Ajker Patrika

ইরানকে থামাতে কেন স্টিলথ বিমান আর ৩০ হাজার পাউন্ডের বোমাই লাগবে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ২২: ৩৪
মার্কিন বি২ স্টিলথ বোমার। ছবি: এএফপি
মার্কিন বি২ স্টিলথ বোমার। ছবি: এএফপি

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ৩০ হাজার পাউন্ডের মার্কিন ‘বাংকার বাস্টার’ বোমার সম্ভাব্য আঘাত সামনে রেখে মধ্যপ্রাচ্য এখন এক অনিশ্চিত দ্বন্দ্বের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি ইরানে সামরিক হামলার কথা বিবেচনা করছেন বলে এনবিসি নিউজকে জানিয়েছে হোয়াইট হাউসের একটি সূত্র। ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যালের এক পোস্টে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা করার সক্ষমতার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি লিখেছেন, ‘তিনি (খামেনি) সহজ টার্গেট, তবে এখনো সেখানে নিরাপদ। আমরা এখনই তাকে মারছি না।’

খামেনি অবশ্য পাল্টা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘যদি তারা হামলা চালায়, তাহলে তাদের যে ক্ষতি হবে, তা ইরানের ক্ষতির চেয়ে বহুগুণ বেশি হবে এবং কখনো পুনরুদ্ধার করতে পারবে না।’

এই উত্তেজনা আরও বেড়ে যায় ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর চমকপ্রদ হামলা চালালে। এরপর মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে এবং জ্বালানির দাম আকাশচুম্বী হয়।

তবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা সহজ নয়। দেশটির সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থাপনা হচ্ছে ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্র; যা একটি পাহাড়ের নিচে ৩০০ ফুট গভীরে অবস্থিত এবং ঘন কংক্রিট দিয়ে নির্মিত। এই স্থাপনাকে ধ্বংস করা সম্ভব একমাত্র ‘জিবিইউ-৫৭’ নামক বোমা দিয়ে, যা যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোনো দেশের কাছে নেই। আর এই বোমা বহন ও নিক্ষেপ করতে পারে শুধু ‘বি ২ স্পিরিট’ স্টিলথ বোমার।

এ কারণে ইসরায়েল চায়, ইরানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুক্ত হোক। তবে এমন একটি অভিযানে একবার বোমা ফেলা যথেষ্ট নয়, বলছেন সামরিক বিশেষজ্ঞ ডেভিড ডেস রোচেস। তাঁর মতে, ‘একাধিক বোমা একই জায়গায় ফেলতে হবে এবং তারপরও নিশ্চিত হওয়া যাবে না স্থাপনাটির কতটা ধ্বংস হয়েছে। হতে পারে, স্থলবাহিনী পাঠিয়ে বিস্ফোরক স্থাপন করে পুরো অবকাঠামো ধ্বংস করতে হবে।’

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের বহু বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারি এবং সেনা ঘাঁটি ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যদি হামলা করে, ইরান পাল্টা আঘাত হানতে পারে, বিশেষ করে ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে। এমন হামলায় মার্কিন সেনা নিহত হলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় আরও বড় ধরনের সামরিক অভিযানে যেতে পারেন।

ইউরেশিয়া গ্রুপের বিশ্লেষক গ্রেগরি ব্রু বলেন, ‘ইরান স্পষ্ট করে দিয়েছে, তাদের মাটিতে হামলা হলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালাবে। এতে যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।’

জিবিইউ-৫৭ বোমার বিস্ফোরণ সীমিত এলাকায় ক্ষতি করে, তারপরও এটি ইরানের ওপর গভীর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলবে বলে মত বিশ্লেষকদের। ইতিমধ্যে দেশটির অন্যান্য পারমাণবিক কেন্দ্রে ক্ষতি এবং বিকিরণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, ট্রাম্প প্রশাসন কি শুধু পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা সীমিত রাখবে, নাকি ইসরায়েলের মতো তারা ইরানে সরকার পতনের পথেও যাবে?

এ বিষয়ে ডেস রোচেস বলেছেন, ‘যুদ্ধ তখনই শেষ হবে, যখন ইসরায়েল নিশ্চিত হবে—ইরান পারমাণবিক বোমা বানানোর সক্ষমতা হারিয়েছে।’

তবে ক্রাইসিস গ্রুপের ইরানবিষয়ক পরিচালক আলি ভায়েজ বলেন, ‘ইরান হয়তো পারমাণবিক স্থাপনা হারাবে। কিন্তু জ্ঞানের ভান্ডার তাদের থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত