আব্দুর রহমান
ভারতের পাঁচটি রাজ্যে রাজ্যসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে চারটির। এর মধ্যে তিনটিই গেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির দখলে। এমনকি কংগ্রেসের দখলে থাকা দুই রাজ্য রাজস্থান ও ছত্তিশগড় ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। কংগ্রেসের জন্য সান্ত্বনা পুরস্কার শুধু তেলেঙ্গানা। এই নির্বাচন দেশটিতে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল অনেকটাই নির্ধারণ করে দিতে পারে।
ভারতে বর্তমানে বিজেপির সরাসরি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ১২টি রাজ্যে। সেগুলো হলো—উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, আসাম, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা, উত্তারখণ্ড, ত্রিপুরা, মণিপুর, গোয়া এবং অরুণাচল। এই ১২ রাজ্যের বাইরে আরও ৪ রাজ্যে বিজেপির মিত্ররা রয়েছে ক্ষমতায়। সেগুলো হলো—মহারাষ্ট্র, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও সিকিম। বিপরীতে কংগ্রেসের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মাত্র তিনটি রাজ্য—কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা ও হিমাচল। কংগ্রেসের মিত্রদের শাসন রয়েছে মাত্র দুটি রাজ্যে—বিহার ও ঝাড়খণ্ড।
জাতীয় নির্বাচন বিবেচনায় নিয়ে ভোটারের হার আমলে নিলে এগিয়ে থাকবে বিজেপি। কেবল এগিয়ে থাকা নয়, বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে থাকবে বিজেপি। এনডিটিভির বিশ্লেষণ বলছে, বিজেপির সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা ১২টি রাজ্যে ভারতের ৪১ শতাংশ জনগণের বাস। আর মিত্রদের হিসাব ধরলে তা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। বিপরীতে কংগ্রেস শাসনাধীনে থাকা রাজ্য ও মিত্র রাজ্য মিলে মাত্র ২০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষের বাস। এর মধ্যে কংগ্রেসের ৩ রাজ্য এককভাবে আমলে নিলে তা দাঁড়াবে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশে।
বিজেপি কেবল রাজ্যসভা নির্বাচনে জিতেছে বিষয়টি এমন নয়। জয়ের পাশাপাশি ভোটের ব্যবধানেও বিজেপি এগিয়ে গেছে। যেমন, ছত্তিশগড়ে বিজেপি আগের নির্বাচনে পেয়েছিল ৩৩ শতাংশ ভোট। এবারের নির্বাচনে তারা পেয়েছে ৪৬ শতাংশ। বিপরীতে কংগ্রেসের ভোট ৪৩ শতাংশ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৪২ দশমিক ১৯ শতাংশে। ছত্তিশগড়ে বিজেপির ভোট ব্যাংকের উল্লম্ফনটা উল্লেখযোগ্য।
মধ্যপ্রদেশের নির্বাচনে বিজেপি ব্যাপক আসনের পাশাপাশি ভোটব্যাংকের রাজনীতিতেও এগিয়ে গেছে। দলটি ২৩০ আসনের মধ্যে ১৬৫ আসন পেয়েছে। বিপরীতে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৬৫টি আসন। কিন্তু গত রাজ্যসভা নির্বাচনে যেখানে বিজেপির মোট ভোট ছিল ৪১ শতাংশ, সর্বশেষ নির্বাচনে সেটি ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ শতাংশে।
রাজস্থানের নির্বাচনে কংগ্রেস বিগত নির্বাচনে যে পরিমাণ ভোট পেয়েছিল, তার চেয়ে এবার সামান্য বেশি পেয়েও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। আর বিজেপি মাত্র ২ শতাংশ বেশি ভোট পেয়ে ১১৫টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে বিজেপি মোট ভোট পেয়েছে ৪১ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং কংগ্রেস ৩৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আগের নির্বাচনে বিজেপির ভোট ব্যাংকে গিয়েছিল শতকরা ৩৮ দশমিক ০৮ শতাংশ ভোট এবং কংগ্রেসের ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ।
ওপরের তথ্য–উপাত্ত থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, ভারতের রাজনীতি ক্রমেই বিজেপি ও কংগ্রেসকে কেন্দ্র করে দ্বিমেরু হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিজেপি ও তার মিত্ররাই এখন নির্বাচনের মাঠের অন্তত ৫০ শতাংশের বেশি ভোটারের আস্থায় রয়েছে। এর পুরোটাই প্রায় উত্তর ভারতে। এই অবস্থায় কোনো দল যদি বিজেপিকে আগামী নির্বাচনে হারাতে চায় তাহলে এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই পদক্ষেপ নিতে হবে তাদের।
একটা সময় ছিল যখন ভারতের নির্বাচনে বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগে কোনো কোনো দল মাত্র ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েও ক্ষমতায় আসত। সেই দিন চলে গেছে। ২০১২ সালে উত্তর প্রদেশ রাজ্যসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি মাত্র ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েও ২ শতাধিক আসনে জয়লাভ করে। ২০০৭ সালে বহুজন সমাজ পার্টি ৩০ শতাংশের কিছু বেশি ভোট নিয়ে উত্তর প্রদেশে সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু এই দল দুটি যখন ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েও পিছিয়ে পড়ে। কারণ বিজেপি একাই পেয়েছিল প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট।
উত্তর প্রদেশের মতো একই ধরনের প্রবণতা দেখা যায় উত্তর ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে। এসব রাজ্যে বিজেপি টানা কয়েক দফায় নির্বাচন জিতে জয়ের এক আলাদা বেঞ্চমার্ক স্থাপন করেছে, যা বিজেপিকে বিরোধীদের হারিয়ে টানা ক্ষমতা ধরে রাখায় সহায়তা করেছে।
উত্তরের রাজ্যগুলোতে বিজেপি কংগ্রেসকে হারিয়ে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করলেও দক্ষিণ ভারতে এখনো নিজেদের অবস্থান সেভাবে গড়তে পারেনি দলটি। তবে কংগ্রেসও যে খুব ভালো অবস্থানে আছে তা নয়। তবে উত্তরের চেয়ে দক্ষিণেই বোধ হয় কংগ্রেসের প্রতি মানুষের আস্থা বেশি। কারণ কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানার নির্বাচন থেকে সেই বিষয়টিই প্রতীয়মান হয়।
রাজ্যে রাজ্যে নির্বাচনে ভারতের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দলটির এমন ব্যর্থতার পেছনের মূল কারণ অনেকগুলো। এর মধ্যে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি যেমন একটা শক্তিশালী প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে, তেমনি দল হিসেবে প্রতিপক্ষের ভুল ও দুর্বলতা থেকে ফায়দা তুলতে না পারার কারণে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে।
ভারতের রাজনৈতিক গতিপথ বিশ্লেষক রুচি গুপ্তের মতে, কংগ্রেসের ভরাডুবির পেছনে নেতৃত্বের ব্যর্থতা, জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছাতে না পারার ব্যর্থতা, রাজনৈতিক দল হিসেবে ভূমিকা রাখার ব্যর্থতা এবং প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার অভাব অনেক বেশি দায়ী। এ ছাড়া জাতীয় রাজনীতির ডামাডোলে স্থানীয় বা আঞ্চলিক রাজনীতির চাল বুঝতে ভুল করেছে কংগ্রেস।
রুচি গুপ্ত বলছেন, বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিপরীতে নিজেদের রাজনৈতিক প্রচার চালাতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি যেখানে হিন্দুত্ববাদ ছাড়াও জাতীয়তাবাদ ও নিম্নবর্গের রাজনীতির বিষয়টিকে সামনে এনেছে সেখানে কংগ্রেস সত্যিকার অর্থেই নিজস্ব রাজনৈতিক স্ট্যান্ড পয়েন্ট দৃঢ়ভাবে প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে। রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা কংগ্রেসকে রাজনৈতিকভাবে উজ্জীবিত করলেও দলটির স্পষ্ট কোনো মেনিফেস্টো সেভাবে সামনে আসেনি। পুরোনো আমলের মতো বিজেপি সরকারের দুর্নীতি কিংবা অপরাপর অন্য যেসব অতি সাধারণ অভিযোগ রয়েছে সেগুলোকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ফলে খুব বেশি সুফল মেলেনি।
ফলে জনগণের কল্যাণের জন্য ব্যাপক নীতি গ্রহণ করলেও বিজেপির হিন্দুত্ববাদ, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও নিম্নবর্গের রাজনীতির বিপরীতে দাঁড়ানোর মতো মতাদর্শিক কোনো জায়গা তৈরি করতে পারেনি কংগ্রেস। বিপরীতে বিজেপিও জনগণের জন্য আরও আরও কল্যাণ নীতি গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেসের রাজনীতি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে, এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এটা সত্য যে, রাজ্য নির্বাচন জাতীয় নির্বাচন থেকে একেবারেই আলাদা এবং এসব নির্বাচনের ফলাফলকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল হিসেবে পূর্বানুমান করে নেওয়াও ঠিক হবে না।
এরপরও বাস্তবতা হলো— কংগ্রেস যদি নিজের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক মেনিফেস্টো নিয়ে পাটাতন শক্ত না করে এবং বিজেপি উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন করে না ভাবে তবে জাতীয় নির্বাচনেও তারা আশানুরূপ ফল করতে পারবে না—এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
ভারতের পাঁচটি রাজ্যে রাজ্যসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে চারটির। এর মধ্যে তিনটিই গেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির দখলে। এমনকি কংগ্রেসের দখলে থাকা দুই রাজ্য রাজস্থান ও ছত্তিশগড় ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। কংগ্রেসের জন্য সান্ত্বনা পুরস্কার শুধু তেলেঙ্গানা। এই নির্বাচন দেশটিতে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল অনেকটাই নির্ধারণ করে দিতে পারে।
ভারতে বর্তমানে বিজেপির সরাসরি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ১২টি রাজ্যে। সেগুলো হলো—উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, আসাম, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা, উত্তারখণ্ড, ত্রিপুরা, মণিপুর, গোয়া এবং অরুণাচল। এই ১২ রাজ্যের বাইরে আরও ৪ রাজ্যে বিজেপির মিত্ররা রয়েছে ক্ষমতায়। সেগুলো হলো—মহারাষ্ট্র, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও সিকিম। বিপরীতে কংগ্রেসের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মাত্র তিনটি রাজ্য—কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা ও হিমাচল। কংগ্রেসের মিত্রদের শাসন রয়েছে মাত্র দুটি রাজ্যে—বিহার ও ঝাড়খণ্ড।
জাতীয় নির্বাচন বিবেচনায় নিয়ে ভোটারের হার আমলে নিলে এগিয়ে থাকবে বিজেপি। কেবল এগিয়ে থাকা নয়, বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে থাকবে বিজেপি। এনডিটিভির বিশ্লেষণ বলছে, বিজেপির সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা ১২টি রাজ্যে ভারতের ৪১ শতাংশ জনগণের বাস। আর মিত্রদের হিসাব ধরলে তা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। বিপরীতে কংগ্রেস শাসনাধীনে থাকা রাজ্য ও মিত্র রাজ্য মিলে মাত্র ২০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষের বাস। এর মধ্যে কংগ্রেসের ৩ রাজ্য এককভাবে আমলে নিলে তা দাঁড়াবে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশে।
বিজেপি কেবল রাজ্যসভা নির্বাচনে জিতেছে বিষয়টি এমন নয়। জয়ের পাশাপাশি ভোটের ব্যবধানেও বিজেপি এগিয়ে গেছে। যেমন, ছত্তিশগড়ে বিজেপি আগের নির্বাচনে পেয়েছিল ৩৩ শতাংশ ভোট। এবারের নির্বাচনে তারা পেয়েছে ৪৬ শতাংশ। বিপরীতে কংগ্রেসের ভোট ৪৩ শতাংশ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৪২ দশমিক ১৯ শতাংশে। ছত্তিশগড়ে বিজেপির ভোট ব্যাংকের উল্লম্ফনটা উল্লেখযোগ্য।
মধ্যপ্রদেশের নির্বাচনে বিজেপি ব্যাপক আসনের পাশাপাশি ভোটব্যাংকের রাজনীতিতেও এগিয়ে গেছে। দলটি ২৩০ আসনের মধ্যে ১৬৫ আসন পেয়েছে। বিপরীতে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৬৫টি আসন। কিন্তু গত রাজ্যসভা নির্বাচনে যেখানে বিজেপির মোট ভোট ছিল ৪১ শতাংশ, সর্বশেষ নির্বাচনে সেটি ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ শতাংশে।
রাজস্থানের নির্বাচনে কংগ্রেস বিগত নির্বাচনে যে পরিমাণ ভোট পেয়েছিল, তার চেয়ে এবার সামান্য বেশি পেয়েও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। আর বিজেপি মাত্র ২ শতাংশ বেশি ভোট পেয়ে ১১৫টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে বিজেপি মোট ভোট পেয়েছে ৪১ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং কংগ্রেস ৩৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আগের নির্বাচনে বিজেপির ভোট ব্যাংকে গিয়েছিল শতকরা ৩৮ দশমিক ০৮ শতাংশ ভোট এবং কংগ্রেসের ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ।
ওপরের তথ্য–উপাত্ত থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, ভারতের রাজনীতি ক্রমেই বিজেপি ও কংগ্রেসকে কেন্দ্র করে দ্বিমেরু হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিজেপি ও তার মিত্ররাই এখন নির্বাচনের মাঠের অন্তত ৫০ শতাংশের বেশি ভোটারের আস্থায় রয়েছে। এর পুরোটাই প্রায় উত্তর ভারতে। এই অবস্থায় কোনো দল যদি বিজেপিকে আগামী নির্বাচনে হারাতে চায় তাহলে এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই পদক্ষেপ নিতে হবে তাদের।
একটা সময় ছিল যখন ভারতের নির্বাচনে বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগে কোনো কোনো দল মাত্র ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েও ক্ষমতায় আসত। সেই দিন চলে গেছে। ২০১২ সালে উত্তর প্রদেশ রাজ্যসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি মাত্র ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েও ২ শতাধিক আসনে জয়লাভ করে। ২০০৭ সালে বহুজন সমাজ পার্টি ৩০ শতাংশের কিছু বেশি ভোট নিয়ে উত্তর প্রদেশে সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু এই দল দুটি যখন ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েও পিছিয়ে পড়ে। কারণ বিজেপি একাই পেয়েছিল প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট।
উত্তর প্রদেশের মতো একই ধরনের প্রবণতা দেখা যায় উত্তর ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে। এসব রাজ্যে বিজেপি টানা কয়েক দফায় নির্বাচন জিতে জয়ের এক আলাদা বেঞ্চমার্ক স্থাপন করেছে, যা বিজেপিকে বিরোধীদের হারিয়ে টানা ক্ষমতা ধরে রাখায় সহায়তা করেছে।
উত্তরের রাজ্যগুলোতে বিজেপি কংগ্রেসকে হারিয়ে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করলেও দক্ষিণ ভারতে এখনো নিজেদের অবস্থান সেভাবে গড়তে পারেনি দলটি। তবে কংগ্রেসও যে খুব ভালো অবস্থানে আছে তা নয়। তবে উত্তরের চেয়ে দক্ষিণেই বোধ হয় কংগ্রেসের প্রতি মানুষের আস্থা বেশি। কারণ কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানার নির্বাচন থেকে সেই বিষয়টিই প্রতীয়মান হয়।
রাজ্যে রাজ্যে নির্বাচনে ভারতের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দলটির এমন ব্যর্থতার পেছনের মূল কারণ অনেকগুলো। এর মধ্যে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি যেমন একটা শক্তিশালী প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে, তেমনি দল হিসেবে প্রতিপক্ষের ভুল ও দুর্বলতা থেকে ফায়দা তুলতে না পারার কারণে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে।
ভারতের রাজনৈতিক গতিপথ বিশ্লেষক রুচি গুপ্তের মতে, কংগ্রেসের ভরাডুবির পেছনে নেতৃত্বের ব্যর্থতা, জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছাতে না পারার ব্যর্থতা, রাজনৈতিক দল হিসেবে ভূমিকা রাখার ব্যর্থতা এবং প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার অভাব অনেক বেশি দায়ী। এ ছাড়া জাতীয় রাজনীতির ডামাডোলে স্থানীয় বা আঞ্চলিক রাজনীতির চাল বুঝতে ভুল করেছে কংগ্রেস।
রুচি গুপ্ত বলছেন, বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিপরীতে নিজেদের রাজনৈতিক প্রচার চালাতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি যেখানে হিন্দুত্ববাদ ছাড়াও জাতীয়তাবাদ ও নিম্নবর্গের রাজনীতির বিষয়টিকে সামনে এনেছে সেখানে কংগ্রেস সত্যিকার অর্থেই নিজস্ব রাজনৈতিক স্ট্যান্ড পয়েন্ট দৃঢ়ভাবে প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে। রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা কংগ্রেসকে রাজনৈতিকভাবে উজ্জীবিত করলেও দলটির স্পষ্ট কোনো মেনিফেস্টো সেভাবে সামনে আসেনি। পুরোনো আমলের মতো বিজেপি সরকারের দুর্নীতি কিংবা অপরাপর অন্য যেসব অতি সাধারণ অভিযোগ রয়েছে সেগুলোকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ফলে খুব বেশি সুফল মেলেনি।
ফলে জনগণের কল্যাণের জন্য ব্যাপক নীতি গ্রহণ করলেও বিজেপির হিন্দুত্ববাদ, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও নিম্নবর্গের রাজনীতির বিপরীতে দাঁড়ানোর মতো মতাদর্শিক কোনো জায়গা তৈরি করতে পারেনি কংগ্রেস। বিপরীতে বিজেপিও জনগণের জন্য আরও আরও কল্যাণ নীতি গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেসের রাজনীতি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে, এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এটা সত্য যে, রাজ্য নির্বাচন জাতীয় নির্বাচন থেকে একেবারেই আলাদা এবং এসব নির্বাচনের ফলাফলকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল হিসেবে পূর্বানুমান করে নেওয়াও ঠিক হবে না।
এরপরও বাস্তবতা হলো— কংগ্রেস যদি নিজের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক মেনিফেস্টো নিয়ে পাটাতন শক্ত না করে এবং বিজেপি উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন করে না ভাবে তবে জাতীয় নির্বাচনেও তারা আশানুরূপ ফল করতে পারবে না—এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
আব্দুর রহমান
ভারতের পাঁচটি রাজ্যে রাজ্যসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে চারটির। এর মধ্যে তিনটিই গেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির দখলে। এমনকি কংগ্রেসের দখলে থাকা দুই রাজ্য রাজস্থান ও ছত্তিশগড় ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। কংগ্রেসের জন্য সান্ত্বনা পুরস্কার শুধু তেলেঙ্গানা। এই নির্বাচন দেশটিতে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল অনেকটাই নির্ধারণ করে দিতে পারে।
ভারতে বর্তমানে বিজেপির সরাসরি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ১২টি রাজ্যে। সেগুলো হলো—উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, আসাম, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা, উত্তারখণ্ড, ত্রিপুরা, মণিপুর, গোয়া এবং অরুণাচল। এই ১২ রাজ্যের বাইরে আরও ৪ রাজ্যে বিজেপির মিত্ররা রয়েছে ক্ষমতায়। সেগুলো হলো—মহারাষ্ট্র, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও সিকিম। বিপরীতে কংগ্রেসের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মাত্র তিনটি রাজ্য—কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা ও হিমাচল। কংগ্রেসের মিত্রদের শাসন রয়েছে মাত্র দুটি রাজ্যে—বিহার ও ঝাড়খণ্ড।
জাতীয় নির্বাচন বিবেচনায় নিয়ে ভোটারের হার আমলে নিলে এগিয়ে থাকবে বিজেপি। কেবল এগিয়ে থাকা নয়, বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে থাকবে বিজেপি। এনডিটিভির বিশ্লেষণ বলছে, বিজেপির সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা ১২টি রাজ্যে ভারতের ৪১ শতাংশ জনগণের বাস। আর মিত্রদের হিসাব ধরলে তা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। বিপরীতে কংগ্রেস শাসনাধীনে থাকা রাজ্য ও মিত্র রাজ্য মিলে মাত্র ২০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষের বাস। এর মধ্যে কংগ্রেসের ৩ রাজ্য এককভাবে আমলে নিলে তা দাঁড়াবে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশে।
বিজেপি কেবল রাজ্যসভা নির্বাচনে জিতেছে বিষয়টি এমন নয়। জয়ের পাশাপাশি ভোটের ব্যবধানেও বিজেপি এগিয়ে গেছে। যেমন, ছত্তিশগড়ে বিজেপি আগের নির্বাচনে পেয়েছিল ৩৩ শতাংশ ভোট। এবারের নির্বাচনে তারা পেয়েছে ৪৬ শতাংশ। বিপরীতে কংগ্রেসের ভোট ৪৩ শতাংশ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৪২ দশমিক ১৯ শতাংশে। ছত্তিশগড়ে বিজেপির ভোট ব্যাংকের উল্লম্ফনটা উল্লেখযোগ্য।
মধ্যপ্রদেশের নির্বাচনে বিজেপি ব্যাপক আসনের পাশাপাশি ভোটব্যাংকের রাজনীতিতেও এগিয়ে গেছে। দলটি ২৩০ আসনের মধ্যে ১৬৫ আসন পেয়েছে। বিপরীতে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৬৫টি আসন। কিন্তু গত রাজ্যসভা নির্বাচনে যেখানে বিজেপির মোট ভোট ছিল ৪১ শতাংশ, সর্বশেষ নির্বাচনে সেটি ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ শতাংশে।
রাজস্থানের নির্বাচনে কংগ্রেস বিগত নির্বাচনে যে পরিমাণ ভোট পেয়েছিল, তার চেয়ে এবার সামান্য বেশি পেয়েও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। আর বিজেপি মাত্র ২ শতাংশ বেশি ভোট পেয়ে ১১৫টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে বিজেপি মোট ভোট পেয়েছে ৪১ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং কংগ্রেস ৩৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আগের নির্বাচনে বিজেপির ভোট ব্যাংকে গিয়েছিল শতকরা ৩৮ দশমিক ০৮ শতাংশ ভোট এবং কংগ্রেসের ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ।
ওপরের তথ্য–উপাত্ত থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, ভারতের রাজনীতি ক্রমেই বিজেপি ও কংগ্রেসকে কেন্দ্র করে দ্বিমেরু হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিজেপি ও তার মিত্ররাই এখন নির্বাচনের মাঠের অন্তত ৫০ শতাংশের বেশি ভোটারের আস্থায় রয়েছে। এর পুরোটাই প্রায় উত্তর ভারতে। এই অবস্থায় কোনো দল যদি বিজেপিকে আগামী নির্বাচনে হারাতে চায় তাহলে এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই পদক্ষেপ নিতে হবে তাদের।
একটা সময় ছিল যখন ভারতের নির্বাচনে বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগে কোনো কোনো দল মাত্র ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েও ক্ষমতায় আসত। সেই দিন চলে গেছে। ২০১২ সালে উত্তর প্রদেশ রাজ্যসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি মাত্র ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েও ২ শতাধিক আসনে জয়লাভ করে। ২০০৭ সালে বহুজন সমাজ পার্টি ৩০ শতাংশের কিছু বেশি ভোট নিয়ে উত্তর প্রদেশে সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু এই দল দুটি যখন ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েও পিছিয়ে পড়ে। কারণ বিজেপি একাই পেয়েছিল প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট।
উত্তর প্রদেশের মতো একই ধরনের প্রবণতা দেখা যায় উত্তর ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে। এসব রাজ্যে বিজেপি টানা কয়েক দফায় নির্বাচন জিতে জয়ের এক আলাদা বেঞ্চমার্ক স্থাপন করেছে, যা বিজেপিকে বিরোধীদের হারিয়ে টানা ক্ষমতা ধরে রাখায় সহায়তা করেছে।
উত্তরের রাজ্যগুলোতে বিজেপি কংগ্রেসকে হারিয়ে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করলেও দক্ষিণ ভারতে এখনো নিজেদের অবস্থান সেভাবে গড়তে পারেনি দলটি। তবে কংগ্রেসও যে খুব ভালো অবস্থানে আছে তা নয়। তবে উত্তরের চেয়ে দক্ষিণেই বোধ হয় কংগ্রেসের প্রতি মানুষের আস্থা বেশি। কারণ কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানার নির্বাচন থেকে সেই বিষয়টিই প্রতীয়মান হয়।
রাজ্যে রাজ্যে নির্বাচনে ভারতের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দলটির এমন ব্যর্থতার পেছনের মূল কারণ অনেকগুলো। এর মধ্যে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি যেমন একটা শক্তিশালী প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে, তেমনি দল হিসেবে প্রতিপক্ষের ভুল ও দুর্বলতা থেকে ফায়দা তুলতে না পারার কারণে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে।
ভারতের রাজনৈতিক গতিপথ বিশ্লেষক রুচি গুপ্তের মতে, কংগ্রেসের ভরাডুবির পেছনে নেতৃত্বের ব্যর্থতা, জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছাতে না পারার ব্যর্থতা, রাজনৈতিক দল হিসেবে ভূমিকা রাখার ব্যর্থতা এবং প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার অভাব অনেক বেশি দায়ী। এ ছাড়া জাতীয় রাজনীতির ডামাডোলে স্থানীয় বা আঞ্চলিক রাজনীতির চাল বুঝতে ভুল করেছে কংগ্রেস।
রুচি গুপ্ত বলছেন, বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিপরীতে নিজেদের রাজনৈতিক প্রচার চালাতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি যেখানে হিন্দুত্ববাদ ছাড়াও জাতীয়তাবাদ ও নিম্নবর্গের রাজনীতির বিষয়টিকে সামনে এনেছে সেখানে কংগ্রেস সত্যিকার অর্থেই নিজস্ব রাজনৈতিক স্ট্যান্ড পয়েন্ট দৃঢ়ভাবে প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে। রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা কংগ্রেসকে রাজনৈতিকভাবে উজ্জীবিত করলেও দলটির স্পষ্ট কোনো মেনিফেস্টো সেভাবে সামনে আসেনি। পুরোনো আমলের মতো বিজেপি সরকারের দুর্নীতি কিংবা অপরাপর অন্য যেসব অতি সাধারণ অভিযোগ রয়েছে সেগুলোকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ফলে খুব বেশি সুফল মেলেনি।
ফলে জনগণের কল্যাণের জন্য ব্যাপক নীতি গ্রহণ করলেও বিজেপির হিন্দুত্ববাদ, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও নিম্নবর্গের রাজনীতির বিপরীতে দাঁড়ানোর মতো মতাদর্শিক কোনো জায়গা তৈরি করতে পারেনি কংগ্রেস। বিপরীতে বিজেপিও জনগণের জন্য আরও আরও কল্যাণ নীতি গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেসের রাজনীতি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে, এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এটা সত্য যে, রাজ্য নির্বাচন জাতীয় নির্বাচন থেকে একেবারেই আলাদা এবং এসব নির্বাচনের ফলাফলকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল হিসেবে পূর্বানুমান করে নেওয়াও ঠিক হবে না।
এরপরও বাস্তবতা হলো— কংগ্রেস যদি নিজের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক মেনিফেস্টো নিয়ে পাটাতন শক্ত না করে এবং বিজেপি উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন করে না ভাবে তবে জাতীয় নির্বাচনেও তারা আশানুরূপ ফল করতে পারবে না—এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
ভারতের পাঁচটি রাজ্যে রাজ্যসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে চারটির। এর মধ্যে তিনটিই গেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির দখলে। এমনকি কংগ্রেসের দখলে থাকা দুই রাজ্য রাজস্থান ও ছত্তিশগড় ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। কংগ্রেসের জন্য সান্ত্বনা পুরস্কার শুধু তেলেঙ্গানা। এই নির্বাচন দেশটিতে ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল অনেকটাই নির্ধারণ করে দিতে পারে।
ভারতে বর্তমানে বিজেপির সরাসরি নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ১২টি রাজ্যে। সেগুলো হলো—উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, আসাম, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা, উত্তারখণ্ড, ত্রিপুরা, মণিপুর, গোয়া এবং অরুণাচল। এই ১২ রাজ্যের বাইরে আরও ৪ রাজ্যে বিজেপির মিত্ররা রয়েছে ক্ষমতায়। সেগুলো হলো—মহারাষ্ট্র, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও সিকিম। বিপরীতে কংগ্রেসের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মাত্র তিনটি রাজ্য—কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা ও হিমাচল। কংগ্রেসের মিত্রদের শাসন রয়েছে মাত্র দুটি রাজ্যে—বিহার ও ঝাড়খণ্ড।
জাতীয় নির্বাচন বিবেচনায় নিয়ে ভোটারের হার আমলে নিলে এগিয়ে থাকবে বিজেপি। কেবল এগিয়ে থাকা নয়, বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে থাকবে বিজেপি। এনডিটিভির বিশ্লেষণ বলছে, বিজেপির সরাসরি নিয়ন্ত্রণে থাকা ১২টি রাজ্যে ভারতের ৪১ শতাংশ জনগণের বাস। আর মিত্রদের হিসাব ধরলে তা ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। বিপরীতে কংগ্রেস শাসনাধীনে থাকা রাজ্য ও মিত্র রাজ্য মিলে মাত্র ২০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষের বাস। এর মধ্যে কংগ্রেসের ৩ রাজ্য এককভাবে আমলে নিলে তা দাঁড়াবে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশে।
বিজেপি কেবল রাজ্যসভা নির্বাচনে জিতেছে বিষয়টি এমন নয়। জয়ের পাশাপাশি ভোটের ব্যবধানেও বিজেপি এগিয়ে গেছে। যেমন, ছত্তিশগড়ে বিজেপি আগের নির্বাচনে পেয়েছিল ৩৩ শতাংশ ভোট। এবারের নির্বাচনে তারা পেয়েছে ৪৬ শতাংশ। বিপরীতে কংগ্রেসের ভোট ৪৩ শতাংশ থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে ৪২ দশমিক ১৯ শতাংশে। ছত্তিশগড়ে বিজেপির ভোট ব্যাংকের উল্লম্ফনটা উল্লেখযোগ্য।
মধ্যপ্রদেশের নির্বাচনে বিজেপি ব্যাপক আসনের পাশাপাশি ভোটব্যাংকের রাজনীতিতেও এগিয়ে গেছে। দলটি ২৩০ আসনের মধ্যে ১৬৫ আসন পেয়েছে। বিপরীতে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ৬৫টি আসন। কিন্তু গত রাজ্যসভা নির্বাচনে যেখানে বিজেপির মোট ভোট ছিল ৪১ শতাংশ, সর্বশেষ নির্বাচনে সেটি ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ শতাংশে।
রাজস্থানের নির্বাচনে কংগ্রেস বিগত নির্বাচনে যে পরিমাণ ভোট পেয়েছিল, তার চেয়ে এবার সামান্য বেশি পেয়েও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন পেতে ব্যর্থ হয়েছে। আর বিজেপি মাত্র ২ শতাংশ বেশি ভোট পেয়ে ১১৫টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে বিজেপি মোট ভোট পেয়েছে ৪১ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং কংগ্রেস ৩৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ। আগের নির্বাচনে বিজেপির ভোট ব্যাংকে গিয়েছিল শতকরা ৩৮ দশমিক ০৮ শতাংশ ভোট এবং কংগ্রেসের ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ।
ওপরের তথ্য–উপাত্ত থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, ভারতের রাজনীতি ক্রমেই বিজেপি ও কংগ্রেসকে কেন্দ্র করে দ্বিমেরু হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিজেপি ও তার মিত্ররাই এখন নির্বাচনের মাঠের অন্তত ৫০ শতাংশের বেশি ভোটারের আস্থায় রয়েছে। এর পুরোটাই প্রায় উত্তর ভারতে। এই অবস্থায় কোনো দল যদি বিজেপিকে আগামী নির্বাচনে হারাতে চায় তাহলে এই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই পদক্ষেপ নিতে হবে তাদের।
একটা সময় ছিল যখন ভারতের নির্বাচনে বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগে কোনো কোনো দল মাত্র ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েও ক্ষমতায় আসত। সেই দিন চলে গেছে। ২০১২ সালে উত্তর প্রদেশ রাজ্যসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি মাত্র ২৮ শতাংশ ভোট পেয়েও ২ শতাধিক আসনে জয়লাভ করে। ২০০৭ সালে বহুজন সমাজ পার্টি ৩০ শতাংশের কিছু বেশি ভোট নিয়ে উত্তর প্রদেশে সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু এই দল দুটি যখন ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েও পিছিয়ে পড়ে। কারণ বিজেপি একাই পেয়েছিল প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট।
উত্তর প্রদেশের মতো একই ধরনের প্রবণতা দেখা যায় উত্তর ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে। এসব রাজ্যে বিজেপি টানা কয়েক দফায় নির্বাচন জিতে জয়ের এক আলাদা বেঞ্চমার্ক স্থাপন করেছে, যা বিজেপিকে বিরোধীদের হারিয়ে টানা ক্ষমতা ধরে রাখায় সহায়তা করেছে।
উত্তরের রাজ্যগুলোতে বিজেপি কংগ্রেসকে হারিয়ে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করলেও দক্ষিণ ভারতে এখনো নিজেদের অবস্থান সেভাবে গড়তে পারেনি দলটি। তবে কংগ্রেসও যে খুব ভালো অবস্থানে আছে তা নয়। তবে উত্তরের চেয়ে দক্ষিণেই বোধ হয় কংগ্রেসের প্রতি মানুষের আস্থা বেশি। কারণ কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানার নির্বাচন থেকে সেই বিষয়টিই প্রতীয়মান হয়।
রাজ্যে রাজ্যে নির্বাচনে ভারতের সবচেয়ে পুরোনো রাজনৈতিক দলটির এমন ব্যর্থতার পেছনের মূল কারণ অনেকগুলো। এর মধ্যে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি যেমন একটা শক্তিশালী প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে, তেমনি দল হিসেবে প্রতিপক্ষের ভুল ও দুর্বলতা থেকে ফায়দা তুলতে না পারার কারণে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে।
ভারতের রাজনৈতিক গতিপথ বিশ্লেষক রুচি গুপ্তের মতে, কংগ্রেসের ভরাডুবির পেছনে নেতৃত্বের ব্যর্থতা, জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছাতে না পারার ব্যর্থতা, রাজনৈতিক দল হিসেবে ভূমিকা রাখার ব্যর্থতা এবং প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার অভাব অনেক বেশি দায়ী। এ ছাড়া জাতীয় রাজনীতির ডামাডোলে স্থানীয় বা আঞ্চলিক রাজনীতির চাল বুঝতে ভুল করেছে কংগ্রেস।
রুচি গুপ্ত বলছেন, বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিপরীতে নিজেদের রাজনৈতিক প্রচার চালাতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস। বিজেপি যেখানে হিন্দুত্ববাদ ছাড়াও জাতীয়তাবাদ ও নিম্নবর্গের রাজনীতির বিষয়টিকে সামনে এনেছে সেখানে কংগ্রেস সত্যিকার অর্থেই নিজস্ব রাজনৈতিক স্ট্যান্ড পয়েন্ট দৃঢ়ভাবে প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে। রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা কংগ্রেসকে রাজনৈতিকভাবে উজ্জীবিত করলেও দলটির স্পষ্ট কোনো মেনিফেস্টো সেভাবে সামনে আসেনি। পুরোনো আমলের মতো বিজেপি সরকারের দুর্নীতি কিংবা অপরাপর অন্য যেসব অতি সাধারণ অভিযোগ রয়েছে সেগুলোকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ফলে খুব বেশি সুফল মেলেনি।
ফলে জনগণের কল্যাণের জন্য ব্যাপক নীতি গ্রহণ করলেও বিজেপির হিন্দুত্ববাদ, উগ্র জাতীয়তাবাদ ও নিম্নবর্গের রাজনীতির বিপরীতে দাঁড়ানোর মতো মতাদর্শিক কোনো জায়গা তৈরি করতে পারেনি কংগ্রেস। বিপরীতে বিজেপিও জনগণের জন্য আরও আরও কল্যাণ নীতি গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেসের রাজনীতি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে, এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। কারণ এটা সত্য যে, রাজ্য নির্বাচন জাতীয় নির্বাচন থেকে একেবারেই আলাদা এবং এসব নির্বাচনের ফলাফলকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল হিসেবে পূর্বানুমান করে নেওয়াও ঠিক হবে না।
এরপরও বাস্তবতা হলো— কংগ্রেস যদি নিজের সুস্পষ্ট রাজনৈতিক মেনিফেস্টো নিয়ে পাটাতন শক্ত না করে এবং বিজেপি উপস্থাপিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন করে না ভাবে তবে জাতীয় নির্বাচনেও তারা আশানুরূপ ফল করতে পারবে না—এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
এক সপ্তাহ আগেও মনে হচ্ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কৌশলে ব্যবহার করে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন পুতিন। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ার অর্থনীতির মূল খাত জ্বালানি তেল শিল্পের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে
১১ মিনিট আগেদ্বিতীয় মেয়াদে পররাষ্ট্রনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এনে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটন এবার সরাসরি রাশিয়ার বৃহৎ দুই তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই পদক্ষেপ ট্রাম্পের আগের কৌশলগুলো থেকে একটু ভিন্ন ও কঠোর।
২৩ মিনিট আগে‘মি. মানদানি’, ‘মি. মানদামি’, ‘জোরহান মানদামি, ‘জোহরান মানদামি’—এগুলো নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির নামের কিছু বহুল প্রচলিত সংস্করণ। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি থেকেই অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জোহরান মামদানির নামের উচ্চারণ নিয়ে বিতর্কের সূচনা।
২ ঘণ্টা আগেপ্রতিটি প্রজন্মই নিজস্ব কারণ ও লক্ষ্য নিয়ে এগোয়, পুরোনো সংগ্রামের উত্তরাধিকার নিয়ে নয়। সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এ ধারা দেখা যায়—যুবকেরা শাসন বদলাতে পারেন, কিন্তু টেকসই পরিবর্তন বা তাঁদের নিজস্ব ভবিষ্যতের উন্নতি প্রায়ই অধরা থেকে যায়, তা আরব বসন্ত হোক, বাংলাদেশ বা নেপালই হোক।
২ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
এক সপ্তাহ আগেও মনে হচ্ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কৌশলে ব্যবহার করে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন পুতিন। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ার অর্থনীতির মূল খাত জ্বালানি তেল শিল্পের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নেওয়া সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপ।
এর পরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৯তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ অনুমোদন করেছে। যেখানে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এলএনজি রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থনীতির অন্যতম প্রধান উৎস বলে বিবেচিত।
তবে রুশ বিশ্লেষকদের মতে, এ পদক্ষেপ পুতিনের যুদ্ধনীতিতে খুব একটা পরিবর্তন আনবে না। রুশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাতিয়ানা স্তানোভায়া বলছেন, রুশ কোম্পানিগুলো অনেক আগেই এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তাঁর ভাষায়, পুতিন যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে বড় ধরনের ক্ষতিও মেনে নিতে প্রস্তুত, আর ট্রাম্পের অবস্থানও সময়ের সঙ্গে বদলে যেতে পারে।
রুশ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে স্তানোভায়া বলেন, রাশিয়া কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলবে, ঠিক আছে, তিন মাস পর ট্রাম্প নিজেই নরম হয়ে যাবে। আর পুতিনের কাছে এই যুদ্ধ অস্তিত্বের প্রশ্ন, তাই তিনি সহ্য করেই যাবেন।
গতকাল বুধবার তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়, যা নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলোর প্রভাব শক্তিশালী হওয়ার ইঙ্গিত। তবে এর কার্যকারিতা শেষ পর্যন্ত নির্ভর করবে এই শাস্তিমূলক পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়ন এবং জ্বালানি ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়ার ওপর। নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো মূলত রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুক অয়েল এবং সারা বিশ্বে তাদের সঙ্গে ব্যবসা করা যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির ওপর আরোপ করেছে।
রাশিয়ার মোট বাজেটের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসে তেল ও গ্যাস বিক্রি থেকে। তবে ইউক্রেনের উন্নত ড্রোন ও দীর্ঘপাল্লার হামলায় তেল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শিল্প খাত এরই মধ্যে চাপে রয়েছে। তবুও রুশ বিশ্লেষকেরা মনে করেন, নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সীমিতই থাকবে।
তাঁরা উল্লেখ করেন, রাশিয়া এরই মধ্যে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণ এড়িয়ে যাওয়ার দক্ষতা অর্জন করেছে। দেশটি শত শত পুরোনো জাহাজ ব্যবহার করে, যেগুলোর কোনো পশ্চিমা বিমা নেই এবং তৃতীয় দেশের ছদ্ম কোম্পানির মাধ্যমে লেনদেন চালায়। তা ছাড়া বিশ্বের জ্বালানি তেলের বাজারের প্রায় ৯ শতাংশ রাশিয়ার। ফলে রুশ তেল বিশ্ববাজারে রপ্তানি না হলে সরবরাহও কমবে এবং দাম বাড়বে। এতে নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে পড়বে।
কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সের্গেই ভাকুলেনকো বলেন, লুকওয়েল সমস্যায় পড়বে বটে, কিন্তু সেটি লুকওয়েলের সমস্যা, রাশিয়ার নয়।
পুতিন প্রশাসন বহু আগেই জানত নিষেধাজ্ঞা আসছে। তাই রাশিয়া এখন বিকল্প রুট, পুরোনো জাহাজ বহর ও ফাটকা কোম্পানির জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তেল রপ্তানি চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলেও রাশিয়া তার প্রভাব আংশিকভাবে অকার্যকর করে দিতে পারবে, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এক সপ্তাহ আগেও মনে হচ্ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কৌশলে ব্যবহার করে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন পুতিন। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ার অর্থনীতির মূল খাত জ্বালানি তেল শিল্পের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নেওয়া সবচেয়ে কঠোর পদক্ষেপ।
এর পরপরই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৯তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ অনুমোদন করেছে। যেখানে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এলএনজি রাশিয়ার যুদ্ধ অর্থনীতির অন্যতম প্রধান উৎস বলে বিবেচিত।
তবে রুশ বিশ্লেষকদের মতে, এ পদক্ষেপ পুতিনের যুদ্ধনীতিতে খুব একটা পরিবর্তন আনবে না। রুশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাতিয়ানা স্তানোভায়া বলছেন, রুশ কোম্পানিগুলো অনেক আগেই এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তাঁর ভাষায়, পুতিন যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনে বড় ধরনের ক্ষতিও মেনে নিতে প্রস্তুত, আর ট্রাম্পের অবস্থানও সময়ের সঙ্গে বদলে যেতে পারে।
রুশ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে স্তানোভায়া বলেন, রাশিয়া কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলবে, ঠিক আছে, তিন মাস পর ট্রাম্প নিজেই নরম হয়ে যাবে। আর পুতিনের কাছে এই যুদ্ধ অস্তিত্বের প্রশ্ন, তাই তিনি সহ্য করেই যাবেন।
গতকাল বুধবার তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়, যা নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলোর প্রভাব শক্তিশালী হওয়ার ইঙ্গিত। তবে এর কার্যকারিতা শেষ পর্যন্ত নির্ভর করবে এই শাস্তিমূলক পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়ন এবং জ্বালানি ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়ার ওপর। নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো মূলত রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুক অয়েল এবং সারা বিশ্বে তাদের সঙ্গে ব্যবসা করা যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির ওপর আরোপ করেছে।
রাশিয়ার মোট বাজেটের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসে তেল ও গ্যাস বিক্রি থেকে। তবে ইউক্রেনের উন্নত ড্রোন ও দীর্ঘপাল্লার হামলায় তেল অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শিল্প খাত এরই মধ্যে চাপে রয়েছে। তবুও রুশ বিশ্লেষকেরা মনে করেন, নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সীমিতই থাকবে।
তাঁরা উল্লেখ করেন, রাশিয়া এরই মধ্যে পশ্চিমা নিয়ন্ত্রণ এড়িয়ে যাওয়ার দক্ষতা অর্জন করেছে। দেশটি শত শত পুরোনো জাহাজ ব্যবহার করে, যেগুলোর কোনো পশ্চিমা বিমা নেই এবং তৃতীয় দেশের ছদ্ম কোম্পানির মাধ্যমে লেনদেন চালায়। তা ছাড়া বিশ্বের জ্বালানি তেলের বাজারের প্রায় ৯ শতাংশ রাশিয়ার। ফলে রুশ তেল বিশ্ববাজারে রপ্তানি না হলে সরবরাহও কমবে এবং দাম বাড়বে। এতে নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে পড়বে।
কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের জ্বালানি বিশেষজ্ঞ সের্গেই ভাকুলেনকো বলেন, লুকওয়েল সমস্যায় পড়বে বটে, কিন্তু সেটি লুকওয়েলের সমস্যা, রাশিয়ার নয়।
পুতিন প্রশাসন বহু আগেই জানত নিষেধাজ্ঞা আসছে। তাই রাশিয়া এখন বিকল্প রুট, পুরোনো জাহাজ বহর ও ফাটকা কোম্পানির জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তেল রপ্তানি চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলেও রাশিয়া তার প্রভাব আংশিকভাবে অকার্যকর করে দিতে পারবে, এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ভারতের পাঁচটি রাজ্যে রাজ্যসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে চারটির। এর মধ্যে তিনটিই গেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির দখলে। এমনকি কংগ্রেসের দখলে থাকা দুই রাজ্য রাজস্থান ও ছত্তিশগড় ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। কংগ্রেসের জন্য সান্ত্বনা পুরস্কার শুধু তেলেঙ্গানা।
০৫ ডিসেম্বর ২০২৩দ্বিতীয় মেয়াদে পররাষ্ট্রনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এনে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটন এবার সরাসরি রাশিয়ার বৃহৎ দুই তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই পদক্ষেপ ট্রাম্পের আগের কৌশলগুলো থেকে একটু ভিন্ন ও কঠোর।
২৩ মিনিট আগে‘মি. মানদানি’, ‘মি. মানদামি’, ‘জোরহান মানদামি, ‘জোহরান মানদামি’—এগুলো নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির নামের কিছু বহুল প্রচলিত সংস্করণ। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি থেকেই অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জোহরান মামদানির নামের উচ্চারণ নিয়ে বিতর্কের সূচনা।
২ ঘণ্টা আগেপ্রতিটি প্রজন্মই নিজস্ব কারণ ও লক্ষ্য নিয়ে এগোয়, পুরোনো সংগ্রামের উত্তরাধিকার নিয়ে নয়। সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এ ধারা দেখা যায়—যুবকেরা শাসন বদলাতে পারেন, কিন্তু টেকসই পরিবর্তন বা তাঁদের নিজস্ব ভবিষ্যতের উন্নতি প্রায়ই অধরা থেকে যায়, তা আরব বসন্ত হোক, বাংলাদেশ বা নেপালই হোক।
২ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
দ্বিতীয় মেয়াদে পররাষ্ট্রনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এনে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটন এবার সরাসরি রাশিয়ার বৃহৎ দুই তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই পদক্ষেপ ট্রাম্পের আগের কৌশলগুলো থেকে একটু ভিন্ন ও কঠোর। এর আগে তিনি সরাসরি নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং বাণিজ্য ও শুল্কনীতির মাধ্যমে মস্কোর যুদ্ধনীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিলেন। এবার তেলের নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ট্রাম্প বিশ্ব জ্বালানি রাজনীতির খেলায় আরও গভীরে প্রবেশ করেছেন, যেখানে তিনি রাশিয়ার যুদ্ধকালীন আয় বন্ধ করার পাশাপাশি ভারতের অবস্থানকেও চাপের মুখে ফেলেছেন।
মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, নতুন নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হলো রাশিয়ার তেল রপ্তানি থেকে অর্জিত মুনাফা কমানো। তবে সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করা নয়। এটি জি-৭ জোটভুক্ত দেশগুলোর নির্ধারিত ৬০ ডলার ‘মূল্যসীমা নীতি’র বিকল্প হিসেবে এসেছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বব্যাপী তেলের সরবরাহ শৃঙ্খল আরও চাপের মুখে পড়বে। নিউইয়র্কভিত্তিক বিনিয়োগ সংস্থা অ্যাগেইন ক্যাপিটালের জন কিলডাফ বলেন, ‘ওপেক বিশেষ করে সৌদি আরবের হাতে অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও, নিষেধাজ্ঞাবিহীন উৎসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম আরও বাড়বে।’
২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই কম দামে তেল কিনে রাশিয়ার অন্যতম শীর্ষ ক্রেতা হয়ে ওঠে ভারত। কিন্তু এখন রসনেফট ও লুকঅয়েল নিষিদ্ধ হওয়ায় ভারতীয় শোধনাগারগুলোকে তাদের সরবরাহকারী নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, গুজরাটের জামনগরে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম তেল শোধনাগার পরিচালনা করে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ। সম্প্রতি ভারতীয় এই প্রতিষ্ঠানটি রাশিয়ার তেল আমদানি কমানো বা সম্পূর্ণ বন্ধ করার পরিকল্পনা করেছে। প্রতিষ্ঠানটি রসনেফটের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ লাখ ব্যারেল তেল কেনার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেছিল। নতুন নিষেধাজ্ঞা সেই সরবরাহ জটিল করে তুলেছে।
আরেক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান নায়ারা এনার্জির বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার রসনেফট, তারাও একই সংকটে পড়েছে। এ ছাড়া ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শোধনাগারগুলো, যেমন—ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন ও ভারত পেট্রোলিয়াম আগামী ২১ নভেম্বরের পর তাদের সব চালান যাচাই করছে, যাতে কোনো নিষিদ্ধ রুশ কোম্পানি থেকে সরাসরি তেল না আসে।
এ অবস্থায় ভারত পড়েছে এক কঠিন ভারসাম্যের খেলায়। একদিকে সাশ্রয়ী জ্বালানি, অন্যদিকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক রক্ষা। ট্রাম্প ইতিমধ্যে ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ শুধু রুশ তেল কেনার জরিমানা হিসেবে।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন, ভারত ধীরে ধীরে রুশ তেল কেনা বন্ধ করবে। গত বুধবার (১৫ অক্টোবর) হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করার আশ্বাস দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘এটি একটি বড় পদক্ষেপ। কারণ, এটি রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধে একঘরে করার প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
তবে নয়াদিল্লি এ দাবি সরাসরি অস্বীকার করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, মোদির সঙ্গে এমন কোনো আলাপ হয়নি এবং দেশটি নিজেদের জ্বালানি নিরাপত্তা ও ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে।
এদিকে, ব্লুমবার্গ তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যচুক্তির আলোচনায় রয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক ১৫-১৬ শতাংশে নামানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু জ্বালানি-সংক্রান্ত মতবিরোধের কারণে অগ্রগতি ধীর। ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী মোদির ‘প্রতিশ্রুতি’ হয়তো বাস্তবের চেয়ে বেশি জনমত প্রভাবিত করার কৌশল, যাতে বোঝানো যায়—ভারত যুক্তরাষ্ট্রের চাপ মেনে রাশিয়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
দ্য এশিয়া গ্রুপের আশোক মালিক ব্লুমবার্গকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যচুক্তি প্রয়োজন, আবার একই সঙ্গে সাশ্রয়ী জ্বালানিও দরকার। এই দুই লক্ষ্য অর্জনে ভারতকে অর্থনৈতিক কূটনীতি প্রয়োগ করতে হবে।’ এর অংশ হিসেবে নয়াদিল্লি মার্কিন তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ও ক্রুড তেল আমদানি বাড়ানোর সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে, যার পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
তবে এর মানে এই নয় যে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে। বরং, নিষেধাজ্ঞা ঝুঁকি কমিয়ে জ্বালানি উৎসে বৈচিত্র্য আনাই ভারতের লক্ষ্য। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা একসঙ্গে ভারতের জন্য নতুন জটিলতা তৈরি করেছে।
এই টানাপোড়েনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী মোদি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি ৪৭তম আসিয়ান সম্মেলনে ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন। এর মাধ্যমে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ এড়িয়ে যাবেন। বিশ্লেষকদের মতে, এটি উত্তেজনা কমানোর একটি কূটনৈতিক ইঙ্গিত। আবার যোগাযোগের দ্বার খোলা রাখারও কৌশল বটে।
এদিকে, ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার পরেই বৈশ্বিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে এবং ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বিতর্ক আরও গভীর হয়েছে। কিন্তু এখানে সব দিক থেকেই চাপে আছে ভারত। কারণ, ভারতের জন্য ট্রাম্পের এই তেলের খেলা এমন এক শুরু হয়েছে, যখন তাদের অর্থনীতি সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে, ব্যয়-সাশ্রয়ী বিকল্প ছাড়া রুশ তেল আমদানি কমালে অভ্যন্তরীণ জ্বালানির দাম বাড়তে পারে, যা ভোক্তা ও শিল্প উভয়কেই প্রভাবিত করবে।
অর্থাৎ, ভারতের সামনে এখন দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ—একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি নিশ্চিত করা, অন্যদিকে নিজের কৌশলগত স্বাধীনতা ও জ্বালানি নিরাপত্তা বজায় রেখে দীর্ঘদিনের মিত্র পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখা। এ থেকে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয়, আর তাহলো—তেল নিয়ে ট্রাম্পের এই খেলা শুধু রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি নয়, বরং এমন একটি বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা, যেন বড় দেশগুলো কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ না করে।
তথ্যসূত্র: ইকোনমিকস টাইম, রয়টার্স, ব্লুমবার্গ
দ্বিতীয় মেয়াদে পররাষ্ট্রনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এনে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটন এবার সরাসরি রাশিয়ার বৃহৎ দুই তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই পদক্ষেপ ট্রাম্পের আগের কৌশলগুলো থেকে একটু ভিন্ন ও কঠোর। এর আগে তিনি সরাসরি নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং বাণিজ্য ও শুল্কনীতির মাধ্যমে মস্কোর যুদ্ধনীতিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিলেন। এবার তেলের নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে ট্রাম্প বিশ্ব জ্বালানি রাজনীতির খেলায় আরও গভীরে প্রবেশ করেছেন, যেখানে তিনি রাশিয়ার যুদ্ধকালীন আয় বন্ধ করার পাশাপাশি ভারতের অবস্থানকেও চাপের মুখে ফেলেছেন।
মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, নতুন নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হলো রাশিয়ার তেল রপ্তানি থেকে অর্জিত মুনাফা কমানো। তবে সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করা নয়। এটি জি-৭ জোটভুক্ত দেশগুলোর নির্ধারিত ৬০ ডলার ‘মূল্যসীমা নীতি’র বিকল্প হিসেবে এসেছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন নিষেধাজ্ঞায় বিশ্বব্যাপী তেলের সরবরাহ শৃঙ্খল আরও চাপের মুখে পড়বে। নিউইয়র্কভিত্তিক বিনিয়োগ সংস্থা অ্যাগেইন ক্যাপিটালের জন কিলডাফ বলেন, ‘ওপেক বিশেষ করে সৌদি আরবের হাতে অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও, নিষেধাজ্ঞাবিহীন উৎসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম আরও বাড়বে।’
২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই কম দামে তেল কিনে রাশিয়ার অন্যতম শীর্ষ ক্রেতা হয়ে ওঠে ভারত। কিন্তু এখন রসনেফট ও লুকঅয়েল নিষিদ্ধ হওয়ায় ভারতীয় শোধনাগারগুলোকে তাদের সরবরাহকারী নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, গুজরাটের জামনগরে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম তেল শোধনাগার পরিচালনা করে রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ। সম্প্রতি ভারতীয় এই প্রতিষ্ঠানটি রাশিয়ার তেল আমদানি কমানো বা সম্পূর্ণ বন্ধ করার পরিকল্পনা করেছে। প্রতিষ্ঠানটি রসনেফটের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ লাখ ব্যারেল তেল কেনার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেছিল। নতুন নিষেধাজ্ঞা সেই সরবরাহ জটিল করে তুলেছে।
আরেক ভারতীয় প্রতিষ্ঠান নায়ারা এনার্জির বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার রসনেফট, তারাও একই সংকটে পড়েছে। এ ছাড়া ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শোধনাগারগুলো, যেমন—ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন ও ভারত পেট্রোলিয়াম আগামী ২১ নভেম্বরের পর তাদের সব চালান যাচাই করছে, যাতে কোনো নিষিদ্ধ রুশ কোম্পানি থেকে সরাসরি তেল না আসে।
এ অবস্থায় ভারত পড়েছে এক কঠিন ভারসাম্যের খেলায়। একদিকে সাশ্রয়ী জ্বালানি, অন্যদিকে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক রক্ষা। ট্রাম্প ইতিমধ্যে ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ শুধু রুশ তেল কেনার জরিমানা হিসেবে।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন, ভারত ধীরে ধীরে রুশ তেল কেনা বন্ধ করবে। গত বুধবার (১৫ অক্টোবর) হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করার আশ্বাস দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘এটি একটি বড় পদক্ষেপ। কারণ, এটি রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধে একঘরে করার প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
তবে নয়াদিল্লি এ দাবি সরাসরি অস্বীকার করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, মোদির সঙ্গে এমন কোনো আলাপ হয়নি এবং দেশটি নিজেদের জ্বালানি নিরাপত্তা ও ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে।
এদিকে, ব্লুমবার্গ তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যচুক্তির আলোচনায় রয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্ক ১৫-১৬ শতাংশে নামানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কিন্তু জ্বালানি-সংক্রান্ত মতবিরোধের কারণে অগ্রগতি ধীর। ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী মোদির ‘প্রতিশ্রুতি’ হয়তো বাস্তবের চেয়ে বেশি জনমত প্রভাবিত করার কৌশল, যাতে বোঝানো যায়—ভারত যুক্তরাষ্ট্রের চাপ মেনে রাশিয়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
দ্য এশিয়া গ্রুপের আশোক মালিক ব্লুমবার্গকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যচুক্তি প্রয়োজন, আবার একই সঙ্গে সাশ্রয়ী জ্বালানিও দরকার। এই দুই লক্ষ্য অর্জনে ভারতকে অর্থনৈতিক কূটনীতি প্রয়োগ করতে হবে।’ এর অংশ হিসেবে নয়াদিল্লি মার্কিন তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ও ক্রুড তেল আমদানি বাড়ানোর সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে, যার পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
তবে এর মানে এই নয় যে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছে। বরং, নিষেধাজ্ঞা ঝুঁকি কমিয়ে জ্বালানি উৎসে বৈচিত্র্য আনাই ভারতের লক্ষ্য। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা একসঙ্গে ভারতের জন্য নতুন জটিলতা তৈরি করেছে।
এই টানাপোড়েনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী মোদি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি ৪৭তম আসিয়ান সম্মেলনে ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন। এর মাধ্যমে তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ এড়িয়ে যাবেন। বিশ্লেষকদের মতে, এটি উত্তেজনা কমানোর একটি কূটনৈতিক ইঙ্গিত। আবার যোগাযোগের দ্বার খোলা রাখারও কৌশল বটে।
এদিকে, ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার পরেই বৈশ্বিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে এবং ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বিতর্ক আরও গভীর হয়েছে। কিন্তু এখানে সব দিক থেকেই চাপে আছে ভারত। কারণ, ভারতের জন্য ট্রাম্পের এই তেলের খেলা এমন এক শুরু হয়েছে, যখন তাদের অর্থনীতি সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং জ্বালানির চাহিদা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে, ব্যয়-সাশ্রয়ী বিকল্প ছাড়া রুশ তেল আমদানি কমালে অভ্যন্তরীণ জ্বালানির দাম বাড়তে পারে, যা ভোক্তা ও শিল্প উভয়কেই প্রভাবিত করবে।
অর্থাৎ, ভারতের সামনে এখন দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ—একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি নিশ্চিত করা, অন্যদিকে নিজের কৌশলগত স্বাধীনতা ও জ্বালানি নিরাপত্তা বজায় রেখে দীর্ঘদিনের মিত্র পুতিনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখা। এ থেকে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হয়, আর তাহলো—তেল নিয়ে ট্রাম্পের এই খেলা শুধু রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি নয়, বরং এমন একটি বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা, যেন বড় দেশগুলো কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ না করে।
তথ্যসূত্র: ইকোনমিকস টাইম, রয়টার্স, ব্লুমবার্গ
ভারতের পাঁচটি রাজ্যে রাজ্যসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে চারটির। এর মধ্যে তিনটিই গেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির দখলে। এমনকি কংগ্রেসের দখলে থাকা দুই রাজ্য রাজস্থান ও ছত্তিশগড় ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। কংগ্রেসের জন্য সান্ত্বনা পুরস্কার শুধু তেলেঙ্গানা।
০৫ ডিসেম্বর ২০২৩এক সপ্তাহ আগেও মনে হচ্ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কৌশলে ব্যবহার করে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন পুতিন। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ার অর্থনীতির মূল খাত জ্বালানি তেল শিল্পের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে
১১ মিনিট আগে‘মি. মানদানি’, ‘মি. মানদামি’, ‘জোরহান মানদামি, ‘জোহরান মানদামি’—এগুলো নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির নামের কিছু বহুল প্রচলিত সংস্করণ। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি থেকেই অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জোহরান মামদানির নামের উচ্চারণ নিয়ে বিতর্কের সূচনা।
২ ঘণ্টা আগেপ্রতিটি প্রজন্মই নিজস্ব কারণ ও লক্ষ্য নিয়ে এগোয়, পুরোনো সংগ্রামের উত্তরাধিকার নিয়ে নয়। সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এ ধারা দেখা যায়—যুবকেরা শাসন বদলাতে পারেন, কিন্তু টেকসই পরিবর্তন বা তাঁদের নিজস্ব ভবিষ্যতের উন্নতি প্রায়ই অধরা থেকে যায়, তা আরব বসন্ত হোক, বাংলাদেশ বা নেপালই হোক।
২ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
‘মি. মানদানি’, ‘মি. মানদামি’, ‘জোরহান মানদামি, ‘জোহরান মানদামি’—এগুলো নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির নামের কিছু বহুল প্রচলিত সংস্করণ।
নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি থেকেই অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জোহরান মামদানির নামের উচ্চারণ নিয়ে বিতর্কের সূচনা। সে সময় নামের ভুল উচ্চারণ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমোকে এক কড়া জবাব দিয়েছিলেন মামদানি। গত সপ্তাহে মেয়র নির্বাচনের ত্রিমুখী বিতর্ক অনুষ্ঠানে বিষয়টি আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
বিতর্কের এক ঘণ্টার বেশি সময় পরও সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু এম কুমো একবারও এই দৌড়ে এগিয়ে থাকা প্রার্থীর নামটি উল্লেখ করার প্রয়োজন বোধ করেননি। তিনি তাঁকে কেবল ‘অ্যাসেম্বলিম্যান’ ও সাবেক মেয়র বিল ডি ব্লাসিওর একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ হিসেবে আখ্যায়িত করে দায়িত্ব সারেন। নির্বাচনী প্রচারে বারবার ভুলভাবে উচ্চারণ করার পর একধরনের ‘আত্মসংযম’ দেখিয়ে বিতর্কেও তিনি সেই নাম বলা থেকে বিরত থাকেন। তাঁর উচ্চারণ এতটাই ভুল ছিল যে, গত জুনে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি বিতর্কে অ্যাসেম্বলিম্যান জোহরান মামদানি নিজেই তাঁকে এক উচিত জবাব দেন।
তবে শুধু কুমোই নন, নানা কারণে মামদানির প্রথম ও শেষ নামটি উচ্চারণের ক্ষেত্রে বেশ অদ্ভুত, এমনকি সৃজনশীল ভাষাগত বিভ্রাটের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া গত সপ্তাহে সাধারণ নির্বাচনের প্রথম বিতর্কে তাঁর নাম বলতে হিমশিম খেয়েছিলেন, তাঁকে ‘জোর-হান’ বলে ডেকেছিলেন। এমনকি নিউইয়র্কে অ্যাটর্নি জেনারেল ও মামদানির একজন প্রধান রাজনৈতিক সহযোগী লেটিটিয়া জেমসও এ মাসে ওয়াশিংটন হাইটসে একটি বড় নির্বাচনী জনসভায় তাঁর নাম ভুলভাবে উচ্চারণ করেন, মঞ্চে আসার সময় তাঁকে উৎসাহের সঙ্গে ‘মানদামি’ বলে চিৎকার করে স্বাগত জানান।
মামদানির জন্য তাঁর নাম বিকৃত করা অবশ্য নতুন কিছু নয়। ম্যানহাটনে একজন অভিবাসী হিসেবে বেড়ে ওঠার সময় তাঁর নামের ভুল উচ্চারণ ছিল একটি সাধারণ ঘটনা। তিনি বলেন, ‘এটা প্রায়ই ঘটত। তবে সত্যি বলতে, যাঁরা চেষ্টা করেন এবং ভুল করেন, তাঁদের প্রতি আমার কোনো বিরক্তি নেই। চেষ্টা করাটাই আমার কাছে সব।’
শহরের প্রথম মুসলিম মেয়র হওয়ার দৌড়ে থাকা মামদানি অবশ্য মনে করেন, কুমোর মতো কিছু ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর নাম ভুল উচ্চারণ করছেন অথবা সঠিকভাবে বলার চেষ্টা করেন না। তিনি বলেন, ‘যাঁরা আমার নাম ভুল উচ্চারণ করার জন্য অতিরিক্ত চেষ্টা করেন, সেটা কোনো ভুল নয়, সেটা একধরনের বার্তা।’
সাবেক মেয়র ডি ব্লাসিও মামদানির আরও একজন সহযোগী, যিনি স্বীকার করেছেন যে—তিনিও মামদানির নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছেন। ডি ব্লাসিও বলেন, ‘আমি মনে করি, আমি এখন কাছাকাছি আছি, তবে আমার বেশ কিছুদিন লেগেছে!’ তিনি যোগ করেন, ‘আমার মনে হয়, আমেরিকান ইংরেজির কানে, এই নামের গঠন কিছুটা অপ্রত্যাশিত। এর ছন্দটা সঠিকভাবে ধরতে কিছু অনুশীলন লাগে।’
স্লিওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি ভালো করার চেষ্টা করছেন, ‘সময় লাগবে। এটা ইচ্ছাকৃত নয়।’ স্লিওয়ার নামও অনেকে ভুল উচ্চারণ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মামদানির কষ্ট বুঝি। গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলস প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৪৬ বছরের মধ্যে প্রায় ৩৩ বছর আমার নাম ক্রমাগত ভুল উচ্চারণ করা হয়েছে। আমি এতে অবশ্য আপত্তি করি না।’
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মামদানির নাম বলার ব্যর্থ প্রচেষ্টা হয়তো এতটাও উদারভাবে দেখা যেতে পারে না, কারণ, ট্রাম্প বারবার এ প্রার্থীর ওপর কথার আক্রমণ করে তাঁকে গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়েছেন। তাঁর প্রেস সেক্রেটারি, ক্যারোলিন লিভিট, তাঁর প্রথম ও শেষ নামের অংশগুলোকে একত্র করে আরও অদ্ভুত উচ্চারণ ব্যবহার করেছিলেন।
তবে কিছু ভুল উচ্চারণ ইচ্ছাকৃত হলেও বেশ কয়েকজন ভাষাতত্ত্ববিদ দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, মামদানির প্রথম ও শেষ উভয় নামেই এমন অক্ষর বিন্যাস ও স্বরধ্বনি রয়েছে, যা ইংরেজিতে সাধারণত দেখা যায় না। তাই অনেকের পক্ষে এটি উচ্চারণে হিমশিম খাওয়াটা আশ্চর্যজনক কিছু নয়।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক জিলিয়ান গ্যালাগার জানান, ইংরেজিতে ‘মড’-এর চেয়ে ‘নড’ ক্রমযুক্ত শত শত শব্দ বেশি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ব্যঞ্জনবর্ণের গুচ্ছ ভুল উচ্চারণের কারণ হতে পারে। একটি প্রক্রিয়া, যা অ্যাসিমিলেশন নামে পরিচিত, তাতে মামদানির শেষ নামের দ্বিতীয় ‘ম’ অক্ষরটি ‘ন’-এ পরিবর্তিত হয়ে ‘মানদানি’র মতো শোনাতে পারে। অন্য একটি প্রক্রিয়া, যা সাবস্টিটিউশন নামে পরিচিত, তাতে বক্তারা মামদানির ‘ন’ অক্ষরটিকে অন্য একটি ‘ম’ দিয়ে প্রতিস্থাপন করে ফেলেন।
এ ধরনের কথার প্যাটার্ন এড়িয়ে চলা কঠিন হতে পারে। এনওয়াইইউ সোসিওলিঙ্গুইস্টিকস ল্যাবের সহপরিচালক অধ্যাপক লরেল ম্যাকেনজি বলেন, ‘মামদানিতে ‘‘ম’’-এর পাশে ‘‘দ’’ আছে, যা ইংরেজিভাষীদের জন্য কঠিন। আমাদের জিহ্বা এই নির্দিষ্ট ক্রমের ধ্বনি তৈরি করতে অভ্যস্ত নয়।’
প্রায়ই, ‘জোহরান’কে তীক্ষ্ণ ‘জোহর-অ্যান’ (Zohr-ANNE) হিসেবে উচ্চারণ করা হয়। সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের গ্র্যাজুয়েট সেন্টারের সহযোগী গবেষণা অধ্যাপক সুজান ভ্যান ডের ফিস্ট বলেন, এই ভুল উচ্চারণ ঘটে আমেরিকানাইজড ইংরেজিতে স্বরধ্বনি ভিন্নভাবে উচ্চারিত হওয়ার কারণে।
মামদানি জানান, একবার নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি ম্যানহাটনের একটি মসজিদে জুমার নামাজে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে কেউ এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন কি না যে, কেউ তাঁদের নাম ধারাবাহিকভাবে ভুল উচ্চারণ করেছেন। কক্ষের বেশির ভাগ মানুষই হাত তুলেছিলেন।
মামদানি বলেন, অগণিত অভিবাসী এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন। যখন কেউ কারও নাম নিয়ে উপহাস করে বা ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করে, তখন এর মানে হলো, কেউ যেন বলতে চায় যে, এই ব্যক্তি এখানে থাকার যোগ্য নয়।
মামদানি জানান, তিনি তাঁর নাম নিয়ে গর্বিত। তাঁর মা তাঁর প্রথম নামটি বেছে নিয়েছিলেন, যার অর্থ ‘আকাশের প্রথম তারা’। তাঁর বাবা তাঁর মাঝের নাম ‘কোয়ামে’ বেছে নিয়েছিলেন ঘানার প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন, সেই কোয়ামে নক্রুমার সম্মানে।
তবে মামদানি মনে করেন, তাঁর নাম উচ্চারণে ভুল করা বা বিকৃত করা ইচ্ছাকৃত। এর পেছনে কোনো রাজনীতি রয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, অ্যান্ড্রু কুমোর মতো মানুষদের ‘জন ক্যাটসিমাটিডিস’-এর মতো কঠিন নাম উচ্চারণে কোনো দিন ভুল হয় না। যিনি আসলে এক গ্রিক বিলিয়নিয়ার মুদি ব্যবসায়ী। কিন্তু মামদানি নামটা নাকি উচ্চারণ করা কঠিন! আসলে এটা পক্ষপাতের বিষয়।
অন্যরাও কুমোর এমন ভুলে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। সাংবাদিক আনন্দ গিরিধরদাস এমএসএনবিসিতে এক সাক্ষাৎকারে সরাসরি বলেন, ‘আপনি এমন এক বৃহৎ ও বৈচিত্র্যময় শহরকে নেতৃত্ব দিতে চান। অন্তত মানুষের নাম ঠিকভাবে উচ্চারণ করা শেখা উচিত।’
অন্যদিকে কুমোর মুখপাত্র রিচ অ্যাজোপার্ডি বলেছেন, ‘সাবেক গভর্নর কুমোর নামও প্রায়ই ভুল উচ্চারণ করা হয়। যেমন অনেকে ‘‘কুমো’’কে ‘‘কোমো’’ (ইতালির এক হ্রদের নামের মতো) বলেন। এটা ইচ্ছাকৃত নয়, তাই এতে বাড়াবাড়ি করার কিছু নেই। আমাদের নামও মানুষ প্রায়ই ভুল বলে, কিন্তু আমরা তা নিয়ে কান্নাকাটি করি না।’
তবে ম্যাকেনজি ও অন্যরা বলেন, কঠিন নাম উচ্চারণ করা মোটেও অসম্ভব কিছু নয়। একটু অনুশীলন আর আগ্রহ থাকলেই সম্ভব। বিশেষ করে, নিউইয়র্কের মতো শহরে, যেখানে বিশ্বের নানা প্রান্তের অভিবাসী সম্প্রদায় বসবাস করে।
ম্যাকেনজি বলেন, ‘আমরা তো সবাই ‘‘গেম অব থ্রোনস’’-এর সময় ‘‘ডেনেরিস টার্গারিয়ান’’ নামটা ঠিকঠাক শিখেছিলাম, তাই না? তাহলে মানুষের নাম শেখা কেন নয়? আমরা পারব, শুধু একটু চেষ্টা করতে হবে, একটু অনুশীলন করতে হবে।’
‘মি. মানদানি’, ‘মি. মানদামি’, ‘জোরহান মানদামি, ‘জোহরান মানদামি’—এগুলো নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির নামের কিছু বহুল প্রচলিত সংস্করণ।
নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি থেকেই অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জোহরান মামদানির নামের উচ্চারণ নিয়ে বিতর্কের সূচনা। সে সময় নামের ভুল উচ্চারণ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমোকে এক কড়া জবাব দিয়েছিলেন মামদানি। গত সপ্তাহে মেয়র নির্বাচনের ত্রিমুখী বিতর্ক অনুষ্ঠানে বিষয়টি আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
বিতর্কের এক ঘণ্টার বেশি সময় পরও সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু এম কুমো একবারও এই দৌড়ে এগিয়ে থাকা প্রার্থীর নামটি উল্লেখ করার প্রয়োজন বোধ করেননি। তিনি তাঁকে কেবল ‘অ্যাসেম্বলিম্যান’ ও সাবেক মেয়র বিল ডি ব্লাসিওর একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ হিসেবে আখ্যায়িত করে দায়িত্ব সারেন। নির্বাচনী প্রচারে বারবার ভুলভাবে উচ্চারণ করার পর একধরনের ‘আত্মসংযম’ দেখিয়ে বিতর্কেও তিনি সেই নাম বলা থেকে বিরত থাকেন। তাঁর উচ্চারণ এতটাই ভুল ছিল যে, গত জুনে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি বিতর্কে অ্যাসেম্বলিম্যান জোহরান মামদানি নিজেই তাঁকে এক উচিত জবাব দেন।
তবে শুধু কুমোই নন, নানা কারণে মামদানির প্রথম ও শেষ নামটি উচ্চারণের ক্ষেত্রে বেশ অদ্ভুত, এমনকি সৃজনশীল ভাষাগত বিভ্রাটের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া গত সপ্তাহে সাধারণ নির্বাচনের প্রথম বিতর্কে তাঁর নাম বলতে হিমশিম খেয়েছিলেন, তাঁকে ‘জোর-হান’ বলে ডেকেছিলেন। এমনকি নিউইয়র্কে অ্যাটর্নি জেনারেল ও মামদানির একজন প্রধান রাজনৈতিক সহযোগী লেটিটিয়া জেমসও এ মাসে ওয়াশিংটন হাইটসে একটি বড় নির্বাচনী জনসভায় তাঁর নাম ভুলভাবে উচ্চারণ করেন, মঞ্চে আসার সময় তাঁকে উৎসাহের সঙ্গে ‘মানদামি’ বলে চিৎকার করে স্বাগত জানান।
মামদানির জন্য তাঁর নাম বিকৃত করা অবশ্য নতুন কিছু নয়। ম্যানহাটনে একজন অভিবাসী হিসেবে বেড়ে ওঠার সময় তাঁর নামের ভুল উচ্চারণ ছিল একটি সাধারণ ঘটনা। তিনি বলেন, ‘এটা প্রায়ই ঘটত। তবে সত্যি বলতে, যাঁরা চেষ্টা করেন এবং ভুল করেন, তাঁদের প্রতি আমার কোনো বিরক্তি নেই। চেষ্টা করাটাই আমার কাছে সব।’
শহরের প্রথম মুসলিম মেয়র হওয়ার দৌড়ে থাকা মামদানি অবশ্য মনে করেন, কুমোর মতো কিছু ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর নাম ভুল উচ্চারণ করছেন অথবা সঠিকভাবে বলার চেষ্টা করেন না। তিনি বলেন, ‘যাঁরা আমার নাম ভুল উচ্চারণ করার জন্য অতিরিক্ত চেষ্টা করেন, সেটা কোনো ভুল নয়, সেটা একধরনের বার্তা।’
সাবেক মেয়র ডি ব্লাসিও মামদানির আরও একজন সহযোগী, যিনি স্বীকার করেছেন যে—তিনিও মামদানির নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছেন। ডি ব্লাসিও বলেন, ‘আমি মনে করি, আমি এখন কাছাকাছি আছি, তবে আমার বেশ কিছুদিন লেগেছে!’ তিনি যোগ করেন, ‘আমার মনে হয়, আমেরিকান ইংরেজির কানে, এই নামের গঠন কিছুটা অপ্রত্যাশিত। এর ছন্দটা সঠিকভাবে ধরতে কিছু অনুশীলন লাগে।’
স্লিওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি ভালো করার চেষ্টা করছেন, ‘সময় লাগবে। এটা ইচ্ছাকৃত নয়।’ স্লিওয়ার নামও অনেকে ভুল উচ্চারণ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মামদানির কষ্ট বুঝি। গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলস প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৪৬ বছরের মধ্যে প্রায় ৩৩ বছর আমার নাম ক্রমাগত ভুল উচ্চারণ করা হয়েছে। আমি এতে অবশ্য আপত্তি করি না।’
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মামদানির নাম বলার ব্যর্থ প্রচেষ্টা হয়তো এতটাও উদারভাবে দেখা যেতে পারে না, কারণ, ট্রাম্প বারবার এ প্রার্থীর ওপর কথার আক্রমণ করে তাঁকে গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়েছেন। তাঁর প্রেস সেক্রেটারি, ক্যারোলিন লিভিট, তাঁর প্রথম ও শেষ নামের অংশগুলোকে একত্র করে আরও অদ্ভুত উচ্চারণ ব্যবহার করেছিলেন।
তবে কিছু ভুল উচ্চারণ ইচ্ছাকৃত হলেও বেশ কয়েকজন ভাষাতত্ত্ববিদ দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, মামদানির প্রথম ও শেষ উভয় নামেই এমন অক্ষর বিন্যাস ও স্বরধ্বনি রয়েছে, যা ইংরেজিতে সাধারণত দেখা যায় না। তাই অনেকের পক্ষে এটি উচ্চারণে হিমশিম খাওয়াটা আশ্চর্যজনক কিছু নয়।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক জিলিয়ান গ্যালাগার জানান, ইংরেজিতে ‘মড’-এর চেয়ে ‘নড’ ক্রমযুক্ত শত শত শব্দ বেশি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ব্যঞ্জনবর্ণের গুচ্ছ ভুল উচ্চারণের কারণ হতে পারে। একটি প্রক্রিয়া, যা অ্যাসিমিলেশন নামে পরিচিত, তাতে মামদানির শেষ নামের দ্বিতীয় ‘ম’ অক্ষরটি ‘ন’-এ পরিবর্তিত হয়ে ‘মানদানি’র মতো শোনাতে পারে। অন্য একটি প্রক্রিয়া, যা সাবস্টিটিউশন নামে পরিচিত, তাতে বক্তারা মামদানির ‘ন’ অক্ষরটিকে অন্য একটি ‘ম’ দিয়ে প্রতিস্থাপন করে ফেলেন।
এ ধরনের কথার প্যাটার্ন এড়িয়ে চলা কঠিন হতে পারে। এনওয়াইইউ সোসিওলিঙ্গুইস্টিকস ল্যাবের সহপরিচালক অধ্যাপক লরেল ম্যাকেনজি বলেন, ‘মামদানিতে ‘‘ম’’-এর পাশে ‘‘দ’’ আছে, যা ইংরেজিভাষীদের জন্য কঠিন। আমাদের জিহ্বা এই নির্দিষ্ট ক্রমের ধ্বনি তৈরি করতে অভ্যস্ত নয়।’
প্রায়ই, ‘জোহরান’কে তীক্ষ্ণ ‘জোহর-অ্যান’ (Zohr-ANNE) হিসেবে উচ্চারণ করা হয়। সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের গ্র্যাজুয়েট সেন্টারের সহযোগী গবেষণা অধ্যাপক সুজান ভ্যান ডের ফিস্ট বলেন, এই ভুল উচ্চারণ ঘটে আমেরিকানাইজড ইংরেজিতে স্বরধ্বনি ভিন্নভাবে উচ্চারিত হওয়ার কারণে।
মামদানি জানান, একবার নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি ম্যানহাটনের একটি মসজিদে জুমার নামাজে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে কেউ এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন কি না যে, কেউ তাঁদের নাম ধারাবাহিকভাবে ভুল উচ্চারণ করেছেন। কক্ষের বেশির ভাগ মানুষই হাত তুলেছিলেন।
মামদানি বলেন, অগণিত অভিবাসী এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন। যখন কেউ কারও নাম নিয়ে উপহাস করে বা ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করে, তখন এর মানে হলো, কেউ যেন বলতে চায় যে, এই ব্যক্তি এখানে থাকার যোগ্য নয়।
মামদানি জানান, তিনি তাঁর নাম নিয়ে গর্বিত। তাঁর মা তাঁর প্রথম নামটি বেছে নিয়েছিলেন, যার অর্থ ‘আকাশের প্রথম তারা’। তাঁর বাবা তাঁর মাঝের নাম ‘কোয়ামে’ বেছে নিয়েছিলেন ঘানার প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন, সেই কোয়ামে নক্রুমার সম্মানে।
তবে মামদানি মনে করেন, তাঁর নাম উচ্চারণে ভুল করা বা বিকৃত করা ইচ্ছাকৃত। এর পেছনে কোনো রাজনীতি রয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, অ্যান্ড্রু কুমোর মতো মানুষদের ‘জন ক্যাটসিমাটিডিস’-এর মতো কঠিন নাম উচ্চারণে কোনো দিন ভুল হয় না। যিনি আসলে এক গ্রিক বিলিয়নিয়ার মুদি ব্যবসায়ী। কিন্তু মামদানি নামটা নাকি উচ্চারণ করা কঠিন! আসলে এটা পক্ষপাতের বিষয়।
অন্যরাও কুমোর এমন ভুলে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। সাংবাদিক আনন্দ গিরিধরদাস এমএসএনবিসিতে এক সাক্ষাৎকারে সরাসরি বলেন, ‘আপনি এমন এক বৃহৎ ও বৈচিত্র্যময় শহরকে নেতৃত্ব দিতে চান। অন্তত মানুষের নাম ঠিকভাবে উচ্চারণ করা শেখা উচিত।’
অন্যদিকে কুমোর মুখপাত্র রিচ অ্যাজোপার্ডি বলেছেন, ‘সাবেক গভর্নর কুমোর নামও প্রায়ই ভুল উচ্চারণ করা হয়। যেমন অনেকে ‘‘কুমো’’কে ‘‘কোমো’’ (ইতালির এক হ্রদের নামের মতো) বলেন। এটা ইচ্ছাকৃত নয়, তাই এতে বাড়াবাড়ি করার কিছু নেই। আমাদের নামও মানুষ প্রায়ই ভুল বলে, কিন্তু আমরা তা নিয়ে কান্নাকাটি করি না।’
তবে ম্যাকেনজি ও অন্যরা বলেন, কঠিন নাম উচ্চারণ করা মোটেও অসম্ভব কিছু নয়। একটু অনুশীলন আর আগ্রহ থাকলেই সম্ভব। বিশেষ করে, নিউইয়র্কের মতো শহরে, যেখানে বিশ্বের নানা প্রান্তের অভিবাসী সম্প্রদায় বসবাস করে।
ম্যাকেনজি বলেন, ‘আমরা তো সবাই ‘‘গেম অব থ্রোনস’’-এর সময় ‘‘ডেনেরিস টার্গারিয়ান’’ নামটা ঠিকঠাক শিখেছিলাম, তাই না? তাহলে মানুষের নাম শেখা কেন নয়? আমরা পারব, শুধু একটু চেষ্টা করতে হবে, একটু অনুশীলন করতে হবে।’
ভারতের পাঁচটি রাজ্যে রাজ্যসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে চারটির। এর মধ্যে তিনটিই গেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির দখলে। এমনকি কংগ্রেসের দখলে থাকা দুই রাজ্য রাজস্থান ও ছত্তিশগড় ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। কংগ্রেসের জন্য সান্ত্বনা পুরস্কার শুধু তেলেঙ্গানা।
০৫ ডিসেম্বর ২০২৩এক সপ্তাহ আগেও মনে হচ্ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কৌশলে ব্যবহার করে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন পুতিন। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ার অর্থনীতির মূল খাত জ্বালানি তেল শিল্পের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে
১১ মিনিট আগেদ্বিতীয় মেয়াদে পররাষ্ট্রনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এনে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটন এবার সরাসরি রাশিয়ার বৃহৎ দুই তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই পদক্ষেপ ট্রাম্পের আগের কৌশলগুলো থেকে একটু ভিন্ন ও কঠোর।
২৩ মিনিট আগেপ্রতিটি প্রজন্মই নিজস্ব কারণ ও লক্ষ্য নিয়ে এগোয়, পুরোনো সংগ্রামের উত্তরাধিকার নিয়ে নয়। সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এ ধারা দেখা যায়—যুবকেরা শাসন বদলাতে পারেন, কিন্তু টেকসই পরিবর্তন বা তাঁদের নিজস্ব ভবিষ্যতের উন্নতি প্রায়ই অধরা থেকে যায়, তা আরব বসন্ত হোক, বাংলাদেশ বা নেপালই হোক।
২ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
ভারতে জেনারেশন জেড বা জেন-জি তরুণের সংখ্যা বিশাল—৩৭ কোটি। অর্থাৎ, দেশটির মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশই তাঁরা। ২৫ বছরের কম বয়সী অস্থির প্রকৃতির এই তরুণেরা হাইপার কানেক্টেড, অর্থাৎ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পরস্পরের সঙ্গে তীব্রভাবে যুক্ত। স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বদৌলতে রাজনীতি, দুর্নীতি ও বৈষম্যের তথ্য প্রতিনিয়তই জানছেন তাঁরা। সেই তথ্যপ্রবাহের সূত্র ধরে এশিয়া ও আফ্রিকায় বিদ্যমান ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে রাজপথে নেমে এসেছেন তাঁরা।
১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই তরুণেরা গত মাসে নেপালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার পতন ঘটিয়েছেন। মাদাগাস্কারে তরুণদের আন্দোলন সেখানকার শাসককে সরিয়ে দিয়েছে। জীবনযাত্রার বাড়তি খরচ, দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ার তরুণদের তীব্র বিক্ষোভ সরকারকে মাথা নোয়াতে বাধ্য করেছে। আর বাংলাদেশে চাকরিতে কোটাপদ্ধতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় গত বছর সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এনক্রিপটেড অ্যাপের মাধ্যমে সংগঠিত ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব আন্দোলন দ্রুতগতির, বিকেন্দ্রীভূত, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষে ভরা।
কিন্তু কাছাকাছি পরিস্থিতি হলেও লাগোয়া প্রতিবেশী দেশ ভারতের জেন-জি প্রজন্মের মধ্যে এনক্রিপটেড অ্যাপ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমনির্ভর আন্দোলনের ঢেউ এখনো তেমন আলোড়ন তুলতে পারেনি। সবচেয়ে তরুণ এই প্রজন্ম ভারতে কেন আওয়াজ তুলছে না, প্রতিবাদে রাস্তায় কেন নামছে না? তারা কি ভীত বা কেউ কি তাদের রাস্তায় নামতে বাধা দিচ্ছে?
বিবিসি বলছে, মূলত ‘দেশবিরোধী’ তকমা পাওয়ার ভয়, জাতিগত ও আঞ্চলিক বিভাজন, অর্থনৈতিক চাপ যেন ভারতের তরুণদের কাঁধে ভারী বোঝা হয়ে চেপে বসেছে। এর সঙ্গে ‘প্রতিবাদে কিছুই বদলাবে না’—এমন সাধারণ মনোভাবও রয়েছে। সব মিলিয়ে ভারতে জেন-জি আন্দোলনের জোরালো কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। গত সেপ্টেম্বরে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখ অঞ্চলের জন্য ‘রাজ্যের মর্যাদার’ দাবিতে অসন্তোষের ক্ষীণ স্ফুলিঙ্গ দেখা গেছে; বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়।
ওই ঘটনাকে জেন-জি দ্রোহ ও দীর্ঘদিনের অবদমিত ক্ষোভের প্রতিফলন হিসেবে তুলে ধরেছেন এই বিক্ষোভের অন্যতম অনুপ্রেরণাদাতা পরিবেশবাদী অধিকারকর্মী সোনম ওয়াংচুক। ভারতের জাতীয় রাজনীতিতেও এ বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়ে। কর্ণাটকের নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে সোচ্চার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্সে লিখেছেন, ‘জেন-জি প্রজন্মই ভোট কারচুপি রুখবে ও সংবিধানকে রক্ষা করবে।’ তারপরও জেন-জি প্রজন্মের কাছ থেকে সাড়া নেই।
নেপালসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের তরুণদের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লির পুলিশ কমিশনার নাকি রাজধানীতে তরুণদের সম্ভাব্য আন্দোলন ঠেকাতে জরুরি পরিকল্পনা প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছেন। অনলাইনে এ নিয়ে তুমুল তর্কবিতর্ক চলছে। ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুমলাইভ বলছে, জেন-জি প্রজন্মের ভেতরেই যেন এক অনলাইন যুদ্ধ চলছে। রেডিট ও এক্সে ভারতের তরুণদের একইভাবে রাস্তায় নামার আহ্বান জানাচ্ছেন কেউ কেউ; একে ন্যায়বিচারের আহ্বান মনে করছেন তাঁরা। অন্য পক্ষ নেপালের সহিংসতার দৃষ্টান্ত টেনে সতর্ক করছেন, তাঁরা বিদেশি হস্তক্ষেপের ছায়া দেখছেন।
ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে সত্তরের দশকের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ক্যাম্পাস বিক্ষোভ—ভারতের ছাত্ররাজনীতি সব সময়ই দৃষ্টি কাড়ে। তবু বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নেপাল বা বাংলাদেশের মতো ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে টলিয়ে দেওয়া এত সহজ নয়। এর একটা কারণ হলো, আঞ্চলিক বিভক্তি। আশপাশের দেশগুলোর তরুণদের মতো তাঁরাও ক্ষুব্ধ, কিন্তু তাঁদের ক্ষোভ মূলত আঞ্চলিক ইস্যুগুলোকে ঘিরে। ফলে বেকারত্ব, দুর্নীতি আর বৈষম্য নিয়ে দেশজুড়ে তরুণদের বিক্ষোভ গড়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব।
বিহারের ২৬ বছর বয়সী সাংবাদিক বিপুল কুমার বলেন, ‘আমাদের সবাইকে এক করতে পারবে—এমন কোনো শক্তি আমি দেখি না। নেপালের তুলনায় ভারতে ক্ষমতা অনেক বেশি বিকেন্দ্রীকৃত, তরুণদের ক্ষোভও তেমনই বিক্ষিপ্ত। আমি চাই, কেন্দ্রীয় সরকারকে চ্যালেঞ্জ করা হোক। কিন্তু অনেক তরুণ কেবল সরকারি চাকরি বাড়ুক—এটাই চান।’
ভারতীয় থিংকট্যাংক ইয়ুথ পলিসি সেন্টারের প্রধান সুধাংশু কৌশিক মনে করেন, জেন-জি বিদ্রোহের দিক থেকে ভারত হয়তো ‘ব্যতিক্রম’ হয়েই থাকবে। তিনি বলেন, ‘বয়সই একমাত্র বিষয় নয়। ভারতে তরুণেরা আঞ্চলিক, ভাষাগত ও জাতিভিত্তিক পরিচয়ের সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত, যা প্রায়ই তাঁদের একে অপরের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেয়।’
সুধাংশু কৌশিকের প্রশ্ন, যদি সত্যিই ভারতে কোনো জেন-জি বিদ্রোহ হয়, কোন তরুণদের হবে সেটা? দলিত তরুণদের, শহুরে তরুণদের, না তামিলভাষী তরুণদের? তাঁর ভাষায়, বাস্তবতা হলো, ভারতের তরুণসমাজ এত বৈচিত্র্যময় ও পরস্পরবিরোধী যে, তাদের এক ছাতার নিচে আনা কঠিন।
শহুরে তরুণেরা কাজের সুযোগ ও নগর-পরিকাঠামো নিয়ে আন্দোলন করবেন; একসময় ‘অস্পৃশ্য’ বিবেচিত দলিত তরুণেরা লড়বেন জাতিগত বৈষম্য ও সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নে; আর তামিল তরুণেরা সোচ্চার হবেন ভাষা, আঞ্চলিক অধিকার কিংবা স্থানীয় ঐতিহ্য রক্ষায়। আবার রাজ্যভেদেও তরুণদের ক্ষোভের কারণ আলাদা। গুজরাট ও হরিয়ানায় উচ্চবর্ণের তরুণেরা কোটা বাড়ানোর দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। অন্যদিকে তামিলনাড়ুতে তরুণেরা প্রতিবাদ করেছেন ঐতিহ্যবাহী খেলা জল্লিকাত্তু নিষিদ্ধের রায়কে ঘিরে।
আঞ্চলিক বিভাজন ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর চেপে বসেছে ‘দেশবিরোধী’ ট্যাগ পাওয়ার বড় ভয়। এ কারণে সবচেয়ে সচেতন ও পরস্পরের সঙ্গে হাইপার কানেক্টেড তরুণেরাও রাস্তায় নামতে ভয় পান বলে মনে করেন জেন-জি প্রজন্মের তরুণ ২৩ বছর বয়সী রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকে পড়া ধৈর্য চৌধুরী। ভারতের সরকারি রাজনীতিক ও টেলিভিশন উপস্থাপকদের প্রায়ই আন্দোলনকারীদের এই ‘ট্যাগ’ দিতে শোনা যায়।
এখানেই শেষ নয়, আরও একটি বাধা কাজ করে ভারতীয় তরুণদের সামনে। তা হলো—দেশটির শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিবাদ নিষিদ্ধ বা সীমিত করেছে। অথচ, এই প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় রাজনৈতিক বিতর্ক ও আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র ছিল। ২৩ বছর বয়সী গবেষক হাজারা নাজিব বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল, কিন্তু এখন তারা সেই চেতনা হারিয়েছে।
সরকার অবশ্য দাবি করে, তরুণদের উদ্যম এখনো অটুট। আর তাঁরা নানা প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে সেই শক্তিকে গঠনমূলক পথে নিতে চান। কিন্তু বাস্তবে অর্থনৈতিক চাপই তরুণদের জীবনপথ নির্ধারণ করে দিচ্ছে। সুধাংশু কৌশিক বলেন, ভারতের অর্থনীতি এখন তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো করছে। তবু বেকারত্বের আতঙ্ক বাড়ছে। তরুণেরা নিজেরাই পথ খুঁজছেন, বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা বছর বছর বাড়ছে।
তরুণেরা ভোট দিতেও খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ১৮ বছর বয়সী ভোটারদের মধ্যে মাত্র ৩৮ শতাংশ নিজেদের নাম নিবন্ধন করেছিলেন। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রচলিত রাজনীতির ওপর আস্থা ক্রমেই কমছে। ২৯ শতাংশ তরুণ ভারতীয় রাজনীতি পুরোপুরি এড়িয়ে চলেন।
কৌশিকের পর্যবেক্ষণ হলো, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বহু ভারতীয় তরুণ ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত পরিচয় খুঁজে নিচ্ছে। অতএব, অবাক হওয়ার কিছু নেই। ভারতীয় থিংকট্যাংক সিএসডিএস-লোকনীতি পরিচালিত এক বুথফেরত জরিপে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তরুণদের মধ্যেও শক্ত সমর্থন ধরে রেখেছে। ২০১৯ সালে এই সমর্থনের হার ছিল ৪০ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে এসে সামান্যই কমেছে।
তবে ভারতের জেন-জি প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনার শিকড় আরও গভীরে। কৈশোরে দেখা এক দশকের রাস্তাঘাটের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে এটি উৎসারিত। এই প্রজন্মের বয়োজ্যেষ্ঠরা কিশোর বয়সে আন্না হাজারের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দিল্লির দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ পর্যন্ত ২০১০-এর দশকের বড় বড় আন্দোলন দেখেছেন।
২০১৯ সালে একের পর এক ক্যাম্পাস ও সড়ক নিয়ে আন্দোলনেও শিক্ষার্থীরাই নেতৃত্ব দেন। কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের প্রতিবাদ থেকে শুরু করে কৃষি আইন, বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে তরুণেরাই ছিলেন সোচ্চার। এর মধ্যে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এর মূল্যও অনেক বেশি।
সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের সময় ২০১৯ সালে দিল্লির জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া ও আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করলে ছাত্রদের বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। ছাত্রনেতা উমর খালিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি কারাগারে। তাঁকে দিল্লি দাঙ্গায় ‘মূল ষড়যন্ত্রকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে উমর খালিদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ইয়ুথ ফেলো ২৬ বছর বয়সী যতিন ঝা বলেন, সরকার প্রতিবাদ নিয়ে এমন কুৎসা রটায় যে, খুব কম মানুষই প্রতিবাদের কথা ভাবতে পারেন। তবে সরকারের দাবি, এই আন্দোলনগুলোতে ‘বাইরের প্রভাব’ ও ‘রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান’ আছে। তারা কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করছে।
ভারতীয় তরুণসমাজের এই নীরবতাকে ‘গভীর প্রজন্মগত বৈশিষ্ট্যের’ প্রতিফলন বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানী দীপঙ্কর গুপ্ত। তাঁর ভাষায়, যুবশক্তি ক্ষণস্থায়ী; প্রতিটি প্রজন্মই নিজস্ব কারণ ও লক্ষ্য নিয়ে এগোয়, পুরোনো সংগ্রামের উত্তরাধিকার নিয়ে নয়। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এ ধারা দেখা যায়—যুবকেরা শাসন বদলাতে পারেন, কিন্তু টেকসই পরিবর্তন বা তাঁদের নিজস্ব ভবিষ্যতের উন্নতি প্রায়ই অধরা থেকে যায়, তা আরব বসন্ত হোক, বাংলাদেশ বা নেপালই হোক।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
ভারতে জেনারেশন জেড বা জেন-জি তরুণের সংখ্যা বিশাল—৩৭ কোটি। অর্থাৎ, দেশটির মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশই তাঁরা। ২৫ বছরের কম বয়সী অস্থির প্রকৃতির এই তরুণেরা হাইপার কানেক্টেড, অর্থাৎ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পরস্পরের সঙ্গে তীব্রভাবে যুক্ত। স্মার্টফোন আর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বদৌলতে রাজনীতি, দুর্নীতি ও বৈষম্যের তথ্য প্রতিনিয়তই জানছেন তাঁরা। সেই তথ্যপ্রবাহের সূত্র ধরে এশিয়া ও আফ্রিকায় বিদ্যমান ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে রাজপথে নেমে এসেছেন তাঁরা।
১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই তরুণেরা গত মাসে নেপালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার পতন ঘটিয়েছেন। মাদাগাস্কারে তরুণদের আন্দোলন সেখানকার শাসককে সরিয়ে দিয়েছে। জীবনযাত্রার বাড়তি খরচ, দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ার তরুণদের তীব্র বিক্ষোভ সরকারকে মাথা নোয়াতে বাধ্য করেছে। আর বাংলাদেশে চাকরিতে কোটাপদ্ধতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় গত বছর সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এনক্রিপটেড অ্যাপের মাধ্যমে সংগঠিত ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব আন্দোলন দ্রুতগতির, বিকেন্দ্রীভূত, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষে ভরা।
কিন্তু কাছাকাছি পরিস্থিতি হলেও লাগোয়া প্রতিবেশী দেশ ভারতের জেন-জি প্রজন্মের মধ্যে এনক্রিপটেড অ্যাপ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমনির্ভর আন্দোলনের ঢেউ এখনো তেমন আলোড়ন তুলতে পারেনি। সবচেয়ে তরুণ এই প্রজন্ম ভারতে কেন আওয়াজ তুলছে না, প্রতিবাদে রাস্তায় কেন নামছে না? তারা কি ভীত বা কেউ কি তাদের রাস্তায় নামতে বাধা দিচ্ছে?
বিবিসি বলছে, মূলত ‘দেশবিরোধী’ তকমা পাওয়ার ভয়, জাতিগত ও আঞ্চলিক বিভাজন, অর্থনৈতিক চাপ যেন ভারতের তরুণদের কাঁধে ভারী বোঝা হয়ে চেপে বসেছে। এর সঙ্গে ‘প্রতিবাদে কিছুই বদলাবে না’—এমন সাধারণ মনোভাবও রয়েছে। সব মিলিয়ে ভারতে জেন-জি আন্দোলনের জোরালো কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। গত সেপ্টেম্বরে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখ অঞ্চলের জন্য ‘রাজ্যের মর্যাদার’ দাবিতে অসন্তোষের ক্ষীণ স্ফুলিঙ্গ দেখা গেছে; বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়।
ওই ঘটনাকে জেন-জি দ্রোহ ও দীর্ঘদিনের অবদমিত ক্ষোভের প্রতিফলন হিসেবে তুলে ধরেছেন এই বিক্ষোভের অন্যতম অনুপ্রেরণাদাতা পরিবেশবাদী অধিকারকর্মী সোনম ওয়াংচুক। ভারতের জাতীয় রাজনীতিতেও এ বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়ে। কর্ণাটকের নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে সোচ্চার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্সে লিখেছেন, ‘জেন-জি প্রজন্মই ভোট কারচুপি রুখবে ও সংবিধানকে রক্ষা করবে।’ তারপরও জেন-জি প্রজন্মের কাছ থেকে সাড়া নেই।
নেপালসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের তরুণদের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে দিল্লির পুলিশ কমিশনার নাকি রাজধানীতে তরুণদের সম্ভাব্য আন্দোলন ঠেকাতে জরুরি পরিকল্পনা প্রস্তুতের নির্দেশ দিয়েছেন। অনলাইনে এ নিয়ে তুমুল তর্কবিতর্ক চলছে। ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুমলাইভ বলছে, জেন-জি প্রজন্মের ভেতরেই যেন এক অনলাইন যুদ্ধ চলছে। রেডিট ও এক্সে ভারতের তরুণদের একইভাবে রাস্তায় নামার আহ্বান জানাচ্ছেন কেউ কেউ; একে ন্যায়বিচারের আহ্বান মনে করছেন তাঁরা। অন্য পক্ষ নেপালের সহিংসতার দৃষ্টান্ত টেনে সতর্ক করছেন, তাঁরা বিদেশি হস্তক্ষেপের ছায়া দেখছেন।
ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে সত্তরের দশকের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ক্যাম্পাস বিক্ষোভ—ভারতের ছাত্ররাজনীতি সব সময়ই দৃষ্টি কাড়ে। তবু বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নেপাল বা বাংলাদেশের মতো ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে টলিয়ে দেওয়া এত সহজ নয়। এর একটা কারণ হলো, আঞ্চলিক বিভক্তি। আশপাশের দেশগুলোর তরুণদের মতো তাঁরাও ক্ষুব্ধ, কিন্তু তাঁদের ক্ষোভ মূলত আঞ্চলিক ইস্যুগুলোকে ঘিরে। ফলে বেকারত্ব, দুর্নীতি আর বৈষম্য নিয়ে দেশজুড়ে তরুণদের বিক্ষোভ গড়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব।
বিহারের ২৬ বছর বয়সী সাংবাদিক বিপুল কুমার বলেন, ‘আমাদের সবাইকে এক করতে পারবে—এমন কোনো শক্তি আমি দেখি না। নেপালের তুলনায় ভারতে ক্ষমতা অনেক বেশি বিকেন্দ্রীকৃত, তরুণদের ক্ষোভও তেমনই বিক্ষিপ্ত। আমি চাই, কেন্দ্রীয় সরকারকে চ্যালেঞ্জ করা হোক। কিন্তু অনেক তরুণ কেবল সরকারি চাকরি বাড়ুক—এটাই চান।’
ভারতীয় থিংকট্যাংক ইয়ুথ পলিসি সেন্টারের প্রধান সুধাংশু কৌশিক মনে করেন, জেন-জি বিদ্রোহের দিক থেকে ভারত হয়তো ‘ব্যতিক্রম’ হয়েই থাকবে। তিনি বলেন, ‘বয়সই একমাত্র বিষয় নয়। ভারতে তরুণেরা আঞ্চলিক, ভাষাগত ও জাতিভিত্তিক পরিচয়ের সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত, যা প্রায়ই তাঁদের একে অপরের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেয়।’
সুধাংশু কৌশিকের প্রশ্ন, যদি সত্যিই ভারতে কোনো জেন-জি বিদ্রোহ হয়, কোন তরুণদের হবে সেটা? দলিত তরুণদের, শহুরে তরুণদের, না তামিলভাষী তরুণদের? তাঁর ভাষায়, বাস্তবতা হলো, ভারতের তরুণসমাজ এত বৈচিত্র্যময় ও পরস্পরবিরোধী যে, তাদের এক ছাতার নিচে আনা কঠিন।
শহুরে তরুণেরা কাজের সুযোগ ও নগর-পরিকাঠামো নিয়ে আন্দোলন করবেন; একসময় ‘অস্পৃশ্য’ বিবেচিত দলিত তরুণেরা লড়বেন জাতিগত বৈষম্য ও সামাজিক ন্যায়ের প্রশ্নে; আর তামিল তরুণেরা সোচ্চার হবেন ভাষা, আঞ্চলিক অধিকার কিংবা স্থানীয় ঐতিহ্য রক্ষায়। আবার রাজ্যভেদেও তরুণদের ক্ষোভের কারণ আলাদা। গুজরাট ও হরিয়ানায় উচ্চবর্ণের তরুণেরা কোটা বাড়ানোর দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। অন্যদিকে তামিলনাড়ুতে তরুণেরা প্রতিবাদ করেছেন ঐতিহ্যবাহী খেলা জল্লিকাত্তু নিষিদ্ধের রায়কে ঘিরে।
আঞ্চলিক বিভাজন ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর চেপে বসেছে ‘দেশবিরোধী’ ট্যাগ পাওয়ার বড় ভয়। এ কারণে সবচেয়ে সচেতন ও পরস্পরের সঙ্গে হাইপার কানেক্টেড তরুণেরাও রাস্তায় নামতে ভয় পান বলে মনে করেন জেন-জি প্রজন্মের তরুণ ২৩ বছর বয়সী রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকে পড়া ধৈর্য চৌধুরী। ভারতের সরকারি রাজনীতিক ও টেলিভিশন উপস্থাপকদের প্রায়ই আন্দোলনকারীদের এই ‘ট্যাগ’ দিতে শোনা যায়।
এখানেই শেষ নয়, আরও একটি বাধা কাজ করে ভারতীয় তরুণদের সামনে। তা হলো—দেশটির শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিবাদ নিষিদ্ধ বা সীমিত করেছে। অথচ, এই প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় রাজনৈতিক বিতর্ক ও আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র ছিল। ২৩ বছর বয়সী গবেষক হাজারা নাজিব বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল, কিন্তু এখন তারা সেই চেতনা হারিয়েছে।
সরকার অবশ্য দাবি করে, তরুণদের উদ্যম এখনো অটুট। আর তাঁরা নানা প্রকল্প ও কর্মসূচির মাধ্যমে সেই শক্তিকে গঠনমূলক পথে নিতে চান। কিন্তু বাস্তবে অর্থনৈতিক চাপই তরুণদের জীবনপথ নির্ধারণ করে দিচ্ছে। সুধাংশু কৌশিক বলেন, ভারতের অর্থনীতি এখন তুলনামূলকভাবে কিছুটা ভালো করছে। তবু বেকারত্বের আতঙ্ক বাড়ছে। তরুণেরা নিজেরাই পথ খুঁজছেন, বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা বছর বছর বাড়ছে।
তরুণেরা ভোট দিতেও খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ১৮ বছর বয়সী ভোটারদের মধ্যে মাত্র ৩৮ শতাংশ নিজেদের নাম নিবন্ধন করেছিলেন। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রচলিত রাজনীতির ওপর আস্থা ক্রমেই কমছে। ২৯ শতাংশ তরুণ ভারতীয় রাজনীতি পুরোপুরি এড়িয়ে চলেন।
কৌশিকের পর্যবেক্ষণ হলো, সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বহু ভারতীয় তরুণ ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত পরিচয় খুঁজে নিচ্ছে। অতএব, অবাক হওয়ার কিছু নেই। ভারতীয় থিংকট্যাংক সিএসডিএস-লোকনীতি পরিচালিত এক বুথফেরত জরিপে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তরুণদের মধ্যেও শক্ত সমর্থন ধরে রেখেছে। ২০১৯ সালে এই সমর্থনের হার ছিল ৪০ শতাংশ, যা ২০২৪ সালে এসে সামান্যই কমেছে।
তবে ভারতের জেন-জি প্রজন্মের রাজনৈতিক চেতনার শিকড় আরও গভীরে। কৈশোরে দেখা এক দশকের রাস্তাঘাটের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে এটি উৎসারিত। এই প্রজন্মের বয়োজ্যেষ্ঠরা কিশোর বয়সে আন্না হাজারের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দিল্লির দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ পর্যন্ত ২০১০-এর দশকের বড় বড় আন্দোলন দেখেছেন।
২০১৯ সালে একের পর এক ক্যাম্পাস ও সড়ক নিয়ে আন্দোলনেও শিক্ষার্থীরাই নেতৃত্ব দেন। কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের প্রতিবাদ থেকে শুরু করে কৃষি আইন, বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে তরুণেরাই ছিলেন সোচ্চার। এর মধ্যে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এর মূল্যও অনেক বেশি।
সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের সময় ২০১৯ সালে দিল্লির জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়া ও আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করলে ছাত্রদের বিক্ষোভ সহিংস রূপ নেয়। ছাত্রনেতা উমর খালিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি কারাগারে। তাঁকে দিল্লি দাঙ্গায় ‘মূল ষড়যন্ত্রকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে উমর খালিদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ইয়ুথ ফেলো ২৬ বছর বয়সী যতিন ঝা বলেন, সরকার প্রতিবাদ নিয়ে এমন কুৎসা রটায় যে, খুব কম মানুষই প্রতিবাদের কথা ভাবতে পারেন। তবে সরকারের দাবি, এই আন্দোলনগুলোতে ‘বাইরের প্রভাব’ ও ‘রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান’ আছে। তারা কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করছে।
ভারতীয় তরুণসমাজের এই নীরবতাকে ‘গভীর প্রজন্মগত বৈশিষ্ট্যের’ প্রতিফলন বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানী দীপঙ্কর গুপ্ত। তাঁর ভাষায়, যুবশক্তি ক্ষণস্থায়ী; প্রতিটি প্রজন্মই নিজস্ব কারণ ও লক্ষ্য নিয়ে এগোয়, পুরোনো সংগ্রামের উত্তরাধিকার নিয়ে নয়। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এ ধারা দেখা যায়—যুবকেরা শাসন বদলাতে পারেন, কিন্তু টেকসই পরিবর্তন বা তাঁদের নিজস্ব ভবিষ্যতের উন্নতি প্রায়ই অধরা থেকে যায়, তা আরব বসন্ত হোক, বাংলাদেশ বা নেপালই হোক।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
ভারতের পাঁচটি রাজ্যে রাজ্যসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছে। ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে চারটির। এর মধ্যে তিনটিই গেছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির দখলে। এমনকি কংগ্রেসের দখলে থাকা দুই রাজ্য রাজস্থান ও ছত্তিশগড় ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। কংগ্রেসের জন্য সান্ত্বনা পুরস্কার শুধু তেলেঙ্গানা।
০৫ ডিসেম্বর ২০২৩এক সপ্তাহ আগেও মনে হচ্ছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কৌশলে ব্যবহার করে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন ঠেকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন পুতিন। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ার অর্থনীতির মূল খাত জ্বালানি তেল শিল্পের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে
১১ মিনিট আগেদ্বিতীয় মেয়াদে পররাষ্ট্রনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এনে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটন এবার সরাসরি রাশিয়ার বৃহৎ দুই তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই পদক্ষেপ ট্রাম্পের আগের কৌশলগুলো থেকে একটু ভিন্ন ও কঠোর।
২৩ মিনিট আগে‘মি. মানদানি’, ‘মি. মানদামি’, ‘জোরহান মানদামি, ‘জোহরান মানদামি’—এগুলো নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী জোহরান মামদানির নামের কিছু বহুল প্রচলিত সংস্করণ। নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদের ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি থেকেই অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জোহরান মামদানির নামের উচ্চারণ নিয়ে বিতর্কের সূচনা।
২ ঘণ্টা আগে