একলব্য

ঠিক ছোট কাগজ বলব, নাকি বড় কাগজের ছোট সংস্করণ বলব—বিষয়টি বুঝে ওঠা কঠিন। ‘মননরেখা’ নামের মুদ্রিত পুস্তকখানি হাতে আসার পর সেরকমই অনুভূতি হলো। আবার ‘পুস্তক’ শব্দটি আমাদের সামনে যে চিত্রকল্প তুলে ধরে, তাতে এই শব্দও সুপ্রযুক্ত হচ্ছে কি না, সেটাও ভাববার বিষয়। শুরু থেকে জুন ২০১৯ পর্যন্ত এটি বছরে একটি বিশেষ সংখ্যা ও একটি সাধারণ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হতো। কিন্তু ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে মননরেখা পুরোপুরি বিশেষ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে। তাই মননরেখাকে আমরা আপাতত ‘সংকলন’ই বলি। বলতে চাইছি, কোনো বিশেষ ব্র্যাকেটে মননরেখা নামের সংকলনটিকে না বেঁধেও সেটি নিয়ে আলোচনা করা চলে, পড়া চলে, সংগ্রহে রাখা চলে।
পরিচয় আরও একটু দেওয়া দরকার। মননরেখা নামের এই সংকলন প্রকাশিত হচ্ছে রংপুর থেকে। অবশ্য মুদ্রণ ও বিপণনের বড় অংশ হয় রাজধানীতে। বিষয়বৈচিত্র্য, লেখার মান—সব দিক থেকে মননরেখার বিশেষ সংখ্যা, মানে ‘বিশেষ সংখ্যা’ই। সংখ্যাগুলোর বিষয়বস্তু জানলে অনেকেই চমকে উঠবেন। মোনাজাত উদ্দিন ও বিবিধ (ডিসেম্বর ২০১৭), বাংলাদেশের উর্দু কবি নওশাদ নূরী (ডিসেম্বর ২০১৮), বাংলাদেশের নারী কবি (ডিসেম্বর ২০১৯), বাংলাদেশের উর্দু কবি আহমেদ ইলিয়াস (ডিসেম্বর ২০২০), চিলমারী বন্দর (জুন ২০২১) এবং সর্বশেষ বেহুলা (ডিসেম্বর ২০২১)।
‘মননরেখা’ নামের এই সংকলনের সম্পাদক মিজানুর রহমান নাসিম। তিনি দর্শনের ছাত্র ও শিক্ষক। পড়ান কুড়িগ্রামের চিলমারীর গোলাম হাবিব মহিলা ডিগ্রি কলেজে। তাই সর্বান্তকরণে এই সংকলনকে ‘প্রান্তিক’ তকমা দেওয়া যায় খুব সহজে। কিন্তু কেন এত শব্দ খরচ মননরেখা নামের এই সংকলনের জন্য? বিবেচনার বিষয় সেটিই।
বাংলাদেশের ছোট কাগজের ইতিহাসে অনেক প্রকাশনা আছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার সংখ্যা হাতে গোনা—সেটি সাহিত্য কিংবা যেকোনো বিষয় নিয়েই হোক না কেন। এ বিষয়ে বিস্তর আলাপ হতে পারে, তর্কবিতর্কও হতে পারে। প্রসঙ্গটি তুলে রাখা ভালো যে, স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার সংখ্যা এতই কম যে, তা কোনো দিন সামনেই আসে না। অথচ স্থানীয় ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করেই একটি দেশের জাতীয় ইতিহাস রচিত হয়। মননরেখা ইতিহাস রচনার সে প্রক্রিয়াকে তুড়ি মেরে সরিয়ে দিয়ে নিজের পথ খুঁজে নিয়েছে। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনাগুলোর একটি মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা। গুণে ও মানে সেটিই বাংলাদেশের বিশেষ সম্পদ। ‘নিরন্তর’ নামে আরেকটি সংকলনের কথা বলা যায়। ‘ঝলক’ দেখিয়ে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। উল্লেখ করে রাখা ভালো, আমি কোনো তুলনায় যাচ্ছি না। প্রচেষ্টার কথা বলছি। মননরেখা অনেক রাস্তার ঘোরপ্যাঁচে নিজের রাস্তা খুঁজে নেওয়ার প্রচেষ্টার মধ্যে আছে।
দুই.
মননরেখার ‘বেহুলা সংখ্যা’ কয়েক দিন আগেই প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ৫০০ বছরের চর্চিত চরিত্র বেহুলাকে নিয়ে ২১টি ভিন্ন স্বাদের প্রবন্ধ রয়েছে এই সংকলনে। জীবনানন্দ, বিষ্ণু দে, শামসুর রাহমানসহ আট কবির আটটি কবিতার পুনর্মুদ্রণ, আছে শওকত আলীর ‘শুন হে লখিন্দর’ গল্পের পুনর্মুদ্রণসহ আরও তিনটি গল্প, মহাশ্বেতা দেবীর ‘বেহুলা’ গল্পের আলোচনা, বই আলোচনা দুটি এবং বেশ কিছু রঙিন ও সাদাকালো ছবি আছে সংকলনটিতে। এ ছাড়া আছে ‘বেহুলা’ সিনেমার অভিনেত্রী সুচন্দা ও ‘ফিরে এসো বেহুলা’ সিনেমার পরিচালক তানিম নূরের সাক্ষাৎকার। সংকলনটির শুরু হয়েছে হেমাঙ্গ বিশ্বাস ও ভূপেন হাজারিকার গান দিয়ে।
সূচিপত্র দেখলেই বোঝা যায়, সম্পাদক বেহুলাকে যতভাবে, যত দৃষ্টিকোণ থেকে সম্ভব বোঝার চেষ্টা করেছেন। প্রায় ৫০০ বছর ধরে যে আখ্যান চলে আসছে বিহার থেকে বাংলা পর্যন্ত, বিভিন্ন দৃষ্টিতে সেই আখ্যানকে বিশ্লেষণ করার মতো কোনো প্রয়াস কোথাও নেই। ‘আধুনিক’ তকমার অধীনে যে সাহিত্য ও শিল্পকলার চর্চা হয়ে চলেছে আমাদের দেশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় বসে, তাতে বেহুলা অস্পৃশ্য—যেমন দেবতাদের জগতে অস্পৃশ্য ছিল মনসা। অথচ শ পাঁচেক বছর ধরে এই একই আখ্যান বিভিন্ন পাঠে গীত ও পরিবেশিত হয়ে আসছে আমাদের সমাজে, যাকে আমরা লোকসংস্কৃতি বলি সেই ধারার গানে, নাটকে, পুঁথিতে, কবিতায় ও চিত্রশিল্পে। আর বড় অংশ লোকধর্মের আধারে। ১৯৪৭ সালে যে কারণে একটি বৃহৎ ভূখণ্ড তিন টুকরো হয়ে গেল, বেহুলার মতো অনেক কিছুর চর্চায় তার অভিঘাত অস্বীকার করা যায় না বর্তমান বাংলাদেশে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ? সেখানেও তো বেহুলা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই। কারণ কী?
খুঁজে দেখলেই বোঝা যায়, এর পেছনের মূল কারণ মনসার মতো ‘উনকোটি’ বা অপ্রধান দেবতারা আসলে ক্ষমতাকাঠামোর বাইরের বলয়ের গল্প। যে ‘বত্রিশ জন-কোটি’ দেবতা বা প্রধান দেবতা, তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা সবখানেই। যেমন, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ইত্যাদি ‘কোটি’ বা প্রধান দেবতারা কিন্তু সাড়ম্বরে পূজিত সবখানে। অন্যদিকে মনসা, শনি বা এ রকম অপ্রধান বা উনকোটি দেবতারা থেকে গেছেন সমাজের নিচের তলায়। কাজেই তাঁদেরও চাঁদ বেনেদের সহায়তা দরকার সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে। বেহুলার আখ্যান সে কারণে তথাকথিত ‘আধুনিক’ সাহিত্য বা শিল্পকলার ‘দণ্ডধারী’দের কাছে তেমন পাত্তা পায়নি। একুশ শতকের সিকিভাগ চলে যাওয়ার কালে মননরেখা বেহুলাকে নিয়ে একটি বিস্তারিত সংকলন তৈরির চেষ্টা করেছে সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনায় রেখেও।
এই সংখ্যার সীমাবদ্ধতা কিছু আছে। সাদা চোখে বলা যায়, (১) বেহুলা নিয়ে আলোচনা হবে আর নদীর কথা থাকবে না, সেটা মানা যায় না। নদী নিয়ে একটি লেখা থাকা উচিত ছিল। তাহলে পুরো আলোচনাটা পূর্ণতা পেত। বেহুলার আলোচনায় নদী অনুপস্থিত থাকায় সংকলনের অঙ্গহানি হয়েছে। (২) বেহুলা ও মনসার সমাজতাত্ত্বিক আলোচনা নেই। কিন্তু ক্ষমতাকাঠামোর আলোকে কিংবা নারী ও পুরুষতান্ত্রিকতার আলোকে বেহুলাকে বিচার করার আলোচনা আছে। (৩) মনসামঙ্গল বা পদ্মাপুরাণের পরিচিতিমূলক একটা লেখা থাকতেই পারত। কারণ, বেহুলার আখ্যান এগুলোর মাধ্যমেই প্রচারিত হয়েছে। (৪) লেখার জন্য শব্দসংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া প্রয়োজন ছিল। কোনো লেখা দেড় হাজার আর কোনো লেখা তিন হাজার শব্দের হলে দৃষ্টিদূষণ তৈরি হয়। তার চেয়ে বরং মাঝামাঝি হওয়া ভালো। (৫) বুক ডিজাইনে আরেকটু যত্নবান হওয়া দরকার। প্রচ্ছদ, ইনার ডিজাইন, শব্দসংখ্যা, ফন্টের আকারসহ সবকিছু দিন শেষে বইয়েরই অংশ। এই সব মিলিয়েই একখানি দৃষ্টিনন্দন পুস্তক তৈরি হয়। আশা করব, ভবিষ্যতের মননরেখা সর্বাঙ্গীণ সুন্দর হবে।
তিন.
এবার মননরেখার আগের সংখ্যাগুলো নিয়ে একটু কথা বলা যাক।
মননরেখার এই সংখ্যার আগের সংখ্যাটি ছিল চিলমারী বন্দর নিয়ে। ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই/ হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে রে’ ভাওয়াইয়া গানের এই চিলমারী বন্দর যে এককালে বাণিজ্য-অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল, সে কথা কজন জানে? ভুলে যাওয়া এই বন্দরকে নতুন করে চিনিয়েছে মননরেখা (জুন, ২০২১ সংখ্যা)।
মোনাজাতউদ্দিনকে আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। কিন্তু মননরেখা তাঁকে আবার খুঁজে এনেছে (ডিসেম্বর, ২০১৭)। শুধু খুঁজেই আনেনি, বিবিধ দৃষ্টিকোণ থেকে মোনাজাতউদ্দিনকে চেনার চেষ্টা করেছে নতুনভাবে। এই চেষ্টা বড় একটা চোখে পড়ে না। মোনাজাতউদ্দিন রংপুরের মানুষ বলে নয়, সাংবাদিকতার ইতিহাসে দেশে একজন ‘প্রাতঃস্মরণীয়’ মানুষ তিনি। কোনো নির্দিষ্টতা দিয়ে মোনাজাতউদ্দিন ও তাঁর মানুষের গল্পকে যে ছকে বাঁধা যায় না, তাঁকে যে সাংবাদিক তকমার একরৈখিকতায় ধরা যায় না, বোঝা যায় না, সে বোধটুকু দেখিয়েছেন সম্পাদক।
জাতীয়তাবাদের একরৈখিক ধারায় নওশাদ নূরী (ডিসেম্বর, ২০১৮ সংখ্যা) ও আহমেদ ইলিয়াসকে (ডিসেম্বর, ২০২০ সংখ্যা) আমরা ভুলে গেছি বেমালুম। অথচ ‘খামোখা’ই বাস্তুচ্যুত হয়ে তাঁরা দুজনই ঘরের খোঁজ করেছেন প্রায় পুরো জীবন। অশীতিপর আহমেদ ইলিয়াস এখনো জীবিত থাকলেও নওশাদ নূরী মারা গেছেন ২০০০ সালে। এ দুই উর্দুভাষী কবিই বাংলা ভাষা ও বাঙালির জন্য কবিতা লিখেছেন, কথা বলেছেন। সে জন্য পাকিস্তানি শাসকদের রোষানলে পড়ে দেশ ছেড়েছেন, আবার ফিরে এসেছেন। পরিবার-স্বজন যখন তাঁদের ছেড়ে গেছেন, তখন তাঁরা এ দেশের মায়ায় পড়ে থেকে গেছেন এখানেই। মননরেখা আমাদের সেই সব গল্পই শুনিয়েছে। সেই সব ইতিহাস তুলে আনার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা করেছে। এখানেই মননরেখার গুরুত্ব।

ঠিক ছোট কাগজ বলব, নাকি বড় কাগজের ছোট সংস্করণ বলব—বিষয়টি বুঝে ওঠা কঠিন। ‘মননরেখা’ নামের মুদ্রিত পুস্তকখানি হাতে আসার পর সেরকমই অনুভূতি হলো। আবার ‘পুস্তক’ শব্দটি আমাদের সামনে যে চিত্রকল্প তুলে ধরে, তাতে এই শব্দও সুপ্রযুক্ত হচ্ছে কি না, সেটাও ভাববার বিষয়। শুরু থেকে জুন ২০১৯ পর্যন্ত এটি বছরে একটি বিশেষ সংখ্যা ও একটি সাধারণ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হতো। কিন্তু ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে মননরেখা পুরোপুরি বিশেষ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে। তাই মননরেখাকে আমরা আপাতত ‘সংকলন’ই বলি। বলতে চাইছি, কোনো বিশেষ ব্র্যাকেটে মননরেখা নামের সংকলনটিকে না বেঁধেও সেটি নিয়ে আলোচনা করা চলে, পড়া চলে, সংগ্রহে রাখা চলে।
পরিচয় আরও একটু দেওয়া দরকার। মননরেখা নামের এই সংকলন প্রকাশিত হচ্ছে রংপুর থেকে। অবশ্য মুদ্রণ ও বিপণনের বড় অংশ হয় রাজধানীতে। বিষয়বৈচিত্র্য, লেখার মান—সব দিক থেকে মননরেখার বিশেষ সংখ্যা, মানে ‘বিশেষ সংখ্যা’ই। সংখ্যাগুলোর বিষয়বস্তু জানলে অনেকেই চমকে উঠবেন। মোনাজাত উদ্দিন ও বিবিধ (ডিসেম্বর ২০১৭), বাংলাদেশের উর্দু কবি নওশাদ নূরী (ডিসেম্বর ২০১৮), বাংলাদেশের নারী কবি (ডিসেম্বর ২০১৯), বাংলাদেশের উর্দু কবি আহমেদ ইলিয়াস (ডিসেম্বর ২০২০), চিলমারী বন্দর (জুন ২০২১) এবং সর্বশেষ বেহুলা (ডিসেম্বর ২০২১)।
‘মননরেখা’ নামের এই সংকলনের সম্পাদক মিজানুর রহমান নাসিম। তিনি দর্শনের ছাত্র ও শিক্ষক। পড়ান কুড়িগ্রামের চিলমারীর গোলাম হাবিব মহিলা ডিগ্রি কলেজে। তাই সর্বান্তকরণে এই সংকলনকে ‘প্রান্তিক’ তকমা দেওয়া যায় খুব সহজে। কিন্তু কেন এত শব্দ খরচ মননরেখা নামের এই সংকলনের জন্য? বিবেচনার বিষয় সেটিই।
বাংলাদেশের ছোট কাগজের ইতিহাসে অনেক প্রকাশনা আছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার সংখ্যা হাতে গোনা—সেটি সাহিত্য কিংবা যেকোনো বিষয় নিয়েই হোক না কেন। এ বিষয়ে বিস্তর আলাপ হতে পারে, তর্কবিতর্কও হতে পারে। প্রসঙ্গটি তুলে রাখা ভালো যে, স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার সংখ্যা এতই কম যে, তা কোনো দিন সামনেই আসে না। অথচ স্থানীয় ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করেই একটি দেশের জাতীয় ইতিহাস রচিত হয়। মননরেখা ইতিহাস রচনার সে প্রক্রিয়াকে তুড়ি মেরে সরিয়ে দিয়ে নিজের পথ খুঁজে নিয়েছে। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনাগুলোর একটি মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা। গুণে ও মানে সেটিই বাংলাদেশের বিশেষ সম্পদ। ‘নিরন্তর’ নামে আরেকটি সংকলনের কথা বলা যায়। ‘ঝলক’ দেখিয়ে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। উল্লেখ করে রাখা ভালো, আমি কোনো তুলনায় যাচ্ছি না। প্রচেষ্টার কথা বলছি। মননরেখা অনেক রাস্তার ঘোরপ্যাঁচে নিজের রাস্তা খুঁজে নেওয়ার প্রচেষ্টার মধ্যে আছে।
দুই.
মননরেখার ‘বেহুলা সংখ্যা’ কয়েক দিন আগেই প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ৫০০ বছরের চর্চিত চরিত্র বেহুলাকে নিয়ে ২১টি ভিন্ন স্বাদের প্রবন্ধ রয়েছে এই সংকলনে। জীবনানন্দ, বিষ্ণু দে, শামসুর রাহমানসহ আট কবির আটটি কবিতার পুনর্মুদ্রণ, আছে শওকত আলীর ‘শুন হে লখিন্দর’ গল্পের পুনর্মুদ্রণসহ আরও তিনটি গল্প, মহাশ্বেতা দেবীর ‘বেহুলা’ গল্পের আলোচনা, বই আলোচনা দুটি এবং বেশ কিছু রঙিন ও সাদাকালো ছবি আছে সংকলনটিতে। এ ছাড়া আছে ‘বেহুলা’ সিনেমার অভিনেত্রী সুচন্দা ও ‘ফিরে এসো বেহুলা’ সিনেমার পরিচালক তানিম নূরের সাক্ষাৎকার। সংকলনটির শুরু হয়েছে হেমাঙ্গ বিশ্বাস ও ভূপেন হাজারিকার গান দিয়ে।
সূচিপত্র দেখলেই বোঝা যায়, সম্পাদক বেহুলাকে যতভাবে, যত দৃষ্টিকোণ থেকে সম্ভব বোঝার চেষ্টা করেছেন। প্রায় ৫০০ বছর ধরে যে আখ্যান চলে আসছে বিহার থেকে বাংলা পর্যন্ত, বিভিন্ন দৃষ্টিতে সেই আখ্যানকে বিশ্লেষণ করার মতো কোনো প্রয়াস কোথাও নেই। ‘আধুনিক’ তকমার অধীনে যে সাহিত্য ও শিল্পকলার চর্চা হয়ে চলেছে আমাদের দেশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় বসে, তাতে বেহুলা অস্পৃশ্য—যেমন দেবতাদের জগতে অস্পৃশ্য ছিল মনসা। অথচ শ পাঁচেক বছর ধরে এই একই আখ্যান বিভিন্ন পাঠে গীত ও পরিবেশিত হয়ে আসছে আমাদের সমাজে, যাকে আমরা লোকসংস্কৃতি বলি সেই ধারার গানে, নাটকে, পুঁথিতে, কবিতায় ও চিত্রশিল্পে। আর বড় অংশ লোকধর্মের আধারে। ১৯৪৭ সালে যে কারণে একটি বৃহৎ ভূখণ্ড তিন টুকরো হয়ে গেল, বেহুলার মতো অনেক কিছুর চর্চায় তার অভিঘাত অস্বীকার করা যায় না বর্তমান বাংলাদেশে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ? সেখানেও তো বেহুলা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই। কারণ কী?
খুঁজে দেখলেই বোঝা যায়, এর পেছনের মূল কারণ মনসার মতো ‘উনকোটি’ বা অপ্রধান দেবতারা আসলে ক্ষমতাকাঠামোর বাইরের বলয়ের গল্প। যে ‘বত্রিশ জন-কোটি’ দেবতা বা প্রধান দেবতা, তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা সবখানেই। যেমন, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ইত্যাদি ‘কোটি’ বা প্রধান দেবতারা কিন্তু সাড়ম্বরে পূজিত সবখানে। অন্যদিকে মনসা, শনি বা এ রকম অপ্রধান বা উনকোটি দেবতারা থেকে গেছেন সমাজের নিচের তলায়। কাজেই তাঁদেরও চাঁদ বেনেদের সহায়তা দরকার সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে। বেহুলার আখ্যান সে কারণে তথাকথিত ‘আধুনিক’ সাহিত্য বা শিল্পকলার ‘দণ্ডধারী’দের কাছে তেমন পাত্তা পায়নি। একুশ শতকের সিকিভাগ চলে যাওয়ার কালে মননরেখা বেহুলাকে নিয়ে একটি বিস্তারিত সংকলন তৈরির চেষ্টা করেছে সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনায় রেখেও।
এই সংখ্যার সীমাবদ্ধতা কিছু আছে। সাদা চোখে বলা যায়, (১) বেহুলা নিয়ে আলোচনা হবে আর নদীর কথা থাকবে না, সেটা মানা যায় না। নদী নিয়ে একটি লেখা থাকা উচিত ছিল। তাহলে পুরো আলোচনাটা পূর্ণতা পেত। বেহুলার আলোচনায় নদী অনুপস্থিত থাকায় সংকলনের অঙ্গহানি হয়েছে। (২) বেহুলা ও মনসার সমাজতাত্ত্বিক আলোচনা নেই। কিন্তু ক্ষমতাকাঠামোর আলোকে কিংবা নারী ও পুরুষতান্ত্রিকতার আলোকে বেহুলাকে বিচার করার আলোচনা আছে। (৩) মনসামঙ্গল বা পদ্মাপুরাণের পরিচিতিমূলক একটা লেখা থাকতেই পারত। কারণ, বেহুলার আখ্যান এগুলোর মাধ্যমেই প্রচারিত হয়েছে। (৪) লেখার জন্য শব্দসংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া প্রয়োজন ছিল। কোনো লেখা দেড় হাজার আর কোনো লেখা তিন হাজার শব্দের হলে দৃষ্টিদূষণ তৈরি হয়। তার চেয়ে বরং মাঝামাঝি হওয়া ভালো। (৫) বুক ডিজাইনে আরেকটু যত্নবান হওয়া দরকার। প্রচ্ছদ, ইনার ডিজাইন, শব্দসংখ্যা, ফন্টের আকারসহ সবকিছু দিন শেষে বইয়েরই অংশ। এই সব মিলিয়েই একখানি দৃষ্টিনন্দন পুস্তক তৈরি হয়। আশা করব, ভবিষ্যতের মননরেখা সর্বাঙ্গীণ সুন্দর হবে।
তিন.
এবার মননরেখার আগের সংখ্যাগুলো নিয়ে একটু কথা বলা যাক।
মননরেখার এই সংখ্যার আগের সংখ্যাটি ছিল চিলমারী বন্দর নিয়ে। ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই/ হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে রে’ ভাওয়াইয়া গানের এই চিলমারী বন্দর যে এককালে বাণিজ্য-অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল, সে কথা কজন জানে? ভুলে যাওয়া এই বন্দরকে নতুন করে চিনিয়েছে মননরেখা (জুন, ২০২১ সংখ্যা)।
মোনাজাতউদ্দিনকে আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। কিন্তু মননরেখা তাঁকে আবার খুঁজে এনেছে (ডিসেম্বর, ২০১৭)। শুধু খুঁজেই আনেনি, বিবিধ দৃষ্টিকোণ থেকে মোনাজাতউদ্দিনকে চেনার চেষ্টা করেছে নতুনভাবে। এই চেষ্টা বড় একটা চোখে পড়ে না। মোনাজাতউদ্দিন রংপুরের মানুষ বলে নয়, সাংবাদিকতার ইতিহাসে দেশে একজন ‘প্রাতঃস্মরণীয়’ মানুষ তিনি। কোনো নির্দিষ্টতা দিয়ে মোনাজাতউদ্দিন ও তাঁর মানুষের গল্পকে যে ছকে বাঁধা যায় না, তাঁকে যে সাংবাদিক তকমার একরৈখিকতায় ধরা যায় না, বোঝা যায় না, সে বোধটুকু দেখিয়েছেন সম্পাদক।
জাতীয়তাবাদের একরৈখিক ধারায় নওশাদ নূরী (ডিসেম্বর, ২০১৮ সংখ্যা) ও আহমেদ ইলিয়াসকে (ডিসেম্বর, ২০২০ সংখ্যা) আমরা ভুলে গেছি বেমালুম। অথচ ‘খামোখা’ই বাস্তুচ্যুত হয়ে তাঁরা দুজনই ঘরের খোঁজ করেছেন প্রায় পুরো জীবন। অশীতিপর আহমেদ ইলিয়াস এখনো জীবিত থাকলেও নওশাদ নূরী মারা গেছেন ২০০০ সালে। এ দুই উর্দুভাষী কবিই বাংলা ভাষা ও বাঙালির জন্য কবিতা লিখেছেন, কথা বলেছেন। সে জন্য পাকিস্তানি শাসকদের রোষানলে পড়ে দেশ ছেড়েছেন, আবার ফিরে এসেছেন। পরিবার-স্বজন যখন তাঁদের ছেড়ে গেছেন, তখন তাঁরা এ দেশের মায়ায় পড়ে থেকে গেছেন এখানেই। মননরেখা আমাদের সেই সব গল্পই শুনিয়েছে। সেই সব ইতিহাস তুলে আনার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা করেছে। এখানেই মননরেখার গুরুত্ব।
একলব্য

ঠিক ছোট কাগজ বলব, নাকি বড় কাগজের ছোট সংস্করণ বলব—বিষয়টি বুঝে ওঠা কঠিন। ‘মননরেখা’ নামের মুদ্রিত পুস্তকখানি হাতে আসার পর সেরকমই অনুভূতি হলো। আবার ‘পুস্তক’ শব্দটি আমাদের সামনে যে চিত্রকল্প তুলে ধরে, তাতে এই শব্দও সুপ্রযুক্ত হচ্ছে কি না, সেটাও ভাববার বিষয়। শুরু থেকে জুন ২০১৯ পর্যন্ত এটি বছরে একটি বিশেষ সংখ্যা ও একটি সাধারণ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হতো। কিন্তু ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে মননরেখা পুরোপুরি বিশেষ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে। তাই মননরেখাকে আমরা আপাতত ‘সংকলন’ই বলি। বলতে চাইছি, কোনো বিশেষ ব্র্যাকেটে মননরেখা নামের সংকলনটিকে না বেঁধেও সেটি নিয়ে আলোচনা করা চলে, পড়া চলে, সংগ্রহে রাখা চলে।
পরিচয় আরও একটু দেওয়া দরকার। মননরেখা নামের এই সংকলন প্রকাশিত হচ্ছে রংপুর থেকে। অবশ্য মুদ্রণ ও বিপণনের বড় অংশ হয় রাজধানীতে। বিষয়বৈচিত্র্য, লেখার মান—সব দিক থেকে মননরেখার বিশেষ সংখ্যা, মানে ‘বিশেষ সংখ্যা’ই। সংখ্যাগুলোর বিষয়বস্তু জানলে অনেকেই চমকে উঠবেন। মোনাজাত উদ্দিন ও বিবিধ (ডিসেম্বর ২০১৭), বাংলাদেশের উর্দু কবি নওশাদ নূরী (ডিসেম্বর ২০১৮), বাংলাদেশের নারী কবি (ডিসেম্বর ২০১৯), বাংলাদেশের উর্দু কবি আহমেদ ইলিয়াস (ডিসেম্বর ২০২০), চিলমারী বন্দর (জুন ২০২১) এবং সর্বশেষ বেহুলা (ডিসেম্বর ২০২১)।
‘মননরেখা’ নামের এই সংকলনের সম্পাদক মিজানুর রহমান নাসিম। তিনি দর্শনের ছাত্র ও শিক্ষক। পড়ান কুড়িগ্রামের চিলমারীর গোলাম হাবিব মহিলা ডিগ্রি কলেজে। তাই সর্বান্তকরণে এই সংকলনকে ‘প্রান্তিক’ তকমা দেওয়া যায় খুব সহজে। কিন্তু কেন এত শব্দ খরচ মননরেখা নামের এই সংকলনের জন্য? বিবেচনার বিষয় সেটিই।
বাংলাদেশের ছোট কাগজের ইতিহাসে অনেক প্রকাশনা আছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার সংখ্যা হাতে গোনা—সেটি সাহিত্য কিংবা যেকোনো বিষয় নিয়েই হোক না কেন। এ বিষয়ে বিস্তর আলাপ হতে পারে, তর্কবিতর্কও হতে পারে। প্রসঙ্গটি তুলে রাখা ভালো যে, স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার সংখ্যা এতই কম যে, তা কোনো দিন সামনেই আসে না। অথচ স্থানীয় ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করেই একটি দেশের জাতীয় ইতিহাস রচিত হয়। মননরেখা ইতিহাস রচনার সে প্রক্রিয়াকে তুড়ি মেরে সরিয়ে দিয়ে নিজের পথ খুঁজে নিয়েছে। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনাগুলোর একটি মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা। গুণে ও মানে সেটিই বাংলাদেশের বিশেষ সম্পদ। ‘নিরন্তর’ নামে আরেকটি সংকলনের কথা বলা যায়। ‘ঝলক’ দেখিয়ে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। উল্লেখ করে রাখা ভালো, আমি কোনো তুলনায় যাচ্ছি না। প্রচেষ্টার কথা বলছি। মননরেখা অনেক রাস্তার ঘোরপ্যাঁচে নিজের রাস্তা খুঁজে নেওয়ার প্রচেষ্টার মধ্যে আছে।
দুই.
মননরেখার ‘বেহুলা সংখ্যা’ কয়েক দিন আগেই প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ৫০০ বছরের চর্চিত চরিত্র বেহুলাকে নিয়ে ২১টি ভিন্ন স্বাদের প্রবন্ধ রয়েছে এই সংকলনে। জীবনানন্দ, বিষ্ণু দে, শামসুর রাহমানসহ আট কবির আটটি কবিতার পুনর্মুদ্রণ, আছে শওকত আলীর ‘শুন হে লখিন্দর’ গল্পের পুনর্মুদ্রণসহ আরও তিনটি গল্প, মহাশ্বেতা দেবীর ‘বেহুলা’ গল্পের আলোচনা, বই আলোচনা দুটি এবং বেশ কিছু রঙিন ও সাদাকালো ছবি আছে সংকলনটিতে। এ ছাড়া আছে ‘বেহুলা’ সিনেমার অভিনেত্রী সুচন্দা ও ‘ফিরে এসো বেহুলা’ সিনেমার পরিচালক তানিম নূরের সাক্ষাৎকার। সংকলনটির শুরু হয়েছে হেমাঙ্গ বিশ্বাস ও ভূপেন হাজারিকার গান দিয়ে।
সূচিপত্র দেখলেই বোঝা যায়, সম্পাদক বেহুলাকে যতভাবে, যত দৃষ্টিকোণ থেকে সম্ভব বোঝার চেষ্টা করেছেন। প্রায় ৫০০ বছর ধরে যে আখ্যান চলে আসছে বিহার থেকে বাংলা পর্যন্ত, বিভিন্ন দৃষ্টিতে সেই আখ্যানকে বিশ্লেষণ করার মতো কোনো প্রয়াস কোথাও নেই। ‘আধুনিক’ তকমার অধীনে যে সাহিত্য ও শিল্পকলার চর্চা হয়ে চলেছে আমাদের দেশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় বসে, তাতে বেহুলা অস্পৃশ্য—যেমন দেবতাদের জগতে অস্পৃশ্য ছিল মনসা। অথচ শ পাঁচেক বছর ধরে এই একই আখ্যান বিভিন্ন পাঠে গীত ও পরিবেশিত হয়ে আসছে আমাদের সমাজে, যাকে আমরা লোকসংস্কৃতি বলি সেই ধারার গানে, নাটকে, পুঁথিতে, কবিতায় ও চিত্রশিল্পে। আর বড় অংশ লোকধর্মের আধারে। ১৯৪৭ সালে যে কারণে একটি বৃহৎ ভূখণ্ড তিন টুকরো হয়ে গেল, বেহুলার মতো অনেক কিছুর চর্চায় তার অভিঘাত অস্বীকার করা যায় না বর্তমান বাংলাদেশে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ? সেখানেও তো বেহুলা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই। কারণ কী?
খুঁজে দেখলেই বোঝা যায়, এর পেছনের মূল কারণ মনসার মতো ‘উনকোটি’ বা অপ্রধান দেবতারা আসলে ক্ষমতাকাঠামোর বাইরের বলয়ের গল্প। যে ‘বত্রিশ জন-কোটি’ দেবতা বা প্রধান দেবতা, তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা সবখানেই। যেমন, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ইত্যাদি ‘কোটি’ বা প্রধান দেবতারা কিন্তু সাড়ম্বরে পূজিত সবখানে। অন্যদিকে মনসা, শনি বা এ রকম অপ্রধান বা উনকোটি দেবতারা থেকে গেছেন সমাজের নিচের তলায়। কাজেই তাঁদেরও চাঁদ বেনেদের সহায়তা দরকার সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে। বেহুলার আখ্যান সে কারণে তথাকথিত ‘আধুনিক’ সাহিত্য বা শিল্পকলার ‘দণ্ডধারী’দের কাছে তেমন পাত্তা পায়নি। একুশ শতকের সিকিভাগ চলে যাওয়ার কালে মননরেখা বেহুলাকে নিয়ে একটি বিস্তারিত সংকলন তৈরির চেষ্টা করেছে সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনায় রেখেও।
এই সংখ্যার সীমাবদ্ধতা কিছু আছে। সাদা চোখে বলা যায়, (১) বেহুলা নিয়ে আলোচনা হবে আর নদীর কথা থাকবে না, সেটা মানা যায় না। নদী নিয়ে একটি লেখা থাকা উচিত ছিল। তাহলে পুরো আলোচনাটা পূর্ণতা পেত। বেহুলার আলোচনায় নদী অনুপস্থিত থাকায় সংকলনের অঙ্গহানি হয়েছে। (২) বেহুলা ও মনসার সমাজতাত্ত্বিক আলোচনা নেই। কিন্তু ক্ষমতাকাঠামোর আলোকে কিংবা নারী ও পুরুষতান্ত্রিকতার আলোকে বেহুলাকে বিচার করার আলোচনা আছে। (৩) মনসামঙ্গল বা পদ্মাপুরাণের পরিচিতিমূলক একটা লেখা থাকতেই পারত। কারণ, বেহুলার আখ্যান এগুলোর মাধ্যমেই প্রচারিত হয়েছে। (৪) লেখার জন্য শব্দসংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া প্রয়োজন ছিল। কোনো লেখা দেড় হাজার আর কোনো লেখা তিন হাজার শব্দের হলে দৃষ্টিদূষণ তৈরি হয়। তার চেয়ে বরং মাঝামাঝি হওয়া ভালো। (৫) বুক ডিজাইনে আরেকটু যত্নবান হওয়া দরকার। প্রচ্ছদ, ইনার ডিজাইন, শব্দসংখ্যা, ফন্টের আকারসহ সবকিছু দিন শেষে বইয়েরই অংশ। এই সব মিলিয়েই একখানি দৃষ্টিনন্দন পুস্তক তৈরি হয়। আশা করব, ভবিষ্যতের মননরেখা সর্বাঙ্গীণ সুন্দর হবে।
তিন.
এবার মননরেখার আগের সংখ্যাগুলো নিয়ে একটু কথা বলা যাক।
মননরেখার এই সংখ্যার আগের সংখ্যাটি ছিল চিলমারী বন্দর নিয়ে। ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই/ হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে রে’ ভাওয়াইয়া গানের এই চিলমারী বন্দর যে এককালে বাণিজ্য-অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল, সে কথা কজন জানে? ভুলে যাওয়া এই বন্দরকে নতুন করে চিনিয়েছে মননরেখা (জুন, ২০২১ সংখ্যা)।
মোনাজাতউদ্দিনকে আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। কিন্তু মননরেখা তাঁকে আবার খুঁজে এনেছে (ডিসেম্বর, ২০১৭)। শুধু খুঁজেই আনেনি, বিবিধ দৃষ্টিকোণ থেকে মোনাজাতউদ্দিনকে চেনার চেষ্টা করেছে নতুনভাবে। এই চেষ্টা বড় একটা চোখে পড়ে না। মোনাজাতউদ্দিন রংপুরের মানুষ বলে নয়, সাংবাদিকতার ইতিহাসে দেশে একজন ‘প্রাতঃস্মরণীয়’ মানুষ তিনি। কোনো নির্দিষ্টতা দিয়ে মোনাজাতউদ্দিন ও তাঁর মানুষের গল্পকে যে ছকে বাঁধা যায় না, তাঁকে যে সাংবাদিক তকমার একরৈখিকতায় ধরা যায় না, বোঝা যায় না, সে বোধটুকু দেখিয়েছেন সম্পাদক।
জাতীয়তাবাদের একরৈখিক ধারায় নওশাদ নূরী (ডিসেম্বর, ২০১৮ সংখ্যা) ও আহমেদ ইলিয়াসকে (ডিসেম্বর, ২০২০ সংখ্যা) আমরা ভুলে গেছি বেমালুম। অথচ ‘খামোখা’ই বাস্তুচ্যুত হয়ে তাঁরা দুজনই ঘরের খোঁজ করেছেন প্রায় পুরো জীবন। অশীতিপর আহমেদ ইলিয়াস এখনো জীবিত থাকলেও নওশাদ নূরী মারা গেছেন ২০০০ সালে। এ দুই উর্দুভাষী কবিই বাংলা ভাষা ও বাঙালির জন্য কবিতা লিখেছেন, কথা বলেছেন। সে জন্য পাকিস্তানি শাসকদের রোষানলে পড়ে দেশ ছেড়েছেন, আবার ফিরে এসেছেন। পরিবার-স্বজন যখন তাঁদের ছেড়ে গেছেন, তখন তাঁরা এ দেশের মায়ায় পড়ে থেকে গেছেন এখানেই। মননরেখা আমাদের সেই সব গল্পই শুনিয়েছে। সেই সব ইতিহাস তুলে আনার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা করেছে। এখানেই মননরেখার গুরুত্ব।

ঠিক ছোট কাগজ বলব, নাকি বড় কাগজের ছোট সংস্করণ বলব—বিষয়টি বুঝে ওঠা কঠিন। ‘মননরেখা’ নামের মুদ্রিত পুস্তকখানি হাতে আসার পর সেরকমই অনুভূতি হলো। আবার ‘পুস্তক’ শব্দটি আমাদের সামনে যে চিত্রকল্প তুলে ধরে, তাতে এই শব্দও সুপ্রযুক্ত হচ্ছে কি না, সেটাও ভাববার বিষয়। শুরু থেকে জুন ২০১৯ পর্যন্ত এটি বছরে একটি বিশেষ সংখ্যা ও একটি সাধারণ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হতো। কিন্তু ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে মননরেখা পুরোপুরি বিশেষ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে। তাই মননরেখাকে আমরা আপাতত ‘সংকলন’ই বলি। বলতে চাইছি, কোনো বিশেষ ব্র্যাকেটে মননরেখা নামের সংকলনটিকে না বেঁধেও সেটি নিয়ে আলোচনা করা চলে, পড়া চলে, সংগ্রহে রাখা চলে।
পরিচয় আরও একটু দেওয়া দরকার। মননরেখা নামের এই সংকলন প্রকাশিত হচ্ছে রংপুর থেকে। অবশ্য মুদ্রণ ও বিপণনের বড় অংশ হয় রাজধানীতে। বিষয়বৈচিত্র্য, লেখার মান—সব দিক থেকে মননরেখার বিশেষ সংখ্যা, মানে ‘বিশেষ সংখ্যা’ই। সংখ্যাগুলোর বিষয়বস্তু জানলে অনেকেই চমকে উঠবেন। মোনাজাত উদ্দিন ও বিবিধ (ডিসেম্বর ২০১৭), বাংলাদেশের উর্দু কবি নওশাদ নূরী (ডিসেম্বর ২০১৮), বাংলাদেশের নারী কবি (ডিসেম্বর ২০১৯), বাংলাদেশের উর্দু কবি আহমেদ ইলিয়াস (ডিসেম্বর ২০২০), চিলমারী বন্দর (জুন ২০২১) এবং সর্বশেষ বেহুলা (ডিসেম্বর ২০২১)।
‘মননরেখা’ নামের এই সংকলনের সম্পাদক মিজানুর রহমান নাসিম। তিনি দর্শনের ছাত্র ও শিক্ষক। পড়ান কুড়িগ্রামের চিলমারীর গোলাম হাবিব মহিলা ডিগ্রি কলেজে। তাই সর্বান্তকরণে এই সংকলনকে ‘প্রান্তিক’ তকমা দেওয়া যায় খুব সহজে। কিন্তু কেন এত শব্দ খরচ মননরেখা নামের এই সংকলনের জন্য? বিবেচনার বিষয় সেটিই।
বাংলাদেশের ছোট কাগজের ইতিহাসে অনেক প্রকাশনা আছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার সংখ্যা হাতে গোনা—সেটি সাহিত্য কিংবা যেকোনো বিষয় নিয়েই হোক না কেন। এ বিষয়ে বিস্তর আলাপ হতে পারে, তর্কবিতর্কও হতে পারে। প্রসঙ্গটি তুলে রাখা ভালো যে, স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার সংখ্যা এতই কম যে, তা কোনো দিন সামনেই আসে না। অথচ স্থানীয় ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করেই একটি দেশের জাতীয় ইতিহাস রচিত হয়। মননরেখা ইতিহাস রচনার সে প্রক্রিয়াকে তুড়ি মেরে সরিয়ে দিয়ে নিজের পথ খুঁজে নিয়েছে। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনাগুলোর একটি মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা। গুণে ও মানে সেটিই বাংলাদেশের বিশেষ সম্পদ। ‘নিরন্তর’ নামে আরেকটি সংকলনের কথা বলা যায়। ‘ঝলক’ দেখিয়ে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। উল্লেখ করে রাখা ভালো, আমি কোনো তুলনায় যাচ্ছি না। প্রচেষ্টার কথা বলছি। মননরেখা অনেক রাস্তার ঘোরপ্যাঁচে নিজের রাস্তা খুঁজে নেওয়ার প্রচেষ্টার মধ্যে আছে।
দুই.
মননরেখার ‘বেহুলা সংখ্যা’ কয়েক দিন আগেই প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ৫০০ বছরের চর্চিত চরিত্র বেহুলাকে নিয়ে ২১টি ভিন্ন স্বাদের প্রবন্ধ রয়েছে এই সংকলনে। জীবনানন্দ, বিষ্ণু দে, শামসুর রাহমানসহ আট কবির আটটি কবিতার পুনর্মুদ্রণ, আছে শওকত আলীর ‘শুন হে লখিন্দর’ গল্পের পুনর্মুদ্রণসহ আরও তিনটি গল্প, মহাশ্বেতা দেবীর ‘বেহুলা’ গল্পের আলোচনা, বই আলোচনা দুটি এবং বেশ কিছু রঙিন ও সাদাকালো ছবি আছে সংকলনটিতে। এ ছাড়া আছে ‘বেহুলা’ সিনেমার অভিনেত্রী সুচন্দা ও ‘ফিরে এসো বেহুলা’ সিনেমার পরিচালক তানিম নূরের সাক্ষাৎকার। সংকলনটির শুরু হয়েছে হেমাঙ্গ বিশ্বাস ও ভূপেন হাজারিকার গান দিয়ে।
সূচিপত্র দেখলেই বোঝা যায়, সম্পাদক বেহুলাকে যতভাবে, যত দৃষ্টিকোণ থেকে সম্ভব বোঝার চেষ্টা করেছেন। প্রায় ৫০০ বছর ধরে যে আখ্যান চলে আসছে বিহার থেকে বাংলা পর্যন্ত, বিভিন্ন দৃষ্টিতে সেই আখ্যানকে বিশ্লেষণ করার মতো কোনো প্রয়াস কোথাও নেই। ‘আধুনিক’ তকমার অধীনে যে সাহিত্য ও শিল্পকলার চর্চা হয়ে চলেছে আমাদের দেশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় বসে, তাতে বেহুলা অস্পৃশ্য—যেমন দেবতাদের জগতে অস্পৃশ্য ছিল মনসা। অথচ শ পাঁচেক বছর ধরে এই একই আখ্যান বিভিন্ন পাঠে গীত ও পরিবেশিত হয়ে আসছে আমাদের সমাজে, যাকে আমরা লোকসংস্কৃতি বলি সেই ধারার গানে, নাটকে, পুঁথিতে, কবিতায় ও চিত্রশিল্পে। আর বড় অংশ লোকধর্মের আধারে। ১৯৪৭ সালে যে কারণে একটি বৃহৎ ভূখণ্ড তিন টুকরো হয়ে গেল, বেহুলার মতো অনেক কিছুর চর্চায় তার অভিঘাত অস্বীকার করা যায় না বর্তমান বাংলাদেশে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ? সেখানেও তো বেহুলা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই। কারণ কী?
খুঁজে দেখলেই বোঝা যায়, এর পেছনের মূল কারণ মনসার মতো ‘উনকোটি’ বা অপ্রধান দেবতারা আসলে ক্ষমতাকাঠামোর বাইরের বলয়ের গল্প। যে ‘বত্রিশ জন-কোটি’ দেবতা বা প্রধান দেবতা, তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা সবখানেই। যেমন, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ইত্যাদি ‘কোটি’ বা প্রধান দেবতারা কিন্তু সাড়ম্বরে পূজিত সবখানে। অন্যদিকে মনসা, শনি বা এ রকম অপ্রধান বা উনকোটি দেবতারা থেকে গেছেন সমাজের নিচের তলায়। কাজেই তাঁদেরও চাঁদ বেনেদের সহায়তা দরকার সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে। বেহুলার আখ্যান সে কারণে তথাকথিত ‘আধুনিক’ সাহিত্য বা শিল্পকলার ‘দণ্ডধারী’দের কাছে তেমন পাত্তা পায়নি। একুশ শতকের সিকিভাগ চলে যাওয়ার কালে মননরেখা বেহুলাকে নিয়ে একটি বিস্তারিত সংকলন তৈরির চেষ্টা করেছে সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনায় রেখেও।
এই সংখ্যার সীমাবদ্ধতা কিছু আছে। সাদা চোখে বলা যায়, (১) বেহুলা নিয়ে আলোচনা হবে আর নদীর কথা থাকবে না, সেটা মানা যায় না। নদী নিয়ে একটি লেখা থাকা উচিত ছিল। তাহলে পুরো আলোচনাটা পূর্ণতা পেত। বেহুলার আলোচনায় নদী অনুপস্থিত থাকায় সংকলনের অঙ্গহানি হয়েছে। (২) বেহুলা ও মনসার সমাজতাত্ত্বিক আলোচনা নেই। কিন্তু ক্ষমতাকাঠামোর আলোকে কিংবা নারী ও পুরুষতান্ত্রিকতার আলোকে বেহুলাকে বিচার করার আলোচনা আছে। (৩) মনসামঙ্গল বা পদ্মাপুরাণের পরিচিতিমূলক একটা লেখা থাকতেই পারত। কারণ, বেহুলার আখ্যান এগুলোর মাধ্যমেই প্রচারিত হয়েছে। (৪) লেখার জন্য শব্দসংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া প্রয়োজন ছিল। কোনো লেখা দেড় হাজার আর কোনো লেখা তিন হাজার শব্দের হলে দৃষ্টিদূষণ তৈরি হয়। তার চেয়ে বরং মাঝামাঝি হওয়া ভালো। (৫) বুক ডিজাইনে আরেকটু যত্নবান হওয়া দরকার। প্রচ্ছদ, ইনার ডিজাইন, শব্দসংখ্যা, ফন্টের আকারসহ সবকিছু দিন শেষে বইয়েরই অংশ। এই সব মিলিয়েই একখানি দৃষ্টিনন্দন পুস্তক তৈরি হয়। আশা করব, ভবিষ্যতের মননরেখা সর্বাঙ্গীণ সুন্দর হবে।
তিন.
এবার মননরেখার আগের সংখ্যাগুলো নিয়ে একটু কথা বলা যাক।
মননরেখার এই সংখ্যার আগের সংখ্যাটি ছিল চিলমারী বন্দর নিয়ে। ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই/ হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে রে’ ভাওয়াইয়া গানের এই চিলমারী বন্দর যে এককালে বাণিজ্য-অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল, সে কথা কজন জানে? ভুলে যাওয়া এই বন্দরকে নতুন করে চিনিয়েছে মননরেখা (জুন, ২০২১ সংখ্যা)।
মোনাজাতউদ্দিনকে আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। কিন্তু মননরেখা তাঁকে আবার খুঁজে এনেছে (ডিসেম্বর, ২০১৭)। শুধু খুঁজেই আনেনি, বিবিধ দৃষ্টিকোণ থেকে মোনাজাতউদ্দিনকে চেনার চেষ্টা করেছে নতুনভাবে। এই চেষ্টা বড় একটা চোখে পড়ে না। মোনাজাতউদ্দিন রংপুরের মানুষ বলে নয়, সাংবাদিকতার ইতিহাসে দেশে একজন ‘প্রাতঃস্মরণীয়’ মানুষ তিনি। কোনো নির্দিষ্টতা দিয়ে মোনাজাতউদ্দিন ও তাঁর মানুষের গল্পকে যে ছকে বাঁধা যায় না, তাঁকে যে সাংবাদিক তকমার একরৈখিকতায় ধরা যায় না, বোঝা যায় না, সে বোধটুকু দেখিয়েছেন সম্পাদক।
জাতীয়তাবাদের একরৈখিক ধারায় নওশাদ নূরী (ডিসেম্বর, ২০১৮ সংখ্যা) ও আহমেদ ইলিয়াসকে (ডিসেম্বর, ২০২০ সংখ্যা) আমরা ভুলে গেছি বেমালুম। অথচ ‘খামোখা’ই বাস্তুচ্যুত হয়ে তাঁরা দুজনই ঘরের খোঁজ করেছেন প্রায় পুরো জীবন। অশীতিপর আহমেদ ইলিয়াস এখনো জীবিত থাকলেও নওশাদ নূরী মারা গেছেন ২০০০ সালে। এ দুই উর্দুভাষী কবিই বাংলা ভাষা ও বাঙালির জন্য কবিতা লিখেছেন, কথা বলেছেন। সে জন্য পাকিস্তানি শাসকদের রোষানলে পড়ে দেশ ছেড়েছেন, আবার ফিরে এসেছেন। পরিবার-স্বজন যখন তাঁদের ছেড়ে গেছেন, তখন তাঁরা এ দেশের মায়ায় পড়ে থেকে গেছেন এখানেই। মননরেখা আমাদের সেই সব গল্পই শুনিয়েছে। সেই সব ইতিহাস তুলে আনার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা করেছে। এখানেই মননরেখার গুরুত্ব।

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
২ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
২ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে। শুধু তা-ই নয়, তাঁকে কিন্তু কখনো গহিন অরণ্যের আস্তানায় সশস্ত্র রক্ষীবেষ্টিত হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়নি। তাঁর মাদক কারবারের আয় গোটা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখত। আর তাঁকে কখনো জেলে যাওয়ার চিন্তা করতে হয়নি। কারণ, মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা যাঁদের ছিল, তাঁরা সবাই ছিলেন তাঁর বেতনভুক্ত কর্মচারী!
তিনি আর কেউ নন, তিনি রানি ভিক্টোরিয়া। তাঁর হাতে ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দণ্ড।
রানি ভিক্টোরিয়া শুধু সাম্রাজ্য পরিচালনাতেই মাদক ব্যবহার করেননি, ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন বিভিন্ন ধরনের ড্রাগের ভক্ত। সিংহাসনে আরোহণের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।
ভিক্টোরিয়ার অন্যতম প্রিয় মাদক ছিল আফিম। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে আফিম সেবনের ফ্যাশনেবল উপায় ছিল—অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশিয়ে লডেনাম আকারে পান করা। তীব্র ব্যথা বা অস্বস্তি দূর করতে এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। এমনকি দাঁত ওঠার সময় শিশুদের জন্যও এটি সুপারিশ করতেন চিকিৎসকেরা। রানি ভিক্টোরিয়াও প্রতিদিন সকালে এক ঢোক লডেনাম পান করে দিন শুরু করতেন।
এ ছাড়া তিনি সেবন করতেন কোকেন। এটি তখন ছিল সম্পূর্ণ নতুন এবং বৈধ। দাঁতের ব্যথা উপশম এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য রানি কোকেন মিশ্রিত চুইংগাম ও ওয়াইন পছন্দ করতেন। প্রসবের সময় অসহনীয় যন্ত্রণা কমাতে তিনি সানন্দে ক্লোরোফর্ম গ্রহণ করেন এবং এই অভিজ্ঞতাটিকে ‘স্বর্গীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
১৮৩৭ সালে যখন ভিক্টোরিয়া সিংহাসনে বসেন, উত্তরাধিকারসূত্রে একটি বড় সংকটের বোঝা তাঁর ঘাড়ে চাপে—ব্রিটিশরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণ চা আমদানি করত। এর ফলে ব্রিটেনের সব অর্থ চীনে চলে যাচ্ছিল। আর ওই সময় ব্রিটিশদের হাতে চীনে রপ্তানি করার মতো কিছু ছিল না। ব্রিটেন মরিয়া হয়ে এমন একটি পণ্যের সন্ধান করছিল, যা চীনের লোকেরা চাইবে।
এ সমস্যার সমাধান ছিল আফিম। ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভারতে প্রচুর আফিম উৎপাদিত হতো। এটি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ব্যথানাশক এবং মারাত্মকভাবে আসক্তি সৃষ্টিকারী। ফলে চীনের লোকেরা এর জন্য প্রচুর দাম দিতে প্রস্তুত ছিল। রানি ভিক্টোরিয়ার শাসন শুরু হওয়ার পর, চীনে আফিমের চালান দ্রুত বাড়তে থাকে। আফিমের কল্যাণে রাতারাতি বাণিজ্য ভারসাম্য বদলে যায়। চীনই ব্রিটিশদের কাছে ঋণী হতে শুরু করে। মাদক কারবার থেকে আসা অর্থ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোট বার্ষিক আয়ের ১৫ থেকে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়।
চীন সরকার মরিয়া হয়ে আফিমের প্রবাহ বন্ধ করার চেষ্টা করে। চীনের সম্রাট এই কাজের জন্য প্রশাসক লিন জেক্সুকে নিয়োগ করেন। জেক্সু রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে একটি চিঠি লিখে ব্রিটিশদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন—চীন যেখানে চা, রেশম ও মৃৎপাত্রের মতো উপকারী পণ্য পাঠাচ্ছে, সেখানে ব্রিটেন কেন তার বিনিময়ে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষতিকর মাদক পাঠাচ্ছে?
রানি সেই চিঠি পড়ারও প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে ১৮৩৯ সালের বসন্তে লিন জেক্সু ব্রিটিশ জাহাজ বহর আটক করেন এবং প্রায় আড়াই মিলিয়ন পাউন্ড আফিম দক্ষিণ চীন সাগরে ফেলে দেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সী রানি ভিক্টোরিয়া এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। যেকোনো ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যবাদী কিশোরীর মতো তাঁর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিতই—তিনি চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এটিই ইতিহাসে প্রথম ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ বাহিনী চীনা সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে এবং হাজার হাজার চীনা নাগরিককে হত্যা করে। সম্রাট বাধ্য হয়ে একটি অসম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির ফলে হংকংকে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে হয়। চীনে আফিম ঢোকার জন্য আরও বন্দর খুলে দেওয়া হয় এবং চীনে বসবাসকারী ব্রিটিশ নাগরিকেরা আইনি সুরক্ষা পান।
এ ঘটনা বিশ্বজুড়ে চীন সাম্রাজ্যের অজেয় ভাবমূর্তি ভেঙে দেয়। এভাবেই একজন একগুঁয়ে কিশোরী রানি একটি প্রাচীন, মর্যাদাপূর্ণ সভ্যতাকে তাঁর সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করেন। এই নির্মম, নির্লজ্জ আত্মস্বার্থই রানি ভিক্টোরিয়াকে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল মাদক সম্রাট বানিয়ে তোলে!
তথ্যসূত্র: টাইম

ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে মননরেখা পুরোপুরি বিশেষ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে। তাই রংপুর থেকে প্রকাশিত মননরেখাকে আমরা আপাতত ‘সংকলন’ই বলি। বলতে চাইছি, কোনো বিশেষ ব্র্যাকেটে মননরেখা নামের সংকলনটিকে না বেঁধেও সেটি নিয়ে আলোচনা করা চলে, পড়া চলে, সংগ্রহে রাখা চলে।
২১ ডিসেম্বর ২০২১
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
২ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া হবে।
বুকার পুরস্কারের ইতিহাসে এই প্রথমবার বিচারক প্যানেলে থাকবে শিশুরাও। বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট শিশুসাহিত্যিক ফ্রাঙ্ক কটরেল-বয়েস বিচারকদের উদ্বোধনী প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারক থাকবেন, যাঁরা প্রথমে আটটি বইয়ের একটি শর্টলিস্ট তৈরি করবেন। এরপর বিজয়ী নির্ধারণে সহায়তা করার জন্য তিনজন শিশু বিচারক নির্বাচিত হবেন।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিবছর চিলড্রেনস বুকার প্রাইজের জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া এবং বিজয়ী বইগুলোর ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার দেওয়া হবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট, দ্য রিডিং এজেন্সি, বুকব্যাংকস এবং চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টসহ বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাদের মাধ্যমে এ বইগুলো দেওয়া হবে। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে শিশুদের ‘আনন্দ নিয়ে পড়া’র প্রবণতা। এমন সময় বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ উদ্যোগটি নিল।
কটরেল-বয়েস বলেন, এই পুরস্কার শিশুদের উপভোগ করার মতো বই খুঁজে বের করা সহজ করে তুলবে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি শিশুরই বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার যে আনন্দ, তা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া উচিত। বিচারক প্যানেলে তাদের আমন্ত্রণ জানানোর মাধ্যমে এবং মনোনীত বইগুলো উপহার দেওয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার শিশুকে বই পড়ার চমৎকার দুনিয়ায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটা বেশ দারুণ আয়োজন হতে যাচ্ছে।’ তিনি মজা করে বলেন, ‘চলুন, হইচই শুরু করা যাক!’
শিশুসাহিত্য জগতের শীর্ষ লেখকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে এ ঘোষণা। সাবেক শিশুসাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত মালরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকলিন উইলসন, মাইকেল মরপুরগো, ক্রেসিডা কাউয়েল, অ্যান ফাইন এবং জোসেফ কোয়েলোরা—সবাই নতুন এই পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
ইংরেজিতে লেখা বা ইংরেজিতে অনূদিত এবং যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত সমসাময়িক শিশুসাহিত্যগুলোতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রাপ্তবয়স্কদের বুকার এবং আন্তর্জাতিক বুকার পুরস্কারের মতোই বিজয়ী লেখক ৫০ হাজার পাউন্ড এবং শর্টলিস্টেড লেখকেরা প্রত্যেকে ২ হাজার ৫০০ পাউন্ড পাবেন।
প্রথম চিলড্রেনস বুকার পুরস্কারের জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ২০২৬ সালের বসন্তে। বিচারক হতে শিশুদের আবেদন প্রক্রিয়াও এই সময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই বছরের নভেম্বরে ঘোষণা করা হবে শর্টলিস্ট এবং শিশু বিচারকদের নাম। বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তরুণ পাঠকদের জন্য আয়োজিত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে। ২০২৭ সালের পুরস্কারের জন্য ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশিত বই হতে হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিল্পকলায় সমর্থন এবং জলবায়ু-সংকট মোকাবিলায় কাজ করা দাতব্য সংস্থা একেও ফাউন্ডেশনের (AKO Foundation) সহযোগিতায় এ পুরস্কার পরিচালিত হবে।
বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) গ্যাবি উড বলেন, ‘২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক বুকার প্রাইজ চালুর পর গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগ চিলড্রেনস বুকার। এর একাধিক লক্ষ্য রয়েছে। একদিকে এটি শিশুদের জন্য লেখা ভবিষ্যৎ ক্লাসিক সাহিত্যকে সম্মান জানাবে, অন্যদিকে এটি এমন একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা তরুণদের আরও বেশি করে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত করবে। এর মাধ্যমেই আমরা এমন এক বীজ রোপণ করতে চাই, যেখান থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আজীবন পাঠকেরা বিকশিত হবে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, শিশুদের বিশেষ করে শিশুসাহিত্যের আসল বিচারকদের মতামত শোনার জন্য।
একেও ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফিলিপ ল-ফোর্ড বলেন, ‘এই অংশীদারত্ব ফাউন্ডেশনের সাক্ষরতা বৃদ্ধি ও সামাজিক গতিশীলতা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা গর্বিত যে এমন একটি প্রকল্পে অবদান রাখতে পারছি, যা তরুণ পাঠকদের অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়িত করবে।’
বিনো ব্রেইন নামের একটি যুব গবেষণা সংস্থা ও ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্টের সহযোগিতায় নিয়মিত পরামর্শ সেশনের মাধ্যমে শিশুরা এই পুরস্কারের গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। ন্যাশনাল লিটারেসি ট্রাস্ট শিশুদের পড়ার অভ্যাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা মূল্যায়নে সহায়তা করবে।
বুকার ফাউন্ডেশনের মতে, এই নতুন পুরস্কারটি শিশুসাহিত্যকে ‘সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন’ করার একটি প্রচেষ্টা। সিইও গ্যাবি উড বলেন, ‘এই উদ্যোগের লক্ষ্য শুধু শিশুসাহিত্যে উৎকর্ষকে স্বীকৃতি দেওয়া নয়, বরং আরও বেশি তরুণকে এমন গল্প ও চরিত্র আবিষ্কারে সহায়তা করা ‘যারা তাদের সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সাহিত্য পুরস্কার বুকার প্রাইজ প্রথম প্রদান করা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে। যুক্তরাজ্য বা আয়ারল্যান্ডে প্রকাশিত ইংরেজিতে রচিত অসাধারণ কথাসাহিত্যকে সম্মান জানাতে এই পুরস্কার প্রবর্তিত হয়।

ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে মননরেখা পুরোপুরি বিশেষ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে। তাই রংপুর থেকে প্রকাশিত মননরেখাকে আমরা আপাতত ‘সংকলন’ই বলি। বলতে চাইছি, কোনো বিশেষ ব্র্যাকেটে মননরেখা নামের সংকলনটিকে না বেঁধেও সেটি নিয়ে আলোচনা করা চলে, পড়া চলে, সংগ্রহে রাখা চলে।
২১ ডিসেম্বর ২০২১
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
২ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৪ দিন আগেসম্পাদকীয়

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে পারে অন্য জায়গার এসব খাবার। অন্তত ছায়ানীড়ের নিয়মিত ভক্ত-গ্রাহকেরা এমন দাবি করতেই পারেন। তাতে দোষের কিছু নেই।
তাই হয়তো এখনো রেস্তোরাঁটির সামনে ভিড় লেগে থাকে। ব্যস্ত সড়কের পাশ থেকে যখন মুরগি পোড়ার সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, তখন পথে যেতে অনেকেই হয়তো বিরতি নিয়ে কিনে নেন ছায়ানীড়ের শর্মা বা গ্রিল চিকেন। ভেতরে বসে খেতে হলে লম্বা লাইনে যেমন দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, আবার পার্সেল নিতে গেলেও অপেক্ষা করতে হয়। প্রাত্যহিক এ দৃশ্য ছায়ানীড়ের জনপ্রিয়তার প্রমাণ। বিরিয়ানি ও অন্যান্য ফাস্ট ফুড খাবারও পাওয়া যায় এখানে।
ছবি: ওমর ফারুক

ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে মননরেখা পুরোপুরি বিশেষ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে। তাই রংপুর থেকে প্রকাশিত মননরেখাকে আমরা আপাতত ‘সংকলন’ই বলি। বলতে চাইছি, কোনো বিশেষ ব্র্যাকেটে মননরেখা নামের সংকলনটিকে না বেঁধেও সেটি নিয়ে আলোচনা করা চলে, পড়া চলে, সংগ্রহে রাখা চলে।
২১ ডিসেম্বর ২০২১
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
২ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
২ দিন আগে
আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন।
৪ দিন আগেসম্পাদকীয়

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

আইনজীবী, রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা-সংগ্রামী, কবি-লেখক চিত্তরঞ্জন দাশ ‘দেশবন্ধু’ নামেই বিখ্যাত। তাঁর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন শচীমোহন গোপ, যিনি পঞ্চাশের দশকে রাস্তার মোড়ে বিক্রি করতেন দুধ, দই আর মাঠা। ১৯৫৮ সালে হাটখোলা রোডে ইত্তেফাক মোড়ে রেস্তোরাঁ খুলে বসেন। বলা হয়, চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনদর্শনে প্রভাবিত হয়েই শচীমোহন রেস্তোরাঁটির নাম দেন ‘দেশবন্ধু সুইটমিট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। এর উল্টো দিকে তখন ছিল ইত্তেফাক পত্রিকার অফিস।
সেখানকার সাংবাদিকেরা দেশবন্ধুর পরোটা-লুচি-ভাজি-হালুয়া খেতে যেতেন নিয়মিত। কবি-সাহিত্যিক-অভিনয়শিল্পীরাও পছন্দ করতেন এই রেস্তোরাঁর খাবার। এমনকি এফডিসিতে ফরমাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো দেশবন্ধুর নাশতা। এখন হয়তো মানিক মিয়া, রাজ্জাক, কবরী কিংবা শাবানাদের মতো বিখ্যাতরা সেখানে যান না কিন্তু তাতে দেশবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি একটুও। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখনো ঢাকাবাসীর ভিড় দেখা যায় এই রেস্তোরাঁয়। ভাবা যায়, সারা দিনই এখানকার পরোটা-ভাজি বিক্রি হতে থাকে! দুপুরে অবশ্য খাবারের তালিকায় ভাত-মাছ-মাংসও আছে। ছবি: মেহেদী হাসান

ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে মননরেখা পুরোপুরি বিশেষ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে। তাই রংপুর থেকে প্রকাশিত মননরেখাকে আমরা আপাতত ‘সংকলন’ই বলি। বলতে চাইছি, কোনো বিশেষ ব্র্যাকেটে মননরেখা নামের সংকলনটিকে না বেঁধেও সেটি নিয়ে আলোচনা করা চলে, পড়া চলে, সংগ্রহে রাখা চলে।
২১ ডিসেম্বর ২০২১
ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত মাদক সম্রাট কে? হয়তো আপনি পাবলো এস্কোবার বা এল চ্যাপোর নাম বলবেন, কিন্তু আপনি ভুল! তাঁদের জন্মের প্রায় ১০০ বছর আগে এমন একজন অবিশ্বাস্য ক্ষমতাধর নারী ছিলেন, যিনি বিশাল এক মাদক সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন। তাঁর কাছে একালের এস্কোবার এবং এল চ্যাপোকে ছ্যাঁচড়া মাদককারবারি মনে হবে।
২ দিন আগে
শিশুসাহিত্যে চিলড্রেনস বুকার পুরস্কার চালু করেছে বুকার পুরস্কার ফাউন্ডেশন। আগামী বছর থেকে এই পুরস্কার চালু হবে এবং প্রথম বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২০২৭ সালের শুরুর দিকে। ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কথাসাহিত্যের জন্য ৫০ হাজার পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৫ টাকা) দেওয়া
২ দিন আগে
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঢাকায় খুব কম দোকানেই মিলত গ্রিল চিকেন। এ তালিকার শীর্ষে হয়তো অনেকে রাখতে পারেন সায়েন্স ল্যাবের ছায়ানীড় কনফেকশনারি অ্যান্ড ফাস্ট ফুড নামের রেস্তোরাঁটিকে। এখন তো বহু রেস্তোরাঁতেই পাওয়া যায় খাবারটি। কিন্তু ছায়ানীড়ের গ্রিল চিকেন কিংবা চিকেন শর্মার কাছে হয়তো স্বাদে হেরে যেতে...
২ দিন আগে