির সশস্ত্র সংগঠন ত্রেন দে আরাগাকে (টিডিএ) নিয়ন্ত্রণ করেন।
বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজনের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। সেই দুজনই জানিয়েছেন, বৈঠকে ওয়াল্টজ পুরোটা সময় নোট নিয়েছেন।
এর আগে কখনো এই বৈঠকের ভেতরের খবর সংবাদমাধ্যমে আসেনি। বৈঠকটি মাচাদোর দিক থেকে একটি ‘ঝুঁকি যেমন, তেমন লাভ’ পরিকল্পনার অংশ ছিল। কিছুদিন আগে শান্তিতে নোবেলজয়ী মাচাদোর দিক থেকে ওই বৈঠক ছিল ট্রাম্পের দলের উচ্চপদস্থদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নত করার একটি মাধ্যম। ট্রাম্পের নীতিনির্ধারণী দল মনে করে, অপরাধী চক্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় ঝুঁকি। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে (ট্রাম্পের দলের) এমন ধারণার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে।
রয়টার্স ৫০টির বেশি ‘সূত্রে’র সঙ্গে কথা বলেছে, যেগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের সদস্য, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে তথ্য সরবরাহকারীসহ অনেকে আছেন। মাচাদোর দল কীভাবে ভেনেজুয়েলারই সরকারের বিরুদ্ধে বয়ান তৈরি করে ট্রাম্প প্রশাসনকে আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে, সেটা ওই ‘সূত্রগুলোর’ সঙ্গে রয়টার্সের আলোচনায় উঠে এসেছে। এমনকি ট্রাম্পের কঠোর পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা ভেনেজুয়েলান অভিবাসীদের ওপর ধাক্কা আসার শঙ্কাও পাত্তা পায়নি মাচাদোর দলের কাছে।
ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার আগে ও পরে মাচাদোর নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের নেতারা বেশ কয়েকবার ট্রাম্পের নীতিনির্ধারণী দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল, যাতে মাদুরোর ওপর চাপ বাড়ে। মাদুরোর বিরোধিতায় মাচাদোর সঙ্গী দলগুলোও মাচাদোর দলের পেশ করা বক্তব্য ও প্রতিবেদনের নেপথ্যের গবেষণায় হাত লাগিয়েছেন। সূত্রকে উৎস জানিয়ে রয়টার্স লিখেছে, মাদুরো এবং এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারে অনেক তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলোকে জানিয়েছেন মাচাদোর দলের সদস্যরা।
মাচাদো ও অন্য বিরোধী দলগুলোর সাহায্যে বানানো প্রতিবেদন দেখে বোঝা যায়, মাদুরোই ত্রেন দে আরাগাকে নিয়ন্ত্রণ করেন—এই ধারণাকে বৈধতা দিতে সাহায্য করেছে মাচাদোর নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলো। ট্রাম্প প্রশাসন ও তাঁদের স্বার্থ একই জায়গায় মিলছে দেখে গোপনে এবং প্রকাশ্যে এই ধারণার প্রচারও চালিয়েছে তারা। তবে ভেনেজুয়েলা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান কৌশলের নেপথ্যে তাদের প্রচারণার সম্পর্ক কতটা, সেটা রয়টার্স পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারেনি।
জানুয়ারিতে ওয়াল্টজের সঙ্গে মাচাদোর দলের বৈঠকের পর ওয়াশিংটন ত্রেন দে আরাগাকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে ঘোষণা করে। মাদুরো এই সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করে বলেও জানায় ওয়াশিংটন; পাশাপাশি মাদুরোকে গ্রেপ্তারের পুরস্কার হিসেবে ৫ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে।
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে নৌবাহিনীর দাপট বাড়ানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ভেনেজুয়েলার উপকূলে অন্তত আটটি নৌকায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা। নৌকাগুলো মাদকদ্রব্য পরিবহনের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে দাবি তাদের। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, পাচার হয়ে যে পরিমাণ কোকেন যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকে, তার খুবই সামান্য অংশই ভেনেজুয়েলা হয়ে আসে।
ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিহত ১১ জন ত্রেন দে আরাগার সদস্য, যদিও তাদের সদস্য থাকার কোনো প্রমাণ হাজির করা হয়নি। এর আগে এই মাসের শুরুর দিকে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর গোপন কার্যক্রমের অনুমোদন দিয়েছেন। এ-ও বলেছিলেন, ভেনেজুয়েলার সীমানার ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ট্রাম্পের তেমন কৌশলেও অকুণ্ঠ সমর্থন মাচাদোর। তাঁর কথা, পরিস্থিতি তেমন হতে দিতে না চাইলে মাদুরোর পদত্যাগ করা উচিত।
রয়টার্সের এই প্রতিবেদনের জন্য মন্তব্যের আবেদনে অবশ্য ‘না’ জানিয়ে দিয়েছেন মাচাদো। আর ৬ জানুয়ারির বৈঠক নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেননি ওয়াল্টজ, যিনি এখন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসেডর। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মাদুরোর সম্পর্ক নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, সে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি ভেনেজুয়েলার তথ্য মন্ত্রণালয়।
হুগো শাভেজের মৃত্যুর পর মাদুরো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট বনে যান ২০১৩ সালে। এরপর থেকে তাঁর শাসনামলে ভেনেজুয়েলা অর্থনৈতিক দুরবস্থা দেখেছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেখেছে, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দমন-পীড়নের অভিযোগও আছে মাদুরোর বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাচাদোর নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল ৭০ শতাংশ ভোট নিয়ে জিতেছে, সেই নির্বাচন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে, তবু সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা মাদুরো চেয়ার ছাড়েননি। পশ্চিমের নানা নিষেধাজ্ঞা, অনেক আলাপ-আলোচনা ও অপরাধের অভিযোগও তাঁকে টলাতে পারেনি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় আবিষ্কৃত তেলের মজুত ভেনেজুয়েলায়। সে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারির হস্তক্ষেপ করা উচিত কি না—এই প্রশ্নটা মাচাদোকে করা হয় ১০ অক্টোবর, তিনি শান্তিতে নোবেল জেতার পর। উত্তরে মাচাদো বলেছেন, ‘আপনি যখন একটা অপরাধী প্রশাসনের সঙ্গে লড়ছেন, তখন শক্তির প্রয়োগ ছাড়া তো স্বাধীনতা আসবে না।’ শান্তিতে নোবেল জয়ের পর সেটি ভেনেজুয়েলার জনগণের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেছিলেন মাচাদো।
এর আগে সেপ্টেম্বরে ট্রাম্পকে একটি চিঠি লিখেছিলেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো। চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, তাঁর সরকারের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর সম্পর্কের অভিযোগ ‘পুরোপুরি মিথ্যা’। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা মানবাধিকার লঙ্ঘনের দাবিও অসত্য জানিয়ে মাদুরো বলেছেন, ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র কার্যকর।
মূলত ভেনেজুয়েলায় জেলে থাকা কয়েকজনের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী ত্রেন দে আরাগা এখন লাতিন আমেরিকায় বিভিন্ন দেশেই নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। লাতিন দেশগুলোর সরকার ত্রেন দে আরাগাকে তাদের দেশের জন্য বড় হুমকি মনে করে। তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রে ‘হামলা চালানো’র পরিকল্পনা করছে—এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আপিল আদালত। ট্রাম্প প্রশাসন পাইকারি হারে ভেনেজুয়েলান অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার কৌশল নেওয়ার পর ‘আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ)’ আপিল আদালতে অভিযোগ করে, সে মামলার শুনানিতেই কথাটা বলেছিলেন আদালত।
এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিলের ফাঁস হয়ে যাওয়া এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ত্রেন দে আরাগার সঙ্গে ভেনেজুয়েলার সরকারের সম্পর্ক নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে, ভেনেজুয়েলান প্রশাসনের অল্প কয়েকজন কর্মকর্তা ‘অর্থের বিনিময়ে টিডিএকে সাহায্য করে থাকতে পারেন।’ তবে মাদুরো এই গ্রুপের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন।
উভয়সংকট
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মাচাদোর আঁতাতকে ‘সমাধান-অসাধ্য উভয়সংকট’ জানিয়ে মাচাদোরই দলের কেউ কেউ এর বিরোধিতা করছেন। টিডিএর কারণে মাদুরোর প্রশাসনের ওপর ট্রাম্প যে চাপ তৈরি করেছেন, সেটা মাদুরোর বিরোধী পক্ষের অনেক দিনের চাওয়া। কিন্তু এর পাশাপাশি নিজের অভিবাসনবিরোধী কৌশলের অংশ হিসেবে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী ভেনেজুয়েলানদেরও টিডিএর সদস্য বলে বিপদের মুখে ফেলছেন।
ট্রাম্প যখন হাজারো ভেনেজুয়েলান অভিবাসীর অধিকার কেড়ে নিয়েছেন, শত শত ভেনেজুয়েলান অভিবাসীকে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠিয়েছেন, টিডিএর সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে অভিযুক্তদের এল সালভাদরের জেলে পাঠিয়েছেন, মাচাদো তেমন কিছুই বলেননি। সম্প্রতি মাদক বহনের অভিযোগ তুলে ভেনেজুয়েলার উপকূলে বেশ কয়েকটি নৌকায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় অনেকে যখন মারা গেলেন, সেটা বিচারবহির্ভূত হত্যার সংজ্ঞায় পড়লেও মাচাদো এর সমর্থনে বলেছেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা-সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত।
মাচাদোর দল এটা বুঝতে পারছে যে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তাদের আঁতাতের কৌশলে বড় ঝুঁকি আছে। ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষ তাঁদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলতে পারে—এই ঝুঁকি তো আছেই। তবে বিরোধী দলের দুটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে আঁতাতই ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ফেরানোর সবচেয়ে সেরা উপায়। সম্ভাব্য ফাঁদ থাকা সত্ত্বেও মাদুরোকে সরানোই তাদের ‘বড় লক্ষ্য’ বলে জানিয়েছেন ওই দুজনের একজন।
তুলান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেনেজুয়েলা বিশেষজ্ঞ ডেভিড স্মিলড রয়টার্সকে বলেছেন, যদি এতে কাজ হয়, তাহলে ‘তিনি (মাচাদো) বনে যাবেন ভেনেজুয়েলার রক্ষাকর্তা।’ কিন্তু কিছু না হলে, এত বছরে বিরোধী দলগুলোর নেতাদের মিথ্যা আশ্বাস দেখে বিরক্ত এবং পরিবর্তনের আশায় মরিয়া ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষের সমর্থন হারাবেন তিনি। আর যদি মাদুরোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের হামলা থেকে কোনো যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়, তাহলে দেশের ভেতরে ধ্বংসযজ্ঞের দায় পড়বে তাঁর (মাচাদো) ঘাড়েই। এই পুরো কৌশলটাই ‘ঝুঁকিও বেশি, লাভও বেশি’ কৌশল।
যোগাযোগের পথটা মসৃণ
২০ জানুয়ারি ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার আগেই মাচাদোর দলের প্রতিনিধিরা ফ্লোরিডার রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, যাঁদের মধ্যে সে সময়ের সিনেটর মার্কো রুবিও ছিলেন। ওয়াল্টজ পদত্যাগ করার পর থেকে রুবিওই ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক। ২০১৮ সালেই তিনি বলেছিলেন, ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা হামলা করলে সেটা অন্যায্য হবে না। একসময়ে ট্রাম্পের কড়া সমালোচক থেকে এখন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বনে যাওয়া রুবিও যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিমালা; বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বৈদেশিক নীতিমালা প্রণয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একজন।
ওই বৈঠকগুলোর কারণে টিডিএর সঙ্গে মাদুরোর সম্পর্ক, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য টিডিও এবং আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী কার্তেল দে লস সোলেস কতটা হুমকির—এসব ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের নেতিবাচক ধারণা আরও পোক্ত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র টমি পিগট অবশ্য রুবিওর সঙ্গে ভেনেজুয়েলার বিরোধীদের নিয়মিত যোগাযোগের ব্যাপারটি জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন। তাঁদের কারণে টিডিএর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল বদলেছে, এমন ধারণাও অস্বীকার করেছেন।
ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলগুলোর প্রতি রুবিওর সমর্থন অবশ্য অনেক পুরোনো এবং সেটা জনসমক্ষেও বলেছেন রুবিও। ২০১৯ সালে মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রচেষ্টার সময় বিরোধী পক্ষের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের পক্ষে কথা বলেছিলেন রুবিও।
মাচাদোকে শান্তিতে নোবেলের জন্য মনোনীত করে ২০২৪ সালে এক চিঠিতে রুবিও এবং ওয়াল্টজ—দুজনই সই করেছেন। গত এপ্রিলে টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ‘প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে’র তালিকায় মাচাদোর নাম থাকায় তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করে রুবিও লিখেছেন, এক দশক আগে তাঁদের পরিচয় হয়েছিল।
২০২৪ সালে নির্বাচনী প্রচারণায় টিডিএর ব্যাপারে ট্রাম্পের আলোচনার আগেও, মাচাদোর দলের ‘বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরামর্শক’ ইভান সিমোনোভিস সংবাদমাধ্যমে এসে বলেছিলেন, এই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে মাদুরোই পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্য নিয়ে, যদিও এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ তিনি দেননি। পরে ট্রাম্পও টিডিএর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে অনেক ভেনেজুয়েলানকে দেশে ফেরত পাঠানোর সময় মাদুরোর সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছেন, যদিও তিনিও কোনো প্রমাণ দেননি। ভেনেজুয়েলান পুলিশের সাবেক প্রধান সিমোনোভিচ রয়টার্সকে বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কাছে তথ্য ও যোগাযোগের সূত্র দিয়েছেন। এই তথ্যগুলো ভেনেজুয়েলার নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পাওয়া বলেও জানিয়েছেন। যদিও রয়টার্সকে এমন কারও সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার অনুরোধে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন সিমোনোভিচ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের তৃতীয় আরেকজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ২০০২৪ সালের শেষ অংশে ভেনেজুয়েলার নির্বাসিত সাবেক কর্নেল গুস্তাভো আরোচা, যিনি কিনা মাচাদোর দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ, তিনি এই টিডিএর ব্যাপারে গবেষণার তথ্য মাচাদোর দলকে দিয়েছেন। সঙ্গে ডানপন্থী থিংকট্যাংক দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের একটা গবেষণাপত্রও দিয়েছেন, যেখানে দাবি করা হয়েছে, এই টিডিএ গ্যাং আসলে মাদুরোরই একটা প্রক্সি।
জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে মাচাদোর দল অন্তত আটবার ওয়াল্টজ, রুবিও, সে সময়ের বিশেষ পরামর্শক মরিসিও ক্লাভের-কারোন, ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ক্রিস্টফার লানডাউয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে বৈঠকগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে। ক্লাভের-কারোনও রুবিওর মতোই একজন কিউবান-আমেরিকান, যিনিও ভেনেজুয়েলার ওপর মার্কিন মিলিটারি হামলাকে সমর্থন করেন। ভেনেজুয়েলা কিউবার কমিউনিস্ট পদ্ধতিতে সহায়তা করে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভেনেজুয়েলান বিরোধী দলের দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, এই আটটি বৈঠকের তিনটিতে তাঁরা কার্তেল দে লস সোলেসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, মাদুরো কার্তেল দে লস সোলেসেরও নিয়ন্ত্রক। গত জুলাইয়ে এই সংগঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বলেছে, এই গ্রুপ ত্রেন দে আরাগার সঙ্গে মিলে মাদকদ্রব্যকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটা অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। যদিও এরও কোনো প্রমাণ তারা হাজির করেনি।
ট্রাম্প প্রশাসনের অনেকে অবশ্য মাদুরোর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পক্ষে নন। এই মাসের শুরুতে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগের পথ বন্ধ করে দেওয়ার আগে মার্কিন দূত রিচার্ড গ্রেনেল বলে এসেছেন, যুদ্ধের বদলে তেল নিয়ে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে চুক্তিতে যাওয়া উচিত। প্রসঙ্গত, ভেনেজুয়েলার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মার্কিন কোম্পানি শেভরনের ভেনেজুয়েলায় তেলের উৎপাদন ও বিক্রির লাইসেন্স আছে। এ চুক্তি থেকে আর্থিক লাভ হয় ভেনেজুয়েলার। চুক্তিটিতে বড় অবদান আছে গ্রেনেলের। চুক্তিটি অনুমোদন করেছেন ট্রাম্পও।
তবে কট্টরপন্থী মাচাদোর সঙ্গে ট্রাম্পের মিত্র ব্রাজিলের ডানপন্থী নেতা জইর বলসোনারো এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইয়ের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। মাচাদো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ক্ষমতায় গেলে তিনি ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পকে দ্রুত বেসরকারীকরণ করবেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেবেন।
২০২৩ সাল পর্যন্ত ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা জিমি স্টোরি রয়টার্সকে বলেছেন, ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের নেতাদের হাতে মাদুরোকে সরানোর পরিকল্পনায় ট্রাম্পের সাহায্য চাওয়া ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই। ‘ওরা প্রতিবাদ করেছে, এ কারণে মারাও পড়েছে। আমরা তাদের (বিরোধীদের) আলোচনায় যেতে বলেছি, তারা আলোচনার টেবিলে গেছে। নির্বাচনে যেতে বলেছি, তারা নির্বাচনে গেছে। নির্বাচনে জিতেছেও। কিন্তু এরপরও সে (মাদুরো) চেয়ার ছাড়বে না। এরপর এটা (যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল) সমর্থন করা ছাড়া আর কী করার আছে তাদের সামনে?’

২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি। ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের প্রধান মারিয়া কোরিনা মাচাদোর দলের চারজন প্রতিনিধি ক্যাপিটল হিল অফিসের সোফায় বসেন। বৈঠক চলছে মাইক ওয়াল্টজের সঙ্গে, যিনি কিছুদিন পরই আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক হতে যাচ্ছেন। ভেনেজুয়েলায় তাঁর গোপন আস্তানা থেকে মাচাদো বৈঠকে ভিডিও কলে অল্প কিছু সময়ের জন্য যোগ দেন।
ডেভিড স্মোলানস্কি, যিনি ওয়াশিংটনে মাচাদোর অফিসটা চালান, তিনি বৈঠকে ব্যাখ্যা করলেন, কীভাবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো আসলে দেশটির সশস্ত্র সংগঠন ত্রেন দে আরাগাকে (টিডিএ) নিয়ন্ত্রণ করেন।
বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজনের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। সেই দুজনই জানিয়েছেন, বৈঠকে ওয়াল্টজ পুরোটা সময় নোট নিয়েছেন।
এর আগে কখনো এই বৈঠকের ভেতরের খবর সংবাদমাধ্যমে আসেনি। বৈঠকটি মাচাদোর দিক থেকে একটি ‘ঝুঁকি যেমন, তেমন লাভ’ পরিকল্পনার অংশ ছিল। কিছুদিন আগে শান্তিতে নোবেলজয়ী মাচাদোর দিক থেকে ওই বৈঠক ছিল ট্রাম্পের দলের উচ্চপদস্থদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নত করার একটি মাধ্যম। ট্রাম্পের নীতিনির্ধারণী দল মনে করে, অপরাধী চক্রগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় ঝুঁকি। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে (ট্রাম্পের দলের) এমন ধারণার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে।
রয়টার্স ৫০টির বেশি ‘সূত্রে’র সঙ্গে কথা বলেছে, যেগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের সদস্য, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে তথ্য সরবরাহকারীসহ অনেকে আছেন। মাচাদোর দল কীভাবে ভেনেজুয়েলারই সরকারের বিরুদ্ধে বয়ান তৈরি করে ট্রাম্প প্রশাসনকে আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছে, সেটা ওই ‘সূত্রগুলোর’ সঙ্গে রয়টার্সের আলোচনায় উঠে এসেছে। এমনকি ট্রাম্পের কঠোর পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা ভেনেজুয়েলান অভিবাসীদের ওপর ধাক্কা আসার শঙ্কাও পাত্তা পায়নি মাচাদোর দলের কাছে।
ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার আগে ও পরে মাচাদোর নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের নেতারা বেশ কয়েকবার ট্রাম্পের নীতিনির্ধারণী দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল, যাতে মাদুরোর ওপর চাপ বাড়ে। মাদুরোর বিরোধিতায় মাচাদোর সঙ্গী দলগুলোও মাচাদোর দলের পেশ করা বক্তব্য ও প্রতিবেদনের নেপথ্যের গবেষণায় হাত লাগিয়েছেন। সূত্রকে উৎস জানিয়ে রয়টার্স লিখেছে, মাদুরো এবং এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ব্যাপারে অনেক তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলোকে জানিয়েছেন মাচাদোর দলের সদস্যরা।
মাচাদো ও অন্য বিরোধী দলগুলোর সাহায্যে বানানো প্রতিবেদন দেখে বোঝা যায়, মাদুরোই ত্রেন দে আরাগাকে নিয়ন্ত্রণ করেন—এই ধারণাকে বৈধতা দিতে সাহায্য করেছে মাচাদোর নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলো। ট্রাম্প প্রশাসন ও তাঁদের স্বার্থ একই জায়গায় মিলছে দেখে গোপনে এবং প্রকাশ্যে এই ধারণার প্রচারও চালিয়েছে তারা। তবে ভেনেজুয়েলা নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান কৌশলের নেপথ্যে তাদের প্রচারণার সম্পর্ক কতটা, সেটা রয়টার্স পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারেনি।
জানুয়ারিতে ওয়াল্টজের সঙ্গে মাচাদোর দলের বৈঠকের পর ওয়াশিংটন ত্রেন দে আরাগাকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলে ঘোষণা করে। মাদুরো এই সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করে বলেও জানায় ওয়াশিংটন; পাশাপাশি মাদুরোকে গ্রেপ্তারের পুরস্কার হিসেবে ৫ কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে।
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে নৌবাহিনীর দাপট বাড়ানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ভেনেজুয়েলার উপকূলে অন্তত আটটি নৌকায় হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা। নৌকাগুলো মাদকদ্রব্য পরিবহনের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে দাবি তাদের। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, পাচার হয়ে যে পরিমাণ কোকেন যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকে, তার খুবই সামান্য অংশই ভেনেজুয়েলা হয়ে আসে।
ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিহত ১১ জন ত্রেন দে আরাগার সদস্য, যদিও তাদের সদস্য থাকার কোনো প্রমাণ হাজির করা হয়নি। এর আগে এই মাসের শুরুর দিকে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর গোপন কার্যক্রমের অনুমোদন দিয়েছেন। এ-ও বলেছিলেন, ভেনেজুয়েলার সীমানার ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ট্রাম্পের তেমন কৌশলেও অকুণ্ঠ সমর্থন মাচাদোর। তাঁর কথা, পরিস্থিতি তেমন হতে দিতে না চাইলে মাদুরোর পদত্যাগ করা উচিত।
রয়টার্সের এই প্রতিবেদনের জন্য মন্তব্যের আবেদনে অবশ্য ‘না’ জানিয়ে দিয়েছেন মাচাদো। আর ৬ জানুয়ারির বৈঠক নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেননি ওয়াল্টজ, যিনি এখন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাম্বাসেডর। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মাদুরোর সম্পর্ক নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, সে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি ভেনেজুয়েলার তথ্য মন্ত্রণালয়।
হুগো শাভেজের মৃত্যুর পর মাদুরো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট বনে যান ২০১৩ সালে। এরপর থেকে তাঁর শাসনামলে ভেনেজুয়েলা অর্থনৈতিক দুরবস্থা দেখেছে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড দেখেছে, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দমন-পীড়নের অভিযোগও আছে মাদুরোর বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাচাদোর নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল ৭০ শতাংশ ভোট নিয়ে জিতেছে, সেই নির্বাচন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে, তবু সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা মাদুরো চেয়ার ছাড়েননি। পশ্চিমের নানা নিষেধাজ্ঞা, অনেক আলাপ-আলোচনা ও অপরাধের অভিযোগও তাঁকে টলাতে পারেনি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় আবিষ্কৃত তেলের মজুত ভেনেজুয়েলায়। সে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারির হস্তক্ষেপ করা উচিত কি না—এই প্রশ্নটা মাচাদোকে করা হয় ১০ অক্টোবর, তিনি শান্তিতে নোবেল জেতার পর। উত্তরে মাচাদো বলেছেন, ‘আপনি যখন একটা অপরাধী প্রশাসনের সঙ্গে লড়ছেন, তখন শক্তির প্রয়োগ ছাড়া তো স্বাধীনতা আসবে না।’ শান্তিতে নোবেল জয়ের পর সেটি ভেনেজুয়েলার জনগণের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেছিলেন মাচাদো।
এর আগে সেপ্টেম্বরে ট্রাম্পকে একটি চিঠি লিখেছিলেন ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো। চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, তাঁর সরকারের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর সম্পর্কের অভিযোগ ‘পুরোপুরি মিথ্যা’। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা মানবাধিকার লঙ্ঘনের দাবিও অসত্য জানিয়ে মাদুরো বলেছেন, ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র কার্যকর।
মূলত ভেনেজুয়েলায় জেলে থাকা কয়েকজনের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া সশস্ত্র গোষ্ঠী ত্রেন দে আরাগা এখন লাতিন আমেরিকায় বিভিন্ন দেশেই নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। লাতিন দেশগুলোর সরকার ত্রেন দে আরাগাকে তাদের দেশের জন্য বড় হুমকি মনে করে। তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রে ‘হামলা চালানো’র পরিকল্পনা করছে—এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আপিল আদালত। ট্রাম্প প্রশাসন পাইকারি হারে ভেনেজুয়েলান অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার কৌশল নেওয়ার পর ‘আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ)’ আপিল আদালতে অভিযোগ করে, সে মামলার শুনানিতেই কথাটা বলেছিলেন আদালত।
এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিলের ফাঁস হয়ে যাওয়া এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ত্রেন দে আরাগার সঙ্গে ভেনেজুয়েলার সরকারের সম্পর্ক নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে, ভেনেজুয়েলান প্রশাসনের অল্প কয়েকজন কর্মকর্তা ‘অর্থের বিনিময়ে টিডিএকে সাহায্য করে থাকতে পারেন।’ তবে মাদুরো এই গ্রুপের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নন।
উভয়সংকট
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মাচাদোর আঁতাতকে ‘সমাধান-অসাধ্য উভয়সংকট’ জানিয়ে মাচাদোরই দলের কেউ কেউ এর বিরোধিতা করছেন। টিডিএর কারণে মাদুরোর প্রশাসনের ওপর ট্রাম্প যে চাপ তৈরি করেছেন, সেটা মাদুরোর বিরোধী পক্ষের অনেক দিনের চাওয়া। কিন্তু এর পাশাপাশি নিজের অভিবাসনবিরোধী কৌশলের অংশ হিসেবে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী ভেনেজুয়েলানদেরও টিডিএর সদস্য বলে বিপদের মুখে ফেলছেন।
ট্রাম্প যখন হাজারো ভেনেজুয়েলান অভিবাসীর অধিকার কেড়ে নিয়েছেন, শত শত ভেনেজুয়েলান অভিবাসীকে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠিয়েছেন, টিডিএর সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে অভিযুক্তদের এল সালভাদরের জেলে পাঠিয়েছেন, মাচাদো তেমন কিছুই বলেননি। সম্প্রতি মাদক বহনের অভিযোগ তুলে ভেনেজুয়েলার উপকূলে বেশ কয়েকটি নৌকায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় অনেকে যখন মারা গেলেন, সেটা বিচারবহির্ভূত হত্যার সংজ্ঞায় পড়লেও মাচাদো এর সমর্থনে বলেছেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা-সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত।
মাচাদোর দল এটা বুঝতে পারছে যে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তাদের আঁতাতের কৌশলে বড় ঝুঁকি আছে। ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষ তাঁদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলতে পারে—এই ঝুঁকি তো আছেই। তবে বিরোধী দলের দুটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে আঁতাতই ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ফেরানোর সবচেয়ে সেরা উপায়। সম্ভাব্য ফাঁদ থাকা সত্ত্বেও মাদুরোকে সরানোই তাদের ‘বড় লক্ষ্য’ বলে জানিয়েছেন ওই দুজনের একজন।
তুলান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেনেজুয়েলা বিশেষজ্ঞ ডেভিড স্মিলড রয়টার্সকে বলেছেন, যদি এতে কাজ হয়, তাহলে ‘তিনি (মাচাদো) বনে যাবেন ভেনেজুয়েলার রক্ষাকর্তা।’ কিন্তু কিছু না হলে, এত বছরে বিরোধী দলগুলোর নেতাদের মিথ্যা আশ্বাস দেখে বিরক্ত এবং পরিবর্তনের আশায় মরিয়া ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষের সমর্থন হারাবেন তিনি। আর যদি মাদুরোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের হামলা থেকে কোনো যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়, তাহলে দেশের ভেতরে ধ্বংসযজ্ঞের দায় পড়বে তাঁর (মাচাদো) ঘাড়েই। এই পুরো কৌশলটাই ‘ঝুঁকিও বেশি, লাভও বেশি’ কৌশল।
যোগাযোগের পথটা মসৃণ
২০ জানুয়ারি ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার আগেই মাচাদোর দলের প্রতিনিধিরা ফ্লোরিডার রিপাবলিকানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, যাঁদের মধ্যে সে সময়ের সিনেটর মার্কো রুবিও ছিলেন। ওয়াল্টজ পদত্যাগ করার পর থেকে রুবিওই ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক। ২০১৮ সালেই তিনি বলেছিলেন, ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা হামলা করলে সেটা অন্যায্য হবে না। একসময়ে ট্রাম্পের কড়া সমালোচক থেকে এখন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বনে যাওয়া রুবিও যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিমালা; বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বৈদেশিক নীতিমালা প্রণয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একজন।
ওই বৈঠকগুলোর কারণে টিডিএর সঙ্গে মাদুরোর সম্পর্ক, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য টিডিও এবং আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী কার্তেল দে লস সোলেস কতটা হুমকির—এসব ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের নেতিবাচক ধারণা আরও পোক্ত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র টমি পিগট অবশ্য রুবিওর সঙ্গে ভেনেজুয়েলার বিরোধীদের নিয়মিত যোগাযোগের ব্যাপারটি জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন। তাঁদের কারণে টিডিএর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল বদলেছে, এমন ধারণাও অস্বীকার করেছেন।
ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলগুলোর প্রতি রুবিওর সমর্থন অবশ্য অনেক পুরোনো এবং সেটা জনসমক্ষেও বলেছেন রুবিও। ২০১৯ সালে মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার প্রচেষ্টার সময় বিরোধী পক্ষের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের পক্ষে কথা বলেছিলেন রুবিও।
মাচাদোকে শান্তিতে নোবেলের জন্য মনোনীত করে ২০২৪ সালে এক চিঠিতে রুবিও এবং ওয়াল্টজ—দুজনই সই করেছেন। গত এপ্রিলে টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ‘প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে’র তালিকায় মাচাদোর নাম থাকায় তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করে রুবিও লিখেছেন, এক দশক আগে তাঁদের পরিচয় হয়েছিল।
২০২৪ সালে নির্বাচনী প্রচারণায় টিডিএর ব্যাপারে ট্রাম্পের আলোচনার আগেও, মাচাদোর দলের ‘বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরামর্শক’ ইভান সিমোনোভিস সংবাদমাধ্যমে এসে বলেছিলেন, এই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে মাদুরোই পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্য নিয়ে, যদিও এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ তিনি দেননি। পরে ট্রাম্পও টিডিএর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে অনেক ভেনেজুয়েলানকে দেশে ফেরত পাঠানোর সময় মাদুরোর সংশ্লিষ্টতার কথা বলেছেন, যদিও তিনিও কোনো প্রমাণ দেননি। ভেনেজুয়েলান পুলিশের সাবেক প্রধান সিমোনোভিচ রয়টার্সকে বলেছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর কাছে তথ্য ও যোগাযোগের সূত্র দিয়েছেন। এই তথ্যগুলো ভেনেজুয়েলার নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পাওয়া বলেও জানিয়েছেন। যদিও রয়টার্সকে এমন কারও সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার অনুরোধে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন সিমোনোভিচ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের তৃতীয় আরেকজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ২০০২৪ সালের শেষ অংশে ভেনেজুয়েলার নির্বাসিত সাবেক কর্নেল গুস্তাভো আরোচা, যিনি কিনা মাচাদোর দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ, তিনি এই টিডিএর ব্যাপারে গবেষণার তথ্য মাচাদোর দলকে দিয়েছেন। সঙ্গে ডানপন্থী থিংকট্যাংক দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের একটা গবেষণাপত্রও দিয়েছেন, যেখানে দাবি করা হয়েছে, এই টিডিএ গ্যাং আসলে মাদুরোরই একটা প্রক্সি।
জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে মাচাদোর দল অন্তত আটবার ওয়াল্টজ, রুবিও, সে সময়ের বিশেষ পরামর্শক মরিসিও ক্লাভের-কারোন, ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট ক্রিস্টফার লানডাউয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে বৈঠকগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে। ক্লাভের-কারোনও রুবিওর মতোই একজন কিউবান-আমেরিকান, যিনিও ভেনেজুয়েলার ওপর মার্কিন মিলিটারি হামলাকে সমর্থন করেন। ভেনেজুয়েলা কিউবার কমিউনিস্ট পদ্ধতিতে সহায়তা করে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ভেনেজুয়েলান বিরোধী দলের দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, এই আটটি বৈঠকের তিনটিতে তাঁরা কার্তেল দে লস সোলেসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করার ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, মাদুরো কার্তেল দে লস সোলেসেরও নিয়ন্ত্রক। গত জুলাইয়ে এই সংগঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বলেছে, এই গ্রুপ ত্রেন দে আরাগার সঙ্গে মিলে মাদকদ্রব্যকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটা অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। যদিও এরও কোনো প্রমাণ তারা হাজির করেনি।
ট্রাম্প প্রশাসনের অনেকে অবশ্য মাদুরোর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পক্ষে নন। এই মাসের শুরুতে ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগের পথ বন্ধ করে দেওয়ার আগে মার্কিন দূত রিচার্ড গ্রেনেল বলে এসেছেন, যুদ্ধের বদলে তেল নিয়ে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে চুক্তিতে যাওয়া উচিত। প্রসঙ্গত, ভেনেজুয়েলার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মার্কিন কোম্পানি শেভরনের ভেনেজুয়েলায় তেলের উৎপাদন ও বিক্রির লাইসেন্স আছে। এ চুক্তি থেকে আর্থিক লাভ হয় ভেনেজুয়েলার। চুক্তিটিতে বড় অবদান আছে গ্রেনেলের। চুক্তিটি অনুমোদন করেছেন ট্রাম্পও।
তবে কট্টরপন্থী মাচাদোর সঙ্গে ট্রাম্পের মিত্র ব্রাজিলের ডানপন্থী নেতা জইর বলসোনারো এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইয়ের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। মাচাদো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ক্ষমতায় গেলে তিনি ভেনেজুয়েলার তেলশিল্পকে দ্রুত বেসরকারীকরণ করবেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেবেন।
২০২৩ সাল পর্যন্ত ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা জিমি স্টোরি রয়টার্সকে বলেছেন, ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের নেতাদের হাতে মাদুরোকে সরানোর পরিকল্পনায় ট্রাম্পের সাহায্য চাওয়া ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই। ‘ওরা প্রতিবাদ করেছে, এ কারণে মারাও পড়েছে। আমরা তাদের (বিরোধীদের) আলোচনায় যেতে বলেছি, তারা আলোচনার টেবিলে গেছে। নির্বাচনে যেতে বলেছি, তারা নির্বাচনে গেছে। নির্বাচনে জিতেছেও। কিন্তু এরপরও সে (মাদুরো) চেয়ার ছাড়বে না। এরপর এটা (যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল) সমর্থন করা ছাড়া আর কী করার আছে তাদের সামনে?’

চীন কী শেষ পর্যন্ত তাইওয়ানে আক্রমণ করেই বসবে? গত পরশু মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে পা রাখার পর থেকে চীন যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তাতে এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
০৪ আগস্ট ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা করছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান নানা সমস্যা ‘অনেকটাই সমাধান হবে।’ আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বেশ
২ ঘণ্টা আগে
ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ। এমনই সতর্কবার্তাই দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
২ দিন আগে
সংবিধানবিরোধী হলেও তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) এয়ারফোর্স ওয়ানে মালয়েশিয়া থেকে জাপানের টোকিও যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সম্ভাবনার কথা জানান। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্ট
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ, এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই সঙ্গে ইউরোপীয় ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান দূরত্ব মহাদেশটিকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলন ছিল তারই এক নিদর্শন। সম্মেলনে বেলজিয়াম ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ও ইউরোপের সামরিক শিল্পকে শক্তিশালী করতে রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহারের পরিকল্পনা আটকে দেয়। কিন্তু গুপ্তচরবৃত্তি ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতার জন্য সন্দেহের মুখে থাকা তথাকথিত রুশ ‘শ্যাডো ফ্লিটের’ বিষয়টি সম্মেলনে একবারও উল্লেখ করা হয়নি।
কোস্টাল ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাপ্লায়েড ইন্টেলিজেন্সের সহকারী পরিচালক জোসেফ ফিৎসানাকিস বলেন, ‘১৯৩৯ সালে নাৎসি বাহিনী যখন ইউরোপের দোরগোড়ায় ছিল, সে সময় ইউরোপ যতটা অপ্রস্তুত ছিল, আজও রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের মুখে ইউরোপ ঠিক ততটাই প্রস্তুতিহীন।’
ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশগুলোর মতো সামনের সারির রাষ্ট্রগুলো পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ভ্রমে নেই। কিন্তু পশ্চিম ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে। তারা অভ্যন্তরীণ বিভাজন আর রুশ ভুয়া তথ্যের অপপ্রচারে এমনভাবে বিপর্যস্ত যে তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে, তা তারা বুঝতেই পারছে না।’
২০২২ সাল থেকে রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ইউরোপজুড়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড, গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। মার্কিন থিংকট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের উত্তর ইউরোপবিষয়ক পরিচালক আনা ভিসল্যান্ডার বলেন, ‘রাশিয়ার এই হাইব্রিড যুদ্ধের উদ্দেশ্য আমাদের মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তোলা। যেন আমরা শান্তিকালেও নিরাপত্তাহীন বোধ করি এবং শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার লক্ষ্য পূরণের পথে; অর্থাৎ ইউরোপকে আবার প্রভাববলয়ে ভাগ করার দিকে আমরা নিজেরাই দুর্বল হয়ে পড়ি।’
গত ১০ সেপ্টেম্বর এই অভিযুক্ত রুশ তৎপরতা প্রকাশ্যে রূপ নেয়। সেদিন দুই ডজন রুশ গেরান-২ ড্রোন ন্যাটোর আকাশসীমায় প্রবেশ করে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার শক্তিমত্তা পরীক্ষা করে। এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধের সাড়ে তিন বছরে মাত্র তিনটি ড্রোন পোল্যান্ডে প্রবেশ করেছিল।
এর ৯ দিন পর এস্তোনিয়ার উপকূলবর্তী ফিনল্যান্ড উপসাগরের আকাশে তিনটি রুশ মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান ১২ মিনিট ধরে মহড়া দিয়ে যায়। তখন এস্তোনিয়ায় অবস্থানরত ইতালির এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ছুটে গিয়ে সেগুলোকে প্রতিহত করে। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর জার্মানি বাল্টিক সাগরের আকাশে উড্ডয়নরত এক রুশ ইলিউশিন-২০ এম নজরদারি বিমানকে বাধা দেয়। বিমানটি কোনো ফ্লাইট পরিকল্পনা বা রেডিও যোগাযোগ ছাড়াই উড়ছিল।
চার দিন পর ন্যাটো জানায়, লিথুয়ানিয়ার সিয়াউলাই ঘাঁটি থেকে হাঙ্গেরির দুটি গ্রিপেন যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন করে তিনটি রুশ বিমান—একটি সু-৩০, একটি সু-৩৫ এবং একটি মিগ-৩১কে ফিরিয়ে দেয়। এই যুদ্ধবিমানগুলো লাটভিয়ার আকাশসীমার কাছাকাছি উড়ছিল। ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়া সব সময় বিশেষ তৎপরতা শুরু করে এমন সময়, যেটিকে তারা বলে “বিশেষ সময়” বা “জরুরি সময়”। এই সময়টি আসলে যুদ্ধ শুরুর আগে উত্তেজনা চূড়ায় ওঠার মুহূর্ত।’
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্ক করছে যে আগামী পাঁচ থেকে আট বছরের মধ্যে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে। জার্মানির ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মার্টিন ইয়াগার এই মাসে দেশটির পার্লামেন্ট বুন্দেসট্যাগে বলেন, যুদ্ধ তারও আগে হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘২০২৯ সালের আগে রাশিয়া আক্রমণ করবে না—এই ভেবে আমাদের বসে থাকলে চলবে না। ইউরোপ এখন এক নতুন ধরনের মুখোমুখি অবস্থার মধ্যে রয়েছে।’ এই অবস্থায় ইউরোপীয় সামরিক পরিকল্পনাবিদেরা যেটিকে ‘জরুরি সময়’ বলেন, সেটিকেই তারা আবার ‘ফেজ জিরো’ নামেও অভিহিত করেছে। যার অর্থ হলো প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা, তথ্য সংগ্রহ এবং বেসামরিক ও সামরিক কার্যক্রমের সীমারেখা মুছে ফেলা।
যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্সের সাবেক কমান্ডার ডেমেট্রিস অ্যান্ড্রু গ্রাইমস বলেন, ‘রুশ গোয়েন্দা সংস্থার মতোই রাশিয়ার সামরিক বাহিনী এখন ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধের জন্য সক্রিয় প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
ক্রেমলিন অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, ইউরোপ অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। গত শনিবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রদিওন মিরোশনিক রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসকে বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ‘দুঃখজনকভাবে এক যুদ্ধংদেহী অবস্থান’ নিয়েছে। তিনি ইউরোপীয় রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে, মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সরাসরি দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ ঠেকানোর চেষ্টা’ করছে তারা। অথচ এই যোগাযোগই হতে পারত সংঘাত নিরসনের পথ।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া তার কথিত যুদ্ধ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এখন ‘ওয়েপনাইজেশন অব এভরিথিং’ বা ‘সবকিছুকেই অস্ত্রে’ পরিণত করছে। রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দেওয়া ‘ছায়া নৌবহরের’ তেলবাহী জাহাজগুলো ন্যাটোর যোগাযোগ নজরদারির সরঞ্জাম বহন করছে ও বাল্টিক সাগরে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে, এমন সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
ফরাসি কমান্ডোরা ২ অক্টোবর বোরাকায় নামের রুশ তেলবাহী ট্যাংকার আটক করে। সেটির বিরুদ্ধে ড্রোন উড়ানোর অভিযোগ আছে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে কোপেনহেগেনের বিমানবন্দর যখন ড্রোনের ঝাঁকের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তখন এটি শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে ছিল। পরে ডেনমার্কের পশ্চিম উপকূলে যাত্রাকালে কয়েকটি আঞ্চলিক বিমানবন্দরেও ড্রোন হামলার রিপোর্ট পাওয়া যায়।
চীনা নির্মিত ড্রোন শনাক্তকরণ যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোও মস্কো-বেইজিং আঁতাতের ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা। ২২ সেপ্টেম্বর ড্রোন ঝাঁকে আক্রান্ত হওয়ার দিনে নরওয়ের রাজধানী অসলো বিমানবন্দরের চীনা নির্মিত ড্রোন শনাক্তকরণ ব্যবস্থা নির্মাতা কোম্পানি ডি-জে-আই অ্যারোস্কোপ নিজেই বন্ধ করে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিমানবন্দর, তেল ও গ্যাস টার্মিনালসহ নানা স্থাপনা এখনো ড্রোন হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে।
ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডের আকাশে রুশ ড্রোন শনাক্তের পর পোলিশ এফ-১৬, ডাচ এফ-৩৫ ও ইতালির আকাশ নজরদারি বিমান (এডব্লিউএসি) তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু এসব প্রতিরোধ পুরোপুরি ব্যয়সাধ্য যুদ্ধবিমানের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে ইউক্রেন বিমান, অ্যান্টিড্রোন ড্রোন, কাঁধে বহনযোগ্য প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও পিকআপভিত্তিক মোবাইল ইউনিটের সমন্বয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে; এখন তারা হেলিকপ্টার ব্যবহারের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
ইউক্রেন থেকে শিক্ষা নিচ্ছে পোল্যান্ড। আকাশসীমায় অনুপ্রবেশের কয়েক দিনের মধ্যেই তারা ইউক্রেনীয় যোদ্ধা অভিজ্ঞদের নিয়োগ দিয়েছে ড্রোনচালক প্রশিক্ষণে এবং ঘোষণা দিয়েছে—নিজ ভূখণ্ডের আকাশে কোনো অচেনা উড়ন্ত বস্তু দেখলেই গুলি করে নামানো হবে। ন্যাটোর পূর্ব সীমান্তের এই দেশগুলোই রুশ হুমকি নিয়ে সবচেয়ে সরব ও সক্রিয়।
ডেনমার্ক এই মাসে জানিয়েছে, পুরোনো ট্যাংকারগুলোর পরিবেশগত ও বিমা-সংক্রান্ত মান যাচাই শুরু করবে। তবে এখনো কোনোটি জব্দ করেনি। স্টকহোমভিত্তিক বিশ্লেষক উইসলান্ডার মনে করেন, নর্ডিক ও বাল্টিক দেশগুলো ‘আরও বৃহৎ পরিসরে’ পদক্ষেপ নিতে পারে ‘ছায়া নৌবহরের বিরুদ্ধে’, যা রাশিয়ার দুর্বল জায়গায় আঘাত হনবে। কিন্তু তিনি হতাশ হয়ে বলেন, ‘এখনো কোনো সমন্বিত নীতি তৈরি হয়নি।’
বিশেষজ্ঞ গ্রাইমস বলেন, ‘পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে বাণিজ্যিক নৌবহর পরিদর্শন বা নিষেধাজ্ঞা, বাল্টিক নজরদারি বাড়ানো, উদ্ভাবনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া বিপুল অ্যান্টিড্রোন বিনিয়োগ, আর ঐক্যবদ্ধ নিষেধাজ্ঞা—সবই এখন জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন।’
ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট নজরদারি ও দূরপাল্লার সিগন্যাল গোয়েন্দা তথ্যের ওপর নির্ভর করেছে। সম্প্রতি জানা গেছে, রুশ তেল শোধনাগারে ইউক্রেনের সফল হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, লক্ষ্য নির্ধারণ, সময় নির্বাচন ও রুশ প্রতিরক্ষা এড়িয়ে আক্রমণপথ ঠিক করায় মার্কিন সহায়তা ছিল।
কিন্তু এখন সেই সহযোগিতার মান ভেঙে পড়ছে, বলছেন বিশেষজ্ঞ ফিৎসানাকিস। তাঁর ভাষায়, ‘মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে একদল অকার্যকর রাজনৈতিক নেতৃত্ব পদ্ধতিগতভাবে দুর্বল করে ফেলছে। তারা সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, অথচ রুশ হুমকিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।’
ডাচ গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার কমিয়ে দিয়েছে। এমন পদক্ষেপ অন্য ইউরোপীয় সংস্থাগুলোও নিচ্ছে। ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অনেক আগেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করা বন্ধ করেছে। তাদের আশঙ্কা, এতে তাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক উন্মুক্ত হয়ে পড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সমস্যাটা রাজনৈতিক। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ–সংক্রান্ত অবস্থান এতটাই দোদুল্যমান যে তাদের প্রতিটি ঘোষণা দিনের মেজাজের ওপর নির্ভর করছে—কোনো কৌশলগত অর্থই এতে নেই।’ অর্থাৎ, এখন কেউই নিশ্চিত নয়, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কার পক্ষে।
ফিৎসানাকিসের মতে, ইউক্রেন আক্রমণ রাশিয়ার জন্য ‘১৯৪০–এর দশকের পর সবচেয়ে বিজয়মন্ডিত সময়’, কারণ ‘এই যুদ্ধে তারা ন্যাটোকে কার্যত পঙ্গু করে দিয়েছে—ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যেও বিভাজন তৈরি করেছে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ, এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই সঙ্গে ইউরোপীয় ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান দূরত্ব মহাদেশটিকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলন ছিল তারই এক নিদর্শন। সম্মেলনে বেলজিয়াম ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ও ইউরোপের সামরিক শিল্পকে শক্তিশালী করতে রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহারের পরিকল্পনা আটকে দেয়। কিন্তু গুপ্তচরবৃত্তি ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতার জন্য সন্দেহের মুখে থাকা তথাকথিত রুশ ‘শ্যাডো ফ্লিটের’ বিষয়টি সম্মেলনে একবারও উল্লেখ করা হয়নি।
কোস্টাল ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাপ্লায়েড ইন্টেলিজেন্সের সহকারী পরিচালক জোসেফ ফিৎসানাকিস বলেন, ‘১৯৩৯ সালে নাৎসি বাহিনী যখন ইউরোপের দোরগোড়ায় ছিল, সে সময় ইউরোপ যতটা অপ্রস্তুত ছিল, আজও রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের মুখে ইউরোপ ঠিক ততটাই প্রস্তুতিহীন।’
ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশগুলোর মতো সামনের সারির রাষ্ট্রগুলো পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ভ্রমে নেই। কিন্তু পশ্চিম ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে। তারা অভ্যন্তরীণ বিভাজন আর রুশ ভুয়া তথ্যের অপপ্রচারে এমনভাবে বিপর্যস্ত যে তাদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে, তা তারা বুঝতেই পারছে না।’
২০২২ সাল থেকে রুশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ইউরোপজুড়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড, গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালানোর অভিযোগ রয়েছে। মার্কিন থিংকট্যাংক আটলান্টিক কাউন্সিলের উত্তর ইউরোপবিষয়ক পরিচালক আনা ভিসল্যান্ডার বলেন, ‘রাশিয়ার এই হাইব্রিড যুদ্ধের উদ্দেশ্য আমাদের মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তোলা। যেন আমরা শান্তিকালেও নিরাপত্তাহীন বোধ করি এবং শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার লক্ষ্য পূরণের পথে; অর্থাৎ ইউরোপকে আবার প্রভাববলয়ে ভাগ করার দিকে আমরা নিজেরাই দুর্বল হয়ে পড়ি।’
গত ১০ সেপ্টেম্বর এই অভিযুক্ত রুশ তৎপরতা প্রকাশ্যে রূপ নেয়। সেদিন দুই ডজন রুশ গেরান-২ ড্রোন ন্যাটোর আকাশসীমায় প্রবেশ করে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার শক্তিমত্তা পরীক্ষা করে। এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধের সাড়ে তিন বছরে মাত্র তিনটি ড্রোন পোল্যান্ডে প্রবেশ করেছিল।
এর ৯ দিন পর এস্তোনিয়ার উপকূলবর্তী ফিনল্যান্ড উপসাগরের আকাশে তিনটি রুশ মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান ১২ মিনিট ধরে মহড়া দিয়ে যায়। তখন এস্তোনিয়ায় অবস্থানরত ইতালির এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ছুটে গিয়ে সেগুলোকে প্রতিহত করে। এরপর ২১ সেপ্টেম্বর জার্মানি বাল্টিক সাগরের আকাশে উড্ডয়নরত এক রুশ ইলিউশিন-২০ এম নজরদারি বিমানকে বাধা দেয়। বিমানটি কোনো ফ্লাইট পরিকল্পনা বা রেডিও যোগাযোগ ছাড়াই উড়ছিল।
চার দিন পর ন্যাটো জানায়, লিথুয়ানিয়ার সিয়াউলাই ঘাঁটি থেকে হাঙ্গেরির দুটি গ্রিপেন যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন করে তিনটি রুশ বিমান—একটি সু-৩০, একটি সু-৩৫ এবং একটি মিগ-৩১কে ফিরিয়ে দেয়। এই যুদ্ধবিমানগুলো লাটভিয়ার আকাশসীমার কাছাকাছি উড়ছিল। ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে রাশিয়া সব সময় বিশেষ তৎপরতা শুরু করে এমন সময়, যেটিকে তারা বলে “বিশেষ সময়” বা “জরুরি সময়”। এই সময়টি আসলে যুদ্ধ শুরুর আগে উত্তেজনা চূড়ায় ওঠার মুহূর্ত।’
২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্ক করছে যে আগামী পাঁচ থেকে আট বছরের মধ্যে রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে। জার্মানির ফেডারেল গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মার্টিন ইয়াগার এই মাসে দেশটির পার্লামেন্ট বুন্দেসট্যাগে বলেন, যুদ্ধ তারও আগে হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘২০২৯ সালের আগে রাশিয়া আক্রমণ করবে না—এই ভেবে আমাদের বসে থাকলে চলবে না। ইউরোপ এখন এক নতুন ধরনের মুখোমুখি অবস্থার মধ্যে রয়েছে।’ এই অবস্থায় ইউরোপীয় সামরিক পরিকল্পনাবিদেরা যেটিকে ‘জরুরি সময়’ বলেন, সেটিকেই তারা আবার ‘ফেজ জিরো’ নামেও অভিহিত করেছে। যার অর্থ হলো প্রতিক্রিয়া পরীক্ষা, তথ্য সংগ্রহ এবং বেসামরিক ও সামরিক কার্যক্রমের সীমারেখা মুছে ফেলা।
যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্সের সাবেক কমান্ডার ডেমেট্রিস অ্যান্ড্রু গ্রাইমস বলেন, ‘রুশ গোয়েন্দা সংস্থার মতোই রাশিয়ার সামরিক বাহিনী এখন ন্যাটোর সঙ্গে যুদ্ধের জন্য সক্রিয় প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
ক্রেমলিন অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, ইউরোপ অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। গত শনিবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রদিওন মিরোশনিক রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাসকে বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ‘দুঃখজনকভাবে এক যুদ্ধংদেহী অবস্থান’ নিয়েছে। তিনি ইউরোপীয় রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে, মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সরাসরি দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ ঠেকানোর চেষ্টা’ করছে তারা। অথচ এই যোগাযোগই হতে পারত সংঘাত নিরসনের পথ।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া তার কথিত যুদ্ধ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এখন ‘ওয়েপনাইজেশন অব এভরিথিং’ বা ‘সবকিছুকেই অস্ত্রে’ পরিণত করছে। রাশিয়ার নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দেওয়া ‘ছায়া নৌবহরের’ তেলবাহী জাহাজগুলো ন্যাটোর যোগাযোগ নজরদারির সরঞ্জাম বহন করছে ও বাল্টিক সাগরে ড্রোন হামলা চালাচ্ছে, এমন সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
ফরাসি কমান্ডোরা ২ অক্টোবর বোরাকায় নামের রুশ তেলবাহী ট্যাংকার আটক করে। সেটির বিরুদ্ধে ড্রোন উড়ানোর অভিযোগ আছে। সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে কোপেনহেগেনের বিমানবন্দর যখন ড্রোনের ঝাঁকের কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তখন এটি শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে ছিল। পরে ডেনমার্কের পশ্চিম উপকূলে যাত্রাকালে কয়েকটি আঞ্চলিক বিমানবন্দরেও ড্রোন হামলার রিপোর্ট পাওয়া যায়।
চীনা নির্মিত ড্রোন শনাক্তকরণ যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলোও মস্কো-বেইজিং আঁতাতের ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা। ২২ সেপ্টেম্বর ড্রোন ঝাঁকে আক্রান্ত হওয়ার দিনে নরওয়ের রাজধানী অসলো বিমানবন্দরের চীনা নির্মিত ড্রোন শনাক্তকরণ ব্যবস্থা নির্মাতা কোম্পানি ডি-জে-আই অ্যারোস্কোপ নিজেই বন্ধ করে দেয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিমানবন্দর, তেল ও গ্যাস টার্মিনালসহ নানা স্থাপনা এখনো ড্রোন হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে।
ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ডের আকাশে রুশ ড্রোন শনাক্তের পর পোলিশ এফ-১৬, ডাচ এফ-৩৫ ও ইতালির আকাশ নজরদারি বিমান (এডব্লিউএসি) তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু এসব প্রতিরোধ পুরোপুরি ব্যয়সাধ্য যুদ্ধবিমানের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে ইউক্রেন বিমান, অ্যান্টিড্রোন ড্রোন, কাঁধে বহনযোগ্য প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও পিকআপভিত্তিক মোবাইল ইউনিটের সমন্বয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে; এখন তারা হেলিকপ্টার ব্যবহারের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
ইউক্রেন থেকে শিক্ষা নিচ্ছে পোল্যান্ড। আকাশসীমায় অনুপ্রবেশের কয়েক দিনের মধ্যেই তারা ইউক্রেনীয় যোদ্ধা অভিজ্ঞদের নিয়োগ দিয়েছে ড্রোনচালক প্রশিক্ষণে এবং ঘোষণা দিয়েছে—নিজ ভূখণ্ডের আকাশে কোনো অচেনা উড়ন্ত বস্তু দেখলেই গুলি করে নামানো হবে। ন্যাটোর পূর্ব সীমান্তের এই দেশগুলোই রুশ হুমকি নিয়ে সবচেয়ে সরব ও সক্রিয়।
ডেনমার্ক এই মাসে জানিয়েছে, পুরোনো ট্যাংকারগুলোর পরিবেশগত ও বিমা-সংক্রান্ত মান যাচাই শুরু করবে। তবে এখনো কোনোটি জব্দ করেনি। স্টকহোমভিত্তিক বিশ্লেষক উইসলান্ডার মনে করেন, নর্ডিক ও বাল্টিক দেশগুলো ‘আরও বৃহৎ পরিসরে’ পদক্ষেপ নিতে পারে ‘ছায়া নৌবহরের বিরুদ্ধে’, যা রাশিয়ার দুর্বল জায়গায় আঘাত হনবে। কিন্তু তিনি হতাশ হয়ে বলেন, ‘এখনো কোনো সমন্বিত নীতি তৈরি হয়নি।’
বিশেষজ্ঞ গ্রাইমস বলেন, ‘পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে বাণিজ্যিক নৌবহর পরিদর্শন বা নিষেধাজ্ঞা, বাল্টিক নজরদারি বাড়ানো, উদ্ভাবনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া বিপুল অ্যান্টিড্রোন বিনিয়োগ, আর ঐক্যবদ্ধ নিষেধাজ্ঞা—সবই এখন জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন।’
ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট নজরদারি ও দূরপাল্লার সিগন্যাল গোয়েন্দা তথ্যের ওপর নির্ভর করেছে। সম্প্রতি জানা গেছে, রুশ তেল শোধনাগারে ইউক্রেনের সফল হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, লক্ষ্য নির্ধারণ, সময় নির্বাচন ও রুশ প্রতিরক্ষা এড়িয়ে আক্রমণপথ ঠিক করায় মার্কিন সহায়তা ছিল।
কিন্তু এখন সেই সহযোগিতার মান ভেঙে পড়ছে, বলছেন বিশেষজ্ঞ ফিৎসানাকিস। তাঁর ভাষায়, ‘মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে একদল অকার্যকর রাজনৈতিক নেতৃত্ব পদ্ধতিগতভাবে দুর্বল করে ফেলছে। তারা সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, অথচ রুশ হুমকিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।’
ডাচ গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার কমিয়ে দিয়েছে। এমন পদক্ষেপ অন্য ইউরোপীয় সংস্থাগুলোও নিচ্ছে। ফিৎসানাকিস বলেন, ‘ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অনেক আগেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করা বন্ধ করেছে। তাদের আশঙ্কা, এতে তাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক উন্মুক্ত হয়ে পড়তে পারে।’
তিনি বলেন, ‘সমস্যাটা রাজনৈতিক। এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ–সংক্রান্ত অবস্থান এতটাই দোদুল্যমান যে তাদের প্রতিটি ঘোষণা দিনের মেজাজের ওপর নির্ভর করছে—কোনো কৌশলগত অর্থই এতে নেই।’ অর্থাৎ, এখন কেউই নিশ্চিত নয়, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কার পক্ষে।
ফিৎসানাকিসের মতে, ইউক্রেন আক্রমণ রাশিয়ার জন্য ‘১৯৪০–এর দশকের পর সবচেয়ে বিজয়মন্ডিত সময়’, কারণ ‘এই যুদ্ধে তারা ন্যাটোকে কার্যত পঙ্গু করে দিয়েছে—ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যেও বিভাজন তৈরি করেছে।’
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

চীন কী শেষ পর্যন্ত তাইওয়ানে আক্রমণ করেই বসবে? গত পরশু মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে পা রাখার পর থেকে চীন যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তাতে এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
০৪ আগস্ট ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা করছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান নানা সমস্যা ‘অনেকটাই সমাধান হবে।’ আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বেশ
২ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি। ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের প্রধান মারিয়া কোরিনা মাচাদোর দলের চারজন প্রতিনিধি ক্যাপিটল হিল অফিসের সোফায় বসেন। বৈঠক চলছে মাইক ওয়াল্টজের সঙ্গে, যিনি কিছুদিন পরই আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক হতে যাচ্ছেন।
১ দিন আগে
সংবিধানবিরোধী হলেও তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) এয়ারফোর্স ওয়ানে মালয়েশিয়া থেকে জাপানের টোকিও যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সম্ভাবনার কথা জানান। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্ট
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

সংবিধানবিরোধী হলেও তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) এয়ারফোর্স ওয়ানে মালয়েশিয়া থেকে জাপানের টোকিও যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সম্ভাবনার কথা জানান। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্টের জন্য নির্ধারিত দুই মেয়াদের সীমা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাওয়ার বিষয়টি এখনো বিবেচনা করেননি তিনি।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—তিনি কি চাইলেই তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন? আইনগতভাবে ট্রাম্পের সামনে কী কী বাধা রয়েছে? যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান কী বলে?
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২২তম সংশোধনীতে স্পষ্ট বলা আছে, কেউ দুবারের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে পারবেন না।
১৯৫১ সালে এই সংশোধনী অনুমোদিত হয়। এর আগপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের জন্য দুই মেয়াদের সীমা ছিল একধরনের অলিখিত প্রথা, যা দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সময় থেকে প্রচলিত ছিল।
ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট সেই প্রথা ভেঙে তৃতীয়বার নির্বাচিত হন এবং চতুর্থ মেয়াদের শুরুতেই ১৯৪৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এরপরই দুই মেয়াদের সাংবিধানিক সীমা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারণ করা হয়।
কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ের অধ্যাপক ওয়েন আঙ্গার বলেন, সংবিধানে বিষয়টি স্পষ্ট—প্রেসিডেন্ট দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তিনি মনে করেন, ট্রাম্প আদালতে গেলেও সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তাহলে ট্রাম্পপন্থীরা কি সংবিধান বদলাতে পারবেন? তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব হলেও বাস্তবে এটি প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে বিভাজন গভীর রয়েছে।
সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট—দুটিতেই দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের সমর্থন দরকার। বিকল্পভাবে, দুই-তৃতীয়াংশ অঙ্গরাজ্যের সম্মতিতে বিশেষ কনভেনশন ডাকতে হয়। এরপর ৫০টি রাজ্যের মধ্যে কমপক্ষে ৩৮টি রাজ্যের আইনসভাকে সংশোধনী অনুমোদন করতে হবে।
বর্তমানে রিপাবলিকানরা প্রতিনিধি পরিষদে অল্প ব্যবধানে (২১৯–২১৩) সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সিনেটে ৫৩–৪৭ আসন নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তারা ২৮টি রাজ্যের আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা রাখে।
এই প্রেক্ষাপটে টেনেসির রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান অ্যান্ডি ওগলস চলতি বছরের জানুয়ারিতে একটি প্রস্তাব দেন—যাতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সর্বোচ্চ তিনটি অ-ক্রমিক (non-consecutive বা ধারাবাহিক নয়) মেয়াদে দায়িত্ব পালনের অনুমতি চাওয়া হয়।
যদি এই সংশোধনী কখনো পাস হয়, তাহলে ২০১৭ ও ২০২৫ সালের অ-ক্রমিক মেয়াদ শেষে ট্রাম্প ২০২৯ সালে তৃতীয়বার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের ফেরার সুযোগ আছে কি? ট্রাম্পের বক্তব্য, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না।
প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী প্রার্থী যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ থাকে। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আইনগতভাবে আমি সেটা করতে পারি। তবে আমি মনে করি, মানুষ সেটা ভালোভাবে নেবে না। এটা খুবই চালাকি করা হবে।’
কিন্তু আইন অনুযায়ী, ট্রাম্প আসলে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদেও প্রার্থী হতে পারবেন না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১২তম সংশোধনীতে বলা আছে—যে ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ারও যোগ্য নন।

সংবিধানবিরোধী হলেও তৃতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) এয়ারফোর্স ওয়ানে মালয়েশিয়া থেকে জাপানের টোকিও যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ সম্ভাবনার কথা জানান। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রেসিডেন্টের জন্য নির্ধারিত দুই মেয়াদের সীমা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাওয়ার বিষয়টি এখনো বিবেচনা করেননি তিনি।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—তিনি কি চাইলেই তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন? আইনগতভাবে ট্রাম্পের সামনে কী কী বাধা রয়েছে? যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান কী বলে?
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২২তম সংশোধনীতে স্পষ্ট বলা আছে, কেউ দুবারের বেশি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হতে পারবেন না।
১৯৫১ সালে এই সংশোধনী অনুমোদিত হয়। এর আগপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের জন্য দুই মেয়াদের সীমা ছিল একধরনের অলিখিত প্রথা, যা দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের সময় থেকে প্রচলিত ছিল।
ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট সেই প্রথা ভেঙে তৃতীয়বার নির্বাচিত হন এবং চতুর্থ মেয়াদের শুরুতেই ১৯৪৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এরপরই দুই মেয়াদের সাংবিধানিক সীমা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্ধারণ করা হয়।
কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ের অধ্যাপক ওয়েন আঙ্গার বলেন, সংবিধানে বিষয়টি স্পষ্ট—প্রেসিডেন্ট দুই মেয়াদের বেশি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তিনি মনে করেন, ট্রাম্প আদালতে গেলেও সাফল্য পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
তাহলে ট্রাম্পপন্থীরা কি সংবিধান বদলাতে পারবেন? তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব হলেও বাস্তবে এটি প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে বিভাজন গভীর রয়েছে।
সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট—দুটিতেই দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের সমর্থন দরকার। বিকল্পভাবে, দুই-তৃতীয়াংশ অঙ্গরাজ্যের সম্মতিতে বিশেষ কনভেনশন ডাকতে হয়। এরপর ৫০টি রাজ্যের মধ্যে কমপক্ষে ৩৮টি রাজ্যের আইনসভাকে সংশোধনী অনুমোদন করতে হবে।
বর্তমানে রিপাবলিকানরা প্রতিনিধি পরিষদে অল্প ব্যবধানে (২১৯–২১৩) সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সিনেটে ৫৩–৪৭ আসন নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তারা ২৮টি রাজ্যের আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা রাখে।
এই প্রেক্ষাপটে টেনেসির রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান অ্যান্ডি ওগলস চলতি বছরের জানুয়ারিতে একটি প্রস্তাব দেন—যাতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সর্বোচ্চ তিনটি অ-ক্রমিক (non-consecutive বা ধারাবাহিক নয়) মেয়াদে দায়িত্ব পালনের অনুমতি চাওয়া হয়।
যদি এই সংশোধনী কখনো পাস হয়, তাহলে ২০১৭ ও ২০২৫ সালের অ-ক্রমিক মেয়াদ শেষে ট্রাম্প ২০২৯ সালে তৃতীয়বার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের ফেরার সুযোগ আছে কি? ট্রাম্পের বক্তব্য, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না।
প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী প্রার্থী যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ থাকে। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘আইনগতভাবে আমি সেটা করতে পারি। তবে আমি মনে করি, মানুষ সেটা ভালোভাবে নেবে না। এটা খুবই চালাকি করা হবে।’
কিন্তু আইন অনুযায়ী, ট্রাম্প আসলে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদেও প্রার্থী হতে পারবেন না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১২তম সংশোধনীতে বলা আছে—যে ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন, তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ারও যোগ্য নন।

চীন কী শেষ পর্যন্ত তাইওয়ানে আক্রমণ করেই বসবে? গত পরশু মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ানে পা রাখার পর থেকে চীন যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তাতে এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
০৪ আগস্ট ২০২২
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা করছেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান নানা সমস্যা ‘অনেকটাই সমাধান হবে।’ আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকটি দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে বেশ
২ ঘণ্টা আগে
২০২৫ সালের ৬ জানুয়ারি। ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের প্রধান মারিয়া কোরিনা মাচাদোর দলের চারজন প্রতিনিধি ক্যাপিটল হিল অফিসের সোফায় বসেন। বৈঠক চলছে মাইক ওয়াল্টজের সঙ্গে, যিনি কিছুদিন পরই আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিতে যাওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক হতে যাচ্ছেন।
১ দিন আগে
ইউরোপ নতুন করে রাশিয়ার সামরিক ও গোয়েন্দা তৎপরতার মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু রাশিয়ার এই হুমকি ঠেকাতে পুরোপুরি অপ্রস্তুত ইউরোপ। এমনই সতর্কবার্তাই দিয়েছেন একাধিক বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলছেন, বাল্টিক ও উত্তর সাগর ঘিরে রুশ কর্মকাণ্ডের নতুন অধ্যায় শুরু হলেও ইউরোপ এখনো ঘুমিয়ে আছে।
২ দিন আগে