মারুফ ইসলাম
ক্রিস্টিনা ক্যালডেরনের বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। ১৭ ফেব্রুয়ারি মারা গেছেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শুধু এক বর্ষীয়সী নারীরই মৃত্যু হয়নি, মৃত্যু হয়েছে একটি ভাষারও। ভাষাটির নাম ‘ইয়ামানা’।
দক্ষিণ আমেরিকার এই নারী কথা বলতেন প্রাচীন ইয়াগন সম্প্রদায়ের ভাষায়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ক্রিস্টিনাই ছিলেন এই পৃথিবীর সর্বশেষ ব্যক্তি, যিনি ইয়ামানা ভাষায় কথা বলতে পারতেন। ইয়াগন সম্প্রদায়ের আরও অনেক মানুষ রয়েছেন বিশ্বে, কিন্তু কেউ এখন ইয়ামানা ভাষায় কথা বলেন না।
এভাবে মৃত্যু হচ্ছে অনেক ভাষার। এরই মধ্যে কালের গর্ভে ভেসে গেছে কত ভাষা, তার খবর কি আমরা জানি?
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো প্রতিবছর ভাষা নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করে থাকে। ইউনেসকো বলছে, ইতিমধ্যে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে কত ভাষা, তার সঠিক হিসাব তাদের জানা নেই। ভাষাবিদেরা বিভিন্ন অঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া ভাষা গণনা করেছেন। তাঁদের মতে, ইউরোপ ও এশিয়া অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অন্তত ৭৫টি ভাষা। যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চল থেকে গত ৫০০ বছরে কমপক্ষে ১১৫টি ভাষা হারিয়ে গেছে। অথচ কলম্বাসের সময়ে ওই অঞ্চলে ভাষা ছিল ১৮০টি।
নিউইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কোয়ার্টাজের এক প্রতিবেদন বলছে, ১৯৫০ সালের পর আফ্রিকা অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ৩৭টি ভাষা। আর এই সময়ের মধ্যে সারা পৃথিবী থেকেই হারিয়ে গেছে ২৩০টি ভাষা।
সম্প্রতি বিলুপ্ত হয়েছে এমন কিছু ভাষার তালিকা দিয়েছে ইউনেসকো। সেই তালিকায় রয়েছে ‘আক্কালা সামি’, ‘আসেক্স’, ‘উবাই’ ও ’ইয়াক’।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, আক্কালা সামি রাশিয়া অঞ্চলের ভাষা। এই ভাষায় কথা বলা শেষ মানুষটি মারা গেছেন ২০০৩ সালে। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে আক্কালা সামি। তানজানিয়ার ভাষা আসেক্স বিলুপ্ত হয়েছে ১৯৭৬ সালে। উবাই তুরস্কের আশপাশের অঞ্চলের একটি ভাষা। এই ভাষায় কথা বলতে পারতেন একমাত্র তেফভিক ইসেংক নামের এক ব্যক্তি। তিনি ১৯৯২ সালে মারা যান। তারপর থেকে উবাই ভাষায় কথা বলার মতো একজন মানুষকেও পাওয়া যায়নি। এ রকম আরেক ব্যক্তির নাম মারিয়ে স্মিথ জোনস। তিনি বাস করতেন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায়। মারিয়ে ছিলেন ইয়াক ভাষায় কথা বলা শেষ ব্যক্তি। তিনি ২০০৮ সালে মারা গেলে তাঁর সঙ্গে ‘মারা’ যায় ইয়াক ভাষাও।
একটি ভাষার মৃত্যু মানে তার সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক কিছুর মৃত্যু। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সংস্কৃতি, প্রথা, আচরণ ইত্যাদিও মরে যায় তখন, ভেসে যায় কালের স্রোতে।
ভাষাবিদেরা বলেন, কোনো ভাষা এক দিনে মরে না। একটু একটু করে মৃত্যু হয় ভাষার। যেসব ভাষা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে, তাদের বলা হয় বিলুপ্তপ্রায় ভাষা। পৃথিবীতে এখন বিলুপ্তপ্রায় ভাষার সংখ্যা অনেক।
গত বছরের ১৬ ডিসেম্বরে নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভল্যুশন সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে প্রায় দেড় হাজার ভাষা। এই ভাষাগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায় অবস্থায় আছে।
কোন কোন অঞ্চলের ভাষা সেগুলো? ভাষাবিজ্ঞানীরা বলছেন, এশিয়া অঞ্চলে অন্তত ৮টি ভাষা বিলুপ্তপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। এই ভাষাগুলো হচ্ছে সারিকলি, সেজ, আইনু, নাইকান উপিক, হিজল, সোয়াচ, কুসুন্দা ও মেডনেস আলেয়ুত।
এশিয়ান জিয়োগ্রাফিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ব তাজিকিস্তানের ভাষা ‘সারিকলি’। এ ভাষায় এখনো ১৬ হাজার মানুষ কথা বলেন। আর রাশিয়ার সুন্তা অঞ্চলের মুসলিম নৃগোষ্ঠীদের ভাষা ‘সেজ’। এ ভাষায় এখন কথা বলেন ১৫ হাজার ১৫৪ জন মানুষ। আইনু ভাষায় কথা বলেন কতজন মানুষ, জানেন কি? জাপানের হোক্কাইদু অঞ্চলের মাত্র ১০০ জন মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এই এক শ মানুষের মৃত্যু হলেই হারিয়ে যাবে ভাষাটি।
ওদিকে ‘নাইকান উপিক’ ভাষায় কথা বলা মানুষদের দেখা যায় সাইবেরিয়ান অঞ্চলের চুকসি পেনিনসুলায়। এই ভাষার মানুষের সংখ্যা মাত্র ৭০০। ককেশিয়ায় মাত্র ৫০ থেকে ৬০ জন আদিবাসী মানুষ আছে, যারা হিজল ভাষায় কথা বলে। কম্বোডিয়ার সামরং লয়েউ গ্রামে মাত্র ১০ জন মানুষ বাস করে, যারা ‘সোয়াচ’ ভাষায় কথা বলে। নেপালের গান্দুক গ্রামে কুসুন্দা আদিবাসীদের মধ্যে মাত্র আটজন ব্যক্তি কুসুন্দা ভাষায় কথা বলে। রাশিয়ার বেরিং আইল্যান্ডের মাত্র পাঁচজন ব্যক্তি মেডনেস আলেয়ুত ভাষায় কথা বলে। এই মুষ্টিমেয় মানুষগুলোর মৃত্যু হলে কী হবে এসব ভাষার? স্রেফ চিরতরে হারিয়ে যাবে।
আচ্ছা, আফ্রিকা অঞ্চলের ভাষার খবর কী? এ অঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় ভাষা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম কোয়ার্টাজ। সেই প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সুদানের ৬৫টি, ক্যামেরুনের ৩৬টি, নাইজেরিয়ার ২৯টি, চাদের ২৯টি, ইথিওপিয়ার ২৮টি, সেনেগালের ১৫টি, কেনিয়ার ১৩টি, তানজানিয়ার ১২টি ও দক্ষিণ আফ্রিকার ১০টি ভাষা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্রপূর্ণ ভাষাভাষীর অঞ্চল বলা হয় উত্তর আমেরিকাকে। স্টোরি ম্যাপসের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, এ অঞ্চলের দেশগুলোতে কমপক্ষে ৪০০ ভাষায় কথা বলা মানবসন্তান আছে। এই ৪০০ ভাষার মধ্যে অর্ধেক ভাষাই বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে বলে জানিয়েছে উত্তর আমেরিকার এনডেঞ্জার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ প্রজেক্ট। এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, যদি ভাষাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করার উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে অচিরেই এ অঞ্চল থেকে ঐতিহ্যবাহী দুই শ ভাষা হারিয়ে যাবে।
শুধু বিদেশি ভাষাই বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে এমন নয়। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশের কিছু ভাষাও। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ২০১৮ সালে ভাষা নিয়ে একটি গবেষণা করেছিল। সেই গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রচলিত ১৪টি ভাষা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাষাগুলো হচ্ছে কুন্দ, খারিয়া, কোদা, সৌরা, মুন্দারি, কোল, মাল্টো, খুমি, পাংখুয়া, রেঙ্গমিচা, চাক, খায়াং, লুসি ও লালেং। এসব ভাষাভাষী মানুষেরা প্রধানত দেশের উত্তরাঞ্চলে, সিলেট অঞ্চলে এবং চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করে। তারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে ৪১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রয়েছে, যারা নিজস্ব ভাষায় কথা বলে। তারা জনসংখ্যার দিক থেকে খুব বেশি নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংখ্যা হাজারের ঘর পার হবে না।
হারিয়ে যাওয়া এবং হারাতে বসা এসব ভাষার পরিণতিই বলে দিচ্ছে, ভাষারও যত্ন নিতে হয়। না হলে বাঁচে না। ফি বছর ভাষা দিবস আসে আর যায়, কিন্তু ভাষার আর্তনাদ কারও কানে পৌঁছায় কি? একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তুর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বিশ্বের অনেক দেশেই এ দিবস ঘটা করে পালিত হয়। কিন্তু ভাষার ভেসে যাওয়া ঠেকাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ আজ অব্দি কোনো দেশ নিতে পেরেছে কি? বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে বোধ হয়।
ক্রিস্টিনা ক্যালডেরনের বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। ১৭ ফেব্রুয়ারি মারা গেছেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শুধু এক বর্ষীয়সী নারীরই মৃত্যু হয়নি, মৃত্যু হয়েছে একটি ভাষারও। ভাষাটির নাম ‘ইয়ামানা’।
দক্ষিণ আমেরিকার এই নারী কথা বলতেন প্রাচীন ইয়াগন সম্প্রদায়ের ভাষায়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ক্রিস্টিনাই ছিলেন এই পৃথিবীর সর্বশেষ ব্যক্তি, যিনি ইয়ামানা ভাষায় কথা বলতে পারতেন। ইয়াগন সম্প্রদায়ের আরও অনেক মানুষ রয়েছেন বিশ্বে, কিন্তু কেউ এখন ইয়ামানা ভাষায় কথা বলেন না।
এভাবে মৃত্যু হচ্ছে অনেক ভাষার। এরই মধ্যে কালের গর্ভে ভেসে গেছে কত ভাষা, তার খবর কি আমরা জানি?
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো প্রতিবছর ভাষা নিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করে থাকে। ইউনেসকো বলছে, ইতিমধ্যে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে কত ভাষা, তার সঠিক হিসাব তাদের জানা নেই। ভাষাবিদেরা বিভিন্ন অঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া ভাষা গণনা করেছেন। তাঁদের মতে, ইউরোপ ও এশিয়া অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অন্তত ৭৫টি ভাষা। যুক্তরাষ্ট্র অঞ্চল থেকে গত ৫০০ বছরে কমপক্ষে ১১৫টি ভাষা হারিয়ে গেছে। অথচ কলম্বাসের সময়ে ওই অঞ্চলে ভাষা ছিল ১৮০টি।
নিউইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কোয়ার্টাজের এক প্রতিবেদন বলছে, ১৯৫০ সালের পর আফ্রিকা অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ৩৭টি ভাষা। আর এই সময়ের মধ্যে সারা পৃথিবী থেকেই হারিয়ে গেছে ২৩০টি ভাষা।
সম্প্রতি বিলুপ্ত হয়েছে এমন কিছু ভাষার তালিকা দিয়েছে ইউনেসকো। সেই তালিকায় রয়েছে ‘আক্কালা সামি’, ‘আসেক্স’, ‘উবাই’ ও ’ইয়াক’।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, আক্কালা সামি রাশিয়া অঞ্চলের ভাষা। এই ভাষায় কথা বলা শেষ মানুষটি মারা গেছেন ২০০৩ সালে। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিলুপ্ত হয়ে গেছে আক্কালা সামি। তানজানিয়ার ভাষা আসেক্স বিলুপ্ত হয়েছে ১৯৭৬ সালে। উবাই তুরস্কের আশপাশের অঞ্চলের একটি ভাষা। এই ভাষায় কথা বলতে পারতেন একমাত্র তেফভিক ইসেংক নামের এক ব্যক্তি। তিনি ১৯৯২ সালে মারা যান। তারপর থেকে উবাই ভাষায় কথা বলার মতো একজন মানুষকেও পাওয়া যায়নি। এ রকম আরেক ব্যক্তির নাম মারিয়ে স্মিথ জোনস। তিনি বাস করতেন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায়। মারিয়ে ছিলেন ইয়াক ভাষায় কথা বলা শেষ ব্যক্তি। তিনি ২০০৮ সালে মারা গেলে তাঁর সঙ্গে ‘মারা’ যায় ইয়াক ভাষাও।
একটি ভাষার মৃত্যু মানে তার সঙ্গে সঙ্গে আরও অনেক কিছুর মৃত্যু। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সংস্কৃতি, প্রথা, আচরণ ইত্যাদিও মরে যায় তখন, ভেসে যায় কালের স্রোতে।
ভাষাবিদেরা বলেন, কোনো ভাষা এক দিনে মরে না। একটু একটু করে মৃত্যু হয় ভাষার। যেসব ভাষা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে, তাদের বলা হয় বিলুপ্তপ্রায় ভাষা। পৃথিবীতে এখন বিলুপ্তপ্রায় ভাষার সংখ্যা অনেক।
গত বছরের ১৬ ডিসেম্বরে নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভল্যুশন সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে প্রায় দেড় হাজার ভাষা। এই ভাষাগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায় অবস্থায় আছে।
কোন কোন অঞ্চলের ভাষা সেগুলো? ভাষাবিজ্ঞানীরা বলছেন, এশিয়া অঞ্চলে অন্তত ৮টি ভাষা বিলুপ্তপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। এই ভাষাগুলো হচ্ছে সারিকলি, সেজ, আইনু, নাইকান উপিক, হিজল, সোয়াচ, কুসুন্দা ও মেডনেস আলেয়ুত।
এশিয়ান জিয়োগ্রাফিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ব তাজিকিস্তানের ভাষা ‘সারিকলি’। এ ভাষায় এখনো ১৬ হাজার মানুষ কথা বলেন। আর রাশিয়ার সুন্তা অঞ্চলের মুসলিম নৃগোষ্ঠীদের ভাষা ‘সেজ’। এ ভাষায় এখন কথা বলেন ১৫ হাজার ১৫৪ জন মানুষ। আইনু ভাষায় কথা বলেন কতজন মানুষ, জানেন কি? জাপানের হোক্কাইদু অঞ্চলের মাত্র ১০০ জন মানুষ এ ভাষায় কথা বলেন। এই এক শ মানুষের মৃত্যু হলেই হারিয়ে যাবে ভাষাটি।
ওদিকে ‘নাইকান উপিক’ ভাষায় কথা বলা মানুষদের দেখা যায় সাইবেরিয়ান অঞ্চলের চুকসি পেনিনসুলায়। এই ভাষার মানুষের সংখ্যা মাত্র ৭০০। ককেশিয়ায় মাত্র ৫০ থেকে ৬০ জন আদিবাসী মানুষ আছে, যারা হিজল ভাষায় কথা বলে। কম্বোডিয়ার সামরং লয়েউ গ্রামে মাত্র ১০ জন মানুষ বাস করে, যারা ‘সোয়াচ’ ভাষায় কথা বলে। নেপালের গান্দুক গ্রামে কুসুন্দা আদিবাসীদের মধ্যে মাত্র আটজন ব্যক্তি কুসুন্দা ভাষায় কথা বলে। রাশিয়ার বেরিং আইল্যান্ডের মাত্র পাঁচজন ব্যক্তি মেডনেস আলেয়ুত ভাষায় কথা বলে। এই মুষ্টিমেয় মানুষগুলোর মৃত্যু হলে কী হবে এসব ভাষার? স্রেফ চিরতরে হারিয়ে যাবে।
আচ্ছা, আফ্রিকা অঞ্চলের ভাষার খবর কী? এ অঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় ভাষা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম কোয়ার্টাজ। সেই প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সুদানের ৬৫টি, ক্যামেরুনের ৩৬টি, নাইজেরিয়ার ২৯টি, চাদের ২৯টি, ইথিওপিয়ার ২৮টি, সেনেগালের ১৫টি, কেনিয়ার ১৩টি, তানজানিয়ার ১২টি ও দক্ষিণ আফ্রিকার ১০টি ভাষা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে।
পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্রপূর্ণ ভাষাভাষীর অঞ্চল বলা হয় উত্তর আমেরিকাকে। স্টোরি ম্যাপসের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, এ অঞ্চলের দেশগুলোতে কমপক্ষে ৪০০ ভাষায় কথা বলা মানবসন্তান আছে। এই ৪০০ ভাষার মধ্যে অর্ধেক ভাষাই বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে বলে জানিয়েছে উত্তর আমেরিকার এনডেঞ্জার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ প্রজেক্ট। এই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, যদি ভাষাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করার উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে অচিরেই এ অঞ্চল থেকে ঐতিহ্যবাহী দুই শ ভাষা হারিয়ে যাবে।
শুধু বিদেশি ভাষাই বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে এমন নয়। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশের কিছু ভাষাও। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ২০১৮ সালে ভাষা নিয়ে একটি গবেষণা করেছিল। সেই গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রচলিত ১৪টি ভাষা বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাষাগুলো হচ্ছে কুন্দ, খারিয়া, কোদা, সৌরা, মুন্দারি, কোল, মাল্টো, খুমি, পাংখুয়া, রেঙ্গমিচা, চাক, খায়াং, লুসি ও লালেং। এসব ভাষাভাষী মানুষেরা প্রধানত দেশের উত্তরাঞ্চলে, সিলেট অঞ্চলে এবং চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করে। তারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে ৪১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রয়েছে, যারা নিজস্ব ভাষায় কথা বলে। তারা জনসংখ্যার দিক থেকে খুব বেশি নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংখ্যা হাজারের ঘর পার হবে না।
হারিয়ে যাওয়া এবং হারাতে বসা এসব ভাষার পরিণতিই বলে দিচ্ছে, ভাষারও যত্ন নিতে হয়। না হলে বাঁচে না। ফি বছর ভাষা দিবস আসে আর যায়, কিন্তু ভাষার আর্তনাদ কারও কানে পৌঁছায় কি? একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তুর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বিশ্বের অনেক দেশেই এ দিবস ঘটা করে পালিত হয়। কিন্তু ভাষার ভেসে যাওয়া ঠেকাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ আজ অব্দি কোনো দেশ নিতে পেরেছে কি? বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে বোধ হয়।
১৯৫২ সাল। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ২৬ জানুয়ারি পল্টনের এক জনসভায় চার বছর আগে জিন্নাহর দেওয়া ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করলেন, ‘কেবল উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।’ ৩ ফেব্রুয়ারি আবারও তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে ‘জিন্নাহর নীতিতে বিশ্বাসী’ বলে দাবি করলেন।
৫ ঘণ্টা আগে... স্কুলে থাকতেই, দীপা দত্তের বাবা সুধাংশু বিমল দত্ত আমাদের এলাকার কমিউনিস্ট এমপি ছিলেন। ওখানে ভাষা আন্দোলনের ধাক্কাটা তীব্রভাবে লাগলো। ভাষা আন্দোলনের একজন নেতা হলেন প্রিন্সিপাল কাশেম।... তারপরে ধরো এই কমিউনিস্ট আন্দোলন, আমাদের ওখানে তখন বড় বড় নেতা যেমন আহসাব উদ্দীন সাহেব, ওখানে মিটিং করতে আসতেন।
১ দিন আগে...রাজনৈতিক বিশ্বাসকে যদি কবিতায় উত্তীর্ণ করা যায়, তাহলে সেটা কবিতা থাকবে, কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্বাসকে যদি স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করা হয় কবিতায়, তাহলে সেটা আর কবিতা থাকবে না। কিন্তু উচ্চকণ্ঠ হলে যে কবিতা হবে না, আমি সেটা বিশ্বাস করি না। নেরুদা যথেষ্ট উচ্চকণ্ঠ রাজনৈতিক কবিতা লিখেছেন এবং সেগুলো যথেষ্ট..
৮ দিন আগেভ্যান গঘ হচ্ছেন সেই শিল্পী, যিনি জীবদ্দশায় তাঁর কীর্তির জন্য বাহবা পাননি। তাঁর আঁকা ছবি পেয়েছে শুধু তাচ্ছিল্য। ভ্যান গঘ বড় শিল্পী হিসেবে স্বীকৃত হন মরণের পর। একটা অসুখ ছিল তাঁর। মানসিক অসুখ। সেই অসুখ তাঁকে স্বস্তি দেয়নি।
১৪ দিন আগে