Ajker Patrika

‘বৌদ্ধ সন্ত্রাসের মুখ’: মিয়ানমারের ভিক্ষু উইরাথু ফের আলোচনায়

আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১২: ৫২
‘বৌদ্ধ সন্ত্রাসের মুখ’: মিয়ানমারের ভিক্ষু উইরাথু ফের আলোচনায়

মূর্তির মতো নিশ্চল ও নির্মল তাঁর মুখ; জীবনযাপনে সন্ন্যাসী। বৌদ্ধদের ধর্মোপদেশ দিয়ে বেড়ান তিনি। মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালের মন্দিরে গেলে দেখা যাবে, শত শত উপাসক তাঁর সামনে ধ্যানমগ্ন। পিঠ থেকে তাঁদের ঘাম ঝরছে, মুখনিঃসৃত মন্ত্র ভাসছে বাতাসে। আপাতচোখে দৃশ্যটি শান্তির। কিন্তু অন্তরালে ঘৃণার বীজ অঙ্কুরিত হচ্ছে বলে দীর্ঘদিনের অভিযোগ, যার তির সরাসরি ওই সন্ন্যাসীর দিকে।

এক দশক আগে খ্যাতনামা টাইম ম্যাগাজিনে তাঁকে নিয়ে ‘বৌদ্ধ সন্ত্রাসের মুখ’ শিরোনামে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। উগ্রপন্থী ভিক্ষুরা কীভাবে এশিয়ায় মুসলিমবিদ্বেষী সহিংসতা ছড়াচ্ছিলেন তা ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। তিনি আসিন উইরাথু। কয়েক দশক ধরে বিদ্বেষ ছড়ানোর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের প্রেক্ষাপট তৈরি করার অন্যতম কুশীলব ধরা হয় তাঁকে। রোহিঙ্গা নিপীড়ন ও গণহত্যায় অভিযুক্ত জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বে জান্তা সরকার সম্প্রতি তাঁকে পুরস্কৃত করার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছেন এই ভিক্ষু।

একদশক আগে খ্যাতনামা টাইম ম্যাগাজিনে তাঁকে নিয়ে ‘বৌদ্ধ সন্ত্রাসের মুখ’ শিরোনামে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল।গত ৪ জানুয়ারি মিয়ানমারের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে ‘মিয়ানমারের কল্যাণে অসামান্য অবদানের’ জন্য এই উইরাথুকে ‘থিরি পিয়াঞ্চি’ সম্মাননা দেওয়া হয়। বর্মি প্রাধান্যবাদ ও বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদের চরম প্রবক্তা উইরাথু মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষের জোয়ার সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখেন। মুসলিম মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বর্জনে বৌদ্ধদের উৎসাহিত করতে ‘৯৬৯’ নামে আন্দোলনের প্রবক্তাও ছিলেন তিনি। বিশ্বদরবারে তিনি ‘বার্মিজ বিন লাদেন’ নামে পরিচিত।

২০১৬ সালে গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ক্ষমতাগ্রহণের পর উইরাথুর ক্ষমতায় কিছুটা ভাটা পড়েছিল। এরপর ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে এনএলডি একতরফাভাবে ক্ষমতায় আসার পর তাঁকে কারারুদ্ধ করেছিল।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে উইরাথুর সম্পর্কটা বেশ ঘোলাটে। ফলে সম্প্রতি সেনাপ্রধান তাঁকে যে পুরস্কার দিল, তা নিয়মিত ঘটনা নাকি অন্য কিছু, তা স্পষ্ট নয়। ২০১৫ সালের নির্বাচনের সময় তিনি সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (ইউএসডিপি) পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেও জান্তা সরকার তাঁকে পুরস্কৃত করতে পারে।

মিয়ানমারের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে ‘মিয়ানমারের কল্যাণে অসামান্য অবদানের’ জন্য উইরাথুকে ‘থিরি পিয়াঞ্চি’ সম্মাননা দেওয়া হয়।২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে এনএলডি সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করেছে সামরিক সরকার। এরপর উইরাথুকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে তার আগে পুরো সাত মাস তাঁকে কারাগারে থাকতে হয়েছে। সেনা সরকার ক্ষমতাগ্রহণের পরপরই উইরাথুকে মুক্তি না দেওয়ায় তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা এমনটাও বলেছিলেন, জান্তা সরকারের কাছে উইথারুর প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে।

তবে বিশ্লষকদের এসব মন্তব্যকে মিথ্যা প্রমাণ করে উইথারু আবার স্বমহিমায় ফিরেছেন এবং জান্তা সরকারের কাছ থেকে পুরস্কারও নিলেন সম্প্রতি।

উইথারুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রায়ই টানা ৯০ মিনিট ধরে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভূমিতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ঘৃণা করার অনেক উপায় বর্ণনা করতেন। তিনি ভক্তদের বলতেন, ‘এখন শান্ত হওয়ার সময় নয়। এখন জেগে ওঠার সময়।’ এভাবে ঘৃণা ছড়িয়ে জাতিগত বিভেদ চরমে তুলে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নিপীড়ন চালানো হয় কয়েক দশক ধরে। সেই নিপীড়নের জমিনে জন্ম নেয় সশস্ত্র আন্দোলন, তাঁর আড়ালে সৃষ্টি করা হয় সন্ত্রাস।

সেই প্রেক্ষাপটে ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর স্থাপনায় হামলার পর অজুহাত দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়ি বাড়ি শুরু হয় এক নৃশংস অভিযান। এই মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর সেনাবাহিনী নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও চালায়। বর্বতার মুখে বাংলাদেশের দিকে প্রাণ নিয়ে ছুটতে থাকেন তারা। এই ঢলে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ এখন সবচেয়ে বড় অভিবাসী আশ্রয়দাতা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানের বর্বরতার মধ্যে ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগে জাতিসংঘের আদালতে মামলা চলছে।

টাইম ম্যাগাজিন পড়ছেন উইরাথু।ছয় বছর আগের ওই রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের বহু আগে ২০১২ সালজুড়ে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে সংখ্যালঘু মুসলিমরা ব্যাপক আক্রমণের শিকার হন। উইরাথুর উসকানিমূলক বক্তব্য এর ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়। আর রাজধানীতে বাস করেন ৪৬ বছর বয়সী উইরাথু। সেখানে বসেই তিনি ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক ঘৃণা প্রচার করেন। মিয়ানমারের ৬ কোটি জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশ মুসলিম। অথচ এই সামান্য সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে দেশের সংস্কৃতির জন্য হুমকি মনে করেন উইরাথু। তিনি এক সাক্ষাৎকারে টাইম ম্যাগাজিনের সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মুসলিমরা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করছে। তারা আমাদের নারীদের অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে এবং ধর্ষণ করছে। তারা মিয়ানমার দখল করতে চায়। কিন্তু আমি তা হতে দেব না। মিয়ানমারে থাকতে হলে, তাদের অবশ্যই বৌদ্ধধর্ম পালন করতে হবে।’

সরকার সঠিক সংখ্যা না জানিয়ে বলছে, বহু মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলেছে, সংখ্যাটি শত শত। সেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা দেশটির পশ্চিমাঞ্চল থেকে রাজধানী পর্যন্ত ছড়ায়।

১৩৫ জাতিগোষ্ঠী-অধ্যুষিত দেশ মিয়ানমার। সেখানে এ ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দেশের সমাজিক ও রাজনৈতিক ভারসাম্যকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়। এর সূত্র ধরে রোহিঙ্গা নারীদের দুটির বেশি সন্তান নেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। দেশটির উত্তরে বাস করেন বেশির ভাগ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। তাঁরা বলেছে, সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কাচিন বিদ্রোহীদের প্রায়ই লড়াই হয়। এতে ধর্মীয় বিভাজন বেড়েছে।

শুধু মিয়ানমারই নয়, এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলেও উগ্র বৌদ্ধরা ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধরা সরকারের উচ্চপদে আসীন হয়। তাঁরা শ্রীলঙ্কায় মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের সম্পত্তি কেড়ে নিতে ভূমিকা রাখে। থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলেও বৌদ্ধ ভিক্ষুরা আসন গাড়ে। সেখানে মুসলিমদের সঙ্গে ২০০৪ সালে লড়াই হয়েছিল, যে লড়াইয়ে অন্তত ৫ হাজার জন প্রাণ হারিয়েছে। সেখানে সংখ্যালঘু মুসলিমদের অনুভূতিতে আঘাত করতে থাই সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মিলেমিশে কাজ করে।

ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন ফেসবুক-টুইটারের মাধ্যমে খুব সহজেই গুজব ও কুসংস্কারগুলো সীমানা অতিক্রম করে পাশের দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। মালয়েশিয়ায় অনেক বার্মিজ অভিবাসী কাজ করে। সেখানে ২০১৩ সালের জুনে মুসলিমরা কয়েকজন বৌদ্ধ বার্মিজকে হত্যা করেছে। সেই ঘটনাকে মিয়ানমারে মুসলিম হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ধরেছিল মালয়েশিয়া সরকার।

আড়াই হাজার বছর আগে গৌতম বুদ্ধ অহিংসা, প্রেম ও দয়ার বাণী প্রচার করেছিলেন। কিন্তু অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের মতোই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাজনীতিকেরাও সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেওয়ার লোভ থেকে মুক্ত নন। এশিয়া যখন সাম্রাজ্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিল, তখন বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কেউ কেউ দিনের পর দিন অনাহারে থেকেও আন্দোলন করেছেন। এ সবই তাঁদের আত্মত্যাগকে নির্দেশ করে।

২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে এনএলডি ক্ষমতায় আসার পর উইরাথুকে কারারুদ্ধ করেছিলেন এনএলডি নেতা অং সাং সু কি।

আজ থেকে অর্ধশতক বছর আগে দক্ষিণ ভিয়েতনামের নিপীড়নমূলক শাসনের প্রতিবাদের সময় সাইগন এলাকায় থিচ কোয়াং ডুক নামের এজন বৌদ্ধ সন্নাসী পদ্মাসনে বসা অবস্থায় পুড়ে মারা গিয়েছিলেন। এ ছাড়া ২০০৭ সালে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মিয়ানমারে একটি ব্যর্থ গণতান্ত্রিক বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিল। তারা জান্তার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করে সারা বিশ্বের সহানুভূতি কুড়িয়েছিল।

তাই প্রশ্ন উঠেছে, কোনটা রাজনৈতিক কার্যক্রম আর কোনটা রাজনৈতিক সহিংসতা? এর শুরু কোথায়, শেষই বা কোথায়? যেকোনো ধর্মকে তার ভিত্তিমূলে আঘাত করে ধ্বংসাত্মক শক্তিতে পরিণত করা যায়। এখন বৌদ্ধ ধর্মের পালা।

ঘৃণার মন্ত্র
মিয়ানমারের মান্দালয়ের নিউ মাসোয়েইন মঠের একটি উঁচু প্ল্যাটফর্মের ওপর হাঁটু মুড়ে ধ্যানমগ্ন ভঙ্গিতে বসে বার্মিজ বিন লাদেন খ্যাত উইরাথু টাইম ম্যাগাজিনের সাংবাদিকদের বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শরীরে কলঙ্কিত কালো মুসলিমদের রক্ত। আরবরা জাতিসংঘকে হাইজ্যাক করেছে। মিয়ানমারের ৯০ শতাংশ মুসলিম উগ্রপন্থী ও বদমাশ। আমাদের নিজস্ব ধর্ম (বৌদ্ধ) ও বর্ণের যত্ন নেওয়া গণতন্ত্র রক্ষার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

একজন আরব সন্ত্রাসীর সঙ্গে (বিন লাদেন) তাঁর নাম যুক্ত হয়ে পড়াকে তিনি অবশ্য বিড়ম্বনা হিসবে দেখেন না। মুসলিমবিরোধী কার্যক্রম উসকে দেওয়ার অভিযোগে ২০০৩ সাল থেকে সাত বছর কারাগারে ছিলেন। সেখান থেকে বের হয়ে ‘৯৬৯’ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এটি একটি বিশেষ প্রতীক। এর মাধ্যমে অন্য ধর্মের মানুষদের এড়িয়ে চলার আহ্বান জানানো হয়।

উইরাথুকে তাঁর ধর্মান্ধতার জন্য সহজেই দেশ থেকে বের করে দেওয়া যায়। কিন্তু তিনি ক্যারিশম্যাটিক ও ক্ষমতাধর। তাঁর ধর্মোপদেশে লাখ লাখ মানুষ উত্তেজিত হয়। মিয়ানমারে তো বটেই, এশিয়ার অন্যান্য দেশেও বৌদ্ধরা মনে করে, তাদের ধর্ম অবরোধের মধ্যে রয়েছে। তারা মনে করে, ১০০ বছর আগে মুসলিমরা ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বৌদ্ধ ভূমি দখল করেছে। এখন তারা নতুন নতুন এলাকা দখলের পাঁয়তারা করছে। কোনো প্রমাণ ছাড়াই বার্মার উগ্র বৌদ্ধরা দাবি করছেন, মিয়ানমারে মুসলিম জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। তারা নতুন নতুন মসজিদ নির্মাণ করছে। এর জন্য মধ্যপ্রাচ্য থেকে অঢেল অর্থ আসছে।

২০১১ সালে মিয়ানমারে গণতন্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়াও চরমপন্থী বৌদ্ধ কণ্ঠকে বেগবান করতে দিয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। ফলে তারা এতটা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে যে, ২০১২ সালে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলে ছুরি ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে বৌদ্ধ সেনারা রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে আক্রমণ করে বসে। তখন এক গ্রামে এক দিনে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ৭০ জন মুসলিমকে মেরে ফেলে বলে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ হিসাব দিয়েছিল।

সরকার এসব সহিংসতা ঠেকাতে বলতে গেলে কোনো উদ্যোগই নেয়নি। ফলে সহিংসতা ছড়িয়েছে সারা মিয়ানমারে। মেখটিলা শহরে একজন সন্ন্যাসী নিহত হওয়ার পরে পুরো মুসলিম কোয়ার্টার আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়ে। সরকারি হিসাবমতে, সেখানে দুই বৌদ্ধসহ অন্তত ৪০ জন মুসলিমের মৃত্যু হয়। স্থানীয় বাসিন্দা রাহামাবি টাইম ম্যাগাজিনকে বলেছেন, ‘আমার ছেলেটাকে শুধু মুসলিম হওয়ার কারণে হত্যা করা হয়েছে। আর কোনো কারণ নেই।’ 

২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বাড়ি বাড়ি শুরু হয় এক নৃশংস অভিযান। তাদের ওপর সেনাবাহিনী নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াও চালায়। বর্বতার মুখে বাংলাদেশের দিকে প্রাণ নিয়ে ছুটতে থাকেন তাঁরা।

মন্দির ও রাষ্ট্র
মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের একেবারে শেষ প্রান্তে বৌদ্ধদের বসবাস। তাদের অভিযোগ, সেখানে প্রায়ই তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করা হয়। এই অঞ্চল একসময় মালয়েশিয়ার অংশ ছিল এবং সেখানে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশই মুসলিম। গত শতাব্দীর গোড়ার দিকে থাইল্যান্ড এই অঞ্চলকে নিজেরদের ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়। ২০০৪ সালে সেখানে বৌদ্ধরা আক্রমণের শিকার হয়। কারণ অনেক বৌদ্ধ থাই সরকারের শিক্ষক, সৈন্যসহ বিভিন্ন সরকারি পদে ছিল। এখন সেখানে বৌদ্ধরা অস্ত্রেও শক্তিশালী হয়েছে। বৌদ্ধ মন্দিরগুলো সেনাদের পাহারায় থাকে। এটি মুসলিমদের জন্য সংকেত বটে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর ইয়ংটাউন স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ও লেখক জেরিসন বলেন, ‘মুসলিমরা সেখানে ভীত। কারণ সহিংসতায় বৌদ্ধদের চেয়ে তাঁরাই বেশি মারা গেছে। সেখানে বৌদ্ধরাই রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা বেশি পায়।’

অন্যদিকে পাত্তানি শহরের একজন ভিক্ষু, যাঁর নাম ফ্রাটং জিরাতামো, তিনি বলেন, ‘মুসলিমরা অস্ত্র মজুতের জন্য মসজিদ ব্যবহার করছে। প্রত্যেক ইমামের কাছে একটি করে বন্দুক থাকে। ইসলাম আসলে সহিংসতার ধর্ম। এটা সবাই জানে।’

এই ভিক্ষুর মতো একই ধারণা পোষণ করেন বার্মিজ ‘বিন লাদেন’ উইরাথু। কীভাবে তিনি মিয়ানমারে মুসলিমবিরোধী সহিংসতার সঙ্গে নিজের বিশ্বাসকে মেলাতে পারেন তা জানতে চাইলে টাইমকে তিনি বলেন, ‘বৌদ্ধ ধর্ম অনুযায়ী, আমাদের আক্রমণে যাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু আমাদের সম্প্রদায়কে রক্ষা করার অধিকার আমাদের আছে। আমি বার্মা জাতির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করব।’

উইরাথুর এই দর্শন গৌতম বুদ্ধ সমর্থন করতেন কি না—এমন প্রশ্ন কল্পনায় আনাও অস্বস্তির।

তথ্যসুত্র: টাইম (জুলাই ২০১৩), আল জাজিরা, এএফপি, ডিপ্লোম্যাট
 
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মারুফ ইসলাম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত