Ajker Patrika

আলাউদ্দিন খাঁ

সম্পাদকীয়
আলাউদ্দিন খাঁ

আলাউদ্দিন খাঁকে পাগল করেছিল সুর। সুরের সঙ্গেই যেন তাঁর সব আলাপ-পরিচয়। আর কিছুই সুরের চেয়ে বড় নয়। ত্রিপুরার রাজা বীরচন্দ্রমাণিক্যের দরবারে বসত সংগীতের মেলা। কাশিম আলি খান, যদু ভট্ট, হায়দার খাঁ তো ছিলেনই, রাজা নিজেও ছিলেন উচ্চাঙ্গসংগীতশিল্পী। আলাউদ্দিন খাঁর বাবা সাধু খান সেই সুরে রাঙিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে। তিনিই কাশিম আলি খানের কাছে নিয়েছিলেন সেতারের তালিম। আর সেই তালিমের পথ বেয়েই জন্ম নিল এক আশ্চর্য ঘরানার। ত্রিপুরার শিবপুরে ছিল এক শিবের মন্দির।

মন্দিরটি সন্ন্যাসীদের ভজন-পূজনে জুড়ে থাকত সংগীত। আলাউদ্দিন খাঁ যে পথে স্কুলে যেতেন, সেই পথেই ছিল মন্দিরটি। স্কুলে না গিয়ে মন্দিরের সংগীতে তন্ময় হতেন শিশু আলাউদ্দিন খাঁ। মা সে কথা জানতে পারলে জুটত উত্তমমধ্যম। বছর দশেক বয়সে একদিন রাতে মা যখন ঘুমিয়ে, তখন মায়ের আঁচল থেকে চাবি নিয়ে খুললেন তোরঙ্গ। ১০-১২ টাকা যা পেলেন নিয়ে নিলেন। তারপর মাকে প্রণাম এবং নিরুদ্দেশ যাত্রা।

নারায়ণগঞ্জ হয়ে শিয়ালদহ পৌঁছালেন। সেখানে নুলো গোপালকে মুগ্ধ করে শুরু হলো সুরসাধনা।

এরপর কতই না অর্জন তাঁর। কণ্ঠসংগীতকে বাদ দিলেন নুলো গোপালের মৃত্যু হলে। কত বাদ্যযন্ত্র বাজালেন অনায়াসে! বাঁশি, পিকলু, সেতার, ম্যানডোলিন, ব্যাঞ্জো শিখলেন। তবলাশিল্পী হিসেবে কাজ করলেন মিনার্ভা থিয়েটারে। এরপর সরোদ-জীবন। এরপর মধ্যপ্রদেশের মাইহার। ১৯৩৫ সালে উদয়শঙ্করের সঙ্গে পৃথিবীর নানা দেশ সফর করেন। পাশ্চাত্যের মানুষকে রাগসংগীতের সঙ্গে পরিচিত করান। অনেক রাগ সৃষ্টি করেছেন তিনি। এর মধ্যে মদন মঞ্জরি, রাগ ভুবনেশ্বরী, রাগ সরস্বতীর কথা বলা যায়। তিনি পণ্ডিত রবিশঙ্করের গুরু ছিলেন। রবিশঙ্কর তাঁকে ডাকতেন বাবা বলে। শান্তিনিকেতনে তিনি রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে আমন্ত্রিত অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারত সরকার তাঁকে সম্মান জানিয়ে ‘পদ্মভূষণ’, ‘পদ্মবিভূষণ ও ‘ভারতরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত করেছে। অন্নপূর্ণা দেবী (রওশন আরা বেগম) ও ওস্তাদ আকবর আলী খাঁ তাঁর সুযোগ্য দুই সন্তান।

১৮৬২ সালের ৮ অক্টোবর ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ জন্মেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত