অনলাইন ডেস্ক
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির পদক্ষেপগুলো ক্রমশ যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নতি স্বীকারের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সম্প্রতি, বাণিজ্য সংক্রান্ত উত্তেজনা প্রশমন ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক তৈরির লক্ষ্যে ভারত সরকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন পণ্যের শুল্ক কমিয়েছে।
এটি স্পষ্টতই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কূটনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভারতকে ‘শুল্করাজ’ বলে কটাক্ষ করে আসছেন। তাঁর মতে, ভারত মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ হারে বাণিজ্যিক শুল্ক আরোপ করে থাকে।
ভারতের এই উদ্যোগ ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে দ্বিগুণ করে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টার অংশ।
এই নতি স্বীকারের সবচেয়ে প্রকট উদাহরণ প্রতিরক্ষা খাত। এই বিষয়টি ভারতের সামরিক কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকের কাছে, সরকারের এই মার্কিন তোষণ নীতি বিস্ময়কর মনে হতে পারে। বিশেষ করে, যখন বর্তমান বিজেপি সরকার নিজেদের চরম জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে উপস্থাপন করে! তবে এর মূল প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই নীতির সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের আদর্শগত অবস্থানের যথেষ্ট সামঞ্জস্য আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভারতনীতিকে ব্যাপকভাবে কয়েকটি ঐতিহাসিক পর্যায়ে ভাগ করা যায়। ভারতের স্বাধীনতার পরবর্তী প্রাথমিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ছিল সজাগ কিন্তু দ্বিধাগ্রস্ত। ভারতের জোট নিরপেক্ষ নীতি, সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক মডেল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে ওয়াশিংটন দিল্লিকে সন্দেহের চোখে দেখত, আবার কৌশলগত দিক থেকে কিছুটা ঘনিষ্ঠতা, কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখত। সোভিয়েতের পতনের পর স্নায়ু যুদ্ধোত্তর সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে উদীয়মান গণতান্ত্রিক শক্তি এবং চীনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য শক্তির ভারসাম্য হিসেবে দেখতে শুরু করে। এ সময় ধীরে ধীরে সম্পর্কের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়, যা অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে তার বিস্তৃত কৌশলগত কাঠামোর অংশ হিসেবে একীভূত করতে চেয়েছে। ২০০৮ সালের পরমাণু চুক্তির মতো উদ্যোগ দুই দেশের সম্পর্কে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ভারত–যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদারত্বের যুগে (২০০০–১৬) চীনের উত্থান এবং বৈশ্বিক পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে দিল্লি ক্রমশ ওয়াশিংটনের অন্যতম প্রধান অংশীদার হয়ে ওঠে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে। বুশ থেকে শুরু করে ওবামা প্রশাসনের অধীনে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে গভীর হয়ে ওঠে আনুষ্ঠানিক চুক্তি, কৌশলগত আলোচনা এবং প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে। মূলত এসবের মাধ্যমে এশিয়ায় চীনের প্রভাব ঠেকাতে দুই দেশের এক অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়।
ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের (২০১৭–২১) সময় যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি বিনিময় মূলক ও সংরক্ষণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে। যদিও চীনের বিপরীতে শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় ভারতকে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, তবে ট্রাম্পের নীতির অন্যতম দিক ছিল একতরফা ব্যবসায়িক স্বার্থ ব্যবস্থা ও শুল্ক চাপ। তিনি ভারতের উচ্চ শুল্কের প্রায়ই সমালোচনা করেছেন এবং শুল্ক সংস্কারে চাপ দিয়েছেন। দুই দেশের সম্পর্কের এই পর্যায় পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় এক ব্যাপক পরিবর্তনকেই প্রতিফলিত করে। ট্রাম্পের আমলে কৌশলগত ও আদর্শগত ভিত্তির পরিবর্তে অর্থনৈতিক প্রভাব এবং সরাসরি জোরালো বাণিজ্য আলোচনার কৌশল বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছে।
অর্থনৈতিক সমন্বয়ের পাশাপাশি, ভারতের ভূরাজনৈতিক অবস্থানেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছে। ঐতিহাসিকভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ‘বাফার স্টেট’ হিসেবে দেখেছে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে ভারতের ভূমিকাকে নমনীয় করে রাখতে চেয়েছিল। তবে, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে আক্রমণ করে বলছে, দিল্লি এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব কার্যকরভাবে সীমিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে স্বাধীনভাবে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার পরিবর্তে, ভারত এখন আরও বেশি করে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার মোতাবেক তার নীতি সাজানোর প্রবণতা দেখাচ্ছে। এমনকি, ভারত এর ফলে দীর্ঘদিনের বন্ধু রাশিয়াকে হারানোর মতো অবস্থানে নিপতিত হওয়ার ঝুঁকি জেনেও এই কাজ করছে। সাম্প্রতিক বিশ্লেষণগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এক সময়ের নির্ভরযোগ্য প্রতিরক্ষা সহযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী রাশিয়া থেকে ভারতের ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হওয়া এই পরিবর্তনেরই নিদর্শন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সহযোগিতা গ্রহণের ফলে নিজের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি মার্কিন দাবির বিপরীতে কম ভূরাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার শর্তে দিল্লির অবস্থান আরও নাজুক হয়ে উঠতে পারে।
ভারতের কৌশলগত অবস্থানের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি বহু-মেরু এশিয়ায় স্বাধীনভাবে ভারসাম্য বজায় রাখা, যেখানে ওয়াশিংটন এবং মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক ব্যবহার করে জাতীয় স্বার্থ হাসিল করা হবে। তবে, শুল্ক সংস্কারে আগ্রহ প্রকাশ এবং রাশিয়া থেকে কার্যত দূরত্ব সৃষ্টি করার মাধ্যমে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার ভারতের স্বাধীন কৌশলগত হিসাব-নিকাশকে মার্কিন স্বার্থের প্রতি আনুগত্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র কেবল শুল্কের জন্যই চাপ সৃষ্টি করেনি বরং ভারতকে একটি বৈরী ভূমিকায় ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। যার ফলে, দেশটিকে এখন থেকে মার্কিন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয় ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং ঐতিহাসিক সম্পর্কগুলো থেকে দূরে সরে আসতে হবে।
বিজেপি সরকারের নীতি পরিবর্তন, বিশেষ করে মার্কিন পণ্য আমদানিতে শুল্ক হ্রাস এবং রাশিয়া থেকে সরে আসা ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রতি ব্যাপক আত্মসমর্পণের প্রতীক হিসেবে দেখা যেতে পারে। যদিও এসব পদক্ষেপ বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি উপকারিতা বয়ে আনতে পারে, তবুও এগুলো ভারতের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। যার ফলে ভারত আমেরিকা–নিয়ন্ত্রিত কৌশলগত কাঠামোর মধ্যে এক ‘অধীন অংশীদার’ হিসেবে পরিণত হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন আর কেবল ভারতের কৌশলগত পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায় থাকতে চাইছে না, বরং ওয়াশিংটন তার স্বার্থের সঙ্গে আরও নিঃশর্তভাবে দিল্লির সংহতি দাবি করছে। এই অবস্থায় ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে—দেশটি কঠোরভাবে নিজের অর্জিত কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন রক্ষা করবে, নাকি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার যুগে যুক্তরাষ্ট্রের ‘আদেশে’ আরও বেশি একমত হবে।
ভারত সরকার ২০২৫ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে ট্রাম্পের উদ্বেগ সমাধান ও বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—আমদানি করা মোটরসাইকেলের ওপর মৌলিক শুল্কে গুরুত্বপূর্ণ ছাড়। বিশেষ করে, হার্লে–ডেভিডসনের মতো ব্র্যান্ডগুলোর ক্ষেত্রে এই ছাড় দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প বিশেষভাবে এসব ব্র্যান্ডের কথা উল্লেখ করেছিলেন। বিলাসবহুল গাড়ির আমদানি শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে, কৃষি অবকাঠামো উন্নয়ন শুল্ক (এআইডিসি) ৪০ শতাংশ আরোপের পর কার্যকর শুল্ক হবে ১১০ শতাংশ।
এ ছাড়া, সরকার ৩০টিরও বেশি আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক পর্যালোচনা করছে। যার মধ্যে আছে—বিলাসবহুল গাড়ি, সোলার প্যানেল এবং রাসায়নিক। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো—সম্ভবত আমদানি বৃদ্ধির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় বাড়ানো, যা ভারতের ন্যায্য বাণিজ্যনীতি অনুসরণের ইঙ্গিত।
সাবেক অর্থসচিব তুহিন কান্ত পাণ্ডে ভারত সরকারের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান এড়িয়ে চলার ইচ্ছার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। অনেক পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক কমানোর মাধ্যমে ভারত সরকারের এই অবস্থান প্রতিফলিত হয়েছে। এই নীতি খোলামেলা ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করার জন্য নেওয়া হয়েছে এবং এটি বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতির সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ। এ ছাড়া, ভারত বিভিন্ন আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আরও বেশি মার্কিন জ্বালানি পণ্য কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
ভারত সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির দিকেও ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে এর জন্য বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। তবে, ভারত যখন অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে সংগ্রাম করছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কারোপ ভারতের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ভারতের গড় শুল্ক হার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। বিশেষ করে কৃষি ও পরিবহন সরঞ্জাম খাতে। এই শুল্ক বৈষম্য ভারত–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ঘাটতির কারণ হলেও নতুন বাণিজ্য নীতিগুলো এই গতিপথে প্রভাব ফেলতে পারে।
বিজেপি সরকারের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক নীতিমালা ক্রমেই পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দিকে ঝুঁকছে, যা ভারতের ঐতিহাসিক জোট নিরপেক্ষ এবং স্বনির্ভর অবস্থানের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। সমালোচকদের দাবি, প্রতিরক্ষা চুক্তি ও বাণিজ্য চুক্তির সন্ধানে সরকার জাতীয়তাবাদী মৌলিক স্বার্থের প্রতি আপস করেছে। উন্নতমানের যুদ্ধবিমান, যেমন এফ-৩৫ কেনার বিষয়ে চলমান আলোচনা এই পরিবর্তনেরই উদাহরণ। জোট নিরপেক্ষতা এবং দেশে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনের ঐতিহ্য রক্ষার পরিবর্তে, ভারত যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনছে। অনেকেই এই প্রবণতাকে পশ্চিমা ‘বিতর্কিত’ স্বার্থের প্রতি ভারতের একপ্রকার আত্মসমর্পণ বলে মনে করছেন।
ভারতের অবস্থানের এই পরিবর্তন এক ধরনের স্ববিরোধিতাও সৃষ্টি করে। ২০১৮ সালে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে ৫ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করে যে, কোনো দেশ যেন একসঙ্গে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ও এস-৪০০ ব্যবহার না করে। কারণ, দেশটির মতে, এস-৪০০–এর রাডারগুলো এফ-৩৫–এর স্টিলথ ফিচার (ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারের সক্ষমতা) ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এটি ভারতকে এক কঠিন অবস্থানে ফেলেছে। এখানে দেশটিকে রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাড়তে থাকা কৌশলগত সম্পর্কের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে চীনের পক্ষ থেকে বৃদ্ধি পাওয়া হুমকির বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর বর্তমানে ৩০ স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান আছে, যা অনুমোদিত ৪২ দশমিক ৫ স্কোয়াড্রনের তুলনায় অনেক কম। হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (হাল) এখনো চতুর্থ প্রজন্মের তেজস যুদ্ধবিমান উৎপাদনে কাঙ্ক্ষিত গতিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ। ভারতের নিজস্ব পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রকল্প—অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট (এএসসিএ)—উৎপাদন শুরু হতে এখনো কমপক্ষে ১০–১২ বছর সময় লাগবে। এই প্রেক্ষাপটে, ভারতীয় বিমানবাহিনী অন্তর্বর্তী সমাধান হিসেবে ২ থেকে ৩ স্কোয়াড্রন (৩৬ থেকে ৫৪টি বিমান) এফ–৩৫ কেনার ব্যাপারে আগ্রহী। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যুদ্ধ প্রতিরোধের সক্ষমতা গড়ে তুলতে হলে অত্যাধুনিক সামরিক সক্ষমতা থাকা জরুরি।’
বর্তমানে বিশ্বের কার্যকর পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে রয়েছে— মার্কিন এফ-৩৫ লাইটনিং-২ এবং এফ/এ-২২ র্যাপ্টর, চীনের চেংদু জে-২০ এবং রাশিয়ার সুখোই-৫৭। চীন এরই মধ্যে ভারতের সীমান্তের কাছে জে-২০০ মোতায়েন করেছে এবং শিগগিরই পাকিস্তানকে এটির একটি সংস্করণ সরবরাহ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, বেইজিং সম্প্রতি দুটি নতুন ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের প্রোটোটাইপের পরীক্ষা চালিয়েছে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
যদি ভারত এফ–৩৫ কেনার চুক্তির দিকে যায়, তবে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। যার মধ্যে ব্যয়, প্রযুক্তিগত প্রবেশাধিকার, দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় এবং ভূরাজনৈতিক প্রভাব। পাশাপাশি, ভারতের এএমসিএ প্রকল্পেও অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত বছর সরকার এর উন্নয়নের জন্য ১৫ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ করেছিল। দেশে উৎপাদনে বিলম্ব হলে ভারতের বিদেশি প্রতিরক্ষা সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরতা আরও গভীর হবে, যা কৌশলগত স্বনির্ভরতা অর্জনের দীর্ঘদিনের লক্ষ্যকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
বিজেপি সরকার ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘লজিস্টিকস এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অব অ্যাগ্রিমেন্ট’ স্বাক্ষর করে ভারতের ঐতিহাসিক জোট নিরপেক্ষ নীতি থেকে সরে আসে, যার ফলে উভয় দেশ একে অপরের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি পায়। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারগুলো যেখানে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে সম্পর্ক বজায় রাখার নীতি গ্রহণ করেছিল, বিজেপি সরকার সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে ভারতকে যুক্ত করেছে, বিশেষ করে চীনের মোকাবিলায়। পাশাপাশি, প্রতিরক্ষা খাতে বেসরকারিকরণের প্রতি বিজেপির জোরালো মনোযোগ সামরিক জাতীয়তাবাদকে আরও শক্তিশালী করেছে, যা একদিকে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি এবং অন্যদিকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্যকে উসকে দেয়। এটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সেই আদর্শিক ধারাই বহন করে, যা একটি ‘সামরিক দিক থেকে বলীয়ান হিন্দু রাষ্ট্রের’ স্বপ্ন দেখে।
আরএসএস নিজেদের চরম জাতীয়তাবাদী হিসেবে উপস্থাপন করলেও, এর ইতিহাস স্পষ্টতই সাম্রাজ্যবাদপন্থী। এর আদর্শিক পথপ্রদর্শক—সাভারকর, হেডগেওয়ার ও গোলওয়ালকর—কখনোই ব্রিটিশ শাসনের সক্রিয় বিরোধিতা করেননি। বরং, তাঁরা উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের চেয়ে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ গঠনের লক্ষ্যে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সাভারকর প্রাথমিক পর্যায়ে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকলেও পরে ব্রিটিশ স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাম্প্রদায়িক বিষয়ে মনোযোগ দেন। হেডগেওয়ার স্বল্প সময়ের জন্য বিপ্লবী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তবে পরে তিনি আরএসএসকে উপনিবেশবিরোধী কার্যকলাপ থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। গোলওয়ালকর তো ব্রিটিশ বিরোধিতাকেই প্রতিক্রিয়াশীল বলে খারিজ করে দেন এবং যুক্তি দেন যে ‘হিন্দু ভারতের’ প্রকৃত শত্রু হলো মুসলিম, খ্রিষ্টান ও কমিউনিস্টরা—সাম্রাজ্যবাদ নয়।
আরএসএস-এর ঐতিহাসিক ভূমিকা উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের নয়, বরং সাম্প্রদায়িক বিভাজনের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের সহায়ক হয়ে ওঠার—যা বিভাজন ও শাসনের ঔপনিবেশিক কৌশলের সঙ্গে একেবারে সামঞ্জস্যপূর্ণ। গত এক দশকে ভারত ইতিমধ্যেই অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে। ট্রাম্পের দাবির মুখে শুল্ক হ্রাসের ফলে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) শূন্য দশমিক ১ থেকে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ পয়েন্ট পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে বলে অনুমান করেছে গোল্ডম্যান স্যাকস, যা আরও অর্থনৈতিক চাপের ইঙ্গিত দেয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আউটলুকে প্রকাশিত নিবন্ধ
লেখক: ভারতীয় সাংবাদিক, বিশ্লেষক ও লেখক আনন্দ তেলতুম্বদে
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ–সম্পাদক আব্দুর রহমান
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির পদক্ষেপগুলো ক্রমশ যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নতি স্বীকারের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সম্প্রতি, বাণিজ্য সংক্রান্ত উত্তেজনা প্রশমন ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক তৈরির লক্ষ্যে ভারত সরকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন পণ্যের শুল্ক কমিয়েছে।
এটি স্পষ্টতই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কূটনৈতিক তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভারতকে ‘শুল্করাজ’ বলে কটাক্ষ করে আসছেন। তাঁর মতে, ভারত মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ হারে বাণিজ্যিক শুল্ক আরোপ করে থাকে।
ভারতের এই উদ্যোগ ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে দ্বিগুণ করে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রচেষ্টার অংশ।
এই নতি স্বীকারের সবচেয়ে প্রকট উদাহরণ প্রতিরক্ষা খাত। এই বিষয়টি ভারতের সামরিক কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। অনেকের কাছে, সরকারের এই মার্কিন তোষণ নীতি বিস্ময়কর মনে হতে পারে। বিশেষ করে, যখন বর্তমান বিজেপি সরকার নিজেদের চরম জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে উপস্থাপন করে! তবে এর মূল প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই নীতির সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের আদর্শগত অবস্থানের যথেষ্ট সামঞ্জস্য আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভারতনীতিকে ব্যাপকভাবে কয়েকটি ঐতিহাসিক পর্যায়ে ভাগ করা যায়। ভারতের স্বাধীনতার পরবর্তী প্রাথমিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ছিল সজাগ কিন্তু দ্বিধাগ্রস্ত। ভারতের জোট নিরপেক্ষ নীতি, সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক মডেল এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে ওয়াশিংটন দিল্লিকে সন্দেহের চোখে দেখত, আবার কৌশলগত দিক থেকে কিছুটা ঘনিষ্ঠতা, কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখত। সোভিয়েতের পতনের পর স্নায়ু যুদ্ধোত্তর সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে উদীয়মান গণতান্ত্রিক শক্তি এবং চীনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য শক্তির ভারসাম্য হিসেবে দেখতে শুরু করে। এ সময় ধীরে ধীরে সম্পর্কের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়, যা অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে তার বিস্তৃত কৌশলগত কাঠামোর অংশ হিসেবে একীভূত করতে চেয়েছে। ২০০৮ সালের পরমাণু চুক্তির মতো উদ্যোগ দুই দেশের সম্পর্কে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ভারত–যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অংশীদারত্বের যুগে (২০০০–১৬) চীনের উত্থান এবং বৈশ্বিক পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে দিল্লি ক্রমশ ওয়াশিংটনের অন্যতম প্রধান অংশীদার হয়ে ওঠে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে। বুশ থেকে শুরু করে ওবামা প্রশাসনের অধীনে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে গভীর হয়ে ওঠে আনুষ্ঠানিক চুক্তি, কৌশলগত আলোচনা এবং প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে। মূলত এসবের মাধ্যমে এশিয়ায় চীনের প্রভাব ঠেকাতে দুই দেশের এক অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়।
ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের (২০১৭–২১) সময় যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি বিনিময় মূলক ও সংরক্ষণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে। যদিও চীনের বিপরীতে শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় ভারতকে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, তবে ট্রাম্পের নীতির অন্যতম দিক ছিল একতরফা ব্যবসায়িক স্বার্থ ব্যবস্থা ও শুল্ক চাপ। তিনি ভারতের উচ্চ শুল্কের প্রায়ই সমালোচনা করেছেন এবং শুল্ক সংস্কারে চাপ দিয়েছেন। দুই দেশের সম্পর্কের এই পর্যায় পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় এক ব্যাপক পরিবর্তনকেই প্রতিফলিত করে। ট্রাম্পের আমলে কৌশলগত ও আদর্শগত ভিত্তির পরিবর্তে অর্থনৈতিক প্রভাব এবং সরাসরি জোরালো বাণিজ্য আলোচনার কৌশল বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছে।
অর্থনৈতিক সমন্বয়ের পাশাপাশি, ভারতের ভূরাজনৈতিক অবস্থানেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটেছে। ঐতিহাসিকভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে চীনের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ‘বাফার স্টেট’ হিসেবে দেখেছে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে ভারতের ভূমিকাকে নমনীয় করে রাখতে চেয়েছিল। তবে, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে আক্রমণ করে বলছে, দিল্লি এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব কার্যকরভাবে সীমিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে স্বাধীনভাবে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার পরিবর্তে, ভারত এখন আরও বেশি করে যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার মোতাবেক তার নীতি সাজানোর প্রবণতা দেখাচ্ছে। এমনকি, ভারত এর ফলে দীর্ঘদিনের বন্ধু রাশিয়াকে হারানোর মতো অবস্থানে নিপতিত হওয়ার ঝুঁকি জেনেও এই কাজ করছে। সাম্প্রতিক বিশ্লেষণগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এক সময়ের নির্ভরযোগ্য প্রতিরক্ষা সহযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী রাশিয়া থেকে ভারতের ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হওয়া এই পরিবর্তনেরই নিদর্শন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সহযোগিতা গ্রহণের ফলে নিজের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি মার্কিন দাবির বিপরীতে কম ভূরাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার শর্তে দিল্লির অবস্থান আরও নাজুক হয়ে উঠতে পারে।
ভারতের কৌশলগত অবস্থানের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটি বহু-মেরু এশিয়ায় স্বাধীনভাবে ভারসাম্য বজায় রাখা, যেখানে ওয়াশিংটন এবং মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক ব্যবহার করে জাতীয় স্বার্থ হাসিল করা হবে। তবে, শুল্ক সংস্কারে আগ্রহ প্রকাশ এবং রাশিয়া থেকে কার্যত দূরত্ব সৃষ্টি করার মাধ্যমে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার ভারতের স্বাধীন কৌশলগত হিসাব-নিকাশকে মার্কিন স্বার্থের প্রতি আনুগত্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র কেবল শুল্কের জন্যই চাপ সৃষ্টি করেনি বরং ভারতকে একটি বৈরী ভূমিকায় ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। যার ফলে, দেশটিকে এখন থেকে মার্কিন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয় ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং ঐতিহাসিক সম্পর্কগুলো থেকে দূরে সরে আসতে হবে।
বিজেপি সরকারের নীতি পরিবর্তন, বিশেষ করে মার্কিন পণ্য আমদানিতে শুল্ক হ্রাস এবং রাশিয়া থেকে সরে আসা ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রতি ব্যাপক আত্মসমর্পণের প্রতীক হিসেবে দেখা যেতে পারে। যদিও এসব পদক্ষেপ বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি উপকারিতা বয়ে আনতে পারে, তবুও এগুলো ভারতের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে। যার ফলে ভারত আমেরিকা–নিয়ন্ত্রিত কৌশলগত কাঠামোর মধ্যে এক ‘অধীন অংশীদার’ হিসেবে পরিণত হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন আর কেবল ভারতের কৌশলগত পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকায় থাকতে চাইছে না, বরং ওয়াশিংটন তার স্বার্থের সঙ্গে আরও নিঃশর্তভাবে দিল্লির সংহতি দাবি করছে। এই অবস্থায় ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে—দেশটি কঠোরভাবে নিজের অর্জিত কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন রক্ষা করবে, নাকি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার যুগে যুক্তরাষ্ট্রের ‘আদেশে’ আরও বেশি একমত হবে।
ভারত সরকার ২০২৫ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে ট্রাম্পের উদ্বেগ সমাধান ও বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—আমদানি করা মোটরসাইকেলের ওপর মৌলিক শুল্কে গুরুত্বপূর্ণ ছাড়। বিশেষ করে, হার্লে–ডেভিডসনের মতো ব্র্যান্ডগুলোর ক্ষেত্রে এই ছাড় দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প বিশেষভাবে এসব ব্র্যান্ডের কথা উল্লেখ করেছিলেন। বিলাসবহুল গাড়ির আমদানি শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে, কৃষি অবকাঠামো উন্নয়ন শুল্ক (এআইডিসি) ৪০ শতাংশ আরোপের পর কার্যকর শুল্ক হবে ১১০ শতাংশ।
এ ছাড়া, সরকার ৩০টিরও বেশি আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক পর্যালোচনা করছে। যার মধ্যে আছে—বিলাসবহুল গাড়ি, সোলার প্যানেল এবং রাসায়নিক। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো—সম্ভবত আমদানি বৃদ্ধির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারদের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় বাড়ানো, যা ভারতের ন্যায্য বাণিজ্যনীতি অনুসরণের ইঙ্গিত।
সাবেক অর্থসচিব তুহিন কান্ত পাণ্ডে ভারত সরকারের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান এড়িয়ে চলার ইচ্ছার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। অনেক পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক কমানোর মাধ্যমে ভারত সরকারের এই অবস্থান প্রতিফলিত হয়েছে। এই নীতি খোলামেলা ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করার জন্য নেওয়া হয়েছে এবং এটি বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতির সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ। এ ছাড়া, ভারত বিভিন্ন আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আরও বেশি মার্কিন জ্বালানি পণ্য কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
ভারত সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির দিকেও ইঙ্গিত দিয়েছে। তবে এর জন্য বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। তবে, ভারত যখন অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে সংগ্রাম করছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কারোপ ভারতের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ভারতের গড় শুল্ক হার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। বিশেষ করে কৃষি ও পরিবহন সরঞ্জাম খাতে। এই শুল্ক বৈষম্য ভারত–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ঘাটতির কারণ হলেও নতুন বাণিজ্য নীতিগুলো এই গতিপথে প্রভাব ফেলতে পারে।
বিজেপি সরকারের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক নীতিমালা ক্রমেই পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দিকে ঝুঁকছে, যা ভারতের ঐতিহাসিক জোট নিরপেক্ষ এবং স্বনির্ভর অবস্থানের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। সমালোচকদের দাবি, প্রতিরক্ষা চুক্তি ও বাণিজ্য চুক্তির সন্ধানে সরকার জাতীয়তাবাদী মৌলিক স্বার্থের প্রতি আপস করেছে। উন্নতমানের যুদ্ধবিমান, যেমন এফ-৩৫ কেনার বিষয়ে চলমান আলোচনা এই পরিবর্তনেরই উদাহরণ। জোট নিরপেক্ষতা এবং দেশে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনের ঐতিহ্য রক্ষার পরিবর্তে, ভারত যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো থেকে সামরিক সরঞ্জাম কিনছে। অনেকেই এই প্রবণতাকে পশ্চিমা ‘বিতর্কিত’ স্বার্থের প্রতি ভারতের একপ্রকার আত্মসমর্পণ বলে মনে করছেন।
ভারতের অবস্থানের এই পরিবর্তন এক ধরনের স্ববিরোধিতাও সৃষ্টি করে। ২০১৮ সালে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে ৫ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করে যে, কোনো দেশ যেন একসঙ্গে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ও এস-৪০০ ব্যবহার না করে। কারণ, দেশটির মতে, এস-৪০০–এর রাডারগুলো এফ-৩৫–এর স্টিলথ ফিচার (ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারের সক্ষমতা) ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এটি ভারতকে এক কঠিন অবস্থানে ফেলেছে। এখানে দেশটিকে রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাড়তে থাকা কৌশলগত সম্পর্কের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে চীনের পক্ষ থেকে বৃদ্ধি পাওয়া হুমকির বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর বর্তমানে ৩০ স্কোয়াড্রন যুদ্ধবিমান আছে, যা অনুমোদিত ৪২ দশমিক ৫ স্কোয়াড্রনের তুলনায় অনেক কম। হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (হাল) এখনো চতুর্থ প্রজন্মের তেজস যুদ্ধবিমান উৎপাদনে কাঙ্ক্ষিত গতিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ। ভারতের নিজস্ব পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রকল্প—অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট (এএসসিএ)—উৎপাদন শুরু হতে এখনো কমপক্ষে ১০–১২ বছর সময় লাগবে। এই প্রেক্ষাপটে, ভারতীয় বিমানবাহিনী অন্তর্বর্তী সমাধান হিসেবে ২ থেকে ৩ স্কোয়াড্রন (৩৬ থেকে ৫৪টি বিমান) এফ–৩৫ কেনার ব্যাপারে আগ্রহী। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যুদ্ধ প্রতিরোধের সক্ষমতা গড়ে তুলতে হলে অত্যাধুনিক সামরিক সক্ষমতা থাকা জরুরি।’
বর্তমানে বিশ্বের কার্যকর পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানগুলোর মধ্যে রয়েছে— মার্কিন এফ-৩৫ লাইটনিং-২ এবং এফ/এ-২২ র্যাপ্টর, চীনের চেংদু জে-২০ এবং রাশিয়ার সুখোই-৫৭। চীন এরই মধ্যে ভারতের সীমান্তের কাছে জে-২০০ মোতায়েন করেছে এবং শিগগিরই পাকিস্তানকে এটির একটি সংস্করণ সরবরাহ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, বেইজিং সম্প্রতি দুটি নতুন ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের প্রোটোটাইপের পরীক্ষা চালিয়েছে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
যদি ভারত এফ–৩৫ কেনার চুক্তির দিকে যায়, তবে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। যার মধ্যে ব্যয়, প্রযুক্তিগত প্রবেশাধিকার, দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় এবং ভূরাজনৈতিক প্রভাব। পাশাপাশি, ভারতের এএমসিএ প্রকল্পেও অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত বছর সরকার এর উন্নয়নের জন্য ১৫ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ করেছিল। দেশে উৎপাদনে বিলম্ব হলে ভারতের বিদেশি প্রতিরক্ষা সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরতা আরও গভীর হবে, যা কৌশলগত স্বনির্ভরতা অর্জনের দীর্ঘদিনের লক্ষ্যকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
বিজেপি সরকার ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘লজিস্টিকস এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অব অ্যাগ্রিমেন্ট’ স্বাক্ষর করে ভারতের ঐতিহাসিক জোট নিরপেক্ষ নীতি থেকে সরে আসে, যার ফলে উভয় দেশ একে অপরের সামরিক ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি পায়। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারগুলো যেখানে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে সম্পর্ক বজায় রাখার নীতি গ্রহণ করেছিল, বিজেপি সরকার সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থের সঙ্গে ভারতকে যুক্ত করেছে, বিশেষ করে চীনের মোকাবিলায়। পাশাপাশি, প্রতিরক্ষা খাতে বেসরকারিকরণের প্রতি বিজেপির জোরালো মনোযোগ সামরিক জাতীয়তাবাদকে আরও শক্তিশালী করেছে, যা একদিকে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি এবং অন্যদিকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্যকে উসকে দেয়। এটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সেই আদর্শিক ধারাই বহন করে, যা একটি ‘সামরিক দিক থেকে বলীয়ান হিন্দু রাষ্ট্রের’ স্বপ্ন দেখে।
আরএসএস নিজেদের চরম জাতীয়তাবাদী হিসেবে উপস্থাপন করলেও, এর ইতিহাস স্পষ্টতই সাম্রাজ্যবাদপন্থী। এর আদর্শিক পথপ্রদর্শক—সাভারকর, হেডগেওয়ার ও গোলওয়ালকর—কখনোই ব্রিটিশ শাসনের সক্রিয় বিরোধিতা করেননি। বরং, তাঁরা উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের চেয়ে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ গঠনের লক্ষ্যে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সাভারকর প্রাথমিক পর্যায়ে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকলেও পরে ব্রিটিশ স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাম্প্রদায়িক বিষয়ে মনোযোগ দেন। হেডগেওয়ার স্বল্প সময়ের জন্য বিপ্লবী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তবে পরে তিনি আরএসএসকে উপনিবেশবিরোধী কার্যকলাপ থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। গোলওয়ালকর তো ব্রিটিশ বিরোধিতাকেই প্রতিক্রিয়াশীল বলে খারিজ করে দেন এবং যুক্তি দেন যে ‘হিন্দু ভারতের’ প্রকৃত শত্রু হলো মুসলিম, খ্রিষ্টান ও কমিউনিস্টরা—সাম্রাজ্যবাদ নয়।
আরএসএস-এর ঐতিহাসিক ভূমিকা উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের নয়, বরং সাম্প্রদায়িক বিভাজনের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনের সহায়ক হয়ে ওঠার—যা বিভাজন ও শাসনের ঔপনিবেশিক কৌশলের সঙ্গে একেবারে সামঞ্জস্যপূর্ণ। গত এক দশকে ভারত ইতিমধ্যেই অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে। ট্রাম্পের দাবির মুখে শুল্ক হ্রাসের ফলে ভারতের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) শূন্য দশমিক ১ থেকে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ পয়েন্ট পর্যন্ত সংকুচিত হতে পারে বলে অনুমান করেছে গোল্ডম্যান স্যাকস, যা আরও অর্থনৈতিক চাপের ইঙ্গিত দেয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আউটলুকে প্রকাশিত নিবন্ধ
লেখক: ভারতীয় সাংবাদিক, বিশ্লেষক ও লেখক আনন্দ তেলতুম্বদে
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ–সম্পাদক আব্দুর রহমান
চীনে এআইভিত্তিক ব্যবসা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এরই মধ্যে ৪ হাজার ৫০০-এর বেশি প্রতিষ্ঠান এআই নিয়ে কাজ করছে। বেইজিংয়ের স্কুলগুলোতে শিশুদের জন্য এআই কোর্স চালু করা হবে, আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এআই শিক্ষা সম্প্রসারণে কাজ করে চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আগামী ১৫ বছরে চীন ১০ ট্রিলিয়ন ইউয়ান
৫ ঘণ্টা আগেরাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ কীভাবে শেষ হবে, তা নিয়ে বিশ্বনেতাদের উদ্বেগের কোনো শেষ নেই। এই যুদ্ধ বন্ধে সর্বশেষ আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে সৌদি আরবে। সোমবার রাতে লোহিত সাগরের তীরে অবস্থিত জেদ্দা শহরে আলোচনার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কিকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন
১ দিন আগেরুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২২ সালে যখন ২ লাখ সৈন্য পাঠিয়ে ইউক্রেনে আক্রমণের নির্দেশ দেন, তখন তাঁর লক্ষ্য ছিল কয়েক দিনের মধ্যে রাজধানী কিয়েভ দখল করা। এই আক্রমণের মাধ্যমে তিনি পশ্চিমাপন্থী সরকার উৎখাত করে ইউক্রেনকে আবার রাশিয়ায় ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুতিন ব্যর্থ হন। তিন বছর পার হলেও
২ দিন আগেসম্প্রতি বিশ্ব কি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে? যদি এমনটা মনে হয়, তবে আপনার ধারণা ভুল নয়। বাস্তবিকই বিশ্বে সংঘাতের সংখ্যা বাড়ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থেকে শুরু করে ইসরায়েল-গাজা ও সুদান। এসব সংঘাতের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো, এগুলো পুরুষেরাই চালাচ্ছে। অন্যদিকে, বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও ক্ষমতাধর পুরুষদের
৪ দিন আগে