Ajker Patrika

নারীর এগিয়ে যেতে যে আইনগুলো দরকার

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন
Thumbnail image
ছবি: সংগৃহীত

দেশের নারীদের এগিয়ে নিতে বেশ কিছু আইন হয়েছে আমাদের। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নারীর অধিকার ও সুরক্ষার জন্য এখনো নির্দিষ্ট আইন অনুপস্থিত। এই ফাঁকগুলো নারীর জীবনমান উন্নয়ন ও সমানাধিকারের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারীর সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে এই ফাঁকগুলো পূরণ করা অত্যন্ত জরুরি।

প্রথমত কর্মক্ষেত্রে নারীর যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট আইন নেই। ২০০৯ সালে হাইকোর্টের রায়ে এ বিষয়ে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে সেগুলো এখনো আইন হিসেবে কার্যকর হয়নি। এর ফলে নারীরা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার শিকার হন এবং অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতি ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে ভয় পান। একটি শক্তিশালী আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নারীর জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।

গৃহকর্মী নারীর সুরক্ষার জন্য কোনো নির্দিষ্ট আইন নেই আমাদের। দেশের একটি বড় অংশ গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে। এই শ্রেণি প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবেও তারা অনিরাপদ। এদের অধিকাংশই দরিদ্র এবং অসচেতন হওয়ায় ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত থাকে। একটি সুনির্দিষ্ট আইন গৃহকর্মীদের কর্মপরিধি, বেতন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।

সাইবার জগতে নারীর হয়রানি প্রতিরোধে বিদ্যমান আইনের কার্যকারিতা সীমিত। সাইবার অপরাধ; বিশেষ করে নারীর ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য অপব্যবহার, ব্ল্যাকমেল এবং মানহানি উদ্বেগজনক মাত্রায় বেড়ে চলেছে। বিদ্যমান তথ্যপ্রযুক্তি আইন যথেষ্ট শক্তিশালী না হওয়ায় অপরাধীরা সহজে আইনের ফাঁক গলে পার পেয়ে যায়। সাইবার হয়রানির জন্য নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করলে অপরাধীদের দমন করা এবং নারীর নিরাপত্তা দেওয়া সহজ হবে।

বাংলাদেশের আইন নারীদের পুনর্বিবাহ বা স্বামী পরিত্যাগের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সুরক্ষা দেয় না। গ্রামীণ নারীর ক্ষেত্রে এটি বেশি প্রযোজ্য। সমাজের নেতিবাচক মনোভাব এবং আইনি সুরক্ষার অভাবে তাঁরা নতুন জীবন শুরু করতে ব্যর্থ হন। এই ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন নারীর জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

কর্মজীবী মায়ের জন্য মাতৃত্বকালীন সুবিধাসংক্রান্ত আইনের প্রয়োগ এখনো সীমাবদ্ধ। অনেক ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে গর্ভবতী নারীরা বৈষম্যের শিকার হন। একটি কার্যকর আইন প্রণয়নের মাধ্যমে মাতৃত্বকালীন সুবিধা নিশ্চিত করা হলে নারীরা আরও স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারবেন।

বাংলাদেশে নারী অধিকার ও সুরক্ষার জন্য বিদ্যমান আইনের ফাঁকগুলো চিহ্নিত করে নতুন আইন প্রণয়ন এবং কার্যকরভাবে তা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। নারীর ক্ষমতায়ন শুধু তাঁদের জীবনের উন্নয়নেই নয়, বরং দেশের সার্বিক অগ্রগতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সুতরাং নারীর জন্য সুরক্ষা এবং সমানাধিকারের নিশ্চয়তা দিতে আইনি কাঠামো শক্তিশালী করার এখনই সময়।

পরামর্শ দিয়েছেন: ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন ,অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত