Ajker Patrika

আন্তর্জাতিক নারী

পুরুষের সংখ্যা কমলেও পিতৃতন্ত্রে আটকে আছেন সিরিয়ার নারীরা

ফিচার ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের শাসনের অবসান ঘটার প্রায় পাঁচ মাস অতিবাহিত হয়েছে। এক দুই করে গুনলে এটি দাঁড়ায় ১৬৩ দিনে। দেশটিতে একটা দীর্ঘ সময় যুদ্ধের কারণে অনেক পুরুষ নিহত, নিখোঁজ অথবা সেনাবাহিনীতে জোর করে নিযুক্ত হওয়ায় নারীরা পরিবার ও অর্থনৈতিক দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁরা ব্যবসা, শিক্ষা, সাংবাদিকতা ও নাগরিক সমাজে মুখ্য ভূমিকা নিতে শুরু করেছেন। তবে দেশটির রক্ষণশীল সমাজে কর্মজীবী নারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক বাধা ও হয়রানি এখনো চলমান রয়েছে।

২০২৪ সালের উইমেন’স পাওয়ার ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী, সরকারে নারীদের অংশ ছিল মাত্র ১২ শতাংশ এবং সংসদে ১০ শতাংশ। ২০১৬ সালে হাদিয়া খালাফ আব্বাস সিরিয়ার সংসদের প্রথম নারী স্পিকার হিসেবে নিযুক্ত হন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। নারী উপদেষ্টা বৌথাইনা শাবানকে প্রভাবশালী মনে করা হলেও তিনি অনেকের চোখে ছিলেন কেবল সরকারপন্থী প্রচারণার মুখপাত্র। সে সময় সর্বাধিক ক্ষমতাধর নারী ছিলেন ফার্স্ট লেডি আসমা আল-আসাদ। তিনি সিরিয়ার অর্থনীতি, মানবিক সহায়তা ও দাতব্য খাতে ব্যাপক প্রভাব রেখেছিলেন। তবে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তিনি সরকারপন্থী দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে।

বাশার আল-আসাদের পতনের পর আইন, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে নারীদের সক্রিয় একটা অংশ দেখা দিয়েছে। আইশা আল-দিবস নারীবিষয়ক দপ্তরের প্রধান হয়েছেন এবং মাশেয়া সাবরিন সিরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হয়ে আরব বিশ্বে প্রথম নারী গভর্নর হয়েছেন। নতুন প্রশাসনে হিন্দ কাবাওয়াত ও হুদা আতাসিকে জাতীয় সংলাপ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংবিধান খসড়া কমিটিতেও রয়েছেন দুই নারী আইন বিশেষজ্ঞ, রায়ান কাহিলান ও বাহিয়া মারদিনি। তবে নারীর সামগ্রিক প্রতিনিধিত্ব এখনো সীমিত। নারীদের অধিকার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি থাকলেও তার গতি ধীর। অন্য রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারের আড়ালে নারীর বিষয়গুলো চাপা পড়ছে বলে মনে করছেন অনেকে।

সিরিয়ার সংস্কৃতি ও শিল্প নারীদের জন্য এক শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। প্রতিকূলতার মধ্যেও সিরিয়ার নারীরা তাঁদের দেশ পুনর্গঠনের কাজে সাহায্য করছেন। বাশার আল-আসাদের পতনের পর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নতুনভাবে শুরু হয়েছে। নারীদের অধিকতর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং আইনি অধিকার বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে রক্ষণশীল সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, আইনের অস্পষ্টতা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও নিরাপত্তাহীনতা নারীদের পথ কঠিন করে তুলছে।

এখনো সিরিয়ার অনেকাংশের নারীরা পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কারণে পিছিয়ে আছেন। অঞ্চলগুলোতে পুরুষের সংখ্যা কমে গেলেও অনেক নারী এখনো এমন এক সামাজিক ব্যবস্থার ফাঁদে আটকে আছেন, যেখানে পুরুষ অভিভাবক ছাড়া তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের ওপর নিজস্ব নিয়ন্ত্রণের অধিকার নেই। পুরোনো সামাজিক নিয়ম ও বৈষম্যের প্রাচীর এখনো তাঁদের আটকে রেখেছে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে পুরো পরিবারের দায়িত্ব, অর্থ উপার্জন, ঘর সামলানো এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মতো পর্যাপ্ত উপায়, প্রশিক্ষণ বা সম্পদ তাঁদের নেই। সিরিয়ার নতুন সংবিধানে নারীর অধিকার নিয়ে কী বলা হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

ফলে সম্ভাবনা তৈরি হলেও তা বাস্তবায়নে বর্তমানের মতোই যে ধীর হবে, সেটা বলা যায়।

সূত্র: ফার্ম ফর ইন্টারন্যাশনাল কালচারাল রিলেশনস, ভিউজ অ্যান্ড ভয়েজেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমি বিএনপি করি, তবে শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’

ড্রাইভিং লাইসেন্সে বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণ থাকছে না: উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

সন্তান জন্মের ৪ মাস পর বিয়ের খবর দিলেন জেমস

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষায় নতুন ৩ ব্যাটালিয়ন, দুই হাজার ২৫৮ পদ সৃষ্টি

সেনানিবাসের সাবজেলেই রাখা হবে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে: কারা মহাপরিদর্শক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কর্মস্থলে হয়রানি: আইনগত পদক্ষেপ নেবেন যেভাবে

ব্যারিস্টার ইফফাত আরা গিয়াস
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নিরাপদ এবং নিশ্চিত কর্মপরিবেশ পাওয়া যেকোনো কর্মজীবী মানুষের একটি মৌলিক চাহিদা। কর্মপরিবেশ ও কর্মস্থল নিরাপদ যদি না হয়, সেখানে নারী কিংবা পুরুষ—কেউ নিরাপদ নন। আর এ বিষয়টি শুধু চাকরিজীবনে নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। হেঁটে গেলে অন্য সহকর্মীরা আপনার দিকে কীভাবে তাকাচ্ছেন, কিংবা দুজন সহকর্মী দাঁড়িয়ে আপনাকে নিয়ে কী ধরনের মন্তব্য করছেন, এটা ভেবেই যদি সময় চলে যায়, তাহলে কাজ করবেন কখন? আর এই ভাবনাটা তখনই আসে, যখন কারও সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে আচরণ করা হবে। যিনি এসব আচরণ করছেন, তিনি হতে পারেন বস কিংবা অফিসের যেকোনো শ্রেণির কর্মচারী। এই নিরাপত্তা যখন ব্যাহত হয়, তখন সেখানে কাজ করা মুশকিল হয়ে পড়ে।

কর্মস্থলে নারী-পুরুষনির্বিশেষে প্রত্যেক কর্মচারীর নিরাপত্তা এবং মর্যাদা রক্ষা করা রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী বা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কেউ কেউ মৌখিক অর্থাৎ ভারবাল কিংবা শারীরিক অর্থাৎ ফিজিক্যাল হয়রানির শিকার হন। এ ধরনের আচরণ কেবল মানসিক কষ্টের কারণ নয়; বরং বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।

নিজের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের প্রথম প্রতিবাদ নিজেকেই করতে হবে। অন্য কেউ এসে প্রতিবাদ করার আগে নিজের সচেতনতা এবং যুক্তিযুক্ত কথা বলা অনেক বেশি জরুরি। তাই চাকরিজীবনে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে সে বিষয়ে রাষ্ট্রীয় আইন জানা থাকা দরকার।

আইনের চোখে হয়রানি

বাংলাদেশে কর্মস্থলে হয়রানিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। এ ধরনের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং অপরাধীকে শাস্তি দিতে দুটি প্রধান আইন ও নির্দেশনা কার্যকর রয়েছে:

১. বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮): এই আইন শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মপরিবেশ-সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করে।

২. যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা, ২০০৯: এটি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার ভিত্তিতে প্রণীত, যা কর্মস্থলে যেকোনো ধরনের যৌন হয়রানিকে কঠোরভাবে দমন করার নির্দেশ দেয়।

হয়রানির প্রকারভেদ

প্রথমেই বুঝে নেওয়া জরুরি যে হয়রানির ধরন কেমন। তবে কর্মক্ষেত্রে হয়রানি দুই ধরনের হতে পারে—

১. মৌখিক বা ভারবাল হয়রানি: এর মধ্যে রয়েছে অপমানজনক মন্তব্য, অশালীন ইঙ্গিত, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কথা, হেয়প্রতিপন্ন করা কিংবা ভয় দেখানো।

২. শারীরিক বা ফিজিক্যাল হয়রানি: অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ, জোর করে ধরাধরি, আলিঙ্গন অথবা শারীরিকভাবে অপমানজনক আচরণ।

কর্মস্থলে এ ধরনের আচরণ বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা, ২০০৯ অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

ন্যায়বিচার পাওয়ার ধাপ

কর্মস্থলে হয়রানির শিকার হলে ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কিছু ধাপে সচেতনভাবে অগ্রসর হতে হবে।

প্রথম পদক্ষেপ: প্রমাণ সংগ্রহ এবং নথিভুক্তকরণ

অভিযোগের ভিত্তি মজবুত করার জন্য প্রমাণ সংগ্রহ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভুক্তভোগীর প্রথম কাজ হলো ঘটনার বিস্তারিত তথ্য স্পষ্টভাবে লিখিত আকারে নথিভুক্ত করা।

» বিবরণ: ঘটনার তারিখ, সময়, স্থান এবং জড়িত ব্যক্তি কিংবা উপস্থিত থাকা সাক্ষীর নাম লিখে রাখা।

» সংরক্ষণ: সম্ভব হলে ই-মেইল, মেসেজ, ভয়েস রেকর্ড, চ্যাটের স্ক্রিনশট অথবা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণ করা। এসব তথ্য পরবর্তী সময়ে অভিযোগের সপক্ষে শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।

দ্বিতীয় পদক্ষেপ: অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটিতে অভিযোগ দাখিল

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি অফিস কিংবা প্রতিষ্ঠানে একটি ‘অভিযোগ কমিটি’ থাকা বাধ্যতামূলক। এই কমিটিতে একজন নারী সদস্যের অন্তর্ভুক্তিও নিশ্চিত করতে হবে।

ভুক্তভোগী প্রথমে লিখিতভাবে এই কমিটির কাছে অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। এরপর কমিটি সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত পরিচালনা করতে এবং প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য। এটি অভ্যন্তরীণভাবে দ্রুত ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রথম ও কার্যকর মাধ্যম।

তৃতীয় পদক্ষেপ: প্রশাসনিক ও আইনি সহায়তা নেওয়া

যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ কমিটি না থাকে অথবা কমিটি যদি অভিযোগের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তবে ভুক্তভোগী সরাসরি আইনি পথে যেতে পারেন।

» পুলিশি পদক্ষেপ: ভুক্তভোগী সরাসরি স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে পারেন।

» মামলা: প্রয়োজনে তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল বা শ্রম আদালতে মামলা করতে পারেন।

» শাস্তি: নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০০৩) অনুযায়ী শারীরিক বা যৌন হয়রানির অভিযোগে দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।

চতুর্থ পদক্ষেপ: মানবাধিকার সংগঠন ও আইনি সহায়তা সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া

আইনিপ্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা না থাকলে অথবা আর্থিক সংকট থাকলে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, ব্র্যাক লিগ্যাল এইড সার্ভিসেসের মতো অনেক সংগঠন বিনা মূল্যে আইনি পরামর্শ ও সহায়তা দেয়। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পেশাদার সহায়তা পাওয়া সম্ভব।

যেসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে

» চুপ না থাকা: কোনো পরিস্থিতিতে ভয় কিংবা সামাজিক চাপের কারণে চুপ থাকা উচিত নয়। হয়রানির বিষয়ে দ্রুত আওয়াজ তোলা খুব প্রয়োজন।

» নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: অভিযোগ দাখিল করার আগে ও পরে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

» সঠিক তথ্য উপস্থাপন: মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

» নথি সংরক্ষণ: সব ধরনের যোগাযোগ এবং প্রমাণের নথি যথাযথভাবে আপনাকে সংরক্ষণ করতে হবে।

কর্মস্থলকে ভয় বা বঞ্চনার জায়গা না বানিয়ে একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা জরুরি। হয়রানির শিকার হলে চুপ না থেকে আইনের আশ্রয় নেওয়া প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার। একজন সচেতন কর্মী হিসেবে সাহসিকতার সঙ্গে সঠিক পদক্ষেপ নিলে কেবল নিজের নয়, প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক পরিবেশ এবং অন্যান্য সহকর্মীর নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমি বিএনপি করি, তবে শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’

ড্রাইভিং লাইসেন্সে বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণ থাকছে না: উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

সন্তান জন্মের ৪ মাস পর বিয়ের খবর দিলেন জেমস

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষায় নতুন ৩ ব্যাটালিয়ন, দুই হাজার ২৫৮ পদ সৃষ্টি

সেনানিবাসের সাবজেলেই রাখা হবে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে: কারা মহাপরিদর্শক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাজায় যুদ্ধবিরতির পর: শোক, ক্লান্তি ও ভবিষ্যতের আশা

ফিচার ডেস্ক
গাজায় যুদ্ধবিরতির পর: শোক, ক্লান্তি ও ভবিষ্যতের আশা

রেডিও চ্যানেল এনপিআরকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন ফিলিস্তিনি সাংবাদিক শ্রৌক আল আইলা। তিনি বলতে শুরু করেন, ‘আমি একধরনের হ্যাংওভারের মধ্যে আছি। আজ সকালে খুব অদ্ভুত লাগছিল। কারণ, আমি বিমান হামলা ও বিস্ফোরণ ছাড়া গভীরভাবে ঘুমানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। এটা সত্যিই অদ্ভুত লাগছে।’

৭০০ দিনের বেশি সহিংসতার পর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। তবু শান্ত হয়নি গাজার আকাশ। কিন্তু গাজাবাসী, বিশেষত নারী ও কিশোরীদের মধ্যে ভঙ্গুর হলেও দেখা দিয়েছে আশা—বেঁচে থাকার আর এগিয়ে যাওয়ার আশা। যুদ্ধের পুরো সময়ে গাজার অধিকাংশ নারী কমপক্ষে চারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইউএন উইমেনের তথ্য অনুযায়ী, ১০ লাখের বেশি নারী ও কিশোরীর খাদ্যসহায়তার প্রয়োজন এবং প্রায় আড়াই লাখের প্রয়োজন জরুরি পুষ্টি সহায়তা।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার ১৬ দিনের মাথায় বাড়িতে বোমা হামলায় নিহত হন আইলার স্বামী। এর পর থেকে নিজের কন্যাশিশুর সঙ্গে জীবন যাপন করছেন তিনি। আইলা জানান, তাঁর কন্যাটি তার বয়সের অর্ধেকের বেশি সময় খাওয়ার পানি, চিকিৎসাসামগ্রী, দুধ আর ডায়াপার ছাড়া কাটিয়েছে। দুর্ভিক্ষের কারণে সে ক্যানড ফুডের ওপর বড় হয়েছে। ফলে শিশুটি আপেল, কলা ও অন্য সব ধরনের ফল চিনতে পারে না। গাজায় প্রতি সাতটি পরিবারের মধ্যে একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন নারী। তাঁদের এখন সরাসরি সহায়তা দরকার, যাতে তাঁরা সন্তানদের খাওয়াতে পারেন, স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারেন, জীবিকা পুনর্গঠন করতে পারেন এবং সবকিছু হারানোর পর কিছুটা স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করতে পারেন।

এনপিআরকে সাক্ষাৎকার দেন শাইমা আহমেদ নামে আরও একজন কলেজশিক্ষার্থী। একটি বড় পরিবারে জন্ম নেওয়া শাইমা এই যুদ্ধে তাঁর পরিবারের ৭০ জন সদস্যকে হারিয়েছেন! তাঁদের মধ্যে কেউ মারা গেছেন, কয়েকজন নিখোঁজ আবার এখনো অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে—যাঁদের বেঁচে থাকার আশা নেই। বোমাবর্ষণে পরিবারের মানুষের কবরগুলোও হয়ে গেছে অচেনা, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শাইমা বলেন, ‘শোকের জায়গাও আর নেই।’ তিনি জানান, তিনি ও তাঁর পরিবার দুই বছরে ১১ বার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শাইমা স্নাতক শেষ করতে চলেছেন। আর এই পড়ার ইচ্ছাই এত দিন বাঁচিয়ে রেখেছে তাঁকে। যেমন সব হারিয়ে মেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকার ইচ্ছা বাঁচিয়ে রেখেছে আইলাকে।

শাইমা বলেন, ‘আমাদের জীবন কেবল সেই নিছক বেঁচে থাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর সত্যিকারের অর্থ ও উদ্দেশ্য থাকে। এটাই আমাদের এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমাদের কাছে এই মাটির এত অর্থ আছে এবং গাজায় আপনি যা দেখেন, তা সত্যিই ধূসর এবং সর্বত্র ধ্বংসস্তূপ ও ধুলোয় ভরা। তবু আমরা একটি ভবিষ্যৎ দেখতে পাই।’

গাজায় নিহত, আহত, ধ্বংসের সংখ্যা কেবলই ডেটা নয়। যুদ্ধবিরতি স্থিতিশীল হওয়ার পাশাপাশি গাজার নারীবিষয়ক সংস্থাগুলো এরই মধ্যে পরবর্তী কাজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশটির পুনরুদ্ধার সেখানকার নারীদের ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সংস্থাগুলোতে কর্মরত নারীরা বারবার উচ্ছেদ, ভয় আর যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন। উইমেনস অ্যাফেয়ার্স সেন্টারে কর্মরত আমাল বলেন, ‘আমরা এখানে মৃত্যুকে আর বুঝতে পারি না। এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয়—মৃত্যু আমাদের বস্তুতে, সংখ্যায় পরিণত করে। যেন আমরা কখনো ছিলামই না। আমাদের কাছে মানুষের দেহাবশেষ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।’

তবু বেঁচে থাকার স্বপ্ন তাঁদের ঘুমাতে দেয় না। গাজা পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণের প্রতিটি প্রচেষ্টায় নারীদের উপস্থিতি চান তাঁরা। আমাল বলেন, ‘গাজা পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণের আগে আমাদের নারী হিসেবে, ফিলিস্তিনি হিসেবে নিজেদের পুনর্নির্মাণ করতে হবে।’

সূত্র: এনপিআর, ইউএন উইমেন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমি বিএনপি করি, তবে শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’

ড্রাইভিং লাইসেন্সে বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণ থাকছে না: উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

সন্তান জন্মের ৪ মাস পর বিয়ের খবর দিলেন জেমস

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষায় নতুন ৩ ব্যাটালিয়ন, দুই হাজার ২৫৮ পদ সৃষ্টি

সেনানিবাসের সাবজেলেই রাখা হবে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে: কারা মহাপরিদর্শক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘মিট দ্য প্রেস’-এর নেপথ্যের নারীশক্তি মার্থা

ফিচার ডেস্ক
মার্থা জেন রাউন্ট্রি। ছবি: সংগৃহীত
মার্থা জেন রাউন্ট্রি। ছবি: সংগৃহীত

আমেরিকার ইতিহাসে দীর্ঘকাল ধরে চলা টেলিভিশন সিরিজ মিট দ্য প্রেস। অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্যানেল আলোচনার একটি মানদণ্ড তৈরি করেছিল। এই অনুষ্ঠানের কো-ক্রিয়েটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন মার্থা জেন রাউন্ট্রি।

একজন নারী হিসেবে মার্থা এমন এক সময়ে টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রযোজনার জগতে এসে সাফল্য লাভ করেন, যখন এই শিল্পে পুরুষেরাই প্রধান ভূমিকা পালন করতেন। মিট দ্য প্রেসের ইতিহাসে তিনি একমাত্র নারী, যিনি অনুষ্ঠানটির প্রথম মডারেটর বা উপস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৪৫ সালে মার্থা লিভ ইট টু দ্য গার্লস নামে রেডিওর প্রথম প্যানেল শো তৈরি করতেন, যেখানে নারীরাই ছিলেন মূল আলোচক। এর মাধ্যমে তিনি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়ে নারীদের মতামত প্রকাশ করার জন্য একটি জনপ্রিয় মঞ্চ তৈরি করেছিলেন। তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে ‘আ ডিজেল ইঞ্জিন আন্ডার আ লেইস রুমাল’ বলে আখ্যায়িত করেন। বাইরে থেকে মার্থা শান্ত ও মার্জিত হলেও মানসিকভাবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত দৃঢ়চেতা মানুষ। ছিলেন কর্মশক্তিতে ভরপুর এবং তাঁর কাজের গতি ছিল প্রখর।

মার্থা ১৯৫১ সালে ন্যাশনাল ফ্র্যাটারনিটি ফর উইমেন ইন জার্নালিজম কর্তৃক টেলিভিশন অনুষ্ঠানের ‘অসামান্য নারী’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। মার্থা জেন রাউন্ট্রির জন্ম ১৯১১ সালের ২৩ অক্টোবর, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়। ১৯৯৯ সালের ২৩ আগস্ট ওয়াশিংটন ডিসিতে তিনি মারা যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমি বিএনপি করি, তবে শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’

ড্রাইভিং লাইসেন্সে বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণ থাকছে না: উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

সন্তান জন্মের ৪ মাস পর বিয়ের খবর দিলেন জেমস

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষায় নতুন ৩ ব্যাটালিয়ন, দুই হাজার ২৫৮ পদ সৃষ্টি

সেনানিবাসের সাবজেলেই রাখা হবে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে: কারা মহাপরিদর্শক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শুভ জন্মদিন: দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া সাহসী দুই নারী

ফিচার ডেস্ক
এভারিস্ত গালোয়া।
এভারিস্ত গালোয়া।

এভারিস্ত গালোয়া ও ফুমিলায়ো র‍্যানসোম-কুটি দুই বিষয়ে পৃথিবীর দুই প্রান্তের প্রতিভাধর নারী। একজন সমাধান করেছিলেন বীজগণিতের সমস্যা, অন্যজন ছিলেন নিজের দেশের নারীদের মুক্তির প্রতীক। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দুজনের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি। এ এক দারুণ রহস্য!

গণিতের উজ্জ্বল নক্ষত্র গলোয়া

৩৫০ বছর ধরে গণিতবিদদের চিন্তিত করে আসছিল ‘কোন বীজগণিতীয় সমীকরণকে মূলদীয় ফাংশন দিয়ে সমাধান করা যেতে পারে এবং কেন’ এই প্রশ্ন। এর উত্তর বের করে দিয়েছিলেন এক নারী। তাঁর নাম এভারিস্ত গালোয়া। কিন্তু অসামান্য প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও তিনি গণিত বিষয়ে প্যারিসের মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ইকোলে পলিটেকনিকে দুবার প্রবেশিকা পরীক্ষায় ব্যর্থ হন। ১৮৩০ সালের ফরাসি বিপ্লবের সঙ্গে ওতপ্রোতজড়িত ছিলেন গালোয়া। রাজনৈতিক সক্রিয়তার কারণে তাঁকে স্কুল থেকে বহিষ্কার এবং দুবার কারাবাসও করতে হয়।

১৮৩২ সালের ৩০ মে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহত হওয়ার আগের রাতে, ২০ বছর বয়সী গালোয়া তাঁর বন্ধু আগস্ট শেভালিয়ারকে একটি চিঠি লেখেন। সেই চিঠিতে তিনি তাঁর যুগান্তকারী গাণিতিক ধারণাগুলো অতি দ্রুত লিপিবদ্ধ করেন। বন্ধুর কাছে অনুরোধ জানান, তাঁর চিঠিটা যেন বিখ্যাত গণিতবিদ গাস ও ইয়াকোবির কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। ১৮৩২ সালের ৩১ মে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আঘাতের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর প্রায় ১৪ বছর পর ১৮৪৬ সালে তাঁর গবেষণা প্রকাশ করেন জোসেফ লিয়োভিল। গালোয়াকে গণিতের ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল ও দুর্ভাগ্যজনক প্রতিভাদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। গালোয়ার জন্ম হয়েছিল ১৮১১ সালের ২৫ অক্টোবর।

ফুমিলায়ো র‍্যানসোম-কুটি।
ফুমিলায়ো র‍্যানসোম-কুটি।

লিসাবির সিংহী ফুমিলায়ো র‍্যানসোম-কুটি

নাইজেরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ফুমিলায়ো র‍্যানসোম-কুটি। বিশ শতকের নাইজেরিয়ার প্রভাবশালী নারী নেতৃত্বের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। আবেওকুটা গ্রামার স্কুলের প্রথম নারী শিক্ষার্থীও। তাঁর নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলো সব শ্রেণির নারীদের একত্র করেছিল। সেসব সংগঠনের কাজ ছিল নিম্ন আয়ের নারীদের অধিকারের জন্য লড়াই করা। ১৯৪৬ সালে ফুমিলায়ো ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার ও স্থানীয় শাসকদের চাপানো অন্যায় করের বিরুদ্ধে নারী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। এ কারণে স্থানীয় রাজা দ্বিতীয় ওবা আদেওমোলা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। এ ঘটনার জন্য তাঁকে ‘লিয়োনেস অব লিসাবি’ নামেও ডাকা হয়। তিনি নারীদের জন্য আলাদা করের হার বিলুপ্ত করার আন্দোলনে সফল হয়েছিলেন।

নাইজেরিয়ার ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে ফুমিলায়ো মোটরসাইকেল ও গাড়ি চালানো শিখেছিলেন। তাঁর জন্ম ১৯০০ সালের ২৫ অক্টোবর। সামরিক বাহিনীর হামলায় আহত হওয়ার পর তিনি মারা যান ১৯৭৮ সালের ১৩ এপ্রিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমি বিএনপি করি, তবে শেখ হাসিনার আদর্শে বিশ্বাসী’

ড্রাইভিং লাইসেন্সে বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণ থাকছে না: উপদেষ্টা ফাওজুল কবির

সন্তান জন্মের ৪ মাস পর বিয়ের খবর দিলেন জেমস

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষায় নতুন ৩ ব্যাটালিয়ন, দুই হাজার ২৫৮ পদ সৃষ্টি

সেনানিবাসের সাবজেলেই রাখা হবে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে: কারা মহাপরিদর্শক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত