Ajker Patrika

কাজী রোজী, কণ্ঠেই যিনি মুক্তিযোদ্ধা

আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪: ৫৫
কাজী রোজী, কণ্ঠেই যিনি মুক্তিযোদ্ধা

বাতাসে ভেজা মাটির চেনা গন্ধ। ভোরে বৃষ্টি হয়েছিল, তাই এমন ভেজা রূপে সেজেছে চারদিক। এমন দিনে বসে আড্ডাটা ভালোই জমে; তা যদি হয় কবিতা আর গানের, তবে তো কথাই নেই! আর বুকের ভেতর যদি জাগে একাত্তরের শিহরণ? সেদিন গান, কবিতা আর একাত্তরের আড্ডায় মনে হচ্ছিল এখনই রণক্ষেত্রে নেমে যাই, গুঁড়িয়ে দিই রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাদের! মনে হবে না কেন, সাহস আর প্রেরণা হয়ে যে সামনে ছিলেন কাজী রোজী স্বয়ং। তিনি কবি এবং আরও অনেক কিছু। বলছি ২০১৪ সালের জুন মাসের একদিনের কথা। সেদিন প্রথমবারের মতো কবির সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলাম। সাংবাদিকতার শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আমি। ক্লাস অ্যাসাইনমেন্টের জন্যই ছিল সেদিনের আয়োজন। 

আজ সেই দিনের কথা খুব মনে পড়ছে। না, বয়স ও বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ুষ্কাল বিচারে তাঁর চলে যাওয়াকে ‘অবেলায়’ শব্দ দিয়ে ঠিক বাঁধা যাবে না। তবে কিছু মানুষ তো থাকেন, যাঁদের প্রস্থান মাত্রই ‘অবেলার ডাক’ বলে মনে হয়। মন বিষণ্ন হয়ে যায়। আর কী আশ্চর্য, সেই প্রথম সাক্ষাতের মতো তাঁর এই চলে যাওয়া দিনও কেমন মেদুর হয়ে আছে বৃষ্টির ছাঁটে। বসন্তের এই বৃষ্টি প্রস্তুতিহীন তো বটেই। তবু প্রশ্ন জাগে, এ কী কবি কাজী রোজীর প্রস্থানকে বিশেষ করে তুলতে প্রকৃতির কোনো আয়োজনও? সে যা-ই হোক, তাঁর প্রস্থান ও প্রথম সাক্ষাতের সঙ্গে এই সময়ের এমন মিলে যাওয়া—মনকে কেমন বিষাদে ভরিয়ে দেয়। সে বিষাদে ডুব দিয়ে মনে মনে খুঁড়ে চলি স্মৃতির প্রান্তর। 

সেদিন সকালে ভেজা প্রকৃতির রূপ দেখতে দেখতে উপস্থিত হয়েছিলাম কাজী রোজীর ধানমন্ডির বাসায়। দেখে চিনতে পারলেন না। না চেনারই কথা। আগে কোনো দিন পরিচয় হয়নি তো! পরিচয় দিতেই খুশি হয়ে বললেন, ‘জানো, তোমাদের বয়সী ছেলেমেয়েদের সঙ্গে গল্প করতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মনে হয় আমিও সেই তরুণ বয়সে আছি।’ 

মানুষটাকে দেখেই বোঝা যায় যে কত ঝড়-তুফানের মোকাবিলা করে কত কঠিন একটা ব্যক্তিত্ব নিজের মধ্যে ধারণ করেছেন। অথচ হৃদয়টা যেন একদম শিশুর মতো। অল্প সময়ের মধ্যেই এমনভাবে আপন করে নিয়েছিলেন, যেন আমি তাঁর কত দিনের চেনা বন্ধু। এর মধ্যে কিছুটা মান-অভিমানের পর্বও সেরে নিয়েছিলেন। কেননা তাঁর পরিবেশন করা নাশতা খেতে দেরি করছিলাম! 

যা হোক, গল্প শুরু করেছিলেন তাঁর জীবনের কঠোর সংগ্রাম দিয়ে। ‘জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ খেতে পারিনি, সেই থেকে আমার সংগ্রাম শুরু। আমি একাত্তরে সংগ্রাম করেছি, যুদ্ধ করেছি। কিন্তু অস্ত্র হাতে নিয়ে নয়। এ নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ আছে। তবে আমি ছিলাম শব্দসৈনিক। স্বাধীন বাংলা বেতারে আবৃত্তি করতাম। বেলাল মাহমুদের হাত ধরেই সেখানে যাওয়া। কিছু গান, কবিতা আর নাটকও লিখেছি।’ 

এভাবে নতুন করে নিজের পরিচয় দিয়ে চলে গিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ভয়াল স্মৃতিতে—‘যুদ্ধ শুরুর আগের কিছু কথা বলে নিই। আমরা থাকতাম মিরপুরে। আমার প্রতিবেশী ও বন্ধু ছিল মেহেরুন্নেসা। মিরপুরে ছিল বিহারিদের আস্তানা। সেখানে উর্দুভাষী অবাঙালিরা বাস করত। তারা বাঙালিদের ওপর অত্যাচার করত। কারও ডিমের খাঁচা ভেঙে ফেলত, কারও পান-সিগারেটের দোকান ভেঙে ফেলত, এমনকি শিশু ও মেয়েদেরও ধরে নিয়ে যেত। আমার চোখের সামনেই ঘটত এসব ঘটনা। আগে ভেবেছিলাম এদের সঙ্গে মিলেমিশে বাস করব। কিন্তু না, পরে চিন্তা করলাম এদের সঙ্গে ঠিকভাবে বসবাস হবে না। কারণ, আমরা বাঙালি, বাংলায় কথা বলি। আর ওদের ভাষা উর্দু। তখন আমরা কয়েকজন তরুণ এসবের প্রতিবাদ করতাম। আমাদের সঙ্গে বন্ধু মেহেরুন্নেসাও ছিল।’ 

সেসব স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতেই চলে এলেন অবধারিত সেই কালরাতে, যেখানে তাঁর প্রজন্মের সবাইকেই অন্তত একবার দাঁড়াতে হয় চুপচাপ, থমকে যেতে হয়, টানতে হয় দীর্ঘশ্বাস। বলতে থাকলেন, ‘২৫ মার্চ বিকেলে খবর পেলাম আমার বাসায় হামলা হবে। আমাকে মেরে ফেলা হবে। তখনো জানি না সেই রাত হতে চলেছে ভয়ংকর কালরাত। এর আগেও আমাকে বিহারিরা হত্যা করতে এসেছিল। কিন্তু পারেনি। আমাদের এক মামা ছিলেন। পাড়ার সবাই তাঁকে শহীদ মামা ডাকত। সেই শহীদ মামা আমাকে সেদিন বাঁচিয়েছিলেন। নইলে এই কাজী রোজীকে তোমরা দেখতে পেতে না।’ 

বিপদ টের পেয়ে রোজী চলে যান কলাবাগানে। বন্ধু মেহেরুন্নেসাকেও অন্য কোথাও চলে যেতে বলেছিলেন। তিনি শোনেননি। রোজী বলছেন, ‘মেহেরকেও বলেছিলাম যে এখান (মিরপুর) থেকে অন্য কোথাও চলে যাও। কিন্তু ও বলেছিল, “কোথায় যাব, আমার তো পরিবার ছেড়ে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ” সেদিন আমি চলে গিয়েছিলাম কলাবাগানে আমার খালার বাসায়। এর দুদিন পর ২৭ মার্চ খবর পাই মেহেরুন্নেসাকে সপরিবারে কাদের মোল্লার নির্দেশে পাকিস্তানের দোসররা জবাই করে হত্যা করেছে। আমি ওঁকে বাঁচাতে পারলাম না।’ 

কবি বন্ধু মেহেরুন্নেসার কথা বলতে বলতে কাজী রোজীর বুক থেকে বেরিয়ে আসে অবধারিত দীর্ঘশ্বাস। পরক্ষণেই চোখে মুখে সতেজ হয়ে উঠলেন। বললেন, ‘আমি কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে সংগ্রাম করেছি। আমি সাক্ষ্য দিয়েছি। আমি কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি। ২০১১ সালে ট্রাইব্যুনালে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে বলেছি আমি এ কথা। ওরা বারবার বলেছে, আপনি তো দেখেননি। আর আমি বারবার বলেছি, হ্যাঁ আমি দেখিনি, শুনেছি। কিন্তু আমি জানি কাদের মোল্লা কী করতে পারে।’ 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার পর যখন ২০১২ সালে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়, তখন বেশ হতাশ হয়েছিলেন। কিন্তু আশা ছাড়েননি কখনো। এ নিয়ে বলছিলেন, ‘সব টেলিভিশন চ্যানেল আর পত্রিকা আমার প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল। আমি বলেছি, এই রায় আমার নয়, জনগণের নয়, দেশের নয়। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি আপিল হবে, রায় হবে। ঠিকই আপিল হয়েছে, ফাঁসির রায় হয়েছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লৌহমানবের মতো সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন বলেই এই রায় কার্যকর হয়েছে।’ বলেই একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিয়েছিলেন, যেন কত বছরের ঋণ বহু কষ্টে শোধ করতে পারলেন। তার পর একটা প্রশান্তির হাসি হাসলেন। 

কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে অনেক হুমকির সম্মুখীন হতে হয়েছে কাজী রোজীকে। কিন্তু তিনি কোনো কিছুরই পরোয়া করেননি। এমনকি সরকারের কাছ থেকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও নিতে চাননি। 

২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদপ্তর থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে অবসর গ্রহণের পর আবার ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে সংসদের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে যোগ দেন। অভিভূত কবি রোজী জানিয়েছিলেন, ‘আমি সংসদে যেতে পেরে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’ সংসদে তিনি বাজেট নিয়ে নিজের লেখা কবিতাও আবৃত্তি করেছেন। বললেন, প্রধানমন্ত্রী নাকি আবদার করেছেন তাঁর কাছে, সব সময় যেন তিনি কবিতা লিখে যান। 

বয়সী কিন্তু তারুণ্যদীপ্ত প্রাণোচ্ছল এই মানুষটিকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, তিনি তখন ২১ বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে ছিলেন। তাঁর ভাষায় বলি, ‘আমাকে দেখলে কি মনে হয় আমার ক্যানসার? আমি তো দিব্যি ভালো আছি।’ এভাবে ভালো থাকতে কেমন করে মানসিক শক্তি পাওয়া যায়, তা জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে সব সময়। একা একা খারাপ লাগলে দৌড়ে পাশের বাড়িতে চলে যাবে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে গল্প করবে। এর চেয়ে আর বড় ওষুধ নাই।’ তিনিও নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন সাহিত্যে আর সংসদে, কখনো প্রতিবন্ধীদের মাঝে, আবার কখনো আদিবাসীদের সঙ্গে। এটাই ছিল তাঁর ক্যানসারের বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার প্রেরণা। 

আর কবি পরিচয়, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে কণ্ঠে শাণিত শব্দ নিয়ে যে যুদ্ধ, তার কথা এ সবের উল্লেখ এখন তো বাতুলতা। স্বাধীন বাংলা বেতারে কবিতা আবৃত্তি করে কত শত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষদের সাহস জুগিয়েছেন তিনি! লিখেছেন গান, কবিতা, নাটক, আর জীবনী। কত যে লিখেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘পথ ঘাট মানুষের নাম’, ‘নষ্ট জোয়ার’, ‘ভালোবাসার কবিতা’, ‘প্রেমের কবিতা’, ‘মানুষের গল্প’, ‘খানিকটা গল্প তোমার’, ‘আমার পিরানের কোন মাপ নেই’, ‘লড়াই’, ‘শহীদ কবি মেহেরুন্নেসা’ ইত্যাদি। পেয়েছেন বহু সম্মাননা। আর ভালোবাসা, ভালোবাসা। সে ভালোবাসার জোরেই পাকিস্তানের দোসরদের শাস্তির দাবিতে সংগ্রাম করেছেন বহুদিন। বন্ধু কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যার দায়ে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক বছর কাজ করেছেন প্রতিবন্ধীদের নিয়ে। যুক্ত ছিলেন ডিজেবল রাইটস গ্রুপ, সাবা, লারা, জাতীয় কবিতা পরিষদের সঙ্গে। বহু বছর কাজ করেছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিবাসীদের নিয়েও। 

সেদিনের আলাপে তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘স্বপ্নের পথে বাধা আসবেই, হোঁচট খাবেই। কিন্তু কখনো মুখ থুবড়ে পড়ে যেও না। কোনো পথই সরল নয়। পথে কাঁটা থাকবেই। সেই কাঁটা সরিয়ে সরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’ এ যেন নিজের চলার পথেরই এক সারসংক্ষেপ তুলে ধরলেন তিনি মাত্র কয়েকটি শব্দে। মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম এই মহিরুহের বচন-বুলি। আরও মুগ্ধ হয়ে গেলাম যখন আড্ডার শেষ মুহূর্তে এসে স্বাধীন বাংলা বেতারের এই শব্দ সৈনিকের ভরাট কণ্ঠে শুনছিলাম প্রতিবন্ধীদের নিয়ে লেখা নিজের একটি কবিতা। এখনো কানে বাজছে শেষ তিনটি বাক্য—
 ‘আমি: বাবা, রঙের শরীরে আলাদা গন্ধ থাকে। সে তো মানুষের চেয়ে কঠিন নয়! 
বাবা: তুই ঠিক বলেছিস-মানুষ ভয়াবহ কঠিন। 
আমি: আমি কঠিনেরে ভালোবাসিলাম বাবা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রানি ভিক্টোরিয়া যেভাবে ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ হয়ে উঠেছিলেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ০১
ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!

তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।

রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।

ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।

এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।

১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।

এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।

চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?

রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।

মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।

ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।

এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!

তথ্যসূত্র: টাইম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চালু হলো ৫০ হাজার পাউন্ডের চিলড্রেনস বুকার, বিচারক হবে শিশুরাও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৪৫
সেরা শিশু কথাসাহিত্যিক পাবেন ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা)। ছবি: বিবিসি
সেরা শিশু কথাসাহিত্যিক পাবেন ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা)। ছবি: বিবিসি

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।

বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।

বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।

কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’

শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।

ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।

প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।

শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।

বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।

একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’

বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।

বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’

বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ছায়ানীড়

সম্পাদকীয়
ছায়ানীড়

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।

তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।

ছবি: ওমর ফারুক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকাবাসীর দেশবন্ধু

সম্পাদকীয়
ঢাকাবাসীর দেশবন্ধু

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।

সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

তিন ঘণ্টা পর আংশিক চালু মেট্রোরেল

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত