Ajker Patrika

তাঁর সৃষ্টি এখনো স্বমহিমায়, তিনি কে

খান মুহাম্মদ রুমেল
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬: ৩৬
তাঁর সৃষ্টি এখনো স্বমহিমায়, তিনি কে

রোববার ছিল অমর একুশে বইমেলার দ্বিতীয় দিন। কর্মদিবসের প্রথম দিনে মানুষের সমাগম কম হবে অনুমিত ছিল, হয়েছেও তা-ই। তবে মেলা জমতে শুরু করেছে! প্রায় সব স্টল সাজিয়ে-গুছিয়ে বসেছে। ক্রেতা-পাঠক-দর্শনার্থী বাড়ছে, মেলা জমছে।

এবারের মেলায় একটা ব্যতিক্রম চোখে পড়ছে শুরুর দিন থেকে। প্রতিবছর প্রকাশনীগুলো পরিচিত ও জনপ্রিয় লেখকদের বড় বড় ছবি ব্যবহার করেন স্টল প্যাভিলিয়নের সামনে, ভেতরে, ওপরে। এবার সেটা অনেকটাই কম। তবে এই ব্যতিক্রমের মাঝেও একজন লেখক আছেন যথারীতি স্বমহিমায়। তিনি হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর বই আছে এমন সব প্রকাশনীই তাঁর বিশাল ছবি ব্যবহার করেছে। মেলার প্রথম দিকে হুমায়ূন আহমেদের বই ঘিরেই পাঠকের আগ্রহ। মাসজুড়েই এটি থাকবে নিশ্চিত করে বলা যায়।

জীবন-মৃত্যুর ভেদরেখা মুছে অসীম আকাশের তারা হয়ে গেছেন হুমায়ূন আহমেদ—সেও তো হয়ে গেল এক যুগ। ২০১২ সালের ১৯শে জুলাই রাতটা চাঁদনি পসর ছিল কি না, কিংবা নিউইয়র্কের নীল আকাশে সেদিন ঝকঝকে রোদ ছিল কি না, এখন হয়তো অনেকেরই মনে নেই। তবে এটি নিশ্চিত করে বলা যায়—আজও পূর্ণিমা আলোয় ভেসে গেলে রাতের আকাশ নীল শাড়ি পরে ছাদে চলে যায় বিষণ্ন কোনো তরুণী। স্বপ্নতাড়িত তরুণ আজও জোছনা দেখলে হাঁটতে থাকে শহুরে পথ ধরে উদ্দেশ্যহীন। শহর থেকে দূর লোকালয়ে একই রকম আবেগ নিয়ে হুমায়ূনকে স্মরণ করে এই সময়ের কিশোর তারুণ্য।

শুধু কিশোর-তারুণ্য কেন—মৃত্যুর বারো বছর পর এও তো স্পষ্ট-বয়সী পাঠকেরাও লুকিয়ে কিংবা প্রকাশ্যে এখনো হুমায়ূন পড়েন একই রকম মাদকতায়।

সাহিত্যে মান এবং জনপ্রিয়তা নিয়ে তর্ক দীর্ঘদিনের। আর এই তর্ক থেকেই অনেকেই প্রশ্ন তুলতেন, অনেক বেশি লিখে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। কিন্তু মানের দিক থেকে তার লেখা অতটা কালোত্তীর্ণ কি না—সেই দ্বন্দ্বের বিচার করতে যাওয়া এই আলোচনার উদ্দেশ্য নয়। একজন লেখক প্রায় পাঁচ দশক ধরে মায়াময় মোহাচ্ছন্ন লেখনীতে আবিষ্ট করে রেখেছেন কয়েকটি প্রজন্মকে। একা হাতে দাঁড় দিয়েছেন বাংলা প্রকাশনা শিল্পকে। এমন কৃতিত্ব পৃথিবীর ইতিহাসে কজন লেখকের আছে? তিনি যা-ই লিখতেন হুমড়ি খেয়ে পড়তেন পাঠকেরা। এমনকি মৃত্যুর বারো বছর পেরিয়ে গেলেও তার মোহ থেকে বের হতে পারেননি বাংলা ভাষার পাঠক। কী এমন মায়া, কী এমন জাদু তাঁর লেখায়? কেন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো টানতে পেরেছেন তিনি পাঠককে?

রোববার সন্ধ্যায় মেলা চত্বরে দাঁড়িয়ে একজন লেখক বলছিলেন—হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যের পাঠক তৈরি করতে পারেননি। তিনি নিজের পাঠক তৈরি করেছেন।

—হুম, আপনার কথা অনেকটাই সত্যি। কিন্তু এই যে নিজের অগুনতি পাঠক তিনি তৈরি করেছেন, কয়েকটি প্রজন্মকে পাঠমুখী করেছেন সেটার কোনো কৃতিত্ব দেবেন না? আমি তো এমন অনেককে চিনি, যারা হুমায়ূন পড়তে পড়তে নিবিষ্ট পাঠক হয়ে উঠেছেন। খুব শান্ত স্বরে বলি আমি!

—হুম, সেটা আপনি বলতে পারেন। কিন্তু তাঁর কারণে মানুষের পাঠের অভ্যাস একটা গণ্ডিতে আটক গেছে। এর বাইরে মানুষ আর কিছু পড়তে চায় না।

—সেটা তো ভাই হুমায়ূন আহমেদের দায় না। বরং অন্য সবার সম্মিলিত ব্যর্থতা।

—শোনেন, আপনাদের মতো অন্ধ ভক্তদের সঙ্গে আলাপ করে লাভ নেই।

কথাটা বলেই তিনি হাসতে থাকেন। হাসিতে যোগ দিই আমিও।

—আমি ভাই অন্ধ ভক্ত নই। আপনি যুক্তি দিয়ে বোঝালে আমি অবশ্যই মেনে নেব।

—থাক, এ নিয়ে আপনার সঙ্গে পরে আলাপ করব।

তিনি চলে যান তার পথে। আমিও হাঁটতে থাকি একা একা। মেলার ভিড় দেখি। মেলার মানুষ দেখি। মাথার মধ্যে তখনো ভর করে থাকেন হুমায়ূন আহমেদ।

হুমায়ূন আহমেদ গল্প বলতেন আমাদের চেনা পরিসরের। মধ্যবিত্তের নিত্য জীবন যাপনের টানাপোড়েনের। বোহিমিয়ান বাউন্ডুলে জীবন তাঁর লেখায় যেমন উঠে এসেছে, তেমনি তিনি গল্প বলেছেন তুখোড় যুক্তিবাদীর। আর এ কারণেই হয়তো হিমু মিসির আলি, জরি পরি রূপা শুভ্ররা সাহিত্যের কাল্পনিক চরিত্রের অবয়ব ছাপিয়ে পাঠকের কাছে হয়ে উঠেছেন রক্ত মাংসের জীবন্ত মানুষ। শুরুতে যে বলছিলাম জোছনা রাতে এখনো শাড়ি পরে ছাদে চলে যান কোনো বিষণ্ন তরুণী, কিংবা হিমুর মতো খালি পায়ে হাঁটতে বের হয়ে যান কোনো বোহিমিয়ান তরুণ—প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের এভাবে ভাবতে শিখিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ ছাড়া আর কে?

হুমায়ূন আহমেদ যেখানে হাত দিয়েছেন ফলেছে সোনা। স্যাটেলাইট যুগের আগে বিটিভির জন্য নাটক লিখলেন ‘এইসব দিনরাত্রি’। নাটকের ছোট্ট শিশুর চরিত্র টুনির ক্যানসারের খবর শুনে কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন দেশের হাজারো মানুষ। ‘বহুব্রীহি’ নাটকে পাখির মুখে তিনি বলালেন রাজাকার শব্দটি। অথচ স্বৈরশাসনের আমলে বিটিভিতে তখন নিষিদ্ধ এই শব্দ। আর ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের বাকের চরিত্রের জন্য দেশে এবং দেশের বাইরে কী তুলকালাম হয়েছে, সেটি আর নতুন করে বলার কিছু আছে? নাটকের একটি চরিত্রের ফাঁসি হচ্ছে, আর এই ফাঁসি বন্ধের জন্য দেশজুড়ে মিছিল হচ্ছে। বাংলাদেশ তো বটেই পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির আর কয়টা আছে। এরপর ‘আজ রবিবার’, ‘নক্ষত্রের রাত’ হয়ে ধারাবাহিকের তালিকাটা হয়তো খুব বেশি দীর্ঘ নয়। কিন্তু তিনি লিখেছেন পরিচালনা করেছেন আরও অনেক নাটক। যেগুলো এখনো ইউটিউবের ট্রেন্ডিং তালিকায় আছে বছরের পর বছর ধরে। বলা চলে বাংলা নাটকের ভাষা ও নির্মাণশৈলী একাই বদলে দিয়েছেন তিনি।

লেখক হুমায়ূন আহমেদ নাটকের পথে হেঁটে একসময় এলেন চলচ্চিত্রে। প্রথমে চলচ্চিত্রের স্ক্রিপ্ট লিখলেন। তারপর নিজেই এলেন পরিচালনায়। এখানেও জয়জয়কার। একসময় ওপার বাংলার লেখকদের বইয়ে বুঁদ হয়ে থাকা পাঠককে তিনি যেমন বাংলাদেশমুখী করেছেন, তেমনই হিন্দি সিরিয়াল আর সিনেমায় বুঁদ দর্শককে তিনি টেনে এনেছেন বিটিভিতে, দেশি স্যাটেলাইট চ্যানেলে কিংবা সিনেমা হলে।

এখনো বইমেলায় সবচেয়ে ভিড় সেসব প্রকাশনীতে যেগুলোতে হুমায়ূন আহমেদের বই আছে। কোনো বইয়ের দোকানে গেলেও তাঁর লেখা বইয়ের তাক ঘিরেই ভিড় চোখে পড়ে বেশি। সবচেয়ে বড় কথা হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর এত বছর পরেও বাংলা ফিকশনে তাঁকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি কেউ। এটা কি তবে অন্য লেখকদের সীমাবদ্ধতা? নিশ্চয় না। আদতে এটি হুমায়ূন আহমেদের আশ্চর্য জাদুকরী লেখার ক্ষমতা। আর সেই ক্ষমতাতেই তিনি এখনো অধীশ্বর হয়ে আছেন বাঙালি পাঠকের কাছে।

একজন মানুষকে প্রথমে পাঠক হয়ে উঠতে হয়। অর্থাৎ পাঠের অভ্যাস গড়ে উঠলে তারপর একজন পাঠক বাছবিচার করে পড়তে শেখেন। চিন্তার দরজা খুলতে থাকলে তিনি হয়ে ওঠেন প্রকৃত পাঠক। তাঁর সমালোচকদের কেউ কেউ বলেন—যেমনটা একটু আগে পরিচিত লেখক বলছিলেন—হুমায়ূন আহমেদ নিজের পাঠক করেছেন, বাংলা সাহিত্যের পাঠক তৈরি করতে পারেননি। এ ক্ষেত্রে তাঁর পক্ষে কলম ধরেন এমন মানুষেরা বলেন, নিজের পাঠক তৈরি করার মধ্য দিয়েই তিনি কয়েকটি প্রজন্মকে বইমুখী করেছেন। অন্য সব আলাপ বাদ দিয়ে শুধু পাঠক তৈরির দিকটি বিবেচনায় নিলেও বলা যায়—হুমায়ূন আহমেদ এখনো প্রাসঙ্গিক। বাঙালিকে পাঠমুখী এবং এখনকার বৈশ্বিক অস্থির সময়ে কোথাও দু-দণ্ড স্থির হয়ে বসে নতুন ভাবনায় মশগুল হতেও হুমায়ূন আহমেদ বড় বেশি প্রয়োজনীয়। চিন্তার শৃঙ্খল মুক্তির বড় অনুষঙ্গ এখনো হুমায়ূন আহমেদ।

সময় বাড়ছে। সন্ধ্যা পেরিয়েছে অনেকক্ষণ। হঠাৎ আনমনে আকাশের দিকে তাকাই। চাঁদহীন আকাশে ধূসর মেঘ। হুমায়ূন আহমেদ কি দেখছেন ওপর থেকে তাঁর ভক্ত পাঠকদের? যেখানে এখন তিনি থাকেন সেখান থেকে অনুভব করা যায় মর্ত্যলোকের আনন্দ বেদনা?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।

পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আমাদের অর্জন অনেক

সম্পাদকীয়
আমাদের অর্জন অনেক

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।

এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।

সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এবার অক্সফোর্ডের বর্ষসেরা শব্দ ‘রেজ বেইট’—এর অর্থ কী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ০৮
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়েছে।

অক্সফোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর ‘রেজ বেইট’ শব্দের ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম প্রভাবিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ও মুহূর্তের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ ও বিভাজন তৈরি করছে—যা মূলত এনগেজমেন্ট বাড়ানোর কৌশল।

‘রেজ বেইট’ সব সময় যে বিপজ্জনক হবে, এমন নয়। কখনো এটি হতে পারে অদ্ভুত কোনো রেসিপি বা এমন ভিডিও যেখানে কেউ নিজের পোষা প্রাণী বা পরিবারের সদস্যকে মজার ছলে বিরক্ত করছে। তবে রাজনীতি ও জনপরিসরেও এখন এটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কারণ প্ররোচিত ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার ঢেউ অনেক সময়ই রাজনৈতিক প্রচারণাকে আরও উসকে দেয়।

শুধু অক্সফোর্ড নয়, প্রায় সব বড় অভিধানই এবার ইন্টারনেট-সম্পর্কিত শব্দকেই ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এবার কলিন্স ডিকশনারির বেছে নেওয়া শব্দটি হলো ‘ভয়েস কোডিং’। যেখানে এআই ব্যবহার করে মানুষের ভাষাকে কম্পিউটার কোডে রূপান্তর করা হয়। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ ডিকশনারি বেছে নিয়েছে ‘প্যারাসোশ্যাল’ শব্দটি, যা অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে গড়ে ওঠা একতরফা সম্পর্ককে নির্দেশ করে।

গত বছর (২০২৪) অক্সফোর্ড বেছে নিয়েছিল ‘ব্রেইন রট’ শব্দটি, যা ছিল মূলত অবিরাম স্ক্রলিংয়ে মানসিক ক্লান্তির রূপকার্থ। অক্সফোর্ড ল্যাংগুয়েজেসের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্র্যাথওহলের মতে, ‘রেজ বেইট’ এবং ‘ব্রেন রট’—দুটি শব্দই দেখায় কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের চিন্তা ও আচরণকে বদলে দিচ্ছে। একটি প্ররোচিত রাগ বাড়ায়, অন্যটি সেই রাগের মধ্যেই মানুষকে আবিষ্ট রাখে।

এ বছর অক্সফোর্ড সাধারণ মানুষের ভোটে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করেছে। সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল আরও দুটি শব্দ—‘অরা ফার্মিং’ ও ‘বায়োহ্যাক’। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করার কৌশলকে বোঝাতে ‘অরা ফার্মিং’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়, আর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে জীবনযাপনে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘বায়োহ্যাক’।

শেষ পর্যন্ত ‘রেজ বেইট’ শব্দটিই জিতেছে—যে শব্দের মধ্য দিয়ে আজকের অনলাইন জীবনের রাগ, প্রতিক্রিয়া এবং ক্লান্তির বাস্তবতা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাষ্ট্রীয় সংস্কার করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেমস গারফিল্ড। ছবি: ব্রিটানিকা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেমস গারফিল্ড। ছবি: ব্রিটানিকা

উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান। সেই মর্মান্তিক ঘটনা, গারফিল্ডের জীবন ও তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে এবার নেটফ্লিক্স-এ আসছে চার পর্বের ড্রামা সিরিজ, ‘ডেথ বাই লাইটনিং’।

প্রেসিডেন্টের উত্থান ও প্রগতিশীল এজেন্ডা

১৮৮০ সালে আমেরিকা এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিল। সদ্য দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর আফ্রিকান-আমেরিকানরা কি নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার পাবেন? নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারি চাকরি বণ্টনের সেই দীর্ঘদিনের দুর্নীতিগ্রস্ত ‘পচে যাওয়ার ব্যবস্থা’ অব্যাহত থাকবে? রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে ওহাইও-এর জনপ্রিয় কংগ্রেসম্যান জেমস গারফিল্ড এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আহ্বান জানান। দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা, গৃহযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব দেখানো এই কমান্ডার নভেম্বরে দেশের ২০ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে গারফিল্ড উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল: মার্কিন নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ, লাতিন আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো এবং বিশেষত নাগরিক অধিকারের পক্ষে জোরালো সওয়াল করা। তিনি সাবেক ক্রীতদাস ফ্রেডরিক ডগলাসকে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার রেকর্ডার অব ডিডস পদে নিযুক্ত করেন। একজন আফ্রিকান-আমেরিকানের জন্য প্রথম সারির একটি কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার বিরল ঘটনা ছিল এটি।

হত্যার নেপথ্যে

১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসি-র রেলওয়ে স্টেশনে চার্লস এল. গুইটো নামক এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি গারফিল্ডকে গুলি করে। গুইটো তার জীবনকাল ধরে একজন ব্যর্থ আইনজীবী, সাংবাদিক, ধর্মপ্রচারক এবং ফ্রি লাভ কমিউনের সদস্য হিসেবে এক ব্যর্থ অ্যাকটিভিস্ট ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর তাকে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। গারফিল্ডের মনোনয়নের পর তিনি তাঁর সমর্থনের বিনিময়ে প্যারিসে গুরুত্বপূর্ণ কনস্যুলার পদ দাবি করে হোয়াইট হাউসে ধরনা করতেন। প্রেসিডেন্ট ‘প্যাট্রোনেজ সিস্টেম’-এর ঘোর বিরোধী হওয়ায় তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই গুইটো সিদ্ধান্ত নেন—গারফিল্ডকে হত্যা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থারকে ক্ষমতায় আনার ‘ঈশ্বর প্রদত্ত নির্দেশ’ তাঁর ওপর বর্তেছে।

আসল খুনি কে?

লেখক ক্যান্ডিস মিলার্ড তাঁর বেস্ট সেলিং বই ডেসটিনি অব দ্য রিপাবলিক-এ তুলে ধরেছেন, গারফিল্ডের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল চিকিৎসার চরম অব্যবস্থা। ড. উইলফ্রেড ব্লিস নামক দাম্ভিক চিকিৎসক গারফিল্ডের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি ব্রিটিশ সার্জন জোসেফ লিস্টার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক অ্যান্টিসেপটিক পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন। ব্লিস জীবাণুমুক্ত নয় এমন যন্ত্র এবং খালি হাত ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের মেরুদণ্ডের কাছে থাকা গুলিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এর ফলে সংক্রমণ (সেপসিস) ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, গুলি খুঁজতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত প্রারম্ভিক মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু ব্লিসের অসহযোগিতার কারণে সেটিও ব্যর্থ হয়। শট নেওয়ার প্রায় আশি দিন পর প্রেসিডেন্ট মারা যান এবং এই মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় ড. ব্লিসের ওপর বর্তায়।

রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও গারফিল্ডকে নিউইয়র্কের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর রোসকো কনকলিং-এর বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কনকলিং প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক ছিলেন এবং গারফিল্ডের প্রগতিশীল ভাবধারা পছন্দ করতেন না। মাকোভস্কি বিবিসিকে জানান, এই সিরিজের মূল আকর্ষণ হলো ইতিহাসের সেই ‘যদি’ প্রশ্নটি—যদি প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি হয়তো আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। মাকোভস্কির মতে, ‘গারফিল্ডের অসাধারণ মেধা ছিল। তাঁকে যে আজ ইতিহাসে একটি অস্পষ্ট পাদটীকা হিসেবে স্থান দেওয়া হয়, তা এক ট্র্যাজেডি।’

অভিনেতা মাইকেল শ্যানন গারফিল্ডের ‘ঐশ্বর্য ও মর্যাদা, বিশেষ করে তাঁর শালীনতা’ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক মিলার্ড।

গারফিল্ডের উত্তরাধিকার ও আইন সংস্কার

মাত্র ৪৯ বছর বয়সে গারফিল্ডের মৃত্যু পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দেয় এবং দেশজুড়ে সরকারি চাকরি সংস্কারের দাবি জোরালো হয়। জনগণের ক্ষোভের কারণেই ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থার, যিনি একসময় প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনিই ১৮৮৩ সালে ‘পেন্ডলটন অ্যাক্ট’-এ স্বাক্ষর করেন। এই আইনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ‘যোগ্যতা-ভিত্তিক’ নিয়োগের নীতি শুরু হয়, যা মার্কিন সরকারি আমলাতন্ত্রের পেশাদারি নিশ্চিত করার পথ দেখায়। এইভাবে, এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমেরিকার শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এক স্থায়ী প্রগতিশীল পরিবর্তন এনে দেয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত