
ইতিহাসের এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনের রাজতন্ত্র বলতে গেলে সফলভাবেই টিকে রয়েছে। আগের মতো সর্বব্যাপী ক্ষমতাচর্চার জেল্লা না থাকলেও অন্তত সাবেক উপনিবেশগুলোতে ব্রিটেনের প্রভাববলয় টিকিয়ে রাখার একটি উৎস হিসেবে ভালোই কাজে লাগছে এই বিবর্ণ রাজতন্ত্র।
ব্রিটেনের বহু মানুষ এখনো রাজা–রানির ইতিবাচক ভাবমূর্তি সংরক্ষণের পক্ষে। হাজার বছরের ইতিহাসে রাজতন্ত্র যেভাবে অপরিহার্যভাবে অংশ হয়ে রয়েছে, অদূর ভবিষ্যতেও এর বিলুপ্তির সম্ভাবনা কম।
মজার ব্যাপার হলো, সতেরো শ শতকে এক সময় কিন্তু ইংল্যান্ডে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। রাজা প্রথম ও দ্বিতীয় চার্লসের শাসনামলের মাঝখানের একটি দশক রাজ পরিবারের জন্য ছিল জাহান্নামসম। ব্রিটেনের বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লস নাম গ্রহণ করে সিংহাসনে বসেছেন।
ইংল্যান্ডে অর্থনীতি ও ক্ষমতাকেন্দ্র দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। ১৬৪০–এর দশকে রাজা প্রথম চার্লস এবং পার্লামেন্টের বিরোধ শেষ পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে গড়িয়েছিল।
বিরোধটি বেঁধেছিল মূলত রাজা পার্লামেন্টের ওপর ছড়ি ঘুরাতে উদ্যত হলে। পার্লামেন্ট তখন বণিকদের দখলে, রাজা হাতে চার্চ আর গ্রামীণ ধর্মপ্রাণ মানুষ।
রাজা প্রথম চার্লস তখন ফ্রান্স এবং স্পেনের রাজাদের মতো সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ততদিনে পার্লামেন্ট যে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে সেটি তিনি টের পাননি। রাজকাজ চালানোর যথেষ্ট অর্থও তখন খাজাঞ্চিতে নেই।
রাজা নির্ভর করতেন জমিদারদের আয়ের ওপর। ইংল্যান্ডে তখন মূল্যস্ফীতিও দ্রুত বাড়ছিল। বর্ধমান আমলাতন্ত্রের পেছনে খরচ বাড়ছিল। কিন্তু ইচ্ছেমতো অর্থ খরচ ও আয়ের উপায় রাজা হাতে ছিল না। পার্লামেন্টই তাঁর তহবিল সংগ্রহ, ভাতা ও অন্যান্য ব্যয়ে নির্দিষ্ট করে দিত। রাজা আরও টাকা বরাদ্দ চাইলেন কিন্তু পার্লামেন্ট বেঁকে বসল।
রাজা এবার পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে কর বাড়ানোর চেষ্টা করলেন। এতে তৈরি হলো সাংবিধানিক সংকট।
ক্ষমতাদণ্ড আরও প্রসারিত করতে রাজা ধর্মেও মন দিলেন। স্কটল্যান্ডের ক্যাথলিক গির্জার ওপর অ্যাংলিকান প্রোটেস্ট্যান্ট রীতিনীতি চাপিয়ে দিতে চাইলেন। স্কটল্যান্ডের অধিবাসীরা তীব্র প্রতিবাদ করলেন। বিরোধ এমন পৌঁছে গিয়েছিল ঐতিহাসিকেরা একটিকে বলেন, ‘বিশপদের যুদ্ধ’।
সার্বভৌমত্বের সংকট তখন প্রকট হয়ে উঠেছিল। ইংল্যান্ডের রাজারা একই সঙ্গে স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডেরও শাসক ছিলেন। সতেরো শ শতকের শুরুতে ইংরেজরা আয়ারল্যান্ডে জমির মালিকানা পাচ্ছিলেন। এতে স্থানীয়রা বিদ্রোহ শুরু করেন।
এভাবেই ১৬৪০ সালের দিকে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংকটের পাশাপাশি স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড সংকট যুক্ত হয়। পার্লামেন্টের সঙ্গে রাজার বিরোধ চরমে ওঠে। লেগে যায় গৃহযুদ্ধ। রাজার পক্ষে তখন চার্চ আর গ্রামীণ এলাকার মানুষ। আর পার্লামেন্ট সদস্যদের পাশে বণিকেরা। গুরুত্বপূর্ণ বন্দর তাদের নিয়ন্ত্রণে। বণিকেরা তখন জানত যুদ্ধবিদ্যাও।
ইংল্যান্ডের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট একটি সেনাবাহিনী গড়ে তোলে। এই সামরিক বাহিনী অত্যন্ত উগ্র ও বিপ্লবী হয়ে ওঠে। ১৬৪২ সালে লেগে যায় তুমুল যুদ্ধ। যুদ্ধে জিতে যায় পার্লামেন্টের সেনাবাহিনী। বাহিনীর চাপেই ১৬৪৯ সালে রাজাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সে বছরের ৩০ জানুয়ারি রাজা প্রথম চার্লসের শিরশ্ছেদ করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাঁর বিচার হয় এবং রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
এর সঙ্গে বিলোপ করা হয় রাজতন্ত্র। বিলুপ্ত করা হয় পার্লামেন্টে অভিজাতদের নিয়ে গঠিত হাউস অব লর্ডস।
পার্লামেন্ট নেতারা নতুন মতবাদ প্রচার করেন: রাজা প্রথম চার্লসই প্রজাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এরপর অলিভার ক্রমওয়েলের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীকে পার্লামেন্টে শুদ্ধি অভিযান চালাতে দেওয়া হয়। যেসব সংসদ সদস্য রাজার বিচার ও দোষী সাব্যস্ত করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে একমত হননি তাঁদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করা হয়েছিল।
রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটিয়ে ‘কমনওয়েলথ অব ইংল্যান্ড’ নামে নতুন সরকার গঠন করা হয়। ব্রিটেন হয়ে উঠল প্রজাতন্ত্র। একটি কাউন্সিল অব স্টেট সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হতো। ঘুরে ঘুরে এর প্রধান নিযুক্ত হতো এবং এই কাউন্সিল নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করত।
প্রজাতন্ত্র সরকারের সময় রাজকীয় প্রাসাদগুলো বিক্রি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুধু কয়েকটি প্রাসাদ কাউন্সিল অব স্টেটের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত ছিল। এই শাসন ব্যবস্থায় ইংল্যান্ডের জনগণকে দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটিকে আধুনিক গণতন্ত্রের সূচনা বলেও মনে করেন অনেকে।
এই সময় গির্জাতে আনা হয় পরিবর্তন। চার্চ অব ইংল্যান্ডের আচার–অনুষ্ঠানগুলো অনেক বেশি প্রোটেস্ট্যান্টপন্থী হয়ে ওঠে।
এই সরকারের সময়ই ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম সংবিধান রচনা করা হয়।
ইতিহাসবিদেরা বলেন, প্রজাতন্ত্রের শাসনকালে ব্রিটেনে গুরুত্বপূর্ণ সব পরিবর্তন ঘটেছিল। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন ঘটেছিল। বিয়ের অনুষ্ঠান আর গির্জার ভেতরে হতো না, সেগুলো ধর্মনিরপেক্ষ এক সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল।
সংসদীয় পদ্ধতির ওই সরকার প্রায় চার বছর স্থায়ী হয়। শুরুতে অনেক সংস্কারে ইতিবাচক পরিবর্তন বলেও ক্রমেই এ সরকারের বিরুদ্ধে ‘স্বৈরাচারী’ হয়ে ওঠার অভিযোগ ওঠে। আইন প্রণয়ন ও নির্বাহী ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনা কোনো ব্যবস্থা ছিল না। অবশেষে ১৬৫০ সালে অভ্যুত্থানের পর সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। তখন অলিভার ক্রমওয়েল জাতির রক্ষাকারী ‘লর্ড প্রটেক্টর’ হিসেবে আবির্ভূত হন।
ক্রমওয়েল তখন রাষ্ট্রপ্রধান হলেন, যদিও পার্লামেন্ট তাঁর ক্ষমতা সীমিত করেছি। কিন্তু তিনি মুকুট না পরলেও রাজার সমান ক্ষমতা চেয়েছিলেন। তা ছাড়া রাজা প্রথম চার্লসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জেতা এক সামরিক নেতা হিসেবে বেশ সম্মান ও মর্যাদা তিনি পেয়েছিলেন। স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের রাজতন্ত্রপন্থী বাহিনীগুলোকে পরাজিত করে কমনওয়েলথের অন্তর্ভুক্ত করা তাঁর বড় অর্জনগুলোর অন্যতম।
বিবেকের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার একজন মহান রক্ষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন ক্রমওয়েল। প্রবল বিতর্ক এবং মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতার যুগ ছিলে সেটি। মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। প্রচুর বই–পুস্তিকা এবং সংবাদপত্র ইত্যাদি ছাপা হতো। ধর্মতত্ত্বের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও চলছিল নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষা। বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয় বিতর্ক হতো।
অলিভার ক্রমওয়েল মারা যান ১৬৫৮ সালে। ছেলে রিচার্ডকে নতুন ‘লর্ড প্রোটেক্টর’ হিসেবে নিয়োগ করা হলেও তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি। তিনি ক্ষমতা নেওয়ার কিছুদিন পরই ইংল্যান্ডে আবার রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রয়াত রাজা প্রথম চার্লসের ছেলে দেশে ফিরে এসে রাজা দ্বিতীয় চার্লস নাম গ্রহণ করে সিংহাসনে বসেন।
প্রজাতন্ত্রের এই ব্যর্থতার পেছনে নানা কারণের কথাই ইতিহাসবিদেরা বলেছেন। বলা হয়, পার্লামেন্ট সে অর্থে রাজতন্ত্রের বিলোপ চায়নি। তাঁরা সচেতনভাবে প্রজাতন্ত্রের পরিকল্পনাও করেননি। তাঁরা বরং চেয়েছিলেন বণিকদের স্বার্থ ও পার্লামেন্টের ক্ষমতা সুসংহত করতে। এটি ছিল মূলত ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।
এ কারণেই প্রজাতন্ত্রের সরকার ক্রমেই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে। বিরোধীদের কঠোর হাতে দমন শুরু হয়। নতুন সরকার রাজতন্ত্রের পক্ষের পার্লামেন্ট সদস্যদের কখনোই সরকারে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়নি। নানা বিষয়ে তাঁদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, ইংল্যান্ডের কমনওয়েলথ বল প্রয়োগের মাধ্যমে জন্ম নিয়ে একটি দমনমূলক শাসনব্যবস্থাই কায়েম করেছে। এই কারণেই ১৬৪৯ এবং ১৬৬০ সালের মধ্যে এমন কোনো সরকার ক্ষমতায় ছিল না যার পক্ষে ব্যাপক–ভিত্তিক জনসমর্থন ছিল।
প্রজাতন্ত্রের মধ্যে কোনো ঐক্য ও সংহতি ছিল না। নানা বিষয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ বিভক্তি ছিল। এমনকি ধর্মীয় ইস্যুতেও তাঁরা ছিলেন গভীরভাবে বিভক্ত। ক্রমওয়েল পর্যন্ত সব ঠিকঠাক থাকলেও অভ্যন্তরীণ বিরোধ এক সময় চরম আকার ধারণ করে। জনগণের সমর্থনও তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
ইতিহাসবিদেরা মনে করেন, আধুনিক ব্রিটেনের রাজনৈতিক বিরোধের বীজ সেই সব দিনগুলোতেই বপন করা হয়ে গেছে। সেই সময়ের রাজনৈতিক মেরুকরণ এখন দেশের একটি বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে।
সতেরো শ শতকের শেষভাগে প্রথম দুটি রাজনৈতিক দল ছিল: টোরি পার্টি এবং হুইগ পার্টি। গৃহযুদ্ধের সময় টোরি পার্টি ছিল রাজতন্ত্রের পক্ষে, আর হুইগরা ছিল পার্লামেন্টের পক্ষে। এখনকার টোরি পার্টি বলতে গেলে কনজারভেটিভ পার্টির অপর নাম হয়ে উঠেছে।
তবে ওই তথাকথিত প্রজাতান্ত্রিক সরকারের সময় ইংল্যান্ডের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা এবং নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন দেখেছে বিশ্ব। সাক্ষরতার হার ব্যাপকভাবে বেড়েছিল। সংবাদপত্র পড়া নিয়মিত চর্চায় পরিণত হয়। সহনশীলতা নিয়েও কথাবার্তা শুরু হয়। ধর্মীয় স্বাধীনতাও ছিল। বৈজ্ঞানিক গবেষণাও বৃদ্ধি পেয়েছিল বহুগুণ। শিল্পের প্রসার ঘটে ব্যাপক। নতুন চিন্তার বিকাশ ঘটে।
তখনই আসে ইউনাইটেড কিংডম (ইউকে) বা যুক্তরাজ্যের ধারণা। প্রজাতান্ত্রিক সেনাবাহিনী আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড জয় করায় দুই দেশকে ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক মানচিত্রে যুক্ত করা হয়।
রাজতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ঘটলেও রাজা দ্বিতীয় চার্লস শান্তিতে রাজকাজ চালিয়ে যেতে পারেননি। ১৬৮৮ সালে এমন কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে পার্লামেন্টের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে বাধ্য হন রাজা। পার্লামেন্টের সঙ্গে পরামর্শ করার প্রশ্নে রাজাকে বাধ্য করার প্রথা চালু হয়। প্রতি তিন বছরে অন্তত একবার আইনসভায় পরিবর্তনের প্রথা চালু হয়। ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়। একটি ব্যর্থ বিপ্লব, ক্ষণিকের প্রজাতন্ত্র ব্রিটেনের রাজতন্ত্রকে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে রূপান্তরের পথ তৈরি করে দেয়।

ইতিহাসের এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনের রাজতন্ত্র বলতে গেলে সফলভাবেই টিকে রয়েছে। আগের মতো সর্বব্যাপী ক্ষমতাচর্চার জেল্লা না থাকলেও অন্তত সাবেক উপনিবেশগুলোতে ব্রিটেনের প্রভাববলয় টিকিয়ে রাখার একটি উৎস হিসেবে ভালোই কাজে লাগছে এই বিবর্ণ রাজতন্ত্র।
ব্রিটেনের বহু মানুষ এখনো রাজা–রানির ইতিবাচক ভাবমূর্তি সংরক্ষণের পক্ষে। হাজার বছরের ইতিহাসে রাজতন্ত্র যেভাবে অপরিহার্যভাবে অংশ হয়ে রয়েছে, অদূর ভবিষ্যতেও এর বিলুপ্তির সম্ভাবনা কম।
মজার ব্যাপার হলো, সতেরো শ শতকে এক সময় কিন্তু ইংল্যান্ডে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। রাজা প্রথম ও দ্বিতীয় চার্লসের শাসনামলের মাঝখানের একটি দশক রাজ পরিবারের জন্য ছিল জাহান্নামসম। ব্রিটেনের বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লস নাম গ্রহণ করে সিংহাসনে বসেছেন।
ইংল্যান্ডে অর্থনীতি ও ক্ষমতাকেন্দ্র দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। ১৬৪০–এর দশকে রাজা প্রথম চার্লস এবং পার্লামেন্টের বিরোধ শেষ পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে গড়িয়েছিল।
বিরোধটি বেঁধেছিল মূলত রাজা পার্লামেন্টের ওপর ছড়ি ঘুরাতে উদ্যত হলে। পার্লামেন্ট তখন বণিকদের দখলে, রাজা হাতে চার্চ আর গ্রামীণ ধর্মপ্রাণ মানুষ।
রাজা প্রথম চার্লস তখন ফ্রান্স এবং স্পেনের রাজাদের মতো সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ততদিনে পার্লামেন্ট যে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে সেটি তিনি টের পাননি। রাজকাজ চালানোর যথেষ্ট অর্থও তখন খাজাঞ্চিতে নেই।
রাজা নির্ভর করতেন জমিদারদের আয়ের ওপর। ইংল্যান্ডে তখন মূল্যস্ফীতিও দ্রুত বাড়ছিল। বর্ধমান আমলাতন্ত্রের পেছনে খরচ বাড়ছিল। কিন্তু ইচ্ছেমতো অর্থ খরচ ও আয়ের উপায় রাজা হাতে ছিল না। পার্লামেন্টই তাঁর তহবিল সংগ্রহ, ভাতা ও অন্যান্য ব্যয়ে নির্দিষ্ট করে দিত। রাজা আরও টাকা বরাদ্দ চাইলেন কিন্তু পার্লামেন্ট বেঁকে বসল।
রাজা এবার পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে কর বাড়ানোর চেষ্টা করলেন। এতে তৈরি হলো সাংবিধানিক সংকট।
ক্ষমতাদণ্ড আরও প্রসারিত করতে রাজা ধর্মেও মন দিলেন। স্কটল্যান্ডের ক্যাথলিক গির্জার ওপর অ্যাংলিকান প্রোটেস্ট্যান্ট রীতিনীতি চাপিয়ে দিতে চাইলেন। স্কটল্যান্ডের অধিবাসীরা তীব্র প্রতিবাদ করলেন। বিরোধ এমন পৌঁছে গিয়েছিল ঐতিহাসিকেরা একটিকে বলেন, ‘বিশপদের যুদ্ধ’।
সার্বভৌমত্বের সংকট তখন প্রকট হয়ে উঠেছিল। ইংল্যান্ডের রাজারা একই সঙ্গে স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডেরও শাসক ছিলেন। সতেরো শ শতকের শুরুতে ইংরেজরা আয়ারল্যান্ডে জমির মালিকানা পাচ্ছিলেন। এতে স্থানীয়রা বিদ্রোহ শুরু করেন।
এভাবেই ১৬৪০ সালের দিকে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংকটের পাশাপাশি স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড সংকট যুক্ত হয়। পার্লামেন্টের সঙ্গে রাজার বিরোধ চরমে ওঠে। লেগে যায় গৃহযুদ্ধ। রাজার পক্ষে তখন চার্চ আর গ্রামীণ এলাকার মানুষ। আর পার্লামেন্ট সদস্যদের পাশে বণিকেরা। গুরুত্বপূর্ণ বন্দর তাদের নিয়ন্ত্রণে। বণিকেরা তখন জানত যুদ্ধবিদ্যাও।
ইংল্যান্ডের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট একটি সেনাবাহিনী গড়ে তোলে। এই সামরিক বাহিনী অত্যন্ত উগ্র ও বিপ্লবী হয়ে ওঠে। ১৬৪২ সালে লেগে যায় তুমুল যুদ্ধ। যুদ্ধে জিতে যায় পার্লামেন্টের সেনাবাহিনী। বাহিনীর চাপেই ১৬৪৯ সালে রাজাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সে বছরের ৩০ জানুয়ারি রাজা প্রথম চার্লসের শিরশ্ছেদ করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাঁর বিচার হয় এবং রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
এর সঙ্গে বিলোপ করা হয় রাজতন্ত্র। বিলুপ্ত করা হয় পার্লামেন্টে অভিজাতদের নিয়ে গঠিত হাউস অব লর্ডস।
পার্লামেন্ট নেতারা নতুন মতবাদ প্রচার করেন: রাজা প্রথম চার্লসই প্রজাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এরপর অলিভার ক্রমওয়েলের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীকে পার্লামেন্টে শুদ্ধি অভিযান চালাতে দেওয়া হয়। যেসব সংসদ সদস্য রাজার বিচার ও দোষী সাব্যস্ত করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে একমত হননি তাঁদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করা হয়েছিল।
রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটিয়ে ‘কমনওয়েলথ অব ইংল্যান্ড’ নামে নতুন সরকার গঠন করা হয়। ব্রিটেন হয়ে উঠল প্রজাতন্ত্র। একটি কাউন্সিল অব স্টেট সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হতো। ঘুরে ঘুরে এর প্রধান নিযুক্ত হতো এবং এই কাউন্সিল নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করত।
প্রজাতন্ত্র সরকারের সময় রাজকীয় প্রাসাদগুলো বিক্রি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুধু কয়েকটি প্রাসাদ কাউন্সিল অব স্টেটের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত ছিল। এই শাসন ব্যবস্থায় ইংল্যান্ডের জনগণকে দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটিকে আধুনিক গণতন্ত্রের সূচনা বলেও মনে করেন অনেকে।
এই সময় গির্জাতে আনা হয় পরিবর্তন। চার্চ অব ইংল্যান্ডের আচার–অনুষ্ঠানগুলো অনেক বেশি প্রোটেস্ট্যান্টপন্থী হয়ে ওঠে।
এই সরকারের সময়ই ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম সংবিধান রচনা করা হয়।
ইতিহাসবিদেরা বলেন, প্রজাতন্ত্রের শাসনকালে ব্রিটেনে গুরুত্বপূর্ণ সব পরিবর্তন ঘটেছিল। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন ঘটেছিল। বিয়ের অনুষ্ঠান আর গির্জার ভেতরে হতো না, সেগুলো ধর্মনিরপেক্ষ এক সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল।
সংসদীয় পদ্ধতির ওই সরকার প্রায় চার বছর স্থায়ী হয়। শুরুতে অনেক সংস্কারে ইতিবাচক পরিবর্তন বলেও ক্রমেই এ সরকারের বিরুদ্ধে ‘স্বৈরাচারী’ হয়ে ওঠার অভিযোগ ওঠে। আইন প্রণয়ন ও নির্বাহী ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনা কোনো ব্যবস্থা ছিল না। অবশেষে ১৬৫০ সালে অভ্যুত্থানের পর সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। তখন অলিভার ক্রমওয়েল জাতির রক্ষাকারী ‘লর্ড প্রটেক্টর’ হিসেবে আবির্ভূত হন।
ক্রমওয়েল তখন রাষ্ট্রপ্রধান হলেন, যদিও পার্লামেন্ট তাঁর ক্ষমতা সীমিত করেছি। কিন্তু তিনি মুকুট না পরলেও রাজার সমান ক্ষমতা চেয়েছিলেন। তা ছাড়া রাজা প্রথম চার্লসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জেতা এক সামরিক নেতা হিসেবে বেশ সম্মান ও মর্যাদা তিনি পেয়েছিলেন। স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের রাজতন্ত্রপন্থী বাহিনীগুলোকে পরাজিত করে কমনওয়েলথের অন্তর্ভুক্ত করা তাঁর বড় অর্জনগুলোর অন্যতম।
বিবেকের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার একজন মহান রক্ষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন ক্রমওয়েল। প্রবল বিতর্ক এবং মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতার যুগ ছিলে সেটি। মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। প্রচুর বই–পুস্তিকা এবং সংবাদপত্র ইত্যাদি ছাপা হতো। ধর্মতত্ত্বের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও চলছিল নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষা। বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয় বিতর্ক হতো।
অলিভার ক্রমওয়েল মারা যান ১৬৫৮ সালে। ছেলে রিচার্ডকে নতুন ‘লর্ড প্রোটেক্টর’ হিসেবে নিয়োগ করা হলেও তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি। তিনি ক্ষমতা নেওয়ার কিছুদিন পরই ইংল্যান্ডে আবার রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রয়াত রাজা প্রথম চার্লসের ছেলে দেশে ফিরে এসে রাজা দ্বিতীয় চার্লস নাম গ্রহণ করে সিংহাসনে বসেন।
প্রজাতন্ত্রের এই ব্যর্থতার পেছনে নানা কারণের কথাই ইতিহাসবিদেরা বলেছেন। বলা হয়, পার্লামেন্ট সে অর্থে রাজতন্ত্রের বিলোপ চায়নি। তাঁরা সচেতনভাবে প্রজাতন্ত্রের পরিকল্পনাও করেননি। তাঁরা বরং চেয়েছিলেন বণিকদের স্বার্থ ও পার্লামেন্টের ক্ষমতা সুসংহত করতে। এটি ছিল মূলত ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।
এ কারণেই প্রজাতন্ত্রের সরকার ক্রমেই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে। বিরোধীদের কঠোর হাতে দমন শুরু হয়। নতুন সরকার রাজতন্ত্রের পক্ষের পার্লামেন্ট সদস্যদের কখনোই সরকারে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়নি। নানা বিষয়ে তাঁদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, ইংল্যান্ডের কমনওয়েলথ বল প্রয়োগের মাধ্যমে জন্ম নিয়ে একটি দমনমূলক শাসনব্যবস্থাই কায়েম করেছে। এই কারণেই ১৬৪৯ এবং ১৬৬০ সালের মধ্যে এমন কোনো সরকার ক্ষমতায় ছিল না যার পক্ষে ব্যাপক–ভিত্তিক জনসমর্থন ছিল।
প্রজাতন্ত্রের মধ্যে কোনো ঐক্য ও সংহতি ছিল না। নানা বিষয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ বিভক্তি ছিল। এমনকি ধর্মীয় ইস্যুতেও তাঁরা ছিলেন গভীরভাবে বিভক্ত। ক্রমওয়েল পর্যন্ত সব ঠিকঠাক থাকলেও অভ্যন্তরীণ বিরোধ এক সময় চরম আকার ধারণ করে। জনগণের সমর্থনও তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
ইতিহাসবিদেরা মনে করেন, আধুনিক ব্রিটেনের রাজনৈতিক বিরোধের বীজ সেই সব দিনগুলোতেই বপন করা হয়ে গেছে। সেই সময়ের রাজনৈতিক মেরুকরণ এখন দেশের একটি বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে।
সতেরো শ শতকের শেষভাগে প্রথম দুটি রাজনৈতিক দল ছিল: টোরি পার্টি এবং হুইগ পার্টি। গৃহযুদ্ধের সময় টোরি পার্টি ছিল রাজতন্ত্রের পক্ষে, আর হুইগরা ছিল পার্লামেন্টের পক্ষে। এখনকার টোরি পার্টি বলতে গেলে কনজারভেটিভ পার্টির অপর নাম হয়ে উঠেছে।
তবে ওই তথাকথিত প্রজাতান্ত্রিক সরকারের সময় ইংল্যান্ডের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা এবং নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন দেখেছে বিশ্ব। সাক্ষরতার হার ব্যাপকভাবে বেড়েছিল। সংবাদপত্র পড়া নিয়মিত চর্চায় পরিণত হয়। সহনশীলতা নিয়েও কথাবার্তা শুরু হয়। ধর্মীয় স্বাধীনতাও ছিল। বৈজ্ঞানিক গবেষণাও বৃদ্ধি পেয়েছিল বহুগুণ। শিল্পের প্রসার ঘটে ব্যাপক। নতুন চিন্তার বিকাশ ঘটে।
তখনই আসে ইউনাইটেড কিংডম (ইউকে) বা যুক্তরাজ্যের ধারণা। প্রজাতান্ত্রিক সেনাবাহিনী আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড জয় করায় দুই দেশকে ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক মানচিত্রে যুক্ত করা হয়।
রাজতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ঘটলেও রাজা দ্বিতীয় চার্লস শান্তিতে রাজকাজ চালিয়ে যেতে পারেননি। ১৬৮৮ সালে এমন কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে পার্লামেন্টের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে বাধ্য হন রাজা। পার্লামেন্টের সঙ্গে পরামর্শ করার প্রশ্নে রাজাকে বাধ্য করার প্রথা চালু হয়। প্রতি তিন বছরে অন্তত একবার আইনসভায় পরিবর্তনের প্রথা চালু হয়। ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়। একটি ব্যর্থ বিপ্লব, ক্ষণিকের প্রজাতন্ত্র ব্রিটেনের রাজতন্ত্রকে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে রূপান্তরের পথ তৈরি করে দেয়।

ইতিহাসের এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনের রাজতন্ত্র বলতে গেলে সফলভাবেই টিকে রয়েছে। আগের মতো সর্বব্যাপী ক্ষমতাচর্চার জেল্লা না থাকলেও অন্তত সাবেক উপনিবেশগুলোতে ব্রিটেনের প্রভাববলয় টিকিয়ে রাখার একটি উৎস হিসেবে ভালোই কাজে লাগছে এই বিবর্ণ রাজতন্ত্র।
ব্রিটেনের বহু মানুষ এখনো রাজা–রানির ইতিবাচক ভাবমূর্তি সংরক্ষণের পক্ষে। হাজার বছরের ইতিহাসে রাজতন্ত্র যেভাবে অপরিহার্যভাবে অংশ হয়ে রয়েছে, অদূর ভবিষ্যতেও এর বিলুপ্তির সম্ভাবনা কম।
মজার ব্যাপার হলো, সতেরো শ শতকে এক সময় কিন্তু ইংল্যান্ডে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। রাজা প্রথম ও দ্বিতীয় চার্লসের শাসনামলের মাঝখানের একটি দশক রাজ পরিবারের জন্য ছিল জাহান্নামসম। ব্রিটেনের বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লস নাম গ্রহণ করে সিংহাসনে বসেছেন।
ইংল্যান্ডে অর্থনীতি ও ক্ষমতাকেন্দ্র দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। ১৬৪০–এর দশকে রাজা প্রথম চার্লস এবং পার্লামেন্টের বিরোধ শেষ পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে গড়িয়েছিল।
বিরোধটি বেঁধেছিল মূলত রাজা পার্লামেন্টের ওপর ছড়ি ঘুরাতে উদ্যত হলে। পার্লামেন্ট তখন বণিকদের দখলে, রাজা হাতে চার্চ আর গ্রামীণ ধর্মপ্রাণ মানুষ।
রাজা প্রথম চার্লস তখন ফ্রান্স এবং স্পেনের রাজাদের মতো সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ততদিনে পার্লামেন্ট যে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে সেটি তিনি টের পাননি। রাজকাজ চালানোর যথেষ্ট অর্থও তখন খাজাঞ্চিতে নেই।
রাজা নির্ভর করতেন জমিদারদের আয়ের ওপর। ইংল্যান্ডে তখন মূল্যস্ফীতিও দ্রুত বাড়ছিল। বর্ধমান আমলাতন্ত্রের পেছনে খরচ বাড়ছিল। কিন্তু ইচ্ছেমতো অর্থ খরচ ও আয়ের উপায় রাজা হাতে ছিল না। পার্লামেন্টই তাঁর তহবিল সংগ্রহ, ভাতা ও অন্যান্য ব্যয়ে নির্দিষ্ট করে দিত। রাজা আরও টাকা বরাদ্দ চাইলেন কিন্তু পার্লামেন্ট বেঁকে বসল।
রাজা এবার পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে কর বাড়ানোর চেষ্টা করলেন। এতে তৈরি হলো সাংবিধানিক সংকট।
ক্ষমতাদণ্ড আরও প্রসারিত করতে রাজা ধর্মেও মন দিলেন। স্কটল্যান্ডের ক্যাথলিক গির্জার ওপর অ্যাংলিকান প্রোটেস্ট্যান্ট রীতিনীতি চাপিয়ে দিতে চাইলেন। স্কটল্যান্ডের অধিবাসীরা তীব্র প্রতিবাদ করলেন। বিরোধ এমন পৌঁছে গিয়েছিল ঐতিহাসিকেরা একটিকে বলেন, ‘বিশপদের যুদ্ধ’।
সার্বভৌমত্বের সংকট তখন প্রকট হয়ে উঠেছিল। ইংল্যান্ডের রাজারা একই সঙ্গে স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডেরও শাসক ছিলেন। সতেরো শ শতকের শুরুতে ইংরেজরা আয়ারল্যান্ডে জমির মালিকানা পাচ্ছিলেন। এতে স্থানীয়রা বিদ্রোহ শুরু করেন।
এভাবেই ১৬৪০ সালের দিকে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংকটের পাশাপাশি স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড সংকট যুক্ত হয়। পার্লামেন্টের সঙ্গে রাজার বিরোধ চরমে ওঠে। লেগে যায় গৃহযুদ্ধ। রাজার পক্ষে তখন চার্চ আর গ্রামীণ এলাকার মানুষ। আর পার্লামেন্ট সদস্যদের পাশে বণিকেরা। গুরুত্বপূর্ণ বন্দর তাদের নিয়ন্ত্রণে। বণিকেরা তখন জানত যুদ্ধবিদ্যাও।
ইংল্যান্ডের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট একটি সেনাবাহিনী গড়ে তোলে। এই সামরিক বাহিনী অত্যন্ত উগ্র ও বিপ্লবী হয়ে ওঠে। ১৬৪২ সালে লেগে যায় তুমুল যুদ্ধ। যুদ্ধে জিতে যায় পার্লামেন্টের সেনাবাহিনী। বাহিনীর চাপেই ১৬৪৯ সালে রাজাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সে বছরের ৩০ জানুয়ারি রাজা প্রথম চার্লসের শিরশ্ছেদ করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাঁর বিচার হয় এবং রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
এর সঙ্গে বিলোপ করা হয় রাজতন্ত্র। বিলুপ্ত করা হয় পার্লামেন্টে অভিজাতদের নিয়ে গঠিত হাউস অব লর্ডস।
পার্লামেন্ট নেতারা নতুন মতবাদ প্রচার করেন: রাজা প্রথম চার্লসই প্রজাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এরপর অলিভার ক্রমওয়েলের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীকে পার্লামেন্টে শুদ্ধি অভিযান চালাতে দেওয়া হয়। যেসব সংসদ সদস্য রাজার বিচার ও দোষী সাব্যস্ত করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে একমত হননি তাঁদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করা হয়েছিল।
রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটিয়ে ‘কমনওয়েলথ অব ইংল্যান্ড’ নামে নতুন সরকার গঠন করা হয়। ব্রিটেন হয়ে উঠল প্রজাতন্ত্র। একটি কাউন্সিল অব স্টেট সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হতো। ঘুরে ঘুরে এর প্রধান নিযুক্ত হতো এবং এই কাউন্সিল নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করত।
প্রজাতন্ত্র সরকারের সময় রাজকীয় প্রাসাদগুলো বিক্রি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুধু কয়েকটি প্রাসাদ কাউন্সিল অব স্টেটের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত ছিল। এই শাসন ব্যবস্থায় ইংল্যান্ডের জনগণকে দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটিকে আধুনিক গণতন্ত্রের সূচনা বলেও মনে করেন অনেকে।
এই সময় গির্জাতে আনা হয় পরিবর্তন। চার্চ অব ইংল্যান্ডের আচার–অনুষ্ঠানগুলো অনেক বেশি প্রোটেস্ট্যান্টপন্থী হয়ে ওঠে।
এই সরকারের সময়ই ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম সংবিধান রচনা করা হয়।
ইতিহাসবিদেরা বলেন, প্রজাতন্ত্রের শাসনকালে ব্রিটেনে গুরুত্বপূর্ণ সব পরিবর্তন ঘটেছিল। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন ঘটেছিল। বিয়ের অনুষ্ঠান আর গির্জার ভেতরে হতো না, সেগুলো ধর্মনিরপেক্ষ এক সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল।
সংসদীয় পদ্ধতির ওই সরকার প্রায় চার বছর স্থায়ী হয়। শুরুতে অনেক সংস্কারে ইতিবাচক পরিবর্তন বলেও ক্রমেই এ সরকারের বিরুদ্ধে ‘স্বৈরাচারী’ হয়ে ওঠার অভিযোগ ওঠে। আইন প্রণয়ন ও নির্বাহী ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনা কোনো ব্যবস্থা ছিল না। অবশেষে ১৬৫০ সালে অভ্যুত্থানের পর সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। তখন অলিভার ক্রমওয়েল জাতির রক্ষাকারী ‘লর্ড প্রটেক্টর’ হিসেবে আবির্ভূত হন।
ক্রমওয়েল তখন রাষ্ট্রপ্রধান হলেন, যদিও পার্লামেন্ট তাঁর ক্ষমতা সীমিত করেছি। কিন্তু তিনি মুকুট না পরলেও রাজার সমান ক্ষমতা চেয়েছিলেন। তা ছাড়া রাজা প্রথম চার্লসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জেতা এক সামরিক নেতা হিসেবে বেশ সম্মান ও মর্যাদা তিনি পেয়েছিলেন। স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের রাজতন্ত্রপন্থী বাহিনীগুলোকে পরাজিত করে কমনওয়েলথের অন্তর্ভুক্ত করা তাঁর বড় অর্জনগুলোর অন্যতম।
বিবেকের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার একজন মহান রক্ষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন ক্রমওয়েল। প্রবল বিতর্ক এবং মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতার যুগ ছিলে সেটি। মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। প্রচুর বই–পুস্তিকা এবং সংবাদপত্র ইত্যাদি ছাপা হতো। ধর্মতত্ত্বের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও চলছিল নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষা। বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয় বিতর্ক হতো।
অলিভার ক্রমওয়েল মারা যান ১৬৫৮ সালে। ছেলে রিচার্ডকে নতুন ‘লর্ড প্রোটেক্টর’ হিসেবে নিয়োগ করা হলেও তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি। তিনি ক্ষমতা নেওয়ার কিছুদিন পরই ইংল্যান্ডে আবার রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রয়াত রাজা প্রথম চার্লসের ছেলে দেশে ফিরে এসে রাজা দ্বিতীয় চার্লস নাম গ্রহণ করে সিংহাসনে বসেন।
প্রজাতন্ত্রের এই ব্যর্থতার পেছনে নানা কারণের কথাই ইতিহাসবিদেরা বলেছেন। বলা হয়, পার্লামেন্ট সে অর্থে রাজতন্ত্রের বিলোপ চায়নি। তাঁরা সচেতনভাবে প্রজাতন্ত্রের পরিকল্পনাও করেননি। তাঁরা বরং চেয়েছিলেন বণিকদের স্বার্থ ও পার্লামেন্টের ক্ষমতা সুসংহত করতে। এটি ছিল মূলত ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।
এ কারণেই প্রজাতন্ত্রের সরকার ক্রমেই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে। বিরোধীদের কঠোর হাতে দমন শুরু হয়। নতুন সরকার রাজতন্ত্রের পক্ষের পার্লামেন্ট সদস্যদের কখনোই সরকারে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়নি। নানা বিষয়ে তাঁদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, ইংল্যান্ডের কমনওয়েলথ বল প্রয়োগের মাধ্যমে জন্ম নিয়ে একটি দমনমূলক শাসনব্যবস্থাই কায়েম করেছে। এই কারণেই ১৬৪৯ এবং ১৬৬০ সালের মধ্যে এমন কোনো সরকার ক্ষমতায় ছিল না যার পক্ষে ব্যাপক–ভিত্তিক জনসমর্থন ছিল।
প্রজাতন্ত্রের মধ্যে কোনো ঐক্য ও সংহতি ছিল না। নানা বিষয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ বিভক্তি ছিল। এমনকি ধর্মীয় ইস্যুতেও তাঁরা ছিলেন গভীরভাবে বিভক্ত। ক্রমওয়েল পর্যন্ত সব ঠিকঠাক থাকলেও অভ্যন্তরীণ বিরোধ এক সময় চরম আকার ধারণ করে। জনগণের সমর্থনও তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
ইতিহাসবিদেরা মনে করেন, আধুনিক ব্রিটেনের রাজনৈতিক বিরোধের বীজ সেই সব দিনগুলোতেই বপন করা হয়ে গেছে। সেই সময়ের রাজনৈতিক মেরুকরণ এখন দেশের একটি বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে।
সতেরো শ শতকের শেষভাগে প্রথম দুটি রাজনৈতিক দল ছিল: টোরি পার্টি এবং হুইগ পার্টি। গৃহযুদ্ধের সময় টোরি পার্টি ছিল রাজতন্ত্রের পক্ষে, আর হুইগরা ছিল পার্লামেন্টের পক্ষে। এখনকার টোরি পার্টি বলতে গেলে কনজারভেটিভ পার্টির অপর নাম হয়ে উঠেছে।
তবে ওই তথাকথিত প্রজাতান্ত্রিক সরকারের সময় ইংল্যান্ডের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা এবং নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন দেখেছে বিশ্ব। সাক্ষরতার হার ব্যাপকভাবে বেড়েছিল। সংবাদপত্র পড়া নিয়মিত চর্চায় পরিণত হয়। সহনশীলতা নিয়েও কথাবার্তা শুরু হয়। ধর্মীয় স্বাধীনতাও ছিল। বৈজ্ঞানিক গবেষণাও বৃদ্ধি পেয়েছিল বহুগুণ। শিল্পের প্রসার ঘটে ব্যাপক। নতুন চিন্তার বিকাশ ঘটে।
তখনই আসে ইউনাইটেড কিংডম (ইউকে) বা যুক্তরাজ্যের ধারণা। প্রজাতান্ত্রিক সেনাবাহিনী আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড জয় করায় দুই দেশকে ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক মানচিত্রে যুক্ত করা হয়।
রাজতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ঘটলেও রাজা দ্বিতীয় চার্লস শান্তিতে রাজকাজ চালিয়ে যেতে পারেননি। ১৬৮৮ সালে এমন কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে পার্লামেন্টের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে বাধ্য হন রাজা। পার্লামেন্টের সঙ্গে পরামর্শ করার প্রশ্নে রাজাকে বাধ্য করার প্রথা চালু হয়। প্রতি তিন বছরে অন্তত একবার আইনসভায় পরিবর্তনের প্রথা চালু হয়। ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়। একটি ব্যর্থ বিপ্লব, ক্ষণিকের প্রজাতন্ত্র ব্রিটেনের রাজতন্ত্রকে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে রূপান্তরের পথ তৈরি করে দেয়।

ইতিহাসের এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনের রাজতন্ত্র বলতে গেলে সফলভাবেই টিকে রয়েছে। আগের মতো সর্বব্যাপী ক্ষমতাচর্চার জেল্লা না থাকলেও অন্তত সাবেক উপনিবেশগুলোতে ব্রিটেনের প্রভাববলয় টিকিয়ে রাখার একটি উৎস হিসেবে ভালোই কাজে লাগছে এই বিবর্ণ রাজতন্ত্র।
ব্রিটেনের বহু মানুষ এখনো রাজা–রানির ইতিবাচক ভাবমূর্তি সংরক্ষণের পক্ষে। হাজার বছরের ইতিহাসে রাজতন্ত্র যেভাবে অপরিহার্যভাবে অংশ হয়ে রয়েছে, অদূর ভবিষ্যতেও এর বিলুপ্তির সম্ভাবনা কম।
মজার ব্যাপার হলো, সতেরো শ শতকে এক সময় কিন্তু ইংল্যান্ডে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। রাজা প্রথম ও দ্বিতীয় চার্লসের শাসনামলের মাঝখানের একটি দশক রাজ পরিবারের জন্য ছিল জাহান্নামসম। ব্রিটেনের বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লস নাম গ্রহণ করে সিংহাসনে বসেছেন।
ইংল্যান্ডে অর্থনীতি ও ক্ষমতাকেন্দ্র দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। ১৬৪০–এর দশকে রাজা প্রথম চার্লস এবং পার্লামেন্টের বিরোধ শেষ পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে গড়িয়েছিল।
বিরোধটি বেঁধেছিল মূলত রাজা পার্লামেন্টের ওপর ছড়ি ঘুরাতে উদ্যত হলে। পার্লামেন্ট তখন বণিকদের দখলে, রাজা হাতে চার্চ আর গ্রামীণ ধর্মপ্রাণ মানুষ।
রাজা প্রথম চার্লস তখন ফ্রান্স এবং স্পেনের রাজাদের মতো সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ততদিনে পার্লামেন্ট যে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে সেটি তিনি টের পাননি। রাজকাজ চালানোর যথেষ্ট অর্থও তখন খাজাঞ্চিতে নেই।
রাজা নির্ভর করতেন জমিদারদের আয়ের ওপর। ইংল্যান্ডে তখন মূল্যস্ফীতিও দ্রুত বাড়ছিল। বর্ধমান আমলাতন্ত্রের পেছনে খরচ বাড়ছিল। কিন্তু ইচ্ছেমতো অর্থ খরচ ও আয়ের উপায় রাজা হাতে ছিল না। পার্লামেন্টই তাঁর তহবিল সংগ্রহ, ভাতা ও অন্যান্য ব্যয়ে নির্দিষ্ট করে দিত। রাজা আরও টাকা বরাদ্দ চাইলেন কিন্তু পার্লামেন্ট বেঁকে বসল।
রাজা এবার পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে কর বাড়ানোর চেষ্টা করলেন। এতে তৈরি হলো সাংবিধানিক সংকট।
ক্ষমতাদণ্ড আরও প্রসারিত করতে রাজা ধর্মেও মন দিলেন। স্কটল্যান্ডের ক্যাথলিক গির্জার ওপর অ্যাংলিকান প্রোটেস্ট্যান্ট রীতিনীতি চাপিয়ে দিতে চাইলেন। স্কটল্যান্ডের অধিবাসীরা তীব্র প্রতিবাদ করলেন। বিরোধ এমন পৌঁছে গিয়েছিল ঐতিহাসিকেরা একটিকে বলেন, ‘বিশপদের যুদ্ধ’।
সার্বভৌমত্বের সংকট তখন প্রকট হয়ে উঠেছিল। ইংল্যান্ডের রাজারা একই সঙ্গে স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডেরও শাসক ছিলেন। সতেরো শ শতকের শুরুতে ইংরেজরা আয়ারল্যান্ডে জমির মালিকানা পাচ্ছিলেন। এতে স্থানীয়রা বিদ্রোহ শুরু করেন।
এভাবেই ১৬৪০ সালের দিকে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংকটের পাশাপাশি স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ড সংকট যুক্ত হয়। পার্লামেন্টের সঙ্গে রাজার বিরোধ চরমে ওঠে। লেগে যায় গৃহযুদ্ধ। রাজার পক্ষে তখন চার্চ আর গ্রামীণ এলাকার মানুষ। আর পার্লামেন্ট সদস্যদের পাশে বণিকেরা। গুরুত্বপূর্ণ বন্দর তাদের নিয়ন্ত্রণে। বণিকেরা তখন জানত যুদ্ধবিদ্যাও।
ইংল্যান্ডের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ইংল্যান্ডের পার্লামেন্ট একটি সেনাবাহিনী গড়ে তোলে। এই সামরিক বাহিনী অত্যন্ত উগ্র ও বিপ্লবী হয়ে ওঠে। ১৬৪২ সালে লেগে যায় তুমুল যুদ্ধ। যুদ্ধে জিতে যায় পার্লামেন্টের সেনাবাহিনী। বাহিনীর চাপেই ১৬৪৯ সালে রাজাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সে বছরের ৩০ জানুয়ারি রাজা প্রথম চার্লসের শিরশ্ছেদ করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাঁর বিচার হয় এবং রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
এর সঙ্গে বিলোপ করা হয় রাজতন্ত্র। বিলুপ্ত করা হয় পার্লামেন্টে অভিজাতদের নিয়ে গঠিত হাউস অব লর্ডস।
পার্লামেন্ট নেতারা নতুন মতবাদ প্রচার করেন: রাজা প্রথম চার্লসই প্রজাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। এরপর অলিভার ক্রমওয়েলের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীকে পার্লামেন্টে শুদ্ধি অভিযান চালাতে দেওয়া হয়। যেসব সংসদ সদস্য রাজার বিচার ও দোষী সাব্যস্ত করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে একমত হননি তাঁদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করা হয়েছিল।
রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটিয়ে ‘কমনওয়েলথ অব ইংল্যান্ড’ নামে নতুন সরকার গঠন করা হয়। ব্রিটেন হয়ে উঠল প্রজাতন্ত্র। একটি কাউন্সিল অব স্টেট সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হতো। ঘুরে ঘুরে এর প্রধান নিযুক্ত হতো এবং এই কাউন্সিল নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করত।
প্রজাতন্ত্র সরকারের সময় রাজকীয় প্রাসাদগুলো বিক্রি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুধু কয়েকটি প্রাসাদ কাউন্সিল অব স্টেটের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত ছিল। এই শাসন ব্যবস্থায় ইংল্যান্ডের জনগণকে দেশের সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এটিকে আধুনিক গণতন্ত্রের সূচনা বলেও মনে করেন অনেকে।
এই সময় গির্জাতে আনা হয় পরিবর্তন। চার্চ অব ইংল্যান্ডের আচার–অনুষ্ঠানগুলো অনেক বেশি প্রোটেস্ট্যান্টপন্থী হয়ে ওঠে।
এই সরকারের সময়ই ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম সংবিধান রচনা করা হয়।
ইতিহাসবিদেরা বলেন, প্রজাতন্ত্রের শাসনকালে ব্রিটেনে গুরুত্বপূর্ণ সব পরিবর্তন ঘটেছিল। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন ঘটেছিল। বিয়ের অনুষ্ঠান আর গির্জার ভেতরে হতো না, সেগুলো ধর্মনিরপেক্ষ এক সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়েছিল।
সংসদীয় পদ্ধতির ওই সরকার প্রায় চার বছর স্থায়ী হয়। শুরুতে অনেক সংস্কারে ইতিবাচক পরিবর্তন বলেও ক্রমেই এ সরকারের বিরুদ্ধে ‘স্বৈরাচারী’ হয়ে ওঠার অভিযোগ ওঠে। আইন প্রণয়ন ও নির্বাহী ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনা কোনো ব্যবস্থা ছিল না। অবশেষে ১৬৫০ সালে অভ্যুত্থানের পর সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। তখন অলিভার ক্রমওয়েল জাতির রক্ষাকারী ‘লর্ড প্রটেক্টর’ হিসেবে আবির্ভূত হন।
ক্রমওয়েল তখন রাষ্ট্রপ্রধান হলেন, যদিও পার্লামেন্ট তাঁর ক্ষমতা সীমিত করেছি। কিন্তু তিনি মুকুট না পরলেও রাজার সমান ক্ষমতা চেয়েছিলেন। তা ছাড়া রাজা প্রথম চার্লসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জেতা এক সামরিক নেতা হিসেবে বেশ সম্মান ও মর্যাদা তিনি পেয়েছিলেন। স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের রাজতন্ত্রপন্থী বাহিনীগুলোকে পরাজিত করে কমনওয়েলথের অন্তর্ভুক্ত করা তাঁর বড় অর্জনগুলোর অন্যতম।
বিবেকের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার একজন মহান রক্ষক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন ক্রমওয়েল। প্রবল বিতর্ক এবং মত প্রকাশের অবাধ স্বাধীনতার যুগ ছিলে সেটি। মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। প্রচুর বই–পুস্তিকা এবং সংবাদপত্র ইত্যাদি ছাপা হতো। ধর্মতত্ত্বের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়েও চলছিল নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষা। বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয় বিতর্ক হতো।
অলিভার ক্রমওয়েল মারা যান ১৬৫৮ সালে। ছেলে রিচার্ডকে নতুন ‘লর্ড প্রোটেক্টর’ হিসেবে নিয়োগ করা হলেও তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি। তিনি ক্ষমতা নেওয়ার কিছুদিন পরই ইংল্যান্ডে আবার রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রয়াত রাজা প্রথম চার্লসের ছেলে দেশে ফিরে এসে রাজা দ্বিতীয় চার্লস নাম গ্রহণ করে সিংহাসনে বসেন।
প্রজাতন্ত্রের এই ব্যর্থতার পেছনে নানা কারণের কথাই ইতিহাসবিদেরা বলেছেন। বলা হয়, পার্লামেন্ট সে অর্থে রাজতন্ত্রের বিলোপ চায়নি। তাঁরা সচেতনভাবে প্রজাতন্ত্রের পরিকল্পনাও করেননি। তাঁরা বরং চেয়েছিলেন বণিকদের স্বার্থ ও পার্লামেন্টের ক্ষমতা সুসংহত করতে। এটি ছিল মূলত ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।
এ কারণেই প্রজাতন্ত্রের সরকার ক্রমেই স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে। বিরোধীদের কঠোর হাতে দমন শুরু হয়। নতুন সরকার রাজতন্ত্রের পক্ষের পার্লামেন্ট সদস্যদের কখনোই সরকারে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়নি। নানা বিষয়ে তাঁদের ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, ইংল্যান্ডের কমনওয়েলথ বল প্রয়োগের মাধ্যমে জন্ম নিয়ে একটি দমনমূলক শাসনব্যবস্থাই কায়েম করেছে। এই কারণেই ১৬৪৯ এবং ১৬৬০ সালের মধ্যে এমন কোনো সরকার ক্ষমতায় ছিল না যার পক্ষে ব্যাপক–ভিত্তিক জনসমর্থন ছিল।
প্রজাতন্ত্রের মধ্যে কোনো ঐক্য ও সংহতি ছিল না। নানা বিষয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ বিভক্তি ছিল। এমনকি ধর্মীয় ইস্যুতেও তাঁরা ছিলেন গভীরভাবে বিভক্ত। ক্রমওয়েল পর্যন্ত সব ঠিকঠাক থাকলেও অভ্যন্তরীণ বিরোধ এক সময় চরম আকার ধারণ করে। জনগণের সমর্থনও তলানিতে গিয়ে ঠেকে।
ইতিহাসবিদেরা মনে করেন, আধুনিক ব্রিটেনের রাজনৈতিক বিরোধের বীজ সেই সব দিনগুলোতেই বপন করা হয়ে গেছে। সেই সময়ের রাজনৈতিক মেরুকরণ এখন দেশের একটি বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে।
সতেরো শ শতকের শেষভাগে প্রথম দুটি রাজনৈতিক দল ছিল: টোরি পার্টি এবং হুইগ পার্টি। গৃহযুদ্ধের সময় টোরি পার্টি ছিল রাজতন্ত্রের পক্ষে, আর হুইগরা ছিল পার্লামেন্টের পক্ষে। এখনকার টোরি পার্টি বলতে গেলে কনজারভেটিভ পার্টির অপর নাম হয়ে উঠেছে।
তবে ওই তথাকথিত প্রজাতান্ত্রিক সরকারের সময় ইংল্যান্ডের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি, বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতা এবং নানা সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন দেখেছে বিশ্ব। সাক্ষরতার হার ব্যাপকভাবে বেড়েছিল। সংবাদপত্র পড়া নিয়মিত চর্চায় পরিণত হয়। সহনশীলতা নিয়েও কথাবার্তা শুরু হয়। ধর্মীয় স্বাধীনতাও ছিল। বৈজ্ঞানিক গবেষণাও বৃদ্ধি পেয়েছিল বহুগুণ। শিল্পের প্রসার ঘটে ব্যাপক। নতুন চিন্তার বিকাশ ঘটে।
তখনই আসে ইউনাইটেড কিংডম (ইউকে) বা যুক্তরাজ্যের ধারণা। প্রজাতান্ত্রিক সেনাবাহিনী আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড জয় করায় দুই দেশকে ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক মানচিত্রে যুক্ত করা হয়।
রাজতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ঘটলেও রাজা দ্বিতীয় চার্লস শান্তিতে রাজকাজ চালিয়ে যেতে পারেননি। ১৬৮৮ সালে এমন কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে পার্লামেন্টের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে বাধ্য হন রাজা। পার্লামেন্টের সঙ্গে পরামর্শ করার প্রশ্নে রাজাকে বাধ্য করার প্রথা চালু হয়। প্রতি তিন বছরে অন্তত একবার আইনসভায় পরিবর্তনের প্রথা চালু হয়। ধর্মীয় সহনশীলতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়। একটি ব্যর্থ বিপ্লব, ক্ষণিকের প্রজাতন্ত্র ব্রিটেনের রাজতন্ত্রকে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে রূপান্তরের পথ তৈরি করে দেয়।

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
৩ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
৩ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
৩ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

ইতিহাসের এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনের রাজতন্ত্র বলতে গেলে সফলভাবেই টিকে রয়েছে। আগের মতো সর্বব্যাপী ক্ষমতাচর্চার জেল্লা না থাকলেও অন্তত সাবেক উপনিবেশগুলোতে ব্রিটেনের প্রভাববলয় টিকিয়ে রাখার একটি উৎস হিসেবে ভালোই কাজে লাগছে এই বিবর্ণ রাজতন্ত্র।
৩১ জানুয়ারি ২০২৪
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
৩ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
৩ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৫ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

ইতিহাসের এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনের রাজতন্ত্র বলতে গেলে সফলভাবেই টিকে রয়েছে। আগের মতো সর্বব্যাপী ক্ষমতাচর্চার জেল্লা না থাকলেও অন্তত সাবেক উপনিবেশগুলোতে ব্রিটেনের প্রভাববলয় টিকিয়ে রাখার একটি উৎস হিসেবে ভালোই কাজে লাগছে এই বিবর্ণ রাজতন্ত্র।
৩১ জানুয়ারি ২০২৪
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
৩ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
৩ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৫ দিন আগেসম্পাদকীয়

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

ইতিহাসের এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনের রাজতন্ত্র বলতে গেলে সফলভাবেই টিকে রয়েছে। আগের মতো সর্বব্যাপী ক্ষমতাচর্চার জেল্লা না থাকলেও অন্তত সাবেক উপনিবেশগুলোতে ব্রিটেনের প্রভাববলয় টিকিয়ে রাখার একটি উৎস হিসেবে ভালোই কাজে লাগছে এই বিবর্ণ রাজতন্ত্র।
৩১ জানুয়ারি ২০২৪
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
৩ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
৩ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৫ দিন আগেসম্পাদকীয়

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

ইতিহাসের এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্রিটেনের রাজতন্ত্র বলতে গেলে সফলভাবেই টিকে রয়েছে। আগের মতো সর্বব্যাপী ক্ষমতাচর্চার জেল্লা না থাকলেও অন্তত সাবেক উপনিবেশগুলোতে ব্রিটেনের প্রভাববলয় টিকিয়ে রাখার একটি উৎস হিসেবে ভালোই কাজে লাগছে এই বিবর্ণ রাজতন্ত্র।
৩১ জানুয়ারি ২০২৪
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
৩ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
৩ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
৩ দিন আগে