ইজাজুল হক

‘লফ্জ লফজ নোহা’-এর বাংলা তর্জমা দাঁড়ায় ‘শব্দে শব্দে বিলাপ’। ১৯৯৫ সালে নাজকির এ কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে আগের পর্বগুলোতে আমরা কিছু কথা জেনেছি। বিশেষ করে ফারুক নাজকির কবিতাশৈলী এবং গজল ও নজমের বৈশিষ্ট্য আলোচনায় ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর বেশ কিছু কবিতা উঠে এসেছে। কবিতাবিষয়ক সেসব ‘শুষ্কং কাষ্ঠং’ আলোচনা এড়িয়ে এবার আমরা বইয়ের পাতায় পাতায় শব্দমালার বিলাপ-ধ্বনি শুনতে চাই। অবশ্য ‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ পর্বেও আগুনের লেলিহান শিখা ও তাপ-উত্তাপের মোড়কে নাজকির বিলাপের ভিন্ন একটি রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।
‘লফ্জ লফজ নোহা’-এর উৎসর্গপত্র থেকেই শুরু হয় ফারুকের বিলাপযাত্রা। জীবনের অন্যতম সেরা কাজটি তিনি সেই মানুষটির করকমলে অর্পণ করতে ভোলেননি, যাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ব্যক্তিত্ব, কাব্যপ্রতিভা ও জীবন-অভিজ্ঞতা ফারুকের জীবনের মোড়ে-মোড়ে আলো ফেলেছে; তমসাচ্ছন্ন রাতে দুর্বার গতিতে জীবনের পিচঢালা সড়ক ধরে ছুটে যেতে দ্রুত গতির বাহনের কাজ করেছে। তিনি আর কেউ নন, নাজকির জীবন রোদ্দুরে আমৃত্যু ছায়া দিয়ে যাওয়া বটবৃক্ষ ও অনন্ত অনুপ্রেরণার বাতিঘর বাবা মির গোলাম রসুল নাজকি।
উৎসর্গপত্রের ভাষ্য এখানে থেমে যায়নি। ভেতরের বিলাপের সুরে পাঠকের মন ছুঁয়ে দিতে নাজকি আরেকজন ব্যক্তির হাতেও বইটি অর্পণ করেন। সোমনাথ সাধু নামের সেই ভাগ্যবান হয়তো বড় কেউ নন; তবুও তাঁর মায়ের প্রয়াণে নাজকি আকুল হন; বিলাপ করেন এবং তাঁর মাথায় বুলিয়ে দেন সান্ত্বনার পরশ। ফলে বিলাপের পাশাপাশি নাজকি এখানে কাশ্মীরের বহুরৈখিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হারানোর বেদনা কিছুটা লাঘব করার সুযোগ পান এবং সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি তাঁর উষ্ণতার নজির স্থাপন করেন। ‘আরও একটি অর্পণ—সোমনাথ সাধু, তোমার নামে’ শিরোনামে তিনি লেখেন—
‘জানো, তোমার মা কামেলি
কাশ্মীর ছেড়ে গেছেন?
সঙ্গে নিয়ে গেছেন
সেই রুপোর থালাও—
যে থালায়
তিনি আমাদের একসঙ্গে খাওয়াতেন।
জানো কি, আমার ভয়েই তিনি
কাশ্মীর ছেড়ে পালিয়েছেন?’
সোমনাথ সাধুর প্রতি শোক জানানোর পাশাপাশি কাশ্মীরের সমাজবাস্তবতাও দারুণভাবে বাঙ্ময় হয়ে ওঠে নাজকির এই কয়েক ছত্রে। নাজকির কলম কাশ্মীরের প্রতি শাসকদের বিমাতাসুলভ আচরণের সঙ্গে কখনো আপস করেনি, বিচ্ছিন্নতাবাদ উসকে দেওয়া ‘দ্রোহের আগুন’-এও ঘি ঢালেননি তিনি। বরং সব ধরনের নৈরাজ্য, অস্থিতিশীলতা ও অশান্তির জন্য হৃদয়ের গহিনে গুঞ্জরিত বিলাপের প্রকাশ ঘটিয়েছেন কবিতার শব্দে-শব্দে।
‘শহরজুড়েই কারবালা প্রান্তর
রক্তখেকোর দল ছিল সর্বত্রই
ত্রাসের কাঁটাতারে ঘেরা কল্পনা-দেবালয়
উত্তরে আছি, না দক্ষিণে—জানা নেই।
রাতের হিংস্রতা সইতে পারব না আমি—
ক্রমেই ভেঙে পড়ছি, হে অপেক্ষাসন্ধ্যা।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেউ-ই দেবে না
কিংবা সতর্ক সাইরেন, হে শূন্য তেপান্তর
চোখের পলকেই আগুন জ্বলে লোকালয়ে
প্রত্যহ লুণ্ঠিত হয় হাসিমুখ নতুন সংসার
গাছে-গাছে জেঁকে বসে মৃত্যুর নীরবতা;
এ কেমন অস্ত্রবাজির মৌসুম এল—
বিষণ্ন উদ্যানের ফুল যায় শুকিয়ে
শরতের আঘাতে বিধ্বস্ত গুলশান।’
এমন মৃত্যুপুরীর মধ্যে কবির জীবন দুঃখ-বিষণ্নতার কালো মেঘে ঢেকে যায়। চারদিকে অন্ধকার ছেয়ে যায়। সন্ধ্যার আগেই পৃথিবীতে নেমে আসে আঁধারের প্রেতাত্মারা। কাশ্মীরের প্রকৃতি ও আবহাওয়ায় ঘুমোনোর সব উপাদান থাকা সত্ত্বেও তিনি ঘুমোতে পারেন না। নিঃসঙ্গ নক্ষত্র হয়ে চাঁদের কোলে জেগে থাকেন রাতের পর রাত। পৃথিবীর সকল ঘরে ঘুমপরী এলেও নাজকির কাশ্মীরে সে আসে না। তাই তাঁর আকুল জিজ্ঞাসা—‘ঘুম কেন আসে না?’
‘নীরবতা সাঙ্গ করে
বৃক্ষে ঝোলে রাত—
মাঠ-ঘাট জনশূন্য;
উঁচু-নিচু টিলায়
বিষাদ ঝরায়
আলোর কোলাহল—
ঘুম কেন আসে না?
দিনের উষ্ণ মেলায়
আমি বিষণ্ন থাকি
সন্ধ্যার কোলাহলে
আমি হতাশ থাকি
সচেতন থাকি আমি
মাদক নিয়েও
হৃদয়ে বিদ্ধ তিরের
আঘাত সয়ে যাই,
ভাবি—পৃথিবীতে
আমিও কত একা!
চাঁদের বাহুডোরে
জোছনার আলো
মুড়িয়ে শুয়ে আছি—
ঘুম কেন আসে না?
ঘুম খুশবু—
রাতের বাতাসে
এখানে-সেখানে ঘোরে;
আমার ঘরে আসে না
দূরত্ব বজায় রেখে চলে;
আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি—
ঘুম কেন আসে না?’
দুই.
‘লফ্জ লফ্জ নোহা’ একদিকে যেমন সময়ের বিড়ম্বনার ক্যানভাস, অন্যদিকে কাশ্মীরের ঋতুবৈচিত্র্য, প্রকৃতি ও পরিবেশের অনন্য আলপনাও বটে। তবে তাতেও নাজকির বিলাপের সুর মিশে যায় দূরের কোনো পর্বতে কিংবা জলপ্রপাতের ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে।
‘লাস্যময়ী শাহজাদি—মৌসুম
আমার রূপকরাজ্যে লুকায়
প্রথম বর্ষণ থেকে তুষারকাল—
একাই সয়ে গেছি সবকিছু;
জিজ্ঞেস করি—তোমার রুটি-রুজি?
ঝিলম বলে—ভেসে গেছে সব।
শীতে তুষারঝড় হবে
এবং ডেকে আনবে বিপদ;
আমার অস্তিত্বজুড়েই বৈপরিত্যের চাষ
বসন্তের শোক-গীত গাইব আমি।
মৌসুমের ছকে বাধা নেই শিলাবৃষ্টিও—
নিত্য আমাদের মাথা খুঁজে নেয় তা;
বিতস্তায় ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে
মানুষ—খড়কুটোর মতো করে।’
কাশ্মীরে মৌসুমের সেই জৌলুশ আর নেই। খড়কুটোর মতো করে মানুষকে যেখানে বিতস্তা তথা ঝিলমের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে কোনো কিছুই আর ঠিকমতো চলতে পারে না। ঠিকমতো বৃষ্টি নামে না। তুষারঝড় ও শিলাবৃষ্টির পিঠে ভর করে ধেয়ে আসে দানবেরা। নাজকির দিনকাল ভালো যায় না। হতাশা জেঁকে বসে তাঁর ভেতর। গুলরিজ শহরের পুরোনো প্রিয়তমার সান্নিধ্য পেতে তাঁর হৃদয় হাহাকার করে ওঠে।
‘এখানে, শূন্য মরুতে প্রলম্বিত হচ্ছে ছায়া
গুলরিজ থেকে কেউ আমাকে আবার ডাকুক;
বিষাদকালে তোমার স্বপ্নযোগে আসাও
অসুস্থকে অমৃত খাইয়ে দেওয়ার মতো;
স্থির না হও, সম্মতি না দাও আমাকে—
অবিশ্বাস থেকে তো অন্তত মুক্তি দেবে!’
নাজকির তীব্র আকাঙ্ক্ষার কাছে হার মেনে সে স্বপ্নে হলেও আসে; আসতেই থাকে। এ এক নতুন যন্ত্রণা—তাকে ভুলে থাকার জন্য কবি শহর থেকে দূরে অজানা গন্তব্যে চলে যান। সেখানেও কবির নিস্তার নেই। চোখ বুঁজতেই সে তাঁর তনু-মনে শিহরণ জাগায়।
‘শ্রাবণ-শ্রাবণ জল-ফেলা চোখ
তোমার নামে সদকা দিলাম
মরুর সমান আকাঙ্ক্ষা-পা
মাতাল হস্ত আঁচল সমান
শহর ছেড়ে এলাম বনে
ভেবেছিলাম—থাকব একা
চোখ বুজতেই তুমি এসে
করলে সবই ওলটপালট।’
নাজকির চোখ প্রিয়তমার রূপ-ঐশ্বর্য্যের অনুপুঙ্খ হিসেব রাখে। প্রিয়তমার সকল সৌন্দর্য খুঁজে ফেরেন তিনি কাশ্মীরের পাহাড়, ঝিরি, নদী ও উপত্যকার পরতে-পরতে। নিবিড় প্রেমের উষ্ণতায় প্রকৃতি তাঁর সামনে সকল সৌন্দর্য উন্মুক্ত করে। কবি বিস্মিত হন, তৃপ্ত হন এবং আধ্যাত্মিক হন। এমন অপার সৌন্দর্যের প্রতিটি উপাদানে স্রষ্টার খোঁজ করেন।
‘মাঠ থেকে মাঠে আলো ছড়ায় সত্যের মুক্তোরা
বাগানে-বাগানে তোমার নিদর্শন নিয়ে আসে কে
আঙিনার এই সব ঝরাপাতাদের
জিজ্ঞেস করো সৃষ্টিকর্তার কথা।’
তিন.
ফিরে যাই বিলাপ প্রসঙ্গে। নাজকি একটানা বিলাপ করেই যান না, মাঝেমধ্যে শ্লেষ মিশিয়ে ছুড়ে দেন কথার তিরও। কাশ্মীরিদের সবকিছু কেড়ে নিলেও খুব সীমিত পরিসরে কথা বলার জায়গা তো রাখা হয়েছে, সে জন্য কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ধন্যবাদ দিয়ে অধিকার হরণের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। অবশ্য এ পর্যায়েও সত্য উচ্চারণে তিনি দ্বিধাহীন।
‘পরিস্থিতি এত বেশি খারাপ নয়—
বলতে পারব না এমন কথাও নেই;
তোমার পথে বিছিয়েছিলাম আমরা চোখের পাতা
আর তুমি, তুমি আমাদের পথে কাঁটা বিছিয়ে দিলে!’
মূলত পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ যে, নিজের ছায়াকেও সন্দেহ করতে শুরু করেন নাজকি। কথা বলার স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই সেখানে। অফিস, বাসা, স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে কথা বলতেও তাঁর যত ভয়। কাশ্মীরের অবারিত প্রকৃতির বুকে এমন গুমোট সন্ধ্যা কখনো নামেনি। নাজকি বলেন—
‘স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময়
মেপে-মেপে শব্দ চয়ন করি
অফিসে সহকর্মীদের সামনে
লিখিত বক্তব্য পাঠ করি।
কলিজার টুকরো মেয়েটির
চোখোচোখি হতে কাঁপন ধরে যায়—
এ কেমন বসন্ত এল, খোদা
সকাল থেকে খুশবুরাও আতঙ্কিত;
এ কেমন মাতাল মৌসুম এল
ফুলবানুদের সঙ্গে মিলিয়ে গেল ভোরে হাওয়াও।’
নাজকির বিলাপ থামে না। ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর শব্দে শব্দে, লাইনে-লাইনে, পদে-পদে এক নিঃস্ব-পরাধীন আহত মানবাত্মার করুণ কান্না শোনা যায়। দেশের মাটি-মানুষ ও ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সুরক্ষার জন্য এই বিলাপ অত্যন্ত দরকারি; নাজকির কণ্ঠ থেকে তা নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সকল জনপদে ছড়িয়ে পড়বে।
কবি ফারুক নাজকির গল্প বলা এখানেই শেষ করতে চাই। কোনো এক বিদেশি কবি বলেছিলেন, ‘একটি কবিতার সেইটুকুই বিশুদ্ধ কবিতা, যার অনুবাদ সম্ভব নয়।’ সুতরাং আমার দুর্বলতম অনুবাদে নিশ্চয়ই নাজকিকে বিচার করবেন না পাঠক। ভিনদেশের একজন কবির জীবনপাঠের মাধ্যমে সে দেশের সংস্কৃতির ভেতরে প্রবেশ করাই আমাদের লক্ষ্য। নাজকির কবিতার অনুবাদক হিসেবে এটুকই আমার কৈফিয়ত। চলুন, নাজকির রোমান্টিক কবিতা ‘মধ্যরাতের বিলাপ’ শুনতে-শুনতে ঘুমিয়ে পড়া যাক—
‘আমি ও তুমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ি
নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে
প্রথমে শিথিল পরে শীতল হয়ে পড়ে জরায়ু
এবং স্বরূপে ফিরে আসে আমাদের মুখচ্ছবি
তখন এলোমেলো ভাবি
বিচ্ছেদ হলে আমাদের কী হবে
তোমার কী হবে আমাকে ছাড়া
আমার কী হবে তোমাকে ছাড়া
আমি বেঁচে থাকতে তুমি মরে যাবে
আমি তো ভাবতেই পারি না
এবং এও ভাবতে পারি না—
যদি আমি তোমার আগে মরে যাই
তুমি কীভাবে কাঁদবে
আমরা কত অসহায় ও একা
আমাদের প্রাণ দুটো একদেহে মিশিয়ে নেওয়া কি সম্ভব নয়
আমি-তুমির দ্বন্দ্বই যেন মিটে যায়?
আমরা একই শাখার দুটি ফুল
আমাদের রুচি ও রসনা এক
আমাদের দেহের রসায়ন এক
সত্যিকারের হৃদয়ও এক আমাদের—
তো আমাদের বিচ্ছেদ কেন হবে
কোনো পথ কি নেই
কোনো উপায় কি নেই—
এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করো
যাতে আমরা দুই হৃদয়কে স্পন্দিত
এবং দিনগুলোকে আলোঝরা রাখতে পারি
এবং এর পর
আমি শহর-নগরে ঘুরে বেড়াব
অলিগলি-বাজারে দৌড়াব
এবং সতত তোমার কণ্ঠ ওপরের আকাশ থেকে
নামতে থাকবে এবং পৃথিবী সজীব করতে থাকবে
এবং আমি ভালোবাসা-সাগরে সুরের নৃত্য দেখব
দেহ কতই না দুর্বল
এবং আমরা এ অবয়বে এ জন্যই সৃজিত হয়েছি
যে নিঃশেষিত হওয়ার স্বাদের মজনু হই
মৃত্যু নিয়ে আমি একটু বেশিই ভাবি
তোমার নিশ্বাস আমার কাঁধ স্পর্শ না করলে
আমি কেঁপে-কেঁপে উঠি
মৃত্যুর নীরবতাকে আমি ভয় পাই
কিন্তু সেই মুহূর্ত তো আসবেই—
শুভ্র লিলি ও হলদে সূর্যমুখীর চাদর পরে
আমাদের একজন যখন প্রথম মাটির নিচে চলে যাবে
তখন সব দিক থেকে ভেসে আসবে কান্নার শব্দ
এর পর নীরবতা…
নৈঃশব্দ…
এবং কবরের নীরবতা ভালোই লাগবে
তবে কবরের বাইরে যে মানুষটি এ নীরবতা সয়ে যাওয়ার দণ্ড পাবে
তার অবস্থা কত ভয়ানক হবে
এখন তুমিই বলো—কী করব
কত কঠিন পরিস্থিতি দেখো—
তোমার কোমল দেহের স্পর্শে এবং
তোমার কণ্ঠস্বরের ঝনঝনানিতেই
তোমার ভালোবাসা টের পাই আমি;
জৈবিকতা থেকে দূরে
অনুভব-সীমান্তের ওপারে
তুমি পর্যন্ত পৌঁছাতে আমি অক্ষম
এবং দেহের এ বাঁধন যেদিন ছিন্ন হবে
সেদিন এখানে, যেখানে আজ আমরা ভাবের রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছি
সেখানে পড়ে থাকবে একটি শূন্য পিঞ্জর।’
আরও পড়ুন:

‘লফ্জ লফজ নোহা’-এর বাংলা তর্জমা দাঁড়ায় ‘শব্দে শব্দে বিলাপ’। ১৯৯৫ সালে নাজকির এ কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে আগের পর্বগুলোতে আমরা কিছু কথা জেনেছি। বিশেষ করে ফারুক নাজকির কবিতাশৈলী এবং গজল ও নজমের বৈশিষ্ট্য আলোচনায় ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর বেশ কিছু কবিতা উঠে এসেছে। কবিতাবিষয়ক সেসব ‘শুষ্কং কাষ্ঠং’ আলোচনা এড়িয়ে এবার আমরা বইয়ের পাতায় পাতায় শব্দমালার বিলাপ-ধ্বনি শুনতে চাই। অবশ্য ‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ পর্বেও আগুনের লেলিহান শিখা ও তাপ-উত্তাপের মোড়কে নাজকির বিলাপের ভিন্ন একটি রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।
‘লফ্জ লফজ নোহা’-এর উৎসর্গপত্র থেকেই শুরু হয় ফারুকের বিলাপযাত্রা। জীবনের অন্যতম সেরা কাজটি তিনি সেই মানুষটির করকমলে অর্পণ করতে ভোলেননি, যাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ব্যক্তিত্ব, কাব্যপ্রতিভা ও জীবন-অভিজ্ঞতা ফারুকের জীবনের মোড়ে-মোড়ে আলো ফেলেছে; তমসাচ্ছন্ন রাতে দুর্বার গতিতে জীবনের পিচঢালা সড়ক ধরে ছুটে যেতে দ্রুত গতির বাহনের কাজ করেছে। তিনি আর কেউ নন, নাজকির জীবন রোদ্দুরে আমৃত্যু ছায়া দিয়ে যাওয়া বটবৃক্ষ ও অনন্ত অনুপ্রেরণার বাতিঘর বাবা মির গোলাম রসুল নাজকি।
উৎসর্গপত্রের ভাষ্য এখানে থেমে যায়নি। ভেতরের বিলাপের সুরে পাঠকের মন ছুঁয়ে দিতে নাজকি আরেকজন ব্যক্তির হাতেও বইটি অর্পণ করেন। সোমনাথ সাধু নামের সেই ভাগ্যবান হয়তো বড় কেউ নন; তবুও তাঁর মায়ের প্রয়াণে নাজকি আকুল হন; বিলাপ করেন এবং তাঁর মাথায় বুলিয়ে দেন সান্ত্বনার পরশ। ফলে বিলাপের পাশাপাশি নাজকি এখানে কাশ্মীরের বহুরৈখিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হারানোর বেদনা কিছুটা লাঘব করার সুযোগ পান এবং সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি তাঁর উষ্ণতার নজির স্থাপন করেন। ‘আরও একটি অর্পণ—সোমনাথ সাধু, তোমার নামে’ শিরোনামে তিনি লেখেন—
‘জানো, তোমার মা কামেলি
কাশ্মীর ছেড়ে গেছেন?
সঙ্গে নিয়ে গেছেন
সেই রুপোর থালাও—
যে থালায়
তিনি আমাদের একসঙ্গে খাওয়াতেন।
জানো কি, আমার ভয়েই তিনি
কাশ্মীর ছেড়ে পালিয়েছেন?’
সোমনাথ সাধুর প্রতি শোক জানানোর পাশাপাশি কাশ্মীরের সমাজবাস্তবতাও দারুণভাবে বাঙ্ময় হয়ে ওঠে নাজকির এই কয়েক ছত্রে। নাজকির কলম কাশ্মীরের প্রতি শাসকদের বিমাতাসুলভ আচরণের সঙ্গে কখনো আপস করেনি, বিচ্ছিন্নতাবাদ উসকে দেওয়া ‘দ্রোহের আগুন’-এও ঘি ঢালেননি তিনি। বরং সব ধরনের নৈরাজ্য, অস্থিতিশীলতা ও অশান্তির জন্য হৃদয়ের গহিনে গুঞ্জরিত বিলাপের প্রকাশ ঘটিয়েছেন কবিতার শব্দে-শব্দে।
‘শহরজুড়েই কারবালা প্রান্তর
রক্তখেকোর দল ছিল সর্বত্রই
ত্রাসের কাঁটাতারে ঘেরা কল্পনা-দেবালয়
উত্তরে আছি, না দক্ষিণে—জানা নেই।
রাতের হিংস্রতা সইতে পারব না আমি—
ক্রমেই ভেঙে পড়ছি, হে অপেক্ষাসন্ধ্যা।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেউ-ই দেবে না
কিংবা সতর্ক সাইরেন, হে শূন্য তেপান্তর
চোখের পলকেই আগুন জ্বলে লোকালয়ে
প্রত্যহ লুণ্ঠিত হয় হাসিমুখ নতুন সংসার
গাছে-গাছে জেঁকে বসে মৃত্যুর নীরবতা;
এ কেমন অস্ত্রবাজির মৌসুম এল—
বিষণ্ন উদ্যানের ফুল যায় শুকিয়ে
শরতের আঘাতে বিধ্বস্ত গুলশান।’
এমন মৃত্যুপুরীর মধ্যে কবির জীবন দুঃখ-বিষণ্নতার কালো মেঘে ঢেকে যায়। চারদিকে অন্ধকার ছেয়ে যায়। সন্ধ্যার আগেই পৃথিবীতে নেমে আসে আঁধারের প্রেতাত্মারা। কাশ্মীরের প্রকৃতি ও আবহাওয়ায় ঘুমোনোর সব উপাদান থাকা সত্ত্বেও তিনি ঘুমোতে পারেন না। নিঃসঙ্গ নক্ষত্র হয়ে চাঁদের কোলে জেগে থাকেন রাতের পর রাত। পৃথিবীর সকল ঘরে ঘুমপরী এলেও নাজকির কাশ্মীরে সে আসে না। তাই তাঁর আকুল জিজ্ঞাসা—‘ঘুম কেন আসে না?’
‘নীরবতা সাঙ্গ করে
বৃক্ষে ঝোলে রাত—
মাঠ-ঘাট জনশূন্য;
উঁচু-নিচু টিলায়
বিষাদ ঝরায়
আলোর কোলাহল—
ঘুম কেন আসে না?
দিনের উষ্ণ মেলায়
আমি বিষণ্ন থাকি
সন্ধ্যার কোলাহলে
আমি হতাশ থাকি
সচেতন থাকি আমি
মাদক নিয়েও
হৃদয়ে বিদ্ধ তিরের
আঘাত সয়ে যাই,
ভাবি—পৃথিবীতে
আমিও কত একা!
চাঁদের বাহুডোরে
জোছনার আলো
মুড়িয়ে শুয়ে আছি—
ঘুম কেন আসে না?
ঘুম খুশবু—
রাতের বাতাসে
এখানে-সেখানে ঘোরে;
আমার ঘরে আসে না
দূরত্ব বজায় রেখে চলে;
আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি—
ঘুম কেন আসে না?’
দুই.
‘লফ্জ লফ্জ নোহা’ একদিকে যেমন সময়ের বিড়ম্বনার ক্যানভাস, অন্যদিকে কাশ্মীরের ঋতুবৈচিত্র্য, প্রকৃতি ও পরিবেশের অনন্য আলপনাও বটে। তবে তাতেও নাজকির বিলাপের সুর মিশে যায় দূরের কোনো পর্বতে কিংবা জলপ্রপাতের ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে।
‘লাস্যময়ী শাহজাদি—মৌসুম
আমার রূপকরাজ্যে লুকায়
প্রথম বর্ষণ থেকে তুষারকাল—
একাই সয়ে গেছি সবকিছু;
জিজ্ঞেস করি—তোমার রুটি-রুজি?
ঝিলম বলে—ভেসে গেছে সব।
শীতে তুষারঝড় হবে
এবং ডেকে আনবে বিপদ;
আমার অস্তিত্বজুড়েই বৈপরিত্যের চাষ
বসন্তের শোক-গীত গাইব আমি।
মৌসুমের ছকে বাধা নেই শিলাবৃষ্টিও—
নিত্য আমাদের মাথা খুঁজে নেয় তা;
বিতস্তায় ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে
মানুষ—খড়কুটোর মতো করে।’
কাশ্মীরে মৌসুমের সেই জৌলুশ আর নেই। খড়কুটোর মতো করে মানুষকে যেখানে বিতস্তা তথা ঝিলমের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে কোনো কিছুই আর ঠিকমতো চলতে পারে না। ঠিকমতো বৃষ্টি নামে না। তুষারঝড় ও শিলাবৃষ্টির পিঠে ভর করে ধেয়ে আসে দানবেরা। নাজকির দিনকাল ভালো যায় না। হতাশা জেঁকে বসে তাঁর ভেতর। গুলরিজ শহরের পুরোনো প্রিয়তমার সান্নিধ্য পেতে তাঁর হৃদয় হাহাকার করে ওঠে।
‘এখানে, শূন্য মরুতে প্রলম্বিত হচ্ছে ছায়া
গুলরিজ থেকে কেউ আমাকে আবার ডাকুক;
বিষাদকালে তোমার স্বপ্নযোগে আসাও
অসুস্থকে অমৃত খাইয়ে দেওয়ার মতো;
স্থির না হও, সম্মতি না দাও আমাকে—
অবিশ্বাস থেকে তো অন্তত মুক্তি দেবে!’
নাজকির তীব্র আকাঙ্ক্ষার কাছে হার মেনে সে স্বপ্নে হলেও আসে; আসতেই থাকে। এ এক নতুন যন্ত্রণা—তাকে ভুলে থাকার জন্য কবি শহর থেকে দূরে অজানা গন্তব্যে চলে যান। সেখানেও কবির নিস্তার নেই। চোখ বুঁজতেই সে তাঁর তনু-মনে শিহরণ জাগায়।
‘শ্রাবণ-শ্রাবণ জল-ফেলা চোখ
তোমার নামে সদকা দিলাম
মরুর সমান আকাঙ্ক্ষা-পা
মাতাল হস্ত আঁচল সমান
শহর ছেড়ে এলাম বনে
ভেবেছিলাম—থাকব একা
চোখ বুজতেই তুমি এসে
করলে সবই ওলটপালট।’
নাজকির চোখ প্রিয়তমার রূপ-ঐশ্বর্য্যের অনুপুঙ্খ হিসেব রাখে। প্রিয়তমার সকল সৌন্দর্য খুঁজে ফেরেন তিনি কাশ্মীরের পাহাড়, ঝিরি, নদী ও উপত্যকার পরতে-পরতে। নিবিড় প্রেমের উষ্ণতায় প্রকৃতি তাঁর সামনে সকল সৌন্দর্য উন্মুক্ত করে। কবি বিস্মিত হন, তৃপ্ত হন এবং আধ্যাত্মিক হন। এমন অপার সৌন্দর্যের প্রতিটি উপাদানে স্রষ্টার খোঁজ করেন।
‘মাঠ থেকে মাঠে আলো ছড়ায় সত্যের মুক্তোরা
বাগানে-বাগানে তোমার নিদর্শন নিয়ে আসে কে
আঙিনার এই সব ঝরাপাতাদের
জিজ্ঞেস করো সৃষ্টিকর্তার কথা।’
তিন.
ফিরে যাই বিলাপ প্রসঙ্গে। নাজকি একটানা বিলাপ করেই যান না, মাঝেমধ্যে শ্লেষ মিশিয়ে ছুড়ে দেন কথার তিরও। কাশ্মীরিদের সবকিছু কেড়ে নিলেও খুব সীমিত পরিসরে কথা বলার জায়গা তো রাখা হয়েছে, সে জন্য কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ধন্যবাদ দিয়ে অধিকার হরণের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। অবশ্য এ পর্যায়েও সত্য উচ্চারণে তিনি দ্বিধাহীন।
‘পরিস্থিতি এত বেশি খারাপ নয়—
বলতে পারব না এমন কথাও নেই;
তোমার পথে বিছিয়েছিলাম আমরা চোখের পাতা
আর তুমি, তুমি আমাদের পথে কাঁটা বিছিয়ে দিলে!’
মূলত পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ যে, নিজের ছায়াকেও সন্দেহ করতে শুরু করেন নাজকি। কথা বলার স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই সেখানে। অফিস, বাসা, স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে কথা বলতেও তাঁর যত ভয়। কাশ্মীরের অবারিত প্রকৃতির বুকে এমন গুমোট সন্ধ্যা কখনো নামেনি। নাজকি বলেন—
‘স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময়
মেপে-মেপে শব্দ চয়ন করি
অফিসে সহকর্মীদের সামনে
লিখিত বক্তব্য পাঠ করি।
কলিজার টুকরো মেয়েটির
চোখোচোখি হতে কাঁপন ধরে যায়—
এ কেমন বসন্ত এল, খোদা
সকাল থেকে খুশবুরাও আতঙ্কিত;
এ কেমন মাতাল মৌসুম এল
ফুলবানুদের সঙ্গে মিলিয়ে গেল ভোরে হাওয়াও।’
নাজকির বিলাপ থামে না। ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর শব্দে শব্দে, লাইনে-লাইনে, পদে-পদে এক নিঃস্ব-পরাধীন আহত মানবাত্মার করুণ কান্না শোনা যায়। দেশের মাটি-মানুষ ও ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সুরক্ষার জন্য এই বিলাপ অত্যন্ত দরকারি; নাজকির কণ্ঠ থেকে তা নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সকল জনপদে ছড়িয়ে পড়বে।
কবি ফারুক নাজকির গল্প বলা এখানেই শেষ করতে চাই। কোনো এক বিদেশি কবি বলেছিলেন, ‘একটি কবিতার সেইটুকুই বিশুদ্ধ কবিতা, যার অনুবাদ সম্ভব নয়।’ সুতরাং আমার দুর্বলতম অনুবাদে নিশ্চয়ই নাজকিকে বিচার করবেন না পাঠক। ভিনদেশের একজন কবির জীবনপাঠের মাধ্যমে সে দেশের সংস্কৃতির ভেতরে প্রবেশ করাই আমাদের লক্ষ্য। নাজকির কবিতার অনুবাদক হিসেবে এটুকই আমার কৈফিয়ত। চলুন, নাজকির রোমান্টিক কবিতা ‘মধ্যরাতের বিলাপ’ শুনতে-শুনতে ঘুমিয়ে পড়া যাক—
‘আমি ও তুমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ি
নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে
প্রথমে শিথিল পরে শীতল হয়ে পড়ে জরায়ু
এবং স্বরূপে ফিরে আসে আমাদের মুখচ্ছবি
তখন এলোমেলো ভাবি
বিচ্ছেদ হলে আমাদের কী হবে
তোমার কী হবে আমাকে ছাড়া
আমার কী হবে তোমাকে ছাড়া
আমি বেঁচে থাকতে তুমি মরে যাবে
আমি তো ভাবতেই পারি না
এবং এও ভাবতে পারি না—
যদি আমি তোমার আগে মরে যাই
তুমি কীভাবে কাঁদবে
আমরা কত অসহায় ও একা
আমাদের প্রাণ দুটো একদেহে মিশিয়ে নেওয়া কি সম্ভব নয়
আমি-তুমির দ্বন্দ্বই যেন মিটে যায়?
আমরা একই শাখার দুটি ফুল
আমাদের রুচি ও রসনা এক
আমাদের দেহের রসায়ন এক
সত্যিকারের হৃদয়ও এক আমাদের—
তো আমাদের বিচ্ছেদ কেন হবে
কোনো পথ কি নেই
কোনো উপায় কি নেই—
এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করো
যাতে আমরা দুই হৃদয়কে স্পন্দিত
এবং দিনগুলোকে আলোঝরা রাখতে পারি
এবং এর পর
আমি শহর-নগরে ঘুরে বেড়াব
অলিগলি-বাজারে দৌড়াব
এবং সতত তোমার কণ্ঠ ওপরের আকাশ থেকে
নামতে থাকবে এবং পৃথিবী সজীব করতে থাকবে
এবং আমি ভালোবাসা-সাগরে সুরের নৃত্য দেখব
দেহ কতই না দুর্বল
এবং আমরা এ অবয়বে এ জন্যই সৃজিত হয়েছি
যে নিঃশেষিত হওয়ার স্বাদের মজনু হই
মৃত্যু নিয়ে আমি একটু বেশিই ভাবি
তোমার নিশ্বাস আমার কাঁধ স্পর্শ না করলে
আমি কেঁপে-কেঁপে উঠি
মৃত্যুর নীরবতাকে আমি ভয় পাই
কিন্তু সেই মুহূর্ত তো আসবেই—
শুভ্র লিলি ও হলদে সূর্যমুখীর চাদর পরে
আমাদের একজন যখন প্রথম মাটির নিচে চলে যাবে
তখন সব দিক থেকে ভেসে আসবে কান্নার শব্দ
এর পর নীরবতা…
নৈঃশব্দ…
এবং কবরের নীরবতা ভালোই লাগবে
তবে কবরের বাইরে যে মানুষটি এ নীরবতা সয়ে যাওয়ার দণ্ড পাবে
তার অবস্থা কত ভয়ানক হবে
এখন তুমিই বলো—কী করব
কত কঠিন পরিস্থিতি দেখো—
তোমার কোমল দেহের স্পর্শে এবং
তোমার কণ্ঠস্বরের ঝনঝনানিতেই
তোমার ভালোবাসা টের পাই আমি;
জৈবিকতা থেকে দূরে
অনুভব-সীমান্তের ওপারে
তুমি পর্যন্ত পৌঁছাতে আমি অক্ষম
এবং দেহের এ বাঁধন যেদিন ছিন্ন হবে
সেদিন এখানে, যেখানে আজ আমরা ভাবের রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছি
সেখানে পড়ে থাকবে একটি শূন্য পিঞ্জর।’
আরও পড়ুন:
ইজাজুল হক

‘লফ্জ লফজ নোহা’-এর বাংলা তর্জমা দাঁড়ায় ‘শব্দে শব্দে বিলাপ’। ১৯৯৫ সালে নাজকির এ কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে আগের পর্বগুলোতে আমরা কিছু কথা জেনেছি। বিশেষ করে ফারুক নাজকির কবিতাশৈলী এবং গজল ও নজমের বৈশিষ্ট্য আলোচনায় ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর বেশ কিছু কবিতা উঠে এসেছে। কবিতাবিষয়ক সেসব ‘শুষ্কং কাষ্ঠং’ আলোচনা এড়িয়ে এবার আমরা বইয়ের পাতায় পাতায় শব্দমালার বিলাপ-ধ্বনি শুনতে চাই। অবশ্য ‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ পর্বেও আগুনের লেলিহান শিখা ও তাপ-উত্তাপের মোড়কে নাজকির বিলাপের ভিন্ন একটি রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।
‘লফ্জ লফজ নোহা’-এর উৎসর্গপত্র থেকেই শুরু হয় ফারুকের বিলাপযাত্রা। জীবনের অন্যতম সেরা কাজটি তিনি সেই মানুষটির করকমলে অর্পণ করতে ভোলেননি, যাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ব্যক্তিত্ব, কাব্যপ্রতিভা ও জীবন-অভিজ্ঞতা ফারুকের জীবনের মোড়ে-মোড়ে আলো ফেলেছে; তমসাচ্ছন্ন রাতে দুর্বার গতিতে জীবনের পিচঢালা সড়ক ধরে ছুটে যেতে দ্রুত গতির বাহনের কাজ করেছে। তিনি আর কেউ নন, নাজকির জীবন রোদ্দুরে আমৃত্যু ছায়া দিয়ে যাওয়া বটবৃক্ষ ও অনন্ত অনুপ্রেরণার বাতিঘর বাবা মির গোলাম রসুল নাজকি।
উৎসর্গপত্রের ভাষ্য এখানে থেমে যায়নি। ভেতরের বিলাপের সুরে পাঠকের মন ছুঁয়ে দিতে নাজকি আরেকজন ব্যক্তির হাতেও বইটি অর্পণ করেন। সোমনাথ সাধু নামের সেই ভাগ্যবান হয়তো বড় কেউ নন; তবুও তাঁর মায়ের প্রয়াণে নাজকি আকুল হন; বিলাপ করেন এবং তাঁর মাথায় বুলিয়ে দেন সান্ত্বনার পরশ। ফলে বিলাপের পাশাপাশি নাজকি এখানে কাশ্মীরের বহুরৈখিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হারানোর বেদনা কিছুটা লাঘব করার সুযোগ পান এবং সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি তাঁর উষ্ণতার নজির স্থাপন করেন। ‘আরও একটি অর্পণ—সোমনাথ সাধু, তোমার নামে’ শিরোনামে তিনি লেখেন—
‘জানো, তোমার মা কামেলি
কাশ্মীর ছেড়ে গেছেন?
সঙ্গে নিয়ে গেছেন
সেই রুপোর থালাও—
যে থালায়
তিনি আমাদের একসঙ্গে খাওয়াতেন।
জানো কি, আমার ভয়েই তিনি
কাশ্মীর ছেড়ে পালিয়েছেন?’
সোমনাথ সাধুর প্রতি শোক জানানোর পাশাপাশি কাশ্মীরের সমাজবাস্তবতাও দারুণভাবে বাঙ্ময় হয়ে ওঠে নাজকির এই কয়েক ছত্রে। নাজকির কলম কাশ্মীরের প্রতি শাসকদের বিমাতাসুলভ আচরণের সঙ্গে কখনো আপস করেনি, বিচ্ছিন্নতাবাদ উসকে দেওয়া ‘দ্রোহের আগুন’-এও ঘি ঢালেননি তিনি। বরং সব ধরনের নৈরাজ্য, অস্থিতিশীলতা ও অশান্তির জন্য হৃদয়ের গহিনে গুঞ্জরিত বিলাপের প্রকাশ ঘটিয়েছেন কবিতার শব্দে-শব্দে।
‘শহরজুড়েই কারবালা প্রান্তর
রক্তখেকোর দল ছিল সর্বত্রই
ত্রাসের কাঁটাতারে ঘেরা কল্পনা-দেবালয়
উত্তরে আছি, না দক্ষিণে—জানা নেই।
রাতের হিংস্রতা সইতে পারব না আমি—
ক্রমেই ভেঙে পড়ছি, হে অপেক্ষাসন্ধ্যা।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেউ-ই দেবে না
কিংবা সতর্ক সাইরেন, হে শূন্য তেপান্তর
চোখের পলকেই আগুন জ্বলে লোকালয়ে
প্রত্যহ লুণ্ঠিত হয় হাসিমুখ নতুন সংসার
গাছে-গাছে জেঁকে বসে মৃত্যুর নীরবতা;
এ কেমন অস্ত্রবাজির মৌসুম এল—
বিষণ্ন উদ্যানের ফুল যায় শুকিয়ে
শরতের আঘাতে বিধ্বস্ত গুলশান।’
এমন মৃত্যুপুরীর মধ্যে কবির জীবন দুঃখ-বিষণ্নতার কালো মেঘে ঢেকে যায়। চারদিকে অন্ধকার ছেয়ে যায়। সন্ধ্যার আগেই পৃথিবীতে নেমে আসে আঁধারের প্রেতাত্মারা। কাশ্মীরের প্রকৃতি ও আবহাওয়ায় ঘুমোনোর সব উপাদান থাকা সত্ত্বেও তিনি ঘুমোতে পারেন না। নিঃসঙ্গ নক্ষত্র হয়ে চাঁদের কোলে জেগে থাকেন রাতের পর রাত। পৃথিবীর সকল ঘরে ঘুমপরী এলেও নাজকির কাশ্মীরে সে আসে না। তাই তাঁর আকুল জিজ্ঞাসা—‘ঘুম কেন আসে না?’
‘নীরবতা সাঙ্গ করে
বৃক্ষে ঝোলে রাত—
মাঠ-ঘাট জনশূন্য;
উঁচু-নিচু টিলায়
বিষাদ ঝরায়
আলোর কোলাহল—
ঘুম কেন আসে না?
দিনের উষ্ণ মেলায়
আমি বিষণ্ন থাকি
সন্ধ্যার কোলাহলে
আমি হতাশ থাকি
সচেতন থাকি আমি
মাদক নিয়েও
হৃদয়ে বিদ্ধ তিরের
আঘাত সয়ে যাই,
ভাবি—পৃথিবীতে
আমিও কত একা!
চাঁদের বাহুডোরে
জোছনার আলো
মুড়িয়ে শুয়ে আছি—
ঘুম কেন আসে না?
ঘুম খুশবু—
রাতের বাতাসে
এখানে-সেখানে ঘোরে;
আমার ঘরে আসে না
দূরত্ব বজায় রেখে চলে;
আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি—
ঘুম কেন আসে না?’
দুই.
‘লফ্জ লফ্জ নোহা’ একদিকে যেমন সময়ের বিড়ম্বনার ক্যানভাস, অন্যদিকে কাশ্মীরের ঋতুবৈচিত্র্য, প্রকৃতি ও পরিবেশের অনন্য আলপনাও বটে। তবে তাতেও নাজকির বিলাপের সুর মিশে যায় দূরের কোনো পর্বতে কিংবা জলপ্রপাতের ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে।
‘লাস্যময়ী শাহজাদি—মৌসুম
আমার রূপকরাজ্যে লুকায়
প্রথম বর্ষণ থেকে তুষারকাল—
একাই সয়ে গেছি সবকিছু;
জিজ্ঞেস করি—তোমার রুটি-রুজি?
ঝিলম বলে—ভেসে গেছে সব।
শীতে তুষারঝড় হবে
এবং ডেকে আনবে বিপদ;
আমার অস্তিত্বজুড়েই বৈপরিত্যের চাষ
বসন্তের শোক-গীত গাইব আমি।
মৌসুমের ছকে বাধা নেই শিলাবৃষ্টিও—
নিত্য আমাদের মাথা খুঁজে নেয় তা;
বিতস্তায় ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে
মানুষ—খড়কুটোর মতো করে।’
কাশ্মীরে মৌসুমের সেই জৌলুশ আর নেই। খড়কুটোর মতো করে মানুষকে যেখানে বিতস্তা তথা ঝিলমের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে কোনো কিছুই আর ঠিকমতো চলতে পারে না। ঠিকমতো বৃষ্টি নামে না। তুষারঝড় ও শিলাবৃষ্টির পিঠে ভর করে ধেয়ে আসে দানবেরা। নাজকির দিনকাল ভালো যায় না। হতাশা জেঁকে বসে তাঁর ভেতর। গুলরিজ শহরের পুরোনো প্রিয়তমার সান্নিধ্য পেতে তাঁর হৃদয় হাহাকার করে ওঠে।
‘এখানে, শূন্য মরুতে প্রলম্বিত হচ্ছে ছায়া
গুলরিজ থেকে কেউ আমাকে আবার ডাকুক;
বিষাদকালে তোমার স্বপ্নযোগে আসাও
অসুস্থকে অমৃত খাইয়ে দেওয়ার মতো;
স্থির না হও, সম্মতি না দাও আমাকে—
অবিশ্বাস থেকে তো অন্তত মুক্তি দেবে!’
নাজকির তীব্র আকাঙ্ক্ষার কাছে হার মেনে সে স্বপ্নে হলেও আসে; আসতেই থাকে। এ এক নতুন যন্ত্রণা—তাকে ভুলে থাকার জন্য কবি শহর থেকে দূরে অজানা গন্তব্যে চলে যান। সেখানেও কবির নিস্তার নেই। চোখ বুঁজতেই সে তাঁর তনু-মনে শিহরণ জাগায়।
‘শ্রাবণ-শ্রাবণ জল-ফেলা চোখ
তোমার নামে সদকা দিলাম
মরুর সমান আকাঙ্ক্ষা-পা
মাতাল হস্ত আঁচল সমান
শহর ছেড়ে এলাম বনে
ভেবেছিলাম—থাকব একা
চোখ বুজতেই তুমি এসে
করলে সবই ওলটপালট।’
নাজকির চোখ প্রিয়তমার রূপ-ঐশ্বর্য্যের অনুপুঙ্খ হিসেব রাখে। প্রিয়তমার সকল সৌন্দর্য খুঁজে ফেরেন তিনি কাশ্মীরের পাহাড়, ঝিরি, নদী ও উপত্যকার পরতে-পরতে। নিবিড় প্রেমের উষ্ণতায় প্রকৃতি তাঁর সামনে সকল সৌন্দর্য উন্মুক্ত করে। কবি বিস্মিত হন, তৃপ্ত হন এবং আধ্যাত্মিক হন। এমন অপার সৌন্দর্যের প্রতিটি উপাদানে স্রষ্টার খোঁজ করেন।
‘মাঠ থেকে মাঠে আলো ছড়ায় সত্যের মুক্তোরা
বাগানে-বাগানে তোমার নিদর্শন নিয়ে আসে কে
আঙিনার এই সব ঝরাপাতাদের
জিজ্ঞেস করো সৃষ্টিকর্তার কথা।’
তিন.
ফিরে যাই বিলাপ প্রসঙ্গে। নাজকি একটানা বিলাপ করেই যান না, মাঝেমধ্যে শ্লেষ মিশিয়ে ছুড়ে দেন কথার তিরও। কাশ্মীরিদের সবকিছু কেড়ে নিলেও খুব সীমিত পরিসরে কথা বলার জায়গা তো রাখা হয়েছে, সে জন্য কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ধন্যবাদ দিয়ে অধিকার হরণের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। অবশ্য এ পর্যায়েও সত্য উচ্চারণে তিনি দ্বিধাহীন।
‘পরিস্থিতি এত বেশি খারাপ নয়—
বলতে পারব না এমন কথাও নেই;
তোমার পথে বিছিয়েছিলাম আমরা চোখের পাতা
আর তুমি, তুমি আমাদের পথে কাঁটা বিছিয়ে দিলে!’
মূলত পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ যে, নিজের ছায়াকেও সন্দেহ করতে শুরু করেন নাজকি। কথা বলার স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই সেখানে। অফিস, বাসা, স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে কথা বলতেও তাঁর যত ভয়। কাশ্মীরের অবারিত প্রকৃতির বুকে এমন গুমোট সন্ধ্যা কখনো নামেনি। নাজকি বলেন—
‘স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময়
মেপে-মেপে শব্দ চয়ন করি
অফিসে সহকর্মীদের সামনে
লিখিত বক্তব্য পাঠ করি।
কলিজার টুকরো মেয়েটির
চোখোচোখি হতে কাঁপন ধরে যায়—
এ কেমন বসন্ত এল, খোদা
সকাল থেকে খুশবুরাও আতঙ্কিত;
এ কেমন মাতাল মৌসুম এল
ফুলবানুদের সঙ্গে মিলিয়ে গেল ভোরে হাওয়াও।’
নাজকির বিলাপ থামে না। ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর শব্দে শব্দে, লাইনে-লাইনে, পদে-পদে এক নিঃস্ব-পরাধীন আহত মানবাত্মার করুণ কান্না শোনা যায়। দেশের মাটি-মানুষ ও ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সুরক্ষার জন্য এই বিলাপ অত্যন্ত দরকারি; নাজকির কণ্ঠ থেকে তা নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সকল জনপদে ছড়িয়ে পড়বে।
কবি ফারুক নাজকির গল্প বলা এখানেই শেষ করতে চাই। কোনো এক বিদেশি কবি বলেছিলেন, ‘একটি কবিতার সেইটুকুই বিশুদ্ধ কবিতা, যার অনুবাদ সম্ভব নয়।’ সুতরাং আমার দুর্বলতম অনুবাদে নিশ্চয়ই নাজকিকে বিচার করবেন না পাঠক। ভিনদেশের একজন কবির জীবনপাঠের মাধ্যমে সে দেশের সংস্কৃতির ভেতরে প্রবেশ করাই আমাদের লক্ষ্য। নাজকির কবিতার অনুবাদক হিসেবে এটুকই আমার কৈফিয়ত। চলুন, নাজকির রোমান্টিক কবিতা ‘মধ্যরাতের বিলাপ’ শুনতে-শুনতে ঘুমিয়ে পড়া যাক—
‘আমি ও তুমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ি
নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে
প্রথমে শিথিল পরে শীতল হয়ে পড়ে জরায়ু
এবং স্বরূপে ফিরে আসে আমাদের মুখচ্ছবি
তখন এলোমেলো ভাবি
বিচ্ছেদ হলে আমাদের কী হবে
তোমার কী হবে আমাকে ছাড়া
আমার কী হবে তোমাকে ছাড়া
আমি বেঁচে থাকতে তুমি মরে যাবে
আমি তো ভাবতেই পারি না
এবং এও ভাবতে পারি না—
যদি আমি তোমার আগে মরে যাই
তুমি কীভাবে কাঁদবে
আমরা কত অসহায় ও একা
আমাদের প্রাণ দুটো একদেহে মিশিয়ে নেওয়া কি সম্ভব নয়
আমি-তুমির দ্বন্দ্বই যেন মিটে যায়?
আমরা একই শাখার দুটি ফুল
আমাদের রুচি ও রসনা এক
আমাদের দেহের রসায়ন এক
সত্যিকারের হৃদয়ও এক আমাদের—
তো আমাদের বিচ্ছেদ কেন হবে
কোনো পথ কি নেই
কোনো উপায় কি নেই—
এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করো
যাতে আমরা দুই হৃদয়কে স্পন্দিত
এবং দিনগুলোকে আলোঝরা রাখতে পারি
এবং এর পর
আমি শহর-নগরে ঘুরে বেড়াব
অলিগলি-বাজারে দৌড়াব
এবং সতত তোমার কণ্ঠ ওপরের আকাশ থেকে
নামতে থাকবে এবং পৃথিবী সজীব করতে থাকবে
এবং আমি ভালোবাসা-সাগরে সুরের নৃত্য দেখব
দেহ কতই না দুর্বল
এবং আমরা এ অবয়বে এ জন্যই সৃজিত হয়েছি
যে নিঃশেষিত হওয়ার স্বাদের মজনু হই
মৃত্যু নিয়ে আমি একটু বেশিই ভাবি
তোমার নিশ্বাস আমার কাঁধ স্পর্শ না করলে
আমি কেঁপে-কেঁপে উঠি
মৃত্যুর নীরবতাকে আমি ভয় পাই
কিন্তু সেই মুহূর্ত তো আসবেই—
শুভ্র লিলি ও হলদে সূর্যমুখীর চাদর পরে
আমাদের একজন যখন প্রথম মাটির নিচে চলে যাবে
তখন সব দিক থেকে ভেসে আসবে কান্নার শব্দ
এর পর নীরবতা…
নৈঃশব্দ…
এবং কবরের নীরবতা ভালোই লাগবে
তবে কবরের বাইরে যে মানুষটি এ নীরবতা সয়ে যাওয়ার দণ্ড পাবে
তার অবস্থা কত ভয়ানক হবে
এখন তুমিই বলো—কী করব
কত কঠিন পরিস্থিতি দেখো—
তোমার কোমল দেহের স্পর্শে এবং
তোমার কণ্ঠস্বরের ঝনঝনানিতেই
তোমার ভালোবাসা টের পাই আমি;
জৈবিকতা থেকে দূরে
অনুভব-সীমান্তের ওপারে
তুমি পর্যন্ত পৌঁছাতে আমি অক্ষম
এবং দেহের এ বাঁধন যেদিন ছিন্ন হবে
সেদিন এখানে, যেখানে আজ আমরা ভাবের রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছি
সেখানে পড়ে থাকবে একটি শূন্য পিঞ্জর।’
আরও পড়ুন:

‘লফ্জ লফজ নোহা’-এর বাংলা তর্জমা দাঁড়ায় ‘শব্দে শব্দে বিলাপ’। ১৯৯৫ সালে নাজকির এ কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে আগের পর্বগুলোতে আমরা কিছু কথা জেনেছি। বিশেষ করে ফারুক নাজকির কবিতাশৈলী এবং গজল ও নজমের বৈশিষ্ট্য আলোচনায় ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর বেশ কিছু কবিতা উঠে এসেছে। কবিতাবিষয়ক সেসব ‘শুষ্কং কাষ্ঠং’ আলোচনা এড়িয়ে এবার আমরা বইয়ের পাতায় পাতায় শব্দমালার বিলাপ-ধ্বনি শুনতে চাই। অবশ্য ‘নার হেয়ুতুন কাজালভানাস’ পর্বেও আগুনের লেলিহান শিখা ও তাপ-উত্তাপের মোড়কে নাজকির বিলাপের ভিন্ন একটি রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।
‘লফ্জ লফজ নোহা’-এর উৎসর্গপত্র থেকেই শুরু হয় ফারুকের বিলাপযাত্রা। জীবনের অন্যতম সেরা কাজটি তিনি সেই মানুষটির করকমলে অর্পণ করতে ভোলেননি, যাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ব্যক্তিত্ব, কাব্যপ্রতিভা ও জীবন-অভিজ্ঞতা ফারুকের জীবনের মোড়ে-মোড়ে আলো ফেলেছে; তমসাচ্ছন্ন রাতে দুর্বার গতিতে জীবনের পিচঢালা সড়ক ধরে ছুটে যেতে দ্রুত গতির বাহনের কাজ করেছে। তিনি আর কেউ নন, নাজকির জীবন রোদ্দুরে আমৃত্যু ছায়া দিয়ে যাওয়া বটবৃক্ষ ও অনন্ত অনুপ্রেরণার বাতিঘর বাবা মির গোলাম রসুল নাজকি।
উৎসর্গপত্রের ভাষ্য এখানে থেমে যায়নি। ভেতরের বিলাপের সুরে পাঠকের মন ছুঁয়ে দিতে নাজকি আরেকজন ব্যক্তির হাতেও বইটি অর্পণ করেন। সোমনাথ সাধু নামের সেই ভাগ্যবান হয়তো বড় কেউ নন; তবুও তাঁর মায়ের প্রয়াণে নাজকি আকুল হন; বিলাপ করেন এবং তাঁর মাথায় বুলিয়ে দেন সান্ত্বনার পরশ। ফলে বিলাপের পাশাপাশি নাজকি এখানে কাশ্মীরের বহুরৈখিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হারানোর বেদনা কিছুটা লাঘব করার সুযোগ পান এবং সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি তাঁর উষ্ণতার নজির স্থাপন করেন। ‘আরও একটি অর্পণ—সোমনাথ সাধু, তোমার নামে’ শিরোনামে তিনি লেখেন—
‘জানো, তোমার মা কামেলি
কাশ্মীর ছেড়ে গেছেন?
সঙ্গে নিয়ে গেছেন
সেই রুপোর থালাও—
যে থালায়
তিনি আমাদের একসঙ্গে খাওয়াতেন।
জানো কি, আমার ভয়েই তিনি
কাশ্মীর ছেড়ে পালিয়েছেন?’
সোমনাথ সাধুর প্রতি শোক জানানোর পাশাপাশি কাশ্মীরের সমাজবাস্তবতাও দারুণভাবে বাঙ্ময় হয়ে ওঠে নাজকির এই কয়েক ছত্রে। নাজকির কলম কাশ্মীরের প্রতি শাসকদের বিমাতাসুলভ আচরণের সঙ্গে কখনো আপস করেনি, বিচ্ছিন্নতাবাদ উসকে দেওয়া ‘দ্রোহের আগুন’-এও ঘি ঢালেননি তিনি। বরং সব ধরনের নৈরাজ্য, অস্থিতিশীলতা ও অশান্তির জন্য হৃদয়ের গহিনে গুঞ্জরিত বিলাপের প্রকাশ ঘটিয়েছেন কবিতার শব্দে-শব্দে।
‘শহরজুড়েই কারবালা প্রান্তর
রক্তখেকোর দল ছিল সর্বত্রই
ত্রাসের কাঁটাতারে ঘেরা কল্পনা-দেবালয়
উত্তরে আছি, না দক্ষিণে—জানা নেই।
রাতের হিংস্রতা সইতে পারব না আমি—
ক্রমেই ভেঙে পড়ছি, হে অপেক্ষাসন্ধ্যা।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস কেউ-ই দেবে না
কিংবা সতর্ক সাইরেন, হে শূন্য তেপান্তর
চোখের পলকেই আগুন জ্বলে লোকালয়ে
প্রত্যহ লুণ্ঠিত হয় হাসিমুখ নতুন সংসার
গাছে-গাছে জেঁকে বসে মৃত্যুর নীরবতা;
এ কেমন অস্ত্রবাজির মৌসুম এল—
বিষণ্ন উদ্যানের ফুল যায় শুকিয়ে
শরতের আঘাতে বিধ্বস্ত গুলশান।’
এমন মৃত্যুপুরীর মধ্যে কবির জীবন দুঃখ-বিষণ্নতার কালো মেঘে ঢেকে যায়। চারদিকে অন্ধকার ছেয়ে যায়। সন্ধ্যার আগেই পৃথিবীতে নেমে আসে আঁধারের প্রেতাত্মারা। কাশ্মীরের প্রকৃতি ও আবহাওয়ায় ঘুমোনোর সব উপাদান থাকা সত্ত্বেও তিনি ঘুমোতে পারেন না। নিঃসঙ্গ নক্ষত্র হয়ে চাঁদের কোলে জেগে থাকেন রাতের পর রাত। পৃথিবীর সকল ঘরে ঘুমপরী এলেও নাজকির কাশ্মীরে সে আসে না। তাই তাঁর আকুল জিজ্ঞাসা—‘ঘুম কেন আসে না?’
‘নীরবতা সাঙ্গ করে
বৃক্ষে ঝোলে রাত—
মাঠ-ঘাট জনশূন্য;
উঁচু-নিচু টিলায়
বিষাদ ঝরায়
আলোর কোলাহল—
ঘুম কেন আসে না?
দিনের উষ্ণ মেলায়
আমি বিষণ্ন থাকি
সন্ধ্যার কোলাহলে
আমি হতাশ থাকি
সচেতন থাকি আমি
মাদক নিয়েও
হৃদয়ে বিদ্ধ তিরের
আঘাত সয়ে যাই,
ভাবি—পৃথিবীতে
আমিও কত একা!
চাঁদের বাহুডোরে
জোছনার আলো
মুড়িয়ে শুয়ে আছি—
ঘুম কেন আসে না?
ঘুম খুশবু—
রাতের বাতাসে
এখানে-সেখানে ঘোরে;
আমার ঘরে আসে না
দূরত্ব বজায় রেখে চলে;
আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি—
ঘুম কেন আসে না?’
দুই.
‘লফ্জ লফ্জ নোহা’ একদিকে যেমন সময়ের বিড়ম্বনার ক্যানভাস, অন্যদিকে কাশ্মীরের ঋতুবৈচিত্র্য, প্রকৃতি ও পরিবেশের অনন্য আলপনাও বটে। তবে তাতেও নাজকির বিলাপের সুর মিশে যায় দূরের কোনো পর্বতে কিংবা জলপ্রপাতের ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে।
‘লাস্যময়ী শাহজাদি—মৌসুম
আমার রূপকরাজ্যে লুকায়
প্রথম বর্ষণ থেকে তুষারকাল—
একাই সয়ে গেছি সবকিছু;
জিজ্ঞেস করি—তোমার রুটি-রুজি?
ঝিলম বলে—ভেসে গেছে সব।
শীতে তুষারঝড় হবে
এবং ডেকে আনবে বিপদ;
আমার অস্তিত্বজুড়েই বৈপরিত্যের চাষ
বসন্তের শোক-গীত গাইব আমি।
মৌসুমের ছকে বাধা নেই শিলাবৃষ্টিও—
নিত্য আমাদের মাথা খুঁজে নেয় তা;
বিতস্তায় ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে
মানুষ—খড়কুটোর মতো করে।’
কাশ্মীরে মৌসুমের সেই জৌলুশ আর নেই। খড়কুটোর মতো করে মানুষকে যেখানে বিতস্তা তথা ঝিলমের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে কোনো কিছুই আর ঠিকমতো চলতে পারে না। ঠিকমতো বৃষ্টি নামে না। তুষারঝড় ও শিলাবৃষ্টির পিঠে ভর করে ধেয়ে আসে দানবেরা। নাজকির দিনকাল ভালো যায় না। হতাশা জেঁকে বসে তাঁর ভেতর। গুলরিজ শহরের পুরোনো প্রিয়তমার সান্নিধ্য পেতে তাঁর হৃদয় হাহাকার করে ওঠে।
‘এখানে, শূন্য মরুতে প্রলম্বিত হচ্ছে ছায়া
গুলরিজ থেকে কেউ আমাকে আবার ডাকুক;
বিষাদকালে তোমার স্বপ্নযোগে আসাও
অসুস্থকে অমৃত খাইয়ে দেওয়ার মতো;
স্থির না হও, সম্মতি না দাও আমাকে—
অবিশ্বাস থেকে তো অন্তত মুক্তি দেবে!’
নাজকির তীব্র আকাঙ্ক্ষার কাছে হার মেনে সে স্বপ্নে হলেও আসে; আসতেই থাকে। এ এক নতুন যন্ত্রণা—তাকে ভুলে থাকার জন্য কবি শহর থেকে দূরে অজানা গন্তব্যে চলে যান। সেখানেও কবির নিস্তার নেই। চোখ বুঁজতেই সে তাঁর তনু-মনে শিহরণ জাগায়।
‘শ্রাবণ-শ্রাবণ জল-ফেলা চোখ
তোমার নামে সদকা দিলাম
মরুর সমান আকাঙ্ক্ষা-পা
মাতাল হস্ত আঁচল সমান
শহর ছেড়ে এলাম বনে
ভেবেছিলাম—থাকব একা
চোখ বুজতেই তুমি এসে
করলে সবই ওলটপালট।’
নাজকির চোখ প্রিয়তমার রূপ-ঐশ্বর্য্যের অনুপুঙ্খ হিসেব রাখে। প্রিয়তমার সকল সৌন্দর্য খুঁজে ফেরেন তিনি কাশ্মীরের পাহাড়, ঝিরি, নদী ও উপত্যকার পরতে-পরতে। নিবিড় প্রেমের উষ্ণতায় প্রকৃতি তাঁর সামনে সকল সৌন্দর্য উন্মুক্ত করে। কবি বিস্মিত হন, তৃপ্ত হন এবং আধ্যাত্মিক হন। এমন অপার সৌন্দর্যের প্রতিটি উপাদানে স্রষ্টার খোঁজ করেন।
‘মাঠ থেকে মাঠে আলো ছড়ায় সত্যের মুক্তোরা
বাগানে-বাগানে তোমার নিদর্শন নিয়ে আসে কে
আঙিনার এই সব ঝরাপাতাদের
জিজ্ঞেস করো সৃষ্টিকর্তার কথা।’
তিন.
ফিরে যাই বিলাপ প্রসঙ্গে। নাজকি একটানা বিলাপ করেই যান না, মাঝেমধ্যে শ্লেষ মিশিয়ে ছুড়ে দেন কথার তিরও। কাশ্মীরিদের সবকিছু কেড়ে নিলেও খুব সীমিত পরিসরে কথা বলার জায়গা তো রাখা হয়েছে, সে জন্য কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ধন্যবাদ দিয়ে অধিকার হরণের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। অবশ্য এ পর্যায়েও সত্য উচ্চারণে তিনি দ্বিধাহীন।
‘পরিস্থিতি এত বেশি খারাপ নয়—
বলতে পারব না এমন কথাও নেই;
তোমার পথে বিছিয়েছিলাম আমরা চোখের পাতা
আর তুমি, তুমি আমাদের পথে কাঁটা বিছিয়ে দিলে!’
মূলত পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ যে, নিজের ছায়াকেও সন্দেহ করতে শুরু করেন নাজকি। কথা বলার স্বাধীনতা বলতে কিছুই নেই সেখানে। অফিস, বাসা, স্ত্রী, সন্তানদের সঙ্গে কথা বলতেও তাঁর যত ভয়। কাশ্মীরের অবারিত প্রকৃতির বুকে এমন গুমোট সন্ধ্যা কখনো নামেনি। নাজকি বলেন—
‘স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময়
মেপে-মেপে শব্দ চয়ন করি
অফিসে সহকর্মীদের সামনে
লিখিত বক্তব্য পাঠ করি।
কলিজার টুকরো মেয়েটির
চোখোচোখি হতে কাঁপন ধরে যায়—
এ কেমন বসন্ত এল, খোদা
সকাল থেকে খুশবুরাও আতঙ্কিত;
এ কেমন মাতাল মৌসুম এল
ফুলবানুদের সঙ্গে মিলিয়ে গেল ভোরে হাওয়াও।’
নাজকির বিলাপ থামে না। ‘লফ্জ লফ্জ নোহা’-এর শব্দে শব্দে, লাইনে-লাইনে, পদে-পদে এক নিঃস্ব-পরাধীন আহত মানবাত্মার করুণ কান্না শোনা যায়। দেশের মাটি-মানুষ ও ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সুরক্ষার জন্য এই বিলাপ অত্যন্ত দরকারি; নাজকির কণ্ঠ থেকে তা নিঃসন্দেহে পৃথিবীর সকল জনপদে ছড়িয়ে পড়বে।
কবি ফারুক নাজকির গল্প বলা এখানেই শেষ করতে চাই। কোনো এক বিদেশি কবি বলেছিলেন, ‘একটি কবিতার সেইটুকুই বিশুদ্ধ কবিতা, যার অনুবাদ সম্ভব নয়।’ সুতরাং আমার দুর্বলতম অনুবাদে নিশ্চয়ই নাজকিকে বিচার করবেন না পাঠক। ভিনদেশের একজন কবির জীবনপাঠের মাধ্যমে সে দেশের সংস্কৃতির ভেতরে প্রবেশ করাই আমাদের লক্ষ্য। নাজকির কবিতার অনুবাদক হিসেবে এটুকই আমার কৈফিয়ত। চলুন, নাজকির রোমান্টিক কবিতা ‘মধ্যরাতের বিলাপ’ শুনতে-শুনতে ঘুমিয়ে পড়া যাক—
‘আমি ও তুমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ি
নিশ্বাস ভারী হয়ে আসে
প্রথমে শিথিল পরে শীতল হয়ে পড়ে জরায়ু
এবং স্বরূপে ফিরে আসে আমাদের মুখচ্ছবি
তখন এলোমেলো ভাবি
বিচ্ছেদ হলে আমাদের কী হবে
তোমার কী হবে আমাকে ছাড়া
আমার কী হবে তোমাকে ছাড়া
আমি বেঁচে থাকতে তুমি মরে যাবে
আমি তো ভাবতেই পারি না
এবং এও ভাবতে পারি না—
যদি আমি তোমার আগে মরে যাই
তুমি কীভাবে কাঁদবে
আমরা কত অসহায় ও একা
আমাদের প্রাণ দুটো একদেহে মিশিয়ে নেওয়া কি সম্ভব নয়
আমি-তুমির দ্বন্দ্বই যেন মিটে যায়?
আমরা একই শাখার দুটি ফুল
আমাদের রুচি ও রসনা এক
আমাদের দেহের রসায়ন এক
সত্যিকারের হৃদয়ও এক আমাদের—
তো আমাদের বিচ্ছেদ কেন হবে
কোনো পথ কি নেই
কোনো উপায় কি নেই—
এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি করো
যাতে আমরা দুই হৃদয়কে স্পন্দিত
এবং দিনগুলোকে আলোঝরা রাখতে পারি
এবং এর পর
আমি শহর-নগরে ঘুরে বেড়াব
অলিগলি-বাজারে দৌড়াব
এবং সতত তোমার কণ্ঠ ওপরের আকাশ থেকে
নামতে থাকবে এবং পৃথিবী সজীব করতে থাকবে
এবং আমি ভালোবাসা-সাগরে সুরের নৃত্য দেখব
দেহ কতই না দুর্বল
এবং আমরা এ অবয়বে এ জন্যই সৃজিত হয়েছি
যে নিঃশেষিত হওয়ার স্বাদের মজনু হই
মৃত্যু নিয়ে আমি একটু বেশিই ভাবি
তোমার নিশ্বাস আমার কাঁধ স্পর্শ না করলে
আমি কেঁপে-কেঁপে উঠি
মৃত্যুর নীরবতাকে আমি ভয় পাই
কিন্তু সেই মুহূর্ত তো আসবেই—
শুভ্র লিলি ও হলদে সূর্যমুখীর চাদর পরে
আমাদের একজন যখন প্রথম মাটির নিচে চলে যাবে
তখন সব দিক থেকে ভেসে আসবে কান্নার শব্দ
এর পর নীরবতা…
নৈঃশব্দ…
এবং কবরের নীরবতা ভালোই লাগবে
তবে কবরের বাইরে যে মানুষটি এ নীরবতা সয়ে যাওয়ার দণ্ড পাবে
তার অবস্থা কত ভয়ানক হবে
এখন তুমিই বলো—কী করব
কত কঠিন পরিস্থিতি দেখো—
তোমার কোমল দেহের স্পর্শে এবং
তোমার কণ্ঠস্বরের ঝনঝনানিতেই
তোমার ভালোবাসা টের পাই আমি;
জৈবিকতা থেকে দূরে
অনুভব-সীমান্তের ওপারে
তুমি পর্যন্ত পৌঁছাতে আমি অক্ষম
এবং দেহের এ বাঁধন যেদিন ছিন্ন হবে
সেদিন এখানে, যেখানে আজ আমরা ভাবের রাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছি
সেখানে পড়ে থাকবে একটি শূন্য পিঞ্জর।’
আরও পড়ুন:

মামুন বিরিয়ানি হাউসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পুরান ঢাকার এই রেস্তোরাঁটি গরুর তেহারি বিক্রি করে সুনাম কুড়িয়ে নেয়। শুরুর দিকে এক প্লেট তেহারির দাম ছিল মাত্র ১২ টাকা! তাদের তেহারিভর্তি হাঁড়ি খালি হতে বেশি সময় লাগে না। তাই তো মামুন বিরিয়ানির চারটি শাখা পরিচালনা করতে হচ্ছে।
২ ঘণ্টা আগে
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
৫ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
৫ দিন আগেসম্পাদকীয়

মামুন বিরিয়ানি হাউসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পুরান ঢাকার এই রেস্তোরাঁটি গরুর তেহারি বিক্রি করে সুনাম কুড়িয়ে নেয়। শুরুর দিকে এক প্লেট তেহারির দাম ছিল মাত্র ১২ টাকা! তাদের তেহারিভর্তি হাঁড়ি খালি হতে বেশি সময় লাগে না। তাই তো মামুন বিরিয়ানির চারটি শাখা পরিচালনা করতে হচ্ছে।
একই নামে ঢাকায় আরও বিরিয়ানির দোকান থাকলেও শর্ষের তেলে তৈরি মামুনের তেহারির স্বাদ পাওয়া যায় কেবল নাজিমুদ্দীন রোডের দুটি, নাজিরাবাজার ও এলিফ্যান্ট রোডের একটি করে শাখায়। মামুন বিরিয়ানি হাউসের নব্য সংযোজন গরু ও খাসির কাচ্চি কিংবা মোরগ পোলাও হলেও তেহারির সুঘ্রাণেই সেখানে ছুটে যান ভোজনরসিকেরা। পুরান ঢাকাবাসীর জন্য হোম ডেলিভারির বিশেষ সুবিধা দেয় এই রেস্তোরাঁটি। বিয়েশাদিতে তেহারির ‘ডেগ’ ভাড়া নেবেন? তা-ও সম্ভব।
ছবি: জাহিদুল ইসলাম

মামুন বিরিয়ানি হাউসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পুরান ঢাকার এই রেস্তোরাঁটি গরুর তেহারি বিক্রি করে সুনাম কুড়িয়ে নেয়। শুরুর দিকে এক প্লেট তেহারির দাম ছিল মাত্র ১২ টাকা! তাদের তেহারিভর্তি হাঁড়ি খালি হতে বেশি সময় লাগে না। তাই তো মামুন বিরিয়ানির চারটি শাখা পরিচালনা করতে হচ্ছে।
একই নামে ঢাকায় আরও বিরিয়ানির দোকান থাকলেও শর্ষের তেলে তৈরি মামুনের তেহারির স্বাদ পাওয়া যায় কেবল নাজিমুদ্দীন রোডের দুটি, নাজিরাবাজার ও এলিফ্যান্ট রোডের একটি করে শাখায়। মামুন বিরিয়ানি হাউসের নব্য সংযোজন গরু ও খাসির কাচ্চি কিংবা মোরগ পোলাও হলেও তেহারির সুঘ্রাণেই সেখানে ছুটে যান ভোজনরসিকেরা। পুরান ঢাকাবাসীর জন্য হোম ডেলিভারির বিশেষ সুবিধা দেয় এই রেস্তোরাঁটি। বিয়েশাদিতে তেহারির ‘ডেগ’ ভাড়া নেবেন? তা-ও সম্ভব।
ছবি: জাহিদুল ইসলাম

কাশ্মীরে মৌসুমের সেই জৌলুশ আর নেই। খড়কুটোর মতো করে মানুষকে যেখানে বিতস্তা তথা ঝিলমের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে কোনো কিছুই আর ঠিকমতো চলতে পারে না। ঠিকমতো বৃষ্টি নামে না। তুষারঝড় ও শিলাবৃষ্টির পিঠে ভর করে ধেয়ে আসে দানবেরা। নাজকির দিনকাল ভালো যায় না। হতাশা জেঁকে বসে তাঁর ভেতর। গুলরিজ শহরের পুরোনো প্র
০৩ জুলাই ২০২২
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
৫ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

কাশ্মীরে মৌসুমের সেই জৌলুশ আর নেই। খড়কুটোর মতো করে মানুষকে যেখানে বিতস্তা তথা ঝিলমের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে কোনো কিছুই আর ঠিকমতো চলতে পারে না। ঠিকমতো বৃষ্টি নামে না। তুষারঝড় ও শিলাবৃষ্টির পিঠে ভর করে ধেয়ে আসে দানবেরা। নাজকির দিনকাল ভালো যায় না। হতাশা জেঁকে বসে তাঁর ভেতর। গুলরিজ শহরের পুরোনো প্র
০৩ জুলাই ২০২২
মামুন বিরিয়ানি হাউসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পুরান ঢাকার এই রেস্তোরাঁটি গরুর তেহারি বিক্রি করে সুনাম কুড়িয়ে নেয়। শুরুর দিকে এক প্লেট তেহারির দাম ছিল মাত্র ১২ টাকা! তাদের তেহারিভর্তি হাঁড়ি খালি হতে বেশি সময় লাগে না। তাই তো মামুন বিরিয়ানির চারটি শাখা পরিচালনা করতে হচ্ছে।
২ ঘণ্টা আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

কাশ্মীরে মৌসুমের সেই জৌলুশ আর নেই। খড়কুটোর মতো করে মানুষকে যেখানে বিতস্তা তথা ঝিলমের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে কোনো কিছুই আর ঠিকমতো চলতে পারে না। ঠিকমতো বৃষ্টি নামে না। তুষারঝড় ও শিলাবৃষ্টির পিঠে ভর করে ধেয়ে আসে দানবেরা। নাজকির দিনকাল ভালো যায় না। হতাশা জেঁকে বসে তাঁর ভেতর। গুলরিজ শহরের পুরোনো প্র
০৩ জুলাই ২০২২
মামুন বিরিয়ানি হাউসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পুরান ঢাকার এই রেস্তোরাঁটি গরুর তেহারি বিক্রি করে সুনাম কুড়িয়ে নেয়। শুরুর দিকে এক প্লেট তেহারির দাম ছিল মাত্র ১২ টাকা! তাদের তেহারিভর্তি হাঁড়ি খালি হতে বেশি সময় লাগে না। তাই তো মামুন বিরিয়ানির চারটি শাখা পরিচালনা করতে হচ্ছে।
২ ঘণ্টা আগে
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
৫ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
৫ দিন আগেসম্পাদকীয়

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

কাশ্মীরে মৌসুমের সেই জৌলুশ আর নেই। খড়কুটোর মতো করে মানুষকে যেখানে বিতস্তা তথা ঝিলমের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে কোনো কিছুই আর ঠিকমতো চলতে পারে না। ঠিকমতো বৃষ্টি নামে না। তুষারঝড় ও শিলাবৃষ্টির পিঠে ভর করে ধেয়ে আসে দানবেরা। নাজকির দিনকাল ভালো যায় না। হতাশা জেঁকে বসে তাঁর ভেতর। গুলরিজ শহরের পুরোনো প্র
০৩ জুলাই ২০২২
মামুন বিরিয়ানি হাউসের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পুরান ঢাকার এই রেস্তোরাঁটি গরুর তেহারি বিক্রি করে সুনাম কুড়িয়ে নেয়। শুরুর দিকে এক প্লেট তেহারির দাম ছিল মাত্র ১২ টাকা! তাদের তেহারিভর্তি হাঁড়ি খালি হতে বেশি সময় লাগে না। তাই তো মামুন বিরিয়ানির চারটি শাখা পরিচালনা করতে হচ্ছে।
২ ঘণ্টা আগে
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
৫ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
৫ দিন আগে