Ajker Patrika

অপারেশনের গজ কাপড়ের সঙ্গে যেভাবে জড়িয়ে আছে গাজার নাম

আবদুল বাছেদ, ঢাকা
আপডেট : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ২২: ৫৭
অপারেশনের গজ কাপড়ের সঙ্গে যেভাবে জড়িয়ে আছে গাজার নাম

প্রতিনিয়ত আমরা যোগাযোগের প্রয়োজনে হাজারো শব্দ ব্যবহার করে থাকি। সেসব শব্দের জন্ম ও সামাজিক–রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিবর্তনের ইতিহাস রয়েছে। নিত্যদিন ব্যবহার্য কয়টি শব্দের বিবর্তনের ইতিহাসই বা আমরা জানি! 

গত একমাসে বিশ্বে সবচেয়ে উচ্চারিত শব্দের একটি নিঃসন্দেহে ‘গাজা’। দিনে একবার হলেও আপনি ভেবেছেন গাজাবাসীর দুর্দশার কথা। কত রক্তই না দিতে হচ্ছে গাজাবাসীকে। কখনো কি ভেবেছেন এই ‘গাজা’ শব্দের অর্থ কী? 

এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকার তথ্যনুযায়ী, অস্ত্রোপচারের পর ড্রেসিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হালকা ও খোলা বুননের কাপড়কেই সাধারণত গজ (Gauze) বলা হয়। আধুনিক চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত এই শব্দটি এসেছে ফিলিস্তিনের ‘গাজা’ থেকে। একই বুননে তৈরি কাপড় জানালা বা দরজার পর্দা বানানোর ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মেয়েদের একজাতীয় পোশাকও তৈরি করা হয় এই বুননে শৈলিতে। 

এই ফেব্রিক বা বুনন শিল্পের উৎপত্তি গাজায় বলে মনে করা হয়। এ ধরনের কাপড় প্লেইন বুনন বা লেনো বুনন পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। এসব কাপড়ের মধ্যে রয়েছে তুলো দিয়ে তৈরি চিজক্লথ, যা মূলত চাপা পনিরের মোড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে আজকাল এই কাপড় বই বাঁধাইসহ নানা কাজেই ব্যবহার হয়। 

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ইংরেজি ‘Gauze’ শব্দটি এসে ফরাসি ভাষা থেকে। ফ্রান্স সরকারের অনলাইন ব্যুৎপত্তিগত অভিধান অনুসারে, ইংরেজিতে শব্দটি এসেছে ফরাসি ‘gaze’ থেকে। তবে এর চূড়ান্ত মূল সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে জানা যায় না।

তবে প্রায়শই এটি আরবি এবং ফার্সি শব্দ ক্বাজ (কাঁচা সিল্ক) থেকে উদ্ভুত বলে ধারণা করা হয়। এই শব্দ এসেছে ফিলিস্তিনের শহর ‘গাজা’ থেকে। তবে গাজায় প্রাচীন বুনন শিল্প সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। এটিই পরিষ্কার নয় যে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে এই শব্দ কীভাবে ইউরোপীয় ভাষায় প্রবেশ করল? 

ইউরোপে গজ কাপড়ের প্রথম ব্যবহারের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় ১২৫০ সালে ইতালির বোলোগনায় মধ্যযুগীয় লাতিন ভাষার ‘গারজা’ এবং ১২৭৯ সালে বুদাপেস্টে ‘গাজ্জাতুম’ নামে। 

ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলে ঐতিহ্যগতভাবে গজ কাপড় বোনা হতো। ইংরেজি শব্দটি গাজা থেকেই এসেছে। আরবিতে বলে গাজ্জা। এই অঞ্চলের বয়ন শিল্পের কেন্দ্র ছিল গাজা। সেই নামেই কাপড়ের নাম। 

মধ্যযুগীয় ইউরোপের ধর্মীয় শাসকেরা অখ্রিস্টানদের সঙ্গে বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও ১৩ শতকের প্রথম দিকে গাজা থেকে গাজাতুম নামে পরিচিত একটি সূক্ষ্ম রেশমি কাপড় আমদানি করা হতো। যদিও ইউরোপে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের এটি পরা নিষেধ ছিল। দ্রুতই এই ফ্যাব্রিক জনপ্রিয়তা পায়। আধুনিককালে সেটি গজ নামে ব্যবহৃত হতে শুরু করে।

সেসব যাই হোক, শব্দের বিবর্তনে গাজার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে ক্ষতস্থান বাঁধার কাপড়, বিশ্ব রাজনীতির দ্বিচারিতা গাজাবাসীর কাছে সেই অর্থকেই করে তুলেছে প্রাসঙ্গিক। বিষয়টি নিয়ে কবিতাও লিখেছেন আমেরিকান সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট ও মোটিভেশনাল স্পিকার নুর তাগুরি। কবিতাটি ভাবানুবাদ করলে দাঁড়ায়: 

আমাদেরই দরুন

আজ এই প্রভাতে জানলাম
‘গজ’ নামের ইংরেজি শব্দটি
অর্থ তার ক্ষতকে বাঁধবার বস্ত্র
আরও জানলাম সেই শব্দের নাড়ি। 

এসেছে নাকি ‘গাজা’ থেকে
সঙ্গে তার সেই নগরীর 
বুনন শিল্পের ইতিহাস। 
হয়ে গেলাম নির্বাক। 

এখন নিজেকেই করি প্রশ্ন, 
তাদের (ইসরায়েল) দরুন
আমাদের কতজনের ক্ষত 
করতে হয়েছে বাঁধাই! 

আমাদের (ফিলিস্তিন) দরুন
তাদের কতজনের ক্ষত 
রয়েছে বিনা শুশ্রূষায়!

নুর তাগুরির এই কবিতা ফেসবুকে ১৫ হাজারের অধিক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে এবং ১৩ হাজারবার শেয়ার হয়েছে। কিন্তু আর কতদিন বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চের নেতারা (নাকি অভিনেতা!) বাস্তবেই মানবিক হবেন ফিলিস্তিনের নিরপরাধ নারী–শিশুদের প্রতি। যখন আমরা আর শুনব না কোনো ইসরায়েলি বোমা হামলায় গাজায় শিশুর মৃত্যুর খবর। আর কত শিশু প্রাণ হারালে গাজাবাসীর জন্য অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবে গাজা শব্দের অর্থ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত